শুভ নববর্ষ 2023 – Subho Noboborsho Story In Bengali
শুভ নববর্ষ 1430
দিব্যি ঘুমোচ্ছে। মধুজা একটু বিরক্ত মুখে বলল
পারো।
রান্নাঘরের দিকে গেল মধুজা।
সকালবেলায় নিঃশ্বাস ফেলার সময় থাকেনা দুজনের। মধুজা সকালে উঠে গাছেদের
পরিচর্যা করা, ব্রেকফাস্ট বানানো, সকলকে খাওয়ানো, মনে করে শাশুড়িকে প্রেসার
ডায়াবেটিসের ওষুধ দেওয়া, টিফিন রেডি করা তিয়ান সায়ক ও নিজের জন্য।
চলত কিন্তু কাজটা সে ভালোবেসে করে আর এতে সায়কের পূর্ণ সমর্থন আছে।শুধু শাশুড়ি
রমাদেবী প্রথমটাই আপত্তি ছিল । মধ্যবিত্ত পরিবার । রমাদেবীর বক্তব্য আমরা
অল্পতেই সন্তুষ্ট,আমাদের চাহিদা বিশেষ নেই, মন দিয়ে ঘর সামলাও। মধুজারও অনেক
বড় বড় স্বপ্ন কিছু নেই কিন্তু ছোটছোট ইচ্ছেরা আছে যেগুলো হয়তো
প্রাত্যহিক জীবনে খুব জরুরী নয় কিন্তু জীবনটাকে আনন্দে ভরিয়ে রাখার
জন্য অন্য মানে রাখে।
নেই।
পেপারের চোখ বুলিয়ে নেয়। তারপর ছেলেকে রেডি করা ,জলের বোতল টিফিন বক্স বইপত্র
গুছিয়ে ব্যাগে দেওয়া, নিজে রেডি হয়ে খেয়ে ছেলেকে স্কুলে পৌঁছে দেওয়া।
সকালে তিয়ানকে নিয়ে ভাবতেই হয় না মধুজার। কিন্তু এই লকডাউনের সময়ে সব সময়
বাড়িতে বন্দি হয়ে থেকে তিয়ান যেন অস্থির হয়ে উঠেছে, সেটা বেশ টের
পাচ্ছে মধুজা তাই বেশি বকাবকি করে না।
বুঝলো কে জানে,খিলখিল করে হেসে উঠলো তিয়ান।
পালালো। চায়ের কাপ হাতে মধুজা ঘরে এসে ঠোঁটের কোণে গোপন হাসি এনে মৃদু
ভৎসর্নার সুরে বলল – কতবার না বলেছি , গিন্নি বলবেনা ,আমার বয়স এখনো পঞ্চাশ
হয়নি।আমার একটা নাম আছে। আসলে সায়কের মুখ থেকে নামটা শুনতে বড় মিষ্টি লাগে ।
করে বললো
হলো। কখন সকাল হয়েছে, ছেলেটাকে খায়িয়ে একটু পড়তে বসালেও তো পারো।
আর তাই বিছানাতে গড়াগড়ি খাচ্ছি ।
প্রস্তুতি নিচ্ছি।
জন্মদিন, আজ পড়াশোনা থাক।
একটাও দোকান যদি খোলা পাই ।রাগ করোনা প্লিজ ।
।সপ্তাহে একবার বাজারই যথেষ্ট। গিফটের জন্য যেতে চাইছ তো ? সেদিন যখন পাওনি আজও
পাবেনা। এই লগডাউনের দিনে কেউ দোকান খুলে বসবে না। গিফটের থেকে জীবনটা
বড় সায়ক। সায়কের হাতটা নিজের হাতে নিয়ে মধুজা বলল
ভীম আঁকা একটা গেঞ্জিসেট কেনা আছে।সেদিন অফিস থেকে ফেরার চোখে
পরলো তারপর সেটা কিনে ফেলি ।ভেবেছিলাম নববর্ষে এই সারপ্রাইজটা থাকবে ওর
জন্য। তোমার গিফট কেনার পাগলামি দেখে ভাবছি এটাই না হয় দিয়ে দিও
জন্মদিনের উপহার হিসেবে। সায়ক স্বস্তির একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলল
Subho Noboborsho Story In Bengali
বলেই ফেলতে তিয়ানকে ।বেলা হল যাই এবার,পায়েসের চাল ভেজাতে দিতে
হবে বলে উঠে যেতেই সায়ক আলতো করে কাছে টেনে হাত দুটো নিজের
হাতের মধ্যে নিয়ে বলল -কত খেয়াল রাখো ।আমি খুব লাকি।
হালকা রঙের একটা পাঞ্জাবী খুব স্মার্ট দেখাবে সায়ককে।
একটা শাড়িও কিনে ফেলেছিলো ।আসলে ছোটবেলা থেকে মধুজা সারপ্রাইজ দিতে খুব
ভালোবাসে। চাকরি পাওয়ার পর থেকে চুপি চুপি টাকাও জমাচ্ছে। সায়কের জন্মদিনে
একটা ক্যামেরা দেবে বলে। সায়কের অনেক দিনের শখ একটা ক্যামেরার, ফটো তুলতে খুব
ভালোবাসে। এই ছোট ছোট খুশিগুলোকে বাস্তবে রূপ দিতে চায় মধুজা ,এতেই তার আনন্দ ।
মাছওয়ালার ডাক ভেসে এলো কানে, মধুজা রান্নাঘরের জানালা দিয়ে মুখ
বাড়িয়ে দাঁড়াতে বললো মাছওয়ালাকে ।
কিছু ভালো মাছ যদি থাকে ।আজ তিয়ানের জন্মদিন। মধুজা নিচে গিয়ে দেখল বিশেষ ভালো
কিছু নেই ।দুটো রুই মাছ -একটা কাতলা আর পিয়ালী মাছ ।রমাদেবী ছোট মাছের
চচ্চড়ি খুব ভালোবাসে ।কিন্তু পিয়ালী মাছের দাম শুনে চক্ষু চড়কগাছ ।
বলল।
Subho Noboborsho Bengali Story
অসুখ-বিসুখ ভুলে দরজায় মাছ নিয়ে আসছি দুটো পয়সার জন্যি।তোমরা না নিলে আমাদের
চলবো কী করি।
বাড়িতে, কেউ বেরোচ্ছে না বললেই চলে। ওদের তো খদ্দের নেই। সঙ্গে সঙ্গে দরজা
খুলে তাকিয়ে দেখে লোকটা তখন হেঁকে হেঁকে এগিয়ে গেছে খানিকটা । মধুজা ডাকলো –
একবার আসবে, মাছ নেব।
না।বাড়িতে একটুও টাকা নেই । কিন্তু মাছের কেনা দামটাও তো উঠতে হবে তারপর যদি
একটু লাভ না হয় তার চলবে কী করে ।
থেকে মাছ নিয়া বেচছি। হাতে টাকা নাই ,আমার বুড়িটার আবার ওষুধ শ্যাষ ।ব্যাটাটা
বোম্বাই রংয়ের কাজ করে। করোনার জন্য এক মাস ধরে কাজ বন্ধ তাই টাকা পাঠাতি
পারেনি,আটকায় গ্যাছে ওখানে,বাড়িও আসতে পারে নাই ।আর বেটার বউ তার
অসুস্থ বাপরে দেখতে গিয়াছিল মুর্শিদাবাদ, সেও আসতে পারে নাই। নাতিটা
আমাদের কাছে আছে, কান্দাকাটা করে। ভগবান কি দিন দেখাইলো ।কন্টোল থেকে চাইল দেছে
তাও শ্যাষের পথে ।জ্বালানিও শ্যাষ। জীবন মানে যন্ত্রনা দিদিমণি – মাছ কাটতে
কাটতে একমনে বলে চলল। মধুজার মনটা খারাপ হয়ে গেল।
থেকে।মেরুদন্ড বেঁকেছে খানিকটা। হাড় জিরজিরে শরীরে কাকতাড়ুয়ার মত পাঞ্জাবি
ঝুলছে,তাতে অজস্র ছেঁড়া।মধুজা জিজ্ঞেস করল
নিয়া ব্যাড়াই।এমনিতে ভাগনার কাছে বসি, মাছ কেটে দিই, ও কিছু হাত খরচা দেয়।
এখনতো রিক্সাও বন্ধ ,মার্কেটে মাছ বেচাও বন্ধ ।এই আকালে ওর কাছ থেকে কিছু মাছ
নিয়ে বেচতে ব্যারাইছি।লাভ হইলে আমার থাকবো, মাছের কেনা দাম ওরে দিলেই
হইবো।আমার বুড়ির বাতের বেদনা,প্যাসার আরো কত কিছু। তেরোশো টাকার ওষুধ
লাগে মাসে।ব্যাটা টাকা পাঠায়। ব্যাটার বউ মানষের বাড়িতে কাজ করে তাই দিয়ে
সংসার চলে ।এখনতো ব্যাটার বউটাও নাই,ফোনে কেন্দেকেটে ভাসাচ্ছে নাতিটার লাগি।
বৈশাখ, একটা জামা পর্যন্ত দিতে পারলাম না । বুড়িটা কয় ওষুধ নিতি লাগবিনা ওর
ল্যাগগা জামা আনো। এখন যে নকডাউন বুড়িরে বোঝায় কী করি । হাতে টাকা নাই, টাকা
কামায় হলিও দোকান খোলা নাই।এ কী যে ব্যাধি এলো রে মা ।পথে বাইরালে করোনায় ধরবে,
ঘরে বসে থাকলে না খায়ে মরবে ।মানুষ কোথায় যায়!
বাচ্চা, স্বামীর থেকে স্ত্রী, জীবনের কোন সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে পৃথিবী ।
লোকের ভগবান আছে বলে কুড়ি টাকা দেওয়ার জন্য পকেটে হাত ঢোকাতেই মধুজা বলল
ফিরে এল ওর হাতে দুটো প্যাকেট। তিয়ানের নতুন জামাটার প্যাকেটটা এগিয়ে দিয়ে
বলল
এটা তোমার জন্য। আর এই টাকাটা রাখো,আজকে ওষুধ আর জ্বালানি কিনে নিও
।
করা যায় বুঝি!
করো।
জননী ।
খুশি হবে।
, এর মধ্যে আসতে পারবে কিনা তাও জানে না কিন্তু আমার ছেলে তো আমার কাছেই আছে
এটাই বা কম কিসে।
বিবাহবার্ষিকী তো রয়েছে।
কিন্তু এখন মনে হচ্ছে তিয়ানের জামার কথাটা সায়ককে না বললে ভালো হতো ।কী
যে বলবে সায়ক। হয়তো বলবে টাকা দিলেই পারতে ।তবু ভালো – পাঞ্জাবীর কথাটা
বলেনি ।সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে মনে পড়ল গ্যাসে পায়েসের দুধ চাপানো
ছিল সিম করে । ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটতেই পায়েসের গন্ধ এলো নাকে।
রান্নাঘরে সায়ক।স্থিরদৃষ্টিতে তাকিয়ে মধুজা দিকে। মধুজা বুক ঢিপঢিপ করছে ।ওকি
তবে জেনে গেছে ।সহসা সায়ক মধুজার হাত দুটো ধরে বলল
। তা হঠাৎ ?
পাঞ্জাবি কিনেছো।
গুঁজে মধুজা বলল -আমি তোমায় বলতাম,কিন্তু তুমি জানলে কী করে?
ঘট আছে। আমি তাতে ফুলে একে দিচ্ছি, তুই সুন্দর করে রং করে দিস। খুব পছন্দ
হবে দাদুভাইয়ের ।
নববর্ষে সবাইকে দেব ।সায়ক আর তিয়ানের জন্য তো কিছু নেই আর,তাই একসাথে
সারপ্রাইজ আর দেওয়া হলো না। তোমার জন্য একটা শাড়ি কিনেছিলাম ,কাল পরলে খুশি
হতাম ।
সাত বছরে প্রথমবার পরম স্নেহে মাধুজার হাতটা ধরে বলল
সব ঠিক হয়ে যাক ,পৃথিবী ফিরে আসুক তার নতুন ছন্দে তারপর না হয় সবাই মিলে এক
সাথে নতুন কাপড় পড়বো ,সেই দিনই হবে আমাদের সত্যিকারে নববর্ষ।
Bangla Golpo,
Bengali Story, Subho Noboborsho