দূর্গাপূজার গল্প ২০২৩ (Durgapuja Story In Bengali) – পূজো সংখ্যা 2023

Bongconnection Original Published
18 Min Read

 দূর্গাপূজার গল্প ২০২৩ (Durgapuja Story In Bengali) – পূজো সংখ্যা
2023

দূর্গাপূজার গল্প ২০২৩ (Durgapuja Story In Bengali) - পূজো সংখ্যা 2023
Loading...

দূর্গাপূজার গল্প ২০২৩

“একটা পূজোর গল্প”🍁🍀🌿🌼🌺🌹🌸
=============================
পঞ্চমী সকাল💓🍁🍀🌿🌸🌺
কাউন্টার থেকে ব্যাগটা নিয়ে হন্ হন্ করে দোকান থেকে বেরিয়ে এলো উশ্রী, বাইরে
বেরোতেই একরাশ বিরক্তি তে চোখ কুঁচকে গেল ওর। একটা বিশ্রী দমবন্ধ করা ভ্যাপসা
গরম।এসি থেকে বেরিয়ে আরো বেশি গরম লাগছে, দোকানের সামনে সারি সারি গাড়ি
পার্কিং করে রাখা বেরোবার রাস্তাটুকু পর্যন্ত নেই। 
“এই যে ম্যাডাম ! উফ! কখন থেকে ডাকছি ,কানে কম শোনেন নাকি ?”
“কি ব্যাপার ? ষাঁড়ের মতো চেঁচাচ্ছেন কেন কানের কাছে এসে ?”
“কারণ আপনি অন্ধের মতন অন্যের ব্যাগ নিয়ে হাঁটা দিয়েছেন।”
“মানে ?,কি বলতে চাইছেন ? “
“আমি কিছুই বলতে চাইছি না । আপনি বলতে বাধ্য করেছেন ।”
“আমি ! আমি! বাধ্য করছি ! আমি আপনাকে চিনি না জানি না কোন দিন দেখিনি পর্যন্ত ।
না না দেখেছি দোকানে সর্বক্ষণ পিছন পিছন ঘুরছিলেন …”

“আপনার পিছনে ! OMG …no doubt আপনি সুন্দরী ..তাই বলে এতটা ভুল ধারণা মনে হয়
ঠিক নয়।”
“What do you mean?” উত্তেজনায় একটু চিৎকার টা একটু জোরেই করে ফেলে উশ্রী
অনেকেই ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাচ্ছে।
 অর্ন কথা না বাড়িয়ে বলে ,”আপনি আমার জুতোর ব্যাগটা উঠিয়ে নিয়ে চলে
এসেছেন।উশ্রীর দিকে  আপাদমস্তক  একবার তাকিয়ে নিয়ে আবার বলে…
“আপনা হয়ত জেন্টস সু পরতে অসুবিধা হবে না …কিন্তু আমার পক্ষে লেডিস হাইহিল
ম্যানেজ করা সম্ভব নয়।”
” ও আচ্ছা কে কি কিনছে সেটা পর্যন্ত লক্ষ করা হয় … বলতে বলতে নিজের হাতের
প্যাকেটটার দিকে তাকিয়ে একটু অস্বস্তিতে পড়ে উশ্রী …ওর ক্যারি ব্যাগে দু
জোড়া লেডিস চটি ছিল। কিন্তু এটাতে একটা জেন্টস জুতো ।,সরি ! বলে প্যাকেটটা
এগিয়ে দেয়। নিজের প্যাকেটটা নিয়ে এগিয়ে যায় গট্গট করে।
আবার বিপত্তি । স্কুটির দুপাশে এমন ভাবে দুটো বাইক রাখা যে কোন মতেই বের করা
যাচ্ছে না।সিকিউরিটির লোকটা নির্লিপ্ত ভাবে অন্যদিকে তাকিয়ে আছে।
ব্যাপার টা লক্ষ করে অর্ন এগিয়ে আসে। দু হাতে টেনে  পাশের বাইকটাকে
সরিয়ে দিতেই উশ্রী অনায়াসে স্কুটিটা বের করে নিল। টি শার্টের উপর দিয়ে ফুলে
ওঠা বাইশেপ কি  একটু মুগ্ধতা এনে দেয়,”ধন্যবাদ”।

Puja Sankhya 2023

Loading...
 ষষ্ঠী সন্ধ্যা🍁🍀🌿🌺🌼🍁🍀🌿🌺🍁
“শ্রী শ্রী ! ” 
মায়ের ডাকে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে শ্রী ,”কি বল !”
“একবার শুনে যা তো !”
“বল ।”
“এই নে চাবি ,গিয়ে শ্রীদামের  ঘর থেকে পঞ্চপ্রদীপ,শঙ্খ ,কোশাকুশি,রেকাবি
ঠাকুরের সব বাসন বের করে নিয়ে আয়। শোন একা পারবি না অর্ঘ বা বিষ্ণু কোন একটা
ছেলেকে নিয়ে যা। বাসন গুলো ভারি আছে ।”
চাবি নিয়ে উশ্রী এদিকে ওদিকে তাকিয়ে বিষ্ণু বা অর্ঘ কাউকে দেখতে পেল না ।”
টাট্টু এই টাট্টু”..
“কি বলছ শ্রী দিদি ?” একটা আট নয় বছরের বাচ্চা এগিয়ে এলো ।
“শোন আমি শ্রীদাম দার ঘর থেকে ঠাকুরের বাসন  আনতে যাচ্ছি , অর্ঘদা,
বিষ্ণুদাকে দেখতে পেলে পাঠিয়ে দে তো।”
“আচ্ছা !”
 উশ্রী শ্রীদামের ঘর খুলে দেখে ঠাকুরের সব বাসন ঘষেমেজে চকচকে করে রাখা
হয়েছে।ওর মা তৃপ্তিদেবীর উপর দায়িত্ব দিয়ে কমিটির লোকজন এইসব ব্যাপারে একদম
নিশ্চিন্ত থাকেন। মা ভারী শরীর নিয়ে বেশী দৌড় ঝাঁপ করতে পারেন না বলে পূজোর
আয়োজনের সব দায়িত্ব দেওয়া হয় ওনাকে গত বারো বছর ধরে উনি নিখুঁত ভাবে সেই
আয়োজন করে আসছেন।
আরো পড়ুন,
পিছনে পায়ের শব্দ পেতেই উশ্রী বলেওঠে,
“অর্ঘদা বিষ্ণু দা তোমরা দুজনে মিলে বড় বাসন গুলো নিয়ে যাও আমি ঠাকুরের ছোট
বাসন গুলো নিয়ে যাচ্ছি।”
“হ্যাঁ ,যা ফড়িং এর মতো চেহারা আপনার ঐ বড় বড় বাসন গুলো তোলা তো দূরের কথা
নাড়াতে ও পারবেন বলে মনে হয় না।”
“আপনি ? আপনি এখানে !!! কি করে ? কেন ? কে আসতে দিয়েছে আপনাকে ? খুব সাহস তো
আপনার !! শেষ পর্যন্ত এখানে ও … দাঁড়ান দেখাচ্ছি আপনাকে ……শ্রীদাম দা !

“কি হলো কি হয়েছে রে শ্রী ?  ওমন তাড়কা রাক্ষসীর মতো চেঁচাচ্ছিস কেন ?
আরশোলা দেখেছিস নাকি ?”

“না ! না ! কোথা থেকে যেন একটা হুলো বেড়াল ঢুকে পড়েছে ।”
” কি বলছিস ? ….আরে অর্নদা তুমি ! “
“তুমি চেনো ওনাকে ? ” 
“হ্যাঁ ,চিনবো না কেন ? আমাদের G Block এ 14 no flat এ তো ওনারা নতুন এসেছেন।”
“ওটা তো অনু জঠিমাদের ফ্ল‍্যাট!”
“হ্যাঁ, অর্নদা তো জেঠিমার ছেলে, দিল্লী তে থাকেন দু দিন হল এসেছেন ।তুই কবে
এলি ?”
“আমি কাল সকালেই এসেছি”।
“নে ! চল চল এখন বাসন গুলো নিয়ে যাই পড়ে আলাপ করা যাবে।”
“তুমি চিন্তা  করো না অর্ঘ আমাদের আলাপ অলরেডি হয়ে গেছে , এরপর বিলাপ ও
কমপ্লিট এখন প্রলাপটাই বাকি …. আশা আগামী চারদিনে সেটাও হয়ে যাবে।কি বলেন ?
” আমি যাচ্ছি , চাবি রইল …” 
রাগে গজগজ করতে করতে উশ্রী চলে গেল ।

পূজোর গল্প 

সপ্তমী সকাল 🍁🍀🌿🌺🌼
ভয়ে ,দুঃশ্চিন্তায় , টেনশনে উশ্রী পাগল হয়ে যাচ্ছে । কি হবে এবার? …মা
জানতে পারলে ওকে আস্ত রাখবে না….তাও না হয় হোল , কিন্তু চাবি খুঁজে না পেলে
ঘরে ঢুকবে কি করে ।তালা ভাঙতে হবে ? 
 কাউকে কিছু বলতেও ‌পারছে না। সকালে সবাই মিলে কত আনন্দ করে জল ভরতে গেছে,
জানতে পারলেই ব্যস্ত হয়ে পড়বে।
অর্ন অনেকক্ষণ থেকেই লক্ষ করছে উশ্রী কেমন অস্থির হয়ে ছটপট করছে। কি হোলরে
বাবা এত সুন্দর প্রাণবন্ত মেয়েটার ? সবাইকে নিয়ে আনন্দে মেতে থাকার একটা সহজ
প্রবৃত্তি আছে ওর মধ্যে। আজ কি হোল ? নিশ্চয়ই বয়ফ্রেন্ডের সঙ্গে ঝগড়া হয়েছে
! মনটা একটু দমে গেল অর্নর।
মস্তিষ্কে ধোঁয়া দিতে গেটের দিকে এগিয়ে গেল। সিকিউরিটির গার্ডের ঘরের কাছে
আসতেই উশ্রীর কান্নাধরা গলার আওয়াজ পেয়ে দাঁড়িয়ে গেল অর্ন।
“সুকুমার দা কি হবে তাহলে ?”
“তুমি যাও আমি দেখছি !আজ পূজোর দিন বাজারে চাবি ওয়ালা পাওয়া যাবে না । তবে
আমার ভাইয়ের এক পরিচিত বন্ধু আছে তাকে ফোন করে দেখি….আহ ! কেঁদো না ! পূজোর
দিনে কাঁদতে নেই”
“মা ঠিকই বলে  আমি ভীষণ কেয়ারলেস, আমি বাড়ির চাবি হারিয়ে ফেলে ,সবার
পূজোর আনন্দটা নষ্ট করে দিলাম। ”
“কিছু হবে না ! তুমি যাও আমি দেখছি “
অর্ন সরে এলো , ফোন বের করে ,” হ্যালো , আমি অর্ন ,কাকু টাট্টু কে বলুন না
সবাইকে নিয়ে আমার সাথে প্যান্ডেলে দেখা করতে। ”  .. ঠিক ধরেছেন সামথিং
স্পেশাল।”
“তো টিম তোমরা মিশন KEY এর জন্য তৈরী তো .. শোন প্যান্ডেলে আশেপাশে আর BLOCK C
এর মাঝের স্পেস এটাই Vital area. … এখানেই তোমরা consantret কর …. কিন্তু
boys এটা একটা secert মিশন কেউ যেন জানতে না পারে ! Ok? ”
“Ok Boss !!!”
How is the জোস ?
High sir !!

দুর্গাপূজার রচনা গল্প 

“বালিকা তুমি কি কিছু মূল্যবান বস্তু হারাইয়াছ ?”
“তাতে আপনার কি ? আর আমি বালিকা ? আপনি কি ? Hee man !”
“So nice of you …I like it “
” দেখুন আপনি অর্ন না পর্ন যেই হোন না কেন আমি কিন্তু এখন ভীষণ ডিস্টার্ব আছি
আমাকে রাগাবেন না ! রাগলে আমি….!”
“আপনি কি এটা খুঁজছেন ? একটা  রিং শুদ্ধ বড় বডি লকের চাবি উশ্রীর মুখের
সামনে তুলে ধরে অর্ন।,”
” হ্যাঁ হ্যাঁ এটাই তো !!! কোথায় পেলেন এটা ….হে  মা দূর্গা thank you
,thank you ,_”
“আশ্চর্য বেইমান তো আপনি এত কষ্ট করে আমি আপনার চাবি খুঁজে দিলাম আর আপনি মা
দূর্গাকে ধন্যবাদ দিচ্ছেন !!”
উশ্রী হঠাৎ  স্থান কাল ভুলে অর্নকে জড়িয়ে ধরে বলে  ,”thank you so
much… আপনি যে কি উপকার করলেন আমি জীবনে ভুলবো না আর promise করছি আর আপনার
সঙ্গে ঝগড়া করবো না ‌‌”
“ঠিক আছে ঠিক আছে ! এবার একটু হাসুন । যদি ও রাগলে আপনাকে বেশী সুন্দর লাগে
তবুও চাইব পূজোর কদিন হাসিখুশি থাকুন। চলুন ওরা মনে হয় ঘট নিয়ে ফিরে এসেছে
এতক্ষণে।”
“হ্যাঁ চলুন!!!”
উশ্রী যেন উড়তে উড়তে চলে গেল !!!
অর্ন এক অদ্ভুত ভালোলাগয় ভেসে গেল Oh God!!! 
অষ্টমী—– সকাল🍁🍀🌿🌸🌼🌼🍁🍀
অর্ন সকাল থেকেই প্যান্ডেলে হাজির।এর আগে হাজার বলেও অনুষ্কা কোনদিন ছেলেকে
পাজামা পাঞ্জাবী পড়াতে পারেন নি….. অঞ্জলি দেওয়ার জন্য মন্ডপে নিয়ে যেতে
পারেন নি । এবার এই নতুন কমপ্লেক্সে এসে অর্ন একদম অন্য মানুষ …..ছুটে ছুটে
পূজোর কাজ করছে…. প্যান্ডেলে বসে আড্ডা মারছে….আজ আবার নিজে থেকেই পাজামা
পাঞ্জাবী পড়ে অঞ্জলি দেওয়ার জন্য রেডি।
“কি হলো বল তো ছেলেটার ? ” স্বামীর (জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়) দিকে তাকিয়ে বললেন
অনুষ্কা।
“ছেলে তোমার প্রেমে পড়েছে ‌। এখন তোমার কাজ হলো ঠিক ভাবে অবজারভেশন করে
পাত্রীটিকে খুঁজে বের করা ।তবে বেশী পরিশ্রম করতে হবে না ।কারণ এই কমপ্লেক্সে
টোটাল সাত আটটি বিবাহ যোগ্য কন্যা আছে তাদের মধ্যেই কেউ হবে ।”
” তুমি কেমন করে জানলে ? এমন সিওর হচ্ছো কি করে ?”
“গিন্নি চুল গুলো আমার রোদে পাকেনি । অভিজ্ঞতায় পেকেছে। আর মনে করে দেখ আমি
যখন তোমার প্রেমে পড়েছিলাম তখন আমি ও ঐ বয়সেই ছিলাম ।শুধু সরস্বতী পুজো টা
দূর্গা পূজো হয়ে গেছে ‌।”
“আহ! তোমার কি কোনদিন বুদ্ধিসুদ্ধি হবে না ? ছেলে বড়ো হয়ে গেছে ।”
” তো !!! কোন শাস্ত্রে লেখা আছে ছেলে প্রেমে পড়লে বাবাকে প্রেমের থেকে
রিটায়ার্ড হতে হবে ?” 
“উফ!! তোমাকে নিয়ে পারা যাবে না ! আমি মন্ডপে যাচ্ছি তুমি তাড়াতাড়ি তৈরী
হয়ে এসো।”


“এই অনু শোন না !”
“বল কি বলবে ? সবাই অপেক্ষা করছে ।”
“বলছি এ গাঙ্গুলিদের মেয়েটা কি যেন নাম ও যে কলকাতায় থাকে !”
হ্যাঁ হ্যাঁ উশ্রী !! কি হয়েছে তার ।”
“আরে কিছু হয়নি , মেয়েটি কে ভারী পছন্দ আমার । বেশ মিষ্টি ,প্রাণবন্ত ছটপটে,
অথচ একদম সিম্পল… তবে তোমার ছেলে যা গবেট দেখ হয়ত কোনো সাজুগুজু করা
মেনিকুইনের মতো মেয়ের প্রেমে পড়েছে।”
হ্যাঁ !! এখন তুমি ঐ আকাশ কুসুম ভাবো আমি চললাম অবশ্য তৃপ্তির মেয়েটা কে আমরা
ও খুব ভালো লাগে।  ..দূগ্গা দূগ্গা ..যা আছে মায়ের মনে তাই হবে।”
মন্ডপে অঞ্জলির মন্ত্র উচ্চারণ করতে করতে উশ্রী আড়চোখে দেখে ওর একটু পিছনেই
মোনালিসা র পাশাপাশি দাঁড়িয়ে চোখ বন্ধ করে বিড়বিড় করে মন্ত্র বলছে অর্ন ‌।
মোনালিসাকে আজ দারুন লাগছে । এত সকালে এমন সুন্দর করে সাজার সময় ও পেয়েছে ।
উশ্রী তো ভেবেছিল চুড়িদারই পড়বে নেহাত মা রাগারাগি করল তাই লালপাড় টিয়া
সবুজ কাঞ্জিভরম টা পড়েছে । কপালে একটা সবুজ টিপ ঠোঁটে ন্যাচারাল লিপস্টিক ।
 মন্ত্রপড়া শেষ হাতের ফুল গুলো সবাই ঠাকুরের পায়ে ছূড়ে দিচ্ছে ।অর্ন
ফুল গুলো উশ্রীর মাথায় ঝরিয়ে দিয়ে মনে মনে বললো ,”হে মা দূর্গা তোমাকে
দেখিয়ে দিলাম …. এবার তোমার কেরামতি । যা করার করো .. যত তাড়াতাড়ি সম্ভব।
আরে একটা স্কোপ করে দাও আর শোন ওর মাথাটা একটু ঠাণ্ডা রেখো….যা রণচন্ডী ।
বাকীটা আমি ম্যানেজ করব।”

Durgapuja Story In Bengali

দশমী—সন্ধ্যা–🍁🍀🌿🌸🌼🌺- 
বিসর্জনের পর ফাঁকা মন্ডপে বসে উশ্রী ভাবছিল পূজো টা এবার যেন খুব তাড়াতাড়ি
শেষ হয়ে গেল। সপ্তমী অষ্টমী নবমীর আড্ডা ,অন্তাক্ষরী, সবাই মিলে ঠাকুর দেখতে
যাওয়া, ফুচকা কম্পিটিশন। দারুন কাটল শুধু অর্নর সঙ্গে মোনালিসার সবসময় চিপকে
থাকাটা কেমন যেন খোঁচা দিচ্ছিল । আসলে অর্নকে আর পাঁচটা ছেলের থেকে একটু আলাদা
মনে হয়েছিল। সেটা ভুল প্রমাণিত হওয়ায় যেন মেনে নিতে পারছে না । এই প্রথম খুব
সাধারণ হওয়ার জন্য একটু অভিমান হোল উশ্রীর। 
“কি ভাবছেন এখানে একা একা বসে? “অর্নর গলা শুনে একটু চমকে উঠল উশ্রী বলল,”না না
এই কদিনের কথা ভাবছিলাম কি দারুন কাটল কটা দিন।”
“কাল ফাংশনে কিন্তু পুরো একডজন গান শুনবো আপনার ।তার মধ্যে আমার পছন্দের হাফ
ডজন ।”
” বয়ে গেছে আপনাদের ফাংশনে গান গাইতে ।”
“আমাদের মানে ? আপনার নয় বুঝি ?”
” না না ! আসলে আপনি আর মোনালিসা ই তো হোস্ট করছেন তাই বললাম।”
” ও আচ্ছা ! কিন্তু গান গাইবেন না কেন ? “
” আমার থেকে ও ভালো আর্টিস্ট আছে ‌এই ক্যাম্পাসে । আমি তো গলা মেলানোর শিল্পী।”
” ওটা ই তো আপনার স্পেশালিটি , একা একা গাইতে সবাই পারে সে ভালো হোক বা মন্দ।
কিন্তু অন্যের সঙ্গে নিজেকে ঠিকঠাক মিলিয়ে নিতে সবাই পারে না।”
 ” তাই ! আমার সম্পর্কে এত উচ্চ ধারণার কারণ ?”
” কারণ আমি মানুষ চিনি। আমি জহুরি তাই রত্ন চিনতে ভুল হয় না।”
” তা জহুরি মশাই এ কদিনে মোনালিসা কে কতটা চিনলেন ? “
” ওহ !! হীরে একদম হীরে “
” তাহলে আংটি করে আঙ্গুলে পরে ফেললেই হয় ।বলেন যদি জেঠিমার কাছে আপনার দূত
হয়ে যেতে পারি।”
“কেন কেন ?”
“আপনার খুশীর জন্য “
“আচ্ছা আমার খুশীর জন্য আর কি কি করতে পারেন? “
“সব করতে পারি।”
সব ? 
হ্যাঁ ! সব ।
“মনে থাকে যেন । পরে পাল্টি খেলে হবে না ‌।”
” আমাকে দেখে আপনার তাই মনে হচ্ছে? “
” আমার  তো অনেক কিছুই মনে হচ্ছে ‌….যাক সে না হয় পরে একদিন বলা যাবে ।
কিন্তু ‌গান শোনানোর কি হবে ?” 
“কাল দেখা যাবে । শুভ বিজয়া । শুভ রাত্রি।”
“শুভ রাত্রি ।যান রেস্ট নিন সারাদিন খুব ধকল গেছে কাল যেন একদম ফ্রেশ মুখটা
দেখতে পাই ।”
বিজয়া সন্মীলনি 🍁🍀🌿🌼🌺🌸
ভীষণ ভালো ফাংশন হোল …অর্ন যে এত ভালো হোস্ট এবং অর্গানাইজার তা কেউ ভাবতেই
পারেনি । মোনালিসা ও একদিনের  প্রস্তুতিতে দারুণ সুন্দর নৃত্যনাট্য
পরিবেশন করল।উশ্রীকেও বেশ কয়েকটা গান গাইতে হোল
সবাই খুব খুশী…সবার শেষে মিষ্টি মুখ করে বাড়ি ফেরার পালা । উশ্রী 
অর্নকে মিষ্টি দিতে গেলে অর্ন বললো ,”আমার কাজটা করে দাও তারপর মিষ্টি খাব।”
উশ্রী খেয়াল করল আজ সকাল থেকে অর্ন ওকে তুমি বলছে । 
বলল,” আপনার আবার কি কাজ বাকি ?” 
” বা রে কাল যে বললে আমার খুশীর জন্য সব কিছু করতে পারো। “
উশ্রীর বুকের বাঁদিকে একটা কাঁটা ফুটল যেন কিন্তু হাসি মুখে বলল , “বলুন কি
করতে হবে ?”
“শোনো না আমার মা বাবা এখন আমাদের বাড়িতে তোমার মা বাবার সঙ্গে গল্প করছে ”
হ্যাঁ তো ? 
“তুমি এই সময় আমার মনের কথাটা একটু ওদের বলে দাও ।”
“ঠিক আছে সে না হয়ে বলে দিচ্ছি কিন্তু সেটা আমার মা বাবার সামনে কেন ?” 
“আরে বাবা তাহলে ওরা চট করে না করতে পারবে না ।”
“বেশ চলুন। “
বাড়িতে এসে অর্ন ওকে ভিতরে যেতে বলে বাইরে দাঁড়িয়ে রইল ‌। ঘরে ঢুকে উশ্রী
দেখল ওঁরা চারজন বেশ জমিয়ে গল্প করছেন । উশ্রী সবাইকে পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম
করল । তারপর অনুষ্কার পাশে বসে বলল ,”জেঠিমা তোমার কাছে একটা আবদার আছে আমার
।” 
“কি আবদার বল ?”
” তার আগে বল তুমি আমার আবদার টা রাখবে ।রাগ করবে না ।”
“আচ্ছা আগে তো শুনি !”
” জেঠু জেঠিমা অর্ন না আমাদের ক্যাম্পাসের একটি মেয়েকে পছন্দ করেছে আর ওকেই
বিয়ে করতে চায় । মেয়ে টা খুব সুন্দর ভালো মেয়ে তোমারাও তাকে চেনো ।plz
তোমরা না অমত কোর না । ওরা দুজন দুজনকে খুব ভালোবাসে । ওরা খুব সুখী হবে দেখ ।”
” তুই এত জানলি কি করে !”
“আমি জানি ।অর্ন আমাকে বলেছে ।”
“কে রে মেয়েটা ? যে আমার গাধাটাকে মানুষ করল?” 
” তার নাম …..”
” উশ্রী গাঙ্গুলি।” বলতে বলতে ঘরে ঢুকলো মোনালিসা ।
” তার মানে ? ” উশ্রী আর্তনাদ করে উঠলো।
“তার মানে অর্নদা যাকে ভালোবাসে তার নাম মোনালিসা আচার্যি নয় উশ্রী গাঙ্গুলী,
জেঠু/জেঠিমা তোমাদের কোন আপত্তি নেই তো?”
” আপত্তি ? আমার তো কোন আপত্তি নেই । আমি এ ব্যাপারে একদম রাজি …কি গো গিন্নি
তুমি কিছু বল!!”
” আমি আর কি বলবো ? আমিও রাজি ৷যাই মিষ্টি নিয়ে আসি ।”
“কি গাঙ্গুলি ভায়া আমার বেয়াই হতে কোন আপত্তি আছে নাকি ?….”
উশ্রী আর কিছুই শুনতে পেল না সে ছুটে ঘর থেকে বেরিয়ে এলো … লজ্জায় আনন্দে
সে ফুলঝুড়ি হয়ে উঠছিল। সে বাড়ির দিকে দৌড়তে লাগল ।
হঠাৎ একটা বলিষ্ঠ হাত তাকে টেনে নিল থামের আড়ালে । উশ্রী চেঁচিয়ে উঠতে গিয়ে
দেখল সে অর্নর বাহুপাশে ধরা পড়েছে ।
” আমার মিষ্টি কই ? ” উশ্রীকে জড়িয়ে ধরে বললো অর্ন ।
“এর মানে কি ? ” 
“এর মানে তুমি একটা বোকা মেয়ে ।”
কি ??? আমি বোকা ? …বাকী কথা চাপা পড়ে গেল উষ্ণতার আড়ালে ।
🍁🍀🌿🌺🌸🌺 শুভ বিজয়া

Share This Article