সুন্দর প্রেমের গল্প – Sundar Premer Golpo – Bengali Love Story
সুন্দর প্রেমের গল্প
“ঠিকানা নেই” বইটা থেকে চোখটা সরিয়ে দরজার দিকে তাকালেন লীনা দেবী।দরজায় সেই
চেনা মুখটা দেখতে পেয়ে বলে উঠলেন, তুমি আবার এসেছো স্বদেশ ? আচ্ছা তোমারও তো
বয়স বাড়ছে নাকি? আর আমি কি ছোট বাচ্চা যে রোজ দুবেলা নিয়ম করে আমায় দেখতে
আসতে হবে, আর আমিতো এখন ভালই আছি।
ঘড়িতে দেখেছেন চারটে বাজলো কিনা, সেটা আড়াল করার একটা চেষ্টা করে গেলেন লীনা
দেবী।
স্বদেশ বাবু – তুমি যে বাচ্চা নও লীনা সে কি আর আমি জানিনা। তবে কি জানো মানুষ
অসুস্থ হলে, হসপিটালে পড়ে থাকলে আশা করে যে কেউ অন্তত তার কাছে একটু সময়ের
জন্য হলেও আসুক।
আমার খুব মনে হতো, কেউ অন্তত আসুক। দুদিন তিনদিন ছাড়া ছাড়া ওই অস্তরাগের
ছেলেগুলো দেখতে আসতো বটে, কিন্তু সেটা যেন ওদের একটা কর্তব্য, তাতে ঠিক
অনুভূতির টান ছিলনা।
তোমার?
ভালো পারে বলো।
এখন?
পর ওরা আমায় ধরে ধরে হাঁটালো। কতদিন পর মাটিতে পা রাখলাম।
মত…
দেবে কিছু বললো?
বলছেন একটু ঠিকমত হাঁটতে না পারা অবদি ছাড়তে পারবেনা। তারজন্য আরো এক দু
সপ্তাহ।
গেছিলে তাতে আমিতো ভেবেছিলাম…
বুঝেছো, এত সহজে নিস্তার নেই।
একটি সুন্দর প্রেমের গল্প
বাহাত্তর। তুমি হয়তো আমার থেকে বছর তিনেকের ছোট। কি তাইতো?
আমায়। দুর্গাপুজোর প্রত্যেকদিন সকালে শিউলি ফুলের মালা গাঁথবে বলেছিলে। এসব
কিন্তু তোমারই কথা লীনা।
ও হ্যাঁ তোমার মেয়ে ফোন করেছিল আমায়, বললো তোমার ফোনটা সুইচ অফ।
ফোন করে।
মেয়েটা কত দূর থেকে তোমায় ফোন করছে।
থেকে ছুটি দিলেই তুমি আর অস্তরাগে যাবেনা, আমার কাছে এসে থাকবে। আচ্ছা বলতো এ
কি আর হয়।
জামাইয়ের সংসারেই ছিলাম একটা বছর। আমার রোজ গানের রেওয়াজ নিয়ে জিনির কোন
আপত্তি না থাকলেও জামাই এর আপত্তি ছিল। মুখ দেখে বুঝতে পারিনি কখনো, আমাকে
সামনাসামনি বলেওনি কোনোদিন, কিন্তু একদিন রাতে ওদের ঘরের সামনে দিয়ে বাথরুম
যেতে গিয়ে কানে এলো শুভ্র জিনিকে বলছে, তোমার মায়ের এই সকাল সন্ধ্যা হেঁড়ে
গলায় কেত্তন আর নেওয়া যাচ্ছেনা জিনি, প্লিজ এবার এটা বন্ধ করতে বলো। তুমি তো
জানো গান ছাড়া আমি অচল। তাই নিজেই বৃদ্ধাশ্রমের খোঁজ করতে লাগলাম, এই
অস্তরাগের ঠিকানা পেতেই চলে এলাম এখানে।
চলে আসতে পেরেছো, তোমার স্বামী তোমার জীবন সুরক্ষিত করে দিয়ে গেছে লীনা।
বিক্রি করে দিলো প্রোমোটারের কাছে। ওদের মা মারা গেছে বছর দশেক হলো। আমায় বলল
বাড়িটা না হওয়া অবদি আমার ভাড়াবাড়িতে থাকতে কষ্ট হবে তাই অস্তরাগে ভালভাবে
থাকতে পারবে, গৃহপ্রবেশের দিন একদম নিয়ে যাবে ওখানে। তারপর গৃহপ্রবেশের দিন
এলো, ছেলে নিয়েও গেছিলো আমায়, কিন্তু তারপর বোঝালো দুই কামরার ফ্ল্যাট বাবা,
তোমার তো হাতপা ছড়িয়ে থাকতে ভালো লাগে, আর এতদিনে অস্তরাগে থেকে অভ্যস্ত হয়ে
গেছো তাই ওখানেই…. অগত্যা সেদিন রাতেই আবার দিয়ে গেলো আমায়। তারপর আর আসেনি
এখানে, তা প্রায় মাস ছয়েক হতে চললো, এখন ফোনেই কথা হয় মাঝেসাঝে। তারপর এই
তুমি এলে, এখন ভালই লাগে, আসলে সবার সাথে তো মানসিকতা মেলে না।
রোমান্টিক প্রেমের গল্প
তুমি আবার আমায় ভালোবেসে ফেলোনি তো, আমি কিন্তু বয়সে বড় তোমার থেকে।
আসল কথাটা ধরে ফেলেছি স্বদেশ।
বয়স হচ্ছে তো নাকি?
হারিয়ে যাওয়ার আগে কাছের মানুষকে বলে দেওয়াও ভালো।
চাই, হাঁটতে পারলেই হাতে হাত রেখে কাঞ্চনজঙ্ঘার কোলে সূর্যোদয় দেখতে যাওয়ার
ইচ্ছে আছে খুব।
আছি। আহা কি শান্তি।