গুঞ্জন বেরিয়ে যাচ্ছিল। অভিরূপ তার হাত ধরে টানতেই সে ছিটকে সরে এলো অভিরূপের বুকের কাছে।অভিরূপ তার দুটো হাত দিয়ে গুঞ্জনের হাত দুটো কব্জির কাছে ধরে নিজের বুকের উপর রাখল,তারপর ভাঙা ভাঙা গলায় বলল,”এভাবে যাস না।অনেক যত্নে বড়ো করেছি এই সম্পর্কটাকে নিজের সন্তানের মতো করে এতগুলো বছর ধরে।তুই এভাবে সবকিছু স্বপ্ন প্রমাণ করে চলে যেতে পারিস না।গুঞ্জন, আমার ভালোবাসায় কি কোথাও কোনো খামতি ছিল?”
লাল চুড়িদার এর সাথে সবুজ লেগিংস, হাতে একটা হ্যান্ড ব্যাগ, লাল গার্ডার দিয়ে বাঁধা চুল,চোখে পূর্বতন কাজলের চিহ্ন নিয়ে ভাবলেশহীন মুখে গুঞ্জন উত্তর দিল,”যেটা হবার নয় সেটা হয়নি।আমি একটা মেয়ে, আমাকে অনেক কিছু ভাবতে হয়।আমার বাবা মা, পরিবার যারা এতদিন ধরে আমাকে বড়ো করেছে তাদেরকে আমি অস্বীকার করতে পারিনা।তাই তারা যা চাইবে তার বাইরে আমি যেতে পারবোনা।”
গলায় আটকে আসা যন্ত্রণা গুলো কোনোরকমে গিলে অভিরূপ প্রশ্ন করল,” তোর এতদিন সেগুলো মনে হয়নি কেন? আমাদের সম্পর্কের শুরুতে কি তোর বাবা মা পরিবার ছিল না! তারা তখন কি তোর কাছে কোনো মূল্য রাখেনি?আজ এতগুলো বছর পর হঠাৎ তোর এই কথা মনে হচ্ছে?”
গুঞ্জন নিজের হাতদুটো ছাড়িয়ে নিয়ে নির্লিপ্ত ভাবেই বলল,”দেখ তখন আমি বুঝতে পারিনি।এখন যখন বুঝতে পেরেছি আমি আমার দায়িত্বগুলো পালন করছি।তুইও যদি পারিস তাই কর।নিজের বাবা মাকে দেখ।”
“আমার কি হবে গুঞ্জন? আমি কি পাবো?”,অভিরূপের গলা কেঁপে উঠল।তার চোখের সামনে দুর্বিষহ অন্ধকার।
“কিছু পাবার আশায় কি মানুষ ভালোবাসে!তুই যখন আমায় ভালোবেসেছিস,আমি দূরে ভালো আছি এটা ভেবে ভালো থাকিস!”
“কথাটা কেমন বোকা বোকা হয়ে গেলনা?” অভিরূপ তাচ্ছিল্যের হাসি হাসল,”এতগুলো বছর যে মানুষ টা একটা স্বপ্ন তিলে তিলে বড়ো করল।তাকে তুই হঠাৎ ছেড়ে দিয়ে বলছিস ভালো থাকতে।মানুষের স্বপ্ন মরে গেলে মানুষের আর কিছু থাকেনা রে।সে ভিতর থেকেও মরে যায়।আমি মরে গেলেও তাহলে তোর আর কিছু যায় আসবেনা বলছিস?”
“দেখ আমি আমার বলা বললাম।তুই কি করবি তোর ব্যাপার।তুই যদি আমাকে অপরাধী করে রাখতে চাস,তো রাখিস।আর আমি ভালো আছি,এইটা ভেবে তুই ভালো থাকতে পারিস তো তাই থাকিস।দেখ আমার মা বা বাবা চাননা আমি তোর সাথে সম্পর্ক রাখি।আর আমি আমার বাবা মার কথা ফেলতে পারবোনা। এনি ওয়ে পারলে ভালো থাকিস।আমি এলাম।” গুঞ্জন তার যেটুকু কথা বাকি ছিল সেটা শেষ করার পর আর দাঁড়ালো না।ঘুরে হাঁটা লাগালো।সন্ধে নেমে এসেছে মিলেনিয়াম পার্কে।গঙ্গা নিরুপায় ভাবে বয়ে চলেছে।অভিরূপ কোনো প্রাচীন গাছের ছায়ার মতোই স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।তার দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসছে।ওর মনে হচ্ছে ওর মাথার শিরা উপশিরা গুলো কেউ ছিঁড়েখুঁড়ে ওর ভেতরটাকে তছনছ করে দিচ্ছে।ওর খুব ইচ্ছে করছে ও ছুটে গিয়ে পিছন থেকে গুঞ্জন কে জড়িয়ে ধরে বলে,তোকে আমি কোথাও যেতে দেবোনা। কিন্তু ওর পাগুলো সরলোনা। অভিরূপের হঠাৎ মনে হল ওর মাথাটা ঘুরে উঠল।দুচোখে অন্ধকার নেমে এলো।ও পড়ে যাচ্ছে আসতে আসতে কিন্তু ওর শরীর কোনো প্রতিবাদ করছেনা।
.
.
.
.
(২)
অভিরূপ চোখ খুলে দেখতে পেলো মাথার ঠিক উপরেই টিউবলাইট টা জ্বলছে।বেলভিউ নার্সিংহোমের জেনারেল সেক্সেনে তাকে শিফট করা হয়েছে গতকাল। ভিজিটিং আওয়ার্স এখনও শুরু হয়নি।একদম কোণঠাসা বেডের উপর শুয়ে শুয়ে সে ঘেমে উঠেছে।আবার সেই স্বপ্নটা।এখনও তাড়া করে বেড়াচ্ছে তাকে।অনেকদিনই তো হল।অভিরূপ উঠে বসার চেষ্টা করলো। মাথাটা এখনও ঝিম ধরে আছে।স্যালাইন চললেও শরীর টা খুব দুর্বল অনুভব করল।কোনোরকমে বেডের হাতলটা ধরে উঠে বসল।তার পাশের বেডে সেই বয়স্ক লোকটা এখনও ঘুমিয়ে আছে।তাঁর পাশের টেবিলে সেই গতকালের ফল গুলো।অভিরূপের বাবা মা কিছু আপেল আর কমলালেবু এনেছিল।অভিরূপ অবশ্য খেয়ে নিয়েছে সেগুলো।হলঘরের ঘড়িটার দিকে চোখ পড়ল ওর। দশটা বাজতে এখনও মিনিট তিনেক বাকি। বালিশটাকে পিছনে রেখে আসতে করে ঠেস দিয়ে বসে অভিরূপ ভাবলো এই কদিনে তার জীবন কতটা পালটে গেছে।সারাদিন নার্সিংহোমেই কাটানো।টাকাপয়সা জলের মতো বয়ে যাচ্ছে,কিন্তু সে জানে তার বাবা মা টাকার পরোয়া করে না।সে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরলে তাদের আর কিছু চাইনা।গুঞ্জনের ছেড়ে যাওয়ার পর অভিরূপ মাঝেমধ্যেই চাইতো তার একটা মারাত্মক অসুখ করুক।সে সবাইকে ছেড়ে চলে যাবে।তখন গুঞ্জন বুঝবে তাকে কতটা ভালোবাসতো অভিরূপ। আর সত্যি সত্যিই এখন, যখন সে অসুস্থ হল তখন সেই ইচ্ছেগুলো কেমন বোকা বোকা লাগে ভাবলেও..এখন সে বাঁচতে চাই।ভীষণ ভাবে চাই।কিন্তু এমন একটা রোগ যে ভগবান তার প্রার্থনা শুনে উপহার হিসেবে দেবে সে কল্পনাও করেনি।আর্লি স্টেজে ধরা পড়লে এখন ব্রেইন টিউমারের চিকিৎসা সম্ভব।কিন্তু তার যখন ধরা পড়েছে তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে।ওখানকার নিউরোসার্জন তাই বললেন।
যতদিন সে মরার কথা ভাবতো,ততদিন সে মৃত্যুকে ভয় পেতো না।কিন্তু এখন যখন সে নিশ্চিত মৃত্যুর মুখোমুখি তখন হঠাৎ করেই তার কাছে জীবন দামী হয়ে উঠেছে।জীবনের খুব ছোটখাটো ব্যাপার যেটা আগে তার কাছে কোনো মানেই করতো না এখন সেগুলোই তার কাছে অমূল্য হয়ে উঠেছে। এইতো গতকালই হঠাৎ জানালার বাইরে দুটো পাখির কিচিরমিচির শুনে সে কত গল্প বুনে ফেলল।দুটো পাখির মধ্যে তার মতে একটা বর একটা বউ।বউটা বকেই যাচ্ছে। বরটা তাকে মানানোর চেষ্টা করছে।এরকমভাবেই সে গল্পটা দাঁড় করালো।মনে মনে খুব হাসলো।কি মানুষ, কি পাখি! বউ এর কাছে সবাই জব্দ।
.
.
.
.
(৩)
আজও ভিজিটিং আওয়ার্সে বাবা মা দুজনেই এলেন অভিরূপের সাথে দেখা করতে।মা এসে অভিরূপের হাতটা টেনে নিয়ে প্রশ্ন করলেন,কেমন আছিস বাবা? আগের থেকে একটু ভালো লাগছে?
নিজের শরীরের খুব একটা পরিবর্তন সে অনুভব করেনি।মাথা যন্ত্রণা আগের মতোই আছে।সবকিছুই প্রায় ঝাপসা দেখছে।ভিজিটিং আওয়ার্স শুরু আগেই দুবার বমিও করেছে সে।তবু অভিরূপ মিথ্যে মিথ্যে করে বলল,আগের থেকে একটু ভালো আছি।
হঠাৎ করেই অভিরূপের ম্যাচিউরিটি অনেক বেড়ে গেছে।সে জানে মা যতই হেসে হেসে কথা বলুক না কেন মায়ের রাতে ঘুম আসেনি।সারারাতই বলতে গেলে কেঁদে কেঁদেই কেটেছে।চোখের নীচের কালিই বলে দিচ্ছে সেসব।বাবার দিকে ফিরল অভিরূপ। বাবাকে দেখলে বোঝা হয়ত যাচ্ছেনা কিন্তু বাবাও ভিতরে ভিতরে ভেঙে গেছে সেটা সে জানে।তার খুব বাঁচতে ইচ্ছে করছে।এই দুটো মানুষের জন্য।আবার উঠে দাঁড়াতে ইচ্ছে করছে।পড়াশোনা করতে ইচ্ছে করছে। ঈশ্বর যদি এ যাত্রায় তাকে ফিরিয়ে দেয় তাহলে সে খুব পড়াশোনা করবে।একটা ভালো চাকরি করে মা বাবাকে ভালো রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করবে। ঈশ্বর যদি আর একটা সুযোগ তাকে দেয়।
আর সেই গুঞ্জন! যার জন্য একটা সময় সে মরতেও চেয়েছে..সে কোথায়? সে খবর পায়নি এমনটা হতে পারেনা।বন্ধুদের প্রায় সবাই জানে।তারা ঠিক খবর দিয়েছে।কিন্তু সে তো একবারও এলোনা। একবার তো আসতেই পারতো।একবার তো এসে বলতে পারতো,না অভিরূপ আমিও তোকে ভালোবেসেছি।আর তো কিছু চায়না অভিরূপ। সে তো চাইলেও আর তাকে ধরে রাখতে পারবেনা।তার কাছে যে সময় নেই।কিন্তু অন্তত সে শান্তিতে মরতে পারতো।অন্তত সে এটা জেনে মরতো যে তার ভালোবাসার অকালমৃত্যু হয়নি।
অভিরূপের চোখ ভারী হয়ে এলো,তবু সে নিজেকে সামলে বলল,”আমার আর ভালো লাগছেনা মা এখানে। আমাকে বাড়ি নিয়ে চলোনা।আমি তো এখন অনেকটাই সুস্থ।”
“নিয়ে যাবো বাবা।নিয়ে যাবো।আর কদিন পরেই নিয়ে যাবো।”,কথাগুলো বলতে বলতে মা কেঁদে ফেললো। অভিরূপের বাবা তার পাশে এসে তাকে ধরে বলল,”কি করছো রূপা!তুমি ভেঙে পড়লে হবে?”
অভিরূপের মা চোখ মুছতে মুছতে বললেন,”তাইতো।তোকে আমরা ঠিক নিয়ে ফিরবো। দেখিস।ভগবান আমাদের ফেরাবেন না।আমি অনেক জায়গায় মানত করেছি।”
অভিরূপ কিছু বলতে পারলোনা।হাসলো।কিন্তু সেই হাসিটা তার বুকে গিয়েই বিঁধলো।ভগবান নিশ্চয় তাকেও ফেরাবে না।
আবহাওয়া ভারী হয়ে এসেছিলো।অভিরূপের বাবা কথা ঘোরালেন,”রূপা ওকে ফল গুলো দিয়ে দাও।”
অভিরূপের মা তড়িঘড়ি প্যাকেট থেকে ফলগুলো বের করে ওর বিছানার পাশের টেবিলের উপর বাস্কেটে রেখে দিলেন।তারপর বললেন,”সব গুলো খাবি কিন্তু।তোর শরীরে এখন জোর লাগবে।”
সে ঘাড় কাত করলো। ইতিমধ্যে অভিরূপ খেয়াল করলো আগের দিনের সেই নার্স এসে হাজির তার সেই একগাল হাসি আর মা মা দৃষ্টি নিয়ে।অভিরূপের মাথায় একবার হাত বুলিয়ে তিনি জিজ্ঞেস করলেন,”কেমন আছো অভিরূপ? “
অভিরূপ হাসল,”আগের থেকে বেটার।”
“বাহ দ্যাটস গুড।”
অভিরূপ এর এই নার্সটিকে খুব ভালো লেগেছে এই কদিনে।কেমন যেন মায়ের মতো।ওর সাথে কত সুন্দর করে কথা বলে।অভিরূপ তার ছেলের বয়েসি ই হবে।তাই জন্য কিনা কে জানে! বা অন্য যেকারণেই হোক এই নার্সটার ডিউটি পড়লে অভিরূপের খুব ভালো লাগে।মিসেস বসু,অভিরূপের মা বাবার দিকে লক্ষ্য করে বললেন,”হি ইজ আ ব্রেভ কিড।আপনারা চিন্তা করবেন না।ও ঠিক সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরবে।”,তারপর একটু থেমে অভিরূপের বাবাকে উদ্দেশ্য করে বললেন,”আপনি একটু ডাক্তারবাবুর সাথে একবার দেখা করে যাবেন।”
অভিরূপের বাবা উঠে গেলেন।অভিরূপ কে নার্সটি একটা কি ওষুধ ইঞ্জেক্ট করলো।আগে ইঞ্জেকশন দেখলে অভিরূপ খুব ভয় পেতো। এখন কেমন একটা অভ্যাস হয়ে গেছে।অভিরূপের হালকা ঘুম ঘুম পাচ্ছে এবার। অভিরূপ দু-তিনবার তাকিয়ে মাকে বলল,”আমি একটু ঘুমোলাম মা।”
রূপা দেবী ছেলের মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে বললেন,”হ্যাঁ সোনা।তোমার যাতে সুবিধা হয়।তুমি শোও আমি তোমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি।”
মায়ের এই চুলে হাত চালানোটা অভিরূপের খুব ভালো লাগছে।আসতে আসতে ঘুম নেমে এলো ওর চোখে। আহ! কি শান্তি!
.
.
.
.
(৪)
১১.০৪.১৫
গতকাল অভিরূপকে আই.সি.ইউ তে নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো।হঠাৎ ওর মাথা যন্ত্রণা মাত্রাছাড়া বৃদ্ধি পায়।রক্তবমি শুরু হয়।চোখের দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসে।কথা বলার শক্তি হারিয়ে যায়।একটা সময় যন্ত্রণায় ও এমন ভাবে গোঙাতে শুরু করে যে ওকে সামলানো মুশকিল হয়ে পড়ে।হার্টবিট ভীষণ রকম ভাবে বেড়ে যায়। ওষুধ দিয়ে কোনোরকমে ঘুম পাড়ানো হয়। রূপা দেবী আর অভিষেক বাবু খবর পেয়ে হন্তদন্ত করে এসেছিলেন। ছেলেকে একবারই দেখতে পান।কিন্তু অভিরূপ কিছু বুঝতে পারেনি।ও কিছুই বুঝতে পারছেনা।সবসময় একটা ঘুম ঘুম ভাব।রূপা দেবী ছেলেকে ওইরকম অবস্থায় দেখে ভেঙে পড়েছিলেন।অভিষেক বাবু কোনোরকমে তাকে বাড়ি নিয়ে যান।
১৫.০৪.১৫
ডাক্তাররা আজ জানিয়ে দিলেন। অভিরূপের মস্তিষ্ক আর কোনোদিন কোনোরকম নির্দেশ দেবেনা। তার হৃৎপিন্ড চলবে। কিন্তু অভিরূপ আর কোনোদিনও উঠবেনা।ডাক্তারি পরিভাষায় যাকে বলে ব্রেইন ডেথ।রূপা দেবী বিশ্বাস করতে পারছেন না।তার ছেলেতো ঘুমিয়ে আছে।একবার ছেলের দিকে তাকিয়ে স্বামীকে বললেন,”কি ব্যাপার ও সাড়া দিচ্ছেনা কেন? ওর হার্ট তো চলছে।ওরাই ওকে মেরে দিলো বলো।ওরাই মেরে দিল আমার ছেলেটাকে।তুমি ওকে ডাকো না! তুমি ডাকলে ও উঠবে।” অভিষেক বাবু নিজের স্ত্রীকে বললেন,”রূপা ও উঠবেনা।”
“তুমি অপারেশন করাতে রাজী হলে কেন? ওর অপারেশন না হলে ও তো বেঁচে থাকতো।তুমিও ওকে মেরেছো।তুমিও দায়ী।তোমরা সবাই যুক্ত।” রূপাদেবী নিজেকে হারিয়ে ফেলেছেন।
“কিছু করার নেই রূপা।ডাক্তার রা বলেইছিলেন অপারেশন সাক্সেসফুল হবার সম্ভাবনা খুব কম।কিন্তু না করলে আমাদের ছেলেটাকে কষ্ট পেতে হতো।ওর কষ্ট শেষ হয়ে গেলো রূপা।ও ঘুমোচ্ছে দেখো।ওর ঘুম আর কেউ ভাঙাবে না।”,অভিষেক বাবু সান্ত্বনাটা কাকে দিলেন তিনি নিজেও জানেন না।
সব তো শেষই হয়ে গেল..
.
.
.
.
(৫)
জানলার ধারের সিটে বসে আছে গুঞ্জন। মিস্টার ব্যানার্জী, তার স্ত্রীকে ডাকলেন,”গুঞ্জন! কি হল?” গুঞ্জন কল্পনাতে হারিয়ে গিয়েছিলো।ঘোর কাটতে হেসে বলল,”কিছু নাতো। এমনি ভাবছিলাম।”
মিস্টার ব্যানার্জী নিশ্চিন্ত হলেন,”আচ্ছা।” বাসটা ইডেন গার্ডেন্স ক্রস করে হাওড়া ব্রীজের দিকে ছুটে যাচ্ছে।সন্ধে নামবে কিছুক্ষণের মধ্যেই। অভিরূপের মৃত্যুর খবর আমূলে নাড়িয়ে দিয়েছিল ওকে।সেও অনেক বছর আগের কথা।জীবন থেমে থাকেনি। মিলেনিয়াম পার্কে রোজ সন্ধে নামছে।গঙ্গা একই ভাবে বয়ে চলেছে।ব্যস্ত শহর ভুলেই গেছে,কে অভিরূপ? কে রূপা? তার অত ভাবার সময় নেই।এরকম ঘটনা দেখতে দেখতে শহরের চোখ দুটো পচে গেছে।
গুঞ্জন হেডফোনটা কানে গুঁজে এফএম চালিয়ে দিলো… দু’সেকেন্ডের বিরতির পর যখন গানটা বেজে উঠল…গুঞ্জনের মনে হল,কথাটা যেন তার চেনা জানা কোনো একটা ছেলেই গেয়ে উঠল…খুব ঝাপসা হয়ে আসা একটা মুখ…কণ্ঠস্বরটা সুদূর থেকে যেন ভেসে এলো,এভাবে যাস না…অন্যদিকে শ্রাবণী সেনের গলায় তখন ভেসে উঠেছে..
তবু মনে রেখো যদি দূরে যাই চলে।
যদি পুরাতন প্রেম ঢাকা পড়ে যায় নবপ্রেমজালে।
যদি থাকি কাছাকাছি,
দেখিতে না পাও ছায়ার মতন আছি না আছি–
তবু মনে রেখো।
যদি জল আসে আঁখিপাতে, এক দিন যদি খেলা থেমে যায় মধুরাতে,
তবু মনে রেখো।
এক দিন যদি বাধা পড়ে কাজে শারদ প্রাতে– মনে রেখো।
যদি পড়িয়া মনে
ছলছল জল নাই দেখা দেয় নয়নকোণে–
তবু মনে রেখো।
…….
নীচের কমেন্ট সেকশনে লিখে জানান আপনার মূল্যবান মতামত ও পরামর্শ । আর ভালো লাগলে লেখাটি শেয়ার করুন …
ধন্যবাদ 😊