২৩ শে জানুয়ারি কবিতা
23 শে জানুয়ারি নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর 127 তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আপনার জন্য রইলো সেরা কিছু কবিতা ।
নিরুত্তর
– গৌতম মণ্ডল
নকলের ন্যাকামোতে ভন্ড
রং মেখে সেজে
গুজে মস্তি ৷
গুজে মস্তি ৷
মুখোশে মুখ ঢেকে সন্ত্রাস
বুভূক্ষু প্রাণে
অস্বস্তি !
অস্বস্তি !
ভালোবাসা মমত্ব বন্ধন
হৃদয়ের অনাবিল
আকুতি ৷
আকুতি ৷
ফুলে ফুলে আতরের গন্ধ
কৃত্রিম নয় সে তো, সত্যি ৷
জোট ভাঙে জোট গড়ে হরদম
ঘোলা জলে খাবি খায় জনমত
সীমান্তে কাঁটাতারে রক্ত !
সন্ত্রাসী ধ্বজা উড়ে
পত্ পত্ ৷
পত্ পত্ ৷
প্রণয়ের মসনদে মশগুল
স্বপ্নের দিন গুনে ,
জনগন ৷
জনগন ৷
রেশনের থলে হাতে লাইনে –
ক্ষুধাতুর দেশে জন সাধারণ ৷
মুক্তির যোদ্ধারা একদিন
এঁকেছিল দুটি চোখে স্বপ্ন ৷
রক্তের বিনিময়ে দেশটা –
শতভাগে ভেঙে বিচ্ছিন্ন ?
সংসদে ঘুরপাক ‘ লোকপাল ‘
আন্নার অনশন ব্যর্থ ?
জনগন ভ্যাবাচ্যাকা হতবাক্
বোঝে না সে সাম্যের
অর্থ !
অর্থ !
দিকে দিকে খুনো খুনী সন্ত্রাস
প্রতিবাদী মুখ আজ বন্ধ ৷
মিছিলের পায়ে পায়ে জনগণ
নিশ্বাসে বারুদের গন্ধ ৷
কয়লার ময়লা তো যায়নি
মাঝে মাঝে উঁকি ঝুঁকি , CBI
ভাবছোকি বেঁচে আছে , নেতাজী ?
উত্তর দেবার আজ , কেউ নাই ৷
Netaji Birthday Poem In Bengali
প্রিয় নেতাজী,
অনেক দিন ধরে চিঠি লিখবো ভাবছিলাম
কিছুতেই আর হয়ে উঠছিলো না।
আজ কোনো একটা ঘটনার নিরিখে,
তোমাকে চিঠি লিখতে বসলাম।
ছেলেবেলায় আমাদের দোতলা ড্রইং রুমে,
তোমার ছবি।
জন্মদিনে পেতাম বই, সেখানেও তুমি
বাবার গল্পে তোমারি বীরত্ব।
দেখতে দেখতে, শুনতে শুনতে,
ক্রমে আমিও তোমার ভক্ত।
বাবা বলতেন,
ইন্ডিয়ার আর একজন নেতাজীর দরকার ছিল
মা গাইতেন,
বীর সুভাষের মহান দেশ।
দাদু বলতেন,
ছেলেটাকে ওরা শেষ করে দিলো
ঠাম্মার চোখে তখন, আঁচলের খুঁট।
এসবের মধ্যে বড়ো হওয়া আমিও,
কেমন একটা ঘরের মধ্যে থাকতাম।
ভাবতাম, পারতে তুমি সব পারতে,
যদি আর একবার,
একবার আমাদের মধ্যে তোমাকে পেতাম।
আজ উত্তর চল্লিশেও আমার একই ভোর
তুমি পারতে, কেন না দেশের মাটিতে
দেশোপ্রেমের মতো জোরালো একটা ঝাঁকুনি
দেবার ক্ষমতা তখন আর কারুর ছিল না।
এখনও আছে কি ?
তোমার হারিয়ে যাবার পর,
দেশে কত কমিশন বসেছে।
ভারতের পূর্ব-পশ্চিম, উত্তর-দক্ষিণে
কোনো পীর, কোনো সন্তো,
কোনো দয়ালু বৃদ্ধ কে দেখে
ভুল করেছে সবাই,
ছুটে গেছে তুমি মনে করে।
কিন্তু ফিরেছে মাথা নেড়ে,
তবু তোমাকে পাবার আশায় বুক বেঁধেছে।
তুমি তো শুধু বসু বাড়ির নও,
গোটা ভারতবর্ষের মনিকোঠার হীরক।
যার আলোর শুদ্ধতা,
কালো কে সাদা করতে পারে।
এই বিশ্বাসে ভর করে সবাই ভেবেছিলো
তুমি আসবে, আসবেই।
কিন্তু এলে না।
কেটে গেলো অনেক গুলো বছর,
পেরিয়ে এলাম জীবনের অনেক গলি খুঁজে।
তুমি এখন বিমান বন্দরে, সভা সমিতিতে,
রিসার্চ বিউরোতে,
এমন কি ছেলের নামকরণেও,
শুধু হৃদয় যেন দোলা দেয় না।
জানো ? তোমার জন্মদিনটা
এখন সবাই ছুটির দিন বলে
আয়েশ করে উপভোগ করে।
আর ছেলেরা, তারা তো এখন
দেশ থেকে বিদেশের খবরই বেশি রাখে।
আর মেয়েরা, তারাও স্বাধীনতার
ভেলায় চড়ে হতচকিত।
শুধু মাটিটা কাঁদে,
সেই কান্না যেন ভূমিকম্প, খরা
এলেনিনও, বন্যা হয়ে চারিদিক ভাসিয়ে দেয়।
এখনো অভিমান করে শুয়ে থাকবে রেনকোজিতে?
আজ যখন ঘাড়ের উপর AK-47 এর নিশ্বাষ
রক্তের হরি খেলা ধর্মের জিগিরে
তখন শোনাও সেই আওয়াজ।
আমি সুভাষ বলছি,
মেয়েটা দৌড়ে এসে বলবে,
মা.. মা দেখো উনি আসছেন
পাশের বাড়ির মেসোমশাই ডাকবেন জানলা দিয়ে
বৌমা আমি বলিনি উনি ফিরে আসবেন ?
খোলা জানালার ধরে দাঁড়াবেন মায়েরা,
তাদের ডান হাতে শঙ্খ, বাঁ চোখে জল,
নদী হবে উত্তল, নৌকা বেসামাল
পরান মাঝিও চেঁচাবে,
উনি আসতেসেন…
সবুজ মাঠে শিশুদের হাতে পতাকার দোলা
উনি আসছেন, উনি আসছেন,
উনি ফিরে আসছেন।
তোমার হারিয়ে যাওয়া জন্মদিনের ভেতর থেকে
উঠে আসুক, আর একটা ২৩শে
আজ স্বাধীনতার ঠিক আগের মুহূর্তে দাঁড়িয়ে
তোমাকে আমার এই চিঠি
প্রণাম নিও, ভালো থেকো নেতাজী।
Also read,
Netaji Birthday Images, Pic, Wishes In Bengali 2024
Netaji Birthday Bengali Poem
নেতাজি সুভাষ
– সৌম্যকান্তি
দেশের প্রতি মাটির প্রতি
ভালোবাসা ছিল নিরলস !
দেশমাতৃকার দামাল ছেলে
তুমি সুভাষচন্দ্র বোস !
দেশের সকল লোকে তোমায়
নেতাজী বলেই জানে !
দেশের স্বাধীনতায় তোমার
অবদান সবাই মানে !
না থাকলে তুমি…
হে বীর সংগ্রামী …
ভারতবর্ষ স্বাধীন হত না ..
তুমি তো ছড়ালে স্বাধীনচেতনা..
আজ এই স্বাধীন ভারতে
তোমায় প্রণাম জানাই –
ভারতবাসী যেন কখনো
তোমাকে ভুলে না যায় !
আজকের দিনে আমার দেশে –
তোমায় সকলে স্মরে না হে বীর !
মাঝে মাঝে প্রশ্ন জাগে –
তুমি কি শুধুই বাঙালীর ?
নেতাজি জয়ন্তী কবিতা
আমি সুভাষ বলছি
– শুভ দাশগুপ্ত
তোমার পাথরে দিয়েছি মালা
এত মালা, এত ফুল, তুমিই ঢাকা পড়ে গেছ
তুমি পাথর না হলে রাগ করতে
ছাপ্পান্ন বছর আগের এক মধ্যরাতে
এলগিন রোডের তিন তলার ঘরে আলো জ্বলছিল
চাদর গায়ের এক ছায়ামূর্তি পায়চারি করছিল অবিরাম
বাইরের রাস্তায় ইংরেজ পুলিশের চর
সতর্ক সজাগ চোখে দেখছিল
তার সব সতর্কতাকে বুদ্ধু বানিয়ে
তুমি তখন অন্ধকার চিরে ছুটে চলেছ আলোর পথে
দেশের মানুষ, কাকপক্ষী কেউ টের পায়নি।
তুমি চলে যাবার পর
ছাপ্পান্নটা শীত, বর্ষা, গ্রীষ্ম উধাও, তুমিও
সেই থেকে প্রত্যেক জানুয়ারিতে
পৃথিবীর এপাড়া, ও পাড়া সব মাটিতে
তোমার অনশ্বর পায়ের ছাপ
সব রাইফেলে তোমার বুকের বারুদ
সব কুচকাওয়াজে তোমার সেনার ছন্দ
পরশ পাথরের মত স্বাধীনতাকে খুঁজেছে
তোমার অন্তরে লুকিয়ে থাকা খ্যাপা
তোমার গন্থব্য ছিল স্বাধীনতা
তোমার পথ ছিল স্বাধীনতা
তোমার স্বপ্ন ছিল স্বাধীনতা
তোমার প্রেম ছিল স্বাধীনতা
তুমি রক্ত চেয়েছিলে স্বাধীনতার জন্য, তুমি তাই পাথর
যারা স্বাধীনতার আড়ালে চেয়েছিল গদি, চেয়েছিল সিংহাসন
ইংরেজের ছেড়ে জাওয়া লুটের রাজ্যপাট, তারা রইল সুখে
ভারতবর্ষের টাকায় তাদের সুখ, তোমার নয়
ভারতবর্ষের অফিসে, আদালতে তাদের ছবি, তোমার নয়
ভারতবর্ষের সংবিধানে তাদের সই-সাবুদ, তোমার নয়
ইংরেজ গরীব মানুষকে পায়র নীচে রাখত
আমরা বড়লোকদের মাথায় করে রেখেছি
স্মাগলার কিম্বা ডাকাতকে জোড় হাতে সভাপতির আসনে আহ্বান করেছি
ইংরেজ এদেশের ধন সম্পত্তি লুট করত
আমরা দেশটাকে বেচে দিচ্ছি
ইংরেজ দিয়েছে চাবুক, লাঠি, গুলি
আমরা দিয়েছি মাস্তান, মাফিয়া, নেতা আর বুলি
ইংরেজ দিয়েছে কালাপানি, সেলুলার জেল
আমরা দিয়েছি টিভিতে সুপারহিট মোকাবিলা
আর আইনসভায় আয়ারাম, গয়ারামের খেল
ছাপ্পান্ন বছর আগের এক মধ্যরাতে
পরাধীন এই দেশ ছেড়ে তুমি চলে গিয়াছিলে
স্বাধীন এক স্বদেশে ফিরে আসার স্বপ্ন নিয়ে, তুমি ফিরে আসনি
স্বাধীনতা এসেছে, তার কাঁধে ঝুলি ভরে নিয়ে এসেছে
ভোট নামক রাজস্যূয় যজ্ঞ
গণতন্ত্র নামক চিরায়ত মাত্স্যন্যায়
প্রগতি নামক লোক-ঠকানো স্ট্যাটিসটিক্স
সংহতি নামক বিস্ফোরণের চুরমার
ঐতিহ্য নামক মন্দির-মসজিদের ঝগড়া
আর আসমুদ্র হিমাচল ভরিয়ে দেওয়া
ভাষণ-ভাষণ আর ভাষণ
ছাপ্পান্ন বছর ধরে তুমি পাথর হয়ে আছ
ছাপ্পান্ন বছর ধরে ভারতবর্ষ অধীর অপেক্ষায় কান পেতে আছে
ইথার-তরঙ্গে কবে হঠাৎ শোনা যাবে
স্বাধীনতার নিজস্ব কণ্ঠস্বর
আমি সুভাষ বলছি।
Also read,