DUKKHER KOBITA (কষ্টে ভরা দুঃখের কবিতা) Sad Poem Bengali
DUKKHER KOBITA সুখ এবং দুঃখ মানুষের জীবনের এক বাস্তব সত্য । ঠিক যেন কয়েনের দুটো পিঠের মতোই । তাই আপনার জীবনের দুঃখে কিছুটা শরিক হতে আমরা নিয়ে এসেছি সেরা কিছু Dukkher Kobita র এক বিশেষ কালেকশন । আশা করছি এই কবিতাগুলো আপনার ভালো লাগবে….
____রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
সলিল রয়েছে প’ড়ে, শুধু দেহ নাই।
এ কেবল হৃদয়ের দুর্বল দুরাশা
সাধের বস্তুর মাঝে করে চাই – চাই।
দুটি চরণেতে বেঁধে ফুলের শৃঙ্খল
কেবল পথের পানে চেয়ে বসে থাকা!
মানবজীবন যেন সকলি নিষ্ফল —
বিশ্ব যেন চিত্রপট, আমি যেন আঁকা!
চিরদিন বুভুক্ষিত প্রাণহুতাশন
আমারে করিছে ছাই প্রতি পলে পলে,
মহত্ত্বের আশা শুধু ভারের মতন
আমারে ডুবায়ে দেয় জড়ত্বের তলে।
কোথা সংসারের কাজে জাগ্রত হৃদয়!
কোথা রে সাহস মোর অস্থিমজ্জাময়!
জানলাধারের নিম গাছটার ছোট ছোট পাতায়
যখন টুপ করে ঝড়ে পড়ে একটি নিঃসংঙ্গ বৃষ্টিফোটা,
তখন সব ছেড়ে-ছুড়ে উদাস হয়ে যাই ; অথচ
মৌটুসির মতো পাখা ঝাপটায় চঞ্চল মনটা।
তুমি জানো কি?
বৃষ্টিভেজা পত্রফলকের মতো সিক্ত হয়ে, হৃদয়টা
বারংবার মৃদু কম্পনে পুনর্জন্ম দেয় সুপ্ত অনুভুতি।
সুভ্র মেঘের মতো অনুভূতিগুলো ছুটে চলে অবিরাম
সংশয়হীন চির আশ্রয় রুখে দিতে চায় তার গতি।
তুমি জানো কি?
মনে কত সাধ আহ্লাদ জাগে সেই উদাস বেলায়?
পুবের জানালা ভেদিয়া স্নিগ্ধ আঁখি ছুটে যায় বহুদুর;
তোমার আবছায়া মুখখানি খুঁজে ফিরে ব্যর্থ হয় সে,
না পাওয়ার হাহাকার তীব্র হয় মনের আঙিনায়।
কেন এ শুন্যতা ঘিরে আছে মনের উঠোন জুড়ে ,
আবেগের মহাসমুদ্রে কেন এত হাহাকার?
মায়ার সুতোয় অপেক্ষার জাল বুনে বুনে ক্লান্ত আমি,
তবু কেন ফুরায় না আমার অপেক্ষার প্রহর?
তুমি বলতে পারবে কি?
ঠিক কবে চারা দেবে সুপ্ত স্মৃতির অনুভূতির বীজে,
শুকনো জবার গাছটা আবার কবে পাবে প্রাণ ফিরে?
কৃষ্ণ কাকেদের কর্কশ গলাটা ঠিক কবে ,
স্নিগ্ধ শীতল সুমধুর সুরের মূর্ছনায় উঠবে ভিজে?
তবে চিনে নাও তুমি,
সিড়ি ঘরের দক্ষিণ পাশের সেই ছোট্ট বেলকোনি
যেখানে থরে থরে সাজানো তোমার প্রতিচ্ছবি।
তোমার উত্তরের আশায় , তোমার অপেক্ষায়, সেখানে একগুচ্ছ রজনীগন্ধা হাতে দাঁড়িয়ে থাকবো আমি।
শুদ্ধ হয়েছি আজ
জনপদ তবু হয়েছে পিচ্ছিল
ভালবাসার একটি মুকুর আজও যেন অপেক্ষমান
দয়িতের কাছে প্রত্যাক্ষিতা সে তো
আজও তপস্যারতা সপ্তপর্ণী বনে
সুন্দর তবু কেন অচঞ্চল নিষ্ঠুর তবে
রত্নাভারন হয়ছে তুচ্ছ
কেশদাম জটাজুটসম
তবু অপেক্ষা আজও প্রিয়
অনন্ত সময় তবু কি বলে যায় তোমায়
সব কিছুর ঊর্দ্ধে গিয়ে
কিসের প্রতীক্ষা পথিক
যাকে প্রত্যাক্ষান করেছ একদিন
কেন তাকে খোঁজ আজ
তবে কি সব মিথ্যা ছিল
সত্য শুধু একটি মুহূর্ত
আর একটি সংকল্প
তবে ফিরে চলো নতুন পৃথিবীতে
আর সব হোক্ মিথ্যা।
শহরের মন খারাপ আজ
নিশিবেলা কুয়াশা ভেদ করে
পূর্ণিমার চাঁদের আলো গায়ে মেখে
সে হাঁটে না ল্যাম্পপোষ্টের নিয়ন আলো চেয়ে
শহরের চোখে এক ফোঁটা পানি
ভোরবেলা সে ফিরবে না ঘরে
তার বুকে নেই কোন মায়া
সে জানে যতো বড় শহর
তত বড় নয় হৃদয়
শহরের মন খারাপ অনেক দিন
অভিমানগুলো সযত্নে লুকিয়ে রেখেছে
কৃষ্ণতলা দিয়ে বয়ে যাওয়া নর্দমাটার মাঝে
সে ফিরবে না এই শহরে
সে চলে গেছে ইটের পাহাড়ে ঘেরা
হৃদয় ওয়ালা শহরে
তার অনুপস্থিতিতে নয়নতারা ঘেরা শহরের আজ ভীষণ মন খারাপ!
Valobashar Dukher Kobita
_____হুমায়ুন আজাদ
তোমার খবরের জন্য যে আমি খুব ব্যাকুল,
তা নয়। তবে ঢাকা খুবই ছোট্ট শহর। কারো কষ্টের
কথা এখানে চাপা থাকে না। শুনেছি আমাকে
ছেড়ে যাওয়ার পর তুমি খুবই কষ্টে আছো।
প্রত্যেক রাতে সেই ঘটনার পর নাকি আমাকে মনে পড়ে
তোমার। পড়বেই তো, পৃথিবীতে সেই ঘটনা
তুমি-আমি মিলেই তো প্রথম সৃষ্টি করেছিলাম।
যে-গাধাটার হাত ধরে তুমি আমাকে ছেড়ে গেলে সে নাকি এখনো
তোমার একটি ভয়ংকর তিলেরই খবর পায় নি।
ওই ভিসুভিয়াস থেকে কতটা লাভা ওঠে তা তো আমিই প্রথম
আবিষ্কার করেছিলাম। তুমি কি জানো না গাধারা কখনো
অগ্নিগিরিতে চড়ে না?
তোমার কানের লতিতে কতটা বিদ্যূৎ আছে, তা কি তুমি জানতে?
আমিই তো প্রথম জানিয়েছিলাম ওই বিদ্যূতে
দপ ক’রে জ্বলে উঠতে পারে মধ্যরাত।
তুমি কি জানো না গাধারা বিদ্যূৎ সম্পর্কে কোনো
খবরই রাখে না?
আমাকে ছেড়ে যাওয়ার পর শুনেছি তুমি খুব কষ্টে আছো।
যে-গাধাটার সাথে তুমি আমাকে ছেড়ে চ’লে গেলে সে নাকি ভাবে
শীতাতপনিয়ন্ত্রিত শয্যাকক্ষে কোনো শারীরিক তাপের
দরকার পড়ে না। আমি জানি তোমার কতোটা দরকার
শারীরিক তাপ। গাধারা জানে না।
আমিই তো খুঁজে বের করেছিলাম তোমার দুই বাহুমূলে
লুকিয়ে আছে দু’টি ভয়ংকর ত্রিভুজ। সে-খবর
পায় নি গাধাটা। গাধারা চিরকালই শারীরিক ও সব রকম
জ্যামিতিতে খুবই মূর্খ হয়ে থাকে।
তোমার গাধাটা আবার একটু রাবীন্দ্রিক। তুমি যেখানে
নিজের জমিতে চাষার অক্লান্ত নিড়ানো, চাষ, মই পছন্দ করো,
সে নাকি আধ মিনিটের বেশি চষতে পারে না। গাধাটা জানে না
চাষ আর গীতবিতানের মধ্যে দুস্তর পার্থক্য!
তুমি কেনো আমাকে ছেড়ে গিয়েছিলে? ভেবেছিলে গাড়ি, আর
পাঁচতলা ভবন থাকলেই ওষ্ঠ থাকে, আলিঙ্গনের জন্য বাহু থাকে,
আর রাত্রিকে মুখর করার জন্য থাকে সেই
অনবদ্য অর্গান?
শুনেছি আমাকে ছেড়ে যাওয়ার পর তুমি খুবই কষ্টে আছো।
আমি কিন্ত কষ্টে নেই; শুধু তোমার মুখের ছায়া
কেঁপে উঠলে বুক জুড়ে রাতটা জেগেই কাটাই, বেশ লাগে,
সম্ভবত বিশটির মতো সিগারেট বেশি খাই।
– ওয়াহিদ
আমি বহুবার কেঁদেছি ,,তবুও আসে নি কোন জল …..
আমি বহুবার খুঁজেছি ,,তবুও পাইনি পথের দিশা ,
এতো কান্না ,,খুঁজার মাঝেও কাটেনি আমার নিশা ।।
আমি বহুবার চেয়েছি ,,তবুও পারিনি বলতে তোমায় …..
আমি বহুবার চেয়েছি ধরতে তোমার হাত …..
এই ভেবে কেটে গেল অনেক সময় ,,কাটলো একা রাত …
আমি বহুবার চেষ্টা করেছি ,
বহুবার বলেছি …..
বহুবার ধৈর্য ধরেছি ,
তবে পারিনা আমি আর ……
পারছি না এখন করতে বাকি সময় পার
মনের ও কি দোষ ,
তাতো বহুবার আশায় ছিল
বহুবার চেষ্টা করেছিল
কোন বার হয়নি তার পাওয়া
আজো এক তার চাওয়া
আমি বহুবার বলতে চেয়েছি
ভালবাসি তোমায়
আজো তা হয় নি তোমায় বলা
আমি বহুবার বুঝাতে চেয়েছি
আমি ভালবাসি তোমায়
কিন্তু বুঝ নি তা তুমি
ভালবাসার লাগি রেখেছি হৃদয় দুয়ার খোলা ;
জ্যোৎস্নাময় ফাগুনের রাতে মিটিমিটি তারা ,
চাঁদের আলোয় তুমি এলে হয়ে যেন অপ্সরা ।
পলাশ শিমুল কৃষ্ণচূড়ায় লালে লাল প্রকৃতি ,
এই বসন্তে জাগলো প্রাণে প্রেমের আকুতি ;
বসন্ত এল তাই হৃদয় আমার আকুল হয়েছে ,
ব্যকুল এ মন শুধু তোমাকেই ভালবেসেছে ।
কুকিলের কুহু কুহু ডাকে মন করে আনচান ,
কাছে পেয়ে বন্ধু তোমায় নাচে আমার প্রাণ ;
কত বসন্ত কেটেছে আমার নিরিবিলি নির্জনে ,
এই বসন্তে থাকবো আমরা কাছাকছি দুজনে ।
বৃষ্টিগুলো আমার চোখ দিয়েই ঝরুক
ঝর্ণার জলগুলো শুধু আমার হৃদয় দিয়েই বের হোক
সকল জল মিলে ঢেউ উঠলে আমার মনেই উঠুক
আর সেই ঢেউয়ে ভেসে গেলে আমিই যাই।
এ কষ্টের জীবনে অন্যকে জড়িয়ে কি লাভ?
চোখ দিয়ে ঝরা জলের মূল্য যে কত
তা হয়তোবা কোনদিন কল্পনাও করতে পারবেনা
তাই আমিও চাইনা এ নিয়ে ভেবে কারো মাথার উপর
আবার পুরো আকাশটা ভেঙ্গে পড়ুক,
মেঘে ঢেকে চোখ দুটি অন্ধ হোক।
.
সুখের নরম ছোঁয়ায় তোমার হৃদয়ে আবেগের ঝর্ণা বহুক
মুখে চাঁদের হাসিতে চারিদিকে আলোকিত হোক
আমি সব সময় তোমার হৃদয়ে আনন্দের বন্যা দেখতে চাই
যা ছড়িয়ে তোমার পুরো শরীরে ভালবাসার ছোঁয়া লাগুক
পাখিদের গানে গানে মনটা আনন্দে ভরে উঠুক
হাসনাহেনার গন্ধে তোমার চারিপাশ শুভাসিত হোক
জ্যোৎস্না রাতের আলোতে চোখ দু’টি পুলকিত হোক।
.
আর দুনিয়ার যত হতাশা এসে আমাকে জাপটে ধরুক
নষ্ট লোকের মস্ত অপবাদ আমার উপরই লাগুক
রাস্তার যত আবর্জনা এসে আমার শরীরে লাগুক
আমি চাইনা এ আবরণ আমাকে ছাড়িয়ে অন্য কারো শরীরে
স্পর্শ করুক, ব্যাকটেরিয়া লেগে পচন ধরুক,
গোধূলি লগণের আন্ধকারের আবহন চোখে পড়ুক।
.
রংধনুর সাত রঙে তোমার হৃদয়ে ভালবাসার রঙ লাগুক
তবুও তুমি সুখেই থাক, সুখ নিয়েই ভাব
কখনও কষ্টে জর্জরিত এই নষ্ট মনে হানা দিও না।
আমার কষ্টগুলো আমারি থাক
বৃষ্টিগুলো সব আমার চোখ দিয়েই ঝরুক
ঝর্ণার জলগুলো আমার হৃদয় দিয়েই বের হোক
তবুও তোমার হৃদয়ে বিন্দুমাত্র কালো ছায়া স্পর্শ না করুক।
Bangla Valobashar Koster Kobita
ছেলেবেলায় এক বোষ্টুমী তার আগমনী গান হঠাৎ থামিয়ে বলেছিল
শুক্লা দ্বাদশীর দিন অন্তরাটুকু শুনিয়ে যাবে
তারপর কত চন্দ্রভূক অমাবস্যা চলে গেলো, কিন্তু সেই বোষ্টুমী
আর এলোনা
পঁচিশ বছর প্রতিক্ষায় আছি।
মামা বাড়ির মাঝি নাদের আলী বলেছিল, বড় হও দাদাঠাকুর
তোমাকে আমি তিন প্রহরের বিল দেখাতে নিয়ে যাবো
সেখানে পদ্মফুলের মাথায় সাপ আর ভ্রমর
খেলা করে!
নাদের আলী, আমি আর কত বড় হবো? আমার মাথা এ ঘরের ছাদ
ফুঁড়ে আকাশ স্পর্শ করলে তারপর তুমি আমায়
তিন প্রহরের বিল দেখাবে?
একটাও রয়্যাল গুলি কিনতে পারিনি কখনো
লাঠি-লজেন্স দেখিয়ে দেখিয়ে চুষেছে লস্করবাড়ির ছেলেরা
ভিখারীর মতন চৌধুরীদের গেটে দাঁড়িয়ে দেখেছি
ভিতরে রাস-উৎসব
অবিরল রঙের ধারার মধ্যে সুবর্ণ কঙ্কণ পরা ফর্সা রমণীরা
কত রকম আমোদে হেসেছে
আমার দিকে তারা ফিরেও চায়নি!
বাবা আমার কাঁধ ছুঁয়ে বলেছিলেন, দেখিস, একদিন, আমরাও…
বাবা এখন অন্ধ, আমাদের দেখা হয়নি কিছুই
সেই রয়্যাল গুলি, সেই লাঠি-লজেন্স, সেই রাস-উৎসব
আমায় কেউ ফিরিয়ে দেবেনা!
বুকের মধ্যে সুগন্ধি রুমাল রেখে বরুণা বলেছিল,
যেদিন আমায় সত্যিকারের ভালবাসবে
সেদিন আমার বুকেও এ-রকম আতরের গন্ধ হবে!
ভালোবাসার জন্য আমি হাতের মুঠেয়ে প্রাণ নিয়েছি
দূরন্ত ষাঁড়ের চোখে বেঁধেছি লাল কাপড়
বিশ্বসংসার তন্ন তন্ন করে খুঁজে এনেছি ১০৮টা নীল পদ্ম
তবু কথা রাখেনি বরুণা, এখন তার বুকে শুধুই মাংসের গন্ধ
এখনো সে যে-কোনো নারী।
কেউ কথা রাখেনি, তেত্রিশ বছর কাটল, কেউ কথা রাখে না!
____শামসুর রাহমান
বিরান পথের মতো খাঁ খাঁ, যখন আমার ধূসর
দৃষ্টিময় চোখ ফেটে জল ঝরতে চাইছে, যখন
তোমার বিচ্ছেদে আমি কাতর, নতুন করে মনে হলো
তোমাকে আমার খুব প্রয়োজন ছিল
অনেক অনেক বছর আগেই,
যেমন কৃষকের প্রয়োজন ফসলের ঢেউ খেলানো
ক্ষেতের, যেমন কবির প্রয়োজন দ্যুতিপ্রতিম
প্রেরণার, যেমন বিপ্লবীর প্রয়োজন
আলো বিকিরণকারী আদর্শের, যেমন পিপাসার্ত
পথিকের শীতল জল, যেমন অন্ধের
জ্যোতির ঝলক, যেমন মিছিলের
অগ্রযাত্রার জন্যে প্রয়োজন হিল্লোলিত নিশানের।
তুমি আমার হৃদয়ের কদমতলায়
পা রাখার অনেক আগে
ঘুরেছি এখানে সেখানে, হেসেছি খেলেছি
অনেক রঙিন পুতুলের সঙ্গে, অথচ আমার অজান্তে
আমি তোমাকেই খুঁজছিলাম অবচেতনের
কানন –পথে। সেই সব পতুলের
কারো কারো রঙ চটে গ্যাছে
সহজেই, কেউ কেউ ভেঙে লুটিয়ে পড়েছে ধুলোয়,
কারো কারো মন বসেনি খেলায়,
ফলত হয়েছে উধাও আমার চোখে ধুলো ছড়িয়ে।
বুঝতেই পারছ,
তোমাকে আমার প্রয়োজন ছিল অনেক অনেক বছর
আগেই; যা হবার নয় তা নিয়ে
অরণ্যে রোদন অবান্তর জানি, তবুও
আক্ষেপের তীর বিদ্ধ হয় মর্মমূলে।
অসীম আকাশের দিকে
তাকিয়ে ভেবে ভেবে সারা হই-
যদি তুমি কয়েক বছর আগে কিংবা
আমি কয়েক বছর পরে
জন্ম নিতাম, তাহলে কী এমন ক্ষতি হতো কার?
তুমি এসেই কেমন বদলে দিয়েছ আমার জীবন;
এখন আমি বয়সের ধুলি ঝেড়ে ফেলে
তারুণ্যের তরঙ্গিত নদীতে নেমেছি,
এখন আমি গোরস্তানের কথা ভুলে গোলাপ বাগানের
কথা ভাবি। আমাদের দু’জনের ভালোবাসা
নীল পদ্মের মতো প্রস্ফুটিত হওয়ার আগে
নিমজ্জিত ছিলাম হতাশার ঘোর অমাবস্যায়,
এখন আশাবাদ
আমার চৈতন্য-প্রবাহে ঝলসাচ্ছে, যেমন
ফসলের মরশুমে চাষীর কাস্তে থেকে
ঠিকরে-পড়া রোদ।
Dukkher Kobita Lyrics
বয়ে যেতে যেতে –
হারিয়েছে তার সুধার স্রোতের ধারা ;
তুমি কি তবু আশায় রবে
তার প্লাবনে ভেসে-
হবে নাকি ফের আকুল পাগল পারা ?
ছায়া দিত তলে
সে গাছ আজ পাতাবিহীন কাষ্ঠপ্রায় ;
পাতা ভরে সে ডাল কবে
ফের ছায়া দেবে
তুমি কি রবে বসে সেদিনের আশায় ?
তুমি, সারা জীবন ধরে ;
আজও কি সে কথা ভাব বসে নীরবে,
খুব জানতে ইচ্ছে করে !!
এই আমি এক উড়নচন্ডী আউলা বাউল
রুখো চুলে পথের ধুলো
চোখের নীচে কালো ছায়া।
সেইখানে তুই রাত বিরেতে স্পর্শ দিবি।
তুই কি আমার দুঃখ হবি?
তুই কি আমার শুষ্ক চোখে অশ্রু হবি?
মধ্যরাতে বেজে ওঠা টেলিফোনের ধ্বনি হবি?
তুই কি আমার খাঁ খাঁ দুপুর
নির্জনতা ভেঙে দিয়ে
ডাকপিয়নের নিষ্ঠ হাতে
ক্রমাগত নড়তে থাকা দরজাময় কড়া হবি?
একটি নীলাভ এনভেলাপে পুরে রাখা
কেমন যেন বিষাদ হবি।
তুই কি আমার শুন্য বুকে
দীর্ঘশ্বাসের বকুল হবি?
নরম হাতের ছোঁয়া হবি?
একটুখানি কষ্ট দিবি।
নিজের ঠোট কামড়ে ধরা রোদন হবি?
একটুখানি কষ্ট দিবি।
প্রতীক্ষার এই দীর্ঘ হলুদ বিকেল বেলায়
কথা দিয়েও না রাখা এক কথা হবি?
একটুখানি কষ্ট দিবি।
তুই কি একা আমার হবি?
তুই কি আমার একান্ত এক দুঃখ হবি?
তুমি তবু সুখে থেকো”
আমি না হয় আধার ছোব
তুমি তবু আলো মেখো”
আমার না থাক স্বপ্নকানন
তুমি তবু স্বপ্ন দেখো”
আমার আকাশ মেঘে ছাওয়া
রংধনু রঙ তুমি একো”
আমার এ’পথ ভুলে ভরা
তুমি তবু দিশা রেখো”
আমি পেলাম ‘অবাক’ দুঃখ
তুমি তবু ভালো থেকো”
জীবন পথের এই গল্পে-
আমি না হয় হেরেই গেলাম”
তুমি তবু বিজয় দেখো”!
Khub Dukher Kobita
_____ফয়সাল হাবিব সানি
তোমার বুকের ওপাশে আমার হৃদয় রেখে দেবো;
বর্ণিল স্বচ্ছ নীল,
হয়তো চকচকে সাদা কাঁশফুলের মতো তোমার বুকে বড়ো বেমানান সেই হৃদয়;
আচ্ছা বলোতো, কোথায় ফেলবে তুমি সেই হৃদয়?
তুমি তাচ্ছিল্যে আমায় ছুঁড়ে ফেললেও,
আমি জানি, বুকের ভেতর হৃদয়ের স্থান,
মানুষ নাকি বুকে হাত দিয়ে মিথ্যে বলতে পারে না-
তবে তুমিও কি বুকে হাত দিয়ে কখন বলতে পারবে,
বুক সে কিভাবে মিথ্যে বলবে,
তোমার বুক নির্দ্বিধায় বলে দেবে,
তারপর কোনো একদিন তোমার বুকে
সেখানে একদিন আমি ছিলাম,
আমিও ছিলাম’!
আমি কারুর কেউ নই, তবু
কারো জন্য কেন পথ চেয়ে রই?
এই ভেবে…
একটি কাঁঠগোলাপ
উড়ে গেলো পাখি হয়ে,
রৌদ্রজ্জ্বল দিনেও ঝড়ে পড়লো
এক ফোঁটা বৃষ্টি,
ভরা বরষাতেও চৌচির
হয়ে গেলো এক প্রেমিকের হৃদয়,
লোকাল বাসে ঘরে ফিরে এলো
অসংখ্য ‘উড়ন্ত চুম্বন’,
বিকেলের ম্লান আলোয় দাঁড়ালো
একজন পথিক,
সে হেঁটে গেলো তেপান্তরের দিকে
তারপরে মাঠ, একটি পাহাড়, সবুজ ঘাস
এখানেই আটকে আছে আমার দীর্ঘশ্বাস।
সত্যিই আমি কেউ নই, কারুর নই, তবু
আমাকেই যদি খুঁজে ফেরো কভু
এসো, আমি আছি এই ঘাস-পাহাড়ে মিশে
চিনে নিয়ো আমার ফেলে আসা দ্বীর্ঘশ্বাসে।
তুমি হাজার মাইল দূরে
তবু…
কেন দিচ্ছ বিষবাষ্প ছুঁড়ে?
সজল মালাকার।
কেউ যদি আমাকে প্রশ্ন করে, সুখ কি?
আমি হয়তো সঠিক উত্তর দিতে পারবো না।
কেউ যদি আমায় প্রশ্ন করে, দুঃখ কি?
বলবো আমি খানিক হেসে,
সেতো আমার আপনজন, নিত্যদিনের সাথী।
আমি দুঃখকে আপন পেয়েছি,
যখন আমার বয়স ছিলো, নয় কিংবা দশ,
বাবাকে হারিয়ে ছিলাম তখন অকালে,
বঞ্চিত হয়েছিলাম চিরতরে পিতার স্নেহ থেকে।
আমি দুঃখকে পেয়েছি,
যখন অভাব-অনটনে থাকতে হয়েছিল অনাহারে তখন।
আমি দুঃখকে পেয়েছি,
যখন অর্থাভাবে বন্দ হয়ে যেতে বসেছিলো আমার লেখা-পড়া,
অভাবের আগুনে পুড়ছিল আমার উচ্চশিক্ষা লাভের স্বপ্ন তখন।
আজ যখন মন থেকে,
সকল দুঃখ স্মৃতি মুছে ফেলে,
সুন্দর জিবনের স্বপ্ন দেখছি,
তখন দুঃখ স্মৃতি উকি মারে মন মাঝে।
ভাঙতে চায় আমার সাজানো স্বপ্ন।
এমনি করেই কি জিবন যাবে?
ভাবছি অবিরত,
দুঃখ আর আমি সইবো কত।
পাবো না কি সুখের ছোঁয়া এ জিবনে,
জানবো না কি কভু আমি সুখের মানে।
Dukkher Kobita Bangla
দীর্ঘতর কেনো হয়?
কেনো এক ফোঁটা অশ্রু হয়ে যায়
অথৈ সমুদ্দুর?
কেনো কারণে-অকারণে ভেঙে চুরমার
হয়ে যায় হৃদয়?
এত বেশি কাছে থেকেও তুমি
কেন এত বহুদূর?
চলে যাও…
যদি সুখ খুঁজে পাও
অন্য কোথাও।
আমিও চলে যাবো
সমুদ্রের ওপারে আকাশ
একটা বিষণ্ন বিকেল সঙ্গে নিয়ে
আমি ভেসে যাবো,
আমারই অশ্রু দিয়ে গড়ে ওঠা
উত্তাল তরঙ্গরাশিতে।
মৃত্যুকেই আমি আলিঙ্গন করে নেবো
কষ্ট মোড়ানো হাসিতে।
কোনও কোনও রাতে এত বেশি
অন্ধকার নামে কেনো?
নিকষ কালো-
সেই ভালো
আমিতো অন্ধকারেই হারিয়ে যেতে চেয়েছিলাম
তোমার বদলে যাওয়া দেখে
অন্ধকার গায়ে মেখে
তোমার চলে যাওয়া মেনে নিলাম।
মনে রেখো
একদিন তোমার শহরে বৃষ্টি নামবে
আকাশজুড়ে
আমি তখন বহুদূরে
একটি অবহেলিত পার্কের বেঞ্চিতে
বসে একা-
তুমি জানালায় চোখ রেখো
পাবে একটি হলুদ পাখির দেখা।
ঝাপসা চোখে যদি মনে পড়ে কোনও স্মৃতি
পাখিটাকে বলে দিও সব কথা
তবু নয় কোনও প্রেম-প্রীতি।
‘দাঁড়াও’ বলে সেই যে তুমি গেলে
তারপর কেন আর ফিরে না এলে?
আমাকে মন থেকে মুছে ফেলে
তুমি
আছো এই সংসারে, হাঁটছো বারান্দায়, মুখ দেখছো
আয়নায়, আঙুলে জড়াচ্ছো চুল, দেখছো
তোমার সিঁথি দিয়ে বেরিয়ে গেছে অন্তুহীন উদ্যানের পথ, দেখছো
তোমার হাতের তালুতে ঝলমল করছে রূপালি শহর,
আমাকে মন থেকে মুছে ফেলে
তুমি অস্তিত্বের ভূভাগে ফোটাচ্ছো ফুল
আমি ভাবতেই পারি না।
যখনই ভাবি, হঠাৎ কোনো একদিন তুমি
আমাকে ভুলে যেতে পারো,
যেমন ভুলে গেছো অনেকদিন আগে পড়া
কোনো উপন্যাস, তখন ভয়
কালো কামিজ প’রে হাজির হয় আমার সামনে,
পায়চারি করে ঘন ঘন মগজের মেঝেতে,
তখন
একটা বুনো ঘোড়া খুরের আঘাতে ক্ষতবিক্ষত করে আমাকে,
আর আমার আর্তনাদ ঘুরপাক খেতে খেতে
অবসন্ন হয়ে নিশ্চুপ এক সময়, যেমন
ভ্রষ্ট পথিকের চিৎকার হারিয়ে যায় বিশাল মরুভূমিতে।
বিদায় বেলায় সাঝটাঝ আমি মানি না
আমি চাই ফিরে এসো তুমি
স্মৃতি বিস্মৃতির প্রান্তর পেরিয়ে
শাড়ীর ঢেউ তুলে,সব অশ্লীল চিৎকার
সব বর্বর বচসা স্তব্দ করে
ফিরে এসো তুমি, ফিরে এসো
স্বপ্নের মতো চিলেকোঠায়
মিশে যাও স্পন্দনে আমার।
কেন আমার দিন কাটে না রাত কাটে না
রাত কাটে তো ভোর দেখি না,
কেন আমার হাতের মাঝে হাত থাকে না; কেউ জানেনা।
নষ্ট রাখীর কষ্ট নিয়ে অতোটা পথ একলা এলাম
পেছন থেকে কেউ বলেনি করুণ পথিক
দুপুর রোদে গাছের নিচে একটু বসে জিরিয়ে নিও,
কেই বলেনি ভালো থেকো সুখেই থেকো।
যুগল চোখে জলের ভাষায় আসার সময় কেউ বলেনি
মাথার কসম আবার এসো।
জন্মাবধি ভেতরে এক রঙিন পাখি কেঁদেই গেলো
শুনলো না কেউ ধ্রুপদী ডাক,
চৈত্রাগুনে জ্বলে গেলো আমার বুকের গেরস্থালি
বললো না কেউ তরুন তাপস এই নে চারু শীতল কলস।
লন্ডভন্ড হয়ে গেলাম তবু এলাম।
ক্যাঙ্গারু তার শাবক নিয়ে যেমন করে বিপদ পেরোয়
আমিও ঠিক তেমনি করে সভ্যতা আর
শুভ্রতাকে বুকে নিয়েই দুঃসময়ে এতোটা পথ
একলা এলাম শুশ্রূষাহীন।
কেউ ডাকেনি তবু এলাম, বলতে এলাম ভালোবাসি।
তবু জাগি নি।
কী ঘুম তোরে পেয়েছিল
হতভাগিনী।
এসেছিল নীরব রাতে
বীণাখানি ছিল হাতে,
স্বপনমাঝে বাজিয়ে গেল
গভীর রাগিণী।
জেগে দেখি দখিন-হাওয়া
পাগল করিয়া
গন্ধ তাহার ভেসে বেড়ায়
আঁধার ভরিয়া।
কেন আমার রজনী যায়–
কাছে পেয়ে কাছে না পায়
কেন গো তার মালার পরশ
বুকে লাগি নি।
আর কত দূরে..
গেলে,বল তো পৌঁছানো যায়,
তোমার ভালোথাকার ঠিকানায়?
তুমি তো ছিলে
আকাশের নীলে-
ছিলে, রাতের নিরব জোছনায়
ছিলে, আমার না লেখা কবিতায়।
শুনে যে কোন আহ্বান,
তুমি যে দিয়েছ উড়ান
আকাশের তারা মাঝে-
তোমায় বেড়াই খুঁজে..
বল,ওগো,আলোরই নিশানা-
বল, হারানোদের কি ঠিকানা?
কত সুখে আছে সে পাখি আমার!
______জীবনানন্দ দাশ
নিস্তব্ধতা?
চারিদিকে মৃত সব অরণ্যেরা বুঝি?
মাথার ওপরে চাঁদ
চলছে কেবলি মেঘ কেটে পথ খুঁজে-
পেঁচার পাখায়
জোনাকির গায়ে
ঘাসের ওপরে কী যে শিশিরের মতো ধূসরতা
দীপ্ত হয় না কিছু?
ধ্বনিও হয় না আর?
হলুদ দু’-ঠ্যাং তুলে নেচে রোগা শালিখের মতো যেন কথা
ব’লে চলে তবুও জীবনঃ
বয়স তোমার কত? চল্লিশ বছর হল?
প্রণয়ের পালা ঢের এল গেল-
হল না মিলন?
পর্বতের পথে-পথে রৌদ্রে রক্তে অক্লান্ত শফরে
খচ্চরে পিঠে কারা চড়ে?
পতঞ্জলি এসে ব’লে দেবে
প্রভেদ কী যারা শুধু ব’সে থেকে ব্যথা পায় মৃত্যর গহ্বরে
মুখে রক্ত তুলে যারা খচ্চরের পিঠ থেকে পড়ে যায়?
মৃত সব অরণ্যেরা;
আমার এ-জীবনের মৃত অরণ্যেরা বুঝি বলেঃ
কেন যাও পৃথিবীর রৌদ্র কোলাহলে
নিখিল বিষের ভোক্তা নীলকন্ঠ আকাশের নীচে
কেন চ’লে যেতে চাও মিছে;
কোথাও পাবে না কিছু;
মৃত্যুই অনন্ত শান্তি হয়ে
অন্তহীন অন্ধকারে আছে
লীন সব অরণ্যের কাছে।
আমি তবু বলিঃ
এখনও যে-ক’টা দিন বেঁচে আছি সূর্যে-সূর্যে চলি,
দেখা যাক পৃথিবীর ঘাস
সৃষ্টির বিষের বিন্দু আর
নিষ্পেষিত মনুষ্যতার
আঁধারের থেকে আনে কী ক’রে যে মহা-নীলাকাশ,
ভাবা যাক—ভাবা যাক-
ইতিহাস খুঁড়লাই রাশি-রাশি দুঃখের খনি
ভেদ ক’রে শোনা যায় শুশ্রুষার মতো শত-শত
শত জলঝর্ণার ধ্বনি।
ভুলেছি শুণ্য তাই জীবন
পুঁটিজীবনের সাথে পাল্লা দিয়ে
বেড়ে ওঠে লবনাক্ত শুন্যতা…
বেদনার তুফান বুকে তুলে
হাঁটি হাঁটি পা পা করে
ছুঁটে চলি দূর হতে বহু দূর
সময়কে হার মানায় প্রত্যাশিত জীবন
যে জীবনকে ভালোবেসে
দাঁড়িয়েছিলাম তোমার মুখোমুখি
আজ বুঝলাম তা মলিন এক ধূসর শুধুই মরীচীকা
বেদনার শূন্যপুর।
ভালবাসা যদি সত্য হয় চোখ বুঝলেই তুমি পাবে আমায়।
বাস্তবে নয় স্বপ্নে আর কল্পনায়।
নিঝুম রাতে চাঁদেরও পাশে
তারা হয়ে জ্বল্ব তোমারই চোখে।
যদি ভালবাসা সত্য হয়!
তখনো তুমি খুজবে আমায় হারানো অতীতে,
যদি ভালবাসা সত্য হয়।
সত্য সত্য সত্য যদি ভালবাসা সত্য হয়।
না খুজলে তুমি মেনে নেব আমি ভালবাসা সত্য নয়!
খুজলে মেনে নেব সব ভালবাসাই সত্য হয়।
শুধু অবহেলায় হারিয়ে যায়।
যদি ভালবাসা সত্য হয় ,
ছাঁয়া হয়ে থাকব তোমারি পাশে।
সূর্য হয়ে দিনে চাঁদ হয়ে রাতে।
যদি ভালবাসা সত্য হয়।
সত্য সত্য সত্য যদি ভালবাসা সত্য হয়!
সত্য সত্য সত্য যদি ভালবাসা সত্য হয়।
ভালো থাকুন, কবিতায় থাকুন।…
Thank You, Visit Again…
Tags – Bangla Kobita, Sad poem Bengali, Koster Kobita