দার্জিলিং ভ্রমন কাহিনী – Darjeeling Travel Story
দার্জিলিং ভ্রমন কাহিনী
– আশিস সরকার
ষ্টান্ড থেকে বাসটা ছাড়ার সময়েই ঘন কুয়াশা।
শীতকালে ঘন কুয়াসায় বেশিদূর দেখা যাচ্ছেনা। প্যাসেন্জারও বেশি নেই। ভাবলাম
নেমে যাই। আবার দেখলাম কাল সকালে পৌছাতে দেরী হয়ে যাবে। তাই এই বাসেই রওনা
হলাম।সুকনা পেরোবার পর অল্প অল্প বৃষ্টি পরতে শুরু হল।ঘন কুয়াশা। আস্তে আস্তে
বাসটা উঠতে লাগল। বাইরে প্রায় কিছুই দেখা যাচ্ছিল না। ঘন কুয়াশায়
ড্রাইভার ফগ লাইট জ্বলিয়ে হর্ন দিতে দিতে একে বেকে এগুচ্ছিল। রাস্তায় প্রায় কোন
লোকই ঊঠছিল না। রংটং এর একটু আগে গাড়িটা দাড়াল। একটা আ্যামবেসেডার গাড়ি দাড়িয়ে
আছে। একজন লোক একজন সুন্দরী মহিলাকে তুলে দিল। তার সুটকেশ উপরে তুলে দিল। আমার
পাশের সিট খালি। কনট্রাকটার খুব সম্মান দিয়ে তাকে আমার পাশে বসিয়ে দিল।নেপালী
বলে মনে হয়। সুগন্ধীর সৌগন্ধ মন মাতাল হয়ে উঠল। উনি আর চোখে আমাকে দেখলেন তারপর
সিটে বসলেন। আকা বাকা রাস্তায় সুন্দরী নারীর উষ্নতা ভালোই লাগছিল। বাস
আস্তে আস্তে তিনধারিয়া পাগলা ঝোড়া পেড়িয়ে সন্ধা সন্ধায় কার্শিয়াং পৌছুল। সন্ধা
নেমে গেছে। সামনে অমরদীপ রেষ্টুডেন্ট। একটু চা খেতে ঢুকলাম বেশ ভীড়। কোনমতে এক
কোনায় জায়গা পেলাম। একটু পরে ঐ মহিলা আমার উল্টোদিকে বসল। চোখাচোখি হল।
একটু হাসল। আমি নড করলাম। আমাকে জিজ্ঞাস করলেন দার্জিলিং। আমি মাথা নাড়লাম। বলল
আমি লন্ডন থেকে আসছি।ওখানে আমাদের বিজনেস আছে।গাড়ি খারাপ হয়ে গেছে
তাই বাসে***।
চা এসে গেল। খেতে খেতে নাম জানলাম সুধা সিং। আধা নেপালি আধা
পান্জাবি। ম্যালের বিখ্যাত দোকান সিংস্ এর মালিকের মেয়ে।
ম্যালে বিরাট কিউরিও শপ। কার্লিপং এও আছে। বলল দিল্লী লন্ডনেও আছে। ওরা
নিউইয়র্কে ও একটা ব্রান্চ খোলার চেষ্টা করছে।(ওরে বাবা আমি তো পাতি ব্যাঙ্ক
ম্যানেজার। )
গাড়ি আবার ছেড়ে দিল। এবার রাত্রি হয়ে গেছে ঘন অন্ধকারের
মধ্যে গাড়ি চলতে লাগল। ঠান্ডায় হাত পা জমে যাচ্ছে। এর ভিতর মেয়েটি একটু একটু
করে ঘন হয়ে আসছিল। ঠান্ডায় নরম গরম বেশ আবেশ তৈরী হল। এই ভাবে কেউ নড়লাম না বরং
আরও ঘন হলাম। আস্তে আস্তে ওর মাথা আমার কাধে ঠেকে গেল। সময় কিভাবে কেটে গেল
বুঝতেই পারলাম না। বাস দার্জলিং বাস ষ্টান্ডে এসে দাড়াল। বাস থেকে নামার সময়
আস্তে করে বলল থাঙ্ক য়্যু। দেখলাম গাড়ি দাড়িয়ে আছে। আমি নেমে কাছেই একটা
হোটেলে উঠলাম।
দার্জিলিং ভ্রমণের অভিজ্ঞতা রচনা
প্রমোশন পেয়ে বিমানবন্দরের কাছে একটা ব্যান্চে ছিলাম।
ব্যান্চটাকে বেশ গুছিয়ে সাজিয়ে নিয়েছি ।সেবার সেরা ব্যাঙ্কের পুরস্কার পেলাম।
এদিকে আর এম একদিন বললেন দার্জিলিং ব্যান্চে যেতে হবে। যদি আমি 25 দিনের ভিতর
টার্গেট পুরণ করতে পারি তবে আমাকে ওখানে স্থায়ি করে দেওয়া হবে।বেশ লোভনীয়
প্রস্তাব। জেলা শহর। আন্তর্জাতিক বিখ্যাত শহর। বিরাট ব্যান্চ। রাজি হয়ে
গেলাম। সেই উদ্দেশ্যেই এখানে আসা।
পরদিন সকালে ব্যান্চে গেলাম। অনেকেই চেনা ছিল। ওদের
সাহায্য চাইলাম। ওরা দিতে রাজি হোল।সুরু হোল নুতন লড়াই। বিভাগীয় মন্ত্রীকে
চিনতাম ডি এম ম্যাডামও চেনা বেরুল। অন্য দপ্তরগুলোতেও যাতায়ত
শুরু করলাম।( এভাবে কোন ব্যাঙ্ক ম্যানেজার তখনও সরকারী দপ্তরগুলোতে মার্কেটিং
তেমনভাবে হয়ত করত না।)
সাহায্য পেতে শুরু হল।তারপর ব্যাবসায়ী মহলে যাতায়ত শুরু করলাম। একদিন
ম্যালে এই ব্যাপারে ঘুরছি দেখি মোরের মাথায়ই সিংস্ এর বিশাল কিওরিও শপ।লোভনীয়
সব টিবেটিয়ান/নেপালী/ভূটিয়া পুরানো জিনিষে ভর্তি।মালিককে খোজ করতে বলল ভিতরে
মালকিন আছে।ভিতরে ঢুকে দেখি নানা রকম দামি কিওরিও তে ঘর ভর্তি। এক কিনারে
পিছন ফিরে একজন মহিলা কি করছে। একটু শব্দ করলাম । দেখি মহিলাটি
ফিরে তাকাল।দুজনেই একসঙ্গে বলে উঠলাম ইয়্যু। দেখি সেদিনের সেই মেয়েটা। মুখটা
উজ্বল হয়ে উঠল। মনে পরল কিওরিও দোকানের কথাই বলেছিল। আমাকে বসতে বলল। বলল
কি করতে পারি। ডিপজিটের ব্যাপারে বললাম। বলল আগে তো চা খান।আমি মাল দেখতে
লাগলাম। বলল কিওরিওতে ইন্টারেষ্ট আছে? বললাম অল্প অল্প।অবশ্য কেনার ক্ষমতা
নেই। হেসে উঠল(কি সুন্দর হাসি)। চা এসে গেল। দামি পুরানো চাইনিজ কাপে পিউর
দার্জিলিং। বললাম এটাও কি ভিনটেজ? হেসে উঠল। বলল একটু ড্যাডির
সঙ্গে কথা বলি। তারপর কি ভেবে বলল আপনার অনারে আমার একটা পারসনাল একাউন্ট
খুলব। ধন্যবাদ দিলাম। আমাকে বাইরে পর্যন্ত এসকর্ট করে সিঅফ করে দিল। বলল দেখা
হবে। ফিরবার সময় ভাবলাম কি ব্যাপার আমার মত সাধারন লোককে এত পাত্তা দিচ্ছে।
মনটা খুশি হয়ে উঠল।
পরদিন অফিসে গিয়ে মন ভালো হয়ে গেল।দেখি হিল ডেভোলাপমেন্টের
দুই অফিসার এসে বসে আছে একাউন্ট খুলবার জন্য। তারা মিনিষ্টারের অর্ডারে এসেছে।
একাউন্ট খুলে তারা এক কোটি সাত লাখ টাকার চেক জমা দিল। যতটা পারলাম সমাদর
করলাম। তারা বললেন মাস শেষের আগে আরও টাকা জমা দেবেন। বুঝলাম আমার টার্গেট হয়ত
পার হয়ে যাবে। তারা যাবার কিছুক্ষনের মধ্যে সেই সুধা সিং এসে গেল। বলল আমাদের
দোকানের একাউন্ট খোলার অসুবিধা আছে কিন্তু তিনি একটা পারশনাল একাউন্ট
খুলবেন।তিনিও ভালো টাকা জমা দিলেন। আরও বললেন তিনি ম্যালের অন্যান্য
দোকানদার দেরও বলবেন। আমি তাকে ক্যান্টিনের ভাঙা কাপে চা খাওয়ালাম বললাম
আমাদের ভিনটেজ টি। ম্যাডাম হো হো করে হাসলেন। তারপর যাবার সময় আমাকে
বললেন রবিবার দিন সিংলাতে চলুন রোপওয়েতে। মন নেচে উঠলেও বললাম বাড়ি যাব
ভেবেছিলাম যাই হোক যাব না। উনি চলে যাবার পর সহকর্মী সুমিতা ছেত্রি বলল
সাবধান ও কিন্তু চৃরেল (পেত্নি ) আছে।
পরের কদিন কাজে খুব ব্যস্ত থাকলাম। আরও দুটো
বিভাগের একাউন্ট পেলাম। টার্গেটের কাছাকাছি চলে গেলাম। রবিবার সেজেগুজে
রোপওয়ে স্টান্ডে গেলাম। একটু পরেই সুধা সিং এসে পৌছুলো। টিকিট বুক করা
ছিল। আমরা একটা কোচে রওনা হলাম। বাড়ি বিল্ডিং স্টান্ড লোকজন এগুলোর
উপর দিয়ে আমরা নেমে চললাম। নরম মাখন রঙা রোদের মধ্যে শহর মোহময় লাগছিল। আমরা
একটা ছোট পাইনের জংগলের উপর দিয়ে গ্রামের উপর দিয়ে ফুলের বাগানের উপর দিয়ে নিচে
নামতে থাকলাম। পাশ দিয়ে উপরে উঠার কেবিন গুলো চলে যাচ্ছে। আগে পিছেও
যাচ্ছে। প্রচন্ড ঠান্ডায় সুধা সিং ঘনিষ্ট হয়ে বসেছে। তার সুগন্ধী গায়ের
স্পর্শ আমাকে পাগল করে দিচ্ছিল। আমরা ঘনিষ্ঠ হয়ে গেলাম। কিছুক্ষন পরে আমরা
সিংলা এসে গেলাম। চারদিকে রেষ্টুডেন্ট পাহাড়ি হ্যান্ডক্যাফ্টের
দোকান টুরিষ্টে ভরপুর। আমরা একটু এগিয়ে একটা পার্কে ঢূকলাম। ফুলে ফুলে
ফুলময়। এক পাশে নদী রঙ্গিত নদী। স্বচ্ছ নীল জল পাথরের উপর দিয়ে বয়ে চলছে।
ওপারে সিকিমের জোরথাং।শহরের প্রান্তভাগ দেখা যাচ্ছে। আমরা নদীর পারে
বসলাম আস্তে আস্তে সুধা আমার ঘনিষ্ঠ হয়ে এল। আমি ওর হাত চেপে ধরলাম। ও
বাধা দিল না। কতক্ষন বসে ছিলাম জানি না হঠাৎ একটা চামড়ার জ্যাকেট ও টাইট
জিনস পড়া লম্বা ছেলে এসে নেপালীতে বলল ইহা পানি চলাইন্দছ(এখানেও চলাচ্ছ।) ইয়ে
মানসি কো হো (এই লোকটি কে) সুধা উঠে দাড়িয়ে বলল তাতে তোমার কি। লোকটা
হঠাৎ আমার দিকে ঘুরে বলল ইয়ু বাষ্টার্ড সি ইজ মাই ওয়াইফ। ইয়ু লিভ
হার অর আই উইল কিল ইয়ু ।সুধা মাঝখানে এসে দাড়াল চিৎকার করে বলল তুমি চলে
যাও না হলে আমি লোক ডাকব। ডাকতে হোল না দেখি পুলিশ এসে গেছে। তারা লোকটাকে ধরে
নিয়ে গেল। যাবার সময় লোকটা সুধাকে অশ্লীল ভাষায় গালি দিতে থাকল।
আমাদের ঘোরার রেশটা কেটে গেল। আমরা উঠে পরলাম। সারা রাস্তা
কেউ কোন কথা বললাম না। দার্জিলিং স্টান্ডে নেমে সুধা আমাকে গুডবাই বলে একটা
ট্যাক্সি নিয়ে চলে গেল। আমি ফিরে গেলাম আমার হোটেলে।
দার্জিলিং ভ্রমণ
পরদিন থেকে কাজে
খুব ব্যস্ত হয়ে পরলাম। প্রচন্ড ঘোরাঘুরি ধরাধরি করার পর আমাদের ডিপোজিট
টার্গেট পার হতে পারলাম। আ্যাডভান্স নিয়ে মাথা ঘামালাম না। প্রফিট
খুব বেশি হবে না কারন এই ডিপোজিটের এফেক্ট আসছে হাফে দেখা যাবে যদি
অবশ্য একাউন্টগুলি থাকে।
পরদিন দশটার মধ্যে পৌছে গেলাম মহাকালে দেখি সুধা সিং পূজা দিয়ে
টীকা দিয়ে বেরুল। আজকে স্যালোয়ার কামিজ। বলল চলুন কোথাও বসি। আমরা
উইন্ডমেয়ার হোটেলের পাস দিয়ে নেমে ম্যালের পিছনের রাস্তা দিয়ে একটা বেন্চে
বসলাম। সামনে মহান কান্চসুনজঙ্ঘা ঝকমক করছে।সুধা সিং শুরু করল তার
কথা। বলল আপনি হয়ত আমাকে খারাপ ভেবেছেন। আমাকে দেখে ভাবেন আমি বুঝি
খুব হ্যাপি। কিন্তু আমি আসলে খুব দুঃখি। আমার মা সুন্দরী তাত আপনি
বুঝতেই পারছেন।মা নেপালী নিন্ম মধ্যবিত্ত। পরিবারের। বি এ পাস না
করেই সিংস্ কিওরিওতে সেলসম্যানের কাজ নিয়েছিল। মালিক সোহন সিং
পান্জাবি। তার স্ত্রী আগেই মারা গেছিল। এক ছেলে সুরিন্দরই দোকান দেখাশুনা
করত। অতি সুদর্শন চৌখস সুরিন্দরের সব দোষই ছিল।সে মেয়েদের সঙ্গে ফ্লাট করতে
ওস্তাদ ছিল।বহু মেয়ের সঙ্গে তার ভাব ছিল। তার জালে আমার মাও পরল। লোকটা
মাকে নিয়ে ঘোরাঘুরি করল। বিয়ে করবে বলে শিলিগুড়ি নিয়ে গেল। কিছদিন পরে ওর
মা বুঝতে পারল ও প্রেগনেন্ট হয়ে পরেছে। ও সুরিন্দরকে বিয়ে করতে
বলল।সুরিন্দর তাকে বিয়ে করব বলল। এদিকে একদিন সুরিন্দর গোরাবাড়ির কাছে গাড়ি
এ্যাক্সিডেন্টে মারা গেল। তখন ওর মা তিন মাসের প্রেগনেন্ট। ও কি করবে
বুঝতে পারছিল না। একদিন ওর মা বিষ খেল কিন্তু মরল না। জানাজানি হবার
ভয়। তখন সোহন সিং ওকে বিয়ে করল। একটি মেয়ে হল সেই মেয়েটিই সুধা সিং। সোহন
সিং অতি সজ্জন ব্যক্তি। সে তার মাকে পূর্ণ সন্মান দিল যদিও তাদের কোন
সম্পর্ক ছিল না। সোহন সিং সুধাকে নিজের মেয়ের মত ভালোবাসে। তাকে
লরেটো থেকে পাস করিয়ে ব্যবসার দায়িত্ব দিয়েছে। ইতিমধ্যে
তাদের ব্যবসা বহুগুন বেড়েছে। সুধাও যোগ্যতার সঙ্গে কাজ করেছে। কিন্তু তার
ভিতরও তার বাবার চরিত্র দোষ দেখা দেয়। অল্প বয়েস থেকে সে বহু পুরুষের
সঙ্গে সম্পর্ক করে। দার্জিলিং নাম করা চা ব্যবসায়ী বনশল টি র মালিকের ছেলে
অশোক বনসলের সঙ্গে তার ঘনিষ্টতা বেড়ে যায়। অশোক বনসাল ছিল টোটাল লাফাঙ্গা
টাইপের। তার ফাদে সুধা পরল। তারা দু বাড়ির মতের অমতে বিয়ে করল।
কিন্তু তাদের মধ্যে গন্ডোগোল শুরু হয়ে গেল। সুধার ব্যবসা থেকে লাখ
লাখ টাকা নিয়ে দিল্লী বোম্বাই এ জুয়ো খেলত। সুধা একটা ইমম্যাচিওর ছেলের
জন্ম দিল। তাদের সম্পর্কে পুরোপুরি ফাটল ধরল। সুধা ডিভোর্স চাইলেও ও দিল
না। সুধা নিজ বাড়িতে চলে এল।
খুব ব্যস্ত হয়ে পরলাম। প্রচন্ড ঘোরাঘুরি ধরাধরি করার পর আমাদের ডিপোজিট
টার্গেট পার হতে পারলাম। আ্যাডভান্স নিয়ে মাথা ঘামালাম না। প্রফিট
খুব বেশি হবে না কারন এই ডিপোজিটের এফেক্ট আসছে হাফে দেখা যাবে যদি
অবশ্য একাউন্টগুলি থাকে।
পরদিন দশটার মধ্যে পৌছে গেলাম মহাকালে দেখি সুধা সিং পূজা দিয়ে
টীকা দিয়ে বেরুল। আজকে স্যালোয়ার কামিজ। বলল চলুন কোথাও বসি। আমরা
উইন্ডমেয়ার হোটেলের পাস দিয়ে নেমে ম্যালের পিছনের রাস্তা দিয়ে একটা বেন্চে
বসলাম। সামনে মহান কান্চসুনজঙ্ঘা ঝকমক করছে।সুধা সিং শুরু করল তার
কথা। বলল আপনি হয়ত আমাকে খারাপ ভেবেছেন। আমাকে দেখে ভাবেন আমি বুঝি
খুব হ্যাপি। কিন্তু আমি আসলে খুব দুঃখি। আমার মা সুন্দরী তাত আপনি
বুঝতেই পারছেন।মা নেপালী নিন্ম মধ্যবিত্ত। পরিবারের। বি এ পাস না
করেই সিংস্ কিওরিওতে সেলসম্যানের কাজ নিয়েছিল। মালিক সোহন সিং
পান্জাবি। তার স্ত্রী আগেই মারা গেছিল। এক ছেলে সুরিন্দরই দোকান দেখাশুনা
করত। অতি সুদর্শন চৌখস সুরিন্দরের সব দোষই ছিল।সে মেয়েদের সঙ্গে ফ্লাট করতে
ওস্তাদ ছিল।বহু মেয়ের সঙ্গে তার ভাব ছিল। তার জালে আমার মাও পরল। লোকটা
মাকে নিয়ে ঘোরাঘুরি করল। বিয়ে করবে বলে শিলিগুড়ি নিয়ে গেল। কিছদিন পরে ওর
মা বুঝতে পারল ও প্রেগনেন্ট হয়ে পরেছে। ও সুরিন্দরকে বিয়ে করতে
বলল।সুরিন্দর তাকে বিয়ে করব বলল। এদিকে একদিন সুরিন্দর গোরাবাড়ির কাছে গাড়ি
এ্যাক্সিডেন্টে মারা গেল। তখন ওর মা তিন মাসের প্রেগনেন্ট। ও কি করবে
বুঝতে পারছিল না। একদিন ওর মা বিষ খেল কিন্তু মরল না। জানাজানি হবার
ভয়। তখন সোহন সিং ওকে বিয়ে করল। একটি মেয়ে হল সেই মেয়েটিই সুধা সিং। সোহন
সিং অতি সজ্জন ব্যক্তি। সে তার মাকে পূর্ণ সন্মান দিল যদিও তাদের কোন
সম্পর্ক ছিল না। সোহন সিং সুধাকে নিজের মেয়ের মত ভালোবাসে। তাকে
লরেটো থেকে পাস করিয়ে ব্যবসার দায়িত্ব দিয়েছে। ইতিমধ্যে
তাদের ব্যবসা বহুগুন বেড়েছে। সুধাও যোগ্যতার সঙ্গে কাজ করেছে। কিন্তু তার
ভিতরও তার বাবার চরিত্র দোষ দেখা দেয়। অল্প বয়েস থেকে সে বহু পুরুষের
সঙ্গে সম্পর্ক করে। দার্জিলিং নাম করা চা ব্যবসায়ী বনশল টি র মালিকের ছেলে
অশোক বনসলের সঙ্গে তার ঘনিষ্টতা বেড়ে যায়। অশোক বনসাল ছিল টোটাল লাফাঙ্গা
টাইপের। তার ফাদে সুধা পরল। তারা দু বাড়ির মতের অমতে বিয়ে করল।
কিন্তু তাদের মধ্যে গন্ডোগোল শুরু হয়ে গেল। সুধার ব্যবসা থেকে লাখ
লাখ টাকা নিয়ে দিল্লী বোম্বাই এ জুয়ো খেলত। সুধা একটা ইমম্যাচিওর ছেলের
জন্ম দিল। তাদের সম্পর্কে পুরোপুরি ফাটল ধরল। সুধা ডিভোর্স চাইলেও ও দিল
না। সুধা নিজ বাড়িতে চলে এল।
অশোক পুরোপুরি মাতাল আর লম্পট হয়ে পরল। মাঝে মাঝে আসে আর সুধাকে টাকার জন্য
চাপ দেয়। সুধা স্বীকার করল তারও একটা দোষ আছে সে সুন্দর ছেলে দেখলে ঠিক থাকতে
পারে না। এটাই তার দোষ। সেইজন্য এখানে তার প্রচুর বদনাম।
কিছুক্ষন সুধা চুপ করে থাকল।
তারপর বলল আপনাকে কেন এসব বলছি জানি না।না বললেও কিছু যায় আসে না। সেদিনের বাস
থেকে আপনাকে অনেক বিশ্বস্ত ও ভালো বলে মনে হয়েছিল। সেইজন্য ভাব করেছি।
আমি সুধার হাত ধরে রইলাম। সামনে মহান
কান্চনজঙনঘা নরম রোদে ঝলমল করছে।চারপাশে পাইনের বন ফুলের বাগান স্বাগত
জানাচ্ছে।
পরদিন শনিবার ঠিক করলাম আমরা অফিসের কাজটা
যতটা সম্ভব এগিয়ে নিয়ে যাব যাতে 31 তারিখের মধ্যে প্রফিট ফিগার বার করতে
পারি। সকাল থেকে কাজ শুরু হল। ভালো খবর পাওয়া শুরু হল দুটি দপ্তরের টাকা
পেলাম। হিল ডেভোলাপমেন্ট থেকে তিন কোটি টাকার আর একটা চেক পেলাম। আর এম কে খবর
দেওয়াতে তিনি সব স্টাফদের ভালো হোটেলে খাইয়ে দিতে বললেন। মনটা অনেক
রিলাক্স হয়ে গেল।
বিকালে সুধা সিং ফোন করল। জিজ্ঞাস করল কাল ফ্রি হব কিনা।
স্টাফদের বললাম কাল আমার একটু কাজ আছে। সবাই বলল আপনার তো এখানে কোন কাজ
নেই। আপনি যেতেই পারেন। খালি সুমিতা ছেত্রি চোখ মেরে বলল সাবধান দাজু।
পরদিন রেডি হয়ে ক্যাপিটাল হলের সামনে
দাড়ালাম। একটা গাড়ি এসে দাড়াল।দেখি সুধা সিং নিজেই চালিয়ে এসেছে। বলল উঠে
পরুন।
বাইরে বৃষ্টি বৃষ্টি আবহাওয়া। প্রচন্ড ঠান্ডা। আমরা ঘুরে ঘুরে জলাপাহাড়ের
দিকে উঠতে থাকলাম। ঘন কুয়াসা একটু পরে ঝিরঝির বৃষ্টি শুরু হল। আমরা একটু আগে
গিয়ে ভিক্টোরিয়া হাউসের সামনে দাড়ালাম।বৃটিশ শাসনের প্রতিভূ ঐ বিশাল বাড়িটি
মেঘে ঢেকে আছে। আমরা গাড়ি পার্ক করে ভিতরে নিচতলার রেষ্টুডেন্টে
ঢুকলাম। সম্পূর্ন ব্রিটিশ টাইপের রেষ্টুডেন্ট চলান একজন
স্কটিশ মহিলা। দেখলাম ভিতরে ইউরোপীয়ান টুরিষ্টে ভর্তি। জায়গাটা ইউরোপের
কোন রেষ্টুডেন্টের মত লাগে।
সুধা প্রথমে চা অর্ডার করল তারপর ফোর কোর্স লান্চ অর্ডার
দিল। আমরা জানলার পাশে বসলাম। বাইরে দেখলাম বরফের কুচি ঝড়ে পরছে। দুরে রাস্তায়
বাচ্চারা বরফ ছোড়াছুড়ি করে খেলছে। চা দিয়ে গেল সুদৃশ বৃটিশ টি সেটে। চা খেতে
খেতে আমরা গল্প করলাম। সুধা বলল আপনি থাকাতে আজকের দিনটা অন্য রকম লাগছে। ও
হাত বাড়িয়ে দিল। আমি ওর হাত চেপে ধরলাম।সুধা আমার চোখে চোখ রেখে আস্তে বলল জীবন
সত্যিই অদ্ভূৎ তাই না।যদি এরকম করে কেটে যেত।
লান্চ সার্ভ করে দিয়ে গেল। চমৎকার রান্না। গল্প করতে করতে
খাবার খেলাম। তারপর গল্প করলাম। সান্ধ মুহুর্তে আমরা বেড়িয়ে এলাম। সুধা বলল এখন
না গিয়ে চলুন একটু হাটি। সেই সন্ধায় বরফের মধ্যে আমরা দুজনে হাটতে শুরু
করলাম চারদিক শুনসান দু চার জন লোক বরফ পড়া উপভোগ করছে।দোকান গুলো
সব ফাকা। একটু অন্ধকার মত জায়গায় সুধা ঘনিষ্ঠ হয়ে এল। আমার ঠোটে
ভালোবাসার চিহ্ন পড়িয়ে দিল। হঠাৎ পিছন থেকে শালে মেরো বুড়িয়া কো সাথ মজা
মারদাইছস(শালা আমার স্ত্রীর সঙ্গে মজা মারছিস) বলে কেউ লাঠি জাতীয়
কিছু দিয়ে মারার চেষ্টা করছিল। আমি ঝট করে সরে যাওয়ার চেষ্টা করলেও কিছুটা আমার
মাথায় লাগল। সুধা চিৎকার করে লোকটার উপর ঝাপিয়ে পড়ল। চারপাশ থেকে লোক
দৌড়ে এসে লোকটাকে চেপে ধরল। দেখি এটা সেই অশোক বনসাল সুধার স্বামী। দেখলাম আমার
মাথা থেকে রক্ত বার হচ্ছে। লোকদের সুধা অশোক বনশালকে ছেড়ে দিতে
বলল।তাড়াতাড়ি গাড়ি নিয়ে আমাকে নিয়ে গেল ফ্রাঙ্ক রসের দোকানে।ওখানে ডাক্তার ছিল।
আমাকে ফাষ্ট এডস দিয়ে দিল। তারপর আমাদের আর জমল না। সুধা আমাকে পৌছে দিল
ব্যাঙ্কে। সবাই দৌড়ে এল বললাম বরফে স্লিপ করে পড়ে গেছি। খালি সুমিতা
ছেত্রি বলল মো ইসকো লাগি তপাইকো মিশনু না ভনেকো থিও ( আমি এই জন্যই আমি
আপনাকে মিশতে না বলেছিলাম)। সবাই আমাকে জোর করে হোটেলে পাঠিয়ে দিল।
তার পর দুদিন কাজে খুব ব্যস্ত হয়ে পরলাম। 30 তারিখ
রাত্রের ভিতর আমাদের প্রফিট ফিগার বেড়িয়ে গেল। গত বারের থেকে ডাবলেরও বেশি
প্রফিট হয়েছে। আর ডিপোজিট গ্রোথ 140%। আ্যাডভান্স কিছু দেইনি। কাজেই আগে যা
দেওয়া হয়েছিল তাই আছে। রিজিউন্যাল ম্যানেজারকে জানালাম। বলল ওয়েল ডান। কাল সব
স্টাফকে ভালো করে খাইয়ে দেও।স্টাফদের বললাম। দুএকজন বলল আমাদের স্কচ চাই। একটু
পরে বোম্বাই থেকে জেনারল ম্যানেজার ফোন করে কনগ্রাচুলেশন জানালেন।
দুপুরে একটু বাইরে গিয়েছিলাম। এসে পিয়ন বলল একজন দেখা করতে
চায়। আসতে বললাম দেখি এ ত অশোক বনশাল। ও নমস্কার করে আমার পা ছুতে গেল। কাদতে
কাদতে বলল স্যার মলাই মাপ কর দিনুস। মো বহুৎ ভূল করেকোছু
মলাই দো জুতা মারনুশ( স্যার খুব ভূল করেছি।আমাকে দু জুতা
মারুন। )আমি তাকে তুলে বসালাম। তার সঙ্গে কথা বললাম। চা খাওয়ালাম। বুঝলাম
সে সুধা সিং কে মনে প্রানে ভালোবাসে।
কি মনে হল তাকে বললাম আপনি এক কাজ করুন কাল বেলা বারোটার সময় বাতাসীয়া লুপের
কাছে ক্যাভেন্ডার্সে আসুন না। ও আচ্ছা বলে চলে গেল। আমি সুধা সিং কে ফোন
করলাম। বললাম এই দুইদিন আমি খুব ব্যস্ত ছিলাম। সেইজন্য ওকে ফোন করতে পারি নি।
বললাম পরদিন সারে এগারোটার ভিতর বাতাসিয়া লুপে ক্যাভেন্ডার্সে আসতে পারবে কি
না। ও রাজি হয়ে গেল।
পরদিন ক্লোজিং। আমরা আগের রাত্রে সব রেডি করে রেখেছিলাম। কাজেই
তেমন কাজ নেই। আমি অফিসে বললাম আমি এগারোটার মধ্যে একটু বাইরে যাব আর
একটারমধ্যে চলে আসব। ওরা রাজি হল। সুমিতা ছেত্রি বলল তপাই না আয়ে পাছি হামি
লাই খানা খান্দাই না।(আপনি না আসা পর্যন্ত আমরা খাব না )
এগারোটার মধ্যে আমি একটা ট্যাক্সি ধরে বাতাসীয়া
লুপে চলে এলাম। দেখি কিছুক্ষন পরে সুধা সিং চলে আসল। বিদেশী জিনস্ আর জ্যাকেট
আর দামি গগলসে তাকে হিন্দি ছবির নায়িকার মত লাগছিল। আমরা উপর তলার স্পেশাল
কেবিনে গিয়ে বসলাম। বললাম আজকে আমি খাওয়াব। চার অর্ডার করলাম। পিছনে দার্জিলিং
শহরের পটভূমিতে সুধাকে অসাধারণ লাগছিল। বললাম তোমাদের এ শহর আমার খুব
ভালো লাগল সবচেয়ে ভাল লাগল তোমাকে।ওর গোমরা মুখে হাসি ফুটে উঠল। ও আমার হাত
চেপে ধরল। দেখি দূরে অশোক বনসল আসছে। আমি তাকে ডাকলাম।সুধা অবাক হয়ে
তাকল। বললাম সুধা অশোক আমি তোমাদের মিলিয়ে দিলাম। এটা আর ভেঙ না। দুজনেই হতভম্ব
হয়ে তাকিয়ে রইল। আমি উঠে বেড়িয়ে এলাম। একটা ট্যাক্সি ডেকে সোজা ব্যাঙ্কে।
স্টাফরা হৈ হৈ করে উঠল। সুমিতা ছেত্রি বলল আর এম ফোন করেছিল । তোমাকে ফোন
করতে বলেছে। আর এম কে ফোন করলাম। বলল তুমি কাল সকালে তোমার পুরানো ব্যাঙ্কে
জয়েন কর। মিনিষ্টার চায় তুমি ওখানে যে কাজ শুরু করেছিলে তা শেষ কর। তারপর কি
করা যায় আমি দেখছি। আমি স্টাফদের বললাম। সবার মন খারাপ হয়ে গেল। আমি
বললাম নো ম্যাটার আজ তো চলাও ফোয়ারা। চিয়ার্স সুমিতা ছেত্রি বলল আমি খুসি কারন
আপনি চুরেলের (পেত্নি) হাত থেকে বাচলেন।
পরদিন সকালে ভোড়ে ট্যাক্সি নিয়ে আমি চললাম পুরানো ব্যাঙ্কে।
বহু বছর পর আমি বোম্বেতে কোলাবা অন্চলে ঘুরছি একদম বিদেশি
পরিবেশ। বিদেশীরা গিজগিজ করছে। । চারদিকে বড় বড় দোকান। নানা রকম
হ্যান্ডিক্যাফট আর্ট আর কিউরিও সপ।
একটু অন্যমনস্ক হয়েছি। হঠাৎ স্যার তপাই ইহা।(স্যার আপনি
এখানে) । তাকিয়ে দেখি অশোক বনসল। আমাকে জড়িয়ে ধরলা বলল চলু ন দোকানে। দেখি সিংস
এর বিশাল কিউরিওর দোকান। ভিতরে গেলাম। সুধা এসে আমাকে প্রনাম করল। কুশল জানলাম।
ওরা বলল ঐ ঘটনার পর তাদের মিটমাট হয়ে যায়। তারা এখন সুখি ক্যাপল।
চা আসল। দেখি একটা সুন্দরী কিশোরী এসে দাড়িয়েছে। বলল হামেরুকো ছুড়ি(আমাদের
মেয়ে)।
*******************&*********
Also read,