Premer Choto Golpo (প্রেমের ছোট গল্প) Romantic Love Story
বছরের সুনু।উপস্থিত সবাই হো হো করে হেসে উঠলো।সুনুর মা মৌসুমীর যেন লজ্জায়
দুকান কাটা গেল।মৌসুমীর পিসি শ্বাশুড়ি এগিয়ে এসে বললেন,
একা মানুষ করতে হলে সেই রাস্তায় বাধা তো আসবেই! তাই মনে জোর আনল মৌসুমী।
কাছে আমরা রাখতে চাই না।ওকে তুমি রেখে যাবে।‘
ছাড়তে নারাজ।
সাহা,সায়ন্তন সাহার মা।‘
গেল মৌসুমী।
ঘুমিয়ে পড়েছিল।মৌসুমী আয়নার সামনে এসে দাঁড়ালো।কি চেহারা করেছে নিজের! মৌসুমীর
স্বামী দীপ্ত মারা গেছে বছর দুয়েক হতে চলল।কিন্তু সুনুকে ছাড়া আর কোনো সুখই
দীপ্ত ওকে দিতে পারেনি।বিয়ের পরদিন থেকেই শ্বশুরবাড়ির সবার জন্য ফরমায়েশ
খাটা,তাদের মুখ ঝামটা,প্যাঁচালো কথা শোনা,আর দিনের শেষে দীপ্তর সাথে ঝগড়া
অশান্তি,এই ছিল মৌসুমীর তিন বছরের বিবাহিত জীবন।দীপ্তর সাথে অশান্তির অনেক
চিহ্নই এখনো মৌসুমীর শরীরে খুঁজলে পাওয়া যাবে।এমনকি প্রথম সন্তানটাও দীপ্তর
ধাক্কায় মৌসুমীর পড়ে যাওয়ার জন্য……
ভেঙে পড়ল মৌসুমী।ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগল।সুনু একটু নড়ে উঠলো।মৌসুমী
তাড়াতাড়ি নিজেকে সামলে ওর মাথার কাছে এসে বসল।এই সুনুই ওর জীবনে বেঁচে থাকার
একমাত্র আশা।অনেক কষ্টে পৃথিবীর আলো দেখিয়েছে সুনু কে।ওর জন্মানোর পর কয়েক বছর
শ্বশুর বাড়িতে সবাই কিছুটা খুশি থাকলেও দীপ্তর মদ্যপ চরিত্র মৌসুমীর ধৈর্যের
বাঁধ ভেঙে দিয়েছিল।বেরিয়ে এসেছিল বাড়ি ছেড়ে।কিন্তু দীপ্তর ভালোমানুষির নাটকে
ভুলে আবার পা রেখেছিল ঐ বাড়িতে।
অনাথ।ওর কোথাও কোনো জায়গা নেই যাওয়ার।তাই কোনো মায়াদয়া ছিল না তাদের শরীরে।তবে
ভগবান হয়ত যা করে ভালোর জন্যই।তাই এক বছরের মাথায় হঠাৎ স্ট্রোকে মারা গেল
দীপ্ত।কিন্তু তারপর মৌসুমী কে মানসিক যন্ত্রণা দেওয়া শুরু করল দীপ্তর বাড়ির
লোকজন।এমনকি দীপ্তর চাকরি টা মৌসুমী কে করতে দিতে চাইনি তারা।কিন্তু মৌসুমী আর
সহ্য করার পাত্রী ছিল না।তাই একপ্রকার জোর করেই ছেলে কে নিয়ে বেরিয়ে আসে ঐ নরক
থেকে।
বাসে তুলে দিয়ে নিজে ও অফিসের জন্য বেরিয়ে পড়ল।কিন্তু আজ ওর একটু ও ইচ্ছা করছে
না অফিস যেতে,মনটাও ভার।তাই অফিস থেকে ফার্স্ট হাফটা অফ নিয়ে বেরিয়ে পড়ল নিজের
মতো করে সময় কাটাতে।প্রথমে একটা সিনেমা দেখল,তারপর শপিং মলটা ঘুরে দেখছিল এমন
সময় একটা অদ্ভুত ঘটনা ঘটল।
শাড়ি কিনতে দেখতে পেল,তাকে প্রায় আট বছর পর দেখল।তবু চিনতে ভুল হলো না।জীবনের
প্রথম প্রেম কে কি এতো সহজে ভোলা যায়!
সায়ক দে,মৌসুমীর এক ব্যাচ সিনিয়র ছিল।পুরনো অনেক স্মৃতি মনে এসে গেলো
মৌসুমীর।অদ্ভুত একটা আনন্দ হলো মৌসুমীর,মনে হলো মনের ভার টা যেন এক নিমেষে
হালকা হয়ে গেল সায়ক কে দেখার পর।কথা বলার জন্য দোকানে ঢুকতে যাবে এমন সময়
ট্রায়াল রুম থেকে একটি মেয়ে বেরিয়ে এসে সায়কের সামনে দাঁড়ালো।তারপর দুজনের কিছু
কথা হলো,সায়ক কে জড়িয়ে ধরল মেয়েটি।ওদের দুজন কে বেরিযে আসতে দেখে সরে গেল
মৌসুমী।দেখল সায়ক আর মেয়েটি উপরের ফ্লোরে উঠছে।মেয়েটির বয়স বেশ কম মনে হলো।সায়ক
এই মেয়েটার সাথে কি করছে এখানে? মৌসুমী একবার ভাবল ওদের পিছু নেবে কিন্তু
পরক্ষণে সেটা করা উচিত নয় ভেবে মল থেকে বেরিয়ে এলো।
সায়ক আর ঐ মেয়েটি কে ভুলতে পারছে না সে।খাবারে মন বসানোর চেষ্টা করছে বারবার
কিন্তু পারছে না।
এলাম।তুই একা এখানে বসে?’
চিন্তায় পড়ে গেল।
করি বুঝতে পারছি না।‘
পথেই বাড়ি ফিরব।সুনু কে পিক আপ করে আমার বাড়ি নিয়ে যাব।তুই অফিসফেরতা এসে নিয়ে
যাস।‘
ইউ।‘
তো সবার সাথে কমফোর্টবল হতে পারে না।পৃথা দির বাড়ি তে কি করছে সেটা নিয়ে
সারাদিন ভেবেছে।কিন্তু এসে সম্পূর্ণ অবাক করে দেওয়ার মতো কথা শুনল।সুনু নাকি
একটু ও দুষ্টুমি করেনি,উল্টে পৃথার ভাইয়ের সাথে দারুণ ভাব জমিয়ে ফেলেছে।দুজনে
ছাদে বসে খেলা করছে।
করে যাচ্ছে।হঠাৎ খেয়াল করল মৌসুমী এসেছে,অমনি সুনু দৌড়ে চলে এলো মায়ের
কাছে।পৃথার ভাই ও পিছন ঘুরে তাকালো,আর তারপরই পায়ের তলা থেকে মাটি সরে গেল
মৌসুমীর।ওর চোখের সামনে দাঁড়িয়ে আছে সায়ক।সায়ক ও মৌসুমী কে দেখে একপ্রকার অবাকই
হয়েছে।খানিকটা হেসে এগিয়ে এলো।
‘কেমন আছো মৌসুমী? সায়ন্তন তোমার ছেলে? জানতাম না তো! ভারী মিষ্টি ছেলে।কতো
খেলা করলাম দুজনে সারাদিন।‘
পার্সোনালিটি।কলেজে কতো মেয়ে যে পাগল ছিল সায়কের জন্য! মৌসুমী ও তাদের মধ্যে
একজন ছিল।দূর থেকে দেখত সায়ক কে।কয়েকবার কথা হয়েছিল,যদিও উদ্যোগটা সায়কই
নিত।কারণ তখন ও মৌসুমী ওকে দেখে একইরকম নির্বাক হয়ে যেত।
কিছু জানল মৌসুমী।সায়ক এতদিন বিদেশে চাকরি করত।কিন্তু দিদি এখানে একা থাকে তাই
দিদির কাছে ফিরে এসেছে।
মৌসুমী,যদিও উত্তর টা পৃথা দিই দিয়ে দিল।
তাই মামা ভাগ্নিতে মিলে আজ শপিং করতে গিয়েছিল।সে ও নিজের মামা কে এতো বছরে রাজি
করাতে পারল না।‘
নিয়েছিল।ইসস! কিন্তু কোথাও যেন একটা আনন্দও হলো।তারমানে সায়কের জীবনে সত্যি কেউ
নেই?
পাচ্ছিল,তাই ওকে গাড়ির ব্যাক সিটে শুইয়ে সায়কের পাশের সিটে এসে বসল মৌসুমী।একটা
অদ্ভুত উত্তেজনা কাজ করছে মৌসুমীর মনের মধ্যে,যা এর আগে কারোর জন্য হয়নি।বেশ
খানিকক্ষণ দুজনেই চুপ করে নিস্তব্ধতা টা অনুভব করল।মৌনতা ভাঙল সায়ক।
ও তো রাখলে না আর।‘
এসেছিলাম।তবে আমি কিন্তু তোমায় খোঁজার চেষ্টা করেছিলাম অনেকবার।‘
ব্রেক কষে দাঁড়ালো।ফোন টা কান থেকে পড়ে গেল মৌসুমীর।গাড়ির সামনে একটা কুকুরের
বাচ্চা এসে গেছিল।গাড়ি থেকে নেমে পড়ল সায়ক।মৌসুমী ফোনটা হাতে নিয়ে নামল গাড়ি
থেকে।সুনু তখন ও ঘুমোচ্ছে।মৌসুমী দেখল সায়ক কুকুরছানা টা কে কোলে তুলে
নিয়েছে।সে ও বেশ আরাম খাচ্ছে।
মারা যেতে দেখে।তারপর থেকে ধারণাটা বদলে যায়।‘
বারবার আয়নায় দেখতে থাকল।কতদিন কোনো পুরুষ মানুষের ছোঁয়া সে পাইনি।প্রকৃত পুরুষ
কেমন হয়,সেটা আজ অবধি জানা হলো না মৌসুমীর।দীপ্ত তার স্বামী ছিল ঠিকই,কিন্তু
তার জীবনের প্রকৃত পুরুষ হতে পারেনি।
সকালে অফিস পৌঁছে যে ঘটনাটা ঘটল,তার জন্য একটু ও প্রস্তুত ছিল না মৌসুমী।পৃথা
দি তাকে একটা অদ্ভুত কাজের ভার দিল।
রেখেছি,তুই শুধু ওকে আজ ডেকে নিয়ে আয়।‘
বলছে? আবার সায়কের সাথে দেখা করার ইচ্ছাটা ও প্রবল।আর মেয়ে দেখলেই যে পছন্দ
হবে,তেমন টা তো নাও হতে পারে।অগত্যা পৃথা দির কথায় রাজি হয়ে গেল মৌসুমী।
আলাদারকম দেখতে লাগছিল।অনেকদিন পর একটু সেজেছে আজ।হয়ত সায়ক কে দেখাবে বলে! সায়ক
কে আজ একটু নার্ভাস লাগছে।মনে হচ্ছিল কিছু বলতে চাইছে মৌসুমী কে।
কে।মৌসুমী আর জল টা ধরে রাখতে পারল না।এক ফোঁটা টেবিলের উপর পড়ল।সায়কের চোখ
এড়ালো না কিছুই।আলতো করে মৌসুমীর হাতের উপর হাত টা রাখল নিজের।
বুঝিয়েছিলে,তাকে একবার আপন করে নেওয়া যায় না মৌ?’
ভুলিয়ে দিল।আঁকড়ে ধরলে সায়কের হাত দুটো।নিজেকে দুমড়ে মুচড়ে ভেঙে ফেলতেই
যাচ্ছিল,হঠাৎ খেয়াল হলো ও কেন আজ ডেকেছিল এখানে সায়ক কে?নিজের হাত টা সরিয়ে
নিল।চোখ মুছে বলল,
বিস্ময়ের ছাপ।
করে রাখা।মৌসুমীর প্রচন্ড রাগ হলো।এরকম ইয়ার্কি কে করতে পারে তার সাথে? সায়ক?
কিন্তু সে তো নিজেই অবাক হয়ে গেছে।লোকটা কে ধরতে হবে,এটা ভেবে মৌসুমী সবে উঠে
দাঁড়িয়েছিল চেয়ার ছেড়ে এমন সময় একটা হাসির আওয়াজে পাশের দিকে তাকালো।
এসে মা কে জড়িয়ে ধরল।পৃথা দি এগিয়ে এসে সায়কের কানটা বেশ জোরেই মুলে দিল।
মেয়ে যার জন্য এতগুলো বছর চিরকুমার হয়ে বসে আছিস?’
আইসক্রিম অর্ডার করল।সায়ক আর মৌসুমী এখনো ধোঁয়াশায়।
আর গাড়ির ব্রেকে ফোন টা কেটে যায়নি।নাহলে কি আর তোদের কুকুরছানা নিয়ে কথোপকথন
টা শুনতে পেতাম?’
লুকিয়ে নিল।এদিকে সুনু ততক্ষণে প্যাকেট থেকে লাল বেনারসী টা বের করে তার ভাঁজ
খুলে ফেলেছে।এরপর যেটা করল,সেটা দেখে কফি শপে সবাই একসাথে হাততালি দিয়ে উঠলো।
ধরে বলল,