রিলেশনের বয়স সাতদিন হওয়ার পর মনে হলো আমার গার্লফ্রেন্ড সুমাইয়া স্বাভাবিক
না। অন্য মেয়েদের মতো না আর কি।
.
পাশের দেশ ভারতে যেটা বৈধ, আমাদের দেশে যেটা অবৈধ। হ্যাঁ, ঠিক ধরেছেন! আমার
প্রেমিকা সুমাইয়া লেসবিয়ান। আমি ব্যাপারটা নিয়ে সন্দিহান। আমি এখনো নিশ্চিত
না যে, আসলেই সে লেসবিয়ান কিনা!
.
এই কয়েকদিন তার সাথে প্রেম করার পর আমার মনে এই সন্দেহের দানা বেধেছে।
সন্দেহের পিছনে বহু কারণ রয়েছে। গোয়েন্দা মনের মতো বহু লজিক রয়েছে। তাহলে
শুনুন, শুরু থেকেই বলি।
.
সুমাইয়ার সাথে আমার পরিচয় হয়েছিলো মতিদার কোচিং-এ। মতিন স্যার স্টুডেন্টদের
সাথে খুবই ফ্রি। মতিদা নাম উনার নিজেরই দেওয়া। স্টুডেন্টদের বলে দিয়েছেন
উনাকে যেনো মতিদা বলে ডাকা হয়। এসব স্যার-ফার ডাকে নাকি উনার খুব এলার্জি।
উনার বউকেও আমরা ভাবী ডাকি।
ভাবী পড়ানোর মাঝেই হঠাৎ হঠাৎ দরজার পর্দার ফাকে উঁকি মারেন। না, মতিদা কে
নিয়ে কোনো সন্দেহের জেরে নয়। আমাদের জন্য বিভিন্ন খাবার বানিয়ে আনেন।
.
মতিদা দিনে ৪-৫টা ব্যাচ পড়ান। সপ্তাহে তিন দিন। স্টুডেন্ট খুব কম প্রতি
ব্যাচেই। ১০-১২ জনের বেশি নয়। তাই ভাবীর বানানো খাবার সবাই সহজেই ভাগ করে
খেয়ে নিতে পারি। শিঙারা, সমুচা কোনোদিন নুডুলস। বিভিন্নরকম খাবার বানিয়ে আনেন
আমাদের জন্য।
আসলে ভাবীর একটা রান্না বিষয়ক ইউটিউব চ্যানেল আছে। এসব রান্নার ভিডিও করে
ইউটিউবে আপলোড করেন। আমরা উনাকে কেকা ফেরদৌসী ভার্শন টু ডাকি।
.
আমার বন্ধু ফুয়াদ দুষ্টুমি করে ভাবী কে বললো, ‘অনেক সুস্বাদু খাবার ভাবী।
কিন্তু কঠিন জিনিস আর কত খাবো? একটু তরল জাতীয় কিছু খেতে দিয়েন।’
-দিবো দিবো। আমার ভিডিও গুলোতে লাইক-কমেন্ট করবা তাহলেই দিবো।
মেয়েদের দিকে একবার চোখ বুলিয়ে, ভাবীকে চোখ টিপ্পনী দিয়ে আবার ফুয়াদ
বললো।
-মতিদার কোচিং-এ আসার পর গলা শুকিয়ে যায়। দুধ দিয়ে তৈরি করা কিছু খাওয়াবেন
ভাবী। পড়ায় মনোযোগ দিতে পারিনা। দুধজাতীয় খাবার খেলে ব্রেইন পরিষ্কার
হয়।
-আচ্ছা। কালকে তোমাদের বাঙ্গির লাচ্চি বানিয়ে খাওয়াবো।
-মতিদার জন্য ফ্রিজে রেখে দিয়েন। বেচারা অংক করার মাঝখানে হঠাৎ পানি খেতে
ছুটে। পানি না খেয়ে, বাঙ্গির লাচ্চি খেলে ভালো হবে।
ফুয়াদ এ কথা বলে মতিদাকে কি বিষয়ে খোঁচা দিয়েছে তিনি ভালো করেই বুঝেন। মতিদা
ভেতরে গেলেই ফুয়াদ সবাইকে বলে,
‘পানি খাওয়ার নাম করে গাইড বই দেখতে গিয়েছে। অংক ভুলে যায় শালা। এমন গাধার
মতো মেধা নিয়ে এতো সুন্দর বউ কেমনে পাইলো আমি বুঝে উঠতে পারি না।’
ফুয়াদের বলা এসব কথা মতিদা জানেন। কিন্তু রাগ করেন না। ঐ যে বললাম না, মতিদা
আমাদের সাথে অনেক ফ্রি। মতিদার কল্যাণেই সুমাইয়ার সাথে আমার প্রেম
হয়েছে।
.
কোচিং-এ সুমাইয়া আর তার বান্ধবী মিম একসঙ্গে বসে। অন্য কারো সাথে কখনো বসে
না। একসাথে কোচিং-এ আসে, একসাথে যায়। কোনো ছেলের সাথে কথা বলেনা। সারাক্ষণ
নিচু স্বরে একে অপরের সাথে কথা বলে।
মতিদা বিষয়টি খেয়াল করেছেন। তাই একদিন সুমাইয়াকে বললেন আমার সাথে বসার জন্য।
প্রথমে ইতস্তত করলেও পরে ঠিকই বসলো।
-পারফেক্ট কাপল! তোরা প্রেম করে বিয়ে করে ফেল। খুব মানাবে। তোদের
ভাবীর সাথে আমার এভাবেই পরিচয় হয়েছিলো, তারপর বিয়ে। তোদের দেখে আমার পুরোনো
দিনের কথা মনে পরে গেলো রে। নস্টালজিক হয়ে গেলাম।
প্রেমের গল্প
রোমান্টিক
.
কথাটা মজা করেই বলেছিলেন মতিদা। কিন্তু আমি ব্যাপারটা সিরিয়াসলি নিয়েছিলাম।
আগে থেকেই সুমাইয়ার প্রতি আমার একটা সফট কর্ণার ছিলো। সুমাইয়ার সাথে সেদিন
বসার পর মনের ভেতরে আরো অশান্তি সৃষ্টি হলো।
যেভাবেই হোক রিলেশন করতে হবে। নিজের করে পেতে হবে সুমাইয়াকে।
.
যেই ভাবা সেই কাজ। পরেরদিন থেকেই আমি আর আমার বন্ধু ফুয়াদ লেগে গেলাম।
কিন্তু ফুয়াদের শর্ত ছিলো, ‘তুই যদি সুমাইয়ার সাথে রিলেশন করিস তাহলে আমিও
মিমের সাথে করবো।’
আমি রাজি হয়ে গেলাম। কারণ ফুয়াদ ছাড়া একলা আমার পক্ষে ব্যাপারটা হ্যান্ডেল
করা সম্ভব হবে না। তাই আমি বললাম,’ আচ্ছা করিস।’
– হ্যাঁ, অবশ্যই করবো। প্রিয়তমা প্রেমিকা হবে আমার মিম, তারপর আমি
খাবো ওর ডিম।
-ডিম? মিমদের ফার্ম আছে নাকি? আমি জানতাম না তো।
-ফার্ম নেই। তবে ডিম আছে, মিমের কাছে দুটো। তোর জানার দরকার নেই। আমি জানলেই
হলো।
.
তারপর ফুয়াদ শিখিয়ে দিলো কিভাবে ইমপ্রেস করতে হয় মেয়েদের। কিভাবে কথা বলতে
হয়। কি কি গিফট করলে মেয়েরা খুশি হয়। মেয়েরা কেমন ছেলে পছন্দ করে। কিভাবে
সুমাইয়া আকৃষ্ট হবে আমার প্রতি।
ফুয়াদের কথা মতো সব পদ্ধতি অবলম্বন করলাম। কাকতালীয় ভাবে সুমাইয়া আর আমার
রিলেশনটা হয়ে গেলেও, মিম আর ফুয়াদেরটা হয় নি। সুমাইয়া প্রথম রাজি না হলেও,
একটু পাগলামি আর ইমোশনাল কথাবার্তা বলার পর রাজি হয়।
.
কিন্তু মিম নাছোরবান্দা। কিছুতেই সে রিলেশনে যাবে না। এমনকি ডি ক্যাপ্রিও
প্রপোজ করলেও রাজি হবে না।
মিমের কাছে এভাবে রিজেক্ট খেয়ে ফুয়াদ পুরোপুরি হতাশ।
ফুয়াদের মুখ দেখে আমার ঐ সব মানুষদের কথা মনে পড়ে গেলো। যারা পরিক্ষায়
বন্ধুকে প্রশ্নের উত্তর সব দেখিয়ে, নিজে ফেল করে বসে।
কিন্তু প্রেম না করতে পেরে ফুয়াদ যে হতাশায় ভুগছে। আমি প্রেম করে, আরো বেশি
হতাশায় ভুগবো, সেটা জানতাম না তখন!
.
সুমাইয়া আমাকে এক্সেপ্ট করার পরদিন ডেটিংএ গেলাম একটা রেস্টুরেন্টে। উপহার
নিয়ে এসেছিলাম সুমাইয়ার জন্য, সেটা দিলাম। অনেক খুশি মনে নিলো সেটা।
কিন্তু বিপত্তি বেধে গেলো অন্যদিকে। মিমকে ছাড়া সে যাবে না। ভাবলাম হয়তো
নার্ভাস, এজন্য একা যেতে চাচ্ছে না।
মন না চাইলেও মিমকেও আমাদের সাথে নিলাম। সুমাইয়া আর মিম পাশাপাশি বসলো আর
আমি তাদের মুখোমুখি সিটে।
.
তারপর তিনজনের জন্য খাবার অর্ডার করলাম। ঠিক তখনই প্রথম লক্ষণ দেখে
বুকে ধাক্কা লাগলো। যদিও তখন এটা স্বাভাবিক মনে হয়েছিল।
সুমাইয়ার মুখে খাবার তুলে দিচ্ছে মিম। সুমাইয়া তুলে দিচ্ছে মিমের মুখে। শেষে
কফি অর্ডার দিতে গেলাম তিনজনের জন্য। সুমাইয়া বললো দুটো নিলেই হবে। আমি
ভাবলাম হয়তো সে খাবে না, অথবা আমার টাকার অপচয় করতে চায় না।
কিন্তু না, আমাকে ভুল প্রমাণিত করে এক কাপ কফি দুজন পালা বদল করে নির্ধিদায়
খাওয়া শুরু করলো। একে অপরের চোখে তাকিয়ে হাসছে। আমার দিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ
নেই।
.
রেস্টুরেন্টের কাজ শেষে বাসায় ফেরার জন্য রওনা হলাম। মিমের বাসা আগে। তাকে
বাসায় পৌছে দিয়ে সুমাইয়ার বাসার দিকে রওনা হলাম দুজনে। মিমকে বিদায় দেওয়ার
সময় দুজন দুজনের গালে ঘষলো, জড়িয়ে ধরলো। রাতে ফোন দেয়ার জন্য বললো। আবেগ
জড়ানো কন্ঠে বললো,’অনেক মিস করবো। কালকে দেখা হবে।’
কিন্তু আমাকে কিছুই বললো না সুমাইয়া। ফোন করার জন্যও না, টেক্সট করার কথাও
না। নতুন প্রেমিক-প্রেমিকার মধ্যে যে আবেগ খেলা করে। সুমাইয়ার মধ্যে তার
ছিটেফোঁটাও দেখলাম না। তখন ভাবলাম, হয়তো নতুন রিলেশন তাই লজ্জা পাচ্ছে।
.
পরের তিন দিন মিম কোচিং-এ আসলো না। পেটে অসুখ হয়েছে। সুমাইয়া আমাকে দোষ
দিচ্ছে। বললো, রেস্টুরেন্টের খাবার খেয়ে এই অবস্থা। নাকি স্বরে কান্না শুরু
করে দিয়েছে।
মিমকে ফোন দিয়ে খোঁজ নিলো একটু পরপর। ফোন নাম্বার সেইভ করা জানু নাম দিয়ে।
এটি দেখে আমার বুকে তখন আরেকটা ধাক্কা লাগলো।
.
কোচিং-এর ভিতরে আমরা। তাই সুমাইয়া চ্যাটিং করা শুরু করে দিয়েছে মিমের সাথে।
অসংখ্য কিস ইমুজি দেয়া। মেসেঞ্জারে নিক নেইম জানপাখি। এটা কি চ্যাটিং না,
আমার সাথে চিটিং বুঝতে পারছি না।
শুধু ইনবক্স না। তাদের দুজনের এমন মাখামাখি কমেন্টবক্সেও কম না। মেসেঞ্জারে
ঘন্টা ঘন্টা কথা বলে, সেটার স্ক্রিনশট মাইডেতে শেয়ার করতো। রিলেশনের আগে
এগুলো তেমন ভাবিয়ে তোলেনি আমাকে। কিন্তু এখন পরিস্থিতি ভিন্ন।
.
কোচিং শেষে সুমাইয়া বললো, আজকে রাতে কথা হবে না তোমার সাথে। আমি বললাম,
মিমের সাথে কথা বলবা তাই তো?
-না, আজকে মিমের বাসায় থাকবো। আড্ডা দিবো। প্রতি বৃহঃস্পতিবারই যাই। গ্রুপ
স্টাডি করি। তাছাড়া একটু জরুরি কাজও আছে।
আমি মনে মনে বললাম, কি জরুরি কাজ সেটা ভালো করেই জানি। আড্ডা দিবা নাকি,
কুতকুত খেলবা তা আমার বুঝা হয়ে গেছে।
সুমাইয়াকে বাসায় পৌছে দিয়ে একটা প্ল্যান করলাম। আমিও যাবো মিমের বাসায়। তবে
সেটা লুকিয়ে। দেখবো তারা আসলে আমার সন্দেহের বাইরে কি না।
.
আমি এখন মিমের রুমের জানালার বাইরে। মিমের রুম দ্বিতীয় তলায়। মইয়ের
সাহায্যে উঠেছে। রুমের ভিতরে চোখ পরতেই দেখলাম, সুমাইয়া ক্যামেরা স্ট্যান্ডের
সামনে দাঁড়িয়ে আছে।
সুমাইয়ার মোবাইল ফোন ক্যামেরা স্ট্যান্ডে লাগানো। ফোনে তার অঙ্গভঙ্গি রেকর্ড
হচ্ছে।
হাতের মধ্যে একটা ক্রিমের বড় কৌটা নিয়ে ফোনের দিকে তাকিয়ে বললো, এই যে আপুরা
এটা হলো নিগ্রো ক্রিম। এই ক্রিম মুখে মাখলে তুমি অনেক সাদা হয়ে যাবা।
মাত্র সাতদিন, হ্যাঁ মাত্র সাতদিনে তুমি চাঁদের মতো ফর্সা হতে পারবা। কালো
বলতে কিছুই থাকবে না।
কে কে নিতে চাও এই ক্রিম কমেন্ট করো জলদি। ইতালি থেকে মাত্র ১৫ পিস আনা
হয়েছে। এখন দেখি কে কি প্রশ্ন করেছো।।
.
সুমাইয়া ফোনের দিকে ঝুকে বললো,নিলিমা রাত্রি কমেন্ট করেছো, আপু চাঁদ তো
ফর্সা না। চাঁদের গায়ে কালো ছোপ ছোপ দাগ আছে।
-শুনো নিলিমা আপু। এতো ভুল ধরলে হয় না। তোমার যদি কোনো সন্দেহ থাকে তাহলে
ক্রিম কিনতে হবে না। ক্রিমের গায়ে সতর্কীকরণ লেখা আছে, অবিশ্বাসীদের ক্ষেত্রে
নিগ্রো ক্রিম কাজ করার হার জিরো পারসেন্ট।
.
মিম শুয়ে শুয়ে সুমাইয়ার কান্ড কারখানা দেখছে। মাঝে মাঝে শিখিয়ে দিচ্ছে আর কি
কি বলতে হবে।
সুমাইয়া আবার ক্যামেরার দিকে ঝুকে বললো, অবুঝ বালিকা কমেন্ট করেছো যে, এই
ক্রিম বডিতেও মাখা যাবে কিনা?
-হ্যাঁ অবুঝ বালিকা, তুমি এই ক্রিম পুরো বডিতে মাখতে পারবা।
তারপর সাইমা আপু কমেন্ট করেছো, আপু আপনার গলার লকেটটা কোন মার্কেট থেকে
কিনেছেন? এক হাজার টাকার ভিতরে হলে নিগ্রো ক্রিমের সাথে এররকম একটা লকেটও
দিয়েন আমাকে।
সুমাইয়া এই কমেন্ট পড়ে চেহারায় রাগও বিরক্তির ভাব ফুটিয়ে তুলে বললো,
-আরে ভাইরে ভাই কে তুমি? তুমি ভাবছো এটার দাম এক হাজার টাকা? এইটা আমার
আব্বু গত সপ্তাহে ইতালি থেকে এনেছেন আমার জন্য। এইটা কোনো সাধারণ লকেট না
আপু। এটার দাম ১ লক্ষ টাকা। চেইনটি সোনার। লকেটে একটা হিরা বসানো আছে খেয়াল
করলে দেখতে পাবে। তোমরা আমাকে গরীব ভাবছো। নিগ্রো ক্রিম তোমাদের ভালোর জন্য
বিক্রি করতে এসেছি, পেটের দায়ে নয়। মেজাজ খারাপ করে দিয়েছো তোমরা। লাইভ কেটে
দিলাম।
.
স্ট্যান্ড থেকে ফোন খুলেই সুমাইয়া জানালার দিকে তাকালো। যেখানে আমি দাঁড়িয়ে
ছিলাম। আমাকে দেখেই আঁতকে উঠলো সে।
আমার মুখে মাস্ক পড়া ছিলো, তাই চেনার কথা না। আমি তাড়াতাড়ি করে নেমে পরলাম।
উপর থেকে সুমাইয়া আর মিমের চিৎকার শোনা গেলো, কে? কে? চোর! চোর!
.
মই রেখেই আমি দৌড়ে পালালাম। বাসায় এসে ঠান্ডা মাথায় ভাবলাম। অনুশোচনায়
বুকের ভিতরে ছাড়খাড় হয়ে যাচ্ছে। সুমাইয়াকে নিয়ে একরকম জঘন্য চিন্তাভাবনা
করেছিলাম ভেবে, খুব অপরাধবোধ হচ্ছে ।
মেয়েগুলো একে অপরের ব্যবসায়িক পার্টনার। আর আমি কিনা কি ভেবেছি, ছিঃ ছিঃ।
কালো মেয়েদের উপকারের জন্য বিদেশি ক্রিম বিক্রি করে ওরা। কত মহৎ!
.
তাছাড়া কতো ভালো প্রেমিকা ভাবতেই গর্ব হচ্ছে। আমার গিফট করা ৪০০ টাকা দামের
লকেটকে সে ফেসবুক লাইভে ১ লক্ষ টাকা বলেছে। যদিও তার বাবা গিফট করেছে
বলেছে।
কিন্তু আমার কোনো সমস্যা নেই এতে। বয়ফ্রেন্ড গিফট করেছে বললে মানুষ সন্দেহ
করবে। কালকেই ওদেরকে আমি সরি বলবো। দুজনের ক্যাটবেরি চকলেট নিয়ে যাবো
.
পরেরদিন সুমাইয়ার সাথে কোচিং-এ দেখা হলো। মিমের সাথে বসেছে। ছুটির পর বাইরে
অপেক্ষা করলাম। আমাকে নাকি একটা জরুরি কথা বলবে। আমি দুটো ক্যাটবেরি দুজনের
দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললাম,
-জানালায় কাল রাতে আমি ছিলাম। কৌতুহল মেটানোর জন্য এভাবে চোরের মতো গিয়েছি।
আমাকে মাফ করে দেও, সরি।
সুমাইয়া একটুও অবাক হলো না। ওদেরকে দেখে মনে হলো এভাবে জানালায় আড়ি পেতে
দেখা অস্বাভাবিক কোনো ঘটনা না।
– হ্যাঁ, জানি।
-জানো? কিভাবে?
-কাল রাতে তুমি যা দেখেছো সব সাজানো নাটক ছিলো। জানালায় মই লাগানোর সময়
তোমাকে দেখেছি। তখনই এই নাটক সাজিয়েছি।
আমি চেহারায় বিস্ময় লুকাতে ব্যার্থ হলাম। মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না। কিছু
একটা বলতে যাবো তখন মিম বললো,
-সুমাইয়া ভুল করে তোমার সাথে রিলেশনে জড়িয়ে গেছে। কিন্তু তুমি মানুষটা ভুল
নও। তাই তোমাকে ঠকাতে চাইনি আমরা। সত্যিটা প্রকাশ করে দিলাম।
আমার মুখ দিয়ে অস্পষ্ট শব্দ বের হলো সুমাইয়া বললো,
-আমরা তোমার সাহায্য চাই।
আমি বললাম, কি সাহায্য?
– আমার আর মিমের সম্পর্কটা এ সমাজ মেনে নিবে না। কারণ এটি বৈধ না এ
দেশে।
-হু। আমি কী করবো?
-তুমি আমাদের হয়ে আন্দোলন করবে। রংধনু পতাকা আন্দোলন।
.
ওদের কথা শুনে আমি কল্পনার সমুদ্রে ডুব দিলাম। শাহবাগ চত্বরে সাতরঙের পতাকা
হাতে দাঁড়িয়ে আছি। কারণ সকল বড় বড় আন্দোলনের সূত্রপাত এখান থেকেই। আমার
দুইপাশে মিম আর সুমাইয়া দাঁড়িয়ে।
সুন্দর প্রেমের গল্প
অনলাইনেও আন্দোলনের ব্যাপক প্রচারণা হচ্ছে। ফেসবুকে লেসবিয়ান অধিকার
আন্দোলন(লেঅআ) নামে গ্রুপ, পেইজ খুলেছি। একটি ইভেন্টও খোলা হয়েছে।
প্রচুর ছেলেমেয়ে আমাদের আন্দোলনে সাড়া দিয়েছে। অনলাইনে যেমন প্রচুর
লাইক,কমেন্ট ও শেয়ার হচ্ছে। তেমনি অফলাইনেও প্রচুর ছেলেমেয়ের আগমন।
.
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আসা কয়েকজন লেসবিয়ান ও গে কাপল সামনে থেকে নেতৃত্ব
দিচ্ছে। আশেপাশের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টুডেন্টরাও চলে এসেছে।
দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের আন্দোলন ছড়িয়ে গেছে।
কয়েকজন মেধাবী ছাত্র-ছাত্রী স্লোগানও বানিয়ে ফেলেছে, ‘আকাশের রংধনু খুব
দামী, মাটিতে আমরা সমকামী।’
.
অনেকে ভুল ভেবেছে যে,এটি গে দের অধিকার আন্দোলন। তাই গে কাপলরাও এসে নিজেদের
জন্য স্লোগান দিচ্ছে। দুই আন্দোলন এক হয়ে একটা জগাখিচুড়ি লেগে গেছে। পুলিশ
এসে লাটিচার্জ করলো। আন্দোলন ছত্রভঙ্গ হয়ে গেলো। আন্দোলনের প্রধান
উষ্কানিদাতা হিসেবে আমাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
.
সুমাইয়ার ডাকে আমার সম্বিত ফিরলো। এতক্ষণ এসব কল্পনা করার কারণে আমার মাথা
চক্কর দিয়ে উঠলো। সুমাইয়া বললো,
-বাবু, পারবা না আমাদের জন্য এইটুকু করতে? বলো পারবা না? তুমি যদি আমাদের
অধিকারের জন্য আন্দোলন করো তাহলে, তোমার জন্য সারপ্রাইজ আছে।
-কি সারপ্রাইজ?
-তুমি চাইলে আমাদের দুজনকে প্রেমিকা হিসেবে পেতে পারো। তারপর আমরা তিনজন
সংসার শুরু করবো। ত্রিসাম সংসার।
.
সুমাইয়ার এই কথার পর আমি আবার কল্পনার সমুদ্রে ডুব দিতে গিয়েও গেলাম না। এক
দৌড়ে বাসায় চলে এলাম। বড় বড় নিশ্বাস নিলাম। অদ্ভুত কল্পনা করে অক্সিজেনের
অভাব হয়েছে আমার।
.
.
তারপর ১০ বছর কেটে গিয়েছে। এই ১০ বছরে সুমাইয়ার সাথে কখনো দেখা হয়নি।মতিদার
কোচিং-এর ব্যাচের সময় পাল্টিয়ে অন্য সময়ে যেতাম। কলেজ লাইফ শেষ করে ঢাকার
বাইরের একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্র্যাজুয়েশন শেষ করেছিলাম।
এখন একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে বেশ মোটা অংকের স্যালারিতে চাকরি করি।
ফুয়াদের সাথে মাঝেমধ্যে কথা হতো। সুমাইয়া আর মিমের প্রসঙ্গে কথা বলতে চাইতো।
কিন্তু আমার এ বিষয়ে আগ্রহ নেই। তাই এ প্রসঙ্গ বাদ দিতে বলতাম।
আজকে হঠাৎ একটা শপিংমলে সুমাইয়াকে দেখলাম। সুমাইয়ার কোলে একটা বাচ্চা। মিম
পাশে দাঁড়ানো। তার কোলেও একটি বাচ্চা। আমার মাথা ১০ বছর পর আবার চক্কর দিয়ে
উঠলো। বাচ্চা আসলো কোত্থেকে? তাও দুটো।
আমি জানতাম ছেলে মেয়ের বিয়ে হলে বাচ্চা হয়। মেয়ে মেয়ে বিয়ে হলেও বাচ্চা হয়
নাকি?
এ দেখি সাইন্সের মায়রে বাপ করে দিলো ওরা। কিভাবে সম্ভব?
আমি ফুয়াদকে ফোন দিলাম, ‘দোস্ত এই ১০ বছরে কি কি হয়েছে আমাকে তাড়াতাড়ি
বল।’
-অনেক কিছুই হয়েছে। স্মার্টফোনের রিভোলেশন হয়েছে। আমার মাথায় টাক পড়েছে।
সানি লিওনি ওইসব দুষ্টু ভিডিও করা ছেড়ে দিয়েছে। ৪কে রেজুলেশনের পর্ণ দেখা
যাচ্ছে।
-ফাজলামো ছাড়। সুমাইয়া আর মিমের ব্যাপারে বল।
-আমি তো বলতেই চাইতাম। তুই তো না করতি।
-আচ্ছা সরি। বল প্লিজ।
– সুমাইয়া একে অপরের ভাবী। আবার একে অপরের ননদ।
-মানে?
-মানে সুমাইয়া মিমের বড় ভাইকে পছন্দ করতো, আর মিম সুমাইয়ার বড় ভাইকে।
সুমাইয়ার ভাইয়ের সাথে মিমের রিলেশন আগেই ছিলো তাই আমাকে রিজেক্ট করে
দিয়েছিলো। মিমের ভাই সুমাইয়াকে পছন্দ করতো। সে জানতো না। পরে জানতে পেরে, তোর
সাথে একটা নাটক করে রিলেশন ব্রেক করেছিলো।
আমার মাথা আবার চক্কর দিয়ে উঠলো। এতো প্যাচ ভালো করে বুঝলামও না। চোখে
উল্টাপাল্টা দেখছি শুধু। পাগল হয়ে যাবো মনে হচ্ছে। এমন হলে, আমাকে পাবনার
মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে দিবেন আপনারা প্লিজ।
প্রিয় গল্প পড়তে নিয়মিত ভিজিট করুন আমাদের ওয়েবসাইটে।
ভালো থাকুন, ভালোবাসায় থাকুন। ..
Thank You, Visit Again…