Pohela Boishakh Kobita Bangla 2024
নববর্ষের রূপ ও চেতনা
আজি বাঙালির প্রাণে প্রাণে আনন্দের লহর
এলোরে পহেলা বৈশাখ,
পুরনো বছরের ব্যর্থতা, নৈরাশ্য, ক্লেদ,
গ্লানি সব ধুয়ে মুছে যাক।
এসো এসো এসো হে নতুন বর্ষ
অন্তর হতে তোমায় জানাই স্বাগত,
সমৃদ্ধি আর সুখে কানায় কানায়
ভরে তোল ধেয়ে আসা কাল অনাগত।
পল্লীর ঘরে ঘরে আজ সাজ সাজ রব,
পথে পথে শিশুদের মধুর কলরব।
নাড়ু, মোয়া আর আছে গুড় মেশানো খই,
তাই নিয়ে দলে দলে করে হইচই।
আরো আছে নানা স্বাদের সব পিঠাপুলি,
নতুন জামা কাপড় পরে বেড়ায় শিশুগুলি।
সকল মানুষ জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে,
নববর্ষ পালন করে আনন্দে হরষে।
বৈশাখী শাড়িতে রঙিন সব বাঙালি মেয়ে,
পাজামা-পাঞ্জাবি পরে ছেলেরা বৈশাখী ছোঁয়া পেয়ে।
ঘরে ঘরে পান্তা-ইলিশ নানান পিঠাপুলি,
বন্ধু-স্বজন-প্রতিবেশীতে মশগুল সময়গুলি
বৈশাখী মেলায় ছুটে চলে শিশু কিশোরের দল,
সেথায় নামে নানা শ্রেণি-পেশার লোকের ঢল।
যাত্রা, পুতুল নাচ, বায়োস্কোপ আর সার্কাসে,
নাগরদোলায় চড়ে যেন প্রাণ জুড়িয়ে আসে।
কুটির শিল্প পণ্য, মাটির হাঁড়ি আর বাসন-কোসন,
রঙ বেরঙের পুতুল দেখে ভরে ওঠে মন।
বেত আর বাঁশের তৈরি জিনিস, খেলনা, তালপাখা
চিঁড়া-মুড়ি-খৈ, বাতাসা যেন মধু দিয়ে মাখা।
দোকান পাট সজ্জিত হয় রং বেরংয়ের সাজে,
প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে আসে ব্যবসায়ীদের মাঝে।
দোকানিরা সব মিলেমিশে করেন হালখাতার আয়োজন,
মিষ্টি খাইয়ে ক্রেতাদের তারা করেন আপ্যায়ন।
পুরনো বছরের ব্যবসার যত আছে হিসাব-নিকাশ,
চুকিয়ে সব সম্বন্ধটার করেন তারা বিকাশ।
গ্রামে গ্রামে খেলাধুলার করেন আয়োজন,
সাংস্কৃতিক সব অনুষ্ঠানে আসেন সর্বজন।
নৌকাবাইচ, লাঠিখেলা, কুস্তি আর গম্ভীরা,
বলীখেলায় ভীড় করেন নারী-পুরুষেরা।
পহেলা বৈশাখের ভোরে রমনার বটমূলে,
মুখরিত হয় সর্বস্তরের লোকের কোলাহলে।
“এসো হে বৈশাখ, এসো এসো” সুরে,
প্রতীক্ষিত বর্ষটিরে বরণ তারা করে।
‘মঙ্গল শোভাযাত্রার’ সেই বর্ণিল র্্যালি,
রঙিন মুখোশ পরে হাতে হাতটি রেখে চলি।
আরো যত আছে সব সাংস্কৃতিক সংগঠন,
দিনব্যাপী নানা অনুষ্ঠান করে তারা আয়োজন।
পহেলা বৈশাখ বয়ে আনে অনাবিল সুখ আর আনন্দ,
জীবন চলার পথে উদ্যম যোগায় ফিরিয়ে আনে ছন্দ।
সকলের মনে বয়ে আনে অসাম্প্রদায়িক চেতনা,
ধর্ম-বর্ণ-গোত্র নয়, বাঙালি হওয়ার প্রেরণা।
মানবিক মূল্যবোধ জাগ্রত করে
গড়ে ওঠে সম্প্রীতি,
মানুষে মানুষে দূর করে বিভেদ
হৃদয়ে আনে প্রেম-প্রীতি।
মানবতাবোধ উজ্জীবিত করে সকলের অন্তরে,
কাজ করার প্রেরণা যোগায়
দরিদ্র, নিপীড়িত আর অসহায় মানুষের তরে।
আরো পড়ুন,
পহেলা বৈশাখের কবিতা
ঘুম ভাঙলেই পহেলা বৈশাখ
– প্রতাপ মণ্ডল
যা কিছু পুরাতন– বিদায় নিয়েছে কাল!
এ এক নতুন
সকাল।
সকাল।
নতুনের এতো হাতছানি…..
সে হাতছানি কি উপেক্ষা করা যায়?
নতুন বছরে পদার্পন, ক্লান্ত ভীষণ দেহ — মন
তবু মন-প্রাণ নতুনের পানে ধায়…..
সে ছিলো মহামারী, এখনো নেয় নি বিদায়।
তবু নতুন আসে পুরোনো সবকিছুকে মাড়িয়ে
পুরাতন জমা হয় স্মৃতিতে, যায় না তা হারিয়ে!
কত প্রাণ অকালে গেছে ঝরে — কতকেউ –
মাতৃ-পিতৃহারা, হারিয়েছে আত্মীয় পরিজন,
হোক না নতুন বছর, নিভৃতে কাঁদে প্রাণ-মন।
আবার নতুন করে পথচলা শুরু, বুকে অজানা ভয়
মন না চাইলেও কিছু পরাজয় মেনে নিতে হয়!
সব বাধা ঠেলে সামনে যে এগিয়ে যেতেই হয়…
সূর্য ওঠে আবার অস্ত যায় কালের নিয়ম মেনে
বেদনার চাদর আলগোছে দিই আমরা টেনে….!
নতুনের সাথে হই নতুন পথের সাথী…….
পথে যেতে যেতে পেয়ে যাবো ঠিক কোনো সমব্যাথী!
হয়তো সে দেবে সব হারাবার যন্ত্রণা নিমেষে ভুলিয়ে!
রাতজাগা চোখে ভোরের শিশিরবিন্দু দেবে বুলিয়ে!
আর আমি, পরম নিশ্চিন্তে আবার ঘুমিয়ে পড়বো..!
ঘুম ভাঙলেই, আবার এক নতুন সকাল….
যা কিছু পুরাতন — বিদায় নিয়েছে কাল!
আরো পড়ুন,