রাখি বন্ধন উৎসবের ইতিহাস, তাৎপর্য, তিথি – রাখি বন্ধন সম্পর্কে কিছু কথা (Raksha Bandhan History, Importance)

Samaresh Halder
13 Min Read

রাখি বন্ধন উৎসবের ইতিহাস

শ্রাবণী পূর্ণিমা কে রাখী পূর্ণিমা বলা হয়। রাখী হল রাঙা সুতো যা মঙ্গলসূত্রে পরিণত হয় । সামান্যমাত্র সুতো দিয়ে প্রিয়জনকে মৈত্রী বন্ধনে বেঁধে রাখা যায় । রাখি বন্ধন উৎসব বা রক্ষা বন্ধন উৎসব ভারতবর্ষে একটি জাতীয় উৎসব । এই উৎসবকে কেন্দ্র করে সারা ভারতবর্ষে জাতি- ধর্ম – বর্ণ নির্বিশেষে প্রত্যেকেই প্রীতিবন্ধনে আবদ্ধ হয়। রাখি বন্ধন কথাটি রক্ষা বন্ধন থেকে এসেছে অর্থাৎ রাখি বন্ধনের মাধ্যমে একে অপরের রক্ষা করার প্রতিশ্রুতি পালন করা । আমরা রাখি বন্ধনের মাধ্যমে একে অপরের সাথে প্রীতি বন্ধনে আবদ্ধ হই এবং সাথে সাথে একে
অপরের রক্ষা করার প্রীতি পূর্ণ প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়ে থাকি । এই রাখি বন্ধন কবে থেকে শুরু হয়েছে তা আমরা কেউ বলতে পারি না । তবে এর পৌরাণিক মহত্ব ,ঐতিহাসিক সত্যতা এবং সামাজিক গুরুত্ব অপরিসীম ।

রাখিবন্ধনের পৌরাণিক ও ঐতিহাসিক গুরুত্ব

পৌরাণিক মাহাত্ম্যঃ 
————————-
1) কথিত আছে ত্রেতাযুগে দৈত্যরাজ বলি তাঁর তপস্যার বলে বলীয়ান হয়ে
স্বর্গরাজ্য পাওয়ার জন্য বিষ্ণুকে সন্তুষ্ট করেছিলেন । তিনি স্বর্গের দেবরাজ
ইন্দ্রকে পরাজিত করে স্বর্গরাজ্য লাভ করে খুব অহংকারী হয়ে পড়ছিলেন । বলিরাজা
অহমিকায় বলীয়ান হয়ে একটি মহাযজ্ঞ করেছিলেন এবং বলেছিলেন , ” যিনি যা প্রার্থনা
করবেন আমি তাঁকে তাই দান করব। আমি দান সত্রে কল্পতরু হব, আমার মত আর কেউ
শ্রেষ্ঠ দাতা হবে না” । ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলিরাজার এই দম্ভকে বিনাশ করার জন্য
বামন অর্থাৎ বেঁটে রূপ ধারণ করে ব্রাহ্মণবেশে বলির যজ্ঞস্থলে ভিক্ষা করতে
এসেছিলেন । ভিক্ষা প্রার্থনা করলে বলিরাজ তাকে ভিক্ষা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি
দিলেন এবং বললেন, ‘আপনি যা চাইবেন আমি তাই দেব ‘। বামনরূপী ব্রাহ্মণ তাঁর
প্রতিশ্রুতি আদায় করে তাঁকে বলেছিলেন, তিনি মাত্র ” ত্রিপাদ ভূমি ” প্রার্থনা
করেন । বলিরাজাও তাঁর সেই প্রতিশ্রুতি মতো ত্রিপাদ ভূমি দান করার প্রতিশ্রুতিও
দিলেন। ব্রাহ্মণ একটি পা স্বর্গে, একটি পা মর্ত্যে এবং তৃতীয় একটি পা অঙ্গ থেকে
বের করে বলিরাজাকে জিজ্ঞাসা করলেন যে এই তৃতীয় পাদখানি তিনি কোথায় রাখবেন ।
উপায়ান্তর বের করতে না পেরে বলি রাজা তৃতীয় পাদটি তাঁর মাথায় রাখার কথা
জানালেন । যেইমাত্র বামনরূপী বিষ্ণু তার তৃতীয় চরণটি বলির মাথায় রাখলেন ,
তখনই বলিরাজা পাতালে প্রবেশ করলেন। ভগবান বিষ্ণু বলিরাজকে বলেছিলেন – ‘তুমি এই
পাতালেই রাজত্ব কর আমি তোমার সমস্ত বিপদ-আপদ থেকে তোমাকেই রক্ষা করব এবং তোমার
এই দ্বারে আমি দ্বারপালক হিসাবে থাকব’।
এইভাবে দীর্ঘদিন যাবৎ ভগবান বিষ্ণু পাতালে বলি রাজার কাছে আবদ্ধ হয়ে রইলেন।
এদিকে স্বর্গলোকে স্বর্গমাতা লক্ষীদেবী দীর্ঘদিন যাবৎ প্রভু বিষ্ণুর অপেক্ষায়
দিন গুণছেন । বিষ্ণু কোথায় আছেন, তিনি তা জানেন না । মহর্ষি নারদ এর কাছে
বিষ্ণু সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি লক্ষ্মীদেবীকে জানালেন ভগবান বিষ্ণু বলিরাজের
পাতাল রাজ্যে আবদ্ধ হয়ে আছেন । তখন বিন্দুমাত্র কালক্ষেপ না করে লক্ষ্মীদেবী
স্বয়ং পাতালে বলির রাজ্যে সাধারণ মহিলার বেশ ধরে দীর্ঘদিন যাবৎ বলি রাজার সঙ্গে
সখ্যতা করলেন এবং বলি রাজার হাতে শ্রাবণী পূর্ণিমার দিনে রাখি পরিয়ে তার সঙ্গে
ভাতৃত্ববন্ধনে আবদ্ধ হলেন । কিছুদিন পর লক্ষীদেবী স্বয়ং নিজরূপ ধারণ করে বলি
রাজার কাছে তার স্বামী ভগবান বিষ্ণুকে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করলেন । বলি
রাজাও লক্ষ্মী দেবীর আগমনে সন্তুষ্ট হয়ে ভগবান বিষ্ণুকে লক্ষ্মীর কাছে ফিরিয়ে
দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেন । এই শ্রাবণী পূর্ণিমার দিনে রাখি বন্ধনের মাধ্যমে
স্বয়ং লক্ষ্মীদেবী বিষ্ণুকে ফিরে পেয়েছিলেন ।

রাখি বন্ধন উৎসব কবে পালিত হয়

2) একবার কোন এক সময় দেবতাদের সঙ্গে দানবদের মহাযুদ্ধ শুরু হয়েছিল । সেই যুদ্ধে দেবতারা সম্পূর্ণ রূপে পর্যুদস্ত হয়েছিলেন । দেবতারা রাজ্য হারা হয়ে দেবগুরু বৃহস্পতির কাছে আশ্রয় নিলেন এবং তাঁর কাছে স্বর্গরাজ্য পুনরুদ্ধারের
উপায় জানতে চাইলেন । গুরুদেব তাঁদের জানালেন দেবরাজ ইন্দ্রের বলবীর্য হীনতাই তাঁর পরাজয়ের মূল কারণ । এইজন্য শক্তি-সামর্থ্য ফিরে পাওয়ার জন্য শ্রাবণী পূর্ণিমার দিন

রাখি বন্ধন কেন পালন করা হয়

যেন বদ্ধো বলিরাজা দানবেন্দ্রো মহাবলঃ ।
তেন ত্বাং প্রতিবধ্নামি রক্ষে মা চল মা চল ।।
এই মন্ত্রটি বারবার উচ্চারণ করে লাল সুতো দিয়ে ইন্দ্রের হাতে রক্ষাকবচ হিসেবে বেঁধে দিলে দেবরাজ ইন্দ্র তাঁর হৃতবলবীর্য ফিরে পাবেন । গুরুর উপদেশে ইন্দ্র- পত্নী শচীরাণী ইন্দ্রের হাতে রক্ষাকবচ হিসেবে রাখী পরিয়েছিলেন । এখানে রক্ষাবন্ধনের মাধ্যমে শুধুমাত্র ইন্দ্রের মঙ্গল কামনা নয় ত্রিলোকের শান্তি কামনা করেছিলেন । পরবর্তীতে ইন্দ্র তাঁর শক্তি সামর্থ্য ফিরে পান এবং হৃতসাম্রাজ্য পুনরুদ্ধার করেন।

রাখি বন্ধন অর্থ

3) শোনা যায় শ্রাবণ মাসের রাখি পূর্ণিমার দিনে গণেশের হাতে ভগ্নী লক্ষ্মীদেবী এবং সরস্বতী দুজনেই রাখি পরিয়েছিলেন। তাই দেখে গণেশের দুইজন পুত্র ‘শুভ’ এবং ‘লাভ’ দুই ভাই বাবার হাতে রাখি পরাতে দেখে দুজনেই রাখি পরার জন্য কান্নাকাটি করছিল তাদের আবদার ছিল যে, আমাদের একজন বোনের প্রয়োজন যে আমাদের হাতে রাখি
পরিয়ে দেবে । তাদের বায়না নিবারণের জন্য গণেশ খুব চিন্তিত হয়ে পড়লেন। গণেশ মহাযজ্ঞ করলেন যজ্ঞের হোমাগ্নি থেকে একজন নারী মূর্তির আবির্ভাব ঘটল । পুত্রদ্বয়ের সন্তুষ্ট করার জন্য যে কন্যার জন্ম দিলেন তার নাম হল সন্তোষী । এই সন্তোষীদেবী তার ভাতৃদ্বয় অর্থাৎ শুভ এবং লাভের হাতে রাখি পরিয়ে দিয়েছিলেন। তাই শ্রাবণী পূর্ণিমার মহত্ব অনেক বেশী।
আরো পড়ুন,
4) আরেকটি পৌরাণিক কাহিনী আমরা সবাই জানি, ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জন্ম কংসের কারাগারে । দেবকীর অষ্টম গর্ভের সন্তানকে কংস হত্যা করবেন এরূপ নিশ্চিত হয়ে পিতা বসুদেব শ্রীকৃষ্ণকে নন্দ রাজার আলয়ে গোপনে রেখে এসেছিলেন । নন্দপত্নী যশোদা শ্রীকৃষ্ণকে স্তনদুগ্ধ পালন করিয়ে বড় করে তুলেছিলেন। শ্রীকৃষ্ণকে সমস্ত আসুরিক শক্তির হাত থেকে রক্ষা করার জন্য মা যশোদা শ্রীকৃষ্ণের হাতে রক্ষা কবজ হিসাবে রাখি পরিয়েছিলেন । এখানে মাতা তাঁর পুত্রের মঙ্গল কামনার্থে রাখি বন্ধন করেছিলেন।
5) যমরাজের ভগ্নী যমুনা এই শ্রাবণী পূর্ণিমার দিনে যমরাজের হাতে রাখি পরিয়ে
দাদার মঙ্গল কামনা করেছিলেন ।
6) ভবিষ্য পুরাণে বলা হয়েছে — পাণ্ডবগণ যখন বনবাসে ছিলেন সেই সময় তাঁদের
নানান বিপদসংকুল পরিবেশে বাস করতে হয়েছিল। বিভিন্ন সময়ে নানা কারণে আসুরিক
শক্তির দ্বারা পাণ্ডবগণ আক্রান্ত হয়েছিলেন । সেই কারণে সখা শ্রীকৃষ্ণ
যুধিষ্ঠির কে ডেকে উপদেশ দিয়েছিলেন, পুরোহিতকে ডেকে রাখি বন্ধন উৎসব পালন করতে
। সেখানে পুরোহিত ডেকে রাখি বন্ধনের জন্য মঙ্গলসূত্র রচনা করে মাতা কুন্তী
পরিবারের সকলকে রাখী পরিয়ে তাঁদের রক্ষা করেছিলেন ।

Raksha Bandhan History In Bengali

রাখি বন্ধন উৎসবের ইতিহাস, তাৎপর্য, তিথি - রাখি বন্ধন সম্পর্কে কিছু কথা (Raksha Bandhan History, Importance)
Loading...
রামায়ণের কাহিনীঃ
—————————
1) রামচন্দ্রের বনবাস কালে যখন সীতা দেবীকে রাবণ হরণ করেছিলেন সেই সময়
রামচন্দ্র সীতা উদ্ধারের জন্য বন প্রান্তে এদিক ওদিক খোঁজাখুঁজি করে জানতে
পারলেন রাক্ষস রাজা রাবণ সীতা দেবীকে অপহরণ করে লঙ্কায় নিয়ে গেছেন। সীতাকে
উদ্ধার করার জন্য বানরদের সন্ধান পেলেন । বনবাসী গিরিবাসিদের একত্রিত করে তাদের
দিয়ে সীতা উদ্ধারের কাজে রামচন্দ্র বনবাসী বানরদের সাথে বন্ধুত্ব করার জন্য
রাঙা সূতোয় লাল ফুল দিয়ে বানরদের সঙ্গে ভাতৃত্ব বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন।
আরো পড়ুন,
2) রামায়ণের আরেকটি কাহিনী আছে সীতার বনবাসকালে যখন লব ও কুশের জন্মের পর লব – কুশের বন্য পরিবেশের মধ্যে কোন বিপদ না হয় অর্থাৎ কোন প্রাণী বা জীবজন্তু তাদের আক্রমণ করতে না পারে তার জন্য মা সীতাদেবী লব ও কুশের হাতে পুত্রদ্বয়ের মঙ্গল কামনা করে কুশ ও লতাপাতা দিয়ে রক্ষাবন্ধন করেছিলেন ।

Rakhi Bandhan Utsav History In Bengali

মহাভারত কাহিনীঃ
————————-
1) আমরা মহা ভারতের কর্ণের জন্ম কাহিনী সবাই জানি । কুন্তী মাতা সূর্যদেবের
কাছে তাঁর মতো তেজস্বী একজন পুত্র কামনা করেছিলেন । সূর্যদেবের আশীর্বাদে
কুন্তী মায়ের গর্ভে তেজস্বী বলবান্ পুত্র কর্ণের জন্ম হয় । কুমারী মাতা
কুন্তী দেবী লোক লজ্জার ভয়ে কর্ণকে নদীর জলে ভাসিয়ে দিয়েছিলেন। সেই সময়
কর্ণকে অন্যান্য জীবকুল থেকে রক্ষা করার জন্য কর্ণের হাতে লাল সুতো দিয়ে
রক্ষাকবচ বেঁধে দিয়েছিলেন অর্থাৎ কর্ণের যাতে জীবন সংশয় না হয় তার জন্য
পুত্রের মঙ্গল কামনার্থে মাতা কুন্তী কর্ণের হাতে রক্ষা বন্ধন করেছিলেন । এখানে
পুত্রের হাতে মায়ের রাখি বন্ধনের মাহাত্ম্য।
2) মহাভারতে উল্লেখ আছে একদিন কৃষ্ণভগ্নী সুভদ্রা শ্রীকৃষ্ণকে প্রশ্ন করেছিলেন,
“দাদা ! আপনি কেন আমার চেয়ে দ্রৌপদীকে বোন হিসাবে অধিক ভালোবাসেন” ?
প্রত্যুত্তরে শ্রীকৃষ্ণ সুভদ্রা কে জানালেন, সে কেন দ্রৌপদী কে বেশি ভালোবাসে
তা সে পরে জানতে পারবে।
কিছুদিন পর শ্রীকৃষ্ণের সাথে শিশুপালের যুদ্ধ হয় । সেই যুদ্ধে শিশুপালের
অস্ত্রাঘাতে শ্রীকৃষ্ণের হস্তদ্বয়ের আঙ্গুল কেটে যায়। শ্রীকৃষ্ণ তখন
রক্তনিবারনের জন্য ভগ্নী সুভদ্রার সাহায্য চাইলেন । সুভদ্রাও দাদার রক্ত দেখে
অত্যন্ত উদ্বিগ্ন হয়ে পড়লেন। কিন্তু রক্তনিবারনের জন্য কোন ব্যবস্থা তিনি
গ্রহণ করতে পারলেন না । ঠিক তখনই দ্রৌপদী শ্রীকৃষ্ণের পাশেই অবস্থান করছিলেন ।
দ্রৌপদীও শ্রীকৃষ্ণের এই রক্তাক্ত হাত দেখে অত্যন্ত ব্যথা পেলেন । তিনি তখন
নিজের বস্ত্রাঞ্চল ছিঁড়ে শ্রীকৃষ্ণের আঙ্গুল দ্বয়ের উপর সুন্দরভাবে বেঁধে
দিলেন এবং রক্ত নিবারণ করলেন । শ্রীকৃষ্ণ দ্রৌপদীর এই আন্তরিক শ্রদ্ধা এবং
ভক্তি দেখে তিনি দ্রৌপদীকে আশীর্বাদ করলেন এবং বিপদের সময় তিনি এই ঋণের পরিশোধ
করবেন সেইরূপ প্রতিশ্রুতিও দিলেন। দ্রৌপদীর এই ছিন্ন বস্ত্রখানি শ্রীকৃষ্ণকে
রক্ষা করেছিলেন বলে এই ঘটনা রক্ষাবন্ধন হিসেবে স্বীকৃত ।
পরবর্তী কালে পাশা খেলায় পঞ্চপাণ্ডব দুর্যোধনের কাছে পরাজিত হলে প্রকাশ্য
রাজসভায় দ্রৌপদীর লজ্জাবস্ত্র হরণ করে তাঁকে চরমতম অপমান করেছিল । এই অশুভ
মুহূর্তে শরম বাঁচাতে নিরুপায় হয়ে দ্রৌপদী শ্রীকৃষ্ণকে স্মরণ করে শরণ প্রার্থনা
করলেন । এই সময়ে শ্রীকৃষ্ণ দ্রৌপদীকে অফুরন্ বস্ত্র দান করে দ্রৌপদীর মান রক্ষা
করেছিলেন এবং ঋণ পরিশোধ করেছিলেন ।
ঐতিহাসিক গুরুত্বঃ
—————————-
1) রাখি বন্ধনের ঐতিহাসিক গুরুত্ব অনেক বেশি । ইতিহাসে উল্লেখ আছে রাজা পুরুষ
সঙ্গে যখন আলেকজান্ডারের যুদ্ধ হয়, তার ঠিক আগেই আলেকজান্ডারের স্ত্রী রোজানা
বুঝতে পেরেছিল যে, এই যুদ্ধে আলেকজান্ডারের পরাজয় নিশ্চিত । রোজানা ভারতবর্ষের
সংস্কৃতিতে রাখি বন্ধন এর মাধ্যমে ভ্রাতৃত্ব প্রেমে আবদ্ধ করার ইতিহাস জানত ।
তাই সে আলেকজান্ডারের চির শত্রু পুরুর কাছে রাখি পাঠিয়ে পুরু কে অনুরোধ করেছিল
যে সে তার ভগ্নীর মতো সেই কারণে সে পুরুর হাতে রাখি বাঁধতে চায় । বিনিময়ে
বোনের মঙ্গলের জন্য সম্রাট আআলেকজান্ডারের মুক্তি দিতে হবে ।

Why We Celebrate Raksha Bandhan History

2) ভারতবর্ষের ইতিহাসে আরেকটি রাখি বন্ধনের ইতিহাসের উল্লেখ পাই। গুজরাটের
বাদশাহ বাহাদুর শাহ চিতরের রানী চিতরের দুর্গ আক্রমণ করেছিলেন । চিতোরের বিধবা
রানী কর্ণাবতী সেই যুদ্ধে বিধ্বস্ত হওয়ার ভয়ে দ্বিতীয় মোগল সম্রাট
হুমায়ুনের কাছে রাখি পাঠিয়ে নিজের রাজ্য রক্ষা করার জন্য অনুরোধ করেছিলেন ।
কিন্তু বাহাদুর শাহর সঙ্গে ঘোরতর যুদ্ধ হওয়ার সময় হুমায়ুন কর্ণাবতীর কোন
সাহায্য করতে পারেনি। রানী কর্নাবতী পরাজয় নিশ্চিত মনে করে বিধর্মীদের কাছে
নিজেদের ইজ্জত এবং সম্ভ্রম রক্ষা করার জন্য ১৩ ,000 নারীকে নিয়ে তিনি জহরব্রত
পালন করেছিলেন অর্থাৎ মৃত্যুবরণ করেছিলেন । পরবর্তী সময়ে ক্রুদ্ধ ও ক্ষুদ্ধ
অগ্নিশর্মা হুমায়ুন বাহাদুর শাহকে আক্রমণ করে চিতোরের দুর্গ অধিকার করে
কর্ণাবতীর পুত্র বিক্রম জিৎ কে সিংহাসনে বসিয়েছিলেন।

রাখি বন্ধন উৎসব প্রথম কবে পালিত হয়

3) চন্দ্রশেখর আজাদ একসময় পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে নিজের প্রাণ রক্ষার্থে একজন
বিধবা মায়ের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলেন বিধবা মহিলা এতই দরিদ্র ছিলেন যে তার
জীবিকা নির্বাহ অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়েছিল। তারই এক বিবাহযোগ্যা কন্যা ছিল।
কন্যার বিয়ে তিনি দিতে পারছিলেন না। এদিকে মহিলাকে জানানো হল , তিনি যদি
আজাদকে পুলিশের হাতে তুলে দেন তাহলে ৫০০০ টাকা তাঁকে পুরস্কার দেওয়া হবে ।
একদিন ওই মহিলা চন্দ্রশেখর আজাদকে হাতে রাখি পরিয়ে বললেন আপনারা আছেন বলে আমরা
বেঁচে আছি 5000 টাকার বিনিময়ে আমরা আপনাকে ধরিয়ে দিতে পারব না। আপনি আমার
বাড়িতে যতদিন পারেন আশ্রয় গ্রহণ করবেন। এদিকে চন্দ্রশেখর আজাদকে পুলিশে ধরতে
পারে এরূপ আশঙ্কা করে গভীর রাতে বালিশের নিচে ৫০০০ টাকা রেখে দিয়ে একটি চিঠি
লিখে গেলেন। এই পাঁচ হাজার টাকা আমার বোনকে আমি সাহায্যের জন্য দিয়ে গেলাম।

রাখি বন্ধন উৎসব কে প্রচলন করেন

4) ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ রদ আন্দোলনের কথা আমরা সবাই জানি । লর্ড কার্জনের বিভাজন
নীতি মান্যতা দেওয়া যাবে না । এই সংকল্প নিয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হিন্দু
সংস্কৃতির ভাতৃত্ববন্ধন রূপ রাখি বন্ধন উৎসব পালন করেছিলেন । জাতি ধর্ম বর্ণ
নির্বিশেষে সকলের হাতে রাখি পরিয়ে সমস্ত ধর্মের মানুষকে একত্রিত করে ছিলেন।
তাই এই রাখি বন্ধনের মাধ্যমে আমরা স্মরণ করি ১৯০৫ সালের এই ঐতিহাসিক গুরুত্ব
Share This Article
Leave a comment

Adblock Detected!

Our website is made possible by displaying online advertisements to our visitors. Please consider supporting us by whitelisting our website.