ভালোবাসার গল্প – Valobasar Golpo Bangla – Love Story

Bongconnection Original Published
15 Min Read

 ভালোবাসার গল্প – Valobasar Golpo Bangla – Love Story

ভালোবাসার গল্প - Valobasar Golpo Bangla - Love Story
Loading...

শ্রেষ্ঠ ভালোবাসার গল্প

জুঁই এর সৌরভ 
– বং কানেকশন এক্সক্লুসিভ 

ক্লান্ত,  শ্রান্ত সৌরভ অফিসের ব্যাগটা টেবিলে রেখে ঘরের আলো জ্বালাতেই
বিছানার ওপর কয়েকটা ফটো দেখতে পেল। সৌরভ না দেখেই বলে দিতে পারে মা আবার ওর
বিয়ের জন্য ব্যানার্জী কাকার থেকে মেয়েদের ফটো যোগাড় করেছে। ব্যানার্জী কাকা
ওদের বাড়ির সব পূজো করে আর পূজো করার কারণে অনেক পরিচিতি আছে বলে ঘটকালিও করে।
বছরখানেক ধরে মা ব্যানার্জী কাকাকে ধরেছে, সৌরভের জন্য মেয়ে খুঁজে দিতে। সৌরভ
মাকে বহুবার বলেছে,  জুঁই এর জায়গা আর কাউকে দিতে পারবে না, আর
তাছাড়া  জুঁই নিজের সুগন্ধ মিষ্টির মাধ্যমে সৌরভের জীবনে দিয়ে গেছে।
অন্যমনস্ক ভাবে এসব ভাবতে ভাবতেই মিষ্টি একঝলক দক্ষিণ হাওয়ার মতো বাবিইইই বলে
ছুট্টে ঘরে এলো – সৌরভ হাত দেখিয়ে থামিয়ে বললো ” wait, মাম্মা,  আমি এখনো
ফ্রেশ হই নি, just ফিরলাম।” মিষ্টি ঝাঁপিয়ে সৌরভের কোলে উঠতে পারলো না বলে রাগ
করে ঠোঁট ফোলালো। পাঁচ বছরের মিষ্টি নাচের ক্লাস থেকে ফিরলো। সৌরভ বললো, 
তুমি যাও দিদুনের কাছে, কিছু খেয়ে নাও, তারপর আমরা পড়াশোনা করতে করতে গল্প
করবো।” মিষ্টির মন খারাপ নিমেষে দূর হয়ে গেল। মিষ্টি হেসে বললো ” ঠিক আছে
বাবি।” বলেই যেমন দমকা হাওয়ার মতো এসেছিল, তেমনই আবার নীচে চলে গেল।

রোমান্টিক ভালোবাসার ছোট গল্প

Loading...
সৌরভ ফ্রেশ হয়ে নীচে গিয়ে চা-জলখাবার খেয়ে মিষ্টিকে কোলে করে উপরে চলে এলো।
সৌরভ মিষ্টিকে নিয়ে এমন ব্যস্ত ছিল যে, সবিতাদেবী ফটোগুলোর ব্যাপারে সৌরভকে
জিজ্ঞেস করার সুযোগই পেলেন না, আর সৌরভ যে এটা ইচ্ছে করে করে, তা সবিতাদেবী খুব
ভালো করে জানেন। সৌরভ ঘন্টা দুয়েক মিষ্টিকে পড়ালো আর মাঝে মাঝে গল্প করলো,
মিষ্টির অনেক প্রশ্নের জবাব দিল, একটু খুনসুটি করলো তারপর বললো, “যাও 
মাম্মা, তোমার খাবার সময় হয়ে গেছে, খেয়ে এসো।” মিষ্টি ছোট্ট করে ঘাড় নেড়ে
নীচে চলে গেল। সৌরভ ল্যাপটপ খুলে অফিসের কাজ করতে লাগলো। কিছুক্ষণ পর মিষ্টি
রাতের খাবার খেয়ে ফিরে এলো। মিষ্টিকে দেখেই সৌরভ সঙ্গে সঙ্গে ল্যাপটপ বন্ধ করে
দু’হাত বাড়িয়ে দিল, মিষ্টি ঝাঁপিয়ে পড়লো বাবির বুকে। তারপর মিষ্টিকে যত্ন
করে নিজের বুকের কাছে শুইয়ে দিল। মিষ্টি আস্তে করে বললো ” বাবি, now story
time.” সৌরভ মিষ্টির কপালে একটা স্নেহস্পর্শ দিয়ে বললো, ” yes মাম্মা।” সৌরভ
মিষ্টিকে রোজ একটা করে গল্প বলে, গল্প শুনতে শুনতে মিষ্টি ঘুমিয়ে পড়ে। আজও
তাই হলো, গল্প শেষ হবার আগেই মিষ্টি ঘুমিয়ে পড়লো। মিষ্টির কপালে স্নেহচুম্বন
দিয়ে সৌরভ নীচে রাতের খাবার খেতে গেল। খাবার টেবিলে সৌরভ মাথা নীচু করে খেয়ে
যাচ্ছে কিন্তু বুঝতে পারছে, সবিতা দেবী কিছু বলার জন্য উসখুস করছেন। সবিতাদেবী
নয় বাবা শ্যামলবাবু বললেন, ” কি রে তোর মা কয়েকটা মেয়ের ছবি আনিয়েছে, 
কথা শেষ করার আগেই সৌরভ বলে উঠলো,” আমি তোমাদের অনেকবার আমার সিদ্ধান্তের কথা
জানিয়েছি বাবা, আমি আর বিয়ে করবো না।” 
এরপর সবাই চুপ করে খেতে লাগলো, সৌরভ খাওয়া শেষ করে ওপরে চলে গেল।
আরো পড়ুন,  শুধু তোমারই জন্য
একটা সিগারেট ধরিয়ে সৌরভ ব্যালকনিতে গিয়ে দোলনাটায় বসলো। মৃদুমন্দ বাতাস
বইছে, আর সেই বাতাসে  জুঁই ফুলের সুবাস। প্রতি রাতে সৌরভ এই সুবাস পায়, ও
বোঝে না এটা কি ওর মনের ভুল নাকি অন্য কিছু ?  তবে ও অনুভব করে  জুঁই
ওর আসেপাশে আছে।  জুঁই এর সঙ্গে বিয়ের পর  রোজ রাতে যেমন 
দু’জনে  ব্যালকনির এই দোলনায় একসঙ্গে অনেকটা সময় কাটাতো, তেমনি এখনো
সৌরভ রাতে অনেকটা সময় ব্যালকনিতে কাটায়। জুঁই থাকে ওর অনুভূতিতে আর সারাটা
সময় একরাশ  জুঁই ফুলের সুগন্ধ যেন সৌরভকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে থাকে।


জুঁই  এর সঙ্গে বিয়ের সম্বন্ধটা ব্যানার্জী কাকাই এনেছিল। সৌরভ বরাবরই
চুপচাপ স্বভাবের। তাই বাবা-মা জুঁই এর ছবি দেখিয়ে যখন বিয়ের কথা বলেছিল, ও
আপত্তি করে নি, শুধু বলেছে আমি একটু ওনার সঙ্গে কথা বলতে চাই। উভয় বাড়ির দিক
থেকে কোন আপত্তি ওঠেনি। জুঁই এর বাড়ি সৌরভের বাড়ি থেকে খুব একটা দূরে ছিল না,
তাই জুঁই এর বাড়ির কাছে একটা ক্যাফেটেরিয়াতে দু’জন দেখা করবে ঠিক হলো। 
নির্দিষ্ট দিনে সৌরভ সময়ের কিছু আগেই পৌঁছে গেল, কারণ কোনভাবেই যেন জুঁই আগে
পৌঁছে না যায়, আর ওকে যেন সৌরভের জন্য অপেক্ষা করতে না হয়। সময় মতো ক্যাফের
কাঁচের দরজা খুলে জুঁই এদিক-ওদিক তাকাতেই সৌরভ হাত তুলে ওর অবস্থান জানান দিল।
জুঁই ক্যাফেতে ঢোকা আর ধীরে সৌরভের দিকে এগিয়ে যাবার সময় যেন একটা স্নিগ্ধতা
ছড়িয়ে পড়লো সম্পূর্ণ বাতাবরণে। জুঁই  এর সৌন্দর্য একটা মিষ্টি
স্নিগ্ধতায় ভরা, যা চোখকে ধাঁধিয়ে দেয় না, চোখকে পরম প্রশান্তি দেয়। জুঁই
এর কোমর পর্যন্ত লম্বা বেণীতে জুঁই ফুলের মালা জড়ানো, যা থেকে একটা মিষ্টি
সুবাস ছড়িয়ে পড়ছে। ধীরে ধীরে দু’জনের কথা শুরু হলো, সৌরভ জানলো জুঁই নাচ খুব
ভালোবাসে, আর অনেক ছোটবেলা থেকে শিখছে, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ও একক নৃত্য পরিবেশন
করে। আরো কিছু উভয়ের ভালো লাগা- মন্দ লাগা নিয়ে কথা চললো। জুঁই কথাবার্তায়
বেশ সাবলীল।  জুঁই  এর প্রতি ভালো লাগাটা ধীরে ধীরে সৌরভের মনে
জড়িয়ে যাচ্ছে এটা সৌরভ তখনই অনুভব করলো। আর কথা বলতে বলতে মিষ্টি হেসে সৌরভের
দিকে জুঁই সলজ্জ চাহনি দেখে সৌরভ বুঝলো  জুঁই এর ও ওকে ভালো লেগেছে। তবু
সৌরভ একটু ইতস্তত করে জিজ্ঞেস করলো, ” তাহলে, বাড়িতে গিয়ে কি বলবো ? আমার তরফ
থেকে তো হ্যাঁ।” মাথা না তুলেই জুঁই শুধু বললো, “আমারো” বলে ঘাড়টা সামান্য কাত
করে সম্মতি জানালো। একে অপরের প্রতি একরাশ ভালোলাগা আর একটা প্রাপ্তির অনুভূতি
নিয়ে দু’জনে  বাড়ি ফিরলো। দু’জনের মনের সারেঙ্গী টা এক সুরে বেজে
উঠেছে। 

গভীর ভালোবাসার গল্প

উভয়েরই বাড়ির লোকেরা ওদের উজ্জ্বল মুখমন্ডল দেখে বুঝে গেছে, যে ওরা একে অপরকে
পছন্দ করেছে। দুই  বাড়িতে কথাবার্তা  বলে কয়েকমাস পরে বিয়ের তারিখ
ঠিক করা হলো। উদ্দেশ্য,  এর মধ্যে ওরা কয়েকবার দেখা সাক্ষাত করে একে
অপরকে জেনে বুঝে নেবে।
সময়, সুযোগ বুঝে  জুঁই আর সৌরভ দেখা করতো। জুঁই এর কয়েকটা নাচের
অনুষ্ঠান ও দেখলো সৌরভ মাকে সঙ্গে করে নিয়ে গিয়ে। খুব সুন্দর নাচতো জুঁই।
পারফরম্যান্স দেখে সৌরভ মুগ্ধ। একটা গর্ব অনুভব করতো জুঁইকে জীবনসঙ্গীনি হিসেবে
পাবে মনে হলেই।  এর মধ্যে সৌরভ জুঁই  এর সমস্ত ভালো লাগা মন্দ লাগা
জেনে গিয়েছিল আর জেনেছিল জুঁইফুল জুঁই এর খুব পছন্দের।  
নির্দিষ্ট দিনে সৌরভ আর জুঁই  এর বিবাহ সম্পন্ন হলো। ফুলসজ্জার খাটটা সৌরভ
জুঁই এর পছন্দের জুঁইফুল দিয়ে সাজিয়ে ছিল। প্রকৃতির জুঁই ফুলের মাতাল করা
সৌরভে সেদিন জুঁই আর সৌরভ এক হয়েছিল। 
সময় যেন ডানা মেলে উড়ে যেতে লাগলো। সৌরভ আর জুঁই  একে অপরকে পেয়ে খুব
সুখী। দুটো ভালোবাসায় জড়ানো মন, নিজেদের  দায়িত্ব, কর্তব্য করেও সবসময়ই
একে অপরের মনে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে থাকতো। জুঁই মাঝে মাঝে নাচের অনুষ্ঠান করতো।
ভীষণ খুশি থাকতো এটা ভেবে যে অনেকের মতো বিয়ের পর তাকে নাচটা ছেড়ে দিতে
হয়নি। বিকেল হলেই অফিসে বসে সৌরভের মন ছটফট করতো। ঘনঘন ঘড়ি দেখতো, কখন ছুটি
হবে, কখন নিজের ভালোবাসার কাছে ফিরবে। অফিস থেকে ফেরার সময় সৌরভ রোজ জুঁইফুলের
মালা নিয়ে আসতো। বাড়ি ফিরে নিজে হাতে জুঁই এর চুলে লাগিয়ে দিত সেই মালা। রোজ
রাতে সৌরভ আর জুঁই  ব্যালকনির দোলনায় অনেকটা সময় একসঙ্গে বসে থাকতো,
নানারকম বিষয়ে কথা বলতো। সৌরভ জুঁই এর জুঁই ফুলের মালা লাগানো চুলে মুখ
ডুবিয়ে বুক ভরে শ্বাস নিতো।  জুঁই  ফুলের গন্ধ আর সৌরভের মানবী জুঁই
এর সান্নিধ্যে সৌরভ এক অদ্ভুত সুন্দর আবেশে বুঁদ হয়ে থাকতো। একই অবস্থা জুঁই
এর ও।
বিয়ের বছর দেড়েক পর জুঁই এর জীবনের আর এক অজানা অধ্যায়ের সূচনা হলো। সৌরভ আর
জুঁই এর ভালোবাসার ফল  জুঁই  এর মধ্যে অঙ্কুরিত হয়েছে, আর এটা যখন
প্রকাশিত হলো সকলের সামনে তখন সকলের মধ্যে আনন্দের বন্যা বয়ে গেল। জুঁই ও ভীষণ
খুশি। সৌরভ, সবিতাদেবী জুঁই এর খাওয়া-দাওয়া, ওষুধ-পত্র সবকিছুর ভীষণ খেয়াল
রাখতো । সময় যত পেরোতে লাগলো, সকলের ধৈর্য্য যেন আর থাকতে চায় না। সকলে অধীর
আগ্রহে অপেক্ষায় ছিল। যত দিন এগিয়ে আসতে লাগলো জুঁই এর মনে একটা আশঙ্কার কালো
মেঘ ঘনাতে লাগলো, সেটা কি কারণে তা সে জানে না। সবিতাদেবী জুঁই কে এখন আর কোন
কাজই করতে দেন না। সন্তান সম্ভবা হবার মাসখানেক পরেই সৌরভ আর জুঁই দোতলা থেকে
এসে নীচের একটা ঘরে থাকে। আর মাত্র মাসখানেক সময় বাকি, তারপরই সকলের অপেক্ষার
অবসান হবে। 

West Bangla ভালোবাসার গল্প

মানুষ ভাবে এক, হয় আরেক। ঈশ্বর বোধহয় কোন মানুষ কেই বেশীদিন সুখী দেখতে পারেন
না। একদিন দুপুরে খাওয়া-দাওয়ার পর জুঁই  কোন প্রয়োজনে রান্নাঘরে গেল,
সন্তান আসার পর থেকে সবিতাদেবী জুঁইকে রান্নাঘরে আসতে দেন না, কোথায় জল পড়ে
থাকে, বলা যায় না অসাবধানে যদি কোন দুর্ঘটনা ঘটে যায় ! কিন্তু মানুষ ভুলে
যায়, সে যতই সাবধানে থাকুক না কেন, যেটা ঘটার ঘটবেই।  জুঁই রান্নাঘরে
ঢুকতেই  জলের ওপর পা পড়ে স্লিপ করলো আর কিছু বোঝা বা ধরার আগেই একদম
আছাড়  খেল । জুঁই তীব্র যন্ত্রণায় চিৎকার করে উঠলো। সবিতাদেবী আর
শ্যামলবাবু ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটে এলো, এসে দেখেন জুঁই পেট ধরে যন্ত্রণায় চিৎকার
করছে। শ্যামলবাবু সঙ্গে সঙ্গে সৌরভকে ফোন করলেন, তারপর অ্যাম্বুল্যান্সে ফোন
করলেন। বাবার ফোন পেয়েই সৌরভ কেমন যেন অসুস্থ বোধ করতে লাগলো দুশ্চিন্তার
কারণে। এটা দেখে সৌরভের এক কলিগ ওর সঙ্গে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিল। প্রায়
একই সঙ্গে সৌরভ আর অ্যাম্বুল্যান্স পৌঁছে গেল । ইতিমধ্যে জুঁই যন্ত্রণায় অচেতন
হয়ে গেছে আর তাই দেখে সবিতাদেবী সমানে কেঁদে চলেছেন। যাইহোক, জুঁইকে নিয়ে
সকলে নার্সিংহোমে পৌঁছোলো, যেখানকার ডাক্তারকে জুঁইকে দেখানো হতো সেখানে।
অ্যাম্বুল্যান্সে আসতে আসতে সৌরভ জুঁই এর ডাক্তারকে ফোনে জানালো ব্যাপারটা।
সকলে নার্সিংহোমে পৌঁছোতেই সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তার দেখে জুঁইকে অপারেশন থিয়েটারে
নিয়ে যেতে বললেন। ইতিমধ্যে জুঁই এর ব্লিডিং শুরু হয়ে গিয়েছিল। ডাক্তার জুঁই
কে পরীক্ষা করে এসে বললেন situation is very critical. Uterus rapture হয়েছে,
এখুনি অপারেশন করতে হবে, নাহলে মা আর বাচ্চা কাউকেই  বাঁচানো মুশকিল 
হবে। সৌরভের চিন্তাশক্তি যেন লোপ পেয়ে গেছে, হাত-পা ঠান্ডা হয়ে গেছে। বিহ্বল
হয়ে শুধু তাকিয়ে আছে। সৌরভের অবস্থা দেখে শ্যামলবাবু এগিয়ে এসে ডাক্তারকে
বললেন আপনি যেটা ভালো বোঝেন করুন, কোন ক্ষতি যেন না হয়ে যায়। আর কথা না
বাড়িয়ে ডাক্তার অপারেশন থিয়েটারে চলে গেলেন। এক একটা মুহূর্ত যেন একযুগের
সমান কাটতে লাগলো। অপারেশন থিয়েটারের বাইরে লাল আলোটার দিকে তাকিয়ে যেন
দমবন্ধ করে সকলে সময় গুনছে।  কেউ জানে না এ যন্ত্রণাদায়ক অপেক্ষার অবসান
কখন হবে। 
ঘন্টাখানেক পর অপারেশন থিয়েটারের বাইরের লাল আলোটা নিভে গেল। সকলে অনেক আশা
নিয়ে একসঙ্গে উঠে দাঁড়ালো। নার্স এসে শুধু সৌরভকে ভেতরে ডাকলো।  ভেতরে
গিয়ে সৌরভ দেখলো একজন নার্স একটি ছোট্ট পুতুলকে কোলে করে জুঁই এর পাশে
দাঁড়িয়ে আছে। ডাক্তার সৌরভের সামনে এসে বললো মেয়ে হয়েছে কিন্তু জুঁই এর
অবস্থা ভালো না, অত্যধিক ব্লিডিং হয়েছে। ডাক্তারের কথাগুলো যেন ঠিকমতো বুঝতেই
পারছে না সৌরভ।  ও গিয়ে জুঁই  এর কপালে হাত রেখে কাঁপা গলায় ডাকতেই
জুঁই খুব ধীরে চোখের পাতা খুললো, যন্ত্রণায় জুঁই এর মুখমন্ডল ফ্যাকাশে হয়ে
গেছে। জুঁই কোনরকমে অস্ফুটে বললো, ” আমাদের ভালোবাসাকে আগলে রেখো।” এই বলে জুঁই
এর চোখের পাতা দুটো বন্ধ হয়ে গেলো। সৌরভ কাঁপা গলায় বারংবার জুঁইকে ডাকতে
লাগলো। সৌরভ বুঝতেই পারেনি জুঁই না ফেরার দেশে চলে গেছে। ডাক্তার এসে জুঁইকে
পরীক্ষা করে মাথা নীচু করে বললেন , “sorry” সৌরভ বিহ্বল হয়ে ডাক্তারের দিকে
একবার দেখছে, একবার জুঁইকে দেখছে, সমস্ত বোধবুদ্ধি যেন লোপ পেয়ে গেছে। বুকের
ভেতরটা একদম খালি লাগছে। নার্স সৌরভের কোলে ওর সন্তানকে তুলে দিল। সন্তানকে
বুকে জড়িয়ে সৌরভ বুকফাটা কান্নায় ভেঙে পড়লো। 

সেরা ভালোবাসার ছোট গল্প

জুঁইকে হারিয়ে সৌরভের পুরো পরিবার ভীষণভাবে ভেঙে পড়েছিল। কিন্তু ঐ একরত্তিটার
কথা ভেবে ধীরে ধীরে সকলে নিজেদের সামলেছে। কোন এক রাতে সৌরভের বুকের মধ্যে থেকে
জুঁই বলেছিল মেয়ে হলে ‘মিষ্টি’ নাম রাখবে। সৌরভ সেই নামই রেখেছে। 
এখন মিষ্টিই সৌরভের পুরো দুনিয়া। জুঁই এর অভাব তো কোনদিন পূরণ হবে না কিন্তু
মিষ্টির  দিকে তাকিয়ে ও জুঁই এর অস্তিত্ব অনুভব করে। মিষ্টি যখন
বছরতিনেকের, একদিন খেয়াল করলো, টিভিতে দেখে মিষ্টি আপনমনে নাচের নকল করছে, তখনই
সৌরভ বুঝলো জুঁই এর গুণ মিষ্টির মধ্যে এসেছে। পরের বছর মিষ্টিকে নাচের স্কুলে
ভর্তি করে দিল সৌরভ।  মিষ্টি এইটুকু বয়সেই খুব সুন্দর নাচে। 
জুঁই চলে যাবার বছরখানেক পর থেকে সবিতাদেবী সৌরভকে আবার বিয়ের ব্যাপারে ভাবতে
বলে আসছেন, কিন্তু সৌরভ প্রথমদিনই সবিতাদেবীকে স্পষ্ট করে বলে দিয়েছেন জুঁই এর
জায়গায় ও আর কাউকে বসাতে পারবে না। তবু সবিতাদেবী মাঝে মাঝে চেষ্টা করে যান
এই ভেবে, যদি একাকিত্ব সহ্য করতে না পেরে সৌরভের মন বদলায়।  উনি জানেন
না, এখনো সৌরভের সারা মন জুড়ে শুধু জুঁই আছে, আর আজীবন থাকবে। জুঁই এর
ভালোবাসার সৌরভে আজীবন সৌরভিত থাকতে চায় সৌরভ।  কিছু ভালোবাসা এমনই হয়,
ভালোবাসার মানুষটা না থেকেও আজীবন মনের মণিকোঠায় একরকম ভাবে থেকে যায়। জুঁই
নিজের সৌরভ মিষ্টির মাধ্যমে রেখে গেছে। জুঁই এর সৌরভ আজীবন এইভাবে অম্লান
থাকবে।
আরো পড়ুন, সুন্দর প্রেমের গল্প

Share This Article