গেটটা বন্ধ হতেই রাজদীপের চোখের কোণে জল চিকচিক করে উঠল। বহু বছরের কষ্টের যেন আজ সমাপন হলো।
মৈত্রেয়ীর চিরকালের গর্ব ছিল ছেলে অনন্য কে নিয়ে। স্কুলে ছেলেকে নিতে এসে, দিতে যাওয়ার সময়, সেই গর্বের লেশ শুধু চোখে- মুখেই লেগে থাকতো না, আশেপাশে সকলকে বুঝিয়ে ছাড়তো তার ছেলে পড়াশুনায় কত ভালো। ক্লাসের ফার্স্ট বয়। যত বড় হয় ছেলের গর্বে আর মাটিতে পা পড়তো না মৈত্রেয়ীর। রাজদীপ পড়াশুনোয় কোনদিন অনন্যর ধারপাশ দিয়ে যেত না। রাজদীপ ও অনন্যর এক পাড়ায় বাড়ি,তাই রাজদীপের মা’ কে দেখতে পেলেই ইশারা ইঙ্গিতে অনেক কথা শুনিয়ে দিত মৈত্রেয়ী। তার ছেলে কত ব্রিলিয়ান্ট। অনন্যর মতো ছেলের জয়েন্টে চান্স পাওয়া কোনো ব্যাপার ই নয়। চান্স পেয়েছিল অনন্য ইঞ্জিনিয়ারিং এ। পড়ার পর চাকরী। তারপর ইউ. কে তে অনেক বছর হল সেটেলড। রাজদীপ বাবার ছোট দোকানকে বড় করে ‘দি গ্রসারি শপ’ নাম দিয়ে একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর খুলেছে বাড়ির পাশেই। ভালোই চলে। মাধ্যমিকে সেকেন্ড ডিভিশন পাওয়া ছেলে বাবা-মা, ছেলে, বৌ নিয়ে দিব্যি সংসার করছে। অনন্যর সময় হয় না এদেশে আসার। বাবা চলে গেছেন। মা একা থাকেন। আজকাল শরীর টাও বড্ড খারাপ থাকে।
ছোটবেলায় অনন্যকে রাজদীপের সাথে মিশতে দিত না মৈত্রেয়ী। মুদির দোকানদারের ছেলে বলে।
কাল ও গিয়েছিল মৈত্রেয়ী সকালে রাজদীপের স্টোরে। সাবু কিনতে। কাজের মেয়েটা আসেনি তাই সাবু ভিজিয়ে খাবে বলে। আর আজ সকালেই কাজের মেয়েটা দৌড়ে দৌড়ে এসে বলল-দাদাবাবু চলেন, মাসিমা দোর খুলতাসে না। রাজদীপ দোকানের একটা ছেলেকে নিয়ে মৈত্রেয়ীর বাড়ি গিয়ে দরজা ভেঙ্গে ঢুকে নিথর দেহ পেয়েছিল। কাছের নার্সিংহোমে নিয়ে যেতে ডেথ সার্টিফিকেট মিলেছিল। ম্যাসিভ কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট। শরীর খারাপের খবরটুকু দিতে পারেনি কাউকে।
অনন্যকে রাজদীপ ফোন করে খবর দেওয়ায় বলেছিল- যা হওয়ার তো হয়েই গেছে, মুখাগ্নি টাও তুই করে দিস। এখন আর কি করতে যাব, প্রচুর কাজের চাপ। মৃত মানুষ তো আর দেখতে পাচ্ছে না কে মুখাগ্নি করলো। ওসব আনসায়েন্টিফিক কনসেপ্ট।
চুল্লীর দরজা বন্ধ হতেই রাজদীপের বোধ হল, ভাগ্যিস সে ফার্স্ট বয় ছিল না, দিব্যি আছে পরিবারকে আগলে। ঈশ্বরের কাছে হাত জোড় করে বলল, আমার ছেলেটাও আমার মত লাস্ট বয় যেন হয়।