Bengali News: Read the latest news on business, entertainment, tech, sports, automobile, lyrics and many more from World's leading Bengali News Paper Bong Connection
Bengali News: Read the latest news on business, entertainment, tech, sports, automobile, lyrics and many more from World's leading Bengali News Paper Bong Connection
Mahalaya Chandi Path Lyrics In Bengali (মহালয়ার চন্ডীপাঠ) Durgapuja
Loading...
মহিষাসুরমর্দিনী
রচনা – বাণীকুমার
গ্রন্থণা ও শ্লোকপাঠ – বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্র
সঙ্গীত পরিচালনা – পঙ্কজ কুমার মল্লিক
Chandi Path Lyrics In Bengali PDF
যা চণ্ডী মধুকৈটভাদিদৈত্যদলনী যা মাহিষোন্মূলিনী
যা ধূম্রেক্ষণচণ্ডমুণ্ডমথনী যা রক্তবীজাশনী ।
শক্তিঃ শুম্ভনিশুম্ভদৈত্যদলনী যা সিদ্ধিদাত্রী পরা
সা দেবী নবকোটীমূর্তিসহিতা মাং পাতু বিশ্বেশ্বরী ।।
( বিঃ দ্রঃ – সংস্কৃতে “য”-এর উচ্চারণ “য়” হয়।)
{শ্রীশ্রীচণ্ডিকার ধ্যান, শ্লোক – ৩}
[যে চণ্ডিকা মধুকৈটভাদি-দৈত্যনাশিনী, যিনি মহিষাসুরমর্দিনী, যিনি
ধূম্রলোচন-চণ্ড-মুণ্ড-সংহারিণী, যিনি রক্তবীজ-ভক্ষয়ত্রী, যে মহাশক্তি
শুম্ভ-নিশুম্ভ-অসুর-বিনশিনী ও শ্রেষ্ঠা সিদ্ধিদাত্রী এবং নবকোটী-সহচরী-পরিবৃতা,
সেই জগদীশ্বরী দেবী আমাকে পালন করুন।]
[সিংহারূঢ়া শশিশেখরা, মরকতমণির তুল্য প্রভাময়ী, চারিহস্তে শঙ্খ, চক্র ও
ধনুর্বাণ ধারিণী, ত্রিনয়ন দ্বারা শোভিতা, কেয়ূর, হার ও বলয় এবং মৃদু-মধুর
ধ্বনিযুক্তা চন্দ্রহার ও নূপুর পরিহিতা এবং রত্নে উজ্জ্বল কুণ্ডল ভূষিতা দুর্গা
আমাদের দুর্গতি নাশ করুন।]
মহামায়া সনাতনী, শক্তিরূপা, গুণময়ী।
তিনি এক, তবু প্রকাশ বিভিন্ন—
দেবী নারায়ণী,
আবার ব্রহ্মশক্তিরূপা ব্রহ্মাণী,
কখনো মহেশ্বেরী রূপে প্রকাশমানা,
কখনো বা নির্মলা কৌমারী রূপধারিণী,
কখনো মহাবজ্ররূপিণী ঐন্দ্রী,
উগ্রা শিবদূতী,
নৃমুণ্ডমালিনী চামুণ্ডা,
তিনিই আবার তমোময়ী নিয়তি।
এই সর্বপ্রকাশমানা মহাশক্তি পরমা প্রকৃতির আবির্ভাব হবে, সপ্তলোক তাই
আনন্দমগ্ন।
বাজলো তোমার আলোর বেণু,
মাতলো যে ভুবন।
আজ প্রভাতে সে সুর শুনে
খুলে দিনু মন।
অন্তরে যা লুকিয়ে রাজে,
অরুণ বীণায় সে সুর বাজে;
এই আনন্দ যজ্ঞে সবার
মধুর আমন্ত্রণ।
আজ সমীরণ আলোয় পাগল
নবীন সুরের বীণায়,
আজ শরতের আকাশবীণায়
গানের মালা বিলায়।
তোমায় হারা জীবন মম,
তোমারি আলোয় নিরুপম।
ভোরের পাখি উঠে গাহি
তোমারি বন্দন।
হে ভগবতী মহামায়া, তুমি ত্রিগুণাত্মিকা;
তুমি রজোগুণে ব্রহ্মার গৃহিণী বাগ্দেবী,
সত্ত্বগুণে বিষ্ণুর পত্নী লক্ষ্মী,
তমোগুণে শিবের বণিতা পার্বতী,
আবার ত্রিগুণাতীত তুরীয়াবস্থায় তুমি অনির্বচনীয়া, অপারমহিমময়ী, পরব্রহ্মমহিষী;
দেবী ঋষি কাত্যায়নের কন্যা কাত্যায়নী,
তিনি কন্যাকুমারী আখ্যাতা দুর্গি,
তিনিই আদিশক্তি আগমপ্রসিদ্ধমূর্তিধারী দুর্গা,
তিনি দাক্ষায়ণী সতী;
দেবী দুর্গা নিজ দেহ সম্ভূত তেজোপ্রভাবে শত্রুদহনকালে অগ্নিবর্ণা, অগ্নিলোচনা।
পূর্বকল্প অবসানের পর প্রলয়কালে সমস্ত জগৎ যখন কারণ-সলিলে পরিণত হল, ভগবান
বিষ্ণু অখিল-শক্তির প্রভাব সংহত করে সেই কারণ-সমুদ্রে রচিত অনন্ত-শয্যা
‘পরে যোগনিদ্রায় হলেন অভিভূত।
বিষ্ণুর যোগনিদ্রার অবসানকালে তাঁর নাভিপদ্ম থেকে জেগে উঠলেন ভাবী কল্পের
সৃষ্টি-বিধাতা ব্রহ্মা।
কিন্তু বিষ্ণুর কর্ণমলজাত মধুকৈটভ-অসুরদ্বয় ব্রহ্মার কর্ম, অস্তিত্ব বিনাশে
উদ্যত হতে পদ্মযোনি ব্রহ্মা যোগনিদ্রায় মগ্ন সর্বশক্তিমান বিশ্বপাতা বিষ্ণুকে
জাগরিত করবার জন্য জগতের স্থিতি-সংহারকারিণী বিশ্বেশ্বরী জগজ্জননী
হরিনেত্র-নিবাসিনী নিরূপমা ভগবতীকে স্তবমন্ত্রে করলেন উদ্বোধিত।
এই ভগবতী বিষ্ণুনিদ্রারূপা মহারাত্রি যোগনিদ্রা দেবী।
ওগো আমার আগমনী আলো,
জ্বালো প্রদীপ জ্বালো।
এই শারদের ঝঞ্ঝাবাতে
নিশার শেষে রুদ্রবাতে
নিভল আমার পথের বাতি
নিভল প্রাণের আলো।
ওগো আমার পথ দেখানো আলো
জীবনজ্যোতিরূপের সুধা ঢালো ঢালো ঢালো।
দিক হারানো শঙ্কাপথে আসবে,
অরুণ রাতে আসবে কখন আসবে,
টুটবে পথের নিবিড় আঁধার,
সকল দিশার কালো।
বাজাও আলোর কণ্ঠবীণা
ওগো পরম ভালো।
{শ্রীশ্রীচণ্ডী, প্রথম অধ্যায়— মধুকৈটভবধ, শ্লোক – ৭৩-৮২}
[আপনি লক্ষ্মী, আপনি ঈশ্বরশক্তি, আপনি হ্রী, আপনি নিশ্চয়াত্মিকা বুদ্ধি। আপনি
লজ্জা, পুষ্টি এবং তুষ্টি। আপনিই শান্তি ও ক্ষান্তি।]
খড়্গিনী শূলিনী ঘোরা গদিনী চক্রিণী তথা । ৮০
শঙ্খিনী চাপিনী বাণভুসণ্ডীপরিঘায়ুধা ।।
[আপনি খড়্গধারিণী, ত্রিশূলধারিণী, (এক হস্ত নরশির ধারণে) ভয়ঙ্করী, গদাধারিণী,
চক্রধারিণী, শঙ্খধারিণী, ধনুর্ধারিণী এবং বাণ, ভূশণ্ডী ও পরিঘাস্ত্রধারিণী।]
সৌম্যাসৌম্যতরাশেষসৌম্যেভ্যস্ত্বতিসুন্দরী । ৮১
পরা পরাণাং পরমা ত্বমেব পরমেশ্বরী ।। ৮২
[আপনি দেবগণের প্রতি সৌম্যা এবং দৈত্যগণের প্রতি ততোধিক রুদ্রা। আপনি সকল
সুন্দর বস্তু অপেক্ষাও সুন্দরী। আপনি ব্রহ্মাদিরও শ্রেষ্ঠ। আপনি সর্বপ্রধানা
দেবী এবং পরমেশ্বরের মহাশক্তি।]
তব অচিন্ত্য রূপচরিত মহিমা।
নব শোভা নব ধ্যান রূপায়িত প্রতিমা।
বিকশিল জ্যোতি প্রীতি মঙ্গল বরণে।
তুমি সাধনঘন ব্রহ্ম, গোধন সাধনী,
তব প্রেমনয়নবাতি নিখিল তারণী,
কনককান্তি ঝরিছে কান্ত বদনে।
হে মহালক্ষ্মী জননী, গৌরী, শুভদা,
জয়সঙ্গীত ধ্বনিছে তোমারি ভুবনে।
Mahalaya Lyrics in Bengali font
তখন প্রলয়ান্ধকাররূপিণী তামসী দেবী এই স্তবে প্রবুদ্ধা হয়ে বিষ্ণুর
অঙ্গপ্রত্যঙ্গ থেকে বাহির হলেন; বিষ্ণুর যোগনিদ্রা ভঙ্গ হল। বিষ্ণু সুদর্শনচক্র
চালনে মধুকৈটভের মস্তক ছিন্ন করলেন।পুনরায় ব্রহ্মা ধ্যানমগ্ন হলেন।
[আমি একাদশ রুদ্র, অষ্ট বসু, দ্বাদশ আদিত্য এবং বিশ্ব দেবতারূপে বিচরণ করি। আমি
মিত্র ও বরুণ উভয়কে ধারণ করি। আমি ইন্দ্র ও অগ্নি এবং অশ্বিনীকুমারদ্বয়কে ধারণ
করি।]
অহং সোমমাহনসং বিভর্ম্যহং
ত্বষ্টারমুত পূষণং ভগম্।
অহং দধামি দ্রবিণং হবিষ্মতে
সুপ্রাব্যে যজমানায় সুন্বতে ।। ২
[আমি দেবশত্রুহন্তা সোমদেবকে, ত্বষ্টা-নামক দেবতাকে এবং পূষা অভগ নামক
সূর্যদ্বয়কে ধারণ করি। উত্তম হবিঃযুক্ত, উপযুক্ত হবিঃ দ্বারা দেবগণের
তৃপ্তিসাধনকারী এবং বিধিপূর্বক সোমরসপ্রস্তুতকারী যজমানের জন্য যজ্ঞফলরূপ ধনাদি
আমিই বিধান করি।]
অহং রাষ্ট্রী সংগমনী বসূনাং
চিকিতুষী প্রথমা যজ্ঞিয়ানাম্ ।
তাং মা দেবা ব্যদধুঃ পুরুত্রা
ভূরিস্থাত্রাং ভূর্যাবেশয়ন্তীম্ ।। ৩
[আমিই সমগ্র জগতের ঈশ্বরী, উপাসকগণের ধনপ্রদাত্রী, পরব্রহ্মকে আত্মারূপে
সাক্ষাৎকারিণী। অতএব যজ্ঞার্হগণের মধ্যে আমিই সর্বশ্রেষ্ঠা। আমি প্রপঞ্চরূপে
বহুভাবে অবস্থিতা ও সর্বভুতে জীবরূপে প্রবিষ্টা। আমাকেই সর্বদেশে সুরনরাদি
যজমানগণ বিবিধভাবে আরাধনা করে।]
ময়া সো অন্নমত্তি যো বিপশ্যতি
যঃ প্রাণিতি য ঈং শৃণোত্যুক্তম্ ।
অমন্তবো মাং ত উপক্ষিয়ন্তি
শ্রুধি শ্রুত শ্রদ্ধিবং তে বদামি ।। ৪
[আমারই শক্তিতে সকলে আহার ও দর্শন করে, শ্বাসপ্রশ্বাসাদি নির্বাহ করে এবং উক্ত
বিষয় শ্রবণ করে। যাহারা আমাকে অন্তর্যামিনীরূপে জানে না, তাহারাই জন্মমরণাদি
ক্লেশ প্রাপ্ত হয় বা সংসারে হীন হয়। হে কীর্তিমান সখা, আমি তমাকে শ্রদ্ধালভ্য
ব্রহ্মতত্ত্ব বলছি, শ্রবণ কর।]
অহমেব স্বয়মিদং বদামি জুষ্টং
দেবেভিরুত মানুষেভিঃ ।
যং যং কাময়ে তং তমুগ্রং কৃণোমি
তং ব্রহ্মাণং তমৃষি তং সুমেধাম্ ।। ৫
[দেবগণ ও মনুষ্যগণের প্রার্থিত ব্রহ্মতত্ত্ব আমি স্বয়ং উপদেশ করিতেছি। আমি ঈদৃশ
ব্রহ্মস্বরূপিণী। আমি যাহাকে যাহাকে ইচ্ছা করি তাহাকে তাহাকেই সর্বশ্রেষ্ঠ করি।
আমি কাহাকে ব্রহ্মা করি, কাহাকে ঋষি করি এবং কাহাকেও বা অতি ব্রহ্মমেধাবান্
করি।]
অহং রুদ্রায় ধনুরাতনোমি
ব্রহ্মদ্বিষে শরবে হন্তবা উ ।
অহং জনায় সমদং কৃণোম্যহং
দ্যাবাপৃথিবী আবিবেশ ।। ৬
[ব্রাহ্মণবিদ্বেষী হিংস্র-প্রকৃতি ত্রিপুরাসুর-বধার্থ রুদ্রের ধনুকে আমিই জ্যা
সংযুক্ত করি। ভক্তজনের কল্যাণার্থ আমিই যুদ্ধ করি এবং স্বর্গে ও পৃথিবীতে
অন্তর্যামিনীরূপে আমিই প্রবেশ করিয়াছি।]
অহং সুবে পিতরমস্য মূর্ধন্
মম যোনিরপ্স্বন্তঃ সমুদ্রে ।
ততো বিতিষ্ঠে ভুবনানু বিশ্বো-
তামূং দ্যাং বর্ষ্মণোপস্পৃশামি ।। ৭
[আমিই সর্বাধার পরমাত্মার উপরে দ্যুলোককে প্রসব করিয়াছি। বুদ্ধিবৃত্তির মধ্যস্থ
যে ব্রহ্মচৈতন্য উহাই আমার অধিষ্ঠান। আমিই ভূরাদি সমস্ত লোক সর্বভূতে
ব্রহ্মরূপে বিবিধভাবে বিরাজিতা। আমিই মায়াময় দেহ দ্বারা সমগ্র দ্যুলোক
পরিব্যাপ্ত আছি।]
অহমেব বাত ইব প্রবাম্যা-
রভমাণা ভুবনানি বিশ্বা ।
পরো দিবা পর এনা পৃথিব্যৈ-
তাবতী মহিনা সংবভূব ।। ৮
[আমিই ভূরাদি সমস্ত লোক সর্বভূত সৃষ্টি করিয়া বায়ুর মতো স্বচ্ছন্দে উহার অন্তরে
বাহিরে সর্বত্র বিচরণ করি। যদিও স্বরূপতঃ আমি এই আকাশের অতীত অ পৃথিবীর অতীত
অসঙ্গ-ব্রহ্মরূপিণী, তথাপি স্বীয় মহিমায় এই সমগ্র জগদ্-রূপ ধারণ করিয়াছি।]
অপূর্ব স্ত্রীমূর্তি মহাশক্তি দেবগণের অংশসম্ভূতা; দেবগণের সমষ্টিভূত তেজোপিণ্ড
এক বরবর্ণিনী শক্তিস্বরূপিণী দেবীমূর্তি ধারণ করলেন।
এই দেবীর আনন শ্বেতবর্ণ, নেত্র কৃষ্ণবর্ণ, অধরপল্লব আরক্তিম ও করতলদ্বয়
তাম্রাভ।
তিনি কখনো বা সহস্রভুজা, কখনো বা অষ্টাদশভুজারূপে প্রকাশিত হতে লাগলেন।
এই ভীমকান্তরূপিণী দেবী ত্রিগুণা মহালক্ষ্মী, তিনিই আদ্যামহাশক্তি।
দেবী নিত্যা, তথাপি দেবগণের কার্যসিদ্ধিহেতু সর্বদেবশরীরজ তেজঃপুঞ্জ থেকে তখন
প্রকাশিত হয়েছেন বলে তাঁর এই অভিনব প্রকাশ বা আবির্ভাবই মহিষমর্দিনীর
উৎপত্তিরূপে খ্যাত হল।
দেবী সজ্জিতা হলেন অপূর্ব রণচণ্ডী মূর্তিতে।
হিমাচল দিলেন সিংহবাহন,
বিষ্ণু দিলেন চক্র,
পিনাকপাণি শঙ্কর দিলেন শূল,
যম দিলেন তাঁর দণ্ড,
কালদেব সুতীক্ষ্ণ খড়্গ,
চন্দ্র অষ্টচন্দ্র শোভা চর্ম দিলেন,
ধনুর্বাণ দিলেন সূর্য,
বিশ্বকর্মা অভেদবর্ম,
ব্রহ্মা দিলেন অক্ষমালা-কমণ্ডলু,
কুবের রত্নহার।
সকল দেবতা মহাদেবীকে নানা অলঙ্কারে অলঙ্কৃত ও বিবিধপ্রহরণে সুসজ্জিত করে
অসুরবিজয় যাত্রায় যেতে প্রার্থনা করলেন।
রণদুন্দুভিধ্বনিতে বিশ্বসংসার নিনাদিত হতে লাগল।
যাত্রার পূর্বে সুর-নরলোকবাসী সকলেই দশপ্রহরণধারিণী দশভুজা মহাশক্তিকে
ধ্যানমন্ত্রে করলেন অভিবন্দনা।
{দেবী দুর্গার ধ্যান}
জটাজূটসমাযুক্তামর্ধেন্দুকৃতশেখরাম্ ।
লোচনত্রয়সংযুক্তাং পূর্ণেন্দুসদৃশাননাম্ ।।
[দেবী জটাজূটধারিণী, তাঁর শিখর অর্ধচন্দ্র দ্বারা ভূষিত, তাঁর পূর্ণচন্দ্রের
ন্যায় কান্তিময় মুখমণ্ডল ত্রিনয়ন শোভিত।]
অতসীপুষ্পবর্ণাভাং সুপ্রতিষ্ঠাং সুলোচনাম্ ।
নবযৌবনসম্পন্নাং সর্বাভরণভূষিতাম্ ।।
[অতসী পুষ্পের ন্যায় দেবীর বর্ণ, তিনি সুপ্রতিষ্ঠিত ও সুলোচনা। নবযৌবনসম্পন্না
দেবী সবরকম অলঙ্কারে ভূষিতা।]
সুচারুদশনাং তদ্বৎ পীনোন্নত-পয়োধরাম্ ।
ত্রিভঙ্গস্থানসংস্থানাং মহিষাসুরমর্দিনীম্ ।।
[সুচারু দন্তের এবং পীনোন্নত পয়োধরের (পয়ো= অমৃত) অধিকারিণী দেবী ত্রিভঙ্গ
ভঙ্গিমায় মহিষাসুরকে দমন করছেন।]
মৃণালায়ত-সংস্পর্শ-দশবাহুসমন্বিতাম্ ।
ত্রিশূলং দক্ষিণে ধ্যেয়ং খড়্গং চক্রং ক্রমাদধঃ ।।
তীক্ষ্ণবাণং তথা শক্তিং দক্ষিণেষু বিচিন্তয়েৎ ।
[দেবী দশভুজা, তাঁর মৃণালের মত কোমল স্পর্শ। তাঁর দক্ষিণ (ডান) হস্তে ত্রিশূল,
খড়্গ, চক্র, সুতীক্ষ্ণ বাণ এবং শক্তি অবস্থিত।]
খেটকং পূর্ণচাপঞ্চ পাশমঙ্কুশমেব চ ।
ঘন্টাং বা পরশুং বাপি বামতঃ সন্নিবেশয়েৎ ।।
[দেবীর বামে খেটক, ধনু (পূর্ণচাপ), পাশ, অঙ্কুশ এবং ঘন্টা বা কুঠার (পরশু)
অবস্থিত।]
অধস্তানন্মহিষং তদ্বদ্বিশিরষ্কং প্রদর্শয়েৎ।।
রক্তারক্তীকৃতাঙ্গঞ্চ রক্তবিস্ফুরিতেক্ষণম্ ।
বেষ্টিতং নাগপাশেন ভ্রূকুটি-ভীষণাননম্ ।।
[দেবী নিচে মহিষের শরীর হতে বাহির হয়ে আসা দানবরূপধারী মহিষাসুরের শিরচ্ছেদ
করছেন। মহিষাসুরের অঙ্গ রক্তাবৃত, বিস্ফারিত চক্ষু রক্তাভ। ভ্রূকুটিকুটিল
ভীষণদর্শন মুখ করে দেবী অসুরকে নাগপাশে বেষ্টিত করে আছেন।]
কিঞ্চিদুর্দ্ধং তথা বামমঙ্গুষ্ঠং মহিষোপরি ।
দেব্যাস্তু দক্ষিণং পাদং সমং সিংহোপরি স্থিতম্ ।।
[দেবীর বাম পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ কিঞ্চিৎ উপরে ও বামে মহিষের উপর এবং ডান পা
সিংহের পিঠের মাঝে অবস্থিত।
দেবীর এই রূপ মনে সন্নিবেশ করলে প্রচণ্ডবদনা দেবী সর্বদা বলপ্রদান করেন।]
স্তূয়মানঞ্চ তদ্রূপমমরৈঃ সন্নিবেশয়েৎ ।
প্রচণ্ডবদনাং দেবীং সর্বদাং বলপ্রদাং ।।
[দেবীর এই রূপ মনে সন্নিবেশ করলে প্রচণ্ডবদনা দেবী সর্বদা বলপ্রদান করেন।]
উগ্রচণ্ডা প্রচণ্ডা চ চণ্ডোগ্রা চণ্ডনায়িকা ।
চণ্ডা চণ্ডবতী চৈব চণ্ডরূপাতি চণ্ডিকা ।।
আভিঃ শক্তিভিষ্টাভিঃ সততং পরিবেষ্টিতাম্ ।
চিন্তয়েজ্জগতাং ধাত্রীং ধর্মকামার্থমোক্ষদাং ।।
[উগ্রচণ্ডা, প্রচণ্ডা, চণ্ডোগ্রা, চণ্ডনায়িকা, চণ্ডা, চণ্ডবতী, চণ্ডরূপা,
অতিচণ্ডিকা— এই অষ্টশক্তি দারা দেবী সর্বদা পরিবৃতা। তিনি জগৎকে ধারণ করে আছেন,
তাঁর চিন্তা করলে ধর্ম, অর্থ, কাম ও মোক্ষ লাভ হয়।]
[হে দেবি, আপনি অনন্তবীর্যা বৈষ্ণবী শক্তি (বিষ্ণুর জগৎপালিনী শক্তি)। আপনি
বিশ্বের আদিকারণ মহামায়া। আপনি সমগ্র জগৎকে মোহগ্রস্ত করেছেন। আবার আপনিই
প্রসন্না হইলে ইহলকে শরণাগত ভক্তকে মুক্তি প্রদান করেন।]
বিদ্যাঃ সমস্তাস্তব দেবি ভেদাঃ
স্ত্রিয়ঃ সমস্তাঃ সকলা জগৎসু।
ত্বয়ৈকয়া পূরিতমম্বয়ৈতৎ
কা তে স্তুতিঃ স্তব্যপরাপরক্তিঃ ।। ৬
[হে দেবি, বেদাদি অষ্টাদশ বিদ্যা আপনারই অংশ। চতুঃষষ্টি-কলাযুক্তা এবং
পাতিব্রত্য, সৌন্দর্য ও তারুণ্যাদি গুণান্বিতা সকল নারীই আপনার বিগ্রহ। আপনি
জননীরূপা এবং একাকিনীই এই জগতের অন্তরে ও বাহিরে পরিব্যাপ্ত হইয়া আছেন। স্তবনীয়
বিষয়ে মুখ্য ও গৌণ উক্তির নাম স্তুতি। যখন আপনি স্বয়ং সেইসকল উক্তিরূপা, তখন
আপনার এইরূপ স্তুতি আর কি হইতে পারে?]
সর্বভূতা ইয়দা দেবী স্বর্গমুক্তিপ্রদায়িনী ।
ত্বং স্তুতা স্তুত্যে কা বা ভবন্তু পরমোক্তয়ঃ ।। ৭
[আপনি সর্বভূতস্বরূপা, স্বর্গ- ও মুক্তি-দায়িনী এবং প্রকাশরূপিণী (সৃষ্টি,
স্থিতি ও সংহাররূপ ক্রীড়াকারিণী)। এইরূপে যখন আপনার স্তব করা হয় তখন আপনার
স্তবের উপযোগী বাক্য আর কি হইতে পারে?]
সর্বস্য বুদ্ধিরূপেণ জনস্য হৃদি সংস্থিতে ।
স্বর্গাপবর্গদে দেবি নারায়ণি নমোঽস্তু তে ।। ৮
[হে দেবি, আপনি সকল ব্যক্তির হৃদয়ে বুদ্ধিরূপে অবস্থিতা এবং স্বর্গ- ও
মুক্তি-দায়িনী নারায়ণী। আপনাকে প্রণাম করি।]
ভয়েভ্যস্ত্রাহি নো দেবি দুর্গে দেবি নমোঽস্তু তে ।। ২৪
[দেবি, আপনি সর্ব-কার্য-ও কারণ-রূপিণী, সর্বেশ্বেরী, সর্বশক্তিময়ী ও
দুর্জ্ঞেয়া। দেবি, আপনি আমাদিগকে সকল আপদ হইতে রক্ষা করুন। হে নারায়াণি, আপনাকে
প্রণাম।]
এতৎ তে বদনং সৌম্যং লোচনত্রয়ভূষিতম্ ।
পাতু নঃ সর্বভূতেভ্যঃ কাত্যায়নি নমোঽস্তু তে ।। ২৫
[কাত্যায়নি, আপনার ত্রিনয়নশোভিত সৌম্য বদন আমাদিগকে সকল ভৌতিক বিকার ও
সর্বভূতের উপদ্রব হইতে রক্ষা করুক। হে নারায়াণি, আপনাকে প্রণাম।]
জ্বালাকরালমত্যুগ্রমশেষাসুরসূদনম্ ।
ত্রিশূলং পাতু নো ভীতেভদ্রকালি নমোঽস্তু তে ।। ২৬
[হে ভদ্রকালি, প্রচণ্ডদীপ্যমান, অতিতীক্ষ্ণ, অসংখ্য অসুরনাশক আপনার ত্রিশূল
আমাদিগকে সকল প্রকার ভয় হইতে রক্ষা করুক। আপনাকে প্রণাম।]
হিনস্তি দৈত্যতেজাংসি স্বনেনাপূর্য যা জগৎ ।
সা ঘন্টা পাতু নো দেবি পাপেভ্যোঽনঃ সুতানিব ।। ২৭
[দেবি, আপনার যে ঘণ্টাধ্বনি জগৎ পরিপূর্ণ করিয়া দৈত্যতেজ হরণ করে, তাহা— মাতা
যেমন পুত্রকে অমঙ্গল হইতে রক্ষা করেন— সেইরূপ আমাদিগকে সকল পাপ হইতে রক্ষা
করুক।]
অসুরাসৃগ্বসাপঙ্কচর্চিতস্তে করোজ্জ্বলঃ ।
শুভায় খড়্গ ভবতু চণ্ডিকে ত্বাং নতা বয়ম্ ।। ২৮
[চণ্ডিকে, আপনার হস্তস্থিত তেজোমর এবং অসুরের রক্তসিক্ত ও মেদলিপ্ত খড়্গ মাদের
কল্যাণসাধন করুক। আপনাকে আমরা প্রণাম করি।]
রোগানশেষানপহংসি তুষ্টা
রুষ্টা তু কামান্ সকলানভীষ্টান ।
ত্বামাশ্রিতানাং ন বিপন্নরাণাং
ত্বামাশ্রিতা হ্যাশ্রয়তাং প্রয়ান্তি ।। ২৯
[দেবি, আপনি সন্তুষ্ট হইলে সকল প্রকার (দৈহিক অ মানসিক) রোগ বিনাশ করেন। আবার
রুষ্টা হইলে অভীষ্ট (কাম্য) বস্তুসমূহ নাশ করেন। আপনার আশ্রিত ব্যক্তিদিগের
বিপদ স্থায়ি হয় না। যাঁহারা আপনার চরণাশ্রিত, তাঁহারা অন্যের আশ্রয়যোগ্য হন।]
এতং কৃতং যৎ কদনং ত্বয়াদ্য
ধর্মদ্বিষাং দেবি মহাসুরাণাম্ ।
রূপৈরনেকৈর্বহুধাত্মমূর্তিং
কৃত্বাম্বিকে তৎ প্রকরোতি কান্যা ।। ৩০
[দেবি, সম্প্রতি আপনি ব্রাহ্মী প্রভৃতি ও কালী আদি মূর্তিতে স্বীয় স্বরূপ বহু
প্রকারে প্রকটিত করিয়া ধর্মদ্বেষী মহাসুরগণের এই যে বিনাশসাধন করিলেন, অম্বিকে,
তাহা আপনি ভিন্ন অন্য কাহার দ্বারা সম্ভব হইত?]
বিদ্যাসু শাস্ত্রেষু বিবেকদীপে-
ষ্বাদ্যেষু বাক্যেষু চ কা ত্বদন্যা ।
মমত্বগর্তেঽতিমহান্ধকারে
বিভ্রাময়ত্যেতদতীব বিশ্বম্ ।। ৩১
[দেবি, সকল ঐহিক বিদ্যায়, মনুস্মৃত্যাদি প্রবৃত্তিপর ধর্মশাস্ত্রসমূহে এবং
নিবৃত্তিপর বেদান্তবাক্যসকলে মানুষকে আপনি ভিন্ন আর কে প্রবর্তিত করে? দেবি,
গভীর অজ্ঞানরূপ অন্ধকার ও মমতাপূর্ণ সংসারগর্তে মানুষকে আপনি ব্যতীত আর কে পুনঃ
পুনঃ ভ্রমণ করাইতে পারে?]
রক্ষাংসি যত্রোগবিষাশ্চ নাগা
যত্রারয়ো দস্যুবলানি যত্র ।
দাবানলো যত্র তথাব্ধিমধ্যে
তত্র স্থিতা ত্বং পরিপাসি বিশ্বম্ ।। ৩২
[যেখানে রাক্ষস, যেখানে তীব্র বিষধর সর্প, যেখানে শত্রু ও দস্যুদল সেখানে ও
সমুদ্রবক্ষে— সর্বত্র আপনি সদা বিরাজিতা থাকিয়া বিশ্ব পরিপালন করেন।]
বিশ্বেশ্বরি ত্বং পরিপাসি বিশ্বম্
বিস্বাত্মিকা ধারয়সীতি বিশ্বম্ ।
বিশ্বেশবন্দ্যা ভবতী ভবন্তি
বিশ্বাশ্রয়া যে ত্বয়ি ভক্তিনম্রাঃ ।। ৩৩
[হে জগদীশ্বরী, আপনি বিশ্ব পরিপালন করেন। আপনি বিশ্বরূপা, আপনি বিশ্ব ধারণ
করেন। আপনি ব্রহ্মাদিরও বন্দনীয়া। যাঁহারা ভক্তিপূর্বক আপনার শরণাগত হন,
তাঁহারা বিশ্বের আশ্রয়স্থল হন।]
দেবি প্রসীদ পরিপালয় নোঽরিভীতেঃ
নিত্যং যথাসুরবধাদধুনৈব সদ্যঃ ।
পাপানি সর্বজগতাঞ্চ শমং নায়াশু
উৎপাতপাকজনিতাংশ্চ মহোপসর্গান্ ।। ৩৪
[দেবি, আমাদিগের প্রতি প্রসন্না হউন। সম্প্রতি স্মরণমাত্রই আপনি যেরূপ অসুরনাশ
করিয়া আমাদিগকে রক্ষা করিলেন, সেইরূপ ভবিষ্যতেও আপনি সর্বদা আমাদিগকে শত্রুভয়
হইতে রক্ষা করিবেন। দেবি, আপনি কৃপা করিয়া জগতের সমস্ত পাপ ও অধর্মের পরিণামে
উৎপন্ন দুর্ভিক্ষ ও মহামারী প্রভৃতি উপদ্রবসকল শীঘ্র নাশ করুন।]
প্রণতানাং প্রসীদ ত্বং দেবি বিশ্বার্তিহারিণি ।
ত্রৈলোক্যবাসিনামীড্যে লোকানাং বরদা ভবঃ ।। ৩৫
[হে বিশ্বার্তিহারিণী দেবি, আপনি আমাদিগের প্রতি প্রসন্না হউন।
ত্রিভুবনবাসিগণের আরাধ্যা দেবি, আপনার চরণে প্রণত জনগনের প্রতি আপনি বরদা হউন।]
বিমানে বিমানে আলোকের গানে জাগিল ধ্বনি।
তব বীণা তারে সে সুর বিহারে কি জাগরণে।
অরুণ রবি যে নিখিল রাঙালো,
পূর্ব আঁচলে তন্দ্রা ভাঙালো,
রাঙা হিল্লোলে ধরণী যে দোলে নূপুররণি।
দেবীর অক্ষয় কৃপাকণা পেয়ে সপ্তলোক আনন্দিত।
প্রথম কল্পে দেবী কাত্যায়ান-নন্দিনী কাত্যায়নী, অষ্টাদশভুজা উগ্রচণ্ডারূপে
মহিষমর্দন করেন;
দ্বিতীয় ষোড়শভুজা ভদ্রকালীর হতে মর্দিত হয় মহিষ;
আর তৃতীয়ৈঃ বর্তমানকল্পে দশভুজা দুর্গারূপে মহাদেবী সুসজ্জিতা মহিষমর্দিনী।
জয় জয় হে মহিষাসুরমর্দিনি রম্যকপর্দিনি শৈলসুতে ।। ১৮
[হে মাতঃ! যে ভক্তগণ স্বর্ণাভবিচ্ছুরিত সিন্ধুবারি দিয়ে সিঞ্চন করে দেয় তোমার
বেদি, তারা কি ইন্দ্রপত্নী সচীর মতো সুন্দরী ললনার বাহুবেষ্টনের
সুখানুভূতিলাভের যোগ্য নয়? কিন্তু (তার আকাঙ্ক্ষা না করে)বাগ্দেবী সরস্বতী
কর্তৃক সেবিত মঙ্গলবিধায়ক তোমার শ্রীচরণযুগলের আমি শরণ গ্রহণ করি। হে
হিমালয়দুহিতা, সুন্দর জটাজূটধারিণী পার্বতী, তুমিই মহিষাসুর সংহার করেছ, তোমার
জয় হোক।]
[যিনি সকল প্রাণীতে চতুর্দশ ইন্দ্রিয়ের অধিষ্ঠাত্রী দেবতারূপে বিরাজিতা এবং
যিনি পৃথিবী আদি পঞ্চ স্থূল ও পঞ্চ সূক্ষ্ম ভূতের প্রেরয়ত্রী, সেই
বিশ্বব্যাপিকা ব্রহ্মশক্তিরূপা দেবীকে পুনঃ পুনঃ প্রণাম।]
চিতিরূপেণ যা কৃৎস্নমেতদ্ ব্যাপ্যা স্থিতা জগৎ ।
নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ ।। ৭৮-৮০
[যিনি চিৎশক্তিরূপে এই সমগ্র জগৎ ব্যাপিয়া অবস্থিতা, তাঁহাকে নমস্কার। তাঁহাকে
নমস্কার। তাঁহাকে নমস্কার, নমস্কার, নমস্কার।]
হে চিন্ময়ী, হিমগিরি থেকে এলে,
এলে তারে রেখে নির্মল প্রাতে।
বসুন্ধরা যে সুবিমল সাজে অঞ্জলি হাতে।
নবনীলিমায় বাজে মহাভেরী,
দিকে দিকে তব মাধুরি যে হেরি,
সুললিত তালে তালে সুধা আনে আলোকেরি সাথে।
সাজাব যে ডালা, গাঁথিব যে মালা জ্যোতির মন্ত্রে,
তাই অন্তরে অমৃত যে ভরে পুলক তন্ত্রে।
বাণী মহাবর অম্লান মনে,
জননী গো নমি রাতুল চরণে,
পূজায় উল্লাসে ধরণী যে হাসে সুরভিত বাতে।
শ্রীশ্রীচণ্ডিকা গুণাতীতা ও গুণময়ী।
সগুণ অবস্থায় দেবী চণ্ডিকা অখিলবিশ্বের প্রকৃতিস্বরূপিণী।
তিনি পরিণামিনী নিত্যার্দিভ্যর্চৈতন্যসৃষ্টিপ্রক্রিয়ায়
(নিত্যঃ-আদিভ্যঃ-চৈতন্য-সৃষ্টি-প্রক্রিয়ায়) যে শক্তির মধ্য দিয়ে ক্রিয়াশীলরূপে
অভিব্যক্ত হন, সেই শক্তি বাক্ অথবা সরস্বতী;
তাঁর স্থিতিকালোচিত শক্তির নাম শ্রী বা লক্ষ্মী;
আবার সংহারকালে তাঁর যে শক্তির ক্রিয়া দৃষ্ট হয় তা-ই রুদ্রাণী দুর্গা।
একাধারে এই ত্রিমূর্তির আরাধনাই দুর্গোৎসব।
এই তিন মাতৃমূর্তির পূজায় আরত্রিকে মানবজীবনের কামনা, সাধনা সার্থক হয়,
চতুর্বর্গ (ধর্ম, অর্থ, কাম, মোক্ষ) লাভ করে মর্তলোক।
অমল কিরণে ত্রিভুবন-মন-হারিণী।
হেরিনু তোমার রূপে করুণা নাবনী,
নমি নমি নমি নিখিল চিতচারিণী,
জাগো পুলক নিত্য নূপুরে জননী।
তোমারেই পূজিছে দেবদেবী দ্বারে দ্বারে,
রাগিণী ধ্বনিছে আকাশবীণার তারে,
তনু-মন-প্রাণ নিবেদি তোমারে মনে।
প্রেম সুর ধন পূজা রূপের এ ধরণী
নমি জগতের সকল ক্ষেমকারিণী
লভিনু তোমার প্রেমে করুণা লাবণি।
ষড়ৈশ্বর্যময়ী দেবী নিত্যা হয়েও বারংবার আবির্ভূতা হন।