বসন্ত উৎসব নিয়ে কবিতা 2024
ফাল্গুনের শেষে আর চৈত্রের শুরুতেই আকাশে বাতাসে যেন আলাদাই এক আমেজ । কারণ সামনেই বসন্ত উৎসব । উৎসব পাগল বাঙালির কাছে রঙের এই উৎসব যেন আলাদাই এক আবেগ । নাচ, গান, কবিতার সমারোহে এই দিনটিকে উদযাপন করতে আপনি নিশ্চই তৈরি । তাই আপনার জন্য রইলো বং কানেকশনের বিশেষ নিবেদন …..
ফুল ফুটুক না ফুটুক
– সুভাষ মুখোপাধ্যায়
ফুল ফুটুক না ফুটুক
আজ বসন্ত।
শান-বাঁধানো ফুটপাথে
পাথরে পা ডুবিয়ে এক কাঠখোট্টা গাছ
কচি কচি পাতায় পাঁজর ফাটিয়ে
হাসছে।
ফুল ফুটুক না ফুটুক
আজ বসন্ত।
আলোর চোখে কালো ঠুলি পরিয়ে
তারপর খুলে –
মৃত্যুর কোলে মানুষকে শুইয়ে দিয়ে
তারপর তুলে –
যে দিনগুলো রাস্তা দিয়ে চলে গেছে
যেন না ফেরে।
গায়ে হলুদ দেওয়া বিকেলে
একটা দুটো পয়সা পেলে
যে হরবোলা ছেলেটা
কোকিল ডাকতে ডাকতে যেত
– তাকে ডেকে নিয়ে গেছে দিনগুলো।
লাল কালিতে ছাপা হলদে চিঠির মত
আকাশটাকে মাথায় নিয়ে
এ-গলির এক কালোকুচ্ছিত আইবুড়ো মেয়ে
রেলিঙে বুক চেপে ধ’রে
এই সব সাত-পাঁচ ভাবছিল –
ঠিক সেই সময়
চোখের মাথা খেয়ে গায়ে উড়ে এসে বসল
আ মরণ ! পোড়ারমুখ লক্ষ্মীছাড়া প্রজাপতি !
তারপর দাড়ম করে দরজা বন্ধ হবার শব্দ।
অন্ধকারে মুখ চাপা দিয়ে
দড়িপাকানো সেই গাছ
তখন ও হাসছে।
বসন্ত কবিতা রবি ঠাকুরের
আজি বসন্ত জাগ্রত দ্বারে
– রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
আজি বসন্ত জাগ্রত দ্বারে।
তব অবগুণ্ঠিত কুণ্ঠিত জীবনে
কোরো না বিড়ম্বিত তারে।
আজি খুলিয়ো হৃদয়দল খুলিয়ো,
আজি ভুলিয়ো আপনপর ভুলিয়ো,
এই সংগীত-মুখরিত গগনে
তব গন্ধ তরঙ্গিয়া তুলিয়ো।
এই বাহির ভুবনে দিশা হারায়ে
দিয়ো ছড়ায়ে মাধুরী ভারে ভারে।
অতি নিবিড় বেদনা বনমাঝে রে
আজি পল্লবে পল্লবে বাজে রে–
দূরে গগনে কাহার পথ চাহিয়া
আজি ব্যাকুল বসুন্ধরা সাজে রে।
মোর পরানে দখিন বায়ু লাগিছে,
কারে দ্বারে দ্বারে কর হানি মাগিছে,
এই সৌরভবিহ্বল রজনী
কার চরণে ধরণীতলে জাগিছে।
ওগো সুন্দর, বল্লভ, কান্ত,
তব গম্ভীর আহ্বান কারে।
আরো পড়ুন, বসন্ত উৎসব কবিতা
ফাল্গুনের রাঙা প্রেমে
– তাৎপর্য্যহীন উৎপল
আমি তোমার প্রেমে পড়েছি
হয়নি বলা কখনো
দেবীতূল্য তোমার ঐ রূপে হয়েছি মাতাল
মুক্তি মেলেনি আজো,,
আমার যতো প্রেমের কবিতা
লিখেছি তোমায় নিয়ে
যতো আমার ভালোবাসার গান
তুমি আছো সুর হয়ে,,
তোমায় নিয়ে কষেছি আমার
জীবন সুখের অংক
শিউলী পুষ্পে গেঁথেছি মাল্য
তোমার গলে পরাব,,
তুমি আমার ফাল্গুনের
আগুন রাঙা ফুল
টকটকে লাল শিমুল ফুলে
দেখি তোমার রূপ,,
আমার অশ্রু এবং কষ্ট রাশি থেকে
তুমি ফোটাও মিষ্টি ফুল
আমার দীর্ঘশ্বাস থেকে
তুমি বিকশিত করো বৃষ্টির রিমঝিম সুখ,,
তুমি আমার হ্রদয় নদীতে
সুমধুর কল্লোল
তোমার জন্য বহে এ বুকে
হিমেল সমীরন,,
আমার যতো পুজা অর্চনা
আছে যতো আরাধনা
তোমার তরে ওহে দেবী
করেছি নিবেদন,,
ভালোবাসার এই মধুর ফাল্গুনে
ওহে মোর প্রীয়া
আমি তোমার প্রেমে পরেছি
খুলে দাও তোমার হিয়া,,
বসন্ত নিয়ে প্রেমের কবিতা
তুমি চেয়েছিলে বসন্ত
– মিজানুর রহমান
তুমি চেয়েছিলে বসন্ত!
আমি বুকের সব পাজর ঝরালাম
নতুন পাতায় পাতায়
বসন্তের গানে গানে
তুমি আসবে বলে।
তুমি চেয়েছিলে বাসন্তী শাড়ী!
শূন্য বুক বিছালাম বন-অরণ্যে
নানা ফুলে ফুলে, বাসন্তী রং’য়ে
তুমি জড়াবে বলে।
তুমি চেয়েছিলে শুনতে-
কোকিলের কুহু-কুহু ডাক!
আমি আগুন ছড়ালাম
পালাশ ও শিমুলের ডালে
কোকিলের কুহু-কুহু ডাকে
তুমি মুগ্ধ হবে বলে।
এই ফাল্গুনে সাঝিয়েছি অঞ্জলি
আমার হৃদয়ের থালা ভরে
দেঁখা হোক, আঁদর হোক
ভালোবাসায়-
দু’টি হৃদয় একটি থালায়
শিমুল ও পলাশের ফুলে ফুলে।
প্রেম ফাগুনের হওয়া
– আব্দুল করিম
প্রেম ফাগুনের হাওয়া যখন
লাগে বন্ধু গায়
উদাস হয়ে যায়রে বন্ধু
মন যে তোমার নায় ,
তোমায় ভালবাসতে চায়রে বন্ধু
কাছে পেতে চায় ।
হাসি খুশি মুখখানি নিয়ে
আসো যখন সামনে
হৃদয় আমার বাসর রাত্রি
কাঁটায় সঙ্গপনে ,
তোমায় আদর করতে চায়রে বন্ধু
পাশে রাখতে চায় ।
তোমার পায়ের ধূলো পরে যখন
আমার আঙ্গিনায়
ধন্য আমার ভালবাসা
ফুল ফোঁটা মন বাগিচায়,
আমার বাকি জীবন চায়রে বন্ধু
তোমার থাকতে চায় ।