শুভ নববর্ষ 2023 – Subho Noboborsho Story In Bengali

Bongconnection Original Published
16 Min Read


 শুভ নববর্ষ 2023 –  Subho Noboborsho Story In Bengali 

শুভ নববর্ষ 2023 -  Subho Noboborsho Story In Bengali
Loading...

শুভ নববর্ষ 1430

মধুজা সকাল-সকাল রান্না ঘরের কাজগুলো সারতে সারতে ঘরের মধ্যে উঁকি দিল, দুটোতে
দিব্যি ঘুমোচ্ছে। মধুজা একটু বিরক্ত মুখে বলল
– তুমি কি গো, এখনো তিয়ানকে নিয়ে শুয়ে আছো, একটু রেডি করে পড়াতে বসলেও তো
পারো। 
মধুজা ও সায়কের পাঁচ বছরের ছেলে তিয়ান। 
– ভাল্লাগেনা বাপু কবে যে সব সুস্থ স্বাভাবিক হবে। কথাগুলি বলতে বলতে
রান্নাঘরের দিকে গেল মধুজা।


আসলে করোনার দৌরাত্ম্যে তিয়ানের স্কুল এখন বন্ধ, নইলে মর্নিংএ স্কুল তিয়ানের,
সকালবেলায় নিঃশ্বাস ফেলার সময় থাকেনা দুজনের। মধুজা সকালে উঠে গাছেদের
পরিচর্যা করা, ব্রেকফাস্ট বানানো, সকলকে খাওয়ানো, মনে করে শাশুড়িকে প্রেসার
ডায়াবেটিসের ওষুধ দেওয়া, টিফিন রেডি করা তিয়ান সায়ক ও নিজের জন্য।
মধুজা একটি ছোট বেসরকারি সংস্থায় সামান্য মাইনের চাকরি করে।কাজটা না করলেও তার
চলত কিন্তু কাজটা সে ভালোবেসে করে আর এতে সায়কের পূর্ণ সমর্থন আছে।শুধু শাশুড়ি
রমাদেবী প্রথমটাই আপত্তি ছিল । মধ্যবিত্ত পরিবার । রমাদেবীর বক্তব্য  আমরা
অল্পতেই সন্তুষ্ট,আমাদের চাহিদা বিশেষ নেই, মন দিয়ে ঘর সামলাও। মধুজারও অনেক
বড় বড় স্বপ্ন কিছু নেই  কিন্তু ছোটছোট ইচ্ছেরা আছে যেগুলো হয়তো
প্রাত্যহিক জীবনে খুব জরুরী নয় কিন্তু  জীবনটাকে আনন্দে ভরিয়ে রাখার
জন্য অন্য মানে রাখে।
মধুজা একাহাতে সব সামলে বুঝিয়ে দিয়েছে ঘর সামলে চাকরি করতে তার অসুবিধা
নেই। 
সায়ক একটু আলসে গোছের তবে সকালে তারও ফুরসত থাকে না একটুও।মর্নিং ওয়াক সেরে
পেপারের চোখ বুলিয়ে নেয়। তারপর ছেলেকে রেডি করা ,জলের বোতল টিফিন বক্স বইপত্র
গুছিয়ে ব্যাগে দেওয়া, নিজে রেডি হয়ে খেয়ে ছেলেকে স্কুলে পৌঁছে দেওয়া।
সকালে তিয়ানকে নিয়ে ভাবতেই হয় না মধুজার। কিন্তু এই লকডাউনের সময়ে সব সময়
বাড়িতে বন্দি হয়ে  থেকে তিয়ান যেন অস্থির হয়ে উঠেছে, সেটা বেশ টের
পাচ্ছে  মধুজা তাই  বেশি বকাবকি করে না।
ঘরের থেকে সায়কের গলা শোনা গেল
– ঘুমোচ্ছি কই গিন্নি, গড়াগড়ি খাচ্ছি।বেডটিটা এখনো পায়নি  কিনা তাই। কি
বুঝলো কে জানে,খিলখিল করে হেসে উঠলো তিয়ান। 
মধুজা ঘরে আসতেই তিয়ান বকুনি খাওয়ার ভয়ে   ঠাম্মির কাছে ছুটে
পালালো। চায়ের কাপ হাতে মধুজা ঘরে এসে ঠোঁটের কোণে গোপন হাসি এনে  মৃদু
ভৎসর্নার সুরে বলল – কতবার না বলেছি , গিন্নি বলবেনা ,আমার বয়স এখনো পঞ্চাশ
হয়নি।আমার একটা নাম আছে। আসলে সায়কের মুখ থেকে নামটা শুনতে বড় মিষ্টি লাগে ।
– ও মধু ,ও মধু বলে সায়ক হাতটা বাড়াতেই তৎক্ষণাৎ তাকে থামিয়ে গোল গোল চোখ
করে বললো
 – হচ্ছেটা কী!মা বারান্দায় । তোমার আবার  কবে থেকে বেডটির নেশা
হলো।  কখন সকাল হয়েছে, ছেলেটাকে খায়িয়ে একটু পড়তে বসালেও তো পারো।
–  না মানে,আজতো ছুটির দিন ।
মধুজা ভুরু  কুঁচকে বললো
– মানে ?
– মানে, রবিবার নয় আজকে?
– কাল চলে গেছে মহাশয়। আর আগামীকাল নববর্ষ, তারপর বল।
–  ও ও ও তবে আজ কী যেন একটা।না মনে পরার  ভান করে বলল সায়ক।
– এই লক ডাউনে তো  সব দিনই ছুটির দিন। আজ তিয়ানের জন্মদিন ।
– এগজ্যাক্টলি, তাই তো সকাল থেকেই ছুটি ছুটি একটা গন্ধ ঘুরে বেড়াচ্ছে বাড়িময়
আর তাই বিছানাতে গড়াগড়ি খাচ্ছি ।
-তুমি এমন কেন গো ।
-আসলে গিন্নি, সরি মধু আজ দুপুরের খাবার আমি বানাবো তো তাই একটু মানসিক
প্রস্তুতি নিচ্ছি।
– তাহলে তো আমার প্রতিদিন বেলা অব্দি গড়াগড়ি করা উচিত ।
 -আমিও তো তাই চাই ।
-হ্যাঁ ,আর কাজকর্ম সব লাঠি উঠুক আর কী।
– এতো রাগ করছ কেন ,তুমি যখন গাছেদের প্রেমে মগ্ন, তিয়ানকে খাইয়েছি। আজ ওর
জন্মদিন, আজ পড়াশোনা থাক।
– বেশ,যা ভালো বোঝো ।যাই তোমার রান্নার জিনিস গুলো রেডি করে দিই।
– মধুজা বলছিলাম যে আজ যদি একটু বাজারে    যেতাম,ছেলেটার আজ জন্মদিন
একটাও দোকান যদি খোলা পাই ।রাগ করোনা প্লিজ ।


-এটা রাগ করার কথা নয়। তুমিও একটু বোঝার চেষ্টা করো ।পরশুদিনই তো গেলে বাজারে
।সপ্তাহে একবার বাজারই যথেষ্ট। গিফটের জন্য যেতে চাইছ তো ? সেদিন যখন পাওনি আজও
পাবেনা। এই লগডাউনের দিনে কেউ দোকান খুলে বসবে না। গিফটের থেকে  জীবনটা
বড় সায়ক। সায়কের হাতটা নিজের হাতে নিয়ে মধুজা বলল 
-আমার ভীষণ টেনশন হয় বোঝো না কেন ?আর একটা কথা বলি তিয়ানের পছন্দের  ছোটা
ভীম আঁকা একটা  গেঞ্জিসেট কেনা আছে।সেদিন অফিস থেকে  ফেরার চোখে
পরলো  তারপর সেটা কিনে ফেলি ।ভেবেছিলাম নববর্ষে এই সারপ্রাইজটা থাকবে ওর
জন্য। তোমার গিফট কেনার পাগলামি দেখে ভাবছি  এটাই না হয় দিয়ে দিও 
জন্মদিনের উপহার হিসেবে। সায়ক স্বস্তির একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলল
– বলোনি তো ।

 Subho Noboborsho Story In Bengali 

Loading...
মধুজা আদুরে গলায় বললো 
– তোমায় সব বলতে হবে কেনো, তাছাড়া সারপ্রাইজ কেউ বলে? তোমার যা মতি হয়তো
বলেই ফেলতে তিয়ানকে ।বেলা হল  যাই এবার,পায়েসের চাল  ভেজাতে দিতে
হবে বলে উঠে যেতেই   সায়ক আলতো করে কাছে টেনে  হাত দুটো নিজের
হাতের মধ্যে নিয়ে বলল   -কত খেয়াল রাখো ।আমি  খুব লাকি। 
মধুজা দুষ্টু হাসি হেসে সায়কের নাকে একটা আঙুল ছুঁইয়ে বলল
 – তাই বলে তোমার জন্য কিছু নেই ।
– আমার জন্য তুমি আছো তো ,আর  কিছু চাইনা আমার ।
মধুজা মনে মনে  হাসল আর ভাবল সায়কের পাঞ্জাবিটা নববর্ষেই দেবে। সুতির
হালকা রঙের একটা পাঞ্জাবী খুব স্মার্ট দেখাবে সায়ককে।
সেদিন তিয়ানের জামার সাথে সাথে সায়কের জন্য একটা পাঞ্জাবি আর শাশুড়ির জন্য
একটা শাড়িও কিনে ফেলেছিলো ।আসলে ছোটবেলা থেকে মধুজা সারপ্রাইজ দিতে খুব
ভালোবাসে। চাকরি পাওয়ার পর থেকে চুপি চুপি টাকাও জমাচ্ছে। সায়কের জন্মদিনে
একটা ক্যামেরা দেবে বলে। সায়কের অনেক দিনের শখ একটা ক্যামেরার, ফটো তুলতে খুব
ভালোবাসে। এই ছোট ছোট খুশিগুলোকে বাস্তবে রূপ দিতে চায় মধুজা ,এতেই তার আনন্দ ।
-আজ্ঞা হোক, যাই এবার। তুমিও চলো ব্রেকফাস্ট করে নেবে ।
সবাইকে খেতে দিয়ে নিজে খেয়ে রান্নার জোগাড় গুলো করতে করতে রাস্তা থেকে
মাছওয়ালার ডাক ভেসে এলো কানে, মধুজা  রান্নাঘরের জানালা দিয়ে মুখ
বাড়িয়ে দাঁড়াতে বললো মাছওয়ালাকে ।

কিছু ভালো মাছ যদি থাকে ।আজ তিয়ানের জন্মদিন। মধুজা নিচে গিয়ে দেখল বিশেষ ভালো
কিছু নেই ।দুটো রুই মাছ -একটা কাতলা আর  পিয়ালী মাছ ।রমাদেবী ছোট মাছের
চচ্চড়ি খুব ভালোবাসে ।কিন্তু পিয়ালী মাছের দাম শুনে চক্ষু চড়কগাছ ।

-বড্ড বেশি বলছেন কাকু ।
– এ নকডাউন এর বাজারে  মাছ নাই মা
-তাই বলে এত বেশি নেবেন
– যা দাম যা বলেছি এক টাকাও কম নিতে পারবনি’ খানিকটা বিরক্ত হয়ে মাছওয়ালা
বলল। 
– লাগবে না তবে

Subho Noboborsho Bengali Story

মাছওয়ালা মাছের গামলা মাথায় তুলতে তুলতে  বিড় বিড় করতে থাকলো –
অসুখ-বিসুখ ভুলে দরজায় মাছ নিয়ে আসছি দুটো পয়সার জন্যি।তোমরা না নিলে আমাদের
চলবো কী করি।
সদর দরজাটা টেনে দিতে দিতে মনে হল সত্যিই তো এই মানুষগুলো চলবে কী করে। সবাই
বাড়িতে, কেউ বেরোচ্ছে না বললেই চলে। ওদের তো খদ্দের নেই। সঙ্গে সঙ্গে দরজা
খুলে তাকিয়ে দেখে লোকটা তখন হেঁকে হেঁকে এগিয়ে গেছে খানিকটা । মধুজা ডাকলো –
একবার আসবে, মাছ নেব।
মাছওয়ালাও যেতে যেতে ভাবছিল একটু কমসম করে দিয়ে দিলেই হত।কেউতো নিচ্ছে
না।বাড়িতে একটুও টাকা নেই । কিন্তু মাছের কেনা দামটাও তো উঠতে হবে তারপর যদি
একটু লাভ না হয় তার চলবে কী করে ।
মাছওয়ালা কাছে এসে বলল কিছু কমসোম করেনিয়ে নাও দিদিমণি খুব ভালো মাছ ।
– বেছে দিতে হবে কিন্তু 
– তা দিব খন
– কতখানি নিবা কও 
– যেটুকু আছে সবটা মাপো দেখি কতটা হয় ।আমি বাসন নিয়ে আসি।
মধুজা  ফিরে এসে বলল
– আজকেরই ধরা ?
– জানিনা মা জননী,আমি মাছের ব্যবসা করি না। আমার ভাগ্না করে। দায়ে পড়ে ওর কাছ
থেকে মাছ নিয়া বেচছি। হাতে টাকা নাই ,আমার বুড়িটার আবার ওষুধ শ্যাষ ।ব্যাটাটা
বোম্বাই রংয়ের কাজ করে। করোনার জন্য এক মাস ধরে কাজ বন্ধ তাই টাকা পাঠাতি
পারেনি,আটকায় গ্যাছে ওখানে,বাড়িও আসতে পারে নাই ।আর বেটার বউ তার
অসুস্থ  বাপরে দেখতে গিয়াছিল মুর্শিদাবাদ, সেও আসতে পারে নাই। নাতিটা
আমাদের কাছে আছে, কান্দাকাটা করে। ভগবান কি দিন দেখাইলো ।কন্টোল থেকে চাইল দেছে
তাও শ্যাষের পথে ।জ্বালানিও শ্যাষ। জীবন মানে যন্ত্রনা দিদিমণি – মাছ কাটতে
কাটতে একমনে বলে চলল। মধুজার মনটা খারাপ হয়ে গেল।

আরো পড়ুন,

মাছওয়ালার বয়স পয়ষট্টি ছুঁইছুঁই । বয়সের ভারে মাথাটা নুইয়ে পড়েছে দেহ
থেকে।মেরুদন্ড বেঁকেছে খানিকটা। হাড় জিরজিরে শরীরে কাকতাড়ুয়ার মত পাঞ্জাবি
ঝুলছে,তাতে অজস্র ছেঁড়া।মধুজা জিজ্ঞেস করল
 – কিছু কাজ করেন আপনি?
– আগে রিক্সা চালাইতাম এখন আর পারিনা মা,শরীল ভালো থাকলে মাঝে সাঝে রিক্সা
নিয়া ব্যাড়াই।এমনিতে ভাগনার কাছে বসি, মাছ কেটে দিই, ও কিছু হাত খরচা দেয়।
এখনতো রিক্সাও বন্ধ ,মার্কেটে মাছ বেচাও বন্ধ ।এই আকালে ওর কাছ থেকে কিছু মাছ
নিয়ে বেচতে ব্যারাইছি।লাভ হইলে আমার থাকবো, মাছের কেনা দাম ওরে দিলেই
হইবো।আমার বুড়ির বাতের বেদনা,প্যাসার  আরো কত কিছু। তেরোশো টাকার ওষুধ
লাগে মাসে।ব্যাটা টাকা পাঠায়। ব্যাটার বউ মানষের বাড়িতে কাজ করে তাই দিয়ে
সংসার চলে ।এখনতো ব্যাটার বউটাও নাই,ফোনে কেন্দেকেটে ভাসাচ্ছে নাতিটার লাগি।
-আহাগো কত বয়স তোমার নাতির ?
-সামনের মাসে পাঁচ হবে ।জানিনা ওর মা আসতে পারবে কিনা জন্মদিনে । কাল পহেলা
বৈশাখ, একটা জামা পর্যন্ত দিতে পারলাম না । বুড়িটা কয় ওষুধ নিতি লাগবিনা ওর
ল্যাগগা জামা আনো। এখন যে নকডাউন বুড়িরে বোঝায় কী করি । হাতে টাকা নাই, টাকা
কামায় হলিও দোকান খোলা নাই।এ কী যে ব্যাধি এলো রে মা ।পথে বাইরালে করোনায় ধরবে,
ঘরে বসে থাকলে না খায়ে মরবে ।মানুষ কোথায় যায়!
মধুজা দুচোখ ঝাপসা হয়ে এল।করোনা, লকডাউন, অনাহার, বিচ্ছেদ – মায়ের থেকে
বাচ্চা, স্বামীর থেকে স্ত্রী, জীবনের কোন সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে পৃথিবী ।
মাছগুলো নিয়ে টাকাটা দিতে মাছওয়ালা বলে উঠলো
-পাঁচ টাকা কম নিচ্ছি মা।
 -কম নিতে হবেনা বরং বাকি কুড়ি টাকা আর ফেরত দিতে হবেনা ।
মাছওয়ালা কয়েক সেকেন্ড মধুজার মুখের দিকে তাকিয়ে বলল 
-তা কী করি হয় ,অভাবের এত কথা বললাম বলে কিছু মনে কোরোনি মাজননী।  গরিব
লোকের ভগবান আছে বলে কুড়ি টাকা দেওয়ার জন্য পকেটে হাত ঢোকাতেই মধুজা বলল
– একটু  দাঁড়াবে কাকু ,এক্ষুনি আসছি বলে ভেতরে চলে গেল। 
মাছওয়ালা ভাবলো বুঝি আরও মাছ নেবে। ভালই হবে সব বিক্রি হয়ে গেলে ।মধুজা যখন
ফিরে এল ওর হাতে দুটো প্যাকেট। তিয়ানের নতুন জামাটার প্যাকেটটা এগিয়ে দিয়ে
বলল
-নতুন জামা,তোমার নাতির জন্য, ছোট হবে না,আমার ছেলের বয়সও পাঁচ হবে আজ। 
কাল তোমার নাতিকে নববর্ষে দিও ।আর একটা প্যাকেট এগিয়ে বলল পাঞ্জাবি আছে,
এটা  তোমার জন্য। আর এই  টাকাটা রাখো,আজকে ওষুধ আর জ্বালানি কিনে নিও
 অবাক চোখে তাকিয়ে মাছওয়ালা বলল   
– মা জননী এ আমি নিতে পারবো নি।
–  মা জননী বলছো তবে নিতে কেন পারবে না ?ভেবে নাও তোমার মেয়ে দিচ্ছে,না
করা যায় বুঝি!
চোখ দিয়ে ঝর ঝর করে জল পড়তে শুরু করল মাছওয়ালার।
– এতগুলো টাকা আমি কী করে নিই মা।
 মধুজা নাছোরবান্দার মতো বলল
– তোমার ছেলে আবার কবে টাকা পাঠাতে পারবে তার ঠিক নেই, ততদিন এখান থেকেই খরচ
করো।
– তাহলে ব্যাটা ফিরলে শোধ দিয়া দিব । এতগুলা টাকা দিলে  তুমি বকা খাবা মা
জননী ।
মধুজা হেসে মাথা উঁচু করে বলল 
-ফেরত দিতে হবে না,এ টাকা আমার, কেউ  কিচ্ছু  বলবেনা ।
মাছওয়ালা গামছায়  চোখ মুছতে মুছতে বলল 
-তুমি সত্যিই মা জননী , সাক্ষাৎ জগদ্ধাত্রী ।
– তোমার নাতিটার কথা ভেবে কষ্ট হচ্ছে ওর কাছে ওর মা পর্যন্ত নেই জামাটা পেলে ও
খুশি হবে।
 মাছওয়ালা অনেক আশীর্বাদ করতে করতে চলে গেল।
 মাছওয়ালা চলে যেতে স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লো মধুজা।
 মধুজা মনে মনে ভাবল আজ এই দুর্যোগের দিনে বাচ্চাটির মা বাচ্চার কাছে নেই
, এর মধ্যে আসতে পারবে কিনা তাও জানে না কিন্তু আমার ছেলে তো আমার কাছেই আছে
এটাই বা কম কিসে।
ক্যামেরার জন্য  জমানো টাকা থেকে সাত হাজার টাকা দিল সে। জন্মদিনে না হোক
বিবাহবার্ষিকী তো রয়েছে।

কিন্তু এখন মনে হচ্ছে তিয়ানের জামার  কথাটা সায়ককে না বললে ভালো হতো ।কী
যে বলবে সায়ক। হয়তো বলবে  টাকা দিলেই পারতে ।তবু ভালো – পাঞ্জাবীর কথাটা
বলেনি ।সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে  মনে পড়ল গ্যাসে পায়েসের দুধ চাপানো
ছিল  সিম করে । ঊর্ধ্বশ্বাসে  ছুটতেই পায়েসের গন্ধ এলো নাকে।
রান্নাঘরে সায়ক।স্থিরদৃষ্টিতে তাকিয়ে মধুজা দিকে। মধুজা বুক ঢিপঢিপ করছে ।ওকি
তবে জেনে গেছে ।সহসা সায়ক  মধুজার হাত দুটো ধরে বলল

-পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী লোক কে জানো?
– হকচকিয়ে বলল মানে? কে?
-আমি
– তাই বুঝি ! মনে মনে ভাবলো যাক বাবা, বোঝে নি তবে,বিকেলের মধ্যে বলে দিতে হবে
। তা হঠাৎ ?
-কেন ধনী জানো ,তোমার মত মানুষ তার বউ বলে। তুমি মনে করে আমার জন্যও
পাঞ্জাবি  কিনেছো।
ধরা পড়ে গেছে বুঝে সত্যিটা বলেই ফেলল মধুজা 
– কিন্তু  ওটা তো দিয়ে দিলাম । 
– জানি।আজ আমি খুব খুশি। আমি সত্যি খুব লাকি বলে জড়িয়ে ধরল ।বুকের মধ্যে মুখ
গুঁজে মধুজা বলল -আমি তোমায় বলতাম,কিন্তু তুমি জানলে কী করে?
– কেন এই জানালা দিয়ে ।
 শাশুড়ির পায়ের শব্দে সরে দাঁড়ালো দুজন।
 -খুব ভালো করেছিস মা ।
– চল তুই আর আমি দাদু ভাইয়ের জন্য একটা পেনদানি বানায়। ঠাকুর ঘরে মাটির একটা
ঘট আছে। আমি তাতে ফুলে একে দিচ্ছি, তুই সুন্দর করে রং করে দিস। খুব পছন্দ
হবে  দাদুভাইয়ের ।
মধুজা বুঝতে পারল বারান্দায় বসে পুরোটা শুনেছে শাশুড়িমাও ।
– মা আর একটা কথা ।চাকরি পাওয়ার পর কাউকে কিছু দেওয়া হয়নি তেমন।ভেবেছিলাম এই
নববর্ষে সবাইকে দেব ।সায়ক আর তিয়ানের জন্য তো কিছু নেই আর,তাই একসাথে
সারপ্রাইজ আর দেওয়া হলো না। তোমার জন্য একটা শাড়ি কিনেছিলাম ,কাল পরলে খুশি
হতাম ।
রমাদেবীর বুকের মধ্যেটা একটু চিনচিন করে উঠল মধুজার চাকরিতে আপত্তি ছিল তার। গত
সাত বছরে প্রথমবার  পরম স্নেহে  মাধুজার হাতটা ধরে বলল
-ওরে পাগলি, আমি একা নতুন কাপড় পড়বো! ওটা থাক, কাল না হয় কাটুক অন্য নববর্ষ।
সব ঠিক হয়ে যাক ,পৃথিবী ফিরে আসুক তার নতুন ছন্দে তারপর না হয় সবাই মিলে এক
সাথে নতুন কাপড় পড়বো ,সেই দিনই হবে আমাদের সত্যিকারে নববর্ষ।

Tags –
Bangla Golpo,
Bengali Story, Subho Noboborsho

Share This Article