Basanta Utsav Kobita Lyrics
আজি বসন্ত জাগ্রত দ্বারে
– রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
আজি বসন্ত জাগ্রত দ্বারে।
তব অবগুণ্ঠিত কুণ্ঠিত জীবনে
কোরো না বিড়ম্বিত তারে।
আজি খুলিয়ো হৃদয়দল খুলিয়ো,
আজি ভুলিয়ো আপনপর ভুলিয়ো,
এই সংগীত-মুখরিত গগনে
তব গন্ধ তরঙ্গিয়া তুলিয়ো।
এই বাহির ভুবনে দিশা হারায়ে
দিয়ো ছড়ায়ে মাধুরী ভারে ভারে।
অতি নিবিড় বেদনা বনমাঝে রে
আজি পল্লবে পল্লবে বাজে রে–
দূরে গগনে কাহার পথ চাহিয়া
আজি ব্যাকুল বসুন্ধরা সাজে রে।
মোর পরানে দখিন বায়ু লাগিছে,
কারে দ্বারে দ্বারে কর হানি মাগিছে,
এই সৌরভবিহ্বল রজনী
কার চরণে ধরণীতলে জাগিছে।
ওগো সুন্দর, বল্লভ, কান্ত,
তব গম্ভীর আহ্বান কারে।
বসন্ত উৎসব নিয়ে নিয়ে কবিতা
ফাল্গুন
– আহমেদ রব্বানী
সেদিনও ফাগুন ছিল,
বসন্ত এসেছিল এই বাংলায়।
বাগানে বাগানে ফুটেছিল ফুল
গাছে গাছে ফুটেছিল শিমুল পলাশ
আর কৃষ্ণচূড়ার লাল।
ছিল কোকিলের কুহুতান।
হঠাৎ ফুলগুলো সব ঝরে গেল!
কোকিলের গান থেমে গেল!
সালাম বরকত রফিকের রক্তে রাঙা হল রাজপথ!
ছেলেহারা শত মায়ের অশ্রুতে নদী হল সারা বাংলা!
ভাইহারা বোনেরা কেঁদে ফেরে আজও
আর যতন করে সাজায় ফুলের ডালা।
সেদিন ৮ ফাল্গুন ছিল,
বিষাক্ত নখের ছোবল হেনে
হায়েনারা পালিয়ে গেল।
আরো পড়ুন, বসন্ত উৎসব নিয়ে কবিতা
বসন্ত উৎসব উপলক্ষে কবিতা
বসন্ত বন্দনা
– নির্মলেন্দু গুণ
হয়তো ফুটেনি ফুল রবীন্দ্র-সঙ্গীতে যতো আছে,
হয়তো গাহেনি পাখি অন্তর উদাস করা সুরে
বনের কুসুমগুলি ঘিরে । আকাশে মেলিয়া আঁখি
তবুও ফুটেছে জবা,–দূরন্ত শিমুল গাছে গাছে,
তার তলে ভালোবেসে বসে আছে বসন্তপথিক ।
এলিয়ে পড়েছে হাওয়া, ত্বকে কী চঞ্চল শিহরণ,
মন যেন দুপুরের ঘূর্ণি-পাওয়া পাতা, ভালোবেসে
অনন্ত সঙ্গীত স্রোতে পাক খেয়ে মৃত্তিকার বুকে
নিমজ্জিত হতে চায় । হায় কী আনন্দ জাগানিয়া ।
এমন আগ্রাসী ঋতু থেকে যতোই ফেরাই চোখ,
যতোই এড়াতে চাই তাকে দেখি সে অনতিক্রম্য ।
বসন্ত কবির মতো রচে তার রম্য কাব্য খানি
নবীন পল্ববে, ফুলে ফুলে । বুঝি আমাকেও শেষে
গিলেছে এ খল-নারী আপাদমস্তক ভালোবেসে ।
আমি তাই লঘুচালে বন্দিলাম স্বরুপ তাহার,
সহজ অক্ষরবৃত্তে বাঙলার বসন্ত বাহার ।
বসন্ত উৎসব কবিতা মন্দাক্রান্তা সেন
আজ বসন্তে কৃষ্ণচূড়ায়,
বিদ্রোহ তার কেতন উড়ায়
পথে পথে যত পড়ে থাকা লাশ
শিমুল পলাশ শিমুল পলাশ
বিদ্রোহ তার পাপড়ি কুড়ায়
এই বসন্তে কৃষ্ণচূড়ায়
রক্ত রক্ত বলোনা তুমি কার
হে সংগ্রামের শহিদ আমার
তােমার যুদ্ধ আমাকে পুড়ায়
আজ রক্তিম কৃষ্ণচূড়ায়
ওহে বসন্ত ওহে বসন্ত
মৃত্যু আজকে কী প্রাণবন্ত
হাতে রেখে হাত হৃদয় জুড়ায়
এই বসন্তে কৃষ্ণচূড়ায় …
বসন্ত উৎসব কবিতা রামচন্দ্র পালের
বসন্ত উৎসব
-জয় গোস্বামী
কাকে তুলে দিতে গেছি ভোরবেলার ট্রেনে?
দোলের পরের দিন। গাছে গাছে তখনও আবির।
ওই তো প্রথম রোদ নেমে এল তার মুখে, কপালে —
ট্রেন আসতে দেরী আছে। আরও দেরী, আরও দেরী হোক!
চোখ তো মুখের দিকে তাকাতে পারছে না
ঘুরেফিরে শুধু দেখছে শ্যামলী হাতের পাতা তার,
রুমাল পাকাচ্ছে মুঠো, করতলে এখনো কালকের
রঙছাপ – স্নান যাকে স্বেচ্ছায় অধৌত রেখে গেছে
ট্রেন এসে পড়ল, ওই তো উঠে যাচ্ছে, হাতে- কাঁধে ব্যাগ–
একবার ঘোরালো দৃষ্টি — কী ছিল সে- তাকানোর রঙ?
কেন সে ঠিকানা দেয়নি? কেন বলেছিল
‘কিছুই বোঝেন না আপনি ! জানেনই না রঙ দেওয়ার একটাও নিয়ম!’
সেদিন বুঝিনি আর আজকেও বুঝি না।
আজ তো ফাল্গুন শেষ। হেমন্তও ফুরোলো এখন।
কী বলতে চেয়েছিল? আঠাশ বছর আগে? তার
সেই কথা হয়ত জানত বসন্তের শান্তিনিকেতন।
Tags –
Basanta Utsav,
Bangla Kobita,
Bengali Poem
Basanta Utsav,
Bangla Kobita,
Bengali Poem