৬
ফটাফট উঠে…একটু ফ্রেশ হয়ে নিয়ে কোনরকমে জামা টুকু পরে রেডি হয়ে গেল স্নেহা।অনেক্ষন আগেই যখন আন্টি ব্রেকফাস্ট দিতে এসেছিল তখনি আন্টিকে জিজ্ঞাসা করে একদম সিওর হয়ে গেছে।আন্টিই ফোন করে জানিয়েছিল দাদাকে।ভাগ্যিস জানিয়েছিল নাহলে তো জানতেই পারতো না যে দাদাও কখনো এতটা কেয়ার করতে পারে ওর।খুব কম এমন দিন গেছে যখন সৌম্য স্নেহার প্রতি এতটা সহৃদয় হোয়েছে।কোন দিকে সূর্য উঠেছে আজ কে জানে।এর আগেও তো কতবার কতরকম ভাবে আঘাত পেয়েছে ও,কই তখনতো এরম ভাবে কখনো বলেনি।কথাটা ভেবেই যদিও মনে মনে বেশ খুশিই হলো।
কিন্তু এদিকে যে সেই তখন এর পর আর একটা ম্যাসেজ ও করেনি আদি।আর যে পারছে না ও ওর সাথে কথা না বলে থাকতে।গতকাল সন্ধ্যে থেকে এখন ঘড়িতে পনে দশটা।প্রায় পনেরো ঘণ্টা হতে চললো,,,,অন্য সময় আলাদা ব্যাপার। কিন্তু রাগ করে কথা না বলে থাকতে আর পারবে না ও।
অনেকক্ষন কথা না বলে থেকে নিয়েছে ।মনে মনে একবার হিসেব করে দেখেও নিল স্নেহা।এই ঢের!মুখে যতই বলুক নিজে থেকে কথা বলবো না।কিন্তু মন তো আর ওর কথা শোনে না।যতই রাগ করুক,যতই মুখে বড়ো বড়ো লেকচার মেরে নিক না কেনো,,খুব বড়ো থেকে বড়ো পনেরো মিনিটই ওর রাগ স্থায়ী হয়।ওর থেকে আগে ডেডলাইন কখনো এগোতেই পারে না। আর সেখানে তো আজ পনেরো ঘণ্টার ব্যাপার।
রিং হচ্ছে……ফোনটা তুলছে না কেনো!মোবাইলে আরেকবার সেভ করা নাম্বারটা ডায়েল করলো স্নেহা।ধূর…..এবার তো আবার সুইচ ওফ বলছে। নিশ্চয়ই চার্জ শেষ,,,,কোনোদিনও তো চার্জে দিতেও শিখল না ফোনটা।আপন মনেই নিজের সাথে বকতে বকতে শেষ কথা টুকু মুখ ফসকে বেরিয়ে গেলো স্নেহার।
ওর পাশেই বসে সৌম্য ফোনে কথা বলছিল ওর অফিসের একজন কলিগের সাথে।অনেক আগেই সৌম্য স্নেহাকে ওর মেস থেকে নিয়ে বেরিয়ে পড়েছে।এখন সোজা এক্স রে করে পিশিমনির বাড়ি ফেরত যাবে।
ওকে অস্থির দেখে সৌম্য বললো,,,দেখ হয়তো প্রেকটিস এ আছে।সামনে ম্যাচ আছে তো!
হম….ঠিকই বলেছিস।আমারও তাই মনে হচ্ছে।কারণ নাহলে ফোন বেজে যাচ্ছে আর এদিকে ও ফোন তুলছে না!এরম তো কখনো করে না!আর যদি ব্যাস্ত থাকে তাহলে তো প্রথমেই কেটে দিত!….কিন্তু তুই কি করে জানলি সামনে ওর ম্যাচ আছে?……কথাটা বলতে বলতে সৌম্যর দিকে তাকালো স্নেহা।আর তাকাতেই বুঝলো বাঘের মুখে অলরেডি হাত ঢুকিয়ে ফেলেছে।
কোনো কিছু না ভেবেই সোজা গড়গড়িয়ে বলে চলে গেছে!আর পরক্ষনেই মনে পড়তে যে পাশে দাদা বসে আছে,আলতো করে মুখটা ঘুরিয়ে জিভ কাটলো স্নেহা।
সৌম্য আদিকে চেনে।আগের বছরই ঠিক এই পুজোর সময়টাতেই দেখা করিয়েছিল স্নেহা ওদেরকে।না ঠিক দেখা করায় নি।আসলে ভুল বসত সৌম্য ওদের দুজনকে একসাথে দেখে ফেলেছিল।কিন্তু পরে স্নেহাকে জিজ্ঞাসা করতে ও সব বলেও দিয়েছিল যদিও সৌম্যকে।কিছু লুকোয়নি।আর লুকোবেই বা কেনো!ওরা তো তখন জাস্ট ফ্রেন্ড।শুধু জাস্ট ফ্রেন্ড।আর ওই জন্যই তো সৌম্যরও সেই জাস্ট ফ্রেন্ড ব্যাপারটা বুঝতে বেশি সময় লাগেনি।
আদি প্রফেশনালি ক্রিকেটার।এমনি ছেলেও ও ভালো।কলকাতাতেই বাড়ি।কিন্তু প্রফেশন এর জন্য বাইরে বাইরেই থাকতে হয় বেশি।মাঝে মধ্যে যখন টাইম পায় তখন আবার কলকাতায় চলে আসে। আদির বাবাও একজন নামকরা ব্যাবসাই।কিন্তু মা নেই ওর।মানে থেকেও নেই।ওর মা থাকেন না ওদের সাথে।অনেকবছর আগেই কোনো এক কারণে ডিভোর্স হয়ে যায় আদির মা বাবার।
আরো অনেক কিছু বলেছিল স্নেহা আদির ব্যাপারে সৌম্যকে।কিন্তু ওর যেটা আসলে জানার ছিল মানুষ হিসেবে স্নেহা আদিকে কত নম্বর দিয়েছে।কারণ আর যাই হোক ওইটুকু বিশ্বাস সৌম্যর স্নেহার ওপরে আছে যে যাকে তাকে ও বেছে নেবে না।আর আদির ভেলুটাই যেহেতু স্নেহার জীবনে সব থেকে বেশি মেটার করে,তাই ফার্স্ট চয়েসে ও বোনের ইচ্ছেটাই রেখেছিল।ছেলে ভালো হলেই সব ভালো।আর সৌম্যর নিজেরও আদির সাথে কথা বলে বেশ ভালোই লেগেছিল।একটা খুঁত বের করতে পারে নি ও।আর দাদা হাওয়ার কর্তব্যে প্রথমেই সব বুঝে শুনে নেওয়াটাও স্বাভাবিক।আর সেহেতু বোনকে বাঁধা দেওয়ার কোনো কারণও ছিল না ওর কাছে আর।
কি?!কি বললি আরেকবার বলবি?শুনতে পেলাম না ঠিক!
কই,না তো।কিছুই বলি নি আমি।
সৌম্য ঠিক যেই কারণে সবটা পরিষ্কার শুনতে পেয়েও না শুনতে পাওয়ার ভান করছে,স্নেহাও ঠিক সেই কারণেই ব্যাপারটা সামলাতে এরিয়ে যেতে চাইছে।
আমি কি করে জানলাম,আদির সামনে ম্যাচ আছে!?আচ্ছা….!আমাকে বলত এক ওভারে কটা বল হয়?
স্নেহা সৌম্যর দিকে তাকিয়ে করুন সুরে বলল,,,,এরম কেনো করছিস দাদা?!তুই তোর ছোটো বোন টার সাথে এরম করতে পারছিস বল?!
না,তুই প্রশ্নটাই এমন করেছিস!আমি কি করে জানবো আদির ম্যাচ আছে কিনা!সামনে ওয়ার্ল্ড কাপ আছে ভুলে যাচ্ছিস!?ক্রিকেটের ব্যাপারে আমায় তোর কাছ থেকে জানতে হবে এবার?! পাল্টা উত্তর দিল সৌম্য।
স্নেহা এবার সৌম্যর মুখে এই উত্তর টা শুনে পুরো আকাশ থেকে পড়লো।ও তো ভেবেছিল দাদা ওদের সেই শুধু জাস্ট ফ্রেন্ড ব্যাপারটাকে নিয়ে এখুনি আবার শুরু করবে।কিন্তু এতো পুরো অন্য লাইন।
না মানে,আমি সেটা বলি নি!আমি তো….
স্নেহা ও চেপে গেলো ব্যাপারটা।বেকার ঘেঁটে লাভ কি!সেই তো একবার শুরু হলে ব্যাপারটা নিয়ে ও নিজেই চাপে পড়ে যাবে।
আর বাকি রইলো,ক্রিকেটের ব্যাপারে!এক ওভারে ছটা বল হয় সেটা ও জানে।হ্যাঁ,এইটুকু স্নেহা জানে।কিন্তু এককালীন এই সামান্য জিনিস টুকুও জানত না ও।এখনও যে বিশেষ কিছু জানে তেমনটা বলা ভুল,কিন্তু জানে!টুকটাক জিনিস গুলো ও জানে।তবে হ্যাঁ। কিছু জানুক আর নাই জানুক,,ওই দুটো লোককে ও চেনে।এক মহেন্দ্র সিং ধোনি….. তাও আবার এম এস ধোনি মুভিটা দেখার পর।তবে তারপর থেকেই ধোনির হেলি কপ্টার সর্ট এর ওপর ও ফিদা। আর দুই সৌরভ গাঙ্গুলি।ওই যে শুনেছিল, স্তেডিয়াম এর মধ্যে খেলা চলা কালীন জামা খুলে হাতে করে ঘুরিয়ে ছিল।না শুধু শোনে নি ,ছবিও দেখেছিল।
স্নেহার কথায় হো হো করে হেঁসে উঠল সৌম্য।ওই সবই জানে।নাহলে অন্য কিছু ঘণ্টা জানে।আর টুকটাক জেনে থাকলেও!,বয়ফ্রেন্ড এত বড় ক্রিকেটার।আর ও সেখানে টুকটাক জানে।লজ্জার ব্যাপার নয় এটা?!!!!
কথাটা বলেই আবার হেঁসে ফেললো সৌম্য।কিন্তু
এবার একটু রেগে গেল স্নেহা। ও আর সৌম্য ছাড়াও ওই গাড়িতে সামনে ড্রাইভার আছে।কি ভাবছেন উনি স্নেহার ব্যাপারে কে যানে।এই হলো এক বড্ড বাজে স্বভাব।ঠিক আছে বলছে,, বলছে! কিন্তু একটু জায়গা বুঝে শুনে তো বলবে।না তা কেনো বলবে!বোনের প্রেস্টিজ পাংচার করতে হবে না।সয়তান একটা।
কিন্তু পরক্ষণেই আবার বয়ফ্রেন্ড শব্দটা কানে আসতেই ভিতর থেকে একটু শান্ত হয়ে গেল স্নেহা।আর একটু লজ্জাও বোধয় পেলো।কিন্তু মুখে কঠোর ভাবেই প্রতিবাদ করে বললো,দাদা! উই আর জাস্ট ফ্রেন্ড।আজে বাজে কথা বলা বন্ধ কর।
হ্যাঁ, হ্যাঁ।জানা আছে তোদের” জাস্ট ফ্রেন্ড”!
মুখে ফাজিল হাসি সৌম্যর।
৭
একটু দাড়িয়ে যান এক্সরে রিপোর্ট কিছুক্ষনের মধ্যেই পেয়ে যাবেন।কিন্তু দেখে যা মনে হচ্ছে,ভাঙেনি।বড়োজোর হয়তো একটু ক্রেক আসতে পারে।কিন্তু তার জন্য প্লাস্টার করতে হবে না।এমনিই কয়েকদিন ঠিকঠাক বেডরেস্ট নিলে আর ক্রেপ ব্যান্ডেজ অ্যান্ড অবশ্যই মেডিসিনস্ ঠিকঠাক মতো টাইম টু টাইম কন্টিনিউ করলেই ঠিক হয়ে যাবে।চিন্তার কিছু নেই।
থ্যাঙ্কু ইউ ডক্টর।কেবিন থেকে বেরিয়ে এলো সৌম্য আর পিছন পিছন স্নেহাও।
কি রে! কচ্ছপ এর মতো হাঁটছিস কেনো?!পাশে বোনকে দেখতে না পেয়ে পিছনে ফিরে তাকাতে তাকাতে বললো সৌম্য।খরিয়ে খরিয়েই হাঁটছে বেচারা।তাই সময় লাগাটাই স্বাভাবিক।
আর কিছু বললো না ও।শুধু একবার ভস্ম করে দেওয়া দৃষ্টিতে সৌম্যর দিকে তাকিয়ে চুপচাপ আসতে আসতে লিফ্ট এর সামনে এসে দাঁড়ালো।
একমনে ফোনের ব্যাককভার টাকে নিয়ে খুট খুট করেই যাচ্ছে ও…..একবার ভাবলো সামনেই আদির বাড়ি,একবার কি ঘুরে আসবে।যদি বাড়িতে পেয়ে যায় ওকে।এতক্ষনে এবার ওর নিজেরই মনে হচ্ছে,কাল হয়তো কথাটা না বললেই পারতো ওকে।ও তো জানে আদি ওর মায়ের কথা বললে কিরম রিয়েক্ট করে,তাও কেনো যে বলতে গেলো। আসলে স্নেহা নিজেও বুঝতে পারে নি যে আদি এতটা পরিমাণে রেগে যাবে।
ও তো শুধু চাইছিলো মামনিকে নিয়ে ওরা যাতে আবার একসাথে আগের মতো হয়ে যায়।শুধুমাত্র একটা ভুল বোঝাবুঝির কারণে কেনো সম্পর্ক গুলো চিরকাল জটিল হয়ে থাকবে।যেখানে তিনটে মানুষ আবার এক জায়গায় জড়িয়ে আছে।
আদির মা মানে রুক্মিণী বসু,একজন নৃত্য শিল্পি। যার নাম বললেই এক ডাকে ওনাকে সবাই চেনে।
আর স্নেহার ওনার হয়ে গুন গাওয়ার সব থেকে বড় কারন এটাই যে স্নেহার গুরু হন উনি।আর শুধু গুরুই নয়,একপ্রকার মা এর সমান বললেও ভুল হবে,যেনো স্নেহার মায়েরই প্রতিচ্ছবি উনি।আর এত বেশি মিসুখে যে, যেই কথা গুলো কাউকে বলা যায়না,,,সেই কথা গুলো ওনাকে বলা যায়।এমন ধরনের ভালো বন্ধু ও উনি।
স্নেহা প্রায় পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে চেনে মামনিকে। হ্যাঁ,নামটা ওই দিয়েছিল রুক্মিণী বসুকে।
এত গুলো বছরে কখনো আদি নিজে থেকে স্নেহাকে ওর মায়ের কথা বলেনি।এমনকি যখন ওর বাড়িতে স্নেহা প্রথম যায়,তখন যখন আশিষ আঙ্কেলের সাথে ওর দেখা করিয়ে দিচ্ছিল আদি, তখনও স্নেহা আদির কাছে ওর মায়ের সম্পর্কে জানতে চেয়েছিল।কিন্তু সেইদিন ও এড়িয়ে গিয়েছিল ও।আর আজও এড়িয়ে যায়।
এখনও অব্দি,যেটুকু কথা হয়েছে মামনিকে নিয়ে আদির সাথে ওর,সবটুকুই স্নেহার জোড়াজোড়ির ফলেই।আর সেরম ততোবারই এর দামও চুকোতে হয়েছে স্নেহাকে।কিন্তু কোনো বারেই মামনির সম্পর্কে ভালো কিছু বলতে শোনেনি ওকে,আর স্নেহা বলতে চাইলেও হয় ওকে বলতে দেয় নি,নাহলে বললেও ও সে কথার প্রাধান্য দেয়নি।শুধু প্রত্যেকবারই এই কথাটা শুনতে কানে এসেছে যে,ও কি বেশি ভালো চেনে ওই মহিলাকে আদির থেকেও।
আদি তো মা ডাক টুকুও ডেকে সম্মান করে না মামনিকে।মহিলা মহিলা বলে বলতে থাকে।আর এই নিয়েই তো একবার বিশাল বড় ঝামেলাও হয়েছিল আদির সাথে ওর।
প্রথম প্রথম তো স্নেহা জানতোই না যে যেই রুক্মিণীর কথা আদি ওকে বলেছে সেই রুক্মিণীই
আসলে রুক্মিণী বসু।ওর মামনি আর আদির নিজের মা।আদির সামনে ওর মায়ের কথা বললেই রেগে যেত বলে স্নেহা নিজে থেকে কখনো মুখ ফুটে তাই আর ছবিও দেখতে চাই নি।
আর ওইদিকে মামনির সাথে ওর বেশ বন্ধুত্ব পূর্ণ সম্পর্ক হাওয়ায় মাঝে মধ্যে ক্লাসের শেষে যখন গল্প করতে বসে যেত দুজনে মিলে… তখন, মামনির কাছে শুনতো… মামনির সাজানো গোছানো সংসার,শশুর,শাশুড়ি,বর আর ওনার একমাত্র আদরের গুণধর ছেলে।সে কত্তো প্রসংশা ছেলের সমন্ধে।পড়াশুনো থেকে শুরু করে সব ধরনের অ্যাকটিভিটি,খেলা সব কিছুতে দুর্ধর্ষ।আর ওনার ছেলে নাকি ক্রিকেট খুব ভালো খেলে!মায়ের সাথে সাথে ছেলেরও ইচ্ছে ছিলো বড়ো হয়ে অনেক বড়ো ক্রিকেটার হবে।আরো কত কি!!
আর এরম ভাবেই প্রত্যেকবারই গল্প শুরু অন্য কোনো টপিক নিয়ে হলেও শেষ হতো ওনার ছেলেকে দিয়েই।
কতবার স্নেহা বিরক্ত হয়ে গিয়ে,ওর মুখ দিয়ে বেরিয়ে গেছে,,,, হ্যাঁ গো হ্যাঁ।ঠিক আছে।মানছি তো তোমার ছেলে খুব ভালো,খুব ট্যালেন্টেড।আমি একবারও না বলেছি বলো? বলি নি তো?!! তাহলে তুমি কেনো প্রত্যেকবারই তোমার ছেলেকে টেনে নিয়ে আসো!নির্ঘাত হেঁচকী উঠছে দেখো এখন তোমার ছেলের।
দিয়ে বলে ফেলেই খেয়াল করতো সঙ্গে সঙ্গে মামনির মুখটা শুকিয়ে গেছে।
এতবার মামনির মুখে মামনির ছেলের নামে এতকিছু শুনেছে,,,, কিন্তু কখনো ভালো নাম আর জানা হয়নি ওর। মামনি যেই নাম উল্লেখ করে ওকে ছেলের সমন্ধে এত কিছু বলতো,শুধু ওই নামটাই জানত… কুশ।
মাঝে মধ্যে ও একবার দুবার জিজ্ঞাসা ও করেছিল বোধয় যে ভালো নাম কি,কিন্তু মামনি এড়িয়ে যাচ্ছে বুঝতে পেরে আর ঘুরে জিজ্ঞাসা করে নি তারপর থেকে।শুধু নাম নয়,,,,এখন কি করে,কোথায় থাকে….এই প্রশ্নগুলোরও উত্তর পায়নি ও।ঠিক কি কারণে এড়িয়ে যেত বুঝতেও পারতো না তখন।
কিন্তু ওইদিন যখন মামনি বললো আজ কুশ এর জন্মদিন,পায়েস করবো..এসে খেয়ে যাবি।আর ওই দিনই আদিরও জন্মদিন।তখন ও আর থাকতে না পেরে সোজা জিজ্ঞাসা ই করে নিয়েছিল,…. তোমার ছেলের ভালো নাম কি!…আজ বলবে মামনি?
উত্তরে ওই দিন আর মামনি কথা ঘোরায় নি।ছেলের জন্মদিন ছিল বলেই বোধয়।
আদিত্য!।
বেশ!এই টুকুই যথেষ্ট।এর থেকে আর বেশি কিছু শোনার প্রয়োজন নেই স্নেহার।আর কিছু বাকিও নেই ওর বোঝার। কারণ এবার ওর চোখের সামনে বাকিটা নিজে থেকেই পরিষ্কার হয়ে গেছে।
নিজের কানকে যেনো বিশ্বাস করতে পারেনি তখন ও।আর একটা মুহুর্তও ওখানে দাঁড়ায়নি।আদির সাথে ক্যান্ডেল লাইট ডিনার এও যায়নি ওই দিন।সোজা মেসে ফিরে গিয়েছিল।
এর আগে যে কখনো ওর মনে খেয়াল বা সন্দেহ…. যাই বলা চলুক না কেন,!সেরোমটা হয় নি নয়, বরং বেশ অনেকবারই মনে হয়েছে!কিন্তু কখনো মুখ ফুটে জিজ্ঞাসা করার সাহস হয়নি ওর।যতই হোক মামনি ওর থেকে যথেষ্ট বড়,লাইফে এক্সপেরিয়েন্স বেশি।তাই পরিস্থিতির সমূখীন ও যথেষ্ট বেশি পরিমাণে হয়েছে।আর ও মামনির সাথে কথা সেয়ার করতে সাছন্দ বোধ করে বলে ,তার তো কোনো মানে নেই যে মামনিও বোধ করবে।
আর এমনিতেও কখনো কখনো আবার ওর মনে হয়েছে ওই বোধয় একটু বেশি ভাবছে।এরম তো পৃথিবীতে কত মানুষ আছে যাদের সাথেও রোজ রোজ কত কত ঠিক একই ঘটনা ঘটে যাচ্ছে।আর এটাও বোধয় সেরোমি কিছু একটা। কিন্তু তাও বরাবরই ওর মনে হতো,যেনো আদির ছোটবেলার কথাই বলছে মামনি ওকে। আশিষ আঙ্কেল এর কাছেও আদির ছোটো বেলার কথা অল্প অল্প শুনেছিল স্নেহা।প্রায় একই কথা…. শুধু দুটো আলাদা মানুষের কাছ থেকে শুনছিল,এটাই যা।আদি আর আঙ্কেলের মুখে শোনা আদির মায়ের কথা, আর মামনির কাছ থেকে শোনা মামনির ছেলের কথা। বড্ড মিলখেত।
যদিও মিলবেই বা না কেনো!
একই মানুষ যদি পুরোটার সাথে জড়িয়ে থাকে,তাহলে হুবুহু মিলে যাওয়াটাই স্বাভাবিক।
আদি জানতো স্নেহা ডান্স শেখে বলে।কিন্তু কোথায় শিখতো সেটা জানায়নি স্নেহা আদিকে।ইচ্ছে করেই জানায়নি।কারণ ওর মায়ের নাম এর সাথে পুরো নামটাই মিল,শুধু রায়চৌধুরী নয় বসু!এটাই যা।কিন্তু তাও ও শুনলেই আপসেট হয়ে পড়ত আর সাথে সাথে রেগে যেতো, ভীষণ ভাবে রিয়েক্ট করতো।না জানি আরো কত কি করতো,বলতো!আর ও নিশ্চয়ই ধরেও ফেলত…..যে ওই মহিলাই।!তাই আর মনের মানুষটাকে কষ্ট দিতে… বলেনি।
আর আদির সাথে স্নেহার রিলেশনটা প্রথম প্রথম স্বাভাবিক ছিল বলেই ওও আর মামনিকে বলতে চায়নি চট করে কিছু।তাই মামনির কোনো আইডিয়াও ছিলনা আদিকে নিয়ে।
কিন্তু ওর তো ছিলো।সবকিছু এক,মানুষ গুলোর ভালোবাসাও এক,মনটা এক,পুরো গল্পটা এক,প্রত্যেকটা কথা প্রত্যেকটা শব্দ এক,মানুষ গুলোই যে এক।কিন্তু তাও ওর বুঝতে এতটা সময় লেগে গেল।চোখের সামনে সবটা ভেসে বেড়াচ্ছিল।শুধু হাতটা বাড়িয়ে ধরতে পারলেই হতো।
না ধরতে তো ও পেরেছে,তবে খানিকটা দেরি হয়ে গেছে।কিন্তু না,আর না।এবার সব ওই ঠিক করে দেবে।
আর বোধয় ভগবান ও ওটাই চায়।নাহলে পৃথিবীতে এত ছেলে থাকতে বেছে বেছে কেনো শুধু আদির কাছেই পাঠালো ওকে,আর তাও পাঠালো পাঠালো,,! এরম একটা সিচুয়েশনে কেনো এনে দাড় করালো?! মামনির ক্ষেত্রেও একই।মামনি ই কেনো?! যদিও আদির আগে মামনি ওর লাইফে এসেছে!…সেহেতু আদির ক্ষেত্রেই প্রশ্নটা বেশি প্রযোজ্য।………….
(চলবে……✍️)