Premer Golpo | প্রেমের গল্প | Bengali Love Story

Bongconnection Original Published
18 Min Read


 Premer Golpo | প্রেমের গল্প | Bengali Love Story

Premer Golpo | প্রেমের গল্প | Bengali Love Story
Loading...

প্রেমের গল্প 

Loading...
মন্দবাসা
              – অনন্যা পোদ্দার
অমিত দোতলার এই চিলেকোঠার ঘরে থাকে | পাশাপাশি দুটো ঘর,  আয়তনে, আকৃতিতে
খুবই ছোটো | তবুও বাবা, জ্যাঠা,  কাকাদের বাড়ি ভাগ বাটারায় তার ভাগে
এইটুকুই পড়েছে | অবিবাহিত বাপ মা মরা ছেলে,  তার আর সম্পত্তির বেশি কিছুর
দরকার কি !! …  যদি বা  বিয়ে করে কখনো তাহলে খোলা ছাদ তো পড়েই
রইল,  বানিয়ে নেবে তখন | কিন্তু অমিত জানে,  তার কোনোদিনই অবিবাহিত
তকমাটি তার নাম থেকে মুছে যাবে না,  কারণ তার মতো চালচুলো হীন, বাউন্ডুলে
ছেলেকে কে আর বিয়ে করবে??

সে কারণে তার দুবেলার খাওয়া খরচা বাবদ কিছু টাকা সে তার বৌদিদের হাতে তুলে দেয়
| মনের মিল না থাকলেও এখনো পর্যন্ত জ্যাঠা,  কাকাদের হাঁড়ি আলাদা হয়নি |
সবার পেটের ভাত মিলে মিশেই রন্ধন হয় একই আগুনের লেলিহানে,  কারণ কলকাতা
শহরে নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারে একসাথে খেলে খাওয়া খরচ সবারই একটু কমে | সে যাই
হোক,  তবুও সবাই ভাগ বাটোরা করে কাজে কর্মে,  ঝগড়া,  লালসায়
ব্যস্ত রাখে নিজেদেরকে | আর অমিত তার মনের ধারা কে ক্যানভাসে রঙের ছোঁয়া দিয়ে
নিজের জগৎ তৈরী করে | তাই এই দুর্মূল্যের বাজারে কোনো মাসে খাওয়ার টাকাটা দিতে
দেরী হলে একেক জন বৌদি একেক ভাবে ব্যঙ্গ করে কথা বলে তাকে,  তবে সেগুলি আর
অমিতের গায়ে লাগেনা এখন | দারিদ্যের চামড়া যে গন্ডার কেও লজ্জা দিতে পারে, সেটা
সে নিজেকে খুব নিপুণ ভাবে বুঝিয়ে দিয়েছে |
এ হেনো অমিতের জীবনে ঘটে যায় এক বিস্ময়কর ঘটনা | বাড়ি বাড়ি ছেলে মেয়েদের আঁকা
শিখিয়ে বেড়ানো অমিতের একদিন এক বন্ধুর বিয়ের  নিমন্ত্রণ আসে কৃষ্ণনগর থেকে
| বাড়ি ফেরার সময় শিয়ালদহে তার দেখা হয়ে যায় তারই মতো এক অভাগা মানুষের সঙ্গে |
পরনে লাল বেনারসি আর হাতে কানে গলায় সামান্য কিছু সোনার গয়না | বেশভূষা ও মুখের
সাজ দেখে যে কেউ বলে দেবে যে বিয়ের মণ্ডপ থেকে পালানো কনে সে | রাত সাড়ে
এগারোটার সময় কতগুলি ছেলের উত্যক্ততায় ভীত হয়ে যখন একপ্রকার বিপন্ন বোধ করছিলো
তখনই অমিত এসে সামনে দাঁড়ায় মেয়েটির মুস্কিলাসান হয়ে | চলন্ত ট্রেনের সাথে
পাল্লা দিয়ে দৌঁড়িয়ে সে নিজেকে ও মেয়েটিকে কোনো ক্রমে বাঁচায় |

প্রেমের গল্প রোমান্টিক

মেয়েটির এরূপ আচরণের কারণ জিজ্ঞেস করলে সে জানায়, “আমার নাম মধুমিতা |
মামাবাড়িতে মানুষ আমি কারণ আমার মা আমার জন্মের সময়ই মারা যান | দিদার কাছে
শুনেছি,  বাবা আমার মুখ দেখেননি কোনোদিনও | আমার অপরাধ কী ছিলো আমি জানিনা
| তাই আর কোনোদিন নিজের বাড়িতে যাওয়া হয়ে ওঠেনি আমার | মামা বাড়িতে থেকেই
লেখাপড়া শিখি | আমার জীবনে রঞ্জন আসে সেই রূপকথার রাজপুত্রদের মতো | সেই ক্লাস
ইলেভেন থেকে ওর সাথে আমার সম্পর্ক | কিন্তু কৃষ্ণনগর থেকে ওরা সপরিবারে বছর
দুয়েক আগে চলে আসে | প্রথম প্রথম ফোনে কথা হতো,  কিন্তু মাস ছয়েক হোলো ওর
সাথে আমার কোনো কথা নেই | তাই যখন মামা মামীরা জোর করে আমার বিয়ে ঠিক করলো তখন
আর উপায়ান্তর না পেয়ে পালিয়ে আসি বাড়ি থেকে | কিন্তু কলকাতার কিছুই আমার বিশেষ
চেনা নয় | রাত হয়ে যাওয়াতে স্টেশনেই বসে থাকার সিদ্ধান্ত নিই | কিন্তু ছেলে
গুলি এসে এমন…. ”
“আপনি এটা ঠিক করেননি | এভাবে কেউ বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসে !!…  আপনার কাছে
ঠিকানা আছে রঞ্জনের??  ”
“হ্যাঁ,  ওর এক বন্ধুর কাছ থেকে নিয়ে এসেছি | ” বলে কাগজ টা এগিয়ে দেয়
অমিতের দিকে |
অমিত ঠিকানাটা দেখে বোঝে শ্যামবাজারের কোনো একটা অঞ্চলের ঠিকানা | অতএব এত রাতে
মেয়েটিকে সেখানে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয় | তাই সে মেয়েটিকে বলে, ” আপনার আপত্তি না
থাকলে আজকের রাতটা আমার বাড়িতে কাটান, কাল নিয়ে যাব আপনাকে আপনার গন্তব্যে | ”
মধুর কিছু করার নেই,  তাই বিশ্বাসের মাত্রা টুকু বাড়িয়ে তাকে সায় দিতেই
হোলো অমিতের পরামর্শে | কিন্তু বাড়ি এসে অমিত পড়ল ফাঁপরে | সে ভেবেছিলো, বাড়ি
এসে বৌদিদের সব ঘটনা জানিয়ে কোনো এক বৌদির সাথে রাতটা কাটাতে বলবে মধুমিতাকে |
কিন্তু সদর দরজায় বিয়ের সাজে দাঁড়ানো মধুমিতাকে অমিতের পাশে দেখে ছোট্ট পিকলু
চিৎকার করে বাড়ির সবাইকে খবর দিলো , ” অমিত কাকা বিয়ে করে কাকী নিয়ে এসেছে গো |
তোমরা সবাই এসে দেখো | ”
অত রাতে ওইটুকু ছেলে কী করে জেগে ছিল আর কেনই বা সদর দরজা খুলতে গেল তার উত্তর
ভেবে পেলো না অমিত | অমিতের বিয়ের খবরে নব্বই ছুঁই ঠাকুমা কাঁপা কাঁপা পায়ে উঠে
এসে দরজায় দাঁড়িয়েছে | কাঁপা কাঁপা গলায় নাত বউদের বলছেন, ” আমার নতুন নাত বউ
কে ঘরে তোলো গো তোমরা !! … আমার অমিতের এত দিনে একটা সুখের সময় এলো | ”

বৌদিরা টিপ্পনি কেটে, কিছুটা বিদ্রুপ করে ওই রাতে মধুমিতাকে বরণ করে ঘরে তুলল |
এত কিছু এত কম সময়ে ঘটে গেল যে, অমিত কাউকে কিছু বলারই সুযোগ পেলো না |
বাড়ির প্রত্যেক সদস্যই ভেবে নিল যে, অমিত বন্ধুর বিয়েতে গিয়ে নিজেই বিয়ে করে
নিয়ে এসেছে কোনো কন্যাদায়গ্রস্ত পিতাকে কন্যাদায় থেকে মুক্ত করতে বা বিয়ের
কনেকে লগ্নভ্রষ্টা হওয়া থেকে বাঁচাতে, ঠিক যেরকম সিনেমাতে হয় আর কী !! কিন্তু
অত রাতে বাড়ির অবাঞ্ছিত ছেলের বিয়ের কাহিনী শুনতে কেউই খুব একটা আগ্রহ দেখালো
না | শুধু অমিতের ছোটো বৌদি একবার বাড়ির বড়ো জা কে ফিসফিসিয়ে বলেছিল, ” মেয়েটার
মাথায় সিঁদুর দেখলাম না তো দিদি|”

Premer Golpo Bangla

“মণ্ডপ থেকে ভাগিয়েও বিয়ে করতে পারে | ওই চালচুলোহীন ছেলের সাথে যে বাবা মা তার
মেয়ের বিয়ে দেয়, সে কাঙাল ছাড়া আর কিছু নয় | ওই বুড়ির কথায় বরণ করে দিয়েছি,
ব্যস | এর বেশি আর মাথা ব্যথা করে কী হবে ?? … সিঁদুর থাক আর না থাক, অন্যের
বউকে নিয়ে তো আর নিজের ঘরে আসেনি, এসেছে নিজের বউকে নিয়েই | ভালো মন্দ যা করে,
করুক গে | ”
অমিত আর মধুমিতা সেদিন ওই রাতে আর কারোর ভুল ভাঙানোর সুযোগ পেলো না | মধুমিতাকে
নিজের ঘরে জায়গা দিয়ে সে ছাদে আশ্রয় নিল রাত কাটানোর জন্য | মধুমিতা ঘরের দরজা
বন্ধ করার আগে জিজ্ঞেস করেছিল, ” কাল সকালে কী বলবেন সবাইকে ?? ”
“এ বাড়িতে আটটার আগে কারোর সকাল হয় না | রোজ গঙ্গাদি মানে আমাদের কাজের লোকটা
কাজ করতে আসলে আমিই সদর দরজা খুলে দিই | কাল গঙ্গাদি কে দরজা খুলে দিয়েই আমরা
বেরিয়ে পড়বো, কেউ কিছু জানার আগেই |তাহলে আর কোনো সমস্যা হবে না | ”
“কিন্তু আপনি ফিরে এলে তো আপনাকে সবাই জিজ্ঞেস করবেন আমার কথা | তখন আপনি কী
জবাব দেবেন ?? ”
“কী আবার জবাব দেবো ?? যা সত্যি, তাই বলে দেবো | “
“সব শুনে যদি রাগ করেন উনারা  ?? “
“আজও তো সবাই রেগেই আছেন , আরেকটু না হয় বেশি রাগ করবেন | ওসব নিয়ে আপনি ভাবতে
যাবেন না | শুয়ে পড়ুন, কাল একটু সকালেই বেরিয়ে পড়তে হবে আমাদের | ”

মিষ্টি প্রেমের গল্প

পরেরদিন সকালে সবার ঘুম ভাঙার আগেই মধুমিতাকে নিয়ে বেরিয়ে পড়ল অমিত, রঞ্জনের
ঠিকানার উদ্দেশ্যে | পথে, মধুমিতাকে গরম কচুরি, জিলিপি আর গরম চা খাওয়ালো ,
কলকাতার রাস্তায় অনভ্যস্ত মধুমিতাকে হাত ধরে রাস্তা পার করে দিলো বেশ কয়েকবার |
অমিতের ক্যানভাসে অমিত যে কনের ছবি আঁকার চেষ্টা করে এসেছে এতদিন, সেই কনের
বেশে গত রাতেই ধরা দিয়েছে মধুমিতা, ঠিক যেনো অমিতের স্বপ্নে দেখা সেই রঙ তুলিতে
গড়া চিত্রপট হয়ে !! … অমিত মনে মনে ভাবে , মধুমিতা আর রঞ্জনের বিয়েটা হয়ে
গেলে মধুমিতাকে সে অনুরোধ করবে, তার এই একটা ছবির মডেল হতে |  গত রাতে সে
যে সাহায্য করেছে মধুমিতাকে, তার কৃতজ্ঞতা স্বরূপ নিশ্চয়ই আপত্তি থাকবে না
রঞ্জন বা মধুমিতার |
ঠিকানা খুঁজে রঞ্জনের বাড়ি পৌঁছে যা শোনা গেল, তাতে রঞ্জনের বাড়ি না যাওয়াই
বোধহয় বাঞ্ছনীয় ছিল | বেল বাজালে যে ভদ্রমহিলা বেরোলেন, তিনি রঞ্জনের মা নন |
ভদ্রমহিলার কাছে রঞ্জনের খোঁজ করলে উনি জানান, কিছু মাস আগে রঞ্জন ব্যাঙ্গালোরে
এক পথ দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলেই মারা যায় | পুত্রশোকে বিহ্বল রঞ্জনের বাবা মা
এখানকার বাড়ি ঘর বিক্রি করে কাউকে কিছু না জানিয়ে কোথায় চলে গেছেন, কেউ জানেনা
|
রঞ্জনের আকস্মিক মৃত্যু সংবাদ ও মধুমিতার অনিশ্চিত ভবিষ্যতের চিন্তা ওদের
দুজনেরই পা টলিয়ে দিলো | এবার ??… কোথায় যাবে মধুমিতা??… মামাবাড়িতে ফিরে
যাওয়ার রাস্তা সে নিজে হাতেই বন্ধ করে দিয়ে এসেছে|  তাহলে, তার ভবিষ্যত কী
?? রঞ্জনের মৃত্যুসংবাদ তাকে যতটা আঘাত করলো, তার চেয়েও বেশি আঘাত করলো তার
উলটপালট হয়ে যাওয়া আগামী ভবিষ্যত | শ্যাম বাজারের পাঁচ মাথার মোড়ের বাস
স্ট্যান্ডে বসে অঝোরে কাঁদতে থাকে মধু | কী করবে সে এখন … কোথায় যাবে সে??…
এই সংসারে তার মাথা গোঁজার যে কোনো ঠাঁই নেই !!
মধুর কান্না থামলে অমিত মধুকে বলে, ” এখন কী করবেন আপনি??… কোথায় যাবেন কিছু
ভেবেছেন ?? ”
” মামাবাড়িতে ফেরার রাস্তা বন্ধ আমার | আমি জানিনা, আমি কী করবো , কোথায় যাব??
” তাহলে আমার সাথেই ফিরে চলুন আমার ঘরে| “
“কী পরিচয়ে?? “
” কেন??… গতকাল রাতে যে পরিচয়ে ছিলেন, সেই পরিচয়েই থাকবেন | “
” কিন্তু সে যে মিথ্যে পরিচয় !! “
“সেটা তো আমি আপনি ছাড়া কেউ জানেনা | আর এই মিথ্যে টুকু বয়ে চললে যদি আপনি একটা
নিরাপত্তার আশ্রয় পান, তবে সেই মিথ্যেকে স্বীকার করতে দোষ কোথায় !! … যতদিন
আপনার কোনো পোক্ত ব্যবস্থা না হচ্ছে, ততদিন আমার ঘরে আপনি নিশ্চিন্তে থাকতে
পারেন| কথা দিচ্ছি, আমার কাছে আপনার জন্য খাবারের অভাব থাকতে পারে, কিন্তু
মানের অভাব কোনোদিনই থাকবে না | আমার বাসাটা মন্দ হতে পারে  কিন্তু ষোলো
আনা নিরাপদ| ”

Prothom Premer Golpo Bangla

মধু ফিরে আসে অমিতের ঘরে  তার ঘরণীর সাজে | অমিতের পেটের সাথে মধুর পেটের
ভাগটার জন্য সংসারে টাকা বেশি দেওয়ার দরকার পড়ল, তাই অমিতের টিউশনির পরিমাণও
গেল বেড়ে | সারাদিনের ক্লান্তির পরে নিজের ক্যানভাসে আর তুলির টান দেওয়ার সময়
পায় না অমিত | রাতের ঘুমটাও ভীষণ অতৃপ্তিকর | রোজ ছাদে খোলা আকাশের নিচে একটা
চাদর বিছিয়ে শোয়া, বড়োই কষ্টদায়ক ছিল | তবুও এক নারীর সম্মান রক্ষার্থে এটুকু
যে করতেই হবে অমিতকে |


এভাবে প্রায় মাস দুয়েক কেটে গেল | অমিতের বন্ধুত্ব, যত্ন মধুর মনে রঞ্জনের
প্রতি প্রেমটাকে কোথাও চাপা দিতে শুরু করে দিয়েছিলো | রঞ্জন এতটা আপন হয়ে কখনো
কাছে আসেনি মধুমিতার, যতটা অমিত এসেছে  |  অমিতের যত্নে মধু প্রেমের
স্পর্শ অনুভব করে  যেনো | প্রেম মানে কী শুধুই মনের আদান প্রদান,
ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ ?? … নাকি প্রেমের আরেক নাম যত্ন |  শরীরী খেলার
শেষে একটা সম্পর্ক তো শুধু যত্নেই টিকে থাকে  আজীবন | আর অমিত তো
নিঃস্বার্থে মধুর জন্য করে চলেছে সব কিছু | কিন্তু তার কী দায় ??? … মধুমিতার
প্রতি তার তো কোনো দায় নেই | তবে এই দায় ভার সে বয়ে বেড়াবে কেন ??তবে কী এর নাম
ভালোবাসা নয় ??
এদিকে মধুর প্রতি অমিতেরও একটা টান চলে আসে | পরিবার, পরিজন, বন্ধু বান্ধব সবার
কাছে মধুকে নিজের স্ত্রী বলে পরিচয় দিতে দিতে কোথাও যেনো মনকেও সেই পরিচয় দিয়ে
ফেলেছে সে | মধুকে ছাড়া জীবন যেনো চলতেই চায় না আজকাল !! … কিন্তু তার মতো
এরকম চালচুলো হীন ছেলের সাথে মধু থাকবে কেন ??  অমিতের ভালোবাসাকে মধু
সুযোগসন্ধানী নামও তো দিতে পারে!!
দুই পক্ষের মন যখন বিভিন্ন চিন্তার ঝড় ঝাপ্টায় বেসামাল, তখন এক রাতে শুরু হোলো
ভয়ঙ্কর ঝড়, সাথে উথালপাথাল বৃষ্টি | রাস্তার নেড়ি কুকুরটাও একটা আশ্রয়ের
ব্যবস্থা করে নিল | এই পরিস্থিতিতেও অমিত ছাদের চিলেকোঠায় বসে আছে, ঝড়ের ঠান্ডা
বাতাসে কেঁপে যাচ্ছে অনবরত |
মধুমিতা কিছুক্ষন এই পরিস্থিতিতে নিজের মনের সাথে লড়াই করলো | তারপর এক ছুটে
অমিতের কাছে গিয়ে তার হাত ধরে টেনে নিয়ে এলো অমিতের দেওয়া তার বর্তমান ঘরে |
“আপনি এটা কী করছেন ?? ” শুধালো অমিত|
“আপনার ঘরে আপনি থাকবেন, তাই নিয়ে এসেছি আপনাকে | এই দুর্যোগের রাতে নিজের ঘর,
নিজের বিছানা আমাকে দিয়ে নিজেকে কেন কষ্ট দিতে চাইছেন বলুন তো ?? ”
“কষ্টের কী আছে?? ঝড় থেমে যাবে আর কিছুক্ষনের মধ্যেই | আর বৃষ্টিতে ভেজা আমার
অভ্যেস আছে, কিছু অসুবিধা নেই আমার | আপনি শুয়ে পড়ুন | ”
“আর কতো ঋণের তলে চাপিয়ে দেবেন আমায় ??… আপনি কী শুধুই দিতে জানেন, নিতে
জানেন না কিছুই ?? ”
“নিজের বলে কিছুই তো নেই আমার, যে নেবো আমি | “
অমিতের এই উত্তরে মধু ভাষা খুঁজে পায় না জবাব দেওয়ার | এই দু মাস ধরে যার নামে
মিথ্যে সিঁদুর পরে চলেছে সে, তাকে যে সে আজ সত্যিই ভালোবাসে !! …. শুধু ভয়ে
প্রকাশ করতে পারে না ভালোবাসার| তার ব্যর্থ আর অভাগা জীবনের ছোঁয়ায় যদি অমিতের
কিছু ক্ষতি হয়ে যায় !!
মধুমিতাকে চুপ করে থাকতে দেখে অমিত বলে, ” আপনি দরজাটা দিয়ে শুয়ে পড়ুন| ”
অমিতের বেরোবার পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়ে মধু বলে, ” আমি কী আপনার এতটাই অযোগ্য যে
আমার সাথে একটা রাত একই ঘরে কাটানো যায় না !! ”
“আমি আপনাকে বলেছিলাম না, যে, আমার কাছে আপনার মানের অভাব হবে না| “
“আজ আপনি এ ঘর ছেড়ে কোথাও যাবেন না | আপনি আমার মান রক্ষা করুন, আর আমি আমার
স্বামীর জীবন রক্ষা করি | ”
“মধু !!… এ কথার মানে জানেন আপনি ?? “
“আমি মীরা হয়েও জীবন কাটিয়ে দিতে পারি আমার কৃষ্ণের জন্য | “
“আমি আপনার কে?? “
“আমার জীবনের সবচেয়ে আপন মানুষ , যে, আমাকে বিপদের সময় আশ্রয় দিয়েছে, যে নিজের
মুখের খাবার দিয়ে আমার পেটের ক্ষিদে মিটিয়েছে, যে নিজে কষ্টে থেকে আমার মাথার
উপরে ছাদ রেখেছে যাতে আমি রাতগুলি পরম নিশ্চিন্তে কাটাতে পারি , যে আমার
প্রতিটা চোখের জলকে খুশির মোড়কে মুড়ে দিতে চেয়েছে, সে এ পৃথিবীর বুকে আমার
বেঁচে থাকার সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ও ভালোবাসার আশ্রয়স্থল | আপনি আমাকে সিঁদুর না
পরালেও আমি আপনার নামে সত্যি সত্যিই সিঁদুর পরি | তাই এই রাতে আপনি এই ঘরে
থাকলে আমার মান কমবে না, বরং বাড়বে | ”


প্রথম প্রেমের গল্প

“মধু !!!! …. আমিও যে  তোমাকে পাগলের মতো ভালোবাসি | তোমার কাছে আসার
চেষ্টা করিনি কখনো, পাছে তুমি আমায় ভুল বোঝো | তুমি আমার স্বপ্নে দেখা সেই
বিয়ের কনে যাকে আমি আমার জন্য ক্যানভাসে তুলে ধরতে চেয়েছি আজীবন নিজের করে
রাখবো বলে | ”
মধু আর অমিত আলিঙ্গনে একে অপরের কাছে ধরা দেয় | সিঁদুরের কৌটো নিয়ে এসে মধু
বলে, “তবে আজ এই মিথ্যে সিদুঁরকে সত্যি করে দাও | তোমার মন্দবাসা আজ আমারও হয়ে
যাক একেবারে | ”
বাইরের ঝড় বাদ্লায় দুটো মনের দ্বন্দ্বের মেঘ কেটে গিয়ে এক হয়ে গেল দুটো জীবন |
এমন বারিঘন রাতে মিলিত হোলো দুটো মন| দুটো শরীর মিলে মিশে এক আত্মার রূপ নিল |
এই পরিবর্তনের সাক্ষী হয়ে থাকল অমিত মধুর ভালোবাসা দিয়ে ঘেরা বড়ো আদরের
মন্দবাসা |
মধু আজ পরম নিশ্চিন্তে অমিতের কাছে নিজেকে সোঁপে দিয়ে লজ্জায় রঙীন হয়ে উঠেছে |
ওদের না বলা প্রেম আজ বাঁধ ভাঙা হয়ে একে অপরের কাছে আছড়ে পড়ছে | সারা রাত ধরে
চলল দুটো ভালোবাসাহীন মানুষের ভালোবাসা বিনিময় | দুজনের  শরীরই একে অপরের
প্রেম বারিধারায় স্নিগ্ধ করলো  একে অপরকে |
সারা রাতের ঝড়ের পরে ভোরের দিকে প্রকৃতির বুকে এখন শুধুই  স্নিগ্ধ
বারিধারা | অমিতের বুকে মাথা রেখে নিশ্চিন্তে ঘুমোচ্ছে মধু | সে তার সব টুকু
ভালোবাসার মধু অমিতের কাছে সমর্পন করে যে গর্বের রিক্ততা অর্জন করেছে, সেই
গর্বে আজ সে গরবিনী |
এরকম অনেক রাতের সাক্ষী থাকবে ভালোবাসায় মোড়া এই মন্দবাসা | এই মন্দবাসাই একদিন
শিশুর কলতানেও ভরে উঠবে| এখন শুধু সেই শুভ ক্ষনেরই অপেক্ষা !!
————————————————————————–
সমাপ্ত

Share This Article