শারদীয়া দূর্গা পূজার কথা, অর্থ, গল্প 2022 – Sharodiya Durga Puja

Bongconnection Original Published
6 Min Read

 শারদীয়া দূর্গা পূজার কথা, অর্থ, গল্প 2022 – Sharodiya Durga Puja

শারদীয়া দূর্গা পূজার কথা, অর্থ, গল্প 2022 - Sharodiya Durga Puja
Loading...

শারদীয়া দূর্গা পূজার কথা


উমার আগমন আপামর বাঙালির কাছে শুধুমাত্র পূজো বা উৎসব নয়, আবেগ। এই কটি দিনে
বিনি সুতোই গাঁথা হয় ছোটো বড়ো সুখ দুঃখ কথা। কোথাও আবার ছিন্ন হয় মোতির
মালা। হৃদয় ভাঙ্গে, মন জোড়ে। অন্তরে প্রজ্জ্বলিত হয় দীপশিখা। চিরকালীন
বাঙালির দুর্গাপূজা।

শারদীয়ার গল্প ২০২২

১. রায় বাড়ির হেঁসেলে আজ সাজো সাজো রব, সবাই ততষ্ঠ। অনেকদিন বাদে গিন্নী মা
আজ নিজে হেঁসেলে, অসুস্থ শরীরে। সব শুনে শশব্যাস্ত হয়ে ছুটে এলেন রায় বাবু।
উদ্বেগ কণ্ঠে, ” আহা, তুমি আবার এই শরীরে এখানে কেনো? ” ঝঙ্কার দিয়ে ওঠেন রায়
গিন্নী ” বলি প্রতিবছরের মতো বালুসাই, নারকোল তক্তি, মালপো, নাড়ু, মনোহরা,
জিবেগজা, খাজা, নিমকি – এসব করবে কে? আমাদের হারান কি এসব পারে? ছাগল দিয়ে কি
আর হাল চাষ হয়!” আমতা আমতা করে বলেন শশাঙ্ক রায়, ” না, এবারে তো ছেলেরা কেউ
আসছে না। আমি তুমি তো  সুগারের রুগী। তাই ..”। গিন্নী মাঝপথেই বলেন ওঠেন,
” তা তোমার নবাব পূত্তুররা আসছেন না বলে আমার সুবল, হারান, বাদল, বিহারী, কানু
বউ, মধু ঘোষ, বনমালী, লতা , রাঙা ঠাকুরপো, খুকি ঠাকুরঝি – এরা পুজোর দিনে
বাইরের দোকানের কেনা খাবার খাবে? বালাই ষাট। আমি বেঁচে থাকতে তা কক্ষনো হবে
না”। স্ত্রীর মধ্যে মহামায়া রূপ প্রতক্ষ্য করে রায় বাবু মনে মনে নতজানু হন।
ধুনোর গন্ধ ভেসে আসে। বোধন শুরু হয়। আজ যে মহাষষ্ঠী।

আরো পড়ুন, 
২. কাক ভোরেই স্নান সেরে নিয়েছেন অতসী দেবী। স্বামী তুষার বাবু রোজকার মতন
রবীন্দ্রনাথে মগ্ন। কাল বীরেন কে বলে দিয়েছেন এবারের পুজোয় মাছ না দিতে। কি
হবে মাছ নিয়ে? যাদের মাছ ছাড়া একবেলাও চলত না সেই কাঁকন আর তোড়া এবছর পূজোয়
বাড়ি আসছে না। বিদেশে। ব্যাস্ত। চাকরি স্বামী সন্তান সংসারে নিমগ্ন। সব সামলে
মেয়েরা নিয়মিত খবরও রাখে। কিন্তু একসাথে সময় কাটানো যে দূর অস্ত। কাছের
মানুষের বিহনে এত বড় বাড়ি খাঁ খাঁ করে। হঠাৎ পাগলা ঘোড়ার মতো দরজার কডা
নাড়ার আওয়াজ। এ শব্দ যে আজন্ম চেনা। অতসী দেবীর হৃদয়ে লাব ডুব। সটান
ব্যালকনিতে। এ কি দেখছেন! দস্যি তোড়ার পিছনে হাসিমাখা স্নিগ্ধ কাঁকন; পিছনে
নাতি নাতনীদের হাত ধরে দুই জামাই – পুরো চালচিত্র। তোড়ার আনন্দময়ী কণ্ঠ, ”
হাই মম্ ডার্লিং, হাঁ করে কি দেখছ! তোমার উমারা এট দ্যা গেট। সারপ্রাইজ কি তুমি
একাই দিতে পারো নাকি!” অশ্রুভেজা অতসী দেবী সিক্ত স্বরে বলেন, ” ওগো শুনছো,
বীরেন কে ফোন করো, ভালো ভালো মাছ আনতে বলো। তোমার মায়েরা এসেছে গো”। শঙ্খধ্বনি
উলুধ্বনি শুরু হয়। নবপত্রিকা স্থাপন হচ্ছে। আজ সপ্তমী।
৩. আজ বছরকার দিন। অষ্টমী। রাজুর মা রমা সব বাসার কাজ থেকে ছুটি নিয়েছে।
পরিচারিকার কাজ করে সে। রমা আজ শুধু রাজুর মা। খানকতক লুচি ভেজে , আখের গুড
দিয়ে রাজুর পাতে দিয়ে রমা রাজুকে তাড়া দেয়, ” যা সোনা, পাড়ার ঠাকুর দেখে
আয়”। রাজু অরাজী। মা ছাড়া সে কিছুতেই যাবে না। হার মেনে চান করে পাট ভাঙ্গা
কস্তা ডুরে পাড় নতুন শাড়ী, সিঁদুরে সজ্জিত হয়ে রাজুর হাত ধরে মণ্ডপে হাজির
হয় রমা। জোর কদমে তখন সন্ধি পূজোর তোড়জোড় চলছে। ভক্তিভরে আনন্দময়ী কে
প্রণাম করে মা ছেলে। রমা বলে, ” দেখ, মা কে কত সুন্দর দেখতে!” রমার মুখের দিকে
অপলক তাকিয়ে রাজু বলে, ” হ্যা। একদম ঠিক তোর মতো”। কাঁসর ঘন্টা ঢাক বাদ্যি
সহযোগে সেই মাহেন্দ্র ক্ষ্মণেই সন্ধিপুজো শুরু হয়। “মা মা মা গো, কৃপা করো
মা”।

শারদীয়া অর্থ 

৪. নবমীর বিকেলে শেষ দেখা প্রেমিক – প্রেমিকার। সামনের অগ্রহায়নে মেয়েটির
বিয়ে। অন্যত্র। ছেলেটির হাত ধরে মেয়েটি অস্ফুটে বলে, ” ভালো থাকিস।” মেয়েটির
হাত শক্ত করে ধরে তাদের পুরানো সব চিঠি, কার্ড গঙ্গা বক্ষে ভাসিয়ে দেয়
ছেলেটি। অবাক কণ্ঠে মেয়েটি বলে, ” ফেললি কেন? নাহয় তোর কাছেই রেখে দিতিস।”
সহজিয়া প্রেমিকের রুদ্ধ কণ্ঠ ” কি জানি, ভবিষ্যতে তোর সুখ দেখে যদি আমার মনে
অসুর জেগে ওঠে!” দূরে কোথাও বিদায়ের সুর বেজে ওঠে।
৫. বিয়ের পর প্রথম সিন্দুরখেলা তুয়ার। হাতের সামনে সব কিছু গুছিয়ে রেখেছে
রনিত, যাকে বলে কেয়ারিং হাসব্যান্ড। লাল ঢাকাই আর গয়নায় তুয়া অনন্যা। মা
দুর্গার চরণে সিঁদুর ঠেকিয়ে অতি অাধুনিকা তুয়া অবনতা, মাথায় স্বর্ণ নোয়াটি
ঠেকিয়ে স্বামীর মঙ্গল কামনা করে। তারপর …. গৌরীর কাছে অাকুণ্ঠ আত্মসমর্পণ
…..” তুমি অন্তর্যামী, সব জানো মা, পাগলটার একটা হিল্লে করে দিও মা। অনেক
কষ্ট পেয়েছে; আর কষ্ট না পায় যেন। দেখো মা।”
পাপা’স পরী তুয়া আর বাঁশিওয়ালা ঝাঁকডা চুলের ছেলেটির সম্পর্ক টেকার কথা ছিল
না, টেকেও নি। তবু, আজও মনের কোনায় সেই বাঁশির সুর অনুরণিত হয়।
পাগল তখন অনেক দূরে। কোনো নদী তীরে। উদাস। নদী বক্ষে নৌকা – কেউ একা এবং কারাও
বা কয়েকজন। ভাটিয়ালী গানে কান্না মেশে। হাহাকার করে মন।  শুরু হয়
বিসর্জনের বাজনা। আজ দশমী।
আরো পড়ুন,
Share This Article
Leave a comment

Adblock Detected!

Our website is made possible by displaying online advertisements to our visitors. Please consider supporting us by whitelisting our website.