ভয়ংকর ভূতের গল্প (বাংলো বাড়ির রহস্য) Horror Stories In Bengali

sudiproy877
8 Min Read

অরূপ বলল–বেশ এবার তুই বল তো তুই নিজের চোখে কি দেখলি?দাদা বলল– প্রথমে দেখেছে তো তোর বৌদি।সে টয়লেটে যাওয়ার জন্য উঠতে গিয়ে তার নজর পড়ল খোলা জানালা পেরিয়ে আম বাগানের দিকে।সে কি দেখল কে জানে ভয়ে একেবারে গোঁ গোঁ করতে করতে ইশারায় বাগানের দিকে আঙুল তুলল।আমি প্রথমটাই ধমক দিলেও কৌতুহল সামলাতে না পেরে মশারিটা একটু সরিয়ে তাকালাম।

Bhuter Golpo Story

অরূপ বলল–কি দেখলি?

ফটফটে চাঁদের আলোয় দেখলাম বেশ কয়েকটা ভূত পেত্নি গাছের মগডালে বসে তালগাছের মতো লম্বা পা দুলিয়ে দোল খাচ্ছে।তাদের মুখগুলো দেখার আগেই আমি বাপরে বলেই তোর বৌদিকে জড়িয়ে ধরে দুজনেই মশারি শুদ্ধ নীচে পড়ে গেলাম।রীনা খিলখিল করে হেসে বলল–আচ্ছা দাদা পেত্নিরা কি পরেছিল?শাড়ি না শালোয়ার কামিজ?কই এখন তো তেনাদের কাউকে দেখতে পাচ্ছি না?আপনারা ওদের দেখে ভয় পেলেন নাকি ওরা মানুষের ভয়ে গা ঢাকা দিল?দাদা বলল-তুমি আমার সংগে এত সিরিয়াস ব্যাপার নিয়ে কি রসিকতা করছ?ওইরকম দৃশ্য দেখলে তুমিও ভিরমি খেয়ে অজ্ঞান হয়ে যেতে।আমরা আজকেই চা খেয়ে ফিরে যাব।এখানে এক রাত থাকলে স্রেফ মরে যাব।

রীনা বলল–সরি দাদা,কিন্তু প্লিজ তোমরা চলে যেও না।অরূপ বলল–কাল এসে আজ চলে যাবি?ঠিক আছে যে দুদিন থাকবি না হয় আমাদের বেডরুমে থাকবি।ওখানে জানালার বাইরে বাগান নেই।–না সম্ভব না।তোদের জেনে বুঝে আমি ভূতের খপ্পরে কিছুতেই পড়তে দেব না।রীনা বলল–ও দিদিভাই থাকো নাগো।দুপুরে তোমাদের টাটকা ইলিশ ভাপা,ইলিশের মাথা দিয়ে ছ্যাঁচড়া,গলদার মালাইকারি খাওয়ানোর কথা।রাতে মাটন বিরিয়ানি করব।– এত ভালোমন্দ খাবার এখন গলা দিয়ে নামবে না। তোরা আলাদা বাসা করলে আবার আসব রে।

অনেক অনুরোধ উপরোধেও ওদের আটকানো গেল না।অরূপ বলল–হ্যাঁ গো তাহলে নতুন বাসার খোঁজ করব?রীনা বলল–মাথা খারাপ?এত সুন্দর খোলামেলা বাংলো ছেড়ে কোথায় যাব?তাছাড়া আমার নিজে চোখে ভূত পেত্নি দেখার খুব ইচ্ছে আছে। জানো আমি অনেক ভৌতিক গল্প পড়েছি। অন্যদের মুখে শুনেছিও।এই তো তোমার দাদা বৌদির ভূত দেখার অভিজ্ঞতাও জানলাম।চলো না আজ আমরা এই ঘরে রাত কাটায়।ওদের কথাটা কতোটা সত্যি একবার নিজে চোখে দেখব।অরূপ বলল–ওসব বায়না ছাড়ো। জানালা দিয়ে ভূত দেখা না গেলেও তারা ঘর অব্দি আসবে না।কিন্তু সাপ খোপ আসতে পারে।ওরা জানালাটা না খুললে এই বিপত্তিটা ঘটত না।

Bhuter Golpo Chotoder

Loading...

কয়েকদিন পর একদিন অফিস থেকে অরূপ ফোন করে বলল–শোনো আমার বাড়ি ফিরতে রাত হবে।আমি সারে আটটা নাগাদ বামাচরণকে পাঠিয়ে দেব।আমি না ফেরা পর্যন্ত ও থাকবে।রীনা বলল–কোনো দরকার ছিলনা।ঠিক আছে পাঠাবে যখন আসুক।

আরো পড়ুন, শ্রেষ্ঠ ভূতের গল্প

রীনা রান্নাাবান্না সেরে বারান্দায় চেয়ারে বসে মোবাইল নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করছিল।ঠিক আটটা কুড়ি নাগাদ একজন বয়স্ক স্বামী স্ত্রী এলে রীনা বলল–বামাচরণের আসার কথা ছিল।আপনারা কি ওর বাবা মা?আমার একা থাকতে অসুবিধা হত না।শুধু শুধু আপনাদের কষ্ট দেওয়া।মহিলার সিঁথিতে ডগডগে সিঁদুর, কপালে সিঁদুরের বড় টিপ। পরণে একটা তাঁতের শাড়ি।বয়স্ক মানুষটার পরণে পরিস্কার ধুতি আর ধূসর রঙের ফতুয়া।ওরা বলল–না মা কষ্ট কি,বেড়াতে বেড়াতে চলে এলাম।রীনা বলল–বেশ বেশ,আসুন ভিতরে এসে বসুন।মহিলা ভিতরে এসে শাড়ির কোঁচড় থেকে বারো চোদ্দটা পাকা আম নামিয়ে রেখে বলল–বৌমা আসার পথে তোমাদের পিছনের বাগান থেকে আম কটা কুড়িয়ে আনলাম।একদম গাছ পাকা আম।খেয়ে দেখবে খুব মিষ্টি।

বাংলা ভুতের গল্প

রীনা বলল– আপনাদের বাড়ি কি কাছাকাছি কোথাও?–খুব কাছেও নয়।এই মিনিট কুড়ির হাঁটা পথ।তুমি বেশ লক্ষীমন্ত মেয়ে।কি সুন্দর পরিপাটি করে সংসারটা গুছিয়ে রেখেছো। আচ্ছা মা এখানে থাকতে তোমার কেমন লাগছে?আসলে বহুবছর পর এই বাংলোতে প্রথম তোমরা এলে।এতদিন বাসাটা প্রায় রংচটা পোড়ো বাড়ির মতোই ছিল।বছর দুয়েক আগে তোমাদের মতো দুজন স্বামী স্ত্রী আর একটা ছোটো বাচ্চা নিয়ে এখানে এসেছিল।দিন দশেক পর ওদের বাবা মা বেড়াতে এসেছিল।তারপর কি হল কে জানে।তারা এক মাসের বেশি থাকতে পারে নি।অন্য জায়গায় বাসা ভাড়া করে চলে গিয়েছিল।তোমরা আসার আগে বাসাটা সারিয়ে সুরিয়ে রঙ করা হয়েছে। রীনা বলল– তাই নাকি?কেন বলুন তো?এখানে ভূতটুত আছে নাকি?আসলে ভূতেরা সবাই রূপকথার মতো গল্পেই থাকে।বাস্তবে থাকে না। নাহলে আমারই তো নিজে চোখে ভূত দেখার খুব ইচ্ছা ছিল। আমার কিন্তু এখানে থাকতে বেশ ভালোই লাগছে। সবে এসেছি তাই এখনও কোথাও বেরোনো হয় নি।আপনারা বসুন ,আমি একটু চা মিষ্টি আনি।মহিলা হাঁ হাঁ করে বলল–তুমি ব্যস্ত হয়ো না মা।আমরা দুজনেই সুগারের রুগি।আর চা ওই একবার সকালে খাই।ওই মনে হয় তোমার স্বামী এল। মোটর সাইকেলের আওয়াজ আসছে।এবার আমরা উঠি মা।রীনা বলল–আবার আসবেন কাকু কাকিমা।

অরূপ এসে বলল–বামাচরণ আসেনি?–না ও আসতে মনে হয় লজ্জা পেয়েছে।ওর বাবা মাকে পাঠিয়েছিল।ওরা এইমাত্র চলে গেল।এই দ্যাখো ওরা পিছনের বাগান কত পাকা আম কুড়িয়ে এনেছে।অরূপ বলল– বাহ্ বেশ বড় সাইজের হিমসাগর আম তো।আজকেই কটা কাটো দেখি।

পরদিন সকালে বামাচরণ খাদি পড়ে দেখা করে বলল–স্যার কাল রাত আটটার সময় আমার বাবা মারা গেছে।আমি বাড়ি হয়ে এখানে আসব মনে করে বাড়ি ঢুকতেই দেখি আশেপাশের লোকজন আমার বাড়িতে আমার অপেক্ষায় বসে আছে।বাবা মাঠে একটু হাঁটাহাটি করে সন্ধ্যা সারে সাতটা পর্যন্ত বসেছিল।ওই সময় বুকে হঠাৎ যন্ত্রণা হয়।লোকজন কোনোরকমে বাড়ি নিয়ে এসে ডাক্তার বাবুকে খবর দেয়।উনি আসার আগেই বাবা মারা যায়।আমি অনেকবার আপনাকে ফোন করে পাইনি।তাই সকালেই খবরটা দিতে এলাম।

Bengali Horror Stories

রীনা বলল–এক মিনিট বামাচরণ।কাল রাত আটটা কুড়ি নাগাদ তোমার বাবা মা তো এখানে অনেকটা সময় ছিলেন।বামাচরণ বলল–কি বলছেন ম্যাডাম?আমার মা তো ছ বছর আগে মারা গেছে।রীনা বলল–ওনার পরণে একটা পরিস্কার ধুতি আর ছাই রঙের একটা ফতুয়া ছিল।ওনার স্ত্রীর স্ত্রীর সিঁথিতে ঘন সিঁদুর আর হালকা আকাশি রঙের তাঁতের শাড়ি ছিল।বামাচরণ বিড়বিড় করে বলল–ধুতি আর ছাই রঙের ফতুয়া ছিল?মৃত্যুর সময় ওটাই বাবার পরণে ছিল।অরূপ বলল–বামাচরণ মন খারাপ কোরোনা। সামনে তোমার অনেক কাজ আছে।রীনা হয়তো কি বলতে কি শুনেছে।তুমি বাবার শ্রাদ্ধশান্তি পর্যন্ত অফিসে যেওনা।এক মিনিট দাঁড়াও।এই তিন হাজার টাকা রাখো।অফিস থেকে আরো কিছু টাকা চাঁদা তুলে তোমাকে দেওয়া হবে।

অরূপ ঘরে এসে বলল–আচ্ছা ওরা কি তোমাকে নিজে বলেছিল ওরাই বামাচরণের বাবা মা?–আরে বাবা আমি যখন জিজ্ঞেস করেছিলাম তখন তো অস্বীকারও করে নি।কতক্ষণ বসে থাকল,কত গল্পগুজব করল।তাছাড়া বামাচরণের বাবার পোশাক?–অমন কমন পোশাক এখানকার অনেকেই পরে থাকে।তুমি কি ভয় পাচ্ছ?

রীনা বলল–ভয় পাওয়ার প্রশ্নই নেই।ওরা যদি অশরীরীও হয় তাহলেও বলব ওরা উপকারী অশরীরী।কতগুলো গাছপাকা আম দিয়েছে বলো?আর অশরীরী না হলে ওরা আবার কোনোদিন না কোনোদিন বেড়াতে আসবে।

না ওরা আর কোনোদিন বেড়াতে আসেনি।কিন্তু প্রায় দিনই দশ বারোটা গাছ পাকা আম,কোনোদিন একগোছা লিচু তাদের বাসার দরজার নীচে কে যেন রেখে যায়।অরূপ বলল–অদ্ভুত ব্যাপার তো?এসব নিশ্চয়ই বামাচরণের কাজ।রীনা বলল–আমি হলফ করে বলতে পারি এগুলো বাবাচরণের বাবা মা রেখে যায়।বিশ্বাস না হলে বামাচরণকে জিজ্ঞেস করে দ্যাখো।আসলে ওদের আমাকে খুব পছন্দ হয়েছিল।তাই ওরা এসব উপহার ভালোবেসে আমাকে দিয়ে যায়।আর আমার বিশ্বাস ওরাও দুজনে আমাদের পিছনের আম বাগানেই থাকে।এই আমবাগানটা ওদের বৃদ্ধাশ্রম।বয়স্ক অশরীরী বৃদ্ধ বৃদ্ধারা এখানে অনেক সঙ্গীর সংগে খুব আনন্দে থাকে।তোমার বদলি না হওয়া পর্যন্ত আমি এখানে থেকে কোত্থাও যাবো না।আমি বুঝে গেছি ওরা কেউ ভয়ঙ্কর নয়।


এই গল্পটির অন্যান্য পার্ট পড়তে নিচের কমেন্ট সেকশনে কমেন্ট করুন, দ্রুত আপডেট দেওয়া হবে। 

আরো পড়ুন, সত্যি ভূতের গল্প

Share This Article