দমফাটানো বাংলার হাসির গল্প – Bengali Comedy Story
সকলের আসার কথা, আগেভাগেই তাই সবদিক সামলাতে ব্যস্ত তারক , পটলা আর দিপু !
মিটিংএ আসলেই মাটির খুঁড়িতে ধোয়া ওঠা গরম চা আর মদন মিষ্টান্ন ভান্ডারের
স্পেশাল সিঙ্গারা দিতে হবে সবাইকে ! হরেন দত্তর স্ট্রিক্ট ক্ট অর্ডার ! হরেন
অবশ্য আসবেন একটু দেরিতে ! অতবড় ব্যবসাদার মানুষ, চার চারটে রেশন দোকানের মালিক
, তার ওপরে আবার কোলাগ্রামের মাছের ভেড়িখানাও তার! এতো ঝক্কি ঝামেলা মিটিয়ে তবে
এই পুজোর মিটিঙে আসা ! এবার অনেক অনুরোধের পর এই ক্লাবের সভাপতি হয়েছেন হরেন
দত্ত !
ঘেঁষে বয়ে গেছে কাজলাফুলি নদী! তার পাশেই গড়ে উঠেছে বসতি ! এ গ্রামের অধিবাসীরা
বেশিরভাগই সম্পন্ন চাষি ! গ্রামে দুখানা হাইস্কুল আছে, সরকার বদলের পরে কলেজ ও
হয়েছে একখানা! এ গ্রাম নিয়ে গ্রামবাসীরা তাই খুশি আর গর্বিত ! কাজলাফুলি নদীর
ওপারে আটঘরা গ্রাম! এ গ্রামের সঙ্গে অর্থাৎ সাতক্ষিরি গ্রামের সঙ্গে আটঘরা
গ্রামের বড়ো রেষারেষি ! কারণটা অজানা ! শোনা যায়, নারী অপহরণ মামলায় বহুদিন আগে
দুই গাঁয়ের মোড়লের মধ্যে কাজিয়া বাঁধে ! তার জের আজ বর্তমান ! সাতক্ষিরির লোক
আটঘরার নাম শুনলেই চক্ষু রক্তবর্ণ করে তেড়ে আসে ! আর আটঘরার মানুষজন সাতক্ষিরির
লোকের ছায়াও মাড়ায় না ! দুই গ্রামের মধ্যে বাৎসরিক ফুটবল ম্যাচের যে উত্তেজনা
তা ভারত পাকিস্তানের ক্রিকেট ম্যাচের তুলনায় কোনো অংশে কম নয়!
খুব হাসির গল্প
বাসিন্দার প্রায় হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার অবস্থা হয়, একথা বললে খুব ভুল হবেনা !
আটঘরার ছেলেমেয়েরা লোকাল ধরে কাকভোরে উঠে কলেজ এ ছোটে তবু সাতক্ষিরি গাঁয়ে পড়তে
আসেনা ! এমন রেষারেষি, এমনি শত্রুতা !
এই সময় আটঘরা গ্রামের মানুষজন যখন তাদের দুর্গামন্দিরের খোলনলচে বদলে থিম পুজো
চালু করলো তখন সাতক্ষিরির দিপু, হাবুল পটলারা যে দমে যাবে একথা বলাই বাহুল্য !
এই থিম পুজোরমোকাবিলা করতেই অবশ্য আজকের মিটিং! হরেন দত্ত এ বছর অগ্নি সংঘ (
ফায়ার কেলাব ) এর প্রেসিডেন্ট ! তাঁরই উদ্যোগে এবার সাতক্ষিরি গ্রামেও থিম
পুজোর পরিকল্পনা চলছে !
কপালের মাঝে ভাঁজ ,মাঝে মাঝে বাতাবি লেবুর মতন ফুলে ফেঁপে ওঠা পেটে হাত
বোলাচ্ছেন আর কি যেন ভাবছেন ! দুবার খুকখুক করে কেশে তারপর পাশে বসে থাকা
রাজনীতি করা উঠতি নেতা খগেন সামন্ত কে বললেন “ তা আপনি কি বলেন ! খগেন বিগলিত
হয়ে একগাল হেসে বললেন, “ আমি কি বলি বলুন তোে” এসব তোেআপনিই ভালো বোঝেন !”
মনেমনে অবশ্য হরেনের আদ্যশ্রাদ্ধ করছিলো খগেন! ভাবছিলো তোর দৌড় কতদূর আমার জানা
আছে রে ! চালডাল আর মাছের ব্যবসা করে বুদ্ধির জোর আর কত হবে! এদিকে তোে বিদ্যের
জাহাজ ! মুখে অবশ্য বিগলিত ভাবটা বজায় রাখছিলো খগেন! পার্টি ফান্ডে প্রচুর টাকা
ঢালে লোকটা , েকে চটানো চলে ? হাবুল খুব উত্তেজিত ছিল , স্পষ্টবক্তা বলে যথেষ্ট
দুর্নাম তার! হরেনের মুখের ওপর সোজা বলে দিলো “এসব চলবে না স্যার , কেউ রাজি
হবেনা! লাইভ ঠাকুর ব্যাপারটা খুব হাস্যকর হবে!
বুক ফাটানো হাসির গল্প
আটঘরার লোকের কাছে বেইজ্জত হবো বুঝলেন দাদা “! হরেন মুখ তুলে তাকালো ! মুখের
ভাবে বুঝিয়ে দিলো চুপ করো হে ছোকরা, মেলা বোকো না! এ পুজোয় আমার কথাই ফাইনাল !
সজোরে চেয়ার টা পেছনদিকে ঠেলে বললেন” হবেনা বললেই হলো? হতে হবে! আমার
তোেমুখগুলো এখনই সব ভাবা হয়ে গেছে! “কাকে ভাবলেন দাদা? “ সিঙ্গাড়ায় কামড় দিতে
দিতে নসু জিজ্ঞেস করলো! মানে ব্যাপারটা ঠিকক কি হবেএকটু বলেন দেখি ! হরেন হাসলো
, তারপর পাশে রাখা পানের কৌটোটা থেকে একখানা জর্দা পান মুখে পুরে বললো ! “
ব্যাপারখানা বুঝলে না, মায়ের পুজোর জন্য মূর্তি গড়া হবে! কুমারপাড়ায় যেমন ফি
বছর অর্ডার যায় তেমনি যাবে তবে আসল আকর্ষণ হবে লাইভ ঠাকুর! আমি কখানা মুখ
ভেবেরেখেছি
হাবুলের হাত টিপল! কে না জানে ওই মিস সাতক্ষিরির সঙ্গে হরেনের একটু ইন্টু
পিন্টু আছে! হরেনের বৌ কতবার গিয়ে ওইমিস সাতখিরিকে শাসিয়ে এসেছে , গাঁয়ের
কালীবাড়িতে জোড়া পাঠা মানত করেছে , সত্যনারায়ণের সিন্নি দিয়েছে তবু যে কে সেই !
হরেন আর কঙ্কাবতী মানেওই মিস সাতক্ষিরি মাঝেমাঝেই কোথায় যেন উধাও হয়ে যায়!
পল্টুর আর তর সইছিলো না! চা টা একচুমুকে শেষ করে বললো, “ তোে লক্ষী, সরস্বতী আর
গনেশ কে হচ্ছে দাদা?” আর অসুরটাই বা কে হবে? হরেন তৃপ্তির হাসি হেসে বললো” কথা
হয়ে গেছে রে ভাই ! লক্ষী হবে জগৎ সরকারের নাতনি , কি যেন নামখানা , ও হ্যাঁ
হ্যাঁ, কুন্তলা সরকার ! সেই লক্ষী হবে, সন্তুকে ভাবছি কাত্তিক করবো আর সরস্বতী
করবো নিতাই পোদ্দারের বৌটাকে ! লেখাপড়া জানা মেয়ে , শিক্ষে সহবত আছে, মানাবে
বেশ!আর গনেশের জন্য চিন্তা নেই, ভিকু ময়রাকে বলে রেখেছি, ও রাজি!
প্রতি টাকা দেব ! রাজি না হয়ে যাবে কোথায়. ? খ্যাক খ্যাক করে হাসলো হরেন!
খগেনের বিরক্ত লাগছিলো ! কি উদ্ভট চিন্তা লোকটার ! আটঘরার লোকের কাছে মানইজ্জত
আর রইলো না কিছু! লাইভশো যে ফ্লপ শো হবে বোঝাই যাচ্ছে তবে বলা যাবে না
কোনোভাবেই ! তাই খগেন খানিকটা আমতা আমতা করে বললো” দাদা বাটু কর্মকার মানে
আপনার মহিষাসুর বলছিলো আপনি ওকে অফার দিয়েছেন ! তা বাটু একটু তোঁতলা জানেন সে
কথা? হরেন ধমকে উঠলো “ বলি মহিষাসুর কি ওখানে বক্তিমে দেবে নাকি হে? দাঁত বের
করে কঙ্কু মানে কঙ্কাবতীর পায়ের তলায় আধখেঁচড়া হয়ে পরে থাকবে “! শিবু হাবুলের
দিকে তাকিয়ে চোখ টিপলল! হরেন যে ভালোবেসে কঙ্কাবতীকে কঙ্কু ডাকে এটা তাদের জানা
ছিলোনা !
কমপ্লিট ! কাল মহাষষ্ঠী , মায়ের বোধনের ঠিক ক পরেই শুরু লাইভ শো! কঙ্কুর আবদারে
চার চারখানা বেনারসি কিনে দিতে হলো! মা দুগ্গা এক শাড়ী রোজ পরলে নাকি পাবলিক।
বোর হবে! এই মেয়েটা বায়না করলে হরেনের যে কি হয় নিজেও বোঝে না সে! কেমন যেন
উথালপাথাল করে মনের মধ্যে! দুলকি লাগে বুকের ভেতরে ! মায়ের শঙ্খ , চক্র , গদা
পদ্ম সব রেডি ! দুমাস ধরে লাইভ শো এর রিহার্সাল চলছে! মানে কোন দেবতা কি
ভঙ্গিতে দাঁড়াবেন তার প্রস্তুতি আর কি! ঝক্কি কি কম! এই গরমে কেউ দাঁড়াতেই
চায়না ! নেহাত হরেনকে সকলে মান্যি করে তাই নাহলে কি যে হতো !
ধরুন ! আর কিছুক্ষনের মধ্যেই আমাদের লাইভ দূর্গা দর্শন শুরু হচ্ছে! আপনাদের
সহযোগিতা একান্ত কাম্য ! হাবুল মাইক এ আরো কিছু বলার জন্য তৈরী হচ্ছিলো , তার
আগেই নসু পাল এসে চিলের মতন ছো মেরে মাইক টা নিয়ে বলতে শুরু করলো! আসলে নসু
ভিড়ের মধ্যে আটঘরার কিছু পাবলিক দেখেছে ! উত্তেজনায় তখন ওর হাত পা কাঁপছিলো !
কি বলবে কিছু বুঝতে না পেরে ইশকুলে পড়া কবিতা আওড়াতে শুরু করলো নসু- হে বঙ্গ
ভাণ্ডারে বিবিধ রতন , তা সবে অবোধ আমি অবহেলা করি! পরধন লোভে মত্ত ….! আরো
কিছু বলার আগে পল্টু ধমক লাগালো” আহ, নসুদা , থামো এবার! দেখছো না দূর্গাদর্শন
শুরু হয়েছে!
শুরু হয়ে গেছে! ওই তোেনীল সবুজ কাগজ মোড়া ময়ূর নিয়ে কাত্তিক মানে. ঘোষপাড়ার
সন্তু মিটিমিটি হাসছে ! আর ওই দেখো জগৎ সরকারের নাতনি আর নিতাই পোদ্দারের বৌ
কেমন লক্ষী সরস্বতী সেজে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে দেখো! নসু চমৎকৃত হলো!
অষ্টমীর সন্ধ্যায় লোকের ঢল নেমেছে প্যান্ডেলে ! সবকিছু ভালোভাবে উৎরে গেছে ঠিকই
তবুও মনের ছটফটানি কমছিল না কিছুতেই ! এ কটা দিন ধরে কঙ্কু মা দূর্গা
হয়েক্রমাগত মহিষাসুর মানে ওই বাটু কর্মকারের দিকে তাকাতে তাকাতে কেমন হয়ে গেছে
যেন! গতকাল লাইভ শোএর পরে স্টেজ থেকে নেমে হরেনের দিকে তাকালোই না কঙ্কাবতী !
সোজা বাটুর সঙ্গে হাসতে হাসতে চলে গেলো! মেজাজটা বিগড়ে গেলো হরেনের! নাহ,
কঙ্কুকে দুগ্গা করা উচিত হয়নি ! কাঁচা বয়েস , অবুঝ মন, কচি ছোড়া দেখলে মন
তোেগলবেই ! তার মতন মাঝবয়েসী লোককে কি আর ভালো লাগবে তখন!নিজের গালে সপাটে
দুখানা চড় বসাতে ইচ্ছে করছিলো হরেনের! কেন যে বেনারসি কেনার সময় মেয়েটাকে টাকার
খোঁটা দিলো! নাহয় হাজার কুড়ি টাকা গচ্চা যেত ! মালক্ষীর দয়ায় তোে টাকার অভাব
নেই তার!
আজ পুঁটির মনটা বড্ডো খারাপ ! রাত পোহালেই দশমী , পুজো শেষ! এবার পুজো বেশ ভালো
কেটেছে পুঁটির! ভিকু ময়রার মেয়ে বলে সইয়ের দল তাকে মোটে পাত্তা দেয় না! তবে
এবার বেশ একহাত নিয়েছে পুঁটি ! বাবা গনেশ সাজায় এবার প্যান্ডেলে খাতির বেড়েছে
তার! গাঁয়ের ছেলেপুলের দল জটলা করছে তাকে ঘিরে ! পুঁটিও এ সুযোগ ছাড়বে কেন! শো
থেকে ফেরার সময় ভিকু যে ফল মিষ্টি নৈবিদ্যের থালা থেকে উঠিয়ে নিয়ে আসে, তার বেশ
কিছুটা পরদিন প্যান্ডেলের ছেলেপুলেদের বিলিয়ে দিচ্ছে সে! আহা!! খাক না
ছেলেপুলের দল! পুজোর দিনে হাসি ফুটুক সবার মুখে! সব মিলিয়ে পুঁটির জনপ্রিয়তা
এখন তুঙ্গে ! আজ লাল চুমকি দেওয়া সালোয়ার কামিজখানা পরে নিজেকে পরীর মতন
লাগছিলো তার!
থেকে ওঠা পাঁচ বছরের ভাইটা যে তার হাত ছাড়িয়ে কখন শোএর স্টেজে উঠে পড়েছে খেয়ালই
করেনি ! হৈহৈ শুনে স্টেজের দিকে তাকালো পুঁটি আর তাকিয়ে আঁতকে উঠলো! তার জ্বরে
ভোগা ভাইটা সটান স্টেজে উঠে গনেশের সামনে মানে তাদের বাবার সামনে গিয়ে চিল-
চিৎকার জুড়েছে ! “ ও বাবা, তুমি এখানে এই নলখানা মুখে লাগিয়ে দাঁড়িয়ে কেন? “
কোন কুক্ষনে যে পুঁটি ভাইকে বলেছিলো যে তাদের বাবা মুখে শুর লাগিয়ে গনেশ হয়েছে!
এখন বোঝো ঠ্যালা ! পুঁটি বেগুনির ঠোঙা ফেলে দৌড়োলো স্টেজের দিকে! ভাইটাকে
নামাতে হবে তোে!
পুজোর শেষে মেজাজটা আবার বিগড়োলো হরেনের ! নিতাই পোদ্দার অহেতুক গলা চড়ালো
তারওপরে! সরস্বতী হওয়ার চান্স পাওয়া ইস্তক নিতাইয়ের. বৌয়ের দেমাক দেখে
ব্রহ্মতালু জ্বলছিল হরেনের! কোথায় এমন একখানা সুযোগ পেয়ে বিগলিত হবে তা নয়!
উল্টে বলে কিনা গরমে, মশার কামড় খেয়ে দাঁড়াতে হলো বলে বেশি টাকা লাগবে! এমনিতেই
মন ভালো নেই হরেনের! কঙ্কুকে নিয়ে মনের কাঁটাটা খোঁচা দিচ্ছে বারবার ! চোখের
সামনে কেবল দুগ্গা মহিষাসুর মানে কঙ্কু- বাটুর গলে পড়া যুগল মূর্তি ভেসে উঠছে
ক্রমাগত! তার ওপরে আবার এসব ঝঞ্ঝাট ! প্যান্ডেল থেকে বাড়ির দিকে যাবার জন্য
হাঁটছিলো হরেন! হঠাৎ প্যান্ডেলের পেছনে চোখ পড়তেই চমকে উঠলো! কারা ওখানে? পা
চালায় সে! কয়েক পা এগোতেই হরেনের চক্ষু চড়কগাছ ! যা ভেবেছিলো তাই!
ফিসফিস করছে! এ কি অসৈরণ ! জগৎ সরকারের কাছে এবার কেমন করে মুখ দেখাবে হরেন! কত
বলেকয়ে নাতনীটাকে জোগাড় করেছিল সে! নাহ , মান সম্মান কিছুই রইলো না আর! থাকতে
না পেরে কান পাতলো হরেন! যা শুনলো তাতে চক্ষু চরকগাছ! সন্তু এদিক ওদিক তাকালো
তারপরে মুখটা কুন্তলার কানের কাছে নিয়ে বললো” আর ভা ভা ভা লো লাগছে না, শো শো
সত্যি বলছি! এই আশ্বিন কাত্তিক মাসটা কা কা কাটলেই বা বা বাড়িতে সা সা সানাই
বাজাবো , ব ব বলে দিলুম কিন্তু! উত্তেজনায় আরো বেশি তোঁতলাচ্ছিলো সন্তু!
কুন্তলা একটা আলতো করে চিমটি কাটলো সন্তুর গালে তারপরে গলে গিয়ে মুখটা নিচু করে
বললো’ ধ্যাৎ “ ! হরেন কিছুক্ষন থমকে দাঁড়ালো তারপরে পা চালালো বাড়ির দিকে! পরের
বছর থেকে থিম পুজো বন্ধ ! খুব শিক্ষে হয়েছে তার! আর নয়! কান মলছে সে!
Bangla Golpo, Bengali Story