সমকামী প্রেমের গল্প – A Lesbian Love Story
মুখগুলো খুশিতে ভরে ওঠে। কন্যা সন্তান তাতে কি? সন্তান তো! আর এখন তো আর
মেয়েরা ছেলেদের থেকে কোন অংশেই কম যায়না। তাই ঘটা করে অন্নপ্রাশনের অনুষ্ঠান
করা হয়। অবিনাশ বাবু মেয়ের নাম রেখে ছিলেন সুমনা।
বাড়িতে বাবা মা ছাড়াও দাদু ঠাকুমার সান্নিধ্যে ভালোই দিন কাটে। সুমনার বাবা
অর্থাৎ অবিনাশ বাবু একটি কোম্পানীতে ম্যানেজমেন্টের দায়িত্বে আছেন। স্বচ্ছল
সংসার। তাই কোন কিছুই অভাব হয়না।
ছোট বেলা থেকেই দেখা যায় সুমনা যথেষ্ট সুন্দর ও মেধাবী হওয়া সত্ত্বেও কেমন যেন
একটু রিজার্ভ প্রকৃতির অর্থাৎ নিজেকে সবার কাছ থেকে আলাদা রাখার চেষ্টা করে। সে
একটু রাগী প্রকৃতির ও কোন কিছু একটা টেনশন সবসময় ওর মধ্যে কাজ করে। ছোটবেলা
থেকেই সুমনার সেরকম কোন ঘনিষ্ট বন্ধু নেই। একমাত্র পড়াশুনাকেই নিজের
ধ্যান-জ্ঞান হিসাবে ধরে ছিলো, তাই কোন বন্ধুর প্রতিই সেরকম আকর্ষণ বোধ করেনি।
যদিও স্কুলে পড়াকালীন কিছু ছেলে সুমনার দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেছিলো।
কিন্তু ও খুব একটা পাত্তা দেয়নি। ছেলেদের নিজেদেরকে অতিরিক্ত স্মার্ট হিসাবে
তুলে ধরা ও শারীরিক সম্পর্ক স্হাপনের চেষ্টা সুমনাকে ছেলেদের থেকে দূরে সরিয়ে
রেখেছিলো।
স্কুলের গন্ডী পার করে মেধাবী সুমনাকে গ্রাজুয়েশন পড়ানোর জন্য পাঠিয়ে দেওয়া হয়
দূরে একটি গার্লস কলেজে। সেখানে সুমনা একটি হোস্টেলে থাকতে শুরু করে। কিন্তু
সমস্যা দেখা যায় সুমনা একটু রাগী ও রিজার্ভ প্রকৃতির হওয়ার জন্য অন্যান্য
সহপাঠীরা তার সঙ্গে মিশতে চায়না। তাছাড়া ওর বেশিরভাগ সহপাঠীরাই ক্লাসের শেষে
এমনকি হোস্টেলে নিজেদের বয়ফ্রেন্ডদের নিয়ে আলোচনা করতো। যা সুমনার মোটেও পছন্দ
ছিলোনা। তাই তারা বিভিন্ন সময়ই সুমনাকে এড়িয়ে চলতো ও নানা অছিলায় ওকে নিয়ে
হাসাহাসি করতো।
ওকে হন্যে হয়ে খুঁজে বেড়াতে হয়। সে সময় ওকে সাহায্য করার জন্য কেউ এগিয়ে
আসেনি। এমন সময় সুমনার পাশে এসে দাঁড়ায় এক বন্ধু। নাম অবন্তি। পাশের পাড়াতেই
ওর বাড়ি। অবন্তি নিজেকে সবসময় সাধাসিধে রাখার চেষ্টা করে। কোনরকম সাজগোজ ওর
পছন্দ নয়। ক্লাস বাদ দিয়ে বেশিরভাগ সময়ই জিন্স আর টি শার্ট পড়ে থাকে। চুল
সবসময় ছোট রাখে অর্থাৎ বয়েজ কার্টই ওর পছন্দ। অবন্তি দুদিনের সমস্ত নোট সুমনাকে
দিলো, আর মজা করে বললো, এই নোটের বদলে তুমি আমাকে কি দেবে? সুমনা বললো, তুমি কি
চাও? অবন্তি বললো, এখন নয় পরে চেয়ে নেবো। এভাবেই দুজনের মধ্যে বন্ধুত্বের একটি
নতুন অধ্যায় শুরু হলো। ওরা প্রতিদিন একে অপরের পাশে বসতো। এমনকি একসাথে টিফিনও
করতো। এরপর থেকে একে অপরের হোস্টেলের ঘরে যাতায়াত শুরু হয়। প্রথম প্রথম দুজন
বন্ধু হওয়ায় দুই পরিবারের সাথে ভালো সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ওরা মাঝে মাঝে একে অপরের
বাড়িতেও থাকতো।
সহপাঠীর সাথে সেদিন অবন্তিকে আমন্ত্রন জানানো হয়। সন্ধ্যের পর অন্যান্য সব
বন্ধু চলে যাওয়ার পর অবন্তিকে সুমনাকে বলে, মনে আছে সেদিন তোর থেকে একটা জিনিস
চেয়েছিলাম। তুই আজ ওটা আমায় দিবি? সুমনা বলে কি চাস বল? অবন্তি তখন সব শক্তি
দিয়ে সুমনার ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে, ওর মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে বলে, তুই বুঝিসনা
আমি তোকে ভালোবাসি? সুমনা বলে তুই কি বলছিস? কিন্তু অবন্তির শরীরি ভালোবাসায়
সুমনা নিজেকে চিনতে পারে। সে নিজেকে অবন্তির কাছে উজার করে দেয়। অবন্তির ঠোঁটের
স্পর্শে ওর রক্তে উন্মাদনার ঢেউ উঠেছে। তাই নিজেকে আর সংযত রাখতে পারেনা। দুই
বন্ধু ঘরে গিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লো। অবন্তি ততক্ষণে সুমনার কুর্তির বুকের কাছটা
ছিঁড়ে ফেলেছে। পাগলের মতো ওর গোটা শরীরে হাত বোলাচ্ছে। অবন্তি সুমনার কুর্তি
খুলে স্তনবৃন্তে ঠোঁট রাখলে সুমনা ভালোবাসায় মরে যায়।সুমনা বুঝতে পারে, তার
প্রস্ফুটিত যৌবন এই দিনটার জন্যই অপেক্ষা করছিলো। আজ সে প্রকৃত ভালোবাসার
মানুষটাকে খুঁজে পেয়েছে। একই অবস্হা হয় অবন্তিরও। ও বুঝতে পারে শারীরিক চাহিদার
কথা। বুঝতে পারে সুমনাকে ছাড়া একটা দিনও ওর পক্ষে থাকা সম্ভব নয়। ওদের দুজনের
অন্তরঙ্গতা ক্রমেই বাড়তে থাকে।
কিন্তু ওদের দুজনের এই সম্পর্ক খুব বেশি দিন স্হায়ী হলোনা। একদিন হোস্টেল
ওয়ার্ডেন সন্দেহ বশত দরজা ঠেলা দিতে সবকিছু দেখে ফেলে। ওদের বাড়িতে খবর দেওয়া
হয়। এরপর থেকে দুজনকে সবসময় চোখে চোখে রাখা হয়। কলেজ শেষ হলে সুমনার বিয়ের জন্য
পাত্র দেখা শুরু হয়ে যায়। সুমনাকে দেখতে সুন্দর হওয়ার জন্য একদিন ছেলের বাড়ি
থেকে সুমনাকে পছন্দ হয়ে গেলো। সুমনার বাড়ি থেকেও ছেলেকে পছন্দ করলো। চোখের
পলকে বিয়ের দিন ঠিক হয়ে গেলো। অবন্তি সুমনার বিয়ের কথা শুনে কষ্ট পেলো ও কাঁদতে
লাগলো। সুমনাও প্রথমে বিয়েতে রাজি হচ্ছিলোনা। কিন্তু বাড়ির চাপে পড়ে ও মা
দিব্যি করায় বিয়েটা করতে বাধ্য হলো। কয়েকদিন পর সুমনা বিয়ে করে দূরে চলে যায়।
এরপর থেকে অবন্তিও নিজেকে মনমরা ও নিঃসঙ্গ বোধ করতে শুরু করলো।
পরকীয়া গল্প
নিতে পারছিলনা। প্রথম দিনের কিসের কথা, ঠোঁটের সেই সিক্ত উষ্ণতা সে এখনও অনুভব
করতে পারে। একদিন রাতে তার স্বামী ঘনিষ্ট হওয়ার চেষ্টা করলে, সে সমস্ত কথা
স্বামীকে খুলে বলে। আসলে সে যে সমকামী, তাই কোন পুরুষের সংস্পর্শে আসতে
অস্বস্তি ও ঘেন্না বোধ করে। সে কোন পুরুষকে মন থেকে মেনে নিতে পারেনা। সব কথা
শোনার পরেও ওর স্বামী কখনো খারাপ ব্যবহার করেনি। বরংঞ্চ সম্পূর্ণ বন্ধু সুলভ
ব্যবহার করে সবকিছু বুঝতে পারে। বুঝতে পারে যে সুমনার মতো মেয়েরা কখোনো দূর্বল
নয়। সমাজের চেনা রাস্তা দিয়ে চলেনা বলে সমাজ ওদেরকে আলাদা চোখে দেখে। অন্যের
কাছ থেকে তারা যে অসুস্হ বা অস্বাভাবিক এটা শোনার পর অনেক সময়ই তাদের নিজেদের
সাথে লড়াই করতে হয়। সুমনার এই লড়াইয়ে ওর স্বামী পাশে দাঁড়ায় ও মনোবল বাড়াতে
থাকে। ওর স্বামী বাড়িতে বাবা মাকে সবকথা খুলে বলে। এর কিছুদিনের মধ্যে সুমনার
সাথে ওর স্বামীর মিউচুয়াল ডিভোর্স হয়ে যায়।
অন্যরকম প্রেমের গল্প
অবন্তিকে দেখতে পায়। দুজনই খানিক্ষণের জন্য বাকরুদ্ধ হয়ে পড়ে। এরপর সুমনা
অবন্তিকে জড়িয়ে ধরে বলে, কিরে, কেমন আছিস? কতদিন পর দেখা। পরস্পর পরস্পরের
সম্বন্ধে জানতে পারে। অবন্তি বর্তমানে একটা প্রাইভেট কোম্পানীতে কাজ করে।
কাছাকাছি কোন ফ্ল্যাটে থাকে। সেখানে অবন্তি সুমনাকে আসতে আমন্ত্রন জানায়। পরের
দিন সন্ধ্যের সময় সুমনা অবন্তির ফ্ল্যাটে চলে আসে। অবন্তি আবার নিজের হারানো
সবকিছু খুঁজে পায় সুমনার মধ্যে। সুমনার ডিপ কাজল, কোঁকড়ানো চুল, চুরি আর
মেহেন্দীতে এতোটাই মহীভূত হয় যে সুমনাকে আর হারাতে চায়না। সত্যিই সুমনার মধ্যে
একটা শারীরিক টান আছে, এমনকি প্রবল মানসিক টানও। সমাজকে দূরে সরিয়ে সুমনা ও
অবন্তি লিভটুগেদার করে থাকার সিদ্ধান্ত নেয়।
সমকামী প্রেম
প্রায় মাস খানেক এভাবেই চলতে থাকে দুজনের সুখের জীবন। এরপর সুমনার বাবা থানায়
গিয়ে অবন্তির বিরুদ্ধে তাদের মেয়েকে অপহরনের অভিযোগ দায়ের করেন। পরিবারের পক্ষ
থেকে বলা হয় যে, পুরো ব্যাপারটাই সাজানো ও সুমনার ইচ্ছের বিরুদ্ধে জোর করে
ওখানে রাখা হয়েছে। এরপর অবন্তিকে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে আসা হয়, আর সুমনাকে
পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়। থানায় থাকাকালীন নারী পুলিশ সদস্যরা অবন্তিকে
পরীক্ষা করে। সারা শরীর হাত দিয়ে দেখা হয় সে ছেলে না মেয়ে। এরপর সমাজ ও
পরিবারের কাছে দুজনকেই বিভিন্ন রকম বিদ্রুপ ও সমালোচনার মুখে পড়তে হয়। বলা হয়,
একজন ছেলে একজন মেয়েকে ভালোবাসে, আর এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু দুজন মেয়ে এক
বিছানায় কি করতে পারে? আদপে এগুলো জিনগত সমস্যা। এরপর কোর্টে নিয়ে আসা হলে
দুজনকে বিভিন্ন রকম লজ্জাজনক পরিস্হিতির সম্মুখীন হতে হয়। সুমনার পরিবারের পক্ষ
থেকে বলা হয়, বিষয়টা আসলে একটি অপহরন। কিন্তু অবন্তি জানায় যে, ‘সে প্রকৃতই
একজন নারী ও একজন নারী হিসাবেই আরেকজন নারীকে ভালোবাসে’। সুমনা বলে, ‘একটি ছেলে
যদি একটি মেয়েকে ভালোবাসতে পারে, তাহলে একটি মেয়ে আরেকটি মেয়েকে ভালোবাসতে দোষ
কোথায়’? ভারতে ৩৭৭ ধারা লাগু থাকায় ও দুজন প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়াতে সমস্ত কিছু
শোনার পর বিচারক অবন্তিকে বেকসুর খালাস দেয়।
পরিবার বাধা হয়ে দাঁড়ায়। চলে কটুক্তি ও হাসাহাসি। তাই তারা সিদ্ধান্ত নেয়,
ভালোবাসাকে বাঁচিয়ে রাখতে তাদের মৃত্যুর প্রয়োজন। তাই চিন্তা ভাবনা করেই
ভ্যালেন্টাইন ডের আগের দিন রাতে দুজন একসঙ্গে বালি ব্রিজ থেকে ঝাঁপ দেয়। সেই
রাতে গঙ্গায় দুটি তরতাজা প্রাণের সলিল সমাধি ঘটে। থেকে যায় অসমাপ্ত ভালোবাসার
করুন কাহিনী।।
সমকামী প্রেমকে সুপ্রীম কোর্ট স্বীকৃতি দিয়েছে। কিন্তু সমকামী জুটিরা এখনও
সমাজে মুক্ত ভাবে শ্বাস নিতে পারেনা। সমাজ তথা পারিবারিক লাঞ্ছনা-বঞ্চনার মধ্যে
তাদের পড়তে হয়। পরিবর্তন শুধু এসেছে কাগজে কলমে, পরিবর্তন অধরাই থেকে গেছে
আমাদের মনে।)
ভালো থাকুন, ভালোবাসায় থাকুন। ..
Thank You, Visit Again…