কলমে – পার্থ ঘোষ
বিশিষ্ট লেখক , গদ্যকার
হ্যাঁ, আমার বাবা বৃদ্ধাশ্রমে থাকে, আমি নিজের হাতে রেখে এসেছি তাকে
হয়তো আমায় বলবেন কুলাঙ্গার, গালাগাল তো কতোই দিচ্ছে লোকে।
জানি আমাদের এই এক ছেলেদের অসহয়তা, কিছুতেই বুঝবেন না আপনারা
শুধু থুতু ফেলবেন আমাদের মুখের উপর, আর ঘৃণার চোখে দেখবে সকল পাড়া।
মা মারা গেছেন চোদ্দ বছর হলো, এখন বাবা সবকিছু ভুলে যায়,
এই খেয়ে উঠেই আবার চেঁচিয়ে বলে, এক্ষুনি আমার খাবার নিয়ে আয়।
পায়খানা চেপে রাখতে পারে না আর, গুটি গুটি পায়ে বাথরুমে যাওয়া চাই
সারা ঘর বিছানা বিষ্ঠায় ভরে থাকে, দুর্গন্ধে মনে হয় বাড়ি ছেড়ে পালাই।
আমাদের কর্তাগিন্নি দুজনেরই চাকরি, বাড়িতে আয়া রেখেও হয়েছে বিপদ
বাবা তাদের যখন তখন জড়িয়ে ধরে, তার ভালো খারাপের নেইতো কোনো বোধ।
এছাড়াও রোজ অফিস থেকে ফিরলে, বাবা আমার কাঁদে হাউমাউ করে
বলে সারাদিন আমায় ওরা বেঁধে রেখেছিল, আর খেতেও কিছু দেয়নি আমায় ওরে।
একদিন হঠাৎ দুপুরে আমার বউ, কি কারণে ফিরে এসে দেখে
আয়া প্রেমিকের সাথে প্রেমে মগ্ন, সত্যি সত্যিই বাবাকে খাটে বেঁধে রেখে।
কতদিন আর পালা করে এই দুজন, অফিস কামাই করে বাবাকে দেখব বলো
শেষ মেষ এই চার বছর পর, আর না পেরে এই ডিসিশন নিতে হলো।
জানেন বাবা ব্যাপারটা বুঝতে পেরেছিল, চাইছিল না কিছুতেই সে যেতে
বারান্দার রেলিং-টাকে দুহাতে, শক্ত করে ধরে রেখেছিল মুঠিতে।
কোনরকমে জোর করে ট্যাক্সিতে, চাপিয়ে নিয়ে কোনোমতে যাওয়া
জানিনা তবু কেন বুকটা খালি লাগে, মনে পড়ে বাবার বোবা চোখে চাওয়া।
বুঝিয়ে সুঝিয়ে বাবাকে সেখানে রেখে, যেইনা আমার বাড়ির পানে ঘোরা
অমনি বলে আমায় কেন যাচ্ছিস ফেলে রেখে, আমার কি আর হবেনা বাড়ি ফেরা!
পড়লো মনে ছোট্ট বেলায় কাঁদতাম আমি যখন, পা ছড়িয়ে স্কুল যাবো না বলে
তখন আমায় বাবা চকলেট দেওয়ার ছলে, স্কুলে নিয়ে গিয়ে চলে আসত ফেলে।
আমিও তেমন বাবাকেই আজ ভোলাই, তোমার জন্যে আনবো চিংড়ির কাটলেট
বাবার চোখে যেই লাগল লোভের ছোঁয়া, আমি এলাম ফিরে আর না করে লেট।
আগে প্রতি রবিবার বাবার কাছে যেতাম, হাতে নিয়ে বাবার জন্য খাবার
প্রথম প্রথম কাঁদত আসার জন্য, এখন বাবা আর কাঁদে না আমার।
বোধহয় বাবা মেনেই নিয়েছে ভাগ্য, বুঝেছে আর ফেরার উপায় নাই
বাড়ি তাকে পর করে করেছে আজ, ফিরবে হয়তো ছেলের কাঁধে চেপেই।
আজ মনে হয় একান্নবর্তী পরিবারই ছিল ভালো, বিবাদ থাকলেও রইতাম না একা
রাতের অাঁধারে ডাইনিং-টায় দাঁড়িয়ে দেখি, বাবার ঘরটা লাগছে ভীষন ফাঁকা।