ভীষন কষ্টের প্রেমের গল্প – Bengali Sad Love Story – Koster Premer
Golpo
ভীষন কষ্টের প্রেমের গল্প
তুমি যে বলেছিলে অনুষ্ঠান করে বিয়ে হবে, কত স্বপ্ন দেখিয়েছিলে ?
তোর সিঁথিতে, যা এবার বিয়ে হোলো তো!
ভাসে উর্মির।
কলকাতায় কি একটা ব্যবসা করত, বছরে তিন চার বার গ্রামের বাড়িতে আসত ,
সবাই কেমন যেন এড়িয়ে চলত শম্ভুদাকে, আর শম্ভুদাও কাউকে খুব একটা
পাত্তা দিত না।
পরাই হলো কাল। একদিন স্কুলে যাওয়ার পথে শম্ভুদার চোখে পড়ে গেল , তারপর
থেকেই একপ্রকার যেচে যেচেই শম্ভুদা উর্মিলার সাথে কথা বলা আরম্ভ
করল, আর উর্মিলার কিশোরীর মনে শম্ভুদা নিজের জায়গাটা পাকাপোক্ত করে নিতে খুব
বেশি সময় নিল না।
যাবার সময় উর্মিলাকে সাথে করে নিয়ে গেছিল। তখন উর্মিলার বয়স সবে আঠারো
পেরিয়েছে। চোখে রঙিন স্বপ্ন নিয়ে বুকে একরাশ আশা নিয়ে নির্দ্বিধায়
শম্ভুদার হাত ধরে কলকাতার এই বস্তিতে এসে উঠেছিল উর্মিলা।
সেজেগুজে দাড়িয়ে থাকে, আর যত রাত বাড়ে ততোই জায়গাটা যেন জীবন্ত হয়ে
উঠত। কত রকম লোকের যাতায়াত, তার মধ্যে কেউ আবার বেসামাল হয়ে
রাস্তায় পড়ে আছে, নানা রকম সাজে মেয়েরা দাঁড়িয়ে আছে, পানের
দোকান গুলোতে উপচেপড়া ভিড়ে, কত রকম ফুলের মালা নিয়ে দোকানিরা বসে আছে,
লাইন দিয়ে সারি সারি আরো কত কিছুর দোকান, কেনা বেচা চলছে। সবাই যেন
খুব ব্যস্ত। দেখে মনে হতো যেন মেলা বসেছে।
এখানে আসার কিছু দিনের মধ্যেই উর্মিলা বুঝে গেছিল এটা কলকাতার ঠিক
কোন জায়গা। শম্ভু দা কে প্রশ্ন করাতে শম্ভু দা ওকে বুঝিয়েছিল হটাত্ করে
কলকাতার বুকে অতো সহজে বাড়ি ভাড়া পাওয়া যায় না, অনেক টাকা লাগে ,তাই
এখানে উঠেছি , কিন্ত কয়েক দিন পরেই ভদ্র পাড়ায় বাসা ভাড়া করে উঠে যাব আর
তার আগে বিয়ে টাও করে নেবে খুব ধুমধাম করে।
বাড়ি থেকে বেরিয়ে গিয়ে কোথা থেকে একটা সিঁদুরের কৌট কিনে এনে উর্মিলার
মাথায় ঢেলে দিয়েছিল, আর বলেছিল নে যা এই বিয়ে হয়ে গেল।
Bengali Sad Love Story
মাদুর বিছিয়ে সারারাত শুয়ে শুয়ে গুমড়ে গুমড়ে কেঁদেছিল । ঐ একদিনই
উর্মিলা রাতে ছুটি পেয়েছিল, কি জানি কি ভেবে শম্ভুদা আর তাকে বিরক্ত করেনি।
তাই সেবার নবমী পূজার দিন শম্ভুদা যখন তাকে একটু আড়ালে ডেকে নিয়ে
গিয়ে বিয়ের কথা বলল, তখন উর্মিলার বুকের ভেতর টা কেঁপে উঠল, সারা
শরীরের শিহরণ খেলে গেল। এই দুবছর ধরে উর্মিলা শম্ভুদাকে যখনই বিয়ের কথা বলেছে
তখনই শম্ভুদা বলেছে , দাঁড়া আর একটু গুছিয়ে নিই, কলকাতায় থাকার খরচ
অনেক । আমাকে আর কটা দিন সময় দে , তখন তো আর বোকা মেয়েটা বোঝেনি যে,
শম্ভুদা তার সাবালিকা হওয়ার অপেক্ষায় আছে। তাই বিয়ের কথাটা শুনে উর্মিলা
শম্ভুদার বুকে মুখ ডুবিয়ে পরম নিশ্চিন্তে ঘাড় কাত করল।, ভাবল তার দুঃখের দিন
বোধহয় শেষ হল। আর পরের দিন, মা দুর্গার সাথে সাথে সে ও মামাবাড়ি থেকে বিদায়
নিল। ,
মোটা টাকায় বিক্রি করতে আরম্ভ করল। সংসার বাঁধার যে টুকু স্বপ্ন উমিলা বুকের
ভেতর সযত্নে লুকিয়ে রেখেছিল ঐ দিনই তা ভেঙ্গে খান খান হয়ে গেল।
উর্মিলা বুঝতে পারল যে এখান থেকে সে আর কোনদিনই বেরোতে পারবে না ,আর যদিও
বা বেরোতে পারে সে যাবেই বা কোথায় ???
খুঁজছিল, ওদের নাকি একটা বড় নারী পাচারকারী দল আছে, আর সেই দলের পান্ডা
সমেত সবাই পুলিশের জালে ধরা পড়েছে একমাত্র শম্ভুদা ছাড়া। আর শম্ভুদা সেই
জন্যেই উর্মিলার সাথে গা ঢাকা দিয়ে এখানে তিন মাস রয়েছে, তা না হলে উর্মিলা ও
এতদিনে বিদেশে পাচার হয়ে যেত।
ভীষণ কষ্টের গল্প
কষ্ট হচ্ছিল, চোখ দিয়ে অঝোরে জল পড়ছিল,কিন্ত কেন যে সে কাঁদছে সে কিছুতেই
সেটা বুঝতে পারছিল না, তার তো আনন্দ হওয়া উচিত, ঐ লোকটা শুধু তো তার না আরো
অনেক মেয়ের ক্ষতি করেছে তা ছাড়া পুলিশ না ধরলে তাকেও তো অন্য কোনো দেশে
পাচার করে দিত , সেখানে যে কি অপেক্ষা করছিল তার জন্য কে জানে। কিন্ত এইসব কথা
মন যে কেন বোঝেনা ,কিসের যে এতো মায়া ওই বদমাইস লোকটার প্রতি , এইসব ভেবে
উর্মিলার নিজের প্রতি খুব রাগ হল।
জেলে যাওয়ার দুবছর পরেই শম্ভুদার কর্কট রোগ ধরা পড়েছিল, ওখানেই মরে গেলে তো
পারত , কিন্ত না, তা তো হবে না , উর্মিলার যে কপালে ভগবান একটুও সুখ লেখেনি,
তাই তো জীর্ণশীর্ণ অবস্থায় কোনমতে নিজের দেহটাকে টেনে নিয়ে শম্ভুদা উর্মিলার
এই বস্তিতে এসে উঠলো। আর উর্মিলাও ওকে দুর করে দিতে পারল না , সেই মায়া, কিন্ত
কিসের যে এতো মায়া তা এবারেও উর্মিলা বুঝতে পারল না।
করতে লাগলো , শেষের কটা দিন শম্ভুদার র মুখে একটাই কথা, আমাকে ক্ষমা করে দে
উর্মি, কিন্ত না উর্মিলা কোনোদিনই ঐ লোকটাকে ক্ষমা করতে পারবে না, ছোটবেলা থেকে
যতই অনাদরেরে অবহেলার জীবন হোক না কেন তার এখন ঐ জীবন টাকেই স্বর্গ মনে হয় আর
এ যে নরক, নরকের জীবনে যে সে কোনদিনই চায় নি।
দিকে মানুষটার কষ্ট উর্মিলা আর চোখে দেখতে পাচ্ছিল না ।এখনো ঘরে তার নিথর দেহটা
পড়ে আছে, এই একমাস সে তার ব্যবসা বন্ধ করে ঐ মানুষটার সেবা করেছে, জমানো পয়সা
সব শেষ। কেন যে মানুষ টাকে ফেলে দিতে পারল না, কিসের যে এত মায়া, অনেক ভেবেছে
উর্মি, কিন্ত কোনো সমাধান পায় নি।
তো উর্মিলার কাছে নেই ,কি করবে ভাবতে ভাবতে হঠাৎ মনে পড়ল ওর উলটো দিকের
পরিমলবাবু কথা ,ছোট্ট পানের দোকান টা সন্ধ্যে থেকেই ভিড় উপচে পড়ে , পরিমল
বাবু সেই প্রথম একবার উর্মিলার ঘরে এসেছিলো, মানুষ টা রাক্ষস, তাকে ছিড়েকুটে
মেরেছিল, যন্ত্রণায় উর্মিলা কুঁকড়ে গেছিল, দাম ভালোই দিয়েছিল কিন্ত আর
কোনদিন উর্মিলা তার কাছে নিজেকে বিক্রি করতে রাজি হয় নি। আজ ঐ একমাত্র ভরসা।
জিজ্ঞেস করল
করে নিই । নে চল চল তাড়াতাড়ি চল, বাসি মর এতক্ষণ ফেলে রাখতে নেই।
বাধ্য হয়েই পরিমলদা কে নিয়ে তার ঘরে চলল। যে লোকটা তার জীবন টা নষ্ট করেছে,
কেন যে তার জন্য এত যন্ত্রণা সহ্য করছে , কিসের যে এতো মায়া সেই প্রশ্নটা আবার
তার মাথা চাড়া দিয়ে উঠল।
অসমাপ্ত কষ্টের প্রেমের গল্প
জ্বালিয়ে উর্মিলা যখন শম্ভুদার বডির চারপাশ ঘুরছিল তখন ও উর্মিলার চোখ থেকে টপ
টপ করে জল পড়ছিল, উর্মিলা শুনেছিল, মৃত মানুষের জন্য জীবিত মানুষের
চোখের জল না পড়লে নাকি মৃত ব্যক্তির আত্মার শান্তি হয় না। আর শম্ভুদার
তো কেউ নেই, তাহলে এই এখানেও তো সে প্রতিশোধ নিতে পারতো ,কিন্তু কই তা তো
সে পারল না। সেই একটাই প্রশ্ন তার মাথায় ঘুরে ফিরে পাক খেতে লাগলো কিসের
এতো টান তার ঐ খারাপ লোক তার প্রতি।
উর্মিলা যখন ডুব দিল তখন পাড় থেকে মাসি চেঁচিয়ে বলল , উর্মি সিথিটা ভাল
করে ধুয়ে নে, সিঁদুরের চিহ্ন যেন না থাকে।
প্রথম শম্ভুদার মুখে বিয়ের কথা শুনে যে রকম অনুভব হয়েছিল সেই অনুভব আবার ফিরে
এলো আর তার সাথে পেল ও
তাতো আজ ও সে বহন করে চলছে, আর কোনদিনও তো সে সিঁদুরে তার সিথি রাঙাতে
পারবেনা , এই যে তার সিঁদুরেরই মায়া।