Bengali Story – অসমাপ্ত রেললাইন – Valobashar Golpo

Bongconnection Original Published
8 Min Read

আমাদের এই চেনা শহরের অচেনা গলিতে প্রতিমুহূর্তে ঘটে চলেছে কত নতুন নতুন প্রেমের গল্পকথা। শহরের ছোটো বড় যেকোন গলিতে কান পাতলেই শোনা যায় নতুন প্রেমের গান। শহরের চলমান ব্যস্ততার মাঝে পড়ে হারিয়ে যাওয়া সেই সব প্রেমের ইতিকথা নিয়েই আমার এই নতুন সিরিজ “ইজহার – E – ইশক” । আজ তার তৃতীয়  গল্প …



“কি রে অফিস যাবিনা ?” মার ডাকে ঘুমটা হঠাৎ ভেঙ্গে গেলো আবিরের।মার উপর তার একটু রাগ হলো বটে,আসলে শুধু ঘুমটা তো ভাঙ্গলো না তার সাথে স্বপ্নটা আজকেও মাঝপথে শেষ হয়ে গেলো। আবির মনে মনে ভাবতে লাগলো স্বপ্নটা কেন কোনোদিন সে শেষ পর্যন্ত দেখতে পায়না,শেষ হওয়ার আগেই রোজ ঠিক ঘুমটা ভেঙ্গে যাবে ! আজকেও প্রপোজ করতে পারলো না মেয়েটাকে। তবে মনে মনে আজ সে একদম ঠিক করেই নিয়েছে পৃথিবী উল্টে গেলেও আজ সে প্রপোজ করবেই। আসলে ঘটনার সূত্রপাত আজ থেকে প্রায় ৩ বছর আগে। অফিস যাওয়ার জন্য আবির যে বাস স্ট্যান্ড থেকে বাস ধরে ঠিক ওখান থেকেই রোজ প্রায় একই সময়তে একটি মেয়ে ওই বাসে ওঠে। প্রথম যেদিন আবির মেয়েটিকে দেখে সেদিনই কিরকম যেন তার মেয়েটিকে খুব ভালো লেগে যায়। এমন নয় যে এর থেকে বেশি সুন্দরী মেয়ে হয়না,কিন্তু কেন জানিনা সেই প্রথম দিন থেকে আবিরের খুব বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করে তার কাছে ওই মেয়েটির থেকে বেশি সুন্দরী আর কেউ হতে পারেনা। মেয়েটি খুব শান্ত আর নম্র। তবে মেয়েটির চোখ ২ টো আবিরের সবথেকে বেশি ভালো লাগে,মাঝে মাঝে তার মনে হয় শুধু ওই চোখ দুটোর দিকে তাকিয়েই সে তার অর্ধেক জীবন কাটিয়ে দিতে পারে। সাধারণত রোজ মেয়েটি সালোয়ার কামিজ পরে আসে  আর তার সাথে মানানসই খুব সুন্দর সুন্দর ঝোলা কানের পরে, এই ঝোলা কানের আবিরের বড় ভালোলাগে। অফিস থেকে বাড়ি ফেরার পথে কাল সে নিজে পছন্দ করে এক জোড়া ঝোলা কানের নিয়ে এসেছে মেয়েটিকে উপহার দেবে বলে।
br />


– সেই ৩ বছর আগে এই ঘটনার সূত্রপাত হওয়ার অনেকদিন পর আবির জানতে পারে মেয়েটির নাম তিন্নি। মেয়েটির বান্ধবীরাই একদিন ওই নামে তাকে ডাকে,সেই প্রথম আবিরের জানতে পারা তার ভালোবাসার মানুষটার নাম। কোথা দিয়ে যে এই তিন তিনটে বছর কেটে গেলো সে নিজেও বুঝতে পারেনি, এই ৩ বছরে হাজার বার সে তিন্নির সাথে কথা বলার চেষ্টা করেছে কিন্তু শেষমেশ বলে উঠতে পারেনি। আসলে সে রোজ অনেক কিছু ভেবে আসে বলবে বলে কিন্তু মেয়েটি তার সামনে এলেই কেন জানিনা সে সবকিছু ভুলে যায়। এভাবেই ৩টি বছর যে কিভাবে কেটে গেলো কিন্তু সে তার মনের কথাগুলো মেয়েটিকে এখনো পর্যন্ত জানাতে পারলো না। তবে আজ সে বলবেই,আজ তাকে বলতেই হবে। যাতে সবকিছু সে ভুলে না যায় তাই সবকিছু সে আজ একটা কাগজে লিখে এনেছে। এতদিন ধরে মনের মধ্যে জমিয়ে রাখা সব কথা সে লিখেছে। সাথে তার ওই কালকে পছন্দ করে কিনে আনা কানের ২ টিও সে ওকে দেবে বলে ঠিক করে রেখেছে।

– বাস স্ট্যান্ডতে এসে আবির অপেক্ষা করতে লাগলো তিন্নির আসার অপেক্ষায়। সেই কলেজ শেষ হয়ে যাওয়ার পর সিগারেট খাওয়া সে ছেড়ে দিয়েছিলো,কিন্তু অনেকদিন পর আজ খুব টেনশনে সে একটা সিগারেট ধরিয়ে ফেললো। একটা বাস এসে দাঁড়ালো বটে কিন্তু সে বাসটা ছেড়ে দিলো ধরলো না,তিন্নির আসার জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো। তিন্নি আজ আসবেনা নাকি,আজ কি তবে ওদের  ইউনিভার্সিটি ছুটি ! এইসব আকাশ কুসুম ভাবতে ভাবতে হঠাৎ আবির তার বাম পাশে ফিরে দেখলো তিন্নি আসছে। সবুজ রঙের একটা সালোয়ার পরেছে ,সালোয়ারটাতে ডিজাইন করে ৬ সংখ্যাটা কি সুন্দর করে সব জায়গাতে লেখা আছে, সাথে ঘিয়ে রঙের একটা ওড়না আর তার সবথেকে পছন্দের খুব সুন্দর একটা ঝোলা কানের পরেছে। বড্ড মিষ্টি লাগছে আজ তিন্নিকে, তার উপর থেকে চোখ ফেরাতে আবিরের কোনোভাবেই ইচ্ছে করছেনা। এক ভাবে সে তিন্নি কে দেখে যাচ্ছে ,বার বার তার ওই শান্ত চোখগুলোর দিকে তাকাচ্ছে আবির। হঠাৎ বাস এসে যাওয়াতে তার সম্বিৎ ফিরলো, তিন্নি বাসে উঠে পড়েছে , আবিরও বাসে উঠলো। বাসে উঠে দেখলো তিন্নির পাশের সিটটা  ফাঁকা,মনে অনেক সাহস সঞ্চয় করে তিন্নির পাশের সিটটা তে গিয়ে সে বসলো। তিন্নি জানলা দিয়ে বাসের বাইরের দিকে চেয়ে আছে ,হাওয়াতে তার চুলগুলো শুধু তার মুখের উপর এসে পড়ছে,অদ্ভুত রকম সুন্দরী লাগছে তিন্নিকে,আবির কিছুতেই তার চোখ ফেরাতে পারছেনা। এই প্রথম এতো সামনে থেকে সে তার ভালোবাসার মানুষটিকে দেখছে আর মনে মনে ভাবছে সবকিছু এখনি বলে দেবে  না বাস থেকে নেমে বলবে।

–  হঠাৎ  তিন্নির ফোনটা বেজে উঠলো, ফোনটা রিসিভ করে কি মিষ্টি  করে সে বললো, “হ্যালো কে বলছেন ?” তারপরেই ফোনটা রেখে দিলো। এই প্রথম আবির তিন্নির ভয়েস শুনলো। আবিরের নিজেকে কিরকম যেন পাগল পাগল লাগছে,মনে হচ্ছে সে যেন স্বপ্নের জগতে আছে, যে মেয়েটা কে সে এতদিন ধরে ভালোবাসে সেই মেয়েটা এখন তার এত কাছে বসে আছে। হাওয়াতে উড়ে এসে তিন্নির চুলগুলো বার বার তার মুখে এসে পড়ছে। তিন্নির নরম চুলের স্পর্শে আবির শুধু নিজেকে হারিয়ে ফেলছে প্রতিমুহূর্তে, এইসময় তার নিজেকে পৃথিবীর সবথেকে সুখী মানুষ বলে মনে হচ্ছে,তার মনে হচ্ছে তার কানের পাশ দিয়ে খুব জোরে যেন হাওয়া বয়ে যাচ্ছে। এই বাস,বাস ভর্তি লোক,তার অফিস যাওয়া,তিন্নির ইউনিভার্সিটি যাওয়া সব যেন মিথ্যে সত্যি যেন শুধু সে আর তার পাশে বসে থাকা তিন্নি,সত্যি যেনো শুধু এই মুহূর্তটা, সত্যি যেন শুধু তিন্নির ওই নরম চুল গুলি বার বার উড়ে এসে তার মুখে পড়া, সত্যি যেন শুধু তিন্নির ওই মিষ্টি গলাতে বলা  “হ্যালো কে বলছেন।” আবিরের মনে হচ্ছে বাস যেন আর কোনোদিন না থামে,এভাবেই আজীবন যেন বাস চলতে থাকে আর সে শুধু তার পাশে বসে থাকা তিন্নি কে দেখে যাবে এভাবেই আজীবন।



– হঠাৎ বাসটা বাম দিক ডানদিক করে খুব জোরে  টলতে লাগলো,পিছন থেকে একটা লরি খুব জোরে বাসটা কে ধাক্কা মেরেছে ,ড্রাইভার কোনোভাবেই বাসের ব্যালান্স ঠিক রাখতে পারছেনা। সামনে থাকা আরো একটা বাসে গিয়ে খুব জোরে ধাক্কা মারলো আবিরদের বাসটা। বাস ভর্তি লোকেরা সবাই নিজেদের জায়গা থেকে ছিন্ন ভিন্ন হয়ে গেলো,জানলার কাঁচ ভেঙ্গে  অনেকে রাস্তাতে গিয়ে পড়লো , আবিরের মাথাটা গিয়ে খুব জোরে সামনে গিয়ে টুকলো,তিন্নি গিয়ে পড়লো আবিরের গায়ে,আবিরের জন্য তিন্নির মাথাটা বেঁচে গেলো,তিন্নির সেরকম কিছু হলোনা। কিন্তু আবির বাঁচলো না , অত্যধিক ব্লিডিং এর জন্য এই ঘটনার কিছু সময়ের মধ্যেই এই পৃথিবী ছেড়ে আবিরকে চলে যেতে হলো।

– আসলে কিছু কিছু ভালোবাসা হয় পাশাপাশি থাকা দুটি রেল  লাইনের মতো,মাইল এর পর মাইল রেল লাইন দুটি একসাথে তো চলে কিন্তু কোনোদিন তারা এক হতে পারেনা,কোনোদিন তারা মিলে যেতে পারে না। আবির ও হয়তো সেরকমই এক রেল লাইন,যে রেল লাইন শেষ ৩ বছর ধরে তার পাশে থাকা রেল লাইনের সাথে অনেকটা পথ একসাথে পাড়ি তো দিয়েছিলো,কিন্তু কোনোদিন সেই দুটি  লাইনের উপর চলা কোনো ট্রেন এসে তাদের মিলিয়ে দিতে পারেনি।  মৃত্যুর আগে সে তার ভালোবাসার কথাটা জানাতে পর্যন্ত পারলোনা ! তবে এই পৃথিবী ছেড়ে চলে যাওয়ার আগেও সে তার জীবন দিয়ে তার ভালোবাসার মানুষটার জীবন রক্ষা করে গেলো।

Web Stories You Might Like

Share This Article
Leave a comment
Top 10 Places In usa That You Should Visit Once In Your Life ICC World Cup Final:This star player of India will not play the final match against Australia Top 10 Visiting Places In Ahmedabad During Icc World Cup Amazing Butter Chicken Recipe That Everyone Will Appreciate ভুয়ো ভিডিওতে রশ্মিকা, উত্তাল গোটা নেট দুনিয়া, গর্জে উঠলেন অমিতাভ বচ্চন