নারী দিবসের কবিতা 2022 – Women’s Day Bengali Poem
নারী দিবসের কবিতা
আসন্ন আন্তর্জাতিক নারী দিবসের কবিতা ৷
৷৷ শিশুকন্যা – আলোর বন্যা ৷৷
– গৌতম মণ্ডল
বঙ্গ দেশে বান ডেকেছে
খুশির আলোক বন্যা !
বাঁচার মতন বাঁচবে এবার
ছোট্ট শিশু কন্যা ৷
ফুট্ ফুটে ওই কন্যা শিশু
চাঁদের কণা মুখ !
চাঁদের মতন ছড়িয়ে আলো
ঘুচিয়ে দেবে দুখ্ ৷
ভাবছো কেন ঠাম্মা দিদু ?
ভাবছো কেন মা ?
আঁধার মুছে জ্বালবে আলো
এই শিশু কন্যা !
লাল টুক্ টুক্ ,ঠোঁট দু’খানি
কাজল – কাজল চোখ !
খিল্ খিলিয়ে হাসছে মেয়ে
রাতকেটে ভোর হোক্ ৷
কন্যা শিশু, কন্যা শিশু
নয়কো তারা ফেল্ না ৷
আশার প্রদীপ, জ্বালবে এবার
বঙ্গ দেশের কন্যা ৷
রঙিণ ফিতে, কাচের চুড়ি
কপালে লাল টুক্ !
এই মেয়েটাই বড় হ’য়ে
রাখবে দেশের মুখ ৷
রুণুর ঝুনুর, পায়ের নূপুর
নোলক পরা নাক !
নতুন সকাল আসছে এবার
আঁধার মুছে যাক্ ৷
নারী দিবস কবিতা 2022
নারী দিবসের শুভেচ্ছা
যে পুরুষ একজন নারী কে ছুঁড়ে ফেলার জন্য সর্বশেষ হাতিয়ার নারীর চরিত্র
নিয়ে কথা বলে তাকে নারী দিবসের শুভেচ্ছা,
নিয়ে কথা বলে তাকে নারী দিবসের শুভেচ্ছা,
যে পুরুষ ইনবক্সে হট ছবি চেয়ে, বউ হিসেবে পর্দাশীল মেয়ে খোজে তাকে নারী
দিবসের শুভেচ্ছা,
দিবসের শুভেচ্ছা,
যে পুরুষ নিজের বউ কে চোখ রাঙিয়ে বলে ‘ওড়না ঠিক করো” কিন্তু অন্যের বউ কে বলে
“আপনাকে দারুণ লাগছে ভাবি” তাকে নারী দিবসের শুভেচ্ছা।
“আপনাকে দারুণ লাগছে ভাবি” তাকে নারী দিবসের শুভেচ্ছা।
যে পুরুষ সুযোগ পেলে নিজের লেডি কলিগের বাসায় বিশ্রাম নিতে যায়,অথচ বউ দেবরের
সাথে হেসে কথা বললে দুশ্চরিত্রা বলে তাকে নারী দিবসের শুভেচ্ছা।
সাথে হেসে কথা বললে দুশ্চরিত্রা বলে তাকে নারী দিবসের শুভেচ্ছা।
যে পুরুষ নিজের ঘরের বউ বা প্রেমিকাকে সম্মান না দিয়ে, সমাবেশে বক্তৃতা দেয় ”
মা জাতিকে সম্মান দিতে শিখুন ” তাকে নারী দিবসের শুভেচ্ছা।
মা জাতিকে সম্মান দিতে শিখুন ” তাকে নারী দিবসের শুভেচ্ছা।
একুশ শতাব্দীতে যে পুরুষ বউকে এন্ড্রয়েড ফোন ইউজ করা দেখে নিজেকে ইনসিকিউরড
মনে করে তাকে নারী দিবসের শুভেচ্ছা,
মনে করে তাকে নারী দিবসের শুভেচ্ছা,
যে পুরুষ এখনো ভাবে রান্না শুধু বউয়ের কাজ,তাকে নারী দিবসের শুভেচ্ছা,
যে পুরুষ আত্ত্বর্নিভরশীল পার্টনার পছন্দ করে, অথচ তার পাশে কোন পুরুষ দেখলেই
সন্দেহ করে তাকে নারী দিবসের শুভেচ্ছা,
সন্দেহ করে তাকে নারী দিবসের শুভেচ্ছা,
যে পুরুষ এখনো ভাবে দুনিয়াতে তার মা,বোন ছাড়া বাকি সব নারীর চরিত্রে
সমস্যা সেই পুরুষকে নারী দিবসের শুভেচ্ছা,
সমস্যা সেই পুরুষকে নারী দিবসের শুভেচ্ছা,
যে পুরুষ শ্বশুরের রাজকন্যা কে রানী করে রাখতে পারে না অথচ নিজের রাজকন্যার
জন্য স্বপ্নের রাজকুমার খোজে তাকে নারী দিবসের শুভেচ্ছা,
জন্য স্বপ্নের রাজকুমার খোজে তাকে নারী দিবসের শুভেচ্ছা,
যে পুরুষ নারীর শরীর টা নরম বলে নারী কে দুর্বল ভাবে আর নিজের শরীর শক্ত বলে
নিজেকে শক্তিশালী ভাবে তাকেও নারী দিবসের শুভেচ্ছা,
নিজেকে শক্তিশালী ভাবে তাকেও নারী দিবসের শুভেচ্ছা,
যে পুরুষ নিজের ফ্রাস্ট্রেশনে সিগারেট খেতে পারে অথচ একটা মেয়ে সিগারেট ধরালে
চরিত্রহীন বলে তাকেও নারী দিবসের শুভেচ্ছা, (সিগারেট সবার জন্য
ক্ষতিকর),
চরিত্রহীন বলে তাকেও নারী দিবসের শুভেচ্ছা, (সিগারেট সবার জন্য
ক্ষতিকর),
যে পুরুষ একজন নারীর সঙ্গে বিছানায় গিয়ে,আবার সেই নারীকেই পতিতা বলে তাকে
নারী দিবসের শুভেচ্ছা,
নারী দিবসের শুভেচ্ছা,
এই যে এত দোষ তোমাদের, এত আঘাত আমাদের সব শেষ কথা কিন্তু নারী পুরুষ একে
অন্যের পরিপূরক। পৃথিবীর অনেক পুরুষের সাফল্যের কারণও নারী আবার অনেক
পুরুষ সাপোর্ট দেয় বলেই অনেক নারী সাফল্যের সাথে এগিয়ে যায়।
অন্যের পরিপূরক। পৃথিবীর অনেক পুরুষের সাফল্যের কারণও নারী আবার অনেক
পুরুষ সাপোর্ট দেয় বলেই অনেক নারী সাফল্যের সাথে এগিয়ে যায়।
প্রতিটি নারীই তার নিজ নিজ জায়গায় তুলনাহীন সুন্দরী।। প্রতিটি সুন্দর মনের
নারীকে নারী দিবসে অফুরন্ত ভালোবাসা।
নারীকে নারী দিবসে অফুরন্ত ভালোবাসা।
আরো পড়ুন,
Women’s Day Poem In Bengali
আমিই সেই মেয়ে
– শুভ দাশগুপ্ত
আমিই সেই মেয়ে।
বাসে ট্রেনে রাস্তায় আপনি যাকে রোজ দেখেন
যার শাড়ি, কপালের টিপ কানের দুল আর পায়ের গোড়ালি
আপনি রোজ দেখেন।
আর
আরও অনেক কিছু দেখতে পাবার স্বপ্ন দেখেন।
স্বপ্নে যাকে ইচ্ছে মতন দেখেন।
আমিই সেই মেয়ে।
বিহারের প্রত্যন্ত গ্রামে দিনের আলোয় যার ছায়া মাড়ানো
আপনার ধর্মে নিষিদ্ধ, আর রাতের গভীরে যাকে বস্তি থেকে
তুলে আনতে পাইক বরকন্দাজ পাঠান আপনি
আর সুসজ্জিত বিছানায় যার জন্য অপেক্ষায় অধীন হয়
আপনার রাজকীয় লাম্পট্য
আমিই সেই মেয়ে।
আমিই সেই মেয়ে- আসামের চাবাগানে ঝুপড়ি কামিন বস্তি থেকে
যাকে আপনি নিয়ে যেতে চান সাহেবি বাংলোয় মধ্যরাতে
ফায়ার প্লেসের ঝলসে ওঠা আলোয় মদির চোখে দেখতে চান
যার অনাবৃত শরীর
আমি সেই মেয়ে।
রাজস্থানের শুকনো উঠোন থেকে পিপাসার জল আনতে যাকে আপনি
পাঠিয়ে দেন দশ মাইল দূরে সরকারি ইঁদারায়- আর কুড়ি মাইল
হেঁটে কান্ত বিধ্বস্ত যে রমণী ঘড়া কাঁখে ঘরে ফিরলেই যাকে বসিয়ে দেন
চুলার আগুনের সামনে আপনার রুটি বানাতে
আমিই সেই মেয়ে।
আমিই সেই মেয়ে- যাকে নিয়ে আপনি মগ্ন হতে চান গঙ্গার ধারে কিংবা
ভিক্টোরিয়ার সবুজে কিংবা সিনেমা হলের নীল অন্ধকারে, যার
চোখে আপনি একে দিতে চান ঝুটা স্বপ্নের কাজল আর ফুরিয়ে যাওয়া
সিগারেটের প্যাকেটের মত যাকে পথের পাশে ছুঁড়ে ফেলে আপনার ফুল সাজানো
গাড়ি শুভবিবাহ সুসম্পন্ন করতে ছুটে যায় শহরের পথে-
কনে দেখা আলোর গোধুলিতে একা দাঁড়িয়ে থাকা
আমিই সেই মেয়ে।
আমিই সেই মেয়ে- এমন কি দেবতারাও যাকে ক্ষমা করেন না। অহংকার
আর শক্তির দম্ভে যার গর্ভে রেখে যান কুমারীর অপমান
আর চোখের জলে কুন্তী হয়ে নদীর জলে
বিসর্জন দিতে হয় কর্ণকে। আত্মজকে।
আমিই সেই মেয়ে।
সংসারে অসময়ের আমিই ভরসা।
আমার ছাত্র পড়ানো টাকায় মায়ের ওষুধ কেনা হয়।
আমার বাড়তি রোজগারে ভাইয়ের বই কেনা হয়।
আমার সমস্ত শরীর প্রবল বৃষ্টিতে ভিজতে থাকে।
কালো আকাশ মাথায় নিয়ে
আমি ছাতা হয়ে থাকি।
ছাতার নিচে সুখে বাঁচে সংসার।
আপনি
আপনারা
আমার জন্য অনেক করেছেন।
সাহিত্যে কাব্যে শাস্ত্রে লোকাচারে আমাকে
মা বলে পুজো করেছেন।
প্রকৃতি বলে আদিখ্যেতা করেছেন- আর
শহর গঞ্জের কানাগলিতে
ঠোঁটে রঙ মাখিয়ে কুপি হাতে দাঁড় করিয়েও দিয়েছেন।
হ্যা, আমিই সেই মেয়ে।
একদিন হয়ত
হয়ত একদিন- হয়ত অন্য কোন এক দিন
আমার সমস্ত মিথ্যে পোশাক ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে
আমিই হয়ে উঠবো সেই অসামান্যা !
খোলা চুল মেঘের মত ঢাকবে আমার খোলা পিঠ।
দু চোখে জ্বলবে ভীষণ আগুন।
কপাল-ঠিকরে বেরুবে ভয়ঙ্কর তেজরশ্মি।
হাতে ঝলসে উঠবে সেই খড়গ।
দুপায়ের নুপুরে বেজে উঠবে রণদুন্দভি।
নৃশংস অট্টহাসিতে ভরে উঠবে আকাশ।
দেবতারাও আতঙ্কে স্তব্ধ হয়ে বলতে থাকবেন
মহামেঘপ্রভাং ঘোরাং মুক্তকেশীং চতুর্ভুজাং
কালিকাং দক্ষিণাং মুণ্ডমালা বিভুষিতাং।
বীভৎস দাবানলের মত
আমি এগোতে থাকবো ! আর আমার এগিয়ে যাবার পথের দুপাশে
মুণ্ডহীন অসংখ্য দেহ ছটফট করতে থাকবে-
সভ্যতার দেহ
প্রগতির দেহ-
উন্নতির দেহ-
সমাজের দেহ
হয়ত আমিই সেই মেয়ে ! হয়ত ! হয়ত বা।
বিশ্ব নারী দিবস কবিতা
পারো তো ধর্ষণ করো
– তসলিমা নাসরিন
আর ধর্ষিতা হয়ো না, আর না
আর যেন কোনও দুঃসংবাদ কোথাও না শুনি যে তোমাকে ধর্ষণ করেছে
কোনও এক হারামজাদা বা কোনও হারামজাদার দল।
আমি আর দেখতে চাই না একটি ধর্ষিতারও কাতর করুণ মুখ,
আর দেখতে চাই না পুরুষের পত্রিকায় পুরুষ সাংবাদিকের লেখা সংবাদ
পড়তে পড়তে কোনও পুরুষ পাঠকের আরও একবার মনে মনে ধর্ষণ করা ধর্ষিতাকে।
ধর্ষিতা হয়ো না, বরং ধর্ষণ করতে আসা পুরুষের পুরুষাঙ্গ কেটে ধরিয়ে দাও হাতে,
অথবা ঝুলিয়ে দাও গলায়,
খোকারা এখন চুষতে থাক যার যার দিগ্বিজয়ী অঙ্গ, চুষতে থাক নিরূপায় ঝুলে থাকা
অণ্ডকোষ, গিলতে থাক এসবের রস, কষ।
ধর্ষিতা হয়ো না,পারো তো পুরুষকে পদানত করো, পরাভূত করো,
পতিত করো, পয়মাল করো
পারো তো ধর্ষণ করো,
পারো তো ওদের পুরুষত্ব নষ্ট করো।
লোকে বলবে, ছি ছি, বলুক।
লোকে বলবে এমন কী নির্যাতিতা নারীরাও যে তুমি তো মন্দ পুরুষের মতই,
বলুক, বলুক যে এ তো কোনও সমাধান নয়, বলুক যে তুমি তো তবে ভালো নও
বলুক, কিছুতে কান দিও না, তোমার ভালো হওয়ার দরকার নেই,
শত সহস্র বছর তুমি ভালো ছিলে মেয়ে, এবার একটু মন্দ হও।
চলো সবাই মিলে আমরা মন্দ হই,
মন্দ হওয়ার মত ভালো আর কী আছে কোথায়!
নারী দিবস উপলক্ষে কবিতা
নারী
– কাজী নজরুল ইসলাম
সাম্যের গান গাই –
আমার চক্ষে পুরুষ-রমনী কোনো ভেদাভেদ নাই।
বিশ্বে যা-কিছু মহান্ সৃষ্টি চির-কল্যাণকর
অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।
বিশ্বে যা-কিছু এল পাপ-তাপ বেদনা অশ্রুবারি
অর্ধেক তার আনিয়াছে নর, অর্ধেক তার নারী।
নরককুন্ড বলিয়া কে তোমা’ করে নারী হেয়-জ্ঞান?
তারে বল, আদি-পাপ নারী নহে, সে যে নর-শয়তান।
অথবা পাপ যে – শয়তান যে – নর নহে নারী নহে,
ক্লীব সে, তাই সে নর ও নারীতে সমান মিশিয়া রহে।
এ-বিশ্বে যত ফুটিয়াছে ফুল, ফলিয়াছে যত ফল,
নারী দিল তাহে রূপ-রস-মধু-গন্ধ সুনির্মল।
তাজমহলের পাথর দেখেছে, দেখিয়াছ তার প্রাণ?
অন্তরে তার মোমতাজ নারী, বাহিরেতে শা-জাহান।
জ্ঞানের লক্ষ্ণী, গানের লক্ষ্ণী, শস্য-লক্ষ্ণী নারী,
সুষমা-লক্ষ্ণী নারীই ফিরিছে রূপে রূপে সঞ্চারি’।
পুরুষ এনেছে দিবসের জ্বালা তপ্ত রৌদ্রদাহ,
কামিনী এনেছে যামিনী-শান্তি, সমীরণ, বারিবাহ।
দিবসে দিয়াছে শক্তি-সাহস, নিশীথে হয়েছে বধু,
পুরুষ এসেছে মরুতৃষা লয়ে, নারী যোগায়েছে মধু।
শস্যক্ষেত্র উর্বর হ’ল, পুরুষ চালাল হল,
নারী সে মাঠে শস্য রোপিয়া করিল সুশ্যামল।
নর বাহে হল, নারী বহে জল, সেই জল-মাটি মিশে’
ফসল হইয়া ফলিয়া উঠিল সোনালি ধানের শীষে।
স্বর্ণ-রৌপ্যভার
নারীর অঙ্গ-পরশ লভিয়া হয়েছে অলঙ্কার।
নারীর বিরহে, নারীর মিলনে, নর পেল কবি-প্রাণ,
যত কথা তার হইল কবিতা, শব্দ হইল গান।
নর দিল ক্ষুধা, নারী দিল সুধা, সুধায় ক্ষুধায় মিলে’
জন্ম লভিছে মহামানবের মহাশিশু তিলে তিলে।
জগতের যত বড় বড় জয় বড় বড় অভিযান
মাতা ভগ্নী ও বধুদের ত্যাগে হইয়াছে মহীয়ান।
কোন্ রণে কত খুন দিল নর, লেখা আছে ইতিহাসে,
কত নারী দিল সিঁথির সিঁদুর, লেখা নাই তার পাশে।
কত মাতা দিল হৃদয় উপাড়ি’ কত বোন দিল সেবা,
বীরের স্মৃতি-স্তম্ভের গায়ে লিখিয়া রেখেছে কেবা?
কোন কালে একা হয়নি ক’ জয়ী পুরুষের তরবারি,
প্রেরণা দিয়াছে, শক্তি দিয়াছে বিজয়-লক্ষ্ণী নারী।
রাজা করিতেছে রাজ্য-শাসন, রাজারে শাসিছে রানী,
রানির দরদে ধুইয়া গিয়াছে রাজ্যের যত গ্লানি।
পুরুষ হৃদয়হীন,
মানুষ করিতে নারী দিল তারে আধেক হৃদয় ঋণ।
ধরায় যাঁদের যশ ধরে না ক’ অমর মহামানব,
বরষে বরষে যাঁদের স্মরণে করি মোরা উৎসব।
খেয়ালের বশে তাঁদের জন্ম দিয়াছে বিলাসী পিতা।
লব-কুশে বনে তাজিয়াছে রাম, পালন করেছে সীতা।
নারী সে শিখাল শিশু-পুরুষেরে স্নেহ প্রেম দয়া মায়া,
দীপ্ত নয়নে পরাল কাজল বেদনার ঘন ছায়া।
অদ্ভূতরূপে পুরুষ পুরুষ করিল সে ঋণ শোধ,
বুকে করে তারে চুমিল যে, তারে করিল সে অবরোধ।
তিনি নর-অবতার –
পিতার আদেশে জননীরে যিনি কাটেন হানি’ কুঠার।
পার্শ্ব ফিরিয়া শুয়েছেন আজ অর্ধনারীশ্বর –
নারী চাপা ছিল এতদিন, আজ চাপা পড়িয়াছে নর।
সে যুগ হয়েছে বাসি,
যে যুগে পুরুষ দাস ছিল না ক’, নারীরা আছিল দাসী।
বেদনার যুগ, মানুষের যুগ, সাম্যের যুগ আজি,
কেহ রহিবে না বন্দী কাহারও, উঠিছে ডঙ্কা বাজি’।
নর যদি রাখে নারীরে বন্দী, তবে এর পর যুগে
আপনারি রচা ঐ কারাগারে পুরুষ মরিবে ভুগে!
যুগের ধর্ম এই-
পীড়ন করিলে সে পীড়ন এসে পীড়া দেবে তোমাকেই।
শোনো মর্ত্যের জীব!
অন্যেরে যত করিবে পীড়ন, নিজে হবে তত ক্লীব!
স্বর্ণ-রৌপ্য অলঙ্কারের যক্ষপুরীতে নারী
করিল তোমায় বন্দিনী, বল, কোন্ সে অত্যাচারী?
আপনারে আজ প্রকাশের তব নাই সেই ব্যাকুলতা,
আজ তুমি ভীরু আড়ালে থাকিয়া নেপথ্যে কও কথা!
চোখে চোখে আজ চাহিতে পার না; হাতে রুলি, পায় মল,
মাথার ঘোম্টা ছিঁড়ে ফেল নারী, ভেঙে ফেল ও-শিকল!
যে ঘোমটা তোমা’ করিয়াছে ভীরু, ওড়াও সে আবরণ,
দূর করে দাও দাসীর চিহ্ন ঐ যত আভরণ!
ধরার দুলালী মেয়ে,
ফির না তো আর গিরিদরীবনে পাখী-সনে গান গেয়ে।
কখন আসিল ‘প্নুটো’ যমরাজা নিশীথ-পাখায় উড়ে,
ধরিয়া তোমায় পুরিল তাহার আঁধার বিবর-পুরে!
সেই সে আদিম বন্ধন তব, সেই হতে আছ মরি’
মরণের পুরে; নামিল ধরায় সেইদিন বিভাবরী।
ভেঙে যমপুরী নাগিনীর মতো আয় মা পাতাল ফুঁড়ি!
আঁধারে তোমায় পথ দেখাবে মা তোমারি ভগ্ন চুড়ি!
পুরুষ-যমের ক্ষুধার কুকুর মুক্ত ও পদাঘাতে
লুটায়ে পড়িবে ও চরণ-তলে দলিত যমের সাথে!
এতদনি শুধু বিলালে অমৃত, আজ প্রয়োজন যবে,
যে-হাতে পিয়ালে অমৃত, সে-হাতে কূট বিষ দিতে হবে।
সেদিন সুদূর নয়-
যেদিন ধরণী পুরুষের সাথে গাহিবে নারীরও জয়!