অনাকাঙ্খিত প্রেমের গল্প – Anakankhito Premer Golpo
অনাকাঙ্খিত প্রেমের গল্প
-শুভঙ্কর সাউ
-‘কইরে..ওই..উঠে পর এবার।’
অনিমার কথায় ওঠা তো দূর,বিট্টু তার হাতটা ধরে বিছানায় টেনে নিয়ে তাকে বালিশের মত জড়িয়ে ধরে ঘুমের ঘোরেই গালে চুমু খেতে চাইলো।
অনিমা,ঘরের দরজা খোলা আছে জানে।তাই তার আদরকে প্রশ্রয় না দিয়ে বলল-
-‘আরে..দরজা খোলা আছে।ছাড়।কেউ এসে যাবে।’
বিট্টু আলসে মুখে-
-‘থাকুক গে।আমার বউকে আমি আদর করছি..।’
বলে ফের অনিমাকে আরও কাছে টেনে চুমু খেতে চাইলো।অনিমা তখন বলল-
-‘এই তো কাল রাতে এত আদর করলি।ওঠ এবার বেরোতে হবে আমাদের।’
অনিমা কথাগুলো বলবার পর তাকে জোর করে ঘুম থেকে তুলে বসিয়ে দিলো।বিট্টু ঘুম ঘুম চোখে বলল-
-‘ধুর বাবা।ভাল্লাগেনা।চাকরি ছেড়ে দিতে হবে এবার।দুদিন যে একটু…।’
কথাটা তাকে শেষ করতে দিলোনা অনিমা।তার হাত ধরে টেনে দাঁড় করিয়ে বলল-
-‘যা ফ্রেশ হয়ে আয় তাড়াতাড়ি।মায়ের টেবিলে ব্রেক ফাস্ট সাজানো হয়ে গেলো এতক্ষন বোধহয়।’
বিট্টু বিরক্তিভরা চোখে ওপর ঘরের বার্থরুমের দিকে চলে গেলো।অনিমা ঘরে দেখতে লাগলো কিছু নিতে ভুলে গেছে নাকি ব্যাগের মধ্যে।মিনিট দশেক পরেই বার্থরুম থেকে বিট্টুর আওয়াজ এলো-
-‘অনি..আমার ওই শ্যাম্পুর বোতলটা একটু দিয়ে যা তো।’
অনিমা শ্যাম্পুর বোতলটা হাতে করে বার্থরুমের দরজার গিয়ে টোকা দিলো।
-‘এই খোল।’
বিট্টু দরজাটা খুলে শ্যাম্পু সমেত অনিমার হাত ধরে ভেতরে টেনে দিয়ে দরজার লক আটকে দিলো।অনিমা বারণ চোখে বলল-
-‘একদম পাগলামো না কিন্তু।আমার স্নান সারা হয়ে গেছে।’
বিট্টু বলল-
-‘ধরেছি কী ছাড়বো বলে নাকি?’
বলে তাকে সাবানের ফ্যানা ভর্তি গায়েই অনিমাকে চেপে ধরলো।ঠিক এমন সময় মা ওপরে এসে ছেলে বৌমার শোবার ঘরে কাউকে না দেখতে পেয়ে হাঁক দিলো-
-‘বিট্টু…বৌমা…কোথায় গেলে তোমরা?’
অনিমা শাশুড়ি মায়ের গলার আওয়াজ পেয়ে চাপা গলায় দাঁত টিপে টিপে বিট্টুকে বলল-
-‘তোর জন্য ফেঁসে গেলাম।এবার মা কে কী জবাব দিই।ছাড় আমাকে।’
বিট্টু তো নাছোড়বান্দা।সে বলল-
-‘ঘুম থেকে ডাকবার সময় চুমুটা দিলে এত ঝক্কিতে পড়তে হত না তোকে।আগে চুমু দে।তারপর..।’
অনিমা বুঝলো বিট্টু তাকে ছাড়বেনা।সে ঝট করে তাকে একটা চুমু দিয়েই শাশুড়ি মা কে আওয়াজ দিলো-
-‘মা,আমি বার্থরুমে।’
শাশুড়ি মা জিজ্ঞেস করলো-
-‘বিট্টু কোথায়?’
অনিমা তখন কী জবাব দেয়?সে মিথ্যে করে বলল-
-‘আপনার ছেলে বোধহয় দাঁত মাজতে মাজতে বাইরের দিকে গেলো।’
শাশুড়ি মা ঘরের মধ্যে ভ্রুকুটি করে বলল-
-খোকা নীচে গেলো?কই দেখলাম না তো।যাইহোক নীচে চলে এসো আমি জলখাবার সাজাচ্ছি।’
শাশুড়ি মা’র নীচে চলে যাওয়ার আওয়াজ পেতে অনিমা বিট্টুকে বলল-
-‘তোর জন্য আমায় আবার শাড়ি বদলাতে হবে।
বাড়া খাটুনি।’
বিট্টু হাসতে হাসতে বলল-
-‘যেমন কর্ম তেমন ফল।’
অনিমা বার্থরুমের ভেতর থেকে বেরিয়ে এসে ফের নতুন একটা শাড়ি বের করে পরতে আরম্ভ করেছে, ঘরের বন্ধ দরজার ওদিকে দাঁড়িয়ে বিট্টু বলল-
-‘কইরে খোল তাড়াতাড়ি।’
Bangla Premer Golpo
অনিমা এলোমেলো শাড়িটা বুকের ওপরে একহাতে টেনে ধরে অন্যহাতে দরজা খুলে দিতে বিট্টু ঘরের মধ্যে ঢুকে ফের দরজার ছিটকিনি এঁটে দিলো।তারপর মাথার লম্বা লম্বা চুল থেকে দুহাতে জল ঝেড়ে সোজা অনিমার পিছনে দাঁড়িয়ে তাকে পিছন দিক থেকে আলতো ভাবে ধরে তার কাঁধের ‘পর বেছানো শ্যাম্পু করা চুলের গভীরে তার মুখের আদর রাখলে অনিমা কোমরে কাপড় গুঁজতে গুঁজতে বলল-
-‘উফফ,আবার বিরক্ত করছিসএবার জলদি জলদি বেরো না।ক’টা বাজে খেয়াল আছে তোর?’
বিট্টু আদুরে সুরে বলল-
-‘কেনো যে এত কম ছুটি পাই দুজনে।আরও কদিন যদি পাওয়া যেত।সেই আবার আলাদা আলাদা করে দুজন থাকা।ভাল্লাগেনা।জীবনটা শেষ হয়ে গেলো।’
অনিমা এবার মজা করে বলল-
-‘ঠিকই আছে।যত বেশি ছুটি পাবি তত বেশি আমায় জ্বালাবি তো।এই ভালো।কম ছুটি।’
বিট্টু বলল-
-‘ধুর,বিয়ের পর থেকে না দুজনে কাছা কাছি থেকে একটু রাগ-অভিমান করলাম, একটু ঝগড়া খুনসুটি করলাম।ফোনে ফোনে এসব কেমন বোরিং লাগে।’
অনিমা এবার বিট্টুর দিকে ফিরে তার কাঁধে হাতদুটো জড়িয়ে বলল-
-‘সব হবে আমাদের একদিন দেখবি।তত দিন সবুর করুন আপনি।’
বলে বিছানা থেকে তার জামাটা তুলে তাকে পরিয়ে দিলো।এমনকি তার মাথার চুলগুলো আঁচড়ে দিলো।চুল আঁচড়ানো হলে বিট্টু অনিমার হাতটা আবেগের সাথে ধরে বলল-
-‘আবার কবে ছুটি নিবি বাড়ি আসার?’
অনিমা মৃদু গলায় বলল-
-‘বেসরকারী জব।জানিসই তো চাইলেই ছুটি পাওয়া যায় না।’
জলখাবার খেয়ে বাবা মাকে বিদায় জানিয়ে দুজনে বেরিয়ে পড়লো।বিট্টু গাড়ি নিয়ে কোলকাতা চলে যায়।অনিমা বিট্টুর সাথে তারকেশ্বর স্টেশন অবধি যাবে।তারপর ট্রেনে বর্ধমান চলে যাবে।দুজনেই দু
প্রান্তে থাকে।উইকএন্ডের ছুটিতেও একদিনের জন্য একে অপরের কাছে যাওয়াটা শুধুই জার্নি ছাড়া আর কিছু নয়।যাওয়ার পথে অনিমা এবার বলল-
-‘সত্যি বলতে কী আমার না তোকে ছেড়ে থাকতে ইচ্ছে করেনা একা একা।জবটা যদি দুজনের একই জায়গায় হত…।’
বিট্টু বলল-
-‘কপালে নেই,আর বললে হবে।’
অনিমার মনটা ভার হয়ে গেলো।কিছুক্ষন চুপ থাকার পর অনিমা হাত ঘড়িটা একবার দেখে দেখে বলল-
-‘বলছি আমাকে সাড়ে আটটার ট্রেনটা ধরিয়ে দে।নয়তো বর্ধমান পৌছোতে দেরী হয়ে যাবে কিন্তু।দেরী হলেই সেই বসের মেজাজ শুনতে হবে আবার…।’
বিট্টু বলল-
-‘চাপ নেই ধরিয়ে দেবো।এখনো আধঘন্টা হাতে সময় আছে।দশ মিনিট আগে স্টেশনে নামিয়ে দেবো।’
যেতে যেতে হঠাৎই তাদের দুজনের চোখে পড়লো রাস্তার ধারে কয়েকটা বাচ্ছা ফ্যাল ফ্যাল চোখে এই সকাল বেলাই রাস্তার দিকে তাকিয়ে আছে হয়তো কিছু পাওয়ার আশায়।ওদের মুখের অবস্থাগুলো দেখে দুজনের কারোরই ভালো লাগলো ন।সময়
একটু যায় তো যাগ,একবারটির জন্য দাঁড়িয়ে ওদের কিছু সাহায্য করে তবেই তারা যাবে ঠিক করলো।বাচ্ছাগুলো জানালো-তারা আগের রাত থেকে কেউ কিছু খায়নি।সামনেই একটা দোকান ছিলো চায়ের।ওরা দুজনেই বাচ্ছাগুলোকে সেই দোকানের সামনে নিয়ে গিয়ে দোকানিকে জিজ্ঞেস করলো-
-‘পেটভরার মত খাবার কিছু হবে তোমার কাছে?’
দোকানি বলল-
-‘ঘুঘনি পাউরুটি হবে।তবে একটুখানিক দেরী হবে।’
ভালোবাসার গল্প কাহিনী
বিট্টু বলল-
-‘ততক্ষন এদের বিস্কুট,কেক যা আছে দাও।তারপর ঘুঘনি হলেই রুটির সাথে দিয়ে দেবে।আর কত হচ্ছে
বলো?’
টাকা মিটিয়ে দিয়ে চলে যাবার সময় ছেলে গুলোর হাসি মুখটা দেখে ওদের দুজনের মনটা ভোরের বাতাসে কোথাও একটা প্রশান্তি খুঁজে পেলো।যেতে যেতে অনিমা বলল-
-‘সত্যি,এদের মুখগুলো দেখলে মায়া লাগে।’
সাড়ে আটটার ট্রেনটা মিস হয়ে গেলো।তবু,চিন্তার বিষয়টা কোথাও যেন হারিয়ে গিয়েছিলো।বিট্টু বাই বাই করে ন’টা বারোর কিছুক্ষন আগে চলে গেলো।
অনিমার বর্ধমান পৌছে অফিস ধরতে করতে প্রায় বারোটার গাওয়াগায়ি লেগে গেলো।অফিসে পা টা রাখতে এবার একটু দুরুদুরু করতে লাগলো বুকের ভেতরটা তার।নিঃঘাত বস কড়া মেজাজ দেখিয়ে
কথা শোনাবে।কিন্তু,অফিসে ঢুকে জানতে পারলো বস কয়েকজনের সাথে মিটিং এ বসেছে।মিটিং এর খবর তো সে জানতো না।কিন্তু,যখন সে তার ফোনে ইমেলটা চেক করলো,তখন দেখলো আগেরদিন রাতে মিটিং এর জন্য মেসেজ গিয়েছিলো।সে সেটা দেখতে মিস করে গেছে।
সে একবার বিট্টুকে ফোন করে জানিয়ে দিলো যে সে অফিস চলে এসেছে।বিট্টুও জানালো সে অফিসে কাজ করছে।মিটিং শেষ হতে বস যখন তাকে ডেকে পাঠালো, তখন সে ভাবলো তার কপালে বুঝি এবার দুঃখ আছে।সে মাথা নীচু করে বসের ঘরে যেতে বস তাকে মেজাজ দেখানোতো দূর, তাকে এমন একটা প্রস্তাব দিলো যাতে করে সে চমকে গেলো।বস বলল-
-‘শোনো অনিমা।আমাদের নতুন ব্রাঞ্চ কোলকাতায় দু মাসের মধ্যে ওপেন হতে চলেছে।তুমি কী সেখানে যেতে চাও?কারন-আমি ওখানে কয়েকজন ওয়েল এক্সপেরিয়েন্সড মানে তোমাদের মত কয়েকজনকে পাঠাতে চাই।সাথে সাথে ইনক্রিমেন্টটাও পেয়ে যাবে।তোমার কী মত?’
অনিমাতো বসের এই প্রস্তাবে এককথায় রাজি হয়ে গেলো।এবং বসকে দু তিনবার ‘থ্যাঙ্কস’ জানিয়ে বাইরে এসে আগে বিট্টুকে এই গুড নিউজটা দিলো। দুজনেই যেন একমুহূর্তেই আহ্লাদে আটখানা হয়ে পড়েছিলো।কী জানি!সবই হয়তো তাদের সেদিনের ওই ভালোকাজটা করার ফল।ইশ্বর হয়তো সব দেখেন..।
Tags – Bangla Golpo, Bengali Love Story, Premer Golpo