“ডাক্তার সেন আমি বড়োই অকৃতজ্ঞ “
“কেন?”
“আমার মনে হয়,আমি আপনাকে ভালোবেসে ফেলেছি।জানি আমি অন্যায় আবদার করছি।আপনি আমার জন্য এতকিছু করলেন,নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দিলেন,আপনার প্রতি কৃতজ্ঞ হয়ে সরে যাওয়ার জায়গায় এতো বড়ো দাবী করে ফেললাম।আমাকে ক্ষমা করে দিতে পারবেন?”
“ক্ষমা চাইছ কেন মহুল। যে কোনো মানুষ যে কোনো মানুষ কে ভালোবাসতে পারে,এতে অন্যায় তো কিছু নেই।”
“আমার খুব ভয় লাগছে জানেন।”
“ভয়? কিসের ভয়?”
“হারিয়ে ফেলার ভয়। যাদের ভালোবাসি তাদের অনেককেই হারিয়ে ফেলেছি আগে।একতরফা ভালোবাসা খুব কষ্ট দেয় জানেন।”
“তোমার ভালোবাসাটা যে একতরফা, সেটা তুমি কি করে জানলে?”
“মানে?”
“তোমার মতো কাউকে নিজের জীবনসঙ্গী হিসেবে পাওয়া যেকোনো মানুষের খুব ভাগ্যের।”
“কিন্তু আমার হাতে সময় নেই যে একটুও।”
“যতটুকু আছে,ততটুকুই আমাকে দিও।”
“এভাবে বলবেন না,তাহলে বাঁচার ইচ্ছেটা আরও জোরালো হয়ে যাবে।ভিতরে।”
“বাঁচো না কে বারণ করেছে।”
“কিন্তু..”
“কোনো কিন্তু না। চুপ করো এবার।”
ডক্টর সেনের ঠোঁট দুটো নিয়ে মহুলের কপালের দিকে এগিয়ে গেল,কিন্তু স্পর্শ করে ওঠার আগেই ঘুমটা ভেঙে গেলো মহুলের।
ভোর হয়ে এসেছে। জানালা পেরিয়ে ঘরের ভিতর মৃদু আলো এসে হানা দিয়েছে। এইসময় টা হাসপাতাল শান্ত থাকে।নয়ত বেলা হলেই অজস্র লোক,আর তাদের চিৎকার শুনতে শুনতে মাথা ধরে যায় মহুলের।ছোট থেকেই সে নিরিবিলি পরিবেশ ই বেশি পছন্দ করে।একটা কোনো গাছের ছায়ায়,কিম্বা নদীর ধারে,মিঠে বাতাস গায়ে মাখতে মাখতে একমনে কিছু চিন্তা করে যাওয়া।এরকমটাই তার ধাত।অনির্বাণ মাঝেমাঝেই বলতো,”তোকে নিয়ে কোথাও যাওয়াটাই মুশকিল।লোকজন দেখলেই পালিয়ে আসিস।এত ইন্ট্রোভার্ট হলে চলে! বাইরে বেরোলে লোকজনের সাথে মিশতে জানতে হয়।”
মহুল গাল ফুলিয়ে উত্তর দিতো,”আমি মোটেও ইন্ট্রোভার্ট নই। আমি সবার কাছে খোলামেলা হতে পারিনা এই যা।অনেক কথা ভাবলেও সবসময় বলে উঠতে পারিনা। তুই তো আছিস,আমার আর চিন্তা কি তুই শিখিয়ে দিবি।”
“এভাবে আর কদ্দিন চালাবি?”
“জানিনা যাতো।”
………
এখন সেসব ভাবলে কেমন অদ্ভুত লাগে।মহুল একটা জিনিস পরিষ্কার ভাবে বুঝেছে,কোনোকিছুই চিরস্থায়ী নয়।সুখ,দুঃখ,মানুষ,জীবন.. কোনো কিছুই। অনির্বাণ কে ওর স্থায়ী মনে হয়েছিল। একটা স্থায়ী আশ্রয়,যার ছাদের তলায় সে নিশ্চিন্তে তার বাকি জীবন টা কাটিয়ে দিতে পারবে।
কিন্তু বছর দুয়েক আগে যখন ওর ক্যানসার ধরা পড়ল ইউটেরাসে চিত্রগুলো দ্রুত বদলে যেতে থাকল। চিকিৎসকরা জানিয়ে দিলেন তারপক্ষে এখন সঙ্গমে লিপ্ত হওয়া অসম্ভব যন্ত্রণাদায়ক হবে। তাই এখন সে কোনোরকম শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হতে পারবেনা। তার ক্যানসার ধরা পড়াটা যতনা অনির্বাণকে উদ্বিগ্ন করে তুলেছিল তার থেকেও বেশি শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত না হতে পারার কথাটা ভাবিয়েছিল। বুদ্ধিমান স্বার্থান্বেষীরা কখনওই একদিনে উবে যায়না। তারা ধীরে ধীরে দূরত্ব টানতে থাকে। আসতে আসতে সম্পর্কের সুতোটা এতটাই আলগা হয়ে যায় যে তাতে আর টান থাকেনা। মহুল জটিলতা না বুঝলেও এতটুকু বোঝার ক্ষমতা তার ছিল। কারোর সাথে বহুদিন থাকলে মেকি হাসি আর নিখাদ হাসির পার্থক্য টা বোঝা যায়। অনির্বাণ মাঝেমধ্যে খোঁজ নিতে আসতো ঠিকই,কিন্তু সেটা নেহাত ই শুকনো আগ্রহে। সব সূত্র গুলো সেদিনই মহুলের কাছে পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল যেদিন ওর সবথেকে প্রিয় বান্ধবী গার্গী এসে ওর কাছে গোপনীয় খবরটা প্রকাশ করেছিল। তার এই হঠাৎ অসুখের খবরে অনির্বাণ নাকি ভেঙে পড়েছিল,গার্গী সেখানে ভরসার কাঁধ হয়ে দাঁড়িয়েছিল… এখন তাদের মধ্যে একটা সম্পর্ক তৈরি হয়েছে যেটা ঠিক ভাষায় প্রকাশ করতে পারছেনা। মহুল হাসল..বলল,”প্রকাশ করার প্রয়োজন ও নেই। ভালো থাকিস তোরা।”
শেষ কথার যন্ত্রণাটুকু সে চেপে গেল। জীবন ই যখন তার কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে মানুষ কে আর দোষ দিয়ে কি লাভ!
তাই অভিমানের বোঝা সে আর বাড়াতে চায়নি।
………..(২)
বেলার দিকে ডাক্তার সেন রাউন্ডে এলেন। মহুল উঠে বসল বেডের উপর। ডাক্তার সেন তার সেই চিরপরিচিত হাসিমুখে তাকে জিজ্ঞেস করলো, ” এখন কেমন আছো?”
“একটু ভালো।”
“পেইন হচ্ছে আর?”
“অল্পস্বল্প। “
“খাবার খেতে পারছো?”
“হ্যাঁ ওই লিকুইড ই খাচ্ছি।”
“কদিন লিকুইড খাবার ই খাও।চিন্তা করোনা খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাবে তুমি।”
মহুল ঘাড় নাড়ল।একদৃষ্টে ডাক্তার সেনের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে গত রাতের স্বপ্নটার কথা মনে পড়ে গেল। আর মনে পড়তেই হৃৎপিন্ড দ্রুত গতিতে প্রত্যুত্তর জানাতে লাগলো। মহুল বুকের উপর হাত রেখে, নিজের মনে মনে বলল,”চুপ। ধরা পড়ে যাবো তো।”
ডাক্তার সেন নার্স দিদিকে কিছু ইন্সট্রাকশন দিয়ে মহুলের দিকে ফিরে বললেন,”আচ্ছা তুমি একটু রেস্ট নাও, আমি রাউন্ড দিয়ে এসে তোমার সাথে গল্প করছি।”
মহুল হাসার চেষ্টা করল।এত ভালো ব্যবহার সে চায়না।তার অসুবিধা হয়।এতে তার বেঁচে থাকার লোভ বেড়ে যায়।সবাই যদি ওর সাথে খারাপ ব্যবহার করে তাহলেই ভালো।সবাই ওকে আঘাত দিক,তাহলেই একমাত্র ওর পক্ষে বিদায় নেওয়াটা সহজ হবে,আর নাহলে যন্ত্রণাটাই বাড়বে কেবল…
ভাগ্যের কি পরিহাস!… হঠাৎ করে ওর ক্যানসার ধরা পড়ল.. সেটা হতেই পারে… অনেকেরই হয় আজকাল… যে মানুষ টাকে সে ভালোবাসতো সে ওর বান্ধবীর হাত ধরে বেরিয়ে গেল… তারপর যে জায়গায় ওর ট্রিটমেন্ট শুরু করানো হয়, সেখানে ভুল ট্রিটমেন্ট এর জন্য ওর অবস্থাটা আগের থেকেও খারাপ হয়ে পড়ে। ডাক্তার সেনের সাথে তার যখন যোগাযোগ হয়,তিনি সবটা বোঝান… কিভাবে তার ভুল চিকিৎসা করা হয়,সে ডাক্তারির বিষয়ে কিছুই বোঝেনা,তবে সে এটুকু বুঝেছিল তার মৃত্যুর হাত থেকে নিস্তার নেই। যতদিন বাঁচতে হবে কেমো নিয়েই বাঁচতে হবে,তাও তার মেয়াদও একদিন ফুরিয়ে আসবে।
ঠিক যে মুহূর্তে সে নিজের মনকে প্রস্তুত করে নেয় আসন্ন মৃত্যুর জন্য তখনই যেন একটা প্রতিবন্ধকতা সামনে এসে দাঁড়ায়।একটা মানুষ। এই ডাক্তার সেন। যে তার মধ্যে বেঁচে থাকার ইচ্ছের যে চারাগাছ টা আছে,তাতে নিয়ম করে জল দিতে শুরু করেন।
মহুল মুখে না বলুক সে জানে সে সবার সাথে মিশতে পারেনা,অচেনা কারোর সাথে তো কথাও ঠিক ভাবে বলতে পারেনা। কিন্তু ডাক্তার সেন কি করে ব্যতিক্রম হল সে নিজেও জানে না। মহুল তাকে তার সব কথা বলতে পেরেছে। তার ছোটবেলার কথা, অনির্বাণের কথা… ডাক্তার সেন মন দিয়ে শুনতেন। তারপর এ কথা ও কথার মধ্যে দিয়ে তাকে সাহস যোগাতেন। কখনও কখনও সময় পেলে অল্পবিস্তর নিজের গল্পও শোনাতেন। এম.বি.বি.এস পড়তে যাবার গল্প। হোস্টেল লাইফের গল্প। তার স্কুল জীবনের গল্প। মহুল একমনে শুনে যেতো। একজন অচেনা মানুষের গল্প শুনেই সে তার অতীতটাকে দেখতে পেতো.. কল্পনায়..
ডাক্তার সেনের বয়েস বেশি নয় তিরিশ পঁয়ত্রিশ এর মধ্যেই। লম্বাটে চেহারায় মার্জিত ব্যবহারের ছাপ স্পষ্ট। একজন চিকিৎসক এর কেবল রোগীর রোগ সারানোটাই শেষ কথা তিনি মনে করেন না,যতক্ষণ তার মন থেকেও রোগ টাকে নিশ্চিহ্ন না করতে পারছেন,তিনি ধাতস্থ হতে পারেন না। এটা তার চারিত্রিক গঠনের ই একটা অংশ। সহকর্মী দের কাছে অনেক সময় বিদ্রূপ ও শুনতে হয়েছে এজন্য,তবে তিনি গা করেন নি। তার বিয়ে হয়েছে চার বছর। দু বছরের একটি মিষ্টি শিশু কন্যাও আছে । মহুল সব শুনেছে। সবটা শোনার পরেও সে নিজেকে সরিয়ে রাখতে পারেনি মানুষটার প্রেমে পড়ার হাত থেকে।প্রায় অসম্ভব একটা ভবিষ্যতের স্বপ্নে সে বুঁদ হয়ে থেকেছে। নিজেকে ধমক দিয়েছে অনেকবার, এর জন্য,কিন্তু তাও পারেনি। মানুষ চাইলেই হয়ত সবকিছু করতে পারেনা।
প্রতিদিন বাবা মার দিকে তাকিয়ে থাকে মহুল। তারা হাত শূন্য করে টাকা ঢেলে গেছেন মেয়ের চিকিৎসার জন্য। যদি অসম্ভবকে সম্ভব করা যায় এই আশায়। মহুল সবটা জানে।সে বাচ্চা মেয়ে নয় যে এসব বুঝবে না। বাবা মার পুঁজি ধীরেধীরে কমে আসছে। এরপর হয়ত তাদের হাত পাততে হবে আত্মীয় স্বজনের কাছে। মহুলের নিজের উপর রাগ ওঠে। ওর তো বাঁচার কোনো চান্স নেই।মরে গেলেই তো পারে।সব সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। বাবা মা লোকের কাছে হাত পাতুক ও চায়না। কিন্তু বাবা মাকে সেটা বোঝানো যাবেনা। এইসময় টাই বাবা মা যেন আরও কাছে চলে এসেছে মহুলের। একটা জিনিস সে পরিষ্কার বুঝেছে,বাবা মার চেয়ে আপন এই পৃথিবীতে আর কেউ নেই।আর কেউ থাকতে পারেনা। সে যদি তাড়াতাড়ি মরে যেতো.. কে জানে ভালোই হতো.. একদিন না একদিন যেতেই হবে।অন্তত বাবা মাকে আর্থিক কষ্ট সহ্য করতে হবেনা।
ডাক্তার সেন রাউন্ড থেকে ঘুরে এসে মহুলের কাছে বসেন। আবার গল্প শোনান। হাসিঠাট্টা করেন। মহুল প্রাণ দিয়ে অনুভব করে তাকে,তার মন সব ভুলে বিরুদ্ধাচরণ করতে শুরু করে..সে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করে আর কয়েকটা দিন রেখে দাও..
……….(৩)
মহুল কোনোদিন কোনো পুরুষকে বুকের আদিম অনুরাগে খুঁজে পায়নি। অনির্বাণের সাথে নৈকট্য তৈরি হওয়ার আগেই তার জীবনে ঝড় আছড়ে পড়ল,সবকিছু লণ্ডভণ্ড হয়ে গেল। এখন চোখ বন্ধ করলে অনির্বাণের মুখটা ভেসে ওঠে না আর। ডাক্তার সেন কেই খুঁজে পায় সে। লজ্জায় মুখ ঢেকে নেয়। হয়ত অতীতের চরিত্রের অবয়ব গুলোর থেকে বর্তমানের চরিত্রের অবয়ব গুলোই বেশি জীবন্ত হয়ে ওঠে।
এই কদিনে মহুলের যন্ত্রণা মাত্রা ছাড়িয়েছে। ঘোরের মধ্যে ভুলভাল ও বকতে শুরু করেছে.. দৃষ্টিও ঝাপসা হয়ে ওঠে মাঝেমধ্যে.. তল পেটে অসম্ভব ব্যথা করে। প্রায়শই ব্লিডিং হয়।
একদিন ডাক্তার সেন মহুলের পাশে বসে আছেন। মহুল আবছা দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে। যন্ত্রণার জন্য কথাও বলতে পারছেনা। কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে থাকতে থাকতে চোখ ভিজিয়ে কান্না নেমে এলো ওর। ডাক্তার সেন জিজ্ঞেস করলেন,”খুব যন্ত্রণা হচ্ছে মহুল।”
মহুল কোনোরকমে দাঁতে দাঁত চেপে ঘাড় নাড়ল।
“তোমাকে পেইনকিলার দিচ্ছি। ব্যথা কমে যাবে, চিন্তা করোনা।”,ডাক্তার সেন আশ্বস্ত করার চেষ্টা করলেন।
“শুনছেন “,মহুল বিড়বিড় করে বলল।
“কিছু বলবে!”
“একটা কথা বলার ছিল,জানিনা বলার সুযোগ পাবো কিনা আর!”
“সুযোগ কেন পাবেনা।তুমি রেস্ট নাও। পরে বলো নাহয়। “
“না আজ বলে ফেলি। অনেকদিন ধরে বলবো ভাবছিলাম।”
“কি বলো!”
” আপনি খুব ভালো মানুষ একজন। আমার শেষ দিন গুলোতে এভাবে পাশে থাকার জন্য অনেক কৃতজ্ঞ থাকবো।”
“এভাবে বলছো কেন মহুল,এটা তো আমার কাজ।অসুস্থ মানুষের চিকিৎসা করা।”
“শুধু তাই নয়। আপনি মন থেকেও আমাকে…
যদি পরের জন্ম বলে কিছু থাকে,তাহলে আপনার মতো একজন মানুষকে জীবন সঙ্গী হিসেবে চাইবো।”
ডাক্তার সেন নিরুত্তর থাকেন। রুগীর সাথে মনের ব্যক্তিগত যোগাযোগ নিষিদ্ধ তার প্রফেসনে। তার পেশা চিকিৎসা করা। রুগী যেই হোক, সবাই সমান তার কাছে।কাউকে স্পেশাল ট্রিটমেন্ট দেওয়া সম্ভব নয় তার পক্ষে। এই মেয়েটার ভুল চিকিৎসা হয়েছে।কোথাও গিয়ে এটা তার খুব খারাপ লেগেছে।না চাইতেও তিনি নিজেকে দায়ী করেছেন। ওর মানসিক অবস্থার একটু উন্নতির জন্যই ওর সাথে বেশ কিছুটা করে সময় কাটিয়েছেন তিনি। এটা তার চিকিৎসার ই একটা অঙ্গ। অনেক সময় ক্যানসার পেশেন্ট দের মনের জোর টা একটা বড়ো ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়ায়। মন যুদ্ধ করতে না পারলে শরীর ও হাল ছেড়ে দেবে।কিন্তু এখন কি উত্তর দেবেন তিনি।
একটু হাসার চেষ্টা করে,ডাক্তার সেন বললেন,”তুমি মরে যাওয়ার কথা ভাবছো কেন! তুমি ঠিক সুস্থ হয়ে উঠবে।দেখো।”
এটা একটা অঘোষিত মিথ্যে সেটা সবাই জানে। কিন্তু ডাক্তার হিসেবে তাকে বলতেই হবে।
মহুল হাসলো। ডাক্তার বাবু আমি আপনাকে ভালোবাসি এটা সরাসরি বলতে সে পারবেনা। ইচ্ছে থাকলেও। অন্তত আজকের কথাটুকু বলে সে অনেকটা হালকা অনুভব করল.. আবেশে চোখ বন্ধ হয়ে এলো ওর।
…
ভোর রাতে আবার সেই স্বপ্নটা দেখল মহুল।ডাক্তার সেনের সামনে সে নিজেকে নিবেদন করছে।ডাক্তার সেন জবাবে বলছেন,”তোমার মতো কাউকে নিজের জীবনসঙ্গী হিসেবে পাওয়া যেকোনো মানুষের খুব ভাগ্যের।”
তারপর ধীরেধীরে তার কপালের কাছে ঠোঁট দুটো নিয়ে এগিয়ে আসছেন…এগিয়ে আসছেন….এগিয়ে..
ঝড় টা থেমে গেলো। ভোর চারটের দিকে। পৃথিবীর সমস্ত ক্লান্তি,পাওয়া না পাওয়া পিছনে রেখে মহুল পাড়ি দিল অনন্তের পথে.. এক নিরবচ্ছিন্ন ঘুমের দেশে।
খবর পাওয়া মাত্রই ডাক্তার সেন ছুটে এলেন। স্বভাব মতোই পালস চেক করে দেখলেন…উঁহু হৃৎপিন্ড ইস্তফা দিয়ে দিয়েছে অনেকক্ষণ। মৃত্যু তার কাছে নতুন কিছু নয়। মৃত্যু তিনি অনেক দেখেছেন।কিন্তু এই রোগীটির দিকে তাকিয়ে একটা অদ্ভুত ব্যাপার লক্ষ্য করলেন। দেখলেন এর মুখে যন্ত্রণার লেশমাত্র নেই,বরং একটা প্রাপ্তির হাসি আছে। যেন সে যাকিছু চেয়েছে সবটাই পেয়েছে যাওয়ার আগে। তার আর কোনো আক্ষেপ নেই।
ডাক্তার সেন একবার ওয়ার্ডের চারিদিকে চেয়ে দেখলেন। তার কোথাও একটা কিছু ভারী ঠেকলো। বুকের ভেতরেই বোধহয়। মৃত্যুপথযাত্রীর নিষ্পাপ মুখটির দিকে চেয়ে বড্ড মায়া অনুভব করলেন,কি একটা মনে হতেই ঠোঁট দুটো তার কপালের দিকে এগিয়ে নিয়ে গেলেন,কিন্তু স্পর্শ করতে পারলেন না। থেমে গেলেন। ভিতর থেকে কে একটা বলে উঠল,এটা তোমার প্রফেশন। জড়িয়ে ফেলো না নিজেকে।