ভীষন কষ্টের প্রেমের গল্প – Bengali Sad Love Story – Koster Premer Golpo

Bongconnection Original Published
11 Min Read

 ভীষন কষ্টের প্রেমের গল্প – Bengali Sad Love Story – Koster Premer
Golpo

ভীষন কষ্টের প্রেমের গল্প - Bengali Sad Love Story - Koster Premer Golpo
Loading...


ভীষন কষ্টের প্রেমের গল্প

দাহ
মল্লিকা চাকি
কি হলো শম্ভু দা, প্রায় এক মাস হতে চলল, কই তুমি তো আমাকে এখনো বিয়ে করলে না!
তুমি যে বলেছিলে অনুষ্ঠান করে বিয়ে হবে, কত স্বপ্ন দেখিয়েছিলে ?
_নে নে উর্মি, আর বিয়ে বিয়ে করে মাথা খাস না তো, এই তো সিদুর পরিয়ে দিলাম
তোর সিঁথিতে, যা এবার বিয়ে হোলো তো!
আজ প্রায় দশ বছর আগের কথা, এখনো প্রত্যেকটা দিনের কথা ছবির মতন চোখের সামনে
ভাসে উর্মির।
ওর থেকে বয়সে প্রায় বারো বছরের বড় শম্ভুদা , হাবভাব সিনেমার হিরোদের মতো,
কলকাতায় কি একটা ব্যবসা করত, বছরে তিন চার বার গ্রামের বাড়িতে আসত , 
 সবাই কেমন যেন এড়িয়ে  চলত শম্ভুদাকে, আর শম্ভুদাও কাউকে খুব একটা
পাত্তা দিত না। 
কিন্ত উর্মিলা ক্লাস নাইনে ওঠার পর থেকেই ইস্কুলে শাড়ি পড়ে যেত, আর ঐ শাড়ি
পরাই হলো কাল। একদিন স্কুলে যাওয়ার পথে শম্ভুদার চোখে পড়ে গেল , তারপর
থেকেই  একপ্রকার যেচে যেচেই শম্ভুদা উর্মিলার  সাথে কথা বলা আরম্ভ
করল, আর উর্মিলার কিশোরীর মনে শম্ভুদা নিজের জায়গাটা পাকাপোক্ত করে নিতে খুব
বেশি সময় নিল না।
সেবার পুজোর সময় শম্ভুদা এসেছিল গ্রামের বাড়িতে আর দশমীর দিন কলকাতায় ফিরে
যাবার সময় উর্মিলাকে সাথে করে নিয়ে গেছিল। তখন উর্মিলার বয়স সবে আঠারো
পেরিয়েছে। চোখে রঙিন স্বপ্ন নিয়ে বুকে একরাশ আশা নিয়ে নির্দ্বিধায়
শম্ভুদার  হাত ধরে কলকাতার এই বস্তিতে এসে উঠেছিল উর্মিলা।
আরো পড়ুন,
প্রথম প্রথম উর্মিলার মনে হত পাড়াটা যেন কেমন, যেখানে সন্ধে হলেই মেয়েরা সব
সেজেগুজে দাড়িয়ে থাকে, আর যত রাত বাড়ে  ততোই জায়গাটা যেন জীবন্ত হয়ে
উঠত।   কত রকম লোকের যাতায়াত, তার মধ্যে কেউ আবার বেসামাল হয়ে
রাস্তায় পড়ে আছে, নানা রকম সাজে মেয়েরা দাঁড়িয়ে আছে,   পানের
দোকান গুলোতে উপচেপড়া ভিড়ে, কত রকম ফুলের মালা  নিয়ে দোকানিরা বসে আছে,
লাইন দিয়ে সারি সারি আরো কত কিছুর  দোকান, কেনা বেচা চলছে। সবাই যেন
খুব  ব্যস্ত। দেখে মনে হতো যেন মেলা বসেছে।

এখানে আসার কিছু দিনের মধ্যেই   উর্মিলা বুঝে গেছিল এটা কলকাতার ঠিক
কোন জায়গা। শম্ভু দা কে প্রশ্ন করাতে শম্ভু দা ওকে বুঝিয়েছিল হটাত্ করে
কলকাতার বুকে অতো সহজে বাড়ি ভাড়া পাওয়া যায় না, অনেক টাকা লাগে ,তাই 
এখানে উঠেছি , কিন্ত কয়েক দিন পরেই ভদ্র পাড়ায় বাসা ভাড়া করে উঠে যাব আর
তার আগে বিয়ে টাও করে নেবে খুব ধুমধাম করে।

না বিয়েটা আর শম্ভু দা করে নি। দিন দশেক পরে, একদিন বিয়ের কথা বলতেই রেগেমেগে
বাড়ি থেকে বেরিয়ে গিয়ে কোথা থেকে একটা সিঁদুরের কৌট কিনে এনে উর্মিলার
মাথায় ঢেলে দিয়েছিল, আর বলেছিল নে যা এই বিয়ে হয়ে গেল।

Bengali Sad Love Story

Loading...
সেদিন রাতে উর্মিলা কিছুতেই আর শম্ভুদার সাথে চৌকি তে শোয় নি , মেঝেতে একটা
মাদুর বিছিয়ে  সারারাত শুয়ে শুয়ে গুমড়ে গুমড়ে কেঁদেছিল । ঐ একদিনই
উর্মিলা রাতে ছুটি পেয়েছিল, কি জানি কি ভেবে শম্ভুদা আর তাকে বিরক্ত করেনি।
ছোটবেলা থেকেই বাপ মা মরা মেয়ে উর্মিলা , বড় অনাদরে মামারবাড়ীতে মানুষ।
তাই  সেবার নবমী পূজার দিন  শম্ভুদা যখন তাকে একটু আড়ালে ডেকে নিয়ে
গিয়ে  বিয়ের কথা বলল, তখন উর্মিলার বুকের ভেতর টা কেঁপে উঠল, সারা
শরীরের শিহরণ খেলে গেল। এই দুবছর ধরে উর্মিলা শম্ভুদাকে যখনই বিয়ের কথা বলেছে
তখনই শম্ভুদা বলেছে ,  দাঁড়া আর একটু গুছিয়ে নিই, কলকাতায় থাকার খরচ
অনেক । আমাকে আর কটা দিন সময় দে , তখন তো আর বোকা মেয়েটা বোঝেনি যে, 
শম্ভুদা তার সাবালিকা হওয়ার অপেক্ষায় আছে। তাই বিয়ের কথাটা শুনে উর্মিলা
শম্ভুদার বুকে মুখ ডুবিয়ে পরম নিশ্চিন্তে ঘাড় কাত করল।, ভাবল তার দুঃখের দিন
বোধহয় শেষ হল। আর পরের দিন, মা দুর্গার সাথে সাথে সে ও মামাবাড়ি থেকে বিদায়
নিল। ,
কলকাতায় আসার ঠিক পনেরো দিন পর থেকে শম্ভুদাও তাকে সাজিয়ে গুজিয়ে প্রতি রাতে
মোটা টাকায় বিক্রি করতে আরম্ভ করল। সংসার বাঁধার যে টুকু স্বপ্ন উমিলা বুকের
ভেতর সযত্নে লুকিয়ে রেখেছিল ঐ দিনই তা ভেঙ্গে খান খান হয়ে গেল। 
উর্মিলা  বুঝতে পারল যে এখান থেকে সে আর কোনদিনই বেরোতে পারবে না ,আর যদিও
বা বেরোতে পারে  সে যাবেই বা কোথায় ???
ঠিক তিনমাস পরে শম্ভুদা পুলিশের জালে ধরা পড়ল, অনেক দিন ধরেই শম্ভুদাকে পুলিশ
খুঁজছিল, ওদের নাকি  একটা বড় নারী পাচারকারী দল আছে, আর সেই দলের পান্ডা
সমেত সবাই পুলিশের জালে ধরা পড়েছে একমাত্র শম্ভুদা ছাড়া। আর শম্ভুদা সেই
জন্যেই উর্মিলার সাথে গা ঢাকা দিয়ে এখানে তিন মাস রয়েছে, তা না হলে উর্মিলা ও
এতদিনে বিদেশে পাচার হয়ে যেত।

ভীষণ কষ্টের গল্প

এত কিছু জানার পরও যখন শম্ভুদাকে  পুলিশ নিয়ে যাচ্ছিল তখন উর্মিলার খুব
কষ্ট হচ্ছিল, চোখ দিয়ে অঝোরে জল পড়ছিল,কিন্ত কেন যে সে কাঁদছে সে কিছুতেই
সেটা বুঝতে পারছিল না, তার তো আনন্দ হওয়া উচিত, ঐ লোকটা শুধু তো তার না আরো
অনেক মেয়ের ক্ষতি করেছে  তা ছাড়া পুলিশ না ধরলে তাকেও তো অন্য কোনো দেশে
পাচার করে দিত , সেখানে যে কি অপেক্ষা করছিল তার জন্য কে জানে। কিন্ত এইসব কথা
মন যে কেন বোঝেনা ,কিসের যে এতো মায়া ওই বদমাইস লোকটার প্রতি , এইসব ভেবে
উর্মিলার নিজের প্রতি খুব রাগ হল।
তারপর প্রায় দশ বছর কেটে গেছে,গত এক মাস আগে শম্ভুদা জেল থেকে ছাড়া পেয়েছে,
জেলে যাওয়ার দুবছর পরেই শম্ভুদার কর্কট রোগ ধরা পড়েছিল, ওখানেই মরে গেলে তো
পারত , কিন্ত না, তা তো হবে না , উর্মিলার যে কপালে ভগবান একটুও সুখ লেখেনি,
তাই তো জীর্ণশীর্ণ অবস্থায় কোনমতে নিজের দেহটাকে টেনে নিয়ে শম্ভুদা উর্মিলার
এই বস্তিতে এসে উঠলো। আর উর্মিলাও ওকে দুর করে দিতে পারল না , সেই মায়া, কিন্ত
কিসের যে এতো মায়া তা এবারেও উর্মিলা বুঝতে পারল না।
মানুষটা কে উর্মিলা ফেলে দিতে তো পারলোই  না উল্টে তাকে যথাসম্ভব শুশ্রূষা
করতে লাগলো , শেষের কটা দিন শম্ভুদার র মুখে একটাই কথা, আমাকে ক্ষমা করে দে
উর্মি, কিন্ত না উর্মিলা কোনোদিনই ঐ লোকটাকে ক্ষমা করতে পারবে না, ছোটবেলা থেকে
যতই অনাদরেরে অবহেলার জীবন হোক না কেন তার এখন ঐ জীবন টাকেই স্বর্গ মনে হয় আর
এ যে নরক, নরকের জীবনে যে সে কোনদিনই চায় নি।
কিন্তু গতকাল ভোররাতে সব সম্পর্ক শেষ করে ঐ লোকটা পরলোকে যাত্রা করেছে। শেষের
দিকে মানুষটার কষ্ট উর্মিলা আর চোখে দেখতে পাচ্ছিল না ।এখনো ঘরে তার নিথর দেহটা
পড়ে আছে, এই একমাস সে তার ব্যবসা বন্ধ করে ঐ মানুষটার সেবা করেছে, জমানো পয়সা
সব শেষ। কেন যে মানুষ টাকে ফেলে দিতে পারল না, কিসের যে এত মায়া, অনেক ভেবেছে
উর্মি, কিন্ত কোনো সমাধান পায় নি। 
এখন যারা দাহ করবে তারা এসে বলে গেছে মিনিমাম দুই হাজার টাকা লাগবে । অতো টাকা
তো উর্মিলার কাছে নেই ,কি করবে ভাবতে ভাবতে হঠাৎ মনে পড়ল ওর উলটো দিকের
পরিমলবাবু কথা ,ছোট্ট পানের দোকান টা সন্ধ্যে থেকেই ভিড় উপচে পড়ে , পরিমল
বাবু সেই প্রথম একবার উর্মিলার ঘরে এসেছিলো, মানুষ টা রাক্ষস, তাকে ছিড়েকুটে
মেরেছিল, যন্ত্রণায় উর্মিলা কুঁকড়ে গেছিল, দাম ভালোই দিয়েছিল কিন্ত আর
কোনদিন উর্মিলা তার কাছে নিজেকে বিক্রি করতে রাজি হয় নি। আজ ঐ একমাত্র ভরসা।
গুটি গুটি পায়ে ওর কাছে গিয়ে দাঁড়ালো উর্মিলা। -কিরে উর্মি কি চাই? পরিমল
জিজ্ঞেস করল
-আমাকে দুই হাজার টাকা ধার দিতে পারবে পরিমলদা? 
-আড় চোখে উর্মির বুকের দিকে তাকিয়ে পরিমল বলল কেন রে? কি হয়েছে? 
 
সব শুনে পরিমল বলল, দেখ তোকে আমি টাকাটা এমনিই দেবো, দাড়া আগে দোকান টা বন্ধ
করে নিই । নে চল চল তাড়াতাড়ি চল, বাসি মর এতক্ষণ ফেলে রাখতে নেই।
উর্মিলা বুঝতেই পারল পরিমলদা তাকে এমনিতে টাকাটা দেবে না, তাই সে একপ্রকার
বাধ্য হয়েই পরিমলদা কে নিয়ে তার ঘরে চলল। যে লোকটা তার জীবন টা নষ্ট করেছে,
কেন যে তার জন্য এত যন্ত্রণা সহ্য করছে , কিসের যে এতো মায়া সেই প্রশ্নটা আবার
তার মাথা চাড়া দিয়ে উঠল।

অসমাপ্ত কষ্টের প্রেমের গল্প

শম্ভুদার বডির পাশে বসে যন্ত্রের মত উর্মিলা চলল শ্মশানে , পাটকাঠি গুলো
জ্বালিয়ে উর্মিলা যখন শম্ভুদার বডির চারপাশ ঘুরছিল তখন ও উর্মিলার চোখ থেকে টপ
টপ করে জল পড়ছিল, উর্মিলা শুনেছিল,  মৃত মানুষের জন্য জীবিত মানুষের
চোখের জল না পড়লে  নাকি মৃত ব্যক্তির আত্মার শান্তি হয় না। আর শম্ভুদার
তো কেউ নেই, তাহলে এই এখানেও তো সে প্রতিশোধ নিতে পারতো ,কিন্তু কই  তা তো
সে পারল না।  সেই একটাই প্রশ্ন তার মাথায় ঘুরে ফিরে পাক খেতে লাগলো কিসের
এতো টান তার ঐ খারাপ লোক তার প্রতি।
মেয়েদের কষ্টের গল্প: 
উর্মিলার চোখের সামনে শম্ভুদার দেহটা পুড়ে ছাই হয়ে গেল। গঙ্গায় নাভি টা ফেলে
উর্মিলা যখন ডুব দিল তখন পাড় থেকে মাসি  চেঁচিয়ে বলল , উর্মি সিথিটা ভাল
করে ধুয়ে নে, সিঁদুরের চিহ্ন যেন না থাকে।  
উর্মি কেঁপে উঠলো, সারা শরীরে শিহরণ খেলে গেল, সেই আঠারো বছরের কিশোরীর মনে
প্রথম শম্ভুদার মুখে বিয়ের কথা শুনে যে রকম অনুভব হয়েছিল সেই অনুভব আবার ফিরে
এলো আর তার সাথে  পেল ও
ওর প্রশ্নের উত্তর, 
 শম্ভুদা অতি অবহেলায় যে সিঁদুর উর্মির সিঁথিতে পরিয়ে দিয়েছিল 
তাতো আজ ও সে বহন করে চলছে, আর কোনদিনও তো সে  সিঁদুরে তার সিথি রাঙাতে
পারবেনা , এই যে তার সিঁদুরেরই মায়া।
আরো পড়ুন ,

Share This Article