Bangla Choto Kobita (বাংলার সেরা ছোট কবিতা)
আপনি কি ইন্টারনেট এ বাংলা ছোট কবিতা (
Bangla Choto Kobita )
খুঁজছেন ? বাঙালি মাত্রই কবিতা প্রেমী। তাই আপিনার জন্য নিয়ে এসেছি বাংলার শ্রেষ্ঠ কবিদের লেখা সেরা সব বাংলা ছোট কবিতা। এখনই আপনি পাবেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ থেকে হুমায়ুন আহমেদ বাংলার সেরা সব কবিদের লেখা প্রেমরর কবিতা, রাজনৈতিক কবিতা থেকে শুরু করে আপনার মনের মতো সকল কবিতা। ….তো, চলুন শুরু করা আজকে।..
Bangla Choto Kobita Sms
অনন্ত প্রেম
– রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
তোমারেই যেন ভালোবাসিয়াছি
শত রূপে শত বার
জনমে জনমে, যুগে যুগে অনিবার।
চিরকাল ধরে মুগ্ধ হৃদয়
গাঁথিয়াছে গীতহার,
কত রূপ ধরে পরেছ গলায়,
নিয়েছ সে উপহার
জনমে জনমে, যুগে যুগে অনিবার।
যত শুনি সেই অতীত কাহিনী,
প্রাচীন প্রেমের ব্যথা,
অতি পুরাতন বিরহমিলনকথা,
অসীম অতীতে চাহিতে চাহিতে
দেখা দেয় অবশেষে
কালের তিমিররজনী ভেদিয়া
তোমারি মুরতি এসে,
চিরস্মৃতিময়ী ধ্রুবতারকার বেশে।
আমরা দুজনে ভাসিয়া এসেছি
যুগল প্রেমের স্রোতে
অনাদিকালের হৃদয়-উৎস হতে।
আমরা দুজনে করিয়াছি খেলা
কোটি প্রেমিকের মাঝে
বিরহবিধুর নয়নসলিলে,
মিলনমধুর লাজে—
পুরাতন প্রেম নিত্যনূতন সাজে।
আজি সেই চিরদিবসের প্রেম
অবসান লভিয়াছে
রাশি রাশি হয়ে তোমার পায়ের কাছে।
নিখিলের সুখ, নিখিলের দুখ,
নিখিল প্রাণের প্রীতি,
একটি প্রেমের মাঝারে মিশেছে
সকল প্রেমের স্মৃতি—
সকল কালের সকল কবির গীতি।
======
কৃষ্ণকলি
– রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
কৃষ্ণকলি আমি তারেই বলি,
কালো তারে বলে গাঁয়ের লোক।
মেঘলাদিনে দেখেছিলেম মাঠে
কালো মেয়ের কালো হরিণ-চোখ।
ঘোমটা মাথায় ছিলনা তার মোটে,
মুক্তবেণী পিঠের ‘পরে লোটে।
কালো? তা সে যতই কালো হোক,
দেখেছি তার কালো হরিণ-চোখ।
ঘন মেঘে আঁধার হল দেখে
ডাকতেছিল শ্যামল দুটি গাই,
শ্যামা মেয়ে ব্যস্ত ব্যাকুল পদে
কুটির হতে ত্রস্ত এল তাই।
আকাশ-পানে হানি যুগল ভুরু
শুনলে বারেক মেঘের গুরুগুরু।
কালো? তা সে যতই কালো হোক,
দেখেছি তার কালো হরিণ-চোখ।
পূবে বাতাস এল হঠাত্ ধেয়ে,
ধানের ক্ষেতে খেলিয়ে গেল ঢেউ।
আলের ধারে দাঁড়িয়েছিলেম একা,
মাঠের মাঝে আর ছিল না কেউ।
আমার পানে দেখলে কিনা চেয়ে,
আমি জানি আর জানে সেই মেয়ে।
কালো? তা সে যতই কালো হোক,
দেখেছি তার কালো হরিণ-চোখ।
এমনি করে কাজল কালো মেঘ
জ্যৈষ্ঠমাসে আসে ঈশান কোণে।
এমনি করে কালো কোমল ছায়া
আষাঢ়মাসে নামে তমাল-বনে।
এমনি করে শ্রাবণ-রজনীতে
হঠাত্ খুশি ঘনিয়ে আসে চিতে।
কালো? তা সে যতই কালো হোক,
দেখেছি তার কালো হরিণ-চোখ।
কৃষ্ণকলি আমি তারেই বলি,
আর যা বলে বলুক অন্য লোক।
দেখেছিলেম ময়নাপাড়ার মাঠে
কালো মেয়ের কালো হরিণ-চোখ।
মাথার পরে দেয়নি তুলে বাস,
লজ্জা পাবার পায়নি অবকাশ।
কালো? তা সে যতই কালো হোক,
দেখেছি তার কালো হরিণ-চোখ।
======
তালগাছ
-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
তালগাছ এক পায়ে দাঁড়িয়ে
সব গাছ ছাড়িয়ে
উঁকি মারে আকাশে।
মনে সাধ, কালো মেঘ ফুঁড়ে যায়,
একেবারে উড়ে যায়;
কোথা পাবে পাখা সে?
তাই তো সে ঠিক তার মাথাতে
গোল গোল পাতাতে
ইচ্ছাটি মেলে তার, –
মনে মনে ভাবে, বুঝি ডানা এই,
উড়ে যেতে মানা নেই
বাসাখানি ফেলে তার।
সারাদিন ঝরঝর থত্থর
কাঁপে পাতা-পত্তর,
ওড়ে যেন ভাবে ও,
মনে মনে আকাশেতে বেড়িয়ে
তারাদের এড়িয়ে
যেন কোথা যাবে ও।
তার পরে হাওয়া যেই নেমে যায়,
পাতা কাঁপা থেমে যায়,
ফেরে তার মনটি
যেই ভাবে, মা যে হয় মাটি তার
ভালো লাগে আরবার
পৃথিবীর কোণটি।
======
Bengali Choto Kobita
জুতা আবিষ্কার
–রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
কহিলা হবু, ‘শুন গো গোবুরায়,
কালিকে আমি ভেবেছি সারা রাত্র-
মলিন ধূলা লাগিবে কেন পায়
ধরণী‐মাঝে চরণ‐ফেলা মাত্র!
তোমরা শুধু বেতন লহ বাঁটি,
রাজার কাজে কিছুই নাহি দৃষ্টি।
আমার মাটি লাগায় মোরে মাটি,
রাজ্যে মোর একি এ অনাসৃষ্টি!
শীঘ্র এর করিবে প্রতিকার,
নহিলে কারো রক্ষা নাহি আর।’
শুনিয়া গোবু ভাবিয়া হল খুন,
দারুণ ত্রাসে ঘর্ম বহে গাত্রে।
পণ্ডিতের হইল মুখ চুন,
পাত্রদের নিদ্রা নাহি রাত্রে।
রান্নাঘরে নাহিকো চড়ে হাঁড়ি,
কান্নাকাটি পড়িল বাড়িমধ্যে,
অশ্রুজলে ভাসায়ে পাকা দাড়ি
কহিলা গোবু হবুর পাদপদ্মে,
‘যদি না ধুলা লাগিবে তব পায়ে,
পায়ের ধুলা পাইব কী উপায়ে!’
শুনিয়া রাজা ভাবিল দুলি দুলি,
কহিল শেষে, ‘কথাটা বটে সত্য—
কিন্তু আগে বিদায় করো ধুলি,
ভাবিয়ো পরে পদধুলির তত্ত্ব।
ধুলা‐অভাবে না পেলে পদধুলা
তোমরা সবে মাহিনা খাও মিথ্যে,
কেন বা তবে পুষিনু এতগুলা
উপাধি‐ধরা বৈজ্ঞানিক ভৃত্যে?
আগের কাজ আগে তো তুমি সারো,
পরের কথা ভাবিয়ো পরে আরো।’
আঁধার দেখে রাজার কথা শুনি,
যতনভরে আনিল তবে মন্ত্রী
যেখানে যত আছিল জ্ঞানীগুণী
দেশে বিদেশে যতেক ছিল যন্ত্রী।
বসিল সবে চশমা চোখে আঁটি,
ফুরায়ে গেল উনিশ পিপে নস্য।
অনেক ভেবে কহিল, ‘গেলে মাটি
ধরায় তবে কোথায় হবে শস্য?’
কহিল রাজা, ‘তাই যদি না হবে,
পণ্ডিতেরা রয়েছ কেন তবে?’
সকলে মিলি যুক্তি করি শেষে
কিনিল ঝাঁটা সাড়ে সতেরো লক্ষ,
ঝাঁটের চোটে পথের ধুলা এসে
ভরিয়ে দিল রাজার মুখ বক্ষ।
ধুলায় কেহ মেলিতে নারে চোখ,
ধুলার মেঘে পড়িল ঢাকা সূর্য।
ধুলার বেগে কাশিয়া মরে লোক,
ধুলার মাঝে নগর হল উহ্য।
কহিল রাজা, ‘করিতে ধুলা দূর,
জগৎ হল ধুলায় ভরপুর!’
তখন বেগে ছুটিল ঝাঁকে ঝাঁক
মশক কাঁখে একুশ লাখ ভিস্তি।
পুকুরে বিলে রহিল শুধু পাঁক,
নদীর জলে নাহিক চলে কিস্তি।
জলের জীব মরিল জল বিনা,
ডাঙার প্রাণী সাঁতার করে চেষ্টা-
পাঁকের তলে মজিল বেচা‐কিনা,
সর্দিজ্বরে উজাড় হল দেশটা।
কহিল রাজা, এমনি সব গাধা
ধুলারে মারি করিয়া দিল কাদা!
আবার সবে ডাকিল পরামর্শে;
বসিল পুন যতেক গুণবন্ত
ঘুরিয়া মাথা হেরিল চোখে সর্ষে,
ধুলার হায় নাহিক পায় অন্ত।
কহিল, মহী মাদুর দিয়ে ঢাকো,
ফরাশ পাতি করিব ধুলা বন্ধ।
কহিল কেহ, রাজারে ঘরে রাখো,
কোথাও যেন থাকে না কোনো রন্ধ্র।
ধুলার মাঝে না যদি দেন পা
তা হলে পায়ে ধুলা তো লাগে না।
কহিল রাজা, সে কথা বড়ো খাঁটি,
কিন্তু মোর হতেছে মনে সন্ধ,
মাটির ভয়ে রাজ্য হবে মাটি
দিবসরাতি রহিলে আমি বন্ধ।
কহিল সবে, চামারে তবে ডাকি
চর্ম দিয়া মুড়িয়া দাও পৃথ্বী।
ধূলির মহী ঝুলির মাঝে ঢাকি
মহীপতির রহিবে মহাকীর্তি।
কহিল সবে, হবে সে অবহেলে,
যোগ্যমতো চামার যদি মেলে।
রাজার চর ধাইল হেথা হোথা,
ছুটিল সবে ছাড়িয়া সব কর্ম।
যোগ্যমতো চামার নাহি কোথা,
না মিলে তত উচিত‐মতো চর্ম।
তখন ধীরে চামার‐কুলপতি
কহিল এসে ঈষৎ হেসে বৃদ্ধ,
বলিতে পারি করিলে অনুমতি,
সহজে যাহে মানস হবে সিদ্ধ।
নিজের দুটি চরণ ঢাকো, তবে
ধরণী আর ঢাকিতে নাহি হবে।
কহিল রাজা, এত কি হবে সিধে,
ভাবিয়া মল সকল দেশ‐শুদ্ধ!
মন্ত্রী কহে, বেটারে শূল বিঁধে
কারার মাঝে করিয়া রাখো রুদ্ধ।
রাজার পদ চর্মআবরণে
ঢাকিল বুড়া বসিয়া পদোপান্তে।
মন্ত্রী কহে, আমারো ছিল মনে
কেমনে বেটা পেরেছে সেটা জানতে।
সেদিন হতে চলিল জুতা পরা
বাঁচিল গোবু, রক্ষা পেল ধরা।
======
আরো পড়ুন,
Premik Kobita Lyrics
লিচু চোর
–কাজী নজরুল ইসলাম
কহিলা হবু, ‘শুন গো গোবুরায়,
কালিকে আমি ভেবেছি সারা রাত্র-
মলিন ধূলা লাগিবে কেন পায়
ধরণী‐মাঝে চরণ‐ফেলা মাত্র!
তোমরা শুধু বেতন লহ বাঁটি,
রাজার কাজে কিছুই নাহি দৃষ্টি।
আমার মাটি লাগায় মোরে মাটি,
রাজ্যে মোর একি এ অনাসৃষ্টি!
শীঘ্র এর করিবে প্রতিকার,
নহিলে কারো রক্ষা নাহি আর।’
শুনিয়া গোবু ভাবিয়া হল খুন,
দারুণ ত্রাসে ঘর্ম বহে গাত্রে।
পণ্ডিতের হইল মুখ চুন,
পাত্রদের নিদ্রা নাহি রাত্রে।
রান্নাঘরে নাহিকো চড়ে হাঁড়ি,
কান্নাকাটি পড়িল বাড়িমধ্যে,
অশ্রুজলে ভাসায়ে পাকা দাড়ি
কহিলা গোবু হবুর পাদপদ্মে,
‘যদি না ধুলা লাগিবে তব পায়ে,
পায়ের ধুলা পাইব কী উপায়ে!’
শুনিয়া রাজা ভাবিল দুলি দুলি,
কহিল শেষে, ‘কথাটা বটে সত্য—
কিন্তু আগে বিদায় করো ধুলি,
ভাবিয়ো পরে পদধুলির তত্ত্ব।
ধুলা‐অভাবে না পেলে পদধুলা
তোমরা সবে মাহিনা খাও মিথ্যে,
কেন বা তবে পুষিনু এতগুলা
উপাধি‐ধরা বৈজ্ঞানিক ভৃত্যে?
আগের কাজ আগে তো তুমি সারো,
পরের কথা ভাবিয়ো পরে আরো।’
আঁধার দেখে রাজার কথা শুনি,
যতনভরে আনিল তবে মন্ত্রী
যেখানে যত আছিল জ্ঞানীগুণী
দেশে বিদেশে যতেক ছিল যন্ত্রী।
বসিল সবে চশমা চোখে আঁটি,
ফুরায়ে গেল উনিশ পিপে নস্য।
অনেক ভেবে কহিল, ‘গেলে মাটি
ধরায় তবে কোথায় হবে শস্য?’
কহিল রাজা, ‘তাই যদি না হবে,
পণ্ডিতেরা রয়েছ কেন তবে?’
সকলে মিলি যুক্তি করি শেষে
কিনিল ঝাঁটা সাড়ে সতেরো লক্ষ,
ঝাঁটের চোটে পথের ধুলা এসে
ভরিয়ে দিল রাজার মুখ বক্ষ।
ধুলায় কেহ মেলিতে নারে চোখ,
ধুলার মেঘে পড়িল ঢাকা সূর্য।
ধুলার বেগে কাশিয়া মরে লোক,
ধুলার মাঝে নগর হল উহ্য।
কহিল রাজা, ‘করিতে ধুলা দূর,
জগৎ হল ধুলায় ভরপুর!’
তখন বেগে ছুটিল ঝাঁকে ঝাঁক
মশক কাঁখে একুশ লাখ ভিস্তি।
পুকুরে বিলে রহিল শুধু পাঁক,
নদীর জলে নাহিক চলে কিস্তি।
জলের জীব মরিল জল বিনা,
ডাঙার প্রাণী সাঁতার করে চেষ্টা-
পাঁকের তলে মজিল বেচা‐কিনা,
সর্দিজ্বরে উজাড় হল দেশটা।
কহিল রাজা, এমনি সব গাধা
ধুলারে মারি করিয়া দিল কাদা!
আবার সবে ডাকিল পরামর্শে;
বসিল পুন যতেক গুণবন্ত
ঘুরিয়া মাথা হেরিল চোখে সর্ষে,
ধুলার হায় নাহিক পায় অন্ত।
কহিল, মহী মাদুর দিয়ে ঢাকো,
ফরাশ পাতি করিব ধুলা বন্ধ।
কহিল কেহ, রাজারে ঘরে রাখো,
কোথাও যেন থাকে না কোনো রন্ধ্র।
ধুলার মাঝে না যদি দেন পা
তা হলে পায়ে ধুলা তো লাগে না।
কহিল রাজা, সে কথা বড়ো খাঁটি,
কিন্তু মোর হতেছে মনে সন্ধ,
মাটির ভয়ে রাজ্য হবে মাটি
দিবসরাতি রহিলে আমি বন্ধ।
কহিল সবে, চামারে তবে ডাকি
চর্ম দিয়া মুড়িয়া দাও পৃথ্বী।
ধূলির মহী ঝুলির মাঝে ঢাকি
মহীপতির রহিবে মহাকীর্তি।
কহিল সবে, হবে সে অবহেলে,
যোগ্যমতো চামার যদি মেলে।
রাজার চর ধাইল হেথা হোথা,
ছুটিল সবে ছাড়িয়া সব কর্ম।
যোগ্যমতো চামার নাহি কোথা,
না মিলে তত উচিত‐মতো চর্ম।
তখন ধীরে চামার‐কুলপতি
কহিল এসে ঈষৎ হেসে বৃদ্ধ,
বলিতে পারি করিলে অনুমতি,
সহজে যাহে মানস হবে সিদ্ধ।
নিজের দুটি চরণ ঢাকো, তবে
ধরণী আর ঢাকিতে নাহি হবে।
কহিল রাজা, এত কি হবে সিধে,
ভাবিয়া মল সকল দেশ‐শুদ্ধ!
মন্ত্রী কহে, বেটারে শূল বিঁধে
কারার মাঝে করিয়া রাখো রুদ্ধ।
রাজার পদ চর্মআবরণে
ঢাকিল বুড়া বসিয়া পদোপান্তে।
মন্ত্রী কহে, আমারো ছিল মনে
কেমনে বেটা পেরেছে সেটা জানতে।
সেদিন হতে চলিল জুতা পরা
বাঁচিল গোবু, রক্ষা পেল ধরা।
======
পথহারা
– কাজী নজরুল ইসলাম
বেলা শেষে উদাস পথিক ভাবে,
সে যেন কোন অনেক দূরে যাবে –
উদাস পথিক ভাবে।
‘ঘরে এস’ সন্ধ্যা সবায় ডাকে,
‘নয় তোরে নয়’ বলে একা তাকে;
পথের পথিক পথেই বসে থাকে,
জানে না সে কে তাহারে চাবে।
উদাস পথিক ভাবে।
বনের ছায়া গভীর ভালোবেসে
আঁধার মাথায় দিগবধূদের কেশে,
ডাকতে বুঝি শ্যামল মেঘের দেশে
শৈলমূলে শৈলবালা নাবে –
উদাস পথিক ভাবে।
বাতি আনি রাতি আনার প্রীতি,
বধূর বুকে গোপন সুখের ভীতি,
বিজন ঘরে এখন সে গায় গীতি,
একলা থাকার গানখানি সে গাবে-
উদাস পথিক ভাবে।
হঠাৎ তাহার পথের রেখা হারায়
গহন বাঁধায় আঁধার-বাঁধা কারায়,
পথ-চাওয়া তার কাঁদে তারায় তারায়
আর কি পূবের পথের দেখা পাবে
উদাস পথিক ভাবে।
======
Bangla Choto Premer Kobita
আপন পিয়াসী
– কাজী নজরুল ইসলাম
আমার আপনার চেয়ে আপন যে জন
খুঁজি তারে আমি আপনার,
আমি শুনি যেন তার চরণের ধ্বনি
আমারি তিয়াসী বাসনায়।।
আমারই মনের তৃষিত আকাশে
কাঁদে সে চাতক আকুল পিয়াসে,
কভু সে চকোর সুধা-চোর আসে
নিশীথে স্বপনে জোছনায়।।
আমার মনের পিয়াল তমালে হেরি তারে স্নেহ-মেঘ-শ্যাম,
অশনি-আলোকে হেরি তারে থির-বিজুলি-উজল অভিরাম।।
আমারই রচিত কাননে বসিয়া
পরানু পিয়ারে মালিকা রচিয়া,
সে মালা সহসা দেখিনু জাগিয়া,
আপনারি গলে দোলে হায়।।
======
মুনাজাত
– কাজী নজরুল ইসলাম
আমারে সকল ক্ষুদ্রতা হতে
বাঁচাও প্রভু উদার।
হে প্রভু! শেখাও -নীচতার চেয়ে
নীচ পাপ নাহি আর।
যদি শতেক জন্ম পাপে হই পাপী,
যুগ-যুগান্ত নরকেও যাপি,
জানি জানি প্রভু, তারও আছে ক্ষমা-
ক্ষমা নাহি নীচতার।।
ক্ষুদ্র করো না হে প্রভু আমার
হৃদয়ের পরিসর,
যেন সম ঠাঁই পায়
শত্রু-মিত্র-পর।
নিন্দা না করি ঈর্ষায় কারো
অন্যের সুখে সুখ পাই আরো,
কাঁদি তারি তরে অশেষ দুঃখী
ক্ষুদ্র আত্মা তার।।
বিবাহিতাকে
– জয় গোস্বামী
কিন্তু ব্যাপারটা হচ্ছে, তুমি আমার সামনে দাড়ালেই আমি
তোমার ভিতরে একটা বুনো ঝোপ দেখতে পাই।
ওই ঝোপে একটা মৃতদেহ ঢাকা দেওয়া আছে।
অনেকদিন ধরে আছে। কিন্তু আশ্চর্য যে
এই মৃতদেহ জল, বাতাস, রৌদ্র ও সকলপ্রকার
কীট-বীজাণুকে প্রতিরোধ করতে পারে। এর পচন নেই।
বন্য প্রাণীরাও এর কাছে ঘেঁষে না।
রাতে আলো বেরোয় এর গা থেকে।
আমি জানি, মৃতদেহটা আমার।
কিন্তু ব্যাপারটা হচ্ছে, এই জারিজুরি এবার ফাঁস হওয়া প্রয়োজন।
আর তা হবেও, যেদিন চার পায়ে গুঁড়ি মেরে গিয়ে
পা কামড়ে ধরে, ওটাকে, ঝোপ থেকে
টেনে বার করব আমি।
======
হৃদপিন্ড এক ঢিবি মাটি
– জয় গোস্বামী
হৃদপিণ্ড এক ঢিবি মাটি
তার উপরে আছে খেলবার
হাড়। পাশা। হাড়।
হৃদপিণ্ড, মাটি এক ঢিবি
তার উপরে শাবল কোদাল চালাবার
অধিকার, নিবি?
চাবড়ায় চাবড়ায় উঠে আসা
মাটি মাংস মাটি মাংস মাটি
পাশা। হাড়। পাশা।
দূরে ক্ষতবিক্ষত পৃথিবী
জলে ভেসে রয়েছে এখনো
তাকে একমুঠো, একমাটি
হৃদপিণ্ড, দিবি?
======
টেলিফোনে প্রস্তাব
– নির্মলেন্দু গুন
আমি জানি, আমাদের কথার ভিতরে এমন কিছুই নেই,
অনর্থ করলেও যার সাহায্যে পরস্পরের প্রতি আমাদের
দুর্বলতা প্রমাণ করা সম্ভব। আমিও তো তোমার মতোই
অসম্পর্কিত-জ্ঞানে এতদিন উপস্থাপন করেছি আমাকে।
তুমি যখন টেলিফোন হয়ে প্রবেশ করেছো আমার কর্ণে-
আমার অপেক্ষাকাতর হৃৎপিণ্ডের সামান্য কম্পনও আমি
তোমাকে বুঝতে দিই নি। দুর্বলতা ধরা পড়ে যায় পাছে।
তুমিও নিষ্ঠুর কম নও, তুমি বুঝতে দাওনা কিছু। জানি,
আমার কাছেই তুমি শিখেছিলে এই লুকোচুরি করা খেলা।
কিন্তু এখন, যখন ক্রমশ ফুরিয়ে আসছে আমাদের বেলা,
তখন ভেতরের চঞ্চলতাকে আমরা আর কতটা লুকাবো?
অস্ত যাবার আগে প্রবল সূর্যও চুম্বন করে পর্বত শিখর,
আর আমরা তো দুর্বল মানুষ, মিলনে বিশ্বাসী নর-নারী।
কার ভয়ে, কী প্রয়োজনে আমরা তাহলে শামুকের মতো
স্পর্শমাত্র ভিতরে লুকাই আমাদের পল্লবিত বাসনার শূঁড়।
তার চেয়ে চল এক কাজ করি, তুমি কান পেতে শোনো,
তুমি শুধু শোনো, আর আমি শুধু বলি, বলি, ভালবাসি।
======
স্ববিরোধী
– নির্মলেন্দু গুণ
আমি জন্মেছিলাম এক বিষণ্ন বর্ষায়,
কিন্তু আমার প্রিয় ঋতু বসন্ত।
আমি জন্মেছিলাম এক আষাঢ় সকালে,
কিন্তু ভালোবাসি চৈত্রের বিকেল।
আমি জন্মেছিলাম দিনের শুরুতে,
কিন্তু ভালোবাসি নিঃশব্দ নির্জন নিশি।
আমি জন্মেছিলাম ছায়াসুনিবিড় গ্রামে,
ভালোবাসি বৃক্ষহীন রৌদ্রদগ্ধ ঢাকা।
জন্মের সময় আমি খুব কেঁদেছিলাম,
এখন আমার সবকিছুতেই হাসি পায়।
আমি জন্মের প্রয়োজনে ছোট হয়েছিলাম,
এখন মৃত্যুর প্রয়োজনে বড় হচ্ছি।
======
তোমার পায়ের নিচে পৃথিবীর ঘাস
– নির্মলেন্দু গুণ
যখন তোমাকে বলি: ‘ভালবাসি’।
তার মানে এই নয়, আমি তুমি ছাড়া
আর কিছু ভালই বাসি না।
যখন তোমাকে বলি: ‘ভালবাসি।’
পাশাপাশি আমি কি তখন দেখি না
আকাশে মেঘ? পাতার আড়ালে ফুল?
ফুলের আড়ালে পাখি? তোমাকে দেখার আগে
আমি আড়চোখে পৃথিবীর পৃথিবীকে দেখি?
তোমার শাড়ির পাড়ে লেগে থাকে ভোরের শিশির।
তোমার পায়ের রাঙা গোড়ালিকে ঘিরে
বনের সবুজ ঘাসে মনের গোধূলি খেলা করে।
তখন হঠাৎ ভাবি তোমাকে বেসেছি ভালো,
তোমার পায়ের নিচে পৃথিবীর ঘাস আছে বলে।
======
বউ
– নির্মলেন্দু গুণ
কে কবে বলেছে হবে না? হবে,বউ থেকে হবে।
একদিন আমিও বলেছিঃ ‘ওসবে হবে না ।’
বাজে কথা। আজ বলি,হবে,বউ থেকে হবে।
বউ থেকে হয় মানুষের পুনর্জন্ম,মাটি,লোহা,
সোনার কবিতা,–কী সে নয়?
গোলাপ,শেফালি,যুঁই,ভোরের আকাশে প্রজাপতি,
ভালোবাসা,ভাগ্য,ভাড়াবাড়ি ইতিপূর্বে এভাবে মিশেনি।
ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল,দুইজন্ম এবার মিশেছে, দেখা যাক।
হতচ্ছাড়া ব্যর্থ প্রেম,গাঁজা,মদ,নৈঃসঙ্গ আমার
ভালোবেসে হে তরুণ,তোমাকে দিলাম,তুমি নাও।
যদি কোনদিন বড় কবি হও,আমার সাফল্য
কতদূর একদিন তুমি তা বুঝিবে।
আমি কতো ভালোবাসা দু’পায়ে মাড়িয়ে অবশেষে,
কল্পনার মেঘলোক ছেড়ে পৌঁছেছি বাস্তব মেঘে।
আজ রাত বৃষ্টি হবে মানুষের চিরকাম্য দাবির ভিতরে।
তার শয্যাপাশে আমার হয়েছে স্থান,মুখোমুখি,
অনায়াসে আমি তা বলি না,বলে যারা জানে দূর থেকে।
আমি কাছে থেকে জানি,বিনিময়ে আমাকে হয়েছে দিতে
জীবনের নানা মূল্যে কেনা বিশ্বখানি,তার হাতে তুলে।
অনায়াসে আমিও পারিনি। ক্রমে ক্রমে,বিভিন্ন কিস্তিতে
আমি তা দিয়েছি,ফুলে ফুলে ভালোবেসে যেভাবে প্রেমিক।
প্রথমে আত্মার দ্যুতি,তারপর তাকে ঘিরে মুগ্ধ আনাগোনা।
স্বর্গের সাজানো বাগানে পদস্পর্শে জ্বলে গেছি দূরে,তারপর
পেয়েছি বিশ্রাম । আজ রাত সম্পর্কের ভিতরে এসেছি।
সবাই মিলবে এসে মৌন-মিহি শিল্পে অতঃপর,
তোমার প্রদত্ত দানে পূর্ণ হবে পৃথিবী আমার।
======
সে – রাতে ছিলাম
– বুদ্ধদেব বসু
সে- রাতে ছিলাম কদাকার ইহুদিনীর পাশে,
পাশাপাশি দুটো মৃতদেহ যেন এ ওকে টানে ;
ব্যর্থ বাসনা ; পণ্য দেহের সন্নিধানে
সে-বিষাদময়ী রূপসী আমার স্বপ্নেভাসে ।
মনে পড়ে গেলো সহজাত রাজভঙ্গি তার,
দৃপ্ত লরিতে সে-কটাক্ষের সরঞ্জাম,
গন্ধমদির মুকুটের মতো অলকদাম-
যার স্মৃতি আনে প্রণয়ের পুনরঙ্গীকার ।
ও- বরতনুতে চুম্বনরাশি দিতাম ঢেলে,
শীতল পা থেকে কালো চুল পর্যন্ত
ছড়িয়ে গভীর সোহাগের মণিরত্ন,-
বিনা চেষ্টায় যদি এক ফোটা অশ্রু ফেলে
কোনো সন্ধ্যায় – নিষ্ঠুরতমা হে রূপবতী ! –
ম্লান করে দিতে ঠান্ডা চোখের তীব্র জ্যোতি ।
======
প্রেমিক
– বুদ্ধদেব বসু
কবরের মতো গভীর ডিভানে লুটিয়ে
মৃদু বাসে ভরা রবে আমাদের শয্যা,
সুন্দরতর দুর আকাশেরে ফুটিয়ে
দেয়ালের তাকে অদ্ভুত ফুলসজ্জা ।
যুগল হৃদয়, চরম দহনে গলিত,
বিশাল যুগল- মশালের উল্লাসে
হবে মুখোমুখি – দর্পনে প্রতিফলিত
যুগ্ম প্রানের ভাস্বর উদ্ভাসে ।
গোলাপি এবং মায়াবী নীলের সৃষ্টি
এক সন্ধ্যায় মিলবে দুয়ের দৃষ্টি,
যেন বিদায়ের দীর্ণ দীর্ঘশ্বাস ;
পরে, দ্বার খুলে, মলিন মুকুরে রাঙাবে
এক দেবদূত, সুখী ও সবিশ্বাস ;
আমাদের মৃত আগুনের ঘুম ভাঙাবে ।
প্রেমিকার মৃত্যুতে
– হুমায়ুন আজাদ
খুব ভালো চমৎকার লাগছে লিলিআন,
মুহুর্মুহু বিস্ফোরণে হবো না চৌচির।
তরঙ্গে তরঙ্গে ভ্রষ্ট অন্ধ জলযান
এখন চলবে জলে খুব ধীরস্থির।
অন্য কেউ ঢেলে নিচ্ছে ঠোঁট থেকে লাল
মাংস খুঁড়ে তুলে নিচ্ছে হীরেসোনামণি;
এই ভয়ে কাঁপবে না আকাশপাতাল,
থামবে অরণ্যে অগ্নি আকাশে অশনি।
আজ থেকে খুব ধীরে পুড়ে যাবে চাঁদ,
খুব সুস্থ হয়ে উঠবে জীবনযাপন।
অন্নে জলে ঘ্রাণে পাবো অবিকল স্বাদ,
চিনবো শত্রুর মুখে কারা-বা আপন।
বুঝবো নিদ্রার জন্যে রাত্রি চিরদিন,
যারা থাকে ঘুমহীন তারা গায় গান।
রঙিন রক্তের লক্ষ্য ঠাণ্ডা কফিন;
খুব ভালো চমৎকার লাগছে লিলিআন।
======
বাসর
– হুমায়ুন আহমেদ
কপাটহীন একটা অস্থির ঘরে তার সঙ্গে দেখা ।
লোহার তৈরি ছোট্ট একটা ঘর ।
বাইরের পৃথিবীর সঙ্গে কোন যোগ নেই ।
ঘরটা শুধু উঠছে আর নামছে ।
নামছে আর উঠছে ।
মানুষ ক্লান্ত হয় –
এ ঘরের কোন ক্লান্তি নেই।
এ রকম একটা ঘরেই বোধহয় বেহুলার বাসর হয়েছিল ।
নিশ্ছিদ্র লোহার একটা ঘর ।
কোন সাপ সেখানে ঢুকতে পারবে না ।
হিস হিস করে বলতে পারবে না, পাপ করো। পৃথিবীর সব আনন্দ পাপে ।
পুণ্য আনন্দহীন । উল্লাসহীন ।
পুণ্য করবে আকাশের ফিরিশতারা ।
কারণ পুণ্য করার জন্যেই তাদের তৈরি করা হয়েছে ।
লোহার সেই ঘরে ঢোকার জন্য সাপটা পথ খুঁজছিলো ।
সেই ফাঁকে বেহুলা তাঁর স্বামীকে বললেন, কি হয়েছে, তুমি ঘামছ কেন ?
আর তখন একটা সুতা সাপ ঢুকে গেলো।
ফিসফিস করে কোন একটা পরামর্শ দিতে গেলো ।
বেহুলা সেই পরামর্শ শুনলেন না বলেই কি লখিন্দরকে মরতে হল ?
তার সঙ্গে আমার দেখা কপাটহীন একটা অস্থির ঘরে ।
ঘরটা শুধু ওঠে আর নামে ।
আমি তাকে বলতে গেলাম – আচ্ছা শুনুন, আপনার কি মনে হচ্ছে না
এই ঘরটা আসলে আমাদের বাসর ঘর ?
আপনি আর কেউ নন, আপনি বেহুলা ।
যেই আপনি ভালবেসে আমাকে কিছু বলতে যাবেন
ওম্নি একটা সুতা সাপ এসে আমাকে কামড়ে দেবে ।
আমাকে বাঁচিয়ে রাখুন । দয়া করে কিছু বলবেন না ।
======
বাবার চিঠি
– হুমায়ুন আহমেদ
আমি যাচ্ছি নাখালপাড়ায়।
আমার বৃদ্ধ পিতা আমাকে পাঠাচ্ছেন তাঁর
প্রথম প্রেমিকার কাছে।
আমার প্যান্টের পকেটে সাদা খামে মোড়া বাবার লেখা দীর্ঘ পত্র।
খুব যত্নে খামের উপর তিনি তাঁর প্রণয়িনীর নাম লিখেছেন।
কে জানে চিঠিতে কি লেখা – ?
তাঁর শরীরের সাম্প্রতিক অবস্থার বিস্তারিত বর্ণনা ?
রাতে ঘুম হচ্ছেনা, রক্তে সুগার বেড়ে গেছে
কষ্ট পাচ্ছেন হাঁপানিতে – এইসব হাবিজাবি। প্রেমিকার কাছে
লেখা চিঠি বয়সের ভারে প্রসঙ্গ পাল্টায়
অন্য রকম হয়ে যায়।
সেখানে জোছনার কথা থাকে না,
সাম্প্রতিক শ্বাসকষ্ট বড় হয়ে উঠে।
প্রেমিকাও একটা নির্দিষ্ট বয়সের পর
রোগভুগের কথা পড়তে ভালবাসেন।
চিঠি পড়তে পড়তে দরদে গলিত হন –
আহা, বেচারা ইদানিং বড্ড কষ্ট পাচ্ছে তো …
======
বৃষ্টি
– শঙ্খ ঘোষ
আমার দু:খের দিন তথাগত
আমার সুখের দিন ভাসমান
এমন বৃষ্টির দিন পথে পথে
আমার মৃত্যুর দিন মনে পড়ে।
আবার সুখের মাঠ জলভরা
আবার দু:খের ধান ভরে যায়
এমন বৃষ্টির দিন মনে পড়ে
আমার জন্মের কোনো শেষ নেই।
======
ছুটি
– শঙ্খ ঘোষ
হয়তো এসেছিল। কিন্তু আমি দেখিনি।
এখন কি সে অনেক দূরে চ’লে গেছে?
যাব । যাব । যাব ।
সব তো ঠিক করাই আছে। এখন কেবল বিদায় নেওয়া,
সবার দিকে চোখ,
যাবার বেলায় প্রণাম, প্রণাম!
কী নাম?
আমার কোনো নাম তো নেই, নৌকো বাঁধা আছে দুটি,
দুরে সবাই জাল ফেলেছে সমুদ্রে—
একটি অরাজনৈতিক ছড়া
– শঙ্খ ঘোষ
আহ্লাদে মেতেছে আজ খুকু
দুহাতে ন্নতুন খেলনা পেয়ে
চোখে হাসি মুখে ফোটে ছড়া
ভাবলেশ নেই এতটুকু।
আমরা ভাবি: খেলুক খেলুক
অরও সুখ, আমাদেরও সুখ।
দণ্ডদুই পরে ফিরে দেখি
মেঝেতে ছড়ানো পুতুলেরা
হাত-পা ভাঙা ছিট্কে দূরে দূরে
মুন্ডুগুলি ধড় থেকে ছেঁড়া!
বলে উঠি তার দিকে চেয়ে:
‘এ কী করেছিস ওরে মেয়ে?’
খিলখিল খিলখিল হেসে হেসে
খুকু বলে: ‘পারি, সব পারি।
এতদিন একটা ছিলও শুধু
এখন করেছি রকমারি।’
দুহাত ছড়িয়ে বলে খুকু:
‘দেখো আমি কতকিছু পারি!’
======
ফ্যান
– প্রেমেন্দ্র মিত্র
নগরের পথে পথে দেখেছ অদ্ভুত এক জীব
ঠিক মানুষের মতো
কিংবা ঠিক নয়,
যেন তার ব্যঙ্গ-চিত্র বিদ্রূপ-বিকৃত!
তবু তারা নড়ে চড়ে কথা বলে, আর
জঞ্জালের মত জমে রাস্তায়-রাস্তায়।
উচ্ছিষ্টের আস্তাকূড়ে ব’সে ব’সে ধোঁকে
আর ফ্যান চায়।
রক্ত নয়, মাংস নয়,
নয় কোন পাথরের মতো ঠান্ডা সবুজ কলিজা।
মানুষের সত্ ভাই চায় সুধু ফ্যান;
তবু যেন সভ্যতার ভাঙেনাকো ধ্যান!
একদিন এরা বুঝি চষেছিল মাটি
তারপর ভুলে গেছে পরিপাটি
কত-ধানে হয় কত চাল;
ভুলে গেছে লাঙলের হাল
কাঁধে তুলে নেওয়া যায়।
কোনোদিন নিয়েছিল কেউ,
জানেনাকো আছে এক সমুদ্রের ঢেউ
পাহাড়-টলানো।
অন্ন ছেঁকে তুলে নিয়ে,
ক্ষুধাশীর্ণ মুখে যেই ঢেলে দিই ফ্যান
মনে হয় সাধি এক পৈশাচিক নিষ্ঠুর কল্যাণ;
তার চেয়ে রাখি যদি ফেলে,
পচে পচে আপন বিকারে
এই অন্ন হবে না কি মৃত্যুলোভাতুরা
অগ্নি-জ্বালাময় তীব্র সুরা!
রাজপথে এই সব কচি কচি শিশুর কঙ্কাল–মাতৃস্তন্যহীন,
দধীচির হাড় ছিলো এর চেয়ে আরো কি কঠিন?
======
এক আকাশ অন্ধকার
– প্রেমেন্দ্র মিত্র
একটি মানুষের মধ্যে আমি
এক আকাশ অন্ধকার দেখেছিলাম।
কতজনের সঙ্গেই ত মিশি,
ভালবাসি, ঘৃণা করি, থাকি উদাসীন।
তারা সব টুকরো টুকরো আলো
উজ্জল কি স্তিমিত।
তাদের চেনা যায়, পড়া যায়
মানেও পাওয়া যায় ছাড়াছাড়া।
তাদের সঙ্গে পরিচয় দিয়েই
জীবনের প্রাঞ্জল পুঁথি প্রতিদিন লেখা।
কিন্তু মন নিজের অগোচরে
খোঁজে সেই অনাদি আশ্চর্য অন্ধকার
সব অভিধান যেখানে অচল, সব নামতা নিরর্থক।
সেই এক আকাশ অন্ধকার
আমি পেয়েছিলাম একবার
পথে যেতে কোন এক স্টেশনের প্লাটফর্মে
দুপুর রোদে গাড়ির জন্য দাঁড়িয়ে
দুটি অতল চোখের মধ্যে।
সে পুরুষ কি নারী
কেউ যেন জানতে না চায়,
জানতে না চায় কী তার বয়স।
সে সময়ের অতীত, যৌনতার উর্দ্ধে।
তার অন্ধকার ত না-এর শূন্যতা নয়,
নিহারীকা-গর্ভ এক রহস্য-নিবিড়তা।
সত্তার গহনে এই অন্ধকার যদি লুপ্ত হয়,
আমাদের সাজানো শহর
আর সফল জীবন ত শুধু
পরিসংখ্যানের অন্ক।
এত খন্ড খন্ড আলোর জটলায়,
এত মাপজোকের দুনিয়ায়
সেই অন্ধকার বয়ে বেড়াবার মানুষ
কি সব ফুরিয়ে গেল!
======
মন ছুঁয়ে যাওয়া এই কবিতাগুলি ভালো লাগলে প্রিয়জন আর বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না। …
ভালো থাকুন, কবিতায় থাকুন।..
Thank You, Visit Again…
Tags – Bangla Kobita, Rabindranath Tagore, Humayun Ahamed, Bengali Poem