“অ্যাই শুনছো! অনলাইন আছো?”
“হ্যাঁ আছি।বলো।”
“ঋষির আজ খুব জ্বর ছিল।বেচারা অফিস গেল,মনটা ভালো লাগছেনা।”
“ভালো না লাগলে পাঠালে কেন?”
“না মানে ও বলছিল ওর আজকে না গেলেই নয়,কিসব মিটিং আছে।”
“তাহলে আর ভেবে লাভ কি?”
“না লাভ নেই তাও..”
“তুমি এটা বলার জন্য, মেসেজ করলে! “
“না শুধু সেটা না। তুমি কি করছো বলো..”
“আমি অফিস যাচ্ছি,যেমন যাই।”
“তোমার বউ তোমাকে রোজ কাজে পাঠায় কেন? আমি তোমার বউ হলে রোজ পাঠাতাম না।”
“তাই বুঝি? তোমার বরকে তাহলে পাঠাও কেন?”
” ও বাড়িতে থাকতে চায়না…কাজপাগল লোক একটা।আমার রোজ ওকে যেতে দিতে ইচ্ছে করেনা,তাও কি করবো বলো।”
“যাক তোমার বর রোজ কাজে বেরোয় বলেই আমি তোমার সাথে একটু গল্প করতে পারি।তুমি আমার একটু খোঁজ খবর নাও।এটা হত না নয়ত।”
“তাহলে তো বলতে হয় তোমার বউ ও ভালো,তোমাকে রোজ আমার কাছে ছেড়ে দেয়।”
“তোমার কাছে মানে?”
“কিছু না। যাও তো..”
“আরে বলোনা।কাউকে বলবোনা।”
“রাখো আমার অনেক কাজ পড়ে আছে।পরে কথা বলবো।”
“বেশ যাও।আমি অপেক্ষায় থাকলাম পরের টা শোনার জন্য।”
“খুব শয়তান হয়েছো তুমি।তোমার সাথে কথা বলা কমাতে হবে।আমার বর যদি জানে তোমাকে হয়ত কেটে খেয়ে নেবে।”
“এই এসব ভয় দেখিওনা।তোমার বর আমাকে মেরে দিলে আমার বউটা মাঝখান থেকে বিধবা হয়ে যাবে।”
“খুব ফাজিল হয়েছো। শোনো না। সত্যি অনেক কাজ আছে।পরে কথা বলছি।”
“আচ্ছা বেশ যাও।”
নবনীতা ফোনটা চার্জে বসিয়ে বারান্দায় এলো।খুব রোদ্দুর।এইবেলা কাপড় গুলো কেচে মেলে দিতে হবে।অরূপ বলে যে ছেলেটার সে এতক্ষণ কথা বলছিল তার সাথে আলাপ ফেসবুকেই।প্রথমে প্রোফাইলে গাছপালার ছবি দেখে সে ভেবেছিল ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট অ্যাক্সেপ্ট করবেনা।তারপর ছেলেটা যখন ম্যাসেজ রিকোয়েস্টে লিখে পাঠালো আপনাকে অনেকটা সুচিত্রা সেনের মতো দেখতে…তখন সে উত্তর না দিয়ে পারলোনা,আমার বান্ধবীরাও আমাকে এটা বলতো জানেন।ভদ্রলোক সঙ্গে সঙ্গে রিপ্লাই করেছিলেন,আমি ডিরেক্টর হলে আপনাকে সিনেমায় নিতাম কিন্তু.. সেই থেকে কথার শুরু।পরে নবনীতা অনেক কিছু জানতে পারে অরূপের সম্বন্ধে।বেচারি বউ এর ভয়ে গাছপালার ছবি লাগিয়ে ফেসবুক করে।আর ও এমনভাবেই কথাটা সাজিয়েছিল যে নবনীতা হেসে লুটোপুটি খায় আর কি! অরূপ ওকে বউ এর অদ্ভুত অদ্ভুত সব গল্প বলে। নবনীতা অবসর কাটতে চায়না। ঋষি কাজে বেরিয়ে গেলে সে সারাদিন ঘরে কাটায়।তাদের বিয়ে তিন বছর হয়েছে।ঋষি এখনি ছেলেমেয়ে নিতে ইচ্ছুক নয়।ওর মতে আর কদিন যাক।আর একটু স্টেবল হই তারপর নাহয় ফ্যামিলিপ্ল্যানিং করা যাবে।ঋষি এমনকি ওকে কোনো কাজ করার জন্যও বলেছিল কিন্তু নবনীতাই কত কি সব ভেবে সে পথে এগোয়নি।তবে ওর সারাদিন কাটতে চায়না।কাজ আর কতক্ষণ করে।ছেলে মেয়ে থাকলে সময়টা কেটে যায়,তার সে ঝক্কিও নেই।অতএব সে বেজার মুখে নিউজফিড স্ক্রল করে যায় আর এর ওর লেখা পড়ে,হাজার গণ্ডা পোস্ট শেয়ার করেই দিন কাবার করে।যারা ম্যাসেজ করে তারা মূলত দুধরণের।এক শ্রেণির কোনো ক্লাস নেই, একটা ছবি পাঠাও না,কথা বলছোনা কেন..এসব মেসেজ করে আর একশ্রেণী নিজেদের জ্ঞান জাহির করে।সব কথাতেই একটা না একটা সাজেশন দেয়।নবনীতার বিরক্তি লাগে।মাঝে মাঝে সে ভাবে বিয়ের পর থেকে কি তার ডিম্যান্ড পড়ে গেছে? প্রোফাইল পিক এ বরের সাথে সিঁদুর দেওয়া ছবি দেওয়া আছে বলেই কি তাকে আর ইয়ং ছেলেরা মেসেজ করেনা.. তাতে তার খুব কিছু এসে যায় তেমনটা নয়,তবু কেমন একটা করে।কেমন একটা অস্বস্তি ঠিক বলে বোঝানো যাবেনা।অরূপ ওর জীবনে হঠাৎ ধেয়ে আসা একপশলা বৃষ্টির মতো এসেছিল একগুচ্ছ বেলিফুল আর সোঁদামাটির সতেজতা নিয়ে।ওর কথা বলার মধ্যে একটা ব্যাপার আছে,একটা অদ্ভুত মোহ আছে,যেটাকে ঠেকানো খুব মুশকিল। ঋষির কথা ভেবে সে মাঝেমাঝে নিজেকে পিছিয়ে আনে।তার মনে হয় সে অন্যায় করছে।আবার যখন অরূপের সাথে কথা বলে ও যখন বিশ্বাস যোগায় বৈবাহিক সম্পর্কের বাইরেও একটা মানুষের বন্ধুত্বের সম্পর্ক থাকতে পারে। ঠিক যেমন সূর্যের আলোর ফাঁকে ফাঁকে মেঘের বিরতির প্রয়োজন। এই বন্ধুত্বগুলো অনেকটা সেই ছায়াটার মতো।নবনীতার ও এসব বিশ্বাস করতে ভালো লাগে।ও এমন অনেক কথা আছে যেগুলো ঋষিকে বলতে পারেনা, কিন্তু অরূপকে বলতে পারে। এর কারণটা সে একদিন অরূপকেই জিজ্ঞেস করেছিল।অরূপ হেসে বলেছিল,”তোমাদের বিয়েটা দেখেশুনে হয়েছে।তোমরা একে অপরকে সেভাবে জানোনি।তাই কোথাও একটা দূরত্ব থেকেই গেছে।তুমিও দায়ী তার জন্য কিছুটা।তুমিও এগিয়ে এসে সেই দূরত্বটা ঘোচানোর চেষ্টা করোনি।কিন্তু আমাকে যেহেতু তুমি কোনোদিনও দেখোনি,আমাকে তোমার কথা বলতে অসুবিধা হয়না।আমি তোমার কাছে ওই ডায়েরিটার মতো যেটাকে লোকে ব্যক্তিগত সংগ্রহে রাখে,ব্যক্তিগত কথাগুলো লিখে রাখার জন্য।”
ভারী সুন্দর করে কথা বলে অরূপ।যে মানুষটা এত সুন্দর কথা বলে সেই মানুষটা দেখতে কেমন কে জানে? নবনীতা কত দুপুরবেলায় অরূপের মুখশ্রী কল্পনা করে কাটিয়েছে।সত্যি বলতে আজকাল ওর মনে হয় ওর বিয়েটা ঋষির সাথে না হয়ে অরূপের সাথে হলে ভালো হতো।পরক্ষণেই একটা অপরাধবোধে নিজেকে জড়িয়ে ফেলে সে।এসব সে কি ভাবছে! ঋষি ওর স্বামী।কোন অচেনা পুরুষের সাথে দু একদিন কথা বলে ও এসব ভাবছে! নিজেকে ধিক্কার দেয় নবনীতা।কদিন কথা বন্ধ রাখে অরূপের সাথে।কিন্তু অরূপ আবার যখন মেসেজ করে, কি ব্যাপার বরের সাথে ঝামেলা মিটল! আমি বেচারি কতদিন আর অপেক্ষা করবো তোমার মেসেজের জন্য….তখন না চাইতেও রিপ্লাই দিয়ে ফেলে নবনীতা।অরূপ ওকে যেন মায়ায় বেঁধে রেখেছে।এমন মায়ায় যার থেকে ওর নিস্তার নেই।
(২)
ঋষির ফিরতে একটু সন্ধ্যে হয়ে গেছিলো, নবনীতা উদাস মনে ব্যালকনিতে বসেছিল।আজকাল ওর কিছুই ভালো লাগছেনা।ডোরবেল বাজতে ও উঠে গেল,তারপর ভাবলেশহীন মুখে দরজাটা খুলে আবার ব্যালকনিতে গিয়ে বসল।ঋষির সাথে একটা কথাও বললোনা।ঋষিও ঘরে ঢুকে একবার বউ এর দিকে তাকিয়ে চুপচাপ ঘরের ভিতর ঢুকে ড্রেস চেঞ্জ করতে লাগলো।তারপর হাত পা ধুয়ে অন্যঘরে বিছানায় চলে গেল।নবনীতার কান্না পেয়ে গেল।ও চ্যাটবক্স খুলে দেখল অরূপ অনলাইন। দু-তিনটে চিন্তা করেই ও মেসেজ করলো,”কি করছো?”
“এই একটু আগে বাড়ি ফিরলাম।তুমি?”
“ব্যালকনিতে বসে আছি।”
“কেন ঋষি বাড়ি ফেরেনি?”
“ফিরেছে।কিন্তু ও ঘরে।”
“কিছু হয়েছে কি?”
“কিছু নাতো।”,মেসেজটা করতে গিয়ে নবনীতা দাঁত দিয়ে ঠোঁট চিপে ধরল।
“কিছু তো একটা হয়েছেই?”
নবনীতা কেঁদে ফেলল।জলভর্তি চোখে টাইপ করলো,”জানো ঋষি আমাকে ভালোইবাসেনা।”
“হঠাৎ এরকম মনে হওয়ার কারন?”
“আমি দরজাটা খুলে ওর সাথে একটা কথাও বললাম না।ও একবারও আমার রাগ ভাঙাতে এলোনা।পাশের ঘরে চুপচাপ শুয়ে পড়ল।”
“তুমি কথা বললেনা কেন ওর সাথে?”
“এমনি। আমি না বললে ও বলবেনা কেন? আমি তো ওর বউ।ওর তো খোঁজ নেওয়া উচিৎ। “
“ঋষির কথাও ভেবে দেখো। ও বেচারি অফিস থেকে এলো আর তুমি ওর সাথে কথা বললেনা।ওর কেমন লাগবে বলো।”
“তুমি ওর হয়ে একদম কথা বলবেনা।আমার কি মনে হয় জানো,তুমি আমাকে যতটা ভালোবাসো ঋষি আমাকে অতটাও ভালোবাসেনা।”
অরূপ কে অনেকক্ষণ টাইপিং দেখালো।বেশ কিছুক্ষণ পর ও লিখে পাঠালো,”তোমার যদি মনে হয় ঋষি তোমাকে ভালোবাসেনা,তাহলে ওর সাথে আছো কেন?”
“কি করবো বলো আমি?”
“পালিয়ে যাবে আমার সাথে?”
“তা হয়না অরূপ।কিন্তু আমার কিছু ভালো লাগছেনা।আমার মনে হচ্ছে আমার বিয়েটা তোমার সাথে হলে ভালো হত।”
“এখনও হয়?”
“কি করে হয়?”
“আমি আমার বউ কে ডিভোর্স দিয়ে দেবো,তুমি তোমার বরকে দিয়ে দাও।”
“ইয়ার্কি মেরোনা।ভালো লাগছেনা।”
“আরে আমি ইয়ার্কি মারছি কে বললো তোমায়!”
“জানি না।রাখো।”
“আচ্ছা আচ্ছা বাদ দাও।আমার সাথে দেখা করবে একদিন?”
নবনীতার মনে হল অরূপ যেন ওকে পড়তে পারছে।এই ইচ্ছেটা তার মনে কতদিন ধরে বাসা বেঁধে রয়েছিল তার ঠিক নেই।বলবো বলবো করেও বলতে পারেনি।হয়ত সমাজবিধির জন্য।কিন্তু আজ যখন অরূপ নিজের থেকেই প্রস্তাবটা নিয়ে এগিয়ে এলো তখন তাকে না বলার কিছু নেই।ও প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই রিপ্লাই করলো,”কবে দেখা করবে বলো?”
“এই শনিবার কফিহাউসে? কফিহাউস চেনোতো?”
“হ্যাঁ চিনি।কখন দেখা করবে বলো?”
“পাঁচটার দিকে? আমার অফিস হয়ে যাওয়ার পর।”
“ঠিক আছে।”
“ঋষি কে কি বলবে?”
” ও আমি কিছু একটা বলে নেবো।তোমাকে ভাবতে হবেনা।”
“আচ্ছা বেশ।তবে আমি একটা প্রস্তাব দেবো? ঋষির সাথে একটু বেশি সময় কাটাও।”
“ঋষিকে নিয়ে তোমার মুখ থেকে আর কোনো কথা শুনতে চাইনা আমি।তুমি ওর হয়ে কথা বলবেনা।”
“বেশ বলবোনা।”,অরূপ মেসেজটা শেষ করতে না করতেই ভিতরের ঘর থেকে ঋষি ডাক দিল,”মিনি?”
নবনীতাকে ঋষি এই নামেই ডাকে।ও তাড়াতাড়ি মেসেজ করল,”আচ্ছা শোনো বর ডাকছে।পরে কথা বলছি।”
চোখের জল মুছে পাশের ঘরে উঠে এলো নবনীতা।দরজার হাত রেখে জিজ্ঞেস করল,”কি?”
“একটু আমার পাশে এসে বসোনা।”,অনুনয়ের সুরে বলল ঋষি।
“কেন? তোমার কি চাই?”,ঝাঁঝিয়ে উঠল নবনীতা।
“বাবা! ওরকম ভাবে বলছো কেন? তুমি আমার বউ..তোমাকে পাশে বসতে বলতে পারিনা?”
“ঢং করোনা।তোমার সাথে আমার কথা নেই।”,নবনীতার ঠোঁটে অনুযোগ।
“ওরে বাবারে আমার বউটার রাগ হয়েছে? এসো এসো!”,ঋষি উঠে এসে নবনীতার হাত ধরে ওকে বিছানায় টেনে বসালো।তারপর বুকে জড়িয়ে ধরে বলল,”কি হয়েছে তোমার?”
নবনীতার চোখ দুটো যেন এই মুহূর্তটার অপেক্ষা করছিল অনেকদিন।আজ সেই মুহূর্তে এসে তারা আত্মসমর্পণ করলো ঋষিরর বুকে।বেশ কিছুক্ষণ ঋষিকে জড়িয়ে কেঁদে নবনীতা বলল,”তুমি আমাকে আর সময়ই দাও না।”
ঋষি ওর চুলে হাত চালাতে চালাতে বলল,”সেতো তুমিও আমাকে সময় দাও না।সারাক্ষণ দেখি ফোনটা নিয়েই ব্যস্ত থাকো।”
“সে তুমি আমাকে সময় দাওনা বলেই।তুমি সময় দিলে আমি কেন ফোন ঘাঁটতে যাবো?”,নবনীতা উত্তর দিল।
“আমি কি করে জানবো।তুমি আমার সাথে কথা বলতে চাও।আমার মনে হত তুমি আমার সাথে কথাই বলতে চাওনা।”
“এরকম মনে হওয়ার কি আছে? আমি তো তোমার বিয়ে করা বউ।আমাকে একটু সময় দেওয়া উচিৎ না তোমার..”,কথাগুলো বলতে পেরে একটু শান্তি অনুভব করল নবনীতা।
“আচ্ছা আমারই ভুল।এবার থেকে আমার বউকেই শুধু সময় দেবো। এখন এসো আমার পাশে শোও।আমি তোমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি।”,আবদারের ভঙ্গিতে বলল ঋষি।
নবনীতা যন্ত্রচালিতের মতো কথা শুনলো।বরের বুক পেলে সে আর কোথাও যাবেনা। অরূপের কথা ভেবে ওর মনে আবারও অপরাধবোধ আরও দৃঢ় হল।ঋষির বুক খামচে ধরল ও।মনে মনে ভাবলো এর একটা শেষ করতেই হবে।অরূপ ওর মাথাটা খেয়ে নিচ্ছে।ওকে এই শনিবার ও জবাব দিয়ে দেবে।শেষবারের মতো,আর কোনো লুকোচুরি নয়।
(৩)
মাঝে দুদিন অরূপের সাথে একটা কথাও বলেনি নবনীতা।অরূপ বিরক্ত করেনা।ওর এই একটা ভালো গুন।তবে ওসব নিয়ে আর ভাববেনা সে।শুক্রবার রাতে যখন নবনীতা ঋষি কে বলল,”আচ্ছা আমি কাল একজনের সাথে দেখা করতে যেতে পারি?”
ঋষি দু-চার সেকেন্ড চুপ থেকে শুধু একবার জিজ্ঞেস করলো,”কার সাথে?”
নবনীতা ঢোক গিলে উত্তর দিল,”একটা বন্ধু।”
ঋষি আর কিছু বললনা,হাসি মুখে বলল,”হ্যাঁ বেশ তো যাওনা।”
নবনীতা কথার প্রসঙ্গ পাল্টাতেই যাচ্ছিল তারপর কি একটা ভেবে বলল,”আচ্ছা তুমি কাল কফিহাউসে আমাকে নিতে আসতে পারবে ছটার দিকে?”
ঋষি কিছুক্ষণ ভেবে বলল,”হ্যাঁ আমার কোনো অসুবিধা নেই।”
নবনীতা নিশ্চিন্ত হল।অরূপকে সবটা বলবে।ওর সাথে আর যেন যোগাযোগ না রাখে।ঋষি যখন ওকে সময় দিচ্ছে তখন ওর অন্যকারোর প্রয়োজন নেই।আর ও এইসব বন্ধু বন্ধু ব্যাপার টা রাখতে চায়না।এই অরূপের জন্যই ওর সব গুলিয়ে যাচ্ছে।এটা আর যাইহোক ঠিক হচ্ছেনা,মনে হল নবনীতার।কাল এর একটা বিহিত করেই আসবে ও..
.
.
.
চারটের সময় কফিহাউসে গিয়ে একটা টেবিলে বসে পড়ল নবনীতা। অনেক ভেবেছে সে সারাদিন।অনেক প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছিল ওর মাথায়।অরূপের সাথে দেখা করাটাও কি ওর ঠিক হচ্ছে? কে অরূপ? একজন অচেনাপুরুষই তো।তার সাথে দেখা করতেই বা আসবে কেন? কোথাও কি সে জড়িয়ে পড়ছেনা।ভালো লাগছেনা ওর।কোথাও কোনো একটা কিছু বিঁধছে।অনেক প্রশ্নের মায়াজালে বুঁদ হয়েছিল নবনীতা।বেয়াড়া এসে এক কাপ কফি দিয়ে গেছে।কফির কাপে চুমুক দিতে দিতে ও ভাবল,দুর্বলতার একটা মুহূর্ত কে এর প্রশ্রয় দেওয়া উচিৎ নয় ওর।পার্স থেকে ফোন টা বের করে ও অরূপকে মেসেজ করলো,”কোথায় তুমি?”
তিন মিনিট পরে রিপ্লাই এলো,”এই অফিস থেকে বেরোচ্ছি।তুমি পৌঁছে গেছো।”
“হ্যাঁ আমি পৌঁছে গেছি।কিন্তু আমার একটা কথা বলার ছিল।”
“হ্যাঁ কি বলো।”
“তুমি এসোনা।”
“কেন? “
“কারণ আমি চাইনা আমাদের এই বন্ধুত্বটা এগোক আর।”
“হঠাৎ এরকম মনে হওয়ার কারন?”
“না যেটা হচ্ছে সেটা ঠিক হচ্ছেনা অরূপ।আমি বিবাহিত। আর আমার তোমার সাথে এভাবে মেশাটা ঠিক নয়।”
“কিন্তু আমরা তো বন্ধু।”
“যাইহোক এরকম বন্ধুত্ব আমি চাইনা।তোমার কথায় কথায় আমি এমন জড়িয়ে গেছি…এটা অন্যায় হচ্ছে।কোথাও গিয়ে এটা ঋষিকে ঠকানো হচ্ছে।আমি সেটা আর করতে চাইনা।”
“আর ইউ শিওর? “
“হান্ড্রেড পার্সেন্ট।আর তুমি আমার সাথে ফারদার কোনো কনট্যাক্ট রাখবেনা প্লীজ।আমি আজকেই ঋষিকে সবটা বলে দেবো।আর তোমাকে ব্লক করলাম।ভালো থেকো।”
“বেশ তোমার যদি সেটাই ইচ্ছে হয় তাহলে তাইহোক।তুমিও ভালো থেকো।”
নবনীতা আর মুহূর্ত মাত্র দেরি করলোনা। অরূপকে ব্লক করে দিল।ওর অনেকটা হাল্কা লাগছে।এবার ঋষিকে বলে দিতে পারলেই হল।সেটা খুব কঠিন কিন্তু ও আর,লুকিয়ে রাখতে চাইনা।
পাঁচটা কুড়ির দিকে ঋষি এলো।নবনীতা হাত নেড়ে ডাকল।ঋষি ধীর পায়ে এগিয়ে গেল সেদিকে, ওর সামনের একটা চেয়ার টেনে বসলো।তারপর এদিকওদিক তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল,”তোমার বন্ধুটি কোথায়?”
“সেই ব্যাপারে তোমার সাথে কিছু বলার ছিল,”নবনীতাকে সিরিয়াস শোনালো
“হ্যাঁ সিরিয়াস কিছু কি?”,ঋষি যেন কিছুটা আঁচ করতে পারলো।
“হ্যাঁ। আমার একটা ছেলের সাথে সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল ফেসবুকে।তুমি আমার সাথে কথা বলতে না বলে আমি তার সাথে কথা বলতাম।আমাদের সম্পর্কটা বন্ধুত্বের কিন্তু আমি অস্বীকার করবোনা আমি ওর প্রতি আকর্ষণ অনুভব করিনি।তুমি আমায় সময় দিতে না।আমি কি করতাম বলো।আমার একা লাগতো।আর সেই মুহূর্তের দুর্বলতা থেকেই..”,অনেকটা একসাথে বলে দম নিল নবনীতা। ঋষির কপালে ভাঁজ দেখা দিল।ও বলল,”তারপর?”
নবনীতা বলে চলল,”তারপর আমি ওকে এখানে দেখা করতে ডাকি প্রথমে।কিন্তু তরশুদিন তুমি আমাকে জড়িয়ে যখন বললে কি হয়েছে তোমার ওই সময় আমি বুঝতে পারি তুমি আমায় ভুলে যাওনি।আমার নয়ত মনে হচ্ছিল তুমি আমাকে আগের মতো ভালোবাসোনা। কিন্তু আমার ভুল হয়েছিল।আমি আমার ভুলটা বুঝতে পারি।আমার ওর সাথে কথা বলা উচিৎ হয়নি।তাই আমি ওকে বলে দিই আর কোনোদিনও আমার সাথে যোগাযোগ না রাখতে।ওকে ব্লক ও করে দিয়েছি।তুমি আমায় ক্ষমা করে দেবে? “
নবনীতা চোখ ছলছল করে উঠল।ওর এবার সম্পূর্ণ হালকা লাগছে।ঋষি কিছুক্ষণ ওর চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,”ক্ষমা করে দিতে পারি কিন্তু একটা শর্তে?”
“কি শর্ত বলো”,নবনীতা ঋষির হাতটা টেনে ধরল,”তুমি যা বলবে আমি করতে রাজী।”
“বেশ তাহলে আগে আমাকে অনব্লক করো”
“মানে?”
“মানে অরূপ মিত্তির কে আনব্লক করো।”
“তুমি কি করে জানলে?”
“ওইটি আমারই ফেক অ্যাকাউন্ট। “
“মানে?”,নবনীতা যেন নিজের কান কেই বিশ্বাস করতে পারছেনা।
“মানে মানে কি? আমার বউকে আমি অন্যকারোর সাথে প্রেম করতে দেবো নাকি? একদিন হঠাৎ মাথায় আইডিয়াটা এলো।তোমার মনের কথা গুলো জানা দরকার ছিল।তুমি তো আমার সাথে কথাই বলতে না।”
“জানোয়ার।তুমি আমার সাথে এরকম করলে।”,নবনীতা প্রচন্ড রেগে গেছে।
“আরে আরে রাগ করছো,কেন? তুমিও তোমার মনের কথাগুলো বলে দিলে।আমিও আমার মনের কথা গুলো বলে দিলাম।”
নবনীতার এখনও বিশ্বাস হচ্ছেনা,”আচ্ছা আমি যদি অন্যকারোর সাথে প্রেম করতাম তাহলে?”
“তুমি চাইলে তোমাকে যেতে দিতাম।”
“আমি উঠছি।”
“আরে আবার রাগ করে।বসো বসো। আমার কি বলা উচিৎ বলো।”
“তোমার বউ তোমাকে ফেলে অন্যকারোর সাথে প্রেম করলে তুমি মেনে নেবে?”
“কি করবো বলো?ধরে পেটাবো? জোর করে কারোর ভালোবাসা পাওয়া যায়না।আর তাছাড়া আমি জানতাম তুমি অন্যকারোর সাথে বেশিদূর যাবেনা।”
“কি করে জানলে?”
“আমি,আমার বউকে চিনি আর তাছাড়া আমার নিজের ভালোবাসার উপর বিশ্বাস আছে তাই।”
“চুপ করো।এখন বেশি বেশি বকছে।”
“আচ্ছা শোনো না,”
“কি?”
“বলছি এবার সত্যি সত্যি আমাদের মাঝে তৃতীয় একজনকে নিয়ে এলে কেমন হয়?”
“জানি না যাও।অসভ্য একটা।”