Bangla Premer Story
অল্প অল্প প্রেমের গল্প
__”শোনো অর্পণ তোমার ওয়ালেট,রুমাল সব জায়গা মত গোছানো আছে। আর লাঞ্চ বক্সে স্যান্ডউইচ ভরে দিয়েছি সময় করে খেয়ে নিও।আমি বেরোলাম”;এই বলে অর্পণের মুখের দিকে একটু তাকায় কুহু। বিছানায় বসে কোলে ল্যাপটপ নিয়ে কাজের মধ্যে ডুবে থাকা অর্পণের তরফ থেকে শুধু একটাই উত্তর আসে “হুম”। আর এক মুহূর্ত দাঁড়ায় না কুহু। ঘর থেকে প্রায় ছিটকে বাইরে বেরিয়ে আসে। গলার কাছে একটা একরাশ কান্না আর অভিমান দলা পাকিয়ে ওঠে ওর।
অফিস যাবার পথে গাড়িতে যেতে যেতে কুহু ভাবে সত্যি গতির দৌড়ে ভালোবাসার সব আবেগ আর অনুভূতিগুলো কেমন মিথ্যে হয়ে যায়। সম্পর্কের রং কি সত্যিই ফ্যাকাশে হয়ে আসে? আজ ওর জন্মদিনটাও সেটাও অবলীলায় ভুলে গেছে অর্পণ।সময়ের সাথে সাথে প্রতিটা দাম্পত্যই চেনাপরিচিত রাস্তাতেই হাঁটে, এটাই বোধয় নিয়ম। নইলে যে অর্পণ বিয়ের আগে কুহুর একটাও জন্মদিন মিস করত না সে আজ কিকরে এতটা নির্বিকার থাকতে পারে? এক অফিসে চাকরি করত ওরা দুজনে। সেই প্রথম আলাপ পরিচয় শুরু। ভালো বন্ধু থেকে আরম্ভ করে বিয়ের সিদ্ধান্ত সবকিছুই সুন্দর ভাবে সুসম্পন্ন হয়েছিল্ ওদের। এখন অবশ্য অর্পণ অন্য অফিসে জয়েন করেছে।যাইহোক সেসব ভাবনা ছেড়ে ফোনে নেটটা অন করতে কুহু দেখে বন্ধুদের ভার্চুয়াল অভিনন্দন আর শুভকামনায় ফেসবুকের দেওয়াল উপচে পড়ছে। সকালে কুহুর মাও ফোন করে ডেকেছিল ও বাড়িতে কিন্তু অফিসে কাজের চাপে যাওয়া হবেনা ওখানে বলে মাকে জানিয়ে দিয়েছে ও। অগত্যা একরাশ অভিমানকে সঙ্গী করে অফিসে পৌঁছায় কুহু। কাজের শেষে সহকর্মীরা কেক কেটে সেলিব্রেশন করে। একটু কাছের কেউ কেউ বলে, “কি কুহু হাবি কি সারপ্রাইজ দিল আজ?” কুহু মনে মনে বলে “সারপ্রাইজ না আরো কিছু। উইশটুকু পর্যন্ত যে করেনি এটা আর কাকে বলবে এখানে?সহকর্মীরা তো আর সকলে সেভাবে বন্ধু
হয়না। কাজের জগতে সবকিছুই মেপে দেখে জেনে বুঝে কথা বলতে হয়।
দুষ্টু মিষ্টি রোমান্টিক প্রেমের গল্প
ফেরার পথে কুহু ভাবে আজ কি বাড়ির জন্যে কিছু প্যাক করে নিয়ে যাবে বিরিয়ানি বা চিকেন তন্দুরি? অর্পণটা বড্ড ভালোবাসে খেতে।তারপর ইগোর বশে ভাবে না থাক যেচে পড়ে জানান দেবার দরকার নেই আর ভুলে গেছে যখন থাক। বাড়িতে পৌঁছে চাবি দিয়ে দরজা খুলতে গিয়ে দেখে দরজা ভিতর থেকে বন্ধ। বুকটা ছ্যাৎ করে ওঠে ওর।অর্পণ তো কাজ থেকে এত তাড়াতাড়ি ফেরেনা। তবে ভিতরে কে আছে? সাহস করে কলিংবেল দিতে দিতেই অর্পণ এসে দরজা খুলে দেয়।কুহু দেখে অর্পণের চুলগুলো উস্কোখুস্কো, কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম।তবে কি ওর শরীর খারাপ? সত্যি অফিসের এত প্রেসার যায় ওর উপর দিয়ে। কুহুরও সময় হয়না সেভাবে ওর কথা জানার, ওর দিকে তাকানোর।রুটিনমত বাড়ি ফিরে রান্নাঘরে ঢুকে যায়,তাছাড়া সংসারের খুঁটিনাটি কত কাজ থাকে।আজ ওকে দেখে সত্যিই খুব লজ্জিত হয় কুহু। দুজন মিলে ভালো থাকার জন্যই তো এতকিছু করছে মানুষটা। পিছন থেকে কখন অর্পণ এসে ওর পিছনে দাঁড়িয়েছে খেয়াল করেনি কুহু। সম্বিত ফিরল অর্পণের ডাকে “কি ম্যাডাম কি এত ভাবছেন বলুন তো সেই থেকে দাঁড়িয়ে?কোনো শরীর খারাপ হয়নি আমার।আই অ্যাম পারফেক্টলি অল রাইট। ওই রান্নাবান্না করতে করতে একটু ঘেমে গেছি। তুমি জলদি ফ্রেশ হয়ে নাও বেরোব দুজনে একসাথে। আজ মেনুতে তোমার পছন্দের হাক্কা নুডুলস,চিলি চিকেন আর কাস্টার্ড। ওইটুকুই বানালাম আর কি ইউ টিউব দেখে। আমি ওগুলো টিফিন ক্যারিয়ারে ভরে নিচ্ছি।গাড়িতে যেতে যেতে পেটপুজোর ব্যবস্থাটা তো রাখতে হবে তো?”
নতুন রোমান্টিক গল্প
কুহু বলে “মানে এসব আমি তো কিছুই বুঝতে পারছিনা।” অর্পণ হেসে বলে “তুমি কি ভেবেছিলে আমি ভুলে গেছি আজ আমার মহারানীর জন্মদিন। মোটেও তা নয় ডার্লিং। সকালে তোমার সঙ্গে ওই নাটকটুকু না করলে যে এখনকার সারপ্রাইজটা থাকতনা তার জন্যে কান মুলছি এই। গত কয়েক বছর অনেক তো হল বার্থডে উপলক্ষে ক্যান্ডললাইট ডিনার, বন্ধুদের নিয়ে পার্টি এসব। এমনিতে সময় পাইনা কাজের চাপে তাই এবার ভাবলাম এবার শুধু তুমি আর আমি মিলে সেলিব্রেট করবো, কোয়ালিটি টাইম কাটাব। আর অবশ্যই লং ড্রাইভে যাব তুমি আর আমি মিলে।” গাড়িতে যেতে যেতে কুহু অর্পণের পুরুষালি কাঁধে মাথা রাখে আর বলে,” আমি বুঝেছি অর্পণ প্রতিদিনকার রান্নায় একঘেয়েমির জিরে, পাঁচফোড়ন থেকে বেরিয়ে যেমন মাঝে মধ্যে গরমমশলা, দারচিনি দিয়ে রান্না আলাদা স্বাদ আনে ঠিক তেমন স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক গভীর করে এই টুকরো টুকরো ভালোবাসার মুহূর্তগুলি।”
মৃদু হেসে অর্পণ এবার বলে “সুন্দর মুহূর্তের কাছেই তো আমরা প্রত্যেকে ঋণী। মুহূর্তকে নিয়েই তো প্রতিদিন বেঁচে থাকা তাইনা?”
কথাগুলো শেষ করে অর্পণ গলা ছেড়ে ধরে কুহুর ভীষণ প্রিয় একটা গান
“তোর হাসি দেখে বৃষ্টিতে কেন ভেজে মন আনমনে/চেনা ছবি যেন রূপকথা সেনোরিটা তোর গানে/ডাকে তোকে আজ স্বপ্নেরা কোনো অচেনা রিংটোনে/শোনায় অল্প অল্প/অল্প অল্প প্রেমের গল্প”।।।
(সমাপ্ত)
আরো পড়ুন, এতটা ভালোবাসি 4