Chotoder Bangla Kobita (ছোটদের কবিতা) Chotoder Kobita

sudiproy877
16 Min Read

Chotoder Bangla Kobita

Chotoder Bangla Kobita শিশুমন মানেই নতুন নতুন শেখার প্রতি তুমুল আগ্রহ । আর তাই আমরা নিয়ে এসেছি বাংলায় ছোটদের জন্য বেশ কিছু কবিতা । বাংলার সেরা সব কবিদের লেখা এই কবিতাগুলো প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে আমাদের কাছে জনপ্রিয় ।
তো, চলুন শুরু করা যাক….

 Chotoder Kobita

Loading...

আম পাতা জোড়া জোড়া
মারব চাবুক চলবে ঘোড়া ।
ওরে বুবু সরে দাঁড়া
আসছে আমার পাগলা ঘোড়া
পাগলা ঘোড়া ক্ষেপেছে
চাবুক ছুড়ে মেরেছে ।

    অবাক কান্ড 
          – সুকুমার রায়

শুন্‌ছ দাদা! ঐ যে হোথায় বদ্যি বুড়ো থাকে, 
সে নাকি রোজ খাবার সময় হাত দিয়ে ভাত মাখে? 
শুন্‌ছি নাকি খিদেও পায় সারাদিন না খেলে? 
চক্ষু নাকি আপনি বোজে ঘুমটি তেমন পেলে? 
চল্‌তে গেলে ঠ্যাং নাকি তার ভূয়েঁর পরে ঠেকে? 
কান দিয়ে সব শোনে নাকি? চোখ দিয়ে সব দেখে? 
শোয় নাকি সে মুণ্ডটাকে শিয়র পানে দিয়ে? 
হয় না কি হয় সত্যি মিথ্যা চল্‌ না দেখি গিয়ে!

Chotoder Bangla Kobita Abritti

Chotoder Bangla Kobita (ছোটদের কবিতা) Chotoder Kobita
Loading...



        আবোল – তাবোল

                  – সুকুমার রায়
আয়রে ভোলা খেয়াল‐খোলা 
স্বপনদোলা নাচিয়ে আয়, 
আয়রে পাগল আবোল তাবোল 
মত্ত মাদল বাজিয়ে আয়। 
আয় যেখানে ক্ষ্যাপার গানে 
নাইকো মানে নাইকো সুর, 
আয়রে যেথায় উধাও হাওয়ায় 
মন ভেসে যায় কোন সুদূর।… 
আয় ক্ষ্যাপা‐মন ঘুচিয়ে বাঁধন 
জাগিয়ে নাচন তাধিন্ ধিন্, 
আয় বেয়াড়া সৃষ্টিছাড়া 
নিয়মহারা হিসাবহীন। 
আজগুবি চাল বেঠিক বেতাল 
মাতবি মাতাল রঙ্গেতে— 
আয়রে তবে ভুলের ভবে 
অসম্ভবের ছন্দেতে॥

Chotoder Bangla Kobita (ছোটদের কবিতা) Chotoder Kobita

         আড়ি 

            – সুকুমার রায়




কিসে কিসে ভাব নেই? ভক্ষক ও ভক্ষ্যে— 
বাঘে ছাগে মিল হলে আর নেই রক্ষে। 
শেয়ালের সাড়া পেলে কুকুরেরা তৈরি, 
সাপে আর নেউলে ত চিরকাল বৈরী! 
আদা আর কাঁচকলা মেলে কোনোদিন্ সে? 
কোকিলের ডাক শুনে কাক জ্বলে হিংসেয়। 
তেলে দেওয়া বেগুনের ঝগড়াটা দেখনি? 
ছ্যাঁক্ ছ্যাঁক্ রাগ যেন খেতে আসে এখনি। 
তার চেয়ে বেশি আড়ি পারি আমি কহিতে— 
তোমাদের কারো কারো কেতাবের সহিতে।

Chotoder Bangla Kobita Rabindranath Thakur



          তালগাছ 

               – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর




তালগাছএক পায়ে দাঁড়িয়ে 
সব গাছ ছাড়িয়ে 
উঁকি মারে আকাশে। 
মনে সাধ,কালো মেঘ ফুঁড়ে যায় 
একেবারে উড়ে যায়; 
কোথা পাবে পাখা সে? 
তাই তো সেঠিক তার মাথাতে 
গোল গোল পাতাতে 
ইচ্ছাটি মেলে তার,– 
মনে মনে ভাবে, বুঝি ডানা এই, 
উড়ে যেতে মানা নেই 
বাসাখানি ফেলে তার। 
সারাদিন ঝরঝর থত্থর 
কাঁপে পাতা-পত্তর, 
ওড়ে যেন ভাবে ও, 
মনে মনে আকাশেতে বেড়িয়ে 
তারাদের এড়িয়ে 
যেন কোথা যাবে ও। 
তার পরে হাওয়া যেই নেমে যায়, 
পাতা-কাঁপা থেমে যায়, 
ফেরে তার মনটি 
যেই ভাবে, মা যে হয় মাটি তার 
ভালো লাগে আরবার 
পৃথিবীর কোণটি।
Chotoder Bangla Kobita (ছোটদের কবিতা) Chotoder Kobita



     ওরে নবীন ওরে আমার কাঁচা

                 – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর


ওরে  নবীন, ওরে আমার কাঁচা, 
ওরে সবুজ, ওরে অবুঝ, 
আধমরাদের ঘা মেরে তুই বাঁচা। 
রক্ত আলোর মদে মাতাল ভোরে 
আজকে যে যা বলে বলুক তোরে, 
সকল তর্ক হেলায় তুচ্ছ ক’রে 
পুচ্ছটি তোর উচ্চে তুলে নাচা। 
আয় দুরন্ত, আয় রে আমার কাঁচা। 
খাঁচাখানা দুলছে মৃদু হাওয়ায়; 
আর তো কিছুই নড়ে না রে 
ওদের ঘরে, ওদের ঘরের দাওয়ায়। 
ওই যে প্রবীণ, ওই যে পরম পাকা, 
চক্ষুকর্ণ দুইটি ডানায় ঢাকা, 
ঝিমায় যেন চিত্রপটে আঁকা 
অন্ধকারে বন্ধ করা খাঁচায়। 
আয় জীবন্ত, আয় রে আমার কাঁচা। 
বাহিরপানে তাকায় না যে কেউ, 
দেখে না যে বাণ ডেকেছে 
জোয়ার-জলে উঠছে প্রবল ঢেউ। 
চলতে ওরা চায় না মাটির ছেলে 
মাটির ‘পরে চরণ ফেলে ফেলে, 
আছে অচল আসনখানা মেলে 
যে যার আপন উচ্চ বাঁশের মাচায়, 
আয় অশান্ত, আয় রে আমার কাঁচা। 
তোরে হেথায় করবে সবাই মানা। 
হঠাৎ আলো দেখবে যখন 
ভাববে এ কী বিষম কাণ্ডখানা। 
সংঘাতে তোর উঠবে ওরা রেগে, 
শয়ন ছেড়ে আসবে ছুটে বেগে, 
সেই সুযোগে ঘুমের থেকে জেগে 
লাগবে লড়াই মিথ্যা এবং সাঁচায়। 
আয় প্রচণ্ড, আয় রে আমার কাঁচা। 
শিকল-দেবীর ওই যে পূজাবেদী 
চিরকাল কি রইবে খাড়া। 
পাগলামি তুই আয় রে দুয়ার ভেদি। 
ঝড়ের মাতন, বিজয়-কেতন নেড়ে 
অট্টহাস্যে আকাশখানা ফেড়ে, 
ভোলানাথের ঝোলাঝুলি ঝেড়ে 
ভুলগুলো সব আন্‌ রে বাছা-বাছা। 
আয় প্রমত্ত, আয় রে আমার কাঁচা। 
আন্‌ রে টেনে বাঁধা-পথের শেষে। 
বিবাগী কর্‌ অবাধপানে, 
পথ কেটে যাই অজানাদের দেশে। 
আপদ আছে, জানি অঘাত আছে, 
তাই জেনে তো বক্ষে পরান নাচে, 
ঘুচিয়ে দে ভাই পুঁথি-পোড়োর কাছে 
পথে চলার বিধিবিধান যাচা। 
আয় প্রমুক্ত, আয় রে আমার কাঁচা। 
চিরযুবা তুই যে চিরজীবী, 
জীর্ণ জরা ঝরিয়ে দিয়ে 
প্রাণ অফুরান ছড়িয়ে দেদার দিবি। 
সবুজ নেশায় ভোর করেছি ধরা, 
ঝড়ের মেঘে তোরি তড়িৎ ভরা, 
বসন্তেরে পরাস আকুল-করা 
আপন গলার বকুল-মাল্যগাছা, 
আয় রে অমর, আয় রে আমার কাঁচা।
 
আরো পড়ুন, হাট কবিতা
 
 
        আমাদের ছোট নদী
                – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর




আমাদের ছোটো নদী চলে বাঁকে বাঁকে 
বৈশাখ মাসে তার হাঁটু জল থাকে। 
পার হয়ে যায় গোরু, পার হয় গাড়ি, 
দুই ধার উঁচু তার, ঢালু তার পাড়ি। 
চিক্ চিক্ করে বালি, কোথা নাই কাদা, 
একধারে কাশবন ফুলে ফুলে সাদা। 
কিচিমিচি করে সেথা শালিকের ঝাঁক, 
রাতে ওঠে থেকে থেকে শেয়ালের হাঁক। 
আর-পারে আমবন তালবন চলে, 
গাঁয়ের বামুন পাড়া তারি ছায়াতলে। 
তীরে তীরে ছেলে মেয়ে নাইবার কালে 
গামছায় জল ভরি গায়ে তারা ঢালে। 
সকালে বিকালে কভু নাওয়া হলে পরে 
আঁচল ছাঁকিয়া তারা ছোটো মাছ ধরে। 
বালি দিয়ে মাজে থালা, ঘটিগুলি মাজে, 
বধূরা কাপড় কেচে যায় গৃহকাজে। 
আষাঢ়ে বাদল নামে, নদী ভর ভর 
মাতিয়া ছুটিয়া চলে ধারা খরতর। 
মহাবেগে কলকল কোলাহল ওঠে, 
ঘোলা জলে পাকগুলি ঘুরে ঘুরে ছোটে। 
দুই কূলে বনে বনে পড়ে যায় সাড়া, 
বরষার উৎসবে জেগে ওঠে পাড়া।।





      কাঠবিড়ালি

              – কাজী নজরুল ইসলাম
কাঠবেড়ালি! কাঠবেড়ালি! পেয়ারা তুমি খাও? 
গুড়-মুড়ি খাও? দুধ-ভাত খাও? বাতাবি নেবু? লাউ? 
বেড়াল-বাচ্চা? কুকুর-ছানা? তাও?- 
ডাইনি তুমি হোঁৎকা পেটুক, 
খাও একা পাও যেথায় যেটুক! 
বাতাবি-নেবু সকল্গুলো 
একলা খেলে ডুবিয়ে নুলো! 
তবে যে ভারি ল্যাজ উঁচিয়ে পুটুস পাটুস চাও? 
ছোঁচা তুমি! তোমার সঙ্গে আড়ি আমার! যাও! 
কাঠবেড়ালি! বাঁদরীমুখী! মারবো ছুঁড়ে কিল? 
দেখনি তবে? রাঙাদা’কে ডাকবো? দেবে ঢিল! 
পেয়ারা দেবে? যা তুই ওঁচা! 
তাইতো তার নাকটি বোঁচা! 
হুতমো-চোখী! গাপুস গুপুস! 
একলাই খাও হাপুস হুপুস! 
পেটে তোমার পিলে হবে! কুড়ি-কুষ্টি মুখে! 
হেই ভগবান! একটা পোকা যাস পেটে ওর ঢুকে! 
ইস। খেয়োনা মস্তপানা ঐ সে পাকাটাও! 
আমিও খবই পেয়ারা খাই যে! একটি আমায় দাও! 
কাঠবেড়ালি! তুমি আমার ছোড়দি’ হবে? বৌদি হবে? হুঁ, 
রাঙা দিদি? তবে একটা পেয়ারা দাও না! উঁঃ! 
এ রাম! তুমি ন্যাংটা পুঁটো? 
ফ্রকটা নেবে? জামা দু’টো? 
আর খেয়ো না পেয়ারা তবে, 
বাতাবি নেবুও ছাড়ুতে হবে! 
দাঁত দেখিয়ে দিচ্ছ যে ছুট? অ-মা দেখে যাও!- 
কাঠবেড়ালি! তুমি মর! তুমি কচু খাও!
আরো পড়ুন, Bangla Choto Kobita



       আমি হবো সকাল বেলার পাখি

                            – কাজী নজরুল ইসলাম
“আমি হব সকাল বেলার পাখি 
সবার আগে কুসুম বাগে 
উঠব আমি ডাকি। 
“সুয্যি মামা জাগার আগে 
উঠব আমি জেগে, 
‘হয়নি সকাল, ঘুমোও এখন’, 
মা বলবেন রেগে। 
বলব আমি- ‘আলসে মেয়ে 
ঘুমিয়ে তুমি থাক, 
হয়নি সকাল, তাই বলে কি 
সকাল হবে নাক’? 
আমরা যদি না জাগি মা 
কেমনে সকাল হবে ? 
তোমার ছেলে উঠবে মা গো 
রাত পোহাবে তবে।

 

Chotoder Bangla Kobita (ছোটদের কবিতা) Chotoder Kobita



      পেঁচা আর পেঁচানি

                 – কাজী নজরুল ইসলাম
প্যাঁচা কয় প্যাঁচানী, 
খাসা তোর চ্যাঁচানি 
শুনে শুনে আন্‌মন 
নাচে মোর প্রাণমন! 
মাজা–গলা চাঁচা–সুর 
আহলাদে ভরপুর! 
গলা–চেরা ধমকে 
গাছ পালা চমকে, 
সুরে সুরে কত প্যাঁচ 
গিট্‌কিরি ক্যাঁচ্ ক্যাঁচ্! 
যত ভয় যত দুখ 
দুরু দুরু ধুক্ ধুক্, 
তোর গানে পেঁচি রে 
সব ভুলে গেছি রে, 
চাঁদমুখে মিঠে গান 
শুনে ঝরে দু’নয়ান৷
Chotoder Bangla Kobita (ছোটদের কবিতা) Chotoder Kobita



    লিচু চোর 

     – কাজী নজরুল ইসলাম




বাবুদের তাল-পুকুরে 
হাবুদের ডাল-কুকুরে 
সে কি বাস করলে তাড়া, 
বলি থাম একটু দাড়া। 
পুকুরের ঐ কাছে না 
লিচুর এক গাছ আছে না 
হোথা না আস্তে গিয়ে 
য়্যাব্বড় কাস্তে নিয়ে 
গাছে গো যেই চড়েছি 
ছোট এক ডাল ধরেছি, 
ও বাবা মড়াত করে 
পড়েছি সরাত জোরে। 
পড়বি পড় মালীর ঘাড়েই, 
সে ছিল গাছের আড়েই। 
ব্যাটা ভাই বড় নচ্ছার, 
ধুমাধুম গোটা দুচ্চার 
দিলে খুব কিল ও ঘুষি 
একদম জোরসে ঠুসি। 
আমিও বাগিয়ে থাপড় 
দে হাওয়া চাপিয়ে কাপড় 
লাফিয়ে ডিঙনু দেয়াল, 
দেখি এক ভিটরে শেয়াল! 
ও বাবা শেয়াল কোথা 
ভেলোটা দাড়িয়ে হোথা 
দেখে যেই আঁতকে ওঠা 
কুকুরও জাড়লে ছোটা! 
আমি কই কম্ম কাবার 
কুকুরেই করবে সাবাড়! 
‘বাবা গো মা গো’ বলে 
পাঁচিলের ফোঁকল গলে 
ঢুকি গিয়ে বোসদের ঘরে, 
যেন প্রাণ আসলো ধড়ে! 
যাব ফের? কান মলি ভাই, 
চুরিতে আর যদি যাই! 
তবে মোর নামই মিছা! 
কুকুরের চামড়া খিঁচা 
সেকি ভাই যায় রে ভুলা- 
মালীর ঐ পিটুনিগুলা! 
কি বলিস? ফের হপ্তা! 
তৌবা-নাক খপ্তা!




    কাজলা দিদি
           – যতীন্দ্রমোহন বাগচী


বাঁশ বাগানের মাথার উপর চাঁদ উঠেছে ওই,
মাগো আমার শোলক-বলা কাজলা দিদি কই?
পুকুর ধারে লেবুর তলে থোকায় থোকায় জোনাক জ্বলে
ফুলের গন্ধে ঘুম আসে না একলা জেগে রই-
মাগো আমার কোলের কাছে কাজলা দিদি কই?
সেদিন হতে কেন মা আর দিদিরে না ডাকো;-
দিদির কথায় আচঁল দিয়ে মুখটি কেন ঢাকো?
খাবার খেতে আসি যখন, দিদি বলে ডাকি তখন,
ওঘর থেকে কেন মা আর দিদি আসে নাকো?
আমি ডাকি তুমি কেন চুপটি করে থাকো?
বল মা দিদি কোথায় গেছে, আসবে আবার কবে?
কাল যে আমার নতুন ঘরে পুতুল-বিয়ে হবে!
দিদির মত ফাঁকি দিয়ে, আমিও যদি লুকাই গিয়ে
তুমি তখন একলা ঘরে কেমন করে রবে,
আমিও নাই-দিদিও নাই- কেমন মজা হবে।
ভুঁই চাপাতে ভরে গেছে শিউলি গাছের তল,
মাড়াস্ নে মা পুকুর থেকে আনবি যখন জল।
ডালিম গাছের ফাঁকে ফাঁকে বুলবুলিটি লুকিয়ে থাকে,
উড়িয়ে তুমি দিও না মা, ছিঁড়তে গিয়ে ফল,-
দিদি এসে শুনবে যখন, বলবি কি মা বল!
বাঁশ বাগানের মাথার উপর চাঁদ উঠেছে ওই-
এমন সময় মাগো আমার কাজলা দিদি কই?
লেবুর ধারে পুকুর পাড়ে ঝিঁঝিঁ ডাকে ঝোপে ঝাড়ে’
ফুলের গন্ধে ঘুম আসে না, তাইতে জেগে রই
রাত্রি হলো মাগো আমার কাজলা দিদি কই?






        ও পাখি
             – নীরেন্দ্র নাথ চক্রবর্তী




ও পাখি, তুই কেমন আছিস, ভাল কি?
এই তোমাদের জিজ্ঞাসাটাই মস্ত একটা চালাকি।
শূন্যে যখন মন্ত্রপড়া অস্ত্র হানো,
তখন তোমরা ভালই জানো,
আকাশটাকে-লোপাট-করা দারুণ দুর্বিপাকে
পাখি কেমন থাকে।
কিন্তু তোমরা সত্যি-সত্যি চালাক কি? তাও নও।
নইলে বুঝতে এই ব্যাপারটা বস্তুত দুর্বহ
যেমন আমার, তেমনি তোমার পক্ষে,
নীল জ্বলন্ত অনাদ্যন্ত আকাশকে তার সখ্যে
বাঁধতে যে চায়, সে কি পাখি, সে কি শুধুই পাখি?
খাঁচায় বসে এই কথাটাই ভাবতে থাকি।
অন্যদিকে, তুমিও জানো, সত্যি-অর্থে বাঁচার
বিঘ্ন ঘটায়, তৈরি হয়নি এমন কোনো খাঁচা।
দুই নয়নের অতিরিক্ত একটি যদি নয়ন জ্বালো,
তবেই বুঝবে, এই না-ভালর অন্ধকারেও আছি ভাল।
বুঝবে, সে কোন মন্ত্রে নিজের চিত্তটাকে মুক্ত রাখি।
মৃত্তিকাকে মেঘের সঙ্গে যুক্ত রাখি।
 
 
 
        ইলশে গুড়ি
              – সতেন্দ্রনাথ দত্ত

ইলশে গুঁড়ি! ইলশে গুঁড়ি
ইলিশ মাছের ডিম|
ইলশে গুঁড়ি ইলশে গুঁড়ি
দিনের বেলায় হিম|
কেয়াফুলে ঘুণ লেগেছে,
পড়তে পরাগ মিলিয়ে গেছে,
মেঘের সীমায় রোদ হেসেছে
আলতা-পাটি শিম্|
ইলশে গুঁড়ি হিমের কুঁড়ি,
রোদ্দুরে রিম্ ঝিম্|
হালকা হাওয়ায় মেঘের ছাওয়ায়
ইলশে গুঁড়ির নাচ, –
ইলশে গুঁড়ির নাচন্ দেখে
নাচছে ইলিশ মাছ|
কেউ বা নাচে জলের তলায়
ল্যাজ তুলে কেউ ডিগবাজি খায়,
নদীতে ভাই জাল নিয়ে আয়,
পুকুরে ছিপ গাছ|
উলসে ওঠে মনটা, দেখে
ইলশে গুঁড়ির নাচ|
ইলশে গুঁড়ি পরীর ঘুড়ি
কোথায় চলেছে,
ঝমরো চুলে ইলশে গুঁড়ি
মুক্তো ফলেছে!
ধানেক বনে চিংড়িগুলো
লাফিয়ে ওঠে বাড়িয়ে নুলো;
ব্যাঙ ডাকে ওই গলা ফুলো,
আকাশ গলেছে,
বাঁশের পাতায় ঝিমোয় ঝিঁঝিঁ,
বাদল চলেছে|
মেঘায় মেঘায় সূর্য্যি ডোবে
জড়িয়ে মেঘের জাল,
ঢাকলো মেঘের খুঞ্চে-পোষে
তাল-পাটালীর থাল|
লিখছে যারা তালপাতাতে
খাগের কলম বাগিয়ে হাতে
তাল বড়া দাও তাদের পাতে
টাটকা ভাজা চাল;
পাতার বাঁশী তৈরী করে’
দিও তাদের কাল|
খেজু পাতায় সবুজ টিয়ে
গড়তে পারে কে?
তালের পাতার কানাই ভেঁপু
না হয় তাদের দে|
ইলশে গুঁড়ি – জলের ফাঁকি
ঝরছে কত বলব তা কী?
ভিজতে এল বাবুই পাখী
বাইরে ঘর থেকে; –
পড়তে পাখায় লুকালো জল
ভিজলো নাকো সে|
ইলশে গুঁড়ি! ইলশে গুঁড়ি!
পরীর কানের দুল,
ইলশে গুঁড়ি! ইলশে গুঁড়ি!
ঝরো কদম ফুল|
ইলশে গুঁড়ির খুনসুড়িতে
ঝাড়ছে পাখা – টুনটুনিতে
নেবুফুলের কুঞ্জটিতে
দুলছে দোদুল দুল্;
ইলশে গুঁড়ি মেঘের খেয়াল
ঘুম-বাগানের ফুল|


      


       সাইক্লোন 
             – শামসুর রহমান




চাল উড়ছে, ডাল উড়ছে
উড়ছে গরু, উড়ছে মোষ।
খই উড়ছে, বই উড়ছে
উড়ছে পাঁজি, বিশ্বকোষ।
ময়লা চাদর, ফরসা জামা,
উড়ছে খেতের শর্ষে, যব।
লক্ষ্মীপ্যাঁচা, পক্ষীছানা
ঘুরছে, যেন চরকি সব।
মাছ উড়ছে, গাছ উড়ছে
ঘুর্ণি হাওয়া ঘুরছে জোর।
খাল ফুলছে, পাল ছিঁড়ছে
রুখবে কারা পানির তোড়?
হারান মাঝি, পরান শেখ
বাতাস ফুঁড়ে দিচ্ছে ডাক।
আকাশ ভেঙে কাঁচের গুঁড়ো
উঠল আজান, বাজল শাখ।
চম্পাবতীর কেশ ভাসছে
ভাসছে স্রোতে খড়ের ঘর।
শেয়াল কুকুর কুঁকড়ো শালিক
ডুবল সবই, ডুবলো চর।
 
 
 
 
ছোটদের জন্য লেখা এই কবিতাগুলো (Chotoder Bangla Kobita) আপনার ভালো লাগলে নিজের প্রিয়জনদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না ।
ভালো থাকুন, কবিতায় থাকুন….
Thank you, Visit Again…
 
 

Share This Article