সকালে ঘুম ভাঙা থেকে অসহ্য পেটে ব্যথা,বিছানা ছেড়ে উঠতে গিয়ে দেখি সাদা হলদে চাদরে লাল দাগ ফুটে উঠেছে।
এ বাবা!!! 9টা বেজে গেছে, ভাই তো স্নান করে এক্ষনি এঘরে চুল আচড়াতে আসবে, তাড়াহুড়ো করে চাদর পাল্টে ফেলতে হবে!
এই লজ্জা , সঙ্গে অপরাধবোধ এটাই মেয়েদের বয়ে বেড়াতে হয় । আমরা পুরুষ তাই কখনোই বুঝে উঠতে পারিনা , এ কেমন অসুখ , এ কেমন লজ্জা ..!
যখন একটি মেয়ের প্রথম পিরিয়ড হয়, বাড়িতে স্যানিটারি আনা হলে ভাই খুব কৌতুহলের সাথে জিজ্ঞেস করে ফেলে ,
-ওটা কী??
কিছুটা লজ্জিত ভাবেই মেয়েটি হয়তো বলে ওঠে
-one kind of bread 🍞.
সেটা শুনে ভাই খেতে চাইলে, বলতে হয়
‘বড় দের খাবার এটা।
-তুই কি বড় নাকি? লোভী কোথাকার!!
-তোর থেকে তো বড়! যা এখান থেকে।
এমন এক লজ্জা যা নিজের ভাইকেও বলা যায়না ..
লজ্জা!!!! হ্যাঁ, এই অনর্থক লজ্জাশীলতা আজন্ম আমাদের ঘাড়ে চেপে ছিল, আছে, থাকবে। (জানি, অনেকে আমার এই পোস্ট পড়ে ভ্রু কুচকে বলবে, ছেলে হয়ে এমন কেউ লেখে নাকি!, অনেকে ভীষণ রকম সমর্থন করলেও বলতে ইতস্তত বোধ করবে, কারণ -লজ্জা 😊)
ক্লাস চলা কালীন হিসু পেলে নির্দ্বিধায় বলতে পারি, -“স্যার, টয়লেট যাব? “
কিন্তু হঠাৎ একটি মেয়ের পিরিয়ড হয়ে গেলে????
(সে ফিলিংস আর ব্যখ্যা করে বলতে হয় না)
রোজ স্নান করে ঠাকুরকে ধূপ দেখিয়ে ফুল দেওয়া (অনেকেই অবশ্য খুব একটা ভক্তিমতী না, জাস্ট এটা পজেটিভ এনার্জীতে আস্থা রাখা মাত্র )
এ ক’দিনের জন্য মেয়েটির পূজোর ফুল দেওয়া বন্ধ। লাইট কালারের জামাকাপড় গুলো ইগনোর করাই ভালো, পাছে দাগ লেগে যায় আর সবাই বুঝে নেয়, তাই পিরিয়ড হয়েছে!! এ অবস্থায় কারো বাড়ি গেলে বিছানায় বসতে চায় না, যদি দাগ লেগে যায়, তার চেয়ে লজ্জার আর কিছু থাকবে না! ট্রেনে বাসে চাপতে ভয় হয়, বেস্ট ফ্রেন্ডকে বার বার বলতে হয়, “একটু দেখে দে না রে! “
বার বার মনে হয় কী ভীষণ অপরাধ করে ফেলেছে সে ।
সক্কাল সক্কাল পেটে ব্যথা নিয়েও তড়িঘড়ি বিছানা তুলতে হয়, চাপা রং এর পোশাক গায়ে চরাতে হয়,
দাগ যেন কেউ দেখে না ফেলে!
কেউ যেন জেনে না ফেলে মেয়েটির পিরিয়ড হয়েছে ।
এতদিনেও মেয়েটির শারিরীক অসুবিধা গুলো কেউ দেখে না 😊😊
পিরিয়ড নিয়ে লেখা স্যানিটারী পোষ্টার যতই লাগানো হোক, আমরা তবুও আমাদের লজ্জা নামক গর্ত থেকে মাথা উঁচু করতে পারি না কখোনোই।
মেয়েরাই নিজেদের স্বাভাবিক শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া নিয়ে লজ্জিত,আবার আশা করি ছেলেরা সন্মান দিয়ে ভাববে “it’s natural “!!!😀😀
কেন ভাই??? কেন এটাকে স্বাভাবিক হরমোনাল ক্রিয়াকলাপ বলতে এত অাপত্তি??
ঠাকুর ঘরে যেতে নেই একথা আমরা সবাই জানি। কিন্তু কেউ কি জানি কেন যেতে নেই??নাহ্!!!
কিসের এত লজ্জা, এত অস্পৃশ্যতা, এত অপরাধ বোধ, এত অপবিত্রতা????
….
কেন এত লজ্জা , কেন এত কুণ্ঠা ? কেন পিরিয়ডকেও আর পাঁচটা সাধারণ ব্যাপার ভাবা হয় না ? অসুখ ! এটা কোন অসুখ নয় । নিঃস্বাস – প্রশ্বাসের মতোই স্বাভাবিক জৈবিক প্রক্রিয়া ।
মেয়েরা আজ মহাকাশে চলে গেছে , ইসরো, নাসার মতো বৈজ্ঞানিক গবেষণাগারে সম্মানের সঙ্গে কাজ করছে । কত দেশের রাষ্ট্রপ্রধান , প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপতির পদে বসে মেয়েরা দেশ চালাচ্ছে ।
সত্যি ভাবতে অবাক লাগে , যে দেশে দেবীকে এত পূজা করা হয় , সেই দেশেই পিরিয়ড নামক স্বাভাবিক প্রক্রিয়া কে অশুচি ভাবা হয় !
আমরা কেন যেন , ভুলে যাই এই পিরিয়ড আছে বলেই তো আমরা পৃথিবীতে জন্মাতে পেরেছি ।
প্রতিবার পিরিয়ডে প্রতিটি মেয়ে তার নারীত্বকে খুঁজে পায়। নিজের মধ্যে মাতৃত্ববোধ কাজ করে!!
হ্যাঁ, প্রতিবার পিরিয়ড একটি মেয়েকে বলে, এই মেয়ে, তুমিও মা হতে পারো ।
তাই লজ্জা নয়…. হোক গর্ব বোধ !!!!
কারন, নারী তুমি তিলোত্তমা ….