প্রিয় ,
অঞ্জন দা
“যে টেলিফোন আসার কথা সে টেলিফোন আসেনি। প্রতীক্ষাতে প্রতীক্ষাতে সূর্য ডোবে রক্তপাতে”- কবি পূর্ণেন্দু পত্রী’র এই দুখানা লাইন কেন জানি মনের ভিতর সারাক্ষণ বাজে আজকাল। আচ্ছা, অঞ্জনদা চাকরিটা ঠিকই পেয়েছিলে তুমি, তাই না?
ঐ চাকরির খবরটা যদি আমাকে দিতে তবে স্বর্ণেন্দুর সাথে বিয়েটা আটকাতে পারতাম। এখন সারা বাংলার মুখে মুখে যে বেলা বোসের গানটা, সেই বাংলার মানুষ কি খবর নিয়ে দেখেছে অঞ্জনের বেলা কেমন আছে?
.
না তো! তারা কেউ জানে না, তারা জানে না অঞ্জনের করা ফোনটা কখনও আসেই নি বেলার কাছে। অঞ্জন দা যদি ফোন করেও থাকে তবে ঐ ফোনটা বেলার কাছে আসে নি। ঐদিন বেলা চুপ করে কাঁদে নি কেঁদে ছিল বটে, তবে হবে হয়তো কোনো রং নাম্বারের কেউ। ১০/১২ বার ভুল নাম্বারে যে ডায়েল করতে পারে সে কি কখনও ঠিক নাম্বারে ফোন করেছিলো অঞ্জন দা?
.
সাদা কালো এই জঞ্জালে ভরা মিথ্যে কথার শহরে তোমার আর আমার লাল নীল সংসার গড়ে তোলা আর হয় নি। যেদিন বুঝতে পেরেছি চাকরিটা তুমি আমার বিয়ের আগের দিনই পেয়েছো তবে জানতে পারি নি আমি, সেদিনই তোমার দেওয়া চিঠি গুলো উড়িয়ে দিয়েছি। কি প্রয়োজন বলো, শুধু শুধু স্মৃতির আকাশ আরো বড় করার?
চিঠি গুলো অতীত হয়েছে, ফোন নাম্বারটাও ভুলে গেছো। তবে নাম্বারটা তোমার ঐ গানের ভিতরেই বেঁচে আছে অঞ্জন দা। ২৪৪১১৩৯…
.
এখন আমি বাপের বাড়িতেই থাকি। বাবা টেলিফোন লাইন কেঁটে দিয়েছেন, এখন আর কেউ ঐ টেলিফোনে ফোন করে না। আমার স্বামী স্বর্ণেন্দুও না। কি করে ফোন করবে ও আমার পড়নে যে সাদা থান..!
ওর এক্সিডেন্ট হয়েছিলো বিয়ের ১ বছরের মধ্যে। বিয়েটা অমতে হয়েছিলো ঠিকই, তবে আমার মানুষ খাঁটি ছিল অঞ্জনদা। ওর সাথেই গুছিয়ে সংসার করতে চেয়েছিলাম জানো তো।তাও যে হলো না, বেলা বোসের মতো কপাল যেন কারো না হয় অঞ্জন দা। তোমাকে নিয়ে এখন আর ভাবি না।
.
তোমাকে নিয়ে ভাবা তো পাপ আমার কাছে। স্বর্ণেন্দু চলে যাওয়ার পর আমার পৃথিবীতে রঙ নেই,সুর নেই,নেই কোনো আলোর আভা। তবুও তোমার ফোনের আশায় থাকি, জানি এক বিধবা মেয়ের অন্য পুরুষের কথা ভাবা মস্তো বড় পাপ সমাজে।
আমি জানি, সে টেলিফোন আর আসবে না কোনো দিন সে চিঠি খুঁজে পাওয়া যাবে না কখনও॥
.
ইতি,
২৪৪১১৩৯…