স্বাস্থ্য সুন্দর ও ভালো রাখার উপায় – স্বাস্থ্য সচেতনতা টিপস – Health
Tips In Bengali
স্বাস্থ্য ভালো রাখার উপায়
দিন যাচ্ছে বিভিন্ন দুরারোগ্য ব্যাধি মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। কিছু কিছু রোগ রয়েছে
যেগুলি প্রতিষেধক এখনও পর্যন্ত আবিষ্কার হয়নি । এদিকে শারীরিক সক্ষমতার হারও যেন
তলানিতে ঠেকেছে। যার দরুন অল্প শারিরীক অসুস্থতাতেই শরীর দুর্বল হয়ে পড়ছে।
যদি এর প্রতিকারের বিষয়ে আলোকপাত করা যায় তাহলে মূলত তিনটি বিষয়ে আপনাকে নজর দেওয়া
জরুরি। সঠিক জীবনযাপন, সু-খাদ্যাভ্যাস এবং যোগ ব্যায়াম। নিয়ম-নীতি মেনে সুঅভ্যাস
গঠনের মাধ্যমে আপনার শারীরিক, মানসিক সবক্ষেত্রেই উন্নতি সাধন করা সম্ভব। এর
পাশাপাশি সুখাদ্য বলতে গেলে যা বোঝায় পরিমাণমতো ভালো খাদ্যগ্রহণ। কিন্তু আক্ষেপের
বিষয় আমরা যেসব খাবার খাচ্ছি বেশিরভাগ খাদ্যই রাসায়নিক সার দ্বারা তৈরি এবং
প্যাকেটজাত। যা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি তো দূরের কথা উল্টো
বিভিন্ন ক্ষতিসাধন করছে। এ কারণেই আমাদের সুখাদ্য গ্রহণ করা খুবই জরুরী। শরীরের রোগ
প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হলো নিয়মিত যোগ ব্যায়াম
করা। যোগ ব্যায়াম শুধুমাত্র শারীরিক সক্ষমতা বৃদ্ধি করে না পাশাপাশি মানসিক শান্তি
প্রদান করে।
যোগাসন নাম মনে এলেই মনে হয় শারীরিক কসরত। কিন্তু আদৌ
কি তাই? যোগ ব্যায়ামের গুরুত্ব যদি শুধু মাত্র শারীরিক পরিশ্রম যদি ভেবে
থাকেন। তাহলে বিশাল ভুল করবেন। শরীরকে সচল এবং সুস্থ রাখতে নিয়মিত যোগ ব্যায়াম
অভ্যাস করা খুবই প্রযোজন। প্রাচীনকাল থেকেই যোগ শব্দটির সাথে ভারতীয় সভ্যতা পরিচিত।
ব্যায়াম অর্থ বোঝাতে অঙ্গ সঞ্চালনকে বোঝায়। নির্দিষ্ট সময়ে বিশেষ ভঙ্গিতে
সঠিক অবস্থানে থেকে মনঃসংযোগ করাকে ব্যায়াম বলে। যোগ ব্যায়াম যে প্রত্যহ আমাদের
প্রয়োজন তা এই আধ্যায়ে আলোচিত হবে। আধ্যাত্মিক, শারীরিক এবং মানসিক দিক থেকে
বলিষ্ঠ করে তোলে যোগ ব্যায়াম। যোগাসনের বহুল উপকারিতা রয়েছে যা আমাদের সার্বিক
বিকাশে সহায়তা করে থাকে। এই যোগ ব্যায়াম শুধু শরীর কেন্দ্রিক নয় মনের সাথেও
অতঃপ্রতো ভাবে জড়িত।
যোগ ব্যায়ামের সঠিক অনুশীলনের মাধ্যমে শুধুমাত্র আপনার
শারীরিক ভঙ্গিমারই উন্নতি ঘটায় না, বিভিন্ন দুরারোগ্য ব্যধির উপশম হয়।
স্বাস্থ্যবান হওয়ার উপায়
তবে ব্যায়ামের কোন নির্দিষ্ট সময় নেই কিন্তু ভোর বেলা উঠে ব্যায়াম করলে
মন সতেজ ও প্রাণচঞ্চল থাকে।
অঙ্গ ভঙ্গিতে উন্নতি ও শারীরিক ক্লান্তির অবসান
কর্মই জীবন। সারাদিন বিভিন্ন কাজকর্মে নিজে নিয়োজিত রাখার কারণে আমাদের
মেরুদণ্ডের উপর চাপ পড়ে। তার ফলে ব্যথা অনুভব হয় এবং শারীরিক ক্লান্তি
গ্রাস করে। আপনি যদি প্রত্যহ যোগ ব্যায়াম অনুশীলন করে থাকেন তাহলে আপনার অঙ্গ
ভঙ্গিমার উন্নতি ঘটে। শারীরিক ক্লান্তির অপনোদন হয়। মুহূর্তে জন্য আপনার শারীরিক
এনার্জি যেকোনো কাজে আপনাকে সাথ দেবে।
স্বাস্থ্য টিপস
নমনীয়তা বৃদ্ধি করে
যোগ ব্যায়াম শরীরের নমনীয়তা বৃদ্ধিতে
সহায়তা করে এবং জটিল কাজ সম্পাদন করতেও সাহায্য করে।
পেশী শক্তি বৃদ্ধি
নিয়মিত যোগ ব্যায়াম অনুশীলনের মাধ্যমে আমরা শারীরিক সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে
পারি। আমাদের পেশী শক্তি বৃদ্ধির মাধ্যমে দূর্বল অঙ্গকে সবল করে তোল যায়। তার
জন্য যোগ ব্যায়ামের কোনো বিকল্প নেই।
সম্পর্কের উন্নতি
যোগ
ব্যায়াম শারীরিক, মানসিক, আধ্যাত্মিক দিক থেকে বলিষ্ঠ করে তোলে। যা আপনার মানসিক
দৃঢ়তা দান করে। কোনো ব্যক্তি মন যদি তার নিজ বশে থাকে সে সর্বদা যেকোনো রকমের
বাধা বিঘ্ন এড়াতে সক্ষম এবং কোন খারাপ দৃষ্টিভঙ্গি তাকে গ্রাস করতে পারে না। মন
থাকে সতেজ, প্রাঞ্জল। যা আপনার সম্পর্কের উন্নতিতে সহায়তা করে। তাই যোগ ব্যায়াম
গুরুত্ব অনস্বীকার্য।
হাড়ের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে
ব্যায়াম অনুশীলনের
মাধ্যমে শরীরের হাড়ের সক্ষমতা বৃদ্ধি করে। যোগ ব্যায়াম মেরুদণ্ডের হাড়ের ঘনত্ব
বাড়ায়। এমনকি হাড়ের ক্ষয় রোধ করে৷
হজমের সমস্যা প্রতিরোধ করে
সঠিক খাদ্যাভ্যাস এবং যোগ ব্যায়াম আমাদের হজম শক্তির বৃদ্ধি ঘটায়। যদি
আপনি সঠিক জীবনযাপন এবং ব্যায়াম অনুশীলন করেন তাহলে রোগ আপনাকে স্পর্শ করতে
পারবেনা। আপনি সু-খাদ্যাভ্যাস সহযোগে প্রত্যহ ব্যায়াম করুন, আপনার হজম জনিত কোন
সমস্যাই থাকবেনা।
কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি
সঠিক ভাবে যোগ
ব্যায়াম অনুশীলনে আপনাকে কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি দিতে পারে।
মানসিক চাপের প্রভাব কমাতে
মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার উপায়
মানসিক চাপ খুবই ক্ষতিকর বিষয়। মানসিক চাপে কোন ব্যক্তির সর্বত
শেষ হয়ে যেতে পারে। কোন কাজ সঠিক ভাবে করতে হলে মনঃসংযোগ দরকার। তবে এই সমস্যার
হালও রয়েছে আলসার, কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো মানসিক চাপ কমাতে যোগ ব্যায়ামের বিকল্প
নেই। সঠিক ভাবে যোগ ব্যায়াম অনুশীলন করুন, সুঅভ্যাস গড়ে তুলুন মানসিক চাপ ধীরে
ধীরে কমে যাবে।
রক্তের সুগার কমাতে
যোগ ব্যায়াম ব্লাড সুগার
কমাতে খুবই কার্যকরী । যে সমস্ত ব্যক্তির ডায়াবেটিস আছে তারা যোগ ব্যায়াম
অনুশীলনের মাধ্যমে রক্তের শর্করার পরিমাণ হ্রাস করতে পারেন। যোগ ব্যায়াম
শুধুমাত্র খারাপ কোলেস্টেরল হার কমায় না ভালো কোলেস্টেরলের হার বৃদ্ধি করে।
রক্ত প্রবাহের উন্নতিতে
অঙ্গ সঞ্চালনের মাধ্যমে আমাদের শরীরের সর্বত্র অক্সিজেন পৌছায়। সঠিক
পদ্ধতিতে যোগ ব্যায়াম অনুশীলন করলে শরীরে রক্তের প্রবাহ বৃদ্ধি পায়। হার্ট
অ্যাটাক এবং স্ট্রোক হ্রাস করতে পারে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে হলে প্রথমেই প্রয়োজন সঠিক জীবনযাপন,
সু-খাদ্যাভ্যাস এবং প্রত্যহ যোগ ব্যায়াম। যাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ
ক্ষমতা কম থাকে তারা খুব অল্প অসুস্থতাতে দূর্বল হয়ে পড়ে। যোগ ব্যায়াম শারীরিক
সক্ষমতা বৃদ্ধি করার পাশাপাশি ভাইরাস জনিত আক্রমণ ধবংস করতে সহায়তা করে। এই
কারনে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে যোগ ব্যায়াম খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
ভালো ঘুমোতে
বিভিন্ন কারনে মানসিক চাপ বৃদ্ধির ফলে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে। কিন্তু আপনি
যদি নিয়মিত যোগ ব্যায়াম অনুশীলন করে থাকেন আপনার মানসিক চাপ কমার পাশাপাশি
নিদ্রাহীনতার সমস্যা দূর হবে।
মেধ কমাতে
শরীরে বাড়তি মেধের
হার কমাতে ব্যায়ামের কোনো বিকল্প নেই। এমনকি শরীরের ওজনকে স্বাভাবিক রাখতে যোগ
ব্যায়াম খুবই কার্যকরী।
ড্রাগ মুক্ত রাখতে
কম ওষুধ খেলে অর্থ
ব্যয় কমবে। আপনি যদি নিয়মিত যোগ ব্যায়াম করে থাকেন শরীরে রোগের আক্রমণ
অনেকাংশেই কমে যাবে। প্রত্যহ ব্যায়াম অনুশীলনের মাধ্যমে শরীর গড়ে
তুলুন সুস্থ, সুন্দর এবং স্বাভাবিক।
তবে যোগ ব্যায়াম শুরু করার পূর্বে
সূর্য নমস্কার দিয়ে শুরু করতে হবে। তবে সূর্য নমস্কারের কিছু নিয়ম রয়েছে।
ধাপে ধাপে পদ্ধতি গুলি পর্যালোচিত হবে ।
Health Tips In Bengali Language
প্রথমত , দু’ পা জোড় করে , দু’হাত বুকের কাছে এনে জোড়া করে
নমস্কারের ভঙ্গিতে দাঁড়াতে হবে। দুই থেকে তিনবার শ্বাস নেওয়া ও ছাড়া করতে
হবে।
দ্বিতীয়ত , এরপর পা একই জায়গায় রেখে দু’হাত মাথার
উপরে তুলে পিছন দিকে শরীর ধীরে ঝুঁকাতে হবে এবং শ্বাস নিতে নিতে এই কার্যকলাপ
করতে হবে। ঠিক যেন যোগ ব্যায়ামের অর্ধচক্রাসনের মতো।
তৃতীয়ত , এরপর পিছনের দিকে নিয়ে যাওয়া হাত দুটো সামনের দিকে নিয়ে আসতে হবে
এবং ধীরে ধীরে কোমর ভেঙে নিচের দিকে নামাতে হবে। হাঁটুর কাছ থেকে ভাঙবে না।
দু’পায়ের পাতা সামনে হাতের চেটো দুটো উপুড় করে রাখতে হবে। সেই সাথে শ্বাস
ছাড়তে হবে।
চতুর্থত , শ্বাস নিতে নিতে বসে পড়তে হবে।
গোড়ালি মাটিতে লাগিয়ে বসার চেষ্টা করতে হবে। প্রথম প্রথম গোড়ালি উঠে গেলেও
ধীরে ধীরে তা অভ্যাস হয়ে যাবে।
পঞ্চমত , শ্বাস ছাড়তে
ছাড়তে দু’পায়ে এবং মাটিতে রাখা দুই হাতের ওপর ভর দিয়ে একটুখানি উঠতে হবে।
বাঁ পা সোজা রেখে ডান পা পিছনের দিকে নিতে হবে। মাথা বাঁ পায়ের হাঁটুর সঙ্গে
লেগে থাকবে।
ষষ্ঠত, এরপর শ্বাস নিতে নিতে হাঁটু থেকে
মাথা তুলতে হবে।
সপ্তমত , শ্বাস ছাড়তে ছাড়তে একই ভাবে বাঁ
পা পেছনে নিয়ে দু’পা জোড় করতে হবে এবং ভর দেওয়া থাকবে হাতের উপর।
অষ্টমত ,এরপর কনুই থেকে হাত ভেঙে শরীর মাটির দিকে নিয়ে এসে মাথাটি তুলতে
হবে।
উল্লেখ্য, শেষ পদ্ধতিতে থেকে প্রথম পদ্ধতি পর্যন্ত ধীরে ধীরে ফিরে
যেতে হবে।
উপকারিতা হৃদপিণ্ড, ফুসফুস, পরিপাকযন্ত্র এবং স্নায়ুমন্ডলীর
সচলতা বৃদ্ধিতে সূর্য নমস্কার খুবই কার্যকরী। সর্দিকাশি, হাঁপানি, মেরুদন্ডের
দুর্বলতা জনিত রোগ , সামান্য পরিশ্রমে ক্লান্ত হয়ে যাওয়া সূর্য নমস্কারের
মাধ্যমে দূর করা সম্ভব।
শীতেও রোগের থেকে সুস্থ থাকতে চান ? জেনে নিন কিভাবে ..