বিজ্ঞান আশীর্বাদ না অভিশাপ রচনা – প্রবন্ধ রচনা

Bongconnection Original Published
8 Min Read

বিজ্ঞান আশীর্বাদ না অভিশাপ রচনা – প্রবন্ধ রচনা 

বিজ্ঞান আশীর্বাদ না অভিশাপ রচনা - প্রবন্ধ রচনা
Loading...

বিজ্ঞানের আশীর্বাদ ও অভিশাপ

Loading...


ভমিকা :

বিজ্ঞানী হলভেন বলেছেন-“We need
science more than ever before” আধুনিক যুগ বিজ্ঞানে যুগ। বিজ্ঞান ছাড়া আমরা এক মূহুর্তেও কল্পনা করতে
পারি না। বিজ্ঞান জীবনে এনে দিয়েছে গতি। আমাদের চারপাশে বিজ্ঞানের অভাবনীয়
সাফল্য ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন এবং জীবনকে সুন্দর করার
জন্য চাই বিজ্ঞান শিক্ষা। বিজ্ঞান শিক্ষা দিয়েই বিশ্বায়নের এ যুগে আধুনিক
বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলা সম্ভব। নয়তো অন্ধকার পৃথিবীতে মুখ থুবড়ে পড়ে
থাকতে হবে, প্রবীণ যুগের অসভ্য ও বর্বর জীবনের সাথে বর্তমান যুগের সভ্য ও
সুশৃঙ্খল জীবনের পার্থক্যের কারণ হলো বিজ্ঞান। বিজ্ঞান মানুষকে দিয়েছে
জ্ঞান, যার মাধ্যমে মানুষ জীবনকে আরো সহজ ও সুন্দরভাবে উপভোগ করতে
পারছে।



বিজ্ঞানের সুফল ও কুফল

বিজ্ঞানের পদযাত্রা:

সৃষ্টির আদিকাল থেকেই শুরু হয় পৃথিবীকে বাসযোগ্য করে গড়ে তোলার প্রয়াস।
প্রাচীনকালে জীবনযাপনের এক পর্যায়ে মানুষ পাথরে পাথর ঘষে আগুন আবিষ্কার করতে
শেখে, শিকারের জন্য গাছের ডাল ও পাথর দিয়ে বিভিন্ন অস্ত্র তৈরি করতে শেখে। আর
তখন থেকেই শুরু হয় বিজ্ঞানের পদযাত্রা। তারপর থেকে বিজ্ঞানকে ব্যবহার করে
প্রতিনিয়ত মানুষ নতুন নতুন আবিষ্কারের নেশায় মত্ত হয়ে উঠে। যে পৃথিবী ছিল
অপার বিস্ময় ও রহস্যের স্থান, সে পৃথিবীকে মানুষ হাতের মুঠোয় নিয়ে এসেছে
বিজ্ঞানচর্চার মাধ্যমে। বিজ্ঞানের বলে মানুষের কাছে অসম্ভব বলে আর কিছু নেই।
নেপেলিয়ন বলেছেন- “Impossible is a word, which is only found in the
dictionary of fools.” বিজ্ঞানের বলেই এই কথাটি আজ চরম সত্য।



 

প্রাত্যহিক জীবনে বিজ্ঞান:

প্রতিদিন ঘুম ভাঙার পর থেকে আমরা যেভাবে জীবন শুরু করি তার প্রতিটি ক্ষেত্রে
বিজ্ঞানের ছায়াপাত রয়েছে। প্রতিদিন সকালবেলা সবার ঘরে ঘরে পৌঁছে যায়
সংবাদপত্র। যার মাধ্যমে সারাবিশ্বের সব ধরনের ঘটনার খবর পাই। গ্রামীণ জীবনের
তুলনায় শহরের প্রাত্যহিক জীবনে বিজ্ঞানের ছোঁয়া বেশি। সকালবেলার চা, নাস্তা,
সারাদিনের খাবার তৈরির জন্য গ্যাস, স্টোভ, বৈদ্যুতিক চুল্লীর দরকার হয়। খাবার
গরম করার জন্য ওভেন, সংরক্ষণের জন্য রেফ্রিজারেটর সবই বিজ্ঞানের আবিষ্কার।
তবে বিজ্ঞানের প্রভাব এখন আর শহরে সীমাবদ্ধ নয় গ্রামাঞ্চলেও এর প্রভাব
বিস্তৃত হচ্ছে। টেলিভিশন, রেডিও, ভিসিডি, ডিভিডি বিনোদনের অন্যতম উপায়।
এছাড়াও দৈনন্দিন প্রয়োজনে ব্যবহৃত টেলিফোন, মোবাইল, ই-মেইল, ফ্যাক্স, বিভিন্ন
যানবাহন বিজ্ঞানেরই আবিষ্কার। নিত্যনতুন আরো প্রয়োজনীয় জিনিস আবিষ্কারের জন্য
বিজ্ঞান শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।



 প্রযুক্তি আশীর্বাদ না অভিশাপ

শিক্ষাক্ষেত্রে বিজ্ঞান:

প্রাচীন শিক্ষাপদ্ধতির তুলনায় বর্তমানে শিক্ষাক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন এসেছে।
বর্তমানে শিক্ষকরা চক, ডাস্টার, ব্ল্যাকবোর্ডের পরিবর্তে মাল্টিমিডিয়া রুমে
ক্লাস নিচ্ছেন। বর্তমানে অতি সূক্ষ্ম গাণিতিক হিসাব ক্যালকুলেটরের মাধ্যমে
সহজেই করা যায়। টেলিভিশন, বেতার যেমন বিজ্ঞানের আবিষ্কার তেমনি শিক্ষার উপকরণ
কম্পিউটারও বিজ্ঞানের এক বিস্ময়কর আবিষ্কার। এটি শিক্ষাক্ষেত্রে অভাবনীয়
সাফল্য নিয়ে এসেছে। শিক্ষার্থীরা কম্পিউটারে মাধ্যমে নিজেরাই বিভিন্ন বিষয়
শিখতে পারছে যা পূর্বে কখনোই করা যেত না। ইন্টারনেটের মাধ্যমে সারাবিশ্বের
বিখ্যাত লেখদের বই, বিভিন্ন দেশের শিক্ষাব্যবস্থা সম্পর্কে মুহুর্তের মধ্যেই
জানা যায়। আধুনিক বিজ্ঞাননির্ভর শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষকরা যেমন পেয়েছে
স্বস্তি ছাত্র-ছাত্রীরাও হয়ে উঠেছে স্ব-নির্ভর। এই অবস্থাকে আরো গতিশীল করতে
বিজ্ঞান শিক্ষার প্রয়োজনীতা অপরিসীম।

 

চিকিৎসাক্ষেত্রে বিজ্ঞান :

বিজ্ঞান বিশ্বসভ্যতায় অনেক বিস্ময়কর উপহার দিয়েছে। এ বিস্ময়ের অন্যতম হলো
আধুনিক চিকিৎসাব্যবস্থা।
-হেনরি ডেভিড
প্রাচীন গ্রিসের উনান প্রদেশে সনাতন চিকিৎসা পদ্ধতি চালু হয়। ইউনানি নামের এ
চিকিৎসা ব্যবস্থাকে পরিচতি করে তোলে গ্রিসের হাকিম ইসকালিবাস। ১৮১০-১৯৩৯ এ
উপমহাদেশে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা জনপ্রিয় উঠে। এর উদ্ভাবক ছিলেন জার্মান
চিকিৎসক স্যামুয়েল হ্যানিম্যান। বিজ্ঞানের আর্শীবাদে নতুন নতুন যন্ত্রপাতি
আবিষ্কারের ফলে মানুষ ঝাড়-ফুঁক, অন্ধবিশ্বাস থেকে বেরিয়ে এসে হোমিওপ্যাথি ও
অ্যালোপ্যাথিকের উপর নির্ভর করে। আগে বসন্ত, ম্যালেরিয়া, টাইফয়েড, নিউমোনিয়া
প্রভৃতি রোগের কারণে মহামারী দেখা দিত যা বিজ্ঞানের প্রভাবে দূর করা সম্ভব
হয়েছে। বর্তমানে বিজ্ঞানের কল্যাণে দূরারোগ্য ব্যাধিতেও মৃত্যুর সংখ্যা
অনেকাংশে কমেছে। এক্সরে, পেনিসিলিন, রঞ্জন রশ্মি, ইসিজি, সিটি স্ক্যান,
আল্ট্রাসনোগ্রাফি, এম.আর.আই, প্রভৃতি যন্ত্রের মাধ্যমে চিকিৎসাবিজ্ঞান
অসম্ভবকে সম্ভব করেছে। আল্টাসনিক স্ক্যানিং এর মাধ্যমে শরীরের ভেতরের যকৃত,
পিত্তথলি, কিডনি ইত্যাদি অবস্থান নির্ণয়, লেজার সার্জারির মাধ্যমে দ্রুত
অপারেশন, ফাইবার অপটিক্যাল ব্যবহার করে ফুসফুস, পাকস্থলী, বৃহদান্ত,
ক্ষুদ্রান্ত, উদর, শিরা ধমনীর অবস্থা নির্ণয় করে চিকিৎসা করা যায়।
চিকিৎসাবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে কিপলিং এর কথাই প্রযোজ্য “বিজ্ঞানের আর্শীবাদ
বিশ্ব মানবতা কখনও উল্লসিত হয়, আবার অনেক সময় তার বিভীষিকাময় রূপে
বিশ্বসভ্যতা থমকে দাঁড়ায়। কিন্তু চিকিৎসাক্ষেত্রে বিজ্ঞান এনেছে শুধু
আর্শীবাদ আর আর্শীবাদ।” আর এই চিকিৎসা ব্যবস্থাকে আরো উন্নত করতে বিজ্ঞান
শিক্ষার গুরুত্ব অনেক।

 প্রবন্ধ রচনা বিজ্ঞান আশীর্বাদ না অভিশাপ

কৃষিক্ষেত্রে বিজ্ঞান :

বিজ্ঞান কৃষিক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন সাধন করেছে। কৃষিকাজে এখন আর কাঠের
লাঙ্গল ব্যবহৃত হয় না, তার পরিবর্তে কলের লাঙ্গল, ট্রাক্টর, পাওয়ার টিলার
ইত্যাদি দিয়ে জমি চাষের উপযুক্ত করা হয় সেচ কাজের জন্য বৈদ্যুতিক শক্তিচালিত
পাম্প ব্যবহার করা হয়। কৃষিবিজ্ঞানীরা নতুন নতুন বীজ আবিষ্কারের মাধ্যমে
কৃষকদের উৎপাদন বাড়িয়ে দিচ্ছে। উন্নত মানের সময়োপযোগী এবং উচ্চ ফলনশীল জাত
আবিষ্কারের ফলে সারা বছরই ধান, শাক-সবজি ফলানো সম্ভব হচ্ছে। উন্নত বিশ্বের
তুলনায় বাংলাদেশে যদিও কৃষিক্ষেত্রে বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তি নির্ভরতা কম তবুও
অনেক উন্নতি সাধিত হয়েছে। বিজ্ঞাননির্ভর গবেষণামূলক প্রমান্য অনুষ্ঠান যেমন
“কৃষি দিবানিশি”, “মাটি ও মানুষ” ইত্যাদির মাধ্যমে কৃষকদেরকে কৃষিক্ষেত্রে
বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি ব্যবহারের জন্য সঠিক পরামর্শ ও জ্ঞান দেওয়া হচ্ছে।
কৃষিক্ষেত্রে বৈজ্ঞানিক গবেষণাকে আরো বিস্তৃত করতে বিজ্ঞান শিক্ষার প্রয়োজন
তুলনাতীত।

 

মানসিক উৎকর্ষতায় বিজ্ঞান:
 
শাব্দিক অর্থে বিজ্ঞান হচ্ছে বিশেষ জ্ঞান। জ্ঞানের মাধ্যমেই মানুষের মানসিক
মুক্তি লাভ হয়। সকল প্রকার জড়তা কুসংস্কার দূরে ফেলে জ্ঞান মানুষকে আলোর পথ
দেখায়। বিজ্ঞান হলো প্রমানিত সত্য, যে সত্য জগতের রহস্য উম্মোচন করে, জগৎকে
স্বচ্ছ কাছের মতো তুলে ধরে, জীবনের নানা ভুল-ভ্রান্তি ত্রুটি বিচ্যুতি থেকে
রেহাই দেয়। বিজ্ঞান মানুষকে বিচার-বুদ্ধি-সম্পন্ন, যুক্তিবাদী, নিয়মনিষ্ঠ,
কর্মকুশল ও সুশৃঙ্খল করে গড়ে তোলে। মানুষ এখন আর পৃথিবীর বোঝা নয়। মানবসম্পদে
পরিণত হয়েছে। বিজ্ঞান মানুষের মোহান্ধতাকে দূর করে মানুষকে আরো বাস্তববাদী
করেছে। সমাজের যত অনাচার, কুসংস্কার, জটিলতা, কুটিলতা দূর হয় শিক্ষার ফলে।
বিজ্ঞান শিক্ষা মানুষের দ্বিধা-দ্বন্দ্বের কালো পর্দা সরিয়ে শুদ্ধতা নিশ্চিত
করেছে। শিক্ষার বিভিন্ন পর্যায়ে বিজ্ঞান শিক্ষা ছাত্র-ছাত্রীদের আধুনিক করে
তোলে। বিজ্ঞানশিক্ষার ফলে অন্ধবিশ্বাস দূর হয়েছে, মানুষ এখন উন্নত
চিকিৎসাপদ্ধতির আশ্রয় নিচ্ছে। বিজ্ঞানশিক্ষার ফলে শিশু মৃত্যুহার এবং
জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কমেছে, মানুষ আজ সব রকম সংকীর্ণতার উর্ধ্বে অবস্থান
করছে।

বিজ্ঞানশিক্ষার অভিশাপ:

বিজ্ঞান শিক্ষা আমাদের জীবনকে যেমন আধুনিক সহজ ও সুন্দর করে তুলেছে তেমনি এর
বিভীষিকাময় রূপ সবকিছু ধ্বংস করে দিয়ে মানব জাতিকে স্তব্ধ করে দেয়।
অত্যাধুনিক যুদ্ধাস্ত্র, বোমা, ডিনামাইট, মরণাস্ত্র, ইত্যাদি ব্যবহার করে
নিমেষেই একটি জাতিকে ধ্বংস করে ফেলা হচ্ছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়
হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে আমোরিকা যে ধ্বংসলীলা খেলেছিল এটিই তার প্রকৃষ্ট
উদাহরণ। তবে বিজ্ঞানের অপব্যবহারের জন্য দায়ী মানুষই। মানুষ বিজ্ঞানকে অসৎ
উদ্দেশ্যে ব্যবহার করে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করে। সে জন্য সর্বাগ্রে প্রয়োজন
মানুষকে সচেতন হওয়া, বিজ্ঞান শিক্ষায় পারদর্শী হয়ে উন্নতি চরম শিখরে আরোহন
করা এবং এর ভয়াবহ দিক এড়িয়ে চলা।
উপসংহার:

উন্নত বিশ্বে বিজ্ঞান শিক্ষা যতটা প্রসারিত হয়েছে আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে
তা সম্ভব হয়নি। বাংলাদেশে বিজ্ঞান শিক্ষার প্রসার ঘটলে দেশটি উন্নতির দিকে
এগিয়ে যাবে। জনবহুল এ দেশের মানুষকে মানবসম্পদে পরিণত করতে পারলেই উন্নতি
আসবে। বিজ্ঞান শিক্ষাকে গ্রহণ করে একে বাস্তবায়ন করতে হবে। বিজ্ঞান শিক্ষার
ক্ষেত্রসমূহ যেমন নানাভাবে প্রসারিত হচ্ছে তেমনি এর ব্যবহারের দিকটাকেও
প্রধান্য দিতে হবে। কেননা বিজ্ঞানশিক্ষা আমাদের জীবনে আমূল পরিবর্তন এনে
দিবে।

Similar Search
বিজ্ঞানের সুফল ও কুফল প্রবন্ধ রচনা
বিজ্ঞানের সুফল ও কুফল রচনা pdf
বিজ্ঞানের ভালো মন্দ প্রবন্ধ রচনা
বিজ্ঞানের কুফল

Share This Article