সেরা ভূতের গল্প (Bhuter Golpo Story) বাগানবাড়ির ভূত | Bengali Horror Story

Bongconnection Original Published
18 Min Read

 সেরা ভূতের গল্প (Bhuter Golpo Story) বাগানবাড়ির ভূত | Bengali Horror
Story

সেরা ভূতের গল্প (Bhuter Golpo Story) বাগানবাড়ির ভূত | Bengali Horror Story
Loading...

সেরা ভূতের গল্প

গল্প লেখার জন্য যেই সময় প্রথম কলম ধরি, সেই সময়ের লেখা এই ছোটো গল্প। আর লেখক
হিসেবে আমার লেখা প্রথম ছোটো গল্প। 
                     
       || বাগানবাড়ির ভূত ||


” স্টেশন থেকে ফেলনাঘাট কত নেবেন? ” – কবীর ব্যাগ গুলো নামিয়ে, কিছুক্ষন দম
নিয়ে রিক্সাওয়ালা কে বললো।
রিক্সাওয়ালা  মাথা চুলকে মলিন হলদেটে দাঁত বের করে বলল,
 “বাবু, কুড়ি টাকা ভাড়া। ফেলনাঘাটের যেখানে বলবেন,সেখানেই নামিয়ে দেবো।
গরিব কে পাঁচটা টাকা শুধু বেশি দিলেই হবে। ”
 ক্লান্ত কবীর আর কথা না বাড়িয়ে, ব্যাগ গুলো রিক্সায় তুলে নিয়ে
বললো, 
 ” বেশ! বিধু মিত্তিরের বাগান বাড়ি চলুন। ”  রিক্সাওয়ালা ভ্রু কুঁচকে
বললো,
  ” ওখানে তো কেউ থাকে না বাবু , মানে পাশেই তো বিধুবাবুর বাড়ি কিন্তু
বাগান বাড়িতে তো বহুদিন ফাঁকা। ”
  কবীর এবার বিরক্ত হয়ে বললো,
 ” থাকে না বলেই থাকতে যাচ্ছি দাদা , যাবেন কি ? ” রিক্সাওয়ালা একটু দমে
গিয়ে বলল,
“বাগানবাড়ির সামনের মোড়ের বটতলা অবধি যাবো স্যার! বাকি মিনিট দেড়েক রাস্তা
আপনার হেঁটে যেতে হবে। ”
কবীর একটা বেসরকারি সওদাগরী অফিসে কাজ করে, কাজের সূত্রে নানা জায়গায় যাতায়াত
লেগেই থাকে। রিক্সায় বসে সিগারেট ধরিয়ে কবীর বললো, 
” শোনো ভাই, রাতে আমার স্ত্রী ফিরতি ট্রেনে এখানে আসবে। তুমি একটু এই অবধি
পৌঁছে দেবে? ”
রিক্সাওয়ালা কিছুক্ষন ভেবে নিয়ে বললো, 
” আজ্ঞে রাতে! এদিকে রাতে খুব একটা রিক্সা থাকে না বাবু। আপনি যখন বলছেন ওনাকে
আমি ওই বটতলা মোড়েই নামিয়ে দেবো, কিন্ত রাতে ভাড়া পাঁচটা টাকা বাড়িয়ে দেবেন
বাবু। ”
কবীর হেসে বললো, 
“আচ্ছা ভাই তাই কোরো, বেশি লোক তো এই স্টেশনে নামে না। সন্ধ্যা সাতটায় ওর ট্রেন
ঢুকবে।  আমার স্ত্রীর নাম তিথি। আমি ওকে  ফোন করে তোমার কথা বলে
রাখছি। ”


বটতলায় নেমে ভাড়া মিটিয়ে দিয়ে, কবীর ব্যাগ কাঁধে নিয়ে এগোতে যাবে, তখন ওই
রিক্সাওয়ালা কবীরকে পিছুডেকে বললো, 
” বাবু আর বলছিলাম কি, ওই বাগানবাড়িতে বহুদিন কেউ নেই, পাঁচলোকে পাঁচরকম কথা
কয়, একটু সাবধানে থাকবেন। ”
    কবীর সিগারেটের ধোঁয়ার রিং বাতাসে ছেড়ে, ঘাড় নেড়ে হাসলো। ও
ভাবছিলো ছোটো মফস্বলের লোকেদের গাঁজাখুঁড়ি গল্পের জন্য বিষয়ের অভাব নেই। বটতলা
থেকে হেঁটে ও আগে বিধুবাবুর বাড়ি পৌঁছে, পরিচিতি করে নিয়ে। বাগান বাড়িটির জন্য
অগ্রিম দিলে, বিধুবাবু বাড়ির চাবি হস্তান্তর করলেন।
বিধুবাবুর পরিচারিকা কবিরকে চা, সামান্য জলখাবার পরিবেশন করার পর, বিধুবাবু
চায়ের কাপ হাতে নিয়ে বললেন,” আপনি কাজ হওয়া অবধি একাই থাকবেন বুঝি? ”
কবীর সময় নিয়ে আরেকটা সিগারেট ধরিয়ে, লম্বাটান দিয়ে বললো, ” আমার স্ত্রী আসছেন
আর  আমাদের পরিবারের সবচেয়ে ছোটো সদস্যও থাকবেন। ” কিছুটা থেমে সামান্য
হেসে কবীর বললো,
 ” আচ্ছা বিধু বাবু এই বাগানবাড়ি নিয়ে কিছু চর্চা শুনলাম, সত্যি নাকি ?”
 বিধুবাবুর চায়ের কাপ টেবিলে রেখে, বিরক্তি সহকারে বললেন,
 “এসবে একদম কান দেবেন না, যতসব শয়তানের দল। হিংসে! বুঝলেন, ব্যাটারা
হিংসে করে আমায়। বিধু মিত্তিরের এত বড় জমি-জায়গা দেখে সবার বুকে ব্যাথা হয়, আর
কি। আপনি পরিবার নিশ্চিন্তে থাকুন । ”

বিখ্যাত লেখকদের ভূতের গল্প

Loading...
    কবীর বাগান বাড়ির দরজা খুললো,তখনও ভরদুপুর বলা চলে। অনেক গাছ
ভেতরে, পায়ে হেঁটে বিশাল বাড়ির চারপাশটা ঘুরছে কবীর। বহুদিন বন্ধ থাকায়, বাড়ি
আর বাগানে অযত্নের ছাপ, স্পষ্ট। আগাছাও ইতি উতি বেশ বেড়েছে। কবীর ঠিক করলো
পশ্চিমের দিকটা দেখে নিয়ে, স্নানে যাবে। হঠাৎ তেঁতুল গাছটার তলায় চোখ পড়তেই ও
চমকে উঠলো, দেখলো একটা রোগা কালো সাত-আট বছরের ছেলে ওর দিকে নিস্পলক ভাবে চেয়ে
রয়েছছে। কবীর একটু অবাক হয়ে ভাবলো, কোথা থেকে বাচ্চাটা বাগান বাড়িতে ঢুকলো, সব
দিক তো বন্ধ ! কবীর কিছু বলতে যাবার আগেই, গাছের এক ডাল থেকে অন্য ডালে বেয়ে
বাচ্চাটা, গাছের ঘন ডালের ভেতরে কোথায় যেন হারিয়ে গেলো। কবীর হেসে ফেললো, ও
বুঝলো ফলের লোভে পাশের গাঁয়ের বাচ্চা বাগান বাড়িতে লুকিয়ে যাতায়াত করে।
স্নান সেরে নিয়ে, স্টেশন থেকে প্যাকেট করা খাবার খেয়ে নিয়ে, কবীর দুপুরে জমিয়ে
ঘুম দিলো।
আরো পড়ুন,

বিধু  মিত্তির সন্ধ্যা পুজো সেরে নিজের টেবিলে বসে চা পানের সময় ফেরার সময়
এক বিলাতি কুকুরের আওয়াজ শুনে জানলা দিয়ে উঁকি দিয়ে দেখলেন, একজন মহিলা কোলে
একটা বিলাতি কুকুর সম্ভবত কবীর বাবুর স্ত্রী হবেন, সাথে কবীর বাবুর বাচ্চা ছেলে
মায়ের পিছু পিছু বাগান বাড়িতে ঢুকল।

রহস্যময় ভূতের গল্প

কবীর কয়েকদিনেই নিজের কাজ প্রায় গুছিয়ে এনেছে। তিথি রান্না-বান্না করে মিমো কে
নিয়ে সারাদিন দোতলায় থাকে। কবীর দুপুরে খাওয়া দাওয়া করে একা বাগানে ঘুরতে যায়।
আজ ওই বাচ্চা ছেলেটা আবার বাগানে এসেছে, কবীরকে দেখেই ও হুটোপুটি করে গাছে উঠে
পালাতে যাচ্ছিলো, কবীর ওকে থামতে বললো,
” দাঁড়া যাস না, আমার কথা না শুনে পালালে কিন্তু ভূতে ধরিয়ে দেবো! “
ছেলেটা পালাতে গিয়েও দাঁড়িয়ে পড়লো, কঙ্কালসার চেহারায় দুপাটি দাঁত বের করে হেসে
বলল ,
 ” আমায় ভূতে ধরবে না!”
 ওর কথায় কবীরের বেশ আমোদ হলো, হেসে বললো, 
 ” আচ্ছা থাকো কোথায় থাকিস রে তুই ? এখানে রোজই লুকিয়ে আসিস দেখছি , কি
নাম তোর? ”
 ছেলেটা নিজের সরু ঢ্যাঙ্গা আঙুলের ইশারা করে বললো,
 ” উ পানে, নদীর পাশে বড় শিমুল গাছের পিলে। আমার নাম কাত্তিক, কিন্তু মা
কুতু বলে ডাকে ।  ”
 কবীর কিছু বলার আগেই,  এটুকু কথা বলেই কুতু গাছে উঠে হারিয়ে
গেলো।  কবীর মাথা নিচু করে পেছনে ফিরে বাড়ীর দিকে যেতে গিয়ে দেখলো,
বিধুবাবু আসছেন। বিধুবাবু, কবীর আর ওনার স্ত্রীকে চায়ের নিমন্ত্রণ জানাতে
এসেছিলেন, কিন্তু কবীর জানিয়ে দিলো ওঁনার স্ত্রী বিশেষ কোথাও যেতে পছন্দ করেন
না।  নিজের ঘরোয়া কাজকর্ম আর লেখালেখির কাজ নিয়েই ব্যস্ত থাকেন।
আরো পড়ুন,
সন্ধ্যাবেলায় কবীর এক কাপ চা আর ফিশফ্রাই নিয়ে বাইরের বারান্দায় বসে ঘাড় নিচু
করে অফিসের ফাইল দেখছিলো, হঠাৎ ওর মনে হলো একটু তফাৎ অন্ধকারে কেউ দাঁড়িয়ে ওকে
দেখছে। কবীর ফাইল থেকে মুখে তুলতেই দেখলো ওর সামনে কুতু এসে দাঁড়িয়েছে। কবীর
একটু থতমত খেয়ে যাওয়ার পর, নিজেকে সামলে নিয়ে বললো,
” কিরে সন্ধ্যা বেলায় কি চাই রে? যা বাড়ি পালা। “
কুতু নির্বিকার ভাবে একটা গাছের ডাল নিয়ে খেলতে খেলতে বললো, 
” যাবখন, তাড়া নেই । ” কবীরের ফিশফ্রাইয়ের প্লেটের দিকের লোলুপ দৃষ্টিতে জুলজুল
করে তাকিয়ে ছিলো, কবীর হেসে ফিশফ্রাইয়ের প্লেটটা ওর দিকে বাড়িয়ে দিলে, কুতু
মুহূর্তের ভগ্নাংশে একটা ফিশফ্রাই মুখে ঢুকিয়ে , অন্যটা হাতে নিয়ে বাগানের
অন্ধকারে মিশে গেলো। কবীর নিজের হাসি চেপে রাখতে পারলো না। 
 রাতের খাবার খেয়ে কবীর বাগানে পায়চারি করছিলো। সিগারেট ধরিয়ে আয়েশ করে
ধোঁয়া ছাড়তেই হঠাৎ কবীরের পিলে চমকে গেলো। ও দেখলো কুতু বাড়ীর দোতলার বন্ধ থাকা
ঝুলবারান্দায় দাঁড়িয়ে জানলা দিয়ে কিছু দেখে, ইশারা করছে। কবীর ধমক দিলো,
 ” এই ছেলে! এত রাতে ওখানে কি করছিস। নেমে আয় বলছি। ” এতরাতে ওকে ওখানে
দেখে কবীরের চোখে মুখে একরাশ রাগ আর বিরক্তি। 
কুতু অদ্ভুত দ্রুততায় দেওয়ালের পাইপ বেয়ে নেমে দাঁড়িয়ে বললো ,
” রাগ করছো কেন, মিমোর সাথে ভাব জমাচ্ছিলাম। “
কবীর চোখ বড় করে ভাবলো, “কি দস্যি ছেলেরে মধ্যে মিমোর নামও জেনে ফেলেছে। ”
পরমুহূর্তেই ভাবলো,
 ” এই দস্যি ছেলেতো সারাক্ষন নাটাইচক্করের মতো এই বাড়ির এখানে সেখানে ঘুরে
বেড়ায়। তখনি তিথিকে মিমোর নাম ধরে ডাকাডাকি করতে শুনেছে মনেহয়। ” 
  কুতুর সাথে মিমোর ভাব জমে যাওয়ায়, ওরা দুপুরবেলা দুজনে নিয়মিত বল খেলা
শুরু করে।  তিথি একটু চোখ বুজলেই, কুতু ইশারা করে মিমোকে ডেকে দুজনে
সারাদুপুর খেলতে থাকে ; তিথি সারাদিন ঘুমিয়ে থাকায় টের পায় না। বিধু বাবুর ঘর
থেকে বাগানবাড়ির অর্ধেক টা দেখা যায়। ওনার দুপুরে ঘুম আসে না, দোতলার বারান্দায়
বসে গল্পের বই পড়েন। তিনি রোজ দুপুরেই পড়ার ফাঁকে দেখেন কবীর বাবুর ছেলে বল
ছুড়ে মারছে, উল্টো দিক থেকে ওর দিকের আবার বল ভেসে আসছে।  ওদিকে থেকে কে
ওর দিকে বল ছুঁড়ছে, বুঝতে পারতেন না তবে উনি জানতেন যে কবীর বাবুর স্ত্রীই ছাড়া
আর কেই বা হবে। 

রূপকথার ভুতের গল্প

   সেদিন কবীর সন্ধ্যায় অফিস থেকে ফিরে উঠোনে দাঁড়াতেই দেখলো অন্ধকার
থেকে কুতু বেরিয়ে এসে ওর সামনে দাঁড়িয়েছে। কবীর বারান্দায় রাখা চেয়ারটায় হেলান
দিয়ে একটা সিগারেট ধরিয়ে বললো, “কি হয়েছে রে, কুতু !”
  কুতু উঠোনে এদিক ওদিক তাকিয়ে বললো,
  “রোজ আমি আর মিমো বল খেলি, আজ না মিমো বলটা হারিয়ে ফেলেছে। ” কবীর হেসে
আর কিছু বললো না, এখানে ওর কাজ শেষ হয়েছে, ওরা পরশু এই বাগান বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে
যাবে। কবীরের আনমনা ভাবনা শেষ হবার আগেই ও দেখলো কুতু ওখানে আর নেই। ওর উপর বেশ
মায়া জন্মেছে এই কদিনে |
  কবীর, তিথিকে রাতে খাবার সময় পরশু বাগান বাড়ি ছেড়ে হঠাৎ ওর মনে পড়লো,
  ” আচ্ছা মিমো কি রোজ দুপুরে বাগানে চলে যায় ?”
   তিথি কথাটার বিশেষ পাত্তা দিলো না , খুব স্বাভাবিক ভাবে 
   ” যায় হয়তো, আমি তো তখন ঘুমোই।  কেন গো?”
   কুতুর কথা শুনলে তিথি আবার কি ভাববে ভেবে,
 কবীর আর কথা বাড়ালো না। 
পরদিন দুপুরে বাড়ি ফেরার গোছগাছ প্রায় শেষ করে কবীর বাগানে দাঁড়িয়ে ফুলগাছ গুলো
দেখতে দেখতে সিগারেট খাচ্ছিলো, ও খেয়াল করলো কখন কুতু এসে ওর পাশে দাঁড়িয়েছে,
চোখে মুখে এক রাশ
অভিমান, 
” তুমি বাড়ি থাকলে, মিমো বাগানে খেলতে আসে না । “
  কবীর হেসে ফেললো ,
  ” কিন্তু কাল থেকে তো আমরা থাকবো না, তখন কার সাথে খেলবি!”
    কথাটা শুনেই কুতুর মুখ চুপসে গেলো, কবীর সিগারেট টা মাটিতে ফেলে
নেভাতে গিয়ে দেখলো কুতু তেঁতুল গাছে উঠে এডাল ওডাল চড়ে গাছের মধ্যে কোথাও
হারিয়ে গেলো।
সন্ধ্যা নামার পূর্বে কবীর, বিধুবাবুর সাথে দেখা করতে গিয়ে, দোতালার বারান্দায়
বসে চা পাকোড়া খেতে খেতে গল্প করছিলো। কবীরের চলে যাওয়া নিয়ে বিধুবাবুরও বেশ মন
খারাপ, এই কদিন কবীরের র সাহচর্য বিধুবাবুর কাছে বেশ উপভোগ্য ছিলো । কবীর চায়ের
কাপে চুমুক দিয়ে, পাকোড়ার খুব প্রশংসা করলে, বিধু বাবু হাঁক পারলেন,
” মালতি আর কটা পাকোড়া তাড়াতাড়ি দিয়ে যা তো ! ” 
একজন রোগা শীর্নকায় মহিলা এসে পাকোড়ার প্লেট টেবিলে রেখে বাইরের দিকে তাকিয়ে
হঠাৎ চিৎকার পেরে উঠলো, 
” কুতু..ওমা কুতু .. কু…. উউউউ.. তু…. উউউউউ!”

বিশ্বের সেরা ভূতের গল্প

    কবীর হতোভম্ব হয়ে চায়ের কাপ রেখে বাইরের দিকে উঁকি দিয়ে দেখলো
বাগান বাড়ি আর বিধুবাবুর বাড়ীর ছাদদুটো একটা লোহার মই দিয়ে জোড়া, যেই শুরু মই
ধরে কুতু হাঁটছে। কবীর আর বিধুবাবু দৌড়ে নিচে নেমে এসে বাগান বাড়ীর সামনে এসে
দাঁড়ালো, ওদের সাথে আলুথালু বেশে মালতি। মালতির চিৎকার চেঁচামেচি শুনে শুনে
তিথিও বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসেছে।
  দু’বাড়ীর ছাদের গ্রিলের দরজা বহুকাল যাবৎ তালা বন্ধ,আর চাবিও বেপাত্তা।
তাই ছাদে গিয়ে যে কোনো সুরাহা হবে না, তা কবীরকে বলতে গিয়েই বিধুবাবুর চোখ গেলো
কবীর বাবুর ছেলের উপর। বিধুবাবু জোরে চিৎকার  করে উঠলেন,
  ” আপনার ছেলেকে আগে বাঁচান কবীর বাবু। “
  
কবীর আচমকা ভ্রু কুঁচকে অবাক হয়ে বিধু বাবুর দিকে চেয়ে বললো, ” মানে।”
” মানে আবার কি আপনার ছেলেকে বাঁচান। ওই দেখুন.. কিভাবে হাঁটছে ওই সরু মই বেয়ে
হাঁটছে। ” বিধু বাবু চিৎকার করে বলে চলেছেন।
কবীর  কিছুক্ষনের জন্য থমকে গিয়ে বললো, 
” কিন্তু ওখানে তো আমার ছেলে নেই।”
” কি যাতা বলছেন, মালতির ছেলে কুতু আর আপনার ছেলে মিমো তো একই সাথে আগে-পিছে মই
বেয়ে হাঁটছে। চোখের মাথা খেয়েছেন নাকি মশাই।
বিধু বাবু খুব রাগত স্বরে কবীরকে বলে চলেছেন।
কবীর কিছুক্ষন চুপ থেকে, ধরা গলায় বললো, 
” কে বললো মিমো আমার ছেলের নাম! ” 
বিধু বাবুর ধৈর্যের বাঁধ ভাঙলো,
“আরে সারাক্ষনই আপনার স্ত্রী মিমো -মিমো ডাকতে থাকেন। আমি তো রোজই শুনি। ”
কবীর বিধু বাবুকে থামিয়ে বললো,
” মিমো আমাদের কুকুরের নাম, আর আমার ছেলে মাস তিনেক আগে একটা দুর্ঘটনায় মারা
গেছে।”
     বিধু বাবু মাথায় যেন বাজ পড়লো, উনি চোখের সামনে তাহলে কাকে
দেখছেন? এত দিন বাগান বাড়ির উঠোনেই বা কাকে খেলতে দেখতেন ! কবীর আর তিথি একে
অপরের দিকে তাকিয়ে স্বল্প সময়ের জন্য বাকরুদ্ধ হয়ে রইলো।
   মালতি হাউ মাউ করে কেঁদে চলেছে। কবীর কাঁপা গলায় চিৎকার করে
ডাকলো,

   “কুতু যেভাবে পাইপ বেয়ে উপরে উঠেছিস, ওই ভাবে নিচে নেমে আয়।”
   কুতু সরু মই ধরে একটু একটু এগোনোর সময় হেসে বললো, ” না, আজ আমি আর
মিমো এই মইয়ের মাঝে গিয়ে একসাথে নিচে লাফ দেবো। এটাই আজকের খেলা। কাল মিমো চলে
যাচ্ছে তাই ও বললো; এই খেলাটায় খুব মজা হবে, আর এই খেলাটা শেষ করতে পারলে
দুজনে  সারাজীবন একসাথে খেলতে পারবো।  ” 

Srestho vuter golpo

   কবীর বুঝলো হাতে সময় নেই ও পাইপ বেয়ে কোনোপ্রকারে ওই মইয়ে উঠে
পরিশ্রান্ত হয়েও খুব মিষ্টি স্বরে ডাকলো, ” কুতু!” নিজেকে শান্ত করে কবীর
মালতির চেলে কুতুর দিকে তাকিয়ে বললো,
    ” তোকে ডাকছি কার্তিক, তোর বন্ধুর ওই নামও কুতু, মিমো না! ”
    কবীরের চোখে জল জমেছে, ও নিজের মৃত ছেলের কায়াহীন সত্ত্বা দেখতে
না পেলেও, ওর উপস্থিতি অনুভব করে বললো,
    ” আচ্ছা কুতু সোনা , মাম্মাম বলেছে না মিথ্যে কথা বলতে নেই আর
দুস্টুমি করতে নেই। তোমার এত ভালো নাম -কনাদ , তুমি কার্ত্তিক সেটা বলোনি কেন?
আর ওকে কেন বলেছো এই মই থেকে লাফ দিতে? তুমি তো আমাদের লক্ষীছানা, বাবুর কথা
শোনো। কার্ত্তিকের সাথে এমন কোরো না,  ওকে ছেড়ে দাও, নাহলে মাম্মাম খুব
কষ্ট পাবে, খুব কাঁদবে।  আর তোমার বাবুর খুব মন খারাপ করবে,  তুমি
এসো আমার কোলে এসে লক্ষীটি হয়ে বসো। ”
    
তিথির চোখের জল বাঁধ ভাঙলো, দুহাতে মুখ ঢেকে ও বসে অঝোরে কাঁদতে থাকলো। কবীর
নিঃশব্দে কাঁদছে, ও মালতি ছেলে কার্তিক কে ছাড়া কিছু দেখতে পারছে না, কিন্তু ওর
সন্তানের অনুভব করতে পারছে। কবীর আবার বললো, ” কুতু, লক্ষীটি আমার। ওকে ছেড়ে
দাও, আমি আর মাম্মাম তোমায় খুব সবসময় এত্ত ভালোবাসবো। ”
বিধু অবাক হয়ে দেখলো, কবীর বাবুর ছেলে কবীরের কোলে বসে ওর মায়ের দিকে কিছুক্ষন
আনমনা হয়ে তাকিয়ে, প্রায় হাওয়ায় ভেসে নেমে এসে ওর মায়ের কাছে এসে দাঁড়িয়ে,
কার্তিককে ইশারায় নিচে নামতে বললো। তারপর কার্ত্তিক পাইপ বেয়ে নিচে নেমে
আসতেই,  কবীর বাবুর ছেলে ওর মায়ের কপালে আলতো করে চুমু খেয়ে বাগানের
অন্ধকারে হারিয়ে গেলো। 

Bhayankar Bhuter Golpo

    বিধবা মালতি থাকে নদীর পাশের শিমুলতলা গ্রামে, সারাদিন বিধুর
বাড়ি রান্না, বাসন মাজার কাজ করত। আর ওর ছেলে কার্তিক ওরফে কুতু সারাদিন
মাঠে-ঘাটে, বাগানে নাটাইচক্করের মতো ঘুরে বেড়াতো।
 কবীর যাবার আগে গল্প করে ছিল ওর ছেলে কনাদ ওরফে কুতু একটা রোড
এক্সিডেন্টে তিন মাস আগে মারা যায়। অনেকেই তারপর থেকে ওকে ওর মা-বাবার আশেপাশে
ঘুরতে দেখেছে, যদিও ওরা কখনও এর আগে ওর সত্ত্বা অনুভব করেনি আর ওদের কথা
বিশ্বাস করেনি। কবীর যাবার আগে, কার্ত্তিকের জন্য ভালো স্কুল,আর সব বইখাতার
ব্যবস্থা করে দিয়েছে। কার্ত্তিকের মা মালতিকে ওর দেখভালের জন্য মাসে মাসে টাকা
পাঠাবে বলে কথা দিয়ে বিদায় নিলো। 
এই ঘটনার পঁচিশ বছর পর :
মালতির ছেলে কুতু ওরফে কার্তিক ধীবর এখন বড় সরকারি অফিসার। ওর মালতি মা অনেক
দিন হলো মারা গিয়েছেন। এখন কার্তিক যাচ্ছে কবীর আর ওর তিথি মাকে নিয়ে নিজের
অর্থ, পরিশ্রম আর জীবনের সব উৎসর্গিত সাফল্যের বুনিয়াদে তৈরী করা অবৈতনিক
বিদ্যালয় উদ্বোধন করতে, যার নাম –
‘ কনাদ আচার্য্য স্মৃতি একাডেমি ‘।
(সমাপ্ত )
আরো পড়ুন,

Share This Article