Raksha Bandhan Story In Bengali (রাখি বন্ধনের গল্প) রাখি পূর্ণিমা
স্টোরি
Raksha Bandhan Story
বলে,”কিছু একটা ঘটবে মনে হচ্ছে না?” বীথিকারও সেটাই মনে হচ্ছে। রাস্তার ধারে
অজস্র মানুষ দাঁড়িয়ে আছে। বেশ কিছু পুলিশও রয়েছে। পুলিশের এক উচ্চপদস্থ সাহেব
আধিকারিক ঘোড়ায় পিঠে বসে পুলিশকে বিভিন্ন নির্দেশ দিচ্ছে। ঠিক সামনেই মসজিদ।
সেখানেও অনেক মানুষের উপস্থিতি। পুলিশ ওদের ঘোড়ার গাড়িটা থামিয়ে দিল। এবার ভয়
পেয়ে গেল ওরা। বীথিকা বিড়বিড় করে বলে,”কী হচ্ছে রে বাবা!” ওদের গাড়ির ঠিক পাশে
দাঁড়ানো এক যুবক হঠাৎ চেঁচিয়ে উঠল,
“বাংলা ভাগ হতে দিচ্ছিনা- দেব না।” পুলিশ সাহেব কী বুঝল কে জানে! ঘোড়া
ছুটিয়ে এল। ধাক্কা দিল সেই যুবককে। উল্টে পড়ে গেল সে। তারপর যুবক ধীরে ধীরে উঠে
পড়ল। অদৃশ্য হয়ে গেল জনতার ভীড়ে। ওর হাত থেকে ছিটকে কিছু একটা ওদের গাড়ির পাশে
পড়ে রইল।
রাখি বন্ধনের গল্প
কাছে আসতে বোঝা গেল গান গাইছে তারা। আর একটু কাছে মিছিল এগোতে বোঝা গেল গানের
কথা। এই গান ওরা আগে শোনে নি- “বাংলার মাটি বাংলার জল”। বেশ ভালো লাগছিল
মণিমালার। বীথিকা বলে উঠল, ” এবার বুঝতে পেরেছি।” মণিমালা কৌতূহলী চোখে তাকাল
ওর সখীর দিকে। দুজনেই পাশাপাশি বাড়িতে থাকে। ছোটবেলা থেকেই বন্ধুত্ব। দুজনেই
পড়ে বেথুন স্কুলে। বীথিকা বলে, “কাকা বলছিল, লর্ড কার্জনের বাংলাভাগ করার
প্রতিবাদে আজ রবীন্দ্রনাথ রাখিবন্ধন উৎসব পালন করবেন।” মিছিল কাছে চলে এল।
প্রত্যেকে গান গাইছে। মিছিলের সামনে অনিন্দ্যসুন্দর এক মানুষ। মুখে দাড়ি। গান
গাইতে গাইতে এগোচ্ছেন। বীথিকা বলল,”রবি ঠাকুর-ঠাকুরবাড়ির সেই কবি। আমি একদিন
ওনার গান শুনেছি।” মণিমালা মন্ত্রমুগ্ধের মতো তাকিয়ে থাকে মানুষটার দিকে।
মসজিদের সামনে মিছিলটি থমকে গেল। গানও থেমে গেল। পুলিশসাহেব এগিয়ে গিয়ে
মানুষটাকে কী বোঝাচ্ছে। মানুষটা এমনভাবে মাথা নাড়ছেন, যে বোঝা যাচ্ছে তিনি
অসন্তুষ্ট হয়েছেন। এ কী! রবি ঠাকুর যে সোজা এগিয়ে যাচ্ছেন মসজিদের দিকে!
কিন্তু, বেশিদূর এগোতে হল না। মসজিদ থেকে বেরিয়ে এলেন এক মৌলবী। ধবধবে সাদা
দাড়ি। তিনি গিয়ে দাঁড়ালেন রবি ঠাকুরের সামনে। সবাই নীরব। কিছু একটা ঘটতে চলেছে।
পরক্ষণেই উপস্থিত জনতা সোল্লাসে চেঁচিয়ে উঠল। যেন মহাসমুদ্রের গর্জন।
রবীন্দ্রনাথ রাখি পরিয়ে দিয়েছেন সেই মৌলবীকে। মৌলবীও জড়িয়ে ধরেছেন
রবীন্দ্রনাথকে।
রাখি বন্ধন নিয়ে কিছু কথা
নীরবে দেখে যাচ্ছে। জনতা গর্জন করে ওঠে,শ্লোগান দিচ্ছে এবার। মণিমালার
খুব আনন্দ হচ্ছে। জনতার সঙ্গে বলতে ইচ্ছে হচ্ছে, “বঙ্গভঙ্গ মানছি না –
মানবোনা।” ধীরে ধীরে মিছিল আবার গান গাইতে গাইতে চলে গেল। ঘোড়ার গাড়ির দরজা
খুলে চকিতে নেমে একটু এগিয়ে হাত বাড়িয়ে সেই পড়ে থাকা জিনিসটা তুলে নেয় মণিমালা।
সেটা আর কিছু নয়- একটা রাখি। রাতে বাবা যখন ছাদে ঘুরছিল। তখন মণিমালা বাবাকে
বলে বিকেলের সব ঘটনা। বাবা দাঁড়িয়ে সব শুনল। তারপর বিষণ্ণ কণ্ঠে বলল,”রবি ঠাকুর
রোগটা ঠিক ধরেছে। এ শুধু বঙ্গভঙ্গের প্রস্তাবের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ নয়, ইংরেজদের
বিভাজনের রাজনীতির মুখেও একটা থাপ্পড়। ঠাকুরবাড়ির এই মানুষটা বুঝিয়ে দিল
ব্রাহ্ম, হিন্দু, মুসলমান- সবাই মিলেই তো বাঙালি- এই ভাবনার শরিক যেদিন সবাই
হতে পারবে, সেদিনই আসবে স্বাধীনতা।” আকাশে চাঁদ উঠেছে বটে, তবে মেঘের আড়াল থেকে
উঁকি দিচ্ছে। বাবা বলল, “এই গানটা উনি নতুন লিখেছেন। তুলবি?” মণিমালা মাথা নেড়ে
সায় দেয়। বাবার সঙ্গে গলা মেলায়। একটু পরেই ঝিরঝির করে বৃষ্টি নামে। নেমে আসে
দুজনে। ঘরে ঢুকে মণিমালা ব্যাগ খুলে রাখিটা বের করে বুকে জড়িয়ে ধরে। এই রাখিটা
যেন ওর জীবনের এক অমূল্য সম্পদ। তারপর হাতে পরে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে
দেখে। বাইরে তখনও বৃষ্টি ঝরছে।