সনাতন বিড়বিড় করত, “In the fullmoon night on the lonely bridge, I held you close and…” আরও কিছু বলতে চাইত, কিন্তু ওর মনে পড়ত না!
সনাতন পাগলা ছিল সবার প্রিয়! পাড়ার ছোট থেকে বড়, ছেলে অথবা মেয়ে সবাই এই আত্মভোলা পাগলটাকে বড্ড ভালবাসত। ভুবনভোলানো হাসি, নিজে পাওয়া খাবার কুকুর’দের খাইয়ে দেওয়া, অথবা যে কোনও কাজে ছুটে যাওয়া, সব মিলিয়ে সনাতন পাগলা ঠিক পাগল ছিল না, আত্মভোলা বলা যায়! তবে ওঁকে কেউ কখনও পূর্ণিমার রাতে দেখতে পায়নি…
সনাতন মাঝেমধ্যেই বলে উঠত কোনও এক নাম না জানা মেয়ের মৃত্যুর কথা… সবাই ধরে নিয়েছিল ওঁর প্রেমিকা! অনেকেই ভেবেছিল মেয়েটি ওঁর প্রেমিকা এবং তাঁর মৃত্যু ওঁর পাগল হওয়ার কারণ… কিন্তু কেউ জানত না মেয়েটির নাম; অথবা মৃত্যুর কারণ; বা আদৌ মেয়েটি সনাতনের প্রেমিকা কিনা…
হঠাৎ পাড়ায় শোরগোল পড়ল! মুদিখানা দোকানের বিট্টু আবিষ্কার করেছে সনাতন পাগলার মৃতদেহ মুখার্জি’দের ঝিলে… সারা পাড়া শুনশান! পাড়ার মোড়ে, আড্ডায়, স্কুলে জল্পনা শুরু – মৃত্যুর কারণ কী! জনমতে ঠিক হল ওঁর পাগলামোই মৃত্যুর কারণ… হয়ত জলে ঝাঁপ দিয়েছে! কিন্তু কেন…! কিন্তু খুব বেশি মাথা কেউ ঘামালো না… হয়ত মদ খেয়ে পড়ে গেছে জলে – শোনা গেল, আগের রাতে ওঁ নাকি সোনাইয়ের থেকে এক লিটার চোলাই নিয়েছিল চেয়ে…
নেপথ্যে…
পূর্ণিমায় কী যে হত ওঁর, জানে না সনাতন নিজেও… যেন ওঁ নিজের মধ্যেই থাকত না; অন্য একটা মানুষ হয়ে যেত! বাকি দিনগুলো হাসি, খুশি, অফিস, আড্ডা, গানে হলেও পূর্ণিমাটা যেন একটা বিভীষিকায় পরিণত হচ্ছিল ক্রমশই… সেই ১২ বছর বয়স থেকে শুরু! ব্যাপারটাকে আমল দেয় নি সনাতন, কিন্তু পূর্ণিমার রাতগুলো ক্রমেই হয়ে উঠেছে কষ্টকর, অসহ্য, অলীক, অন্যরকম!
যা হোক করে সামলে নিচ্ছিল নিজেকে সনাতন… অফিসে না গিয়ে নিজেকে বাড়িতে আটকে রেখে, জিনিসপত্র ভাঙচুর করে কাটিয়ে দিচ্ছিল একটা করে রাত… এমন সময় দেখা শ্বেতার সাথে!
শ্বেতা সনাতনের অফিসে নতুন জয়েন করেছে, সেলসে আছে মেয়েটি… যেহেতু সনাতন মার্কেটিং হেড, মোটামুটি কথা বলতেই হয়… প্রথম প্রথম সব নর্মাল থাকলেও, আস্তে আস্তে বদলাতে থাকে প্রেক্ষাপট…
শ্বেতার সাথে একদিন লাঞ্চ আওয়ারে দেখা। সাধারণত বাড়ি থেকে খাবার বানিয়ে আনলেও সেদিন ভুলে গেছে সনাতন। এদিকে ক্যান্টিনে ভাত নেই! আর ভরদুপুরে ভেতো বাঙালি সনাতন ধোসা, ইডলি, চাউমিন, মোমো, বা কচুরী খেতে নারাজ! অগত্যা বেরিয়ে যাচ্ছিল সে… এমন সময়ে দেখা শ্বেতার সাথে! শ্বেতা সবে খেতে এসেছিল; ওঁকে দেখে একটু অবাক হয়েই জিজ্ঞাসা করল, “স্যার, আপনি এখানে!?” সনাতন গোটা ব্যাপারটা বললে, শ্বেতা জোর করে ওঁর সাথেই খেতে বসায়। নিজের টিফিন থেকে অর্ধেক ভাত, তরকারি, মাছের অর্ধেক দিয়ে দেয়… প্রথমে প্রচুর প্রতিবাদ করলেও পরে লাভ নেই বুঝে খেতে শুরু করে সনাতন। খেয়ে আঙুল চাটতে চাটতে সনাতন বলে, “উফ! কাকীমা তো ভয়ঙ্কর সুন্দর রান্না করে!” শ্বেতা বলে, “আমি একা থাকি। মা-বাবা আসামে থাকে। এটা আমি বানিয়েছি।” সনাতন বলে, “চলুন বাইরে থেকে একটা করে কোক খেয়ে আসি।” আমি খাওয়াবো। না করবেন না..” “আচ্ছা, চলুন…”, শ্বেতা অল্প হাসে… টোল’টা ঝিলিক দেয় শ্বেতার বাঁ গালে।
“আমায় আরেকদিন রান্না করে খাওয়াবেন?”, সিগারেট জ্বালিয়ে কোল্ড ড্রিঙ্কের অর্ডার করতে করতে সনাতন বলে শ্বেতা’কে। শ্বেতা মুচকি হাসে, “কবে খাবেন বলুন? আন্টি কিছু মনে করবে না তো ছেলে অন্য কারও রান্না চেটেপুটে খাচ্ছে দেখে?” “আমার মা-বাবা নেই, একা থাকি।”, জবাব সনাতনের। “আচ্ছা, ওনারা কোথায় থাকেন?”, শ্বেতা বলে। সনাতন অল্প হেসে জবাব দেয়, “স্বর্গেই হওয়া উচিত। মানুষ ভালই ছিলেন দু’জনেই…” কিছু একটা হয় শ্বেতার সে’দিন – সনাতনের চোখে চোখ রাখে সে…
পরের দিন সনাতনের জন্য পায়েস বানিয়ে আনে শ্বেতা। সনাতন বাড়ি নিয়ে চলে যায়… পরের দিন সনাতন অ্যাবসেন্ট! দিনটা পূর্ণিমা ছিল! তার পরের দিন অফিসে এসেই শ্বেতা’কে টিফিনবাক্সটা ফেরত দিয়ে বলে, “দুপুরে ওয়েট করব গেটের কাছে। টিফিনে যা এনেছেন, আমায় দিয়ে দেবেন, বাড়ি নিয়ে যাব। আজ আমরা বাইরে খাচ্ছি…” শ্বেতা’র কলিগ শুচিস্মিতা মুখ টিপে হাসে, শ্বেতা’র লেগপুল করতে থাকে। শ্বেতা’র কিন্তু ব্যাপারটা ভালই লাগে…!
এভাবেই চলতে থাকে… চোখে চোখ পড়তে শুরু করে… ক’দিন পরে হাতে হাত… রাতভোর ফোনে, কখনও গল্পের মাঝেই ঘুমিয়ে পড়ে শ্বেতা; কাটে না সনাতন! শ্বেতার নিশ্বাস শুনতে শুনতে ঘুমোয় সে… কিন্তু পূর্ণিমার রাতে কিছুতেই কথা বলতে চাইত না সে শ্বেতার সাথে! শ্বেতা বুঝতে পারত না! জিজ্ঞাসা করলেও এড়িয়ে যেত সনাতন। পাত্তা দেয়নি শ্বেতা ব্যাপারটাকে… এরপর একদিন শ্বেতা’কে প্রোপোজ করে সনাতন। অফিসেই, সবার সামনে! সবার হাঁ মুখ সাক্ষী রেখে শ্বেতা হ্যাঁ বলে দেয়… শুরু হয় নতুন এক অধ্যায়!
ভালই কাটতে থাকে ওঁদের জীবন… অফিস, কাজ, ক্যান্টিন, সিনেমা, উইকেন্ডে আড্ডা, কখনও ঘুরতে যাওয়া দু’দিনের জন্য… কিন্তু পূর্ণিমার রহস্য রহস্যই থেকে গেছে! হাজার চেষ্টাতেও জানতে পারেনি শ্বেতা… সনাতনকে জিজ্ঞাসা করলেই বলে, “তুমি আমার সব’টা জানো। এ’টার কি খুব দরকার? বিশ্বাস নেই একেবারেই?” এরপর আর কথা বাড়ানো যায় না। বাড়ায়ও না শ্বেতা, কিন্তু মনে একটা খচখচানি থেকে যায়! কিন্তু শ্বেতা একসাথে ফ্ল্যাটে থাকার কথা বললেও সনাতন রাজি হয় না… শ্বেতা’র মনে রহস্য দানা বাঁধতে থাকে…
বছর তিনেক কেটে গিয়েছে… একইভাবে চলছে ওঁদের জীবন – খুশি, স্বচ্ছল! কিন্তু একটা কিন্তুসমেত! শ্বেতা এ’বার ঠিক করে, ওঁকে জানতে হবেই! শ্বেতা সনাতনের গার্লফ্রেন্ড; ওঁর জানার অধিকার আছে… সামনের পূর্ণিমায় অফিস থেকে ছুটি নেয় শ্বেতা, সনাতনকে কিছু না জানিয়েই! ড্রাইভ করে সনাতনের বাড়ি পৌঁছায় – সন্ধ্যে হবে হবে করছে, ৬ঃ৩০ মতো বাজে। গিয়ে কলিং বেল টিপলেও ভিতর থেকে কোনও আওয়াজ আসে না, অথচ বোঝা যাচ্ছে কেউ আছে ভিতরে! সন্দেহ দলা হতে থাকে শ্বেতা’র মনে! সে বাজাতেই থাকে কলিং বেল। এক সময় সনাতন বেরিয়ে আসে, চুল উষ্কোখুষ্কো!
সবসময় পরিপাটি সনাতনের অবস্থা এমন কেন! তবে কী ওঁ কিছু করছিল! কারও সাথে কিছু করছিল! আশঙ্কায় বুক কেঁপে ওঠে শ্বেতার! ওঁ ভিতরে যেতে চাইলেও সনাতন বাঁধা দেয়। প্রচুর বাকবিতন্ডার পরেও যখন শ্বেতা মানে না, সনাতন বাধ্য হয়ে ঘরে ঢুকতে বলে। কিন্তু বলে দেয় যে শ্বেতা যেন বেডরুমেই থাকে, সনাতন রান্নাঘরের দরজা বন্ধ করে আছে, ওঁর কাছে যেন শ্বেতা না যায়… ভিতরে ঢুকে শ্বেতা দেখে বাড়িতে আর কেউ নেই! কিছুটা হলেও স্বস্তি আসে তার মনে… নিজেকেও কিছুটা দোষারোপ করতে থাকে মনেমনেই… কিন্তু কৌতূহল বাড়তেই থাকে শ্বেতার! তবুও সে চুপচাপ বসে থাকে… টিভি দেখে, ফেসবুকে নিউজ ফীড স্ক্রল করতে থাকে… এমন সময় বাসন ছোঁড়ার আওয়াজ আসে রান্নাঘর থেকে! চমকে ওঠে শ্বেতা! ছুটে যায়, জিজ্ঞাসা করে, কী হয়েছে সনাতনের! সনাতন কোনওমতে ঘোরলাগা গলায় শ্বেতাকে যেতে বলে… শ্বেতা যাওয়ার মেয়ে নয়; সে দরজা খুলতে বলে… হঠাৎ সব চুপচাপ। শান্ত। দরজা খোলে সনাতন… ভাবলেশহীন মুখ! যেন কিচ্ছু হয়নি, যেন সে জানেই না কিছু! শ্বেতা কিছু বলার আগেই অল্প হেসে সনাতন বলে, “চলো ঘুরে আসি…” “কোথায় যাবে এই রাত ১১টায়?”, শ্বেতা অবাক হয়ে বলে… “আরে চলো না! আমার উপর বিশ্বাস নেই নাকি?”, সনাতন জোর করায় বেরিয়ে পরে দু’জন মিলে…
শ্বেতার গাড়িতেই সনাতন ড্রাইভ করে যায় মুখার্জিদের ঝিলে… ওঁর বাড়ি থেকে প্রায় ১০কিমি দূরের এই ঝিলটায় একটা সাঁকো আছে কাঠের… এক দিকে গাড়ি দাঁড় করিয়ে সনাতন বলে, “কেমন লাগছে এই ফুলমুন, দিঘীর জলে আর সাঁকোয়?” শ্বেতা বলে, “অপূর্ব!” সনাতন বসার প্রস্তাব দিলে রাজি হয়ে যায় শ্বেতা… ওঁরা দু’জনে গিয়ে সাঁকোয় পা ঝুলিয়ে বসে… শ্বেতা সনাতনের হাত জড়িয়ে ধরে, বলে, “তুমি এমনই আমার সাথে থাকবে তো? পূর্ণিমা হোক বা অমাবস্যা, একদম পাগলামো করবে না… আমায় ছেড়ে যাবে না।” সনাতন বলে, “আমি পাগলামো করি?” শ্বেতা ইয়ার্কি মেরে বলে, “হ্যাঁ, করো তো…” মুচকি হাসে শ্বেতা… সপাটে চড় শ্বেতার গালে!
শ্বেতা বিশ্বাস করতে পারে না! সামলে নিয়ে দেখে সনাতন রাগে ফুঁসছে! শ্বেতা বলে, “আমি কী বললাম!? তুমি আমায় মারলে!” “বেশ করেছি! চুপচাপ বসে থাকো এখানে!”, সনাতন তখনও ফুঁসছে! ” তুমি কি পাগল হয়ে গেছ! এমন কেন করছ!”, শ্বেতা কেঁদে দেয়! সনাতনের চোখ লাল, “আমায় পাগল বললি! আবার!” আবার চড় মারে শ্বেতাকে, মারতেই থাকে… শ্বেতা বাঁচার চেষ্টা করে, পালাতে যায়। কিন্তু সনাতন ধরে ফেলে ওঁকে! চুলের মুঠি ধরে থুতনি চেপে ধরে বলে, “মুখ সামলে কথা বলবি, বুঝেছিস?” শ্বেতা ঝটকায় সরিয়ে নেয় নিজেকে, বলে, “তুমি কী করছ! তুমি কেন করছ এমন!?” কাঁদতে থাকে শ্বেতা! সনাতন হঠাৎ কেমন যেন হয়ে ওঠে! ছেড়ে দেয় শ্বেতাকে! বলে, “আমি বলেছিলাম এই সময়ে আমায় একা ছেড়ে দাও।” শ্বেতা বলে, “ছাড়ব না। আমি ভালবাসি তোমায়। তুমি বলো এমন পাগলের মতো কেন করছ!” আবারও হিংস্র হয়ে ওঠে সনাতন, আগের চেয়ে দ্বিগুণ, “আমায় ভালবাসিস, তাই না? নে ভালবাস এ’বার! এখানেই ভালবাসতে হবে আমায়। এই সাঁকোয়…”
শ্বেতার লাল-সাদা কুর্তি খোলার চেষ্টা করে সনাতন! কোনওমতে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে উঠতে যায় শ্বেতা, কিন্তু পারে না! পা ধরে ফেলে সনাতন, টেনে আনে নিজের দিকে! এবার শ্বেতার উপর উঠে পাশবিক শক্তিতে শ্বেতার জামা ছিঁড়ে ফেলে! ব্রা’টাও টান মেরে খুলে দেয়। কামড় দেয় সারা শরীরে! জিন্সটাও খোলে জোর করে! বাঁধা দিতে গেলেই থাপ্পড়! শ্বেতা তারস্বরে কাঁদতে থাকে! কয়েকটা কুকুর চেঁচিয়ে ওঠে খালি… শ্বেতাকে পশুর মতো পিষতে থাকে সনাতন, যতটা নির্মম হওয়া সম্ভব, হয়ে ওঠে…
শ্বেতার পরনে কিছু নেই! কিছুক্ষণ বাদে সনাতন এলিয়ে পরে শ্বেতার গায়ের উপর… ক্ষতবিক্ষত শ্বেতা পরে থাকে মাটিতে… চাপা কান্না দিঘীর জলে ধাক্কা খেয়ে ফিরে আসতে থাকে… সনাতন ধীরে ধীরে ওঁকে ধরে তোলে! চাঁদের আলোয় শ্বেতা দেখে সনাতনের চোখ চকচক করছে… শ্বেতা বলে, “এটা কেন করলে! তুমি তো এমন না! আমায় তো আগেও আদর করেছ! আমার ইচ্ছে ছাড়া কেন এ’ভাবে করলে তুমি সনাতন!?” সনাতন উদাস গলায় বলে, “তুমি আমার! শুধুই আমার। তোমার উপর আমার ইচ্ছে চলবে, আর কারও না। তোমার নিজেরও না।” শ্বেতা অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে এই অচেনা সনাতনের দিকে!
ফোঁপাতে ফোঁপাতে শ্বেতা বলে, “তুমি আমায় পাবে না সনাতন। তুমি আমায় আজ হারিয়ে ফেললে…” শক্ত করে জড়িয়ে ধরে শ্বেতা’কে সনাতন… বলে, “এমনটা বলতে নেই শ্বেতা! তুমি জানো তো, তোমায় আমি কত ভালবাসি! তোমায় তো আমি যেতে দেব না! তুমি আমায় সাঁতার শেখাতে বলতে মনে আছে?” শ্বেতা কথার আকস্মিকতায় বলে, “হ্যাঁ, মনে আছে! কেন!” “তুমি আজ থেকে আমার হলে শ্বেতা…”, বলে শ্বেতার কপালে চুমু খেয়ে শ্বেতাকে ধাক্কা মারে সনাতন… জলে পড়ার আওয়াজ হয়… শ্বেতার ডুবতে থাকা চিৎকার, হাত-পা চালানোর আওয়াজ আসতে থাকে… আর হাসতে থাকে সনাতন – খুশির হাসি, জয়ের হাসি, প্রাপ্তির হাসি, তৃপ্তির হাসি… হাসতেই থাকে… জোরে… দিঘীর জলে ধাক্কা লেগে হাসি ফিরে আসে!
সে’দিনের পর থেকে সনাতনের খোঁজ পায়নি কেউ… বাড়িও ফেরেনি… মুখার্জি’দের ঝিলের আশেপাশেই থেকে গেছে। বদ্ধ উন্মাদ না হলেও স্বাভাবিকও থাকেনি সে… সেই পূর্ণিমার রাতের কোনও কথা মনে থাকেনি তাঁর… কেবল একটা অসম্পূর্ণ লাইন বিড়বিড় করত সে, “In the fullmoon night on the lonely bridge, I held you close and…” কিন্তু কখনও লাইনটা পুরোটা বলতে পারেনি…
সে’দিন পূর্ণিমা ছিল… ঘুরতে ঘুরতে মুখার্জিদের ঝিলের সামনে গিয়ে সনাতন দেখে একটি ছেলে আর মেয়ে দাঁড়িয়ে গল্প করছে; মেয়েটির গায়ে লাল রঙের কুর্তি! মাথাটা চিনচিন করে ওঠে সনাতন পাগলার! মনে পড়তে থাকে সমস্ত ভুলে যাওয়া স্মৃতি! একে একে ফেরত আসে অফিস, ক্যান্টিন, ঘুরতে যাওয়া, মুখার্জিদের ঝিল, রেপ, আর খুন!
পাড়ার মদের দোকানের মালিকের নাম সোনাই।আগে সোনাইয়ের প্রচুর কাজ করে দিয়েছে সনাতন পাগলা, পরিবর্তে কিছুই নেয়নি কখনও… সোনাইয়ের কাছে গিয়ে এক লিটার চোলাই চাইতে সোনাই একটু আশ্চর্য হলেও সনাতন জোর করায় দিয়েও দেয়… পুরোটা খেয়ে টাল হয়ে মুখার্জিদের ঝিলে ঝাঁপ দেয় সনাতন। অবশ শরীর ডুবতে থাকার সময় তাঁর মনে পড়ে যায় সেই অসম্পূর্ণ লাইনটা! “In the fullmoon night, on the lonely bridge, I held you close and raped you carefully untill you became mine…” এই লাইনটাই বলেছিল সে ধাক্কা মারার পরে… হাসতে হাসতে…