কলমে ✍️ – অভিরূপ পম্পা ঘোষ
প্রথম পর্ব
ফাগুন হেঁটে যাচ্ছিল, বরাবরের মতো কাঁধে ব্যাগ আর হাতে গোলাপি রুমাল। ও বুঝতে পারছিল বেশ কয়েক জোড়া চোখ ওকে চাটছিল। আসলে ও আজকে বাদামি চুড়িদারটা পরেছিল তো। ওটার বুকের কাছটা অনেকখানি কাটা। কিছুটা রহস্য দেখা যায় আর সেখানেই কৌতূহল। আর শুধু তো তাই নয়, ওর অসামান্য সৌন্দর্য সবসময়ই ওর গর্ব। সারাজীবন দেখে এসেছে সমস্ত বয়সী ছেলে-বুড়ো ওকে আলাদা গুরুত্ব দেয় অন্যদের চেয়ে।
হঠাৎ খেয়াল করল ফাগুন যে একটি ছেলে ওর একটু পিছনেই হাঁটছে। এলোমেলো চুল, না কাটা দাড়ি আর বোকা বোকা জামা-প্যান্ট। বিরক্ত বোধ করল ফাগুন। এরকম ছেলের দৃষ্টিও ভাল লাগে না। ছেলেটা জামার কাঁধে ঘাম মুছতে মাঝে মাঝে মোবাইলে আর মাঝে মাঝে ওর দিকে তাকাচ্ছে। বাসে উঠল ফাগুন। পিছনে ছেলেটা। উঠে পাশাপাশিই দাঁড়াল। বিরক্তির চূড়ান্ত। হঠাৎ ছেলেটি বসার জায়গা পেয়ে বসে গেল। ওই গরমে ভিড় বাসে ফাগুনের ইচ্ছা করল না দাঁড়াতে, ভাবল একটু ফায়দা তোলা যাক। ছেলেটিকে বলল, “এই যে শুনছেন, আমি না একদম দাঁড়াতে পারছি না একটু বসতে দেবেন প্লিজ?” গলাটা যতটা সম্ভব আদুরে করে তুলল। এতে অনেক ছেলে টাশকি খেয়েছে। ছেলেটা অবাক চোখে তাকাল, ঝরে পড়ছে মুগ্ধতা। ব্যস, আর যায় কোথায়! ফাগুনের মনে জয়ের আনন্দ।
ছেলেটি বলল, “কেন উঠব? এটা তো লেডিস সিট নয়। আমি বসেছি, আমিই যাব।” থতমত খায় ফাগুন! এরকম তো কখনও হয়নি! মুখ থেকে কথা সরে না। পাশের কাকু বসাতে চাইলেও সে দাঁড়িয়েই থাকে। লজ্জা, অপমান স্পষ্ট মুখে।
হঠাৎ ছেলেটির গলা, “আপনি বসুন, আমি দাঁড়াচ্ছি।” মুখ ঘুরিয়ে দেখে এক দাদুকে বলছে ছেলেটা। দাদু না না করাতে সে রেগে গিয়ে বলে, “বসতে বললাম তো!” দুপুরের চড়া রোদে যেন গোধূলি খেলে যায়, কিছু নাম না জানা পাখি যেন উড়ে যায়। ছেলেটি নামার জন্য পা বাড়ায়। ফাগুন সাথে নামে, জিজ্ঞাসা করে “আপনার নামটা বলবেন?”। “হিমেল”। এক পশলা ঠান্ডা হাওয়া বয়ে যায়…