Bangla Premer Golpo Love Story – বাংলা প্রেমের গল্প লাভ স্টোরি Online

Bongconnection Original Published
20 Min Read


 Bangla Premer Golpo Love Story – বাংলা প্রেমের গল্প লাভ স্টোরি
Online

Bangla Premer Golpo Love Story - বাংলা প্রেমের গল্প লাভ স্টোরি Online
Loading...

একটি অজানা প্রেম
– পার্থ বোস
[[ প্রিয় পাঠক, কিছু অনিবার্য কারণে এই গল্পের পূর্বের নামটা পরিবর্তন করতে
বাধ্য হলাম।  আশা রাখছি দয়ালু পাঠক আমাকে মার্জনা করবেন। ]]
শতদল প্রায় বছর খানেক পর দেশে ফিরেছে। বিগত তিন বছর ধরে সে আমেরিকায় রয়েছে
চাকরির কারণে। প্রতি আট ন’মাস পর পর সে বাড়ী আসে। কিন্তু এবার আসতে একটু দেরি
হয়েগেছে। 
বিদেশে থাকলেও তার মাতৃভূমি মালদার এই  সুলতানপুর তার খুব প্রিয়। তাই
বাড়ী ফেরার পরদিনই সকাল সকাল বেরিয়ে পরেছে সাইকেল নিয়ে। বিশুদ্ধ অক্সিজেন আর
চীর সবুজ প্রকৃতি শতদলকে এক স্বপ্নময় জগতে পৌঁছে দিয়েছে। পাখিদের মিষ্টি কুজন,
মন ভোলানো সবুজ অরণ্য শ্রেণীর মধ্যে নিজেকে হারিয়ে ফেলেছে শতদল। 
এত সুন্দর সকালের জন্য সে মনে মনে ভগবানকে ধন্যবাদ দিচ্ছিল। কিন্তু ভগবান বোধহয়
তার জন্য অন্য কিছুই ভেবে রেখেছিল। 
শতদল যখন সুন্দর সকালের আমেজে মশগুল ঠিক তখনই অনেক দিনের  পুরোনো বন্ধু
সোহমের সঙ্গে  হঠাৎ করে দেখা। বিগত সাত বছরে একবারও কথা হয়নি। তাই এই
সৌজন্যহীন হঠাৎ সাক্ষাৎকারে  সোহম কিন্তু ‘কি ? কেমন আছিস?’ দিয়ে শুরু করল
না। শুধু দু-তিন  লাইন কথা প্রায় এক নিশ্বাসে বলেই হন হন করে চলে গেল।
“জানিস, রাজদীপ আর ওর বাবার খুব বড় এক্সিডেন্ট হয়েছে দু-তিন দিন আগে। ওরা
দুজনেই হসপিটালে ভর্তি। পারলে একবার দেখা  করিস।”

বাংলা প্রেমের গল্প

Loading...
শতদল কোন উত্তর করল না। আসলে খবরটা শুনে শতদলের মনে দুঃখ লাগল ঠিকই। কিন্তু
দেখতে যাওয়ার ইচ্ছা হচ্ছিল না। সেই সাত বছর আগেকার পুরোনো তিক্ততাটা তার আবার
মনে পড়ে গেল। 

শতদল সোহম রাজদীপ তিনজনই মালদা জেলা স্কুলের ছাত্র। গভীর বন্ধুত্ব ছিল তিনজনের
মধ্যে। পড়াশোনায় শতদল তিনজনের মধ্যে সবচেয়ে ভালো ছিল। শুভম আর রাজদীপও মোটের
উপর ভালো হলেও রেজাল্টে শতদলের ধারে কাছেও ঘেঁষতে পারতো না। এই বিরাট নম্বরের
ফারাক তাদের বন্ধুত্বের মধ্যে কখনও চিড় ধরায় নি। কিন্তু শেষ অবধি চিড় ধরেছিল।
তবে কারণটা ছিল অন্য।
তখন উচ্চমাধ্যমিক এবং জয়েন-এনট্রান্স পরীক্ষা সবে সবে শেষ হয়েগেছে। তিনজনে
চুটিয়ে আড্ডা দিচ্ছে। একাক দিন একাক জনের বাড়ীতে। প্রতেকের পরিবারও নীরবে এবং
স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে প্রশয় দিয়ে চলছিল এই আড্ডার মেহেফিলকে। 
শতদলের আজও মনে পরে সেই দিনটা। সেদিন আড্ডা ছিল রাজদীপের বাড়ীতে। রাজদীপের মা
হঠাৎ করে আবদার করে বসল – “এই শতদল, আমাদের তপুটাকে একটু অঙ্ক শেখা না। মেয়েটার
অঙ্কে একেবারেই মাথা  নেই। তুই তো অঙ্কে খুব ভালো। তুই শেখালে খুব ভালো
হবে। ওর দাদাকে ও পাত্তাই দেয় না।”  
সেই শুরু শতদলের জীবনের আরেক অধ্যায়। তপু রাজদীপের একমাত্র বোন। ক্লাস নাইনে
পড়ত। 
শুরু হল শতদল-তপুর অঙ্কের ক্লাস। প্রথম দিকে এই ক্লাস তিন চার দিন বাদে বাদে
হত। কিন্তু যত দিন গড়াতে লাগল এই ক্লাসের সংখ্যা বাড়তে লাগল। শেষের দিকে তো
প্রায় প্রতিদিনই ক্লাস হতে লাগল। কোন দিন সকালে নয়ত কোন দিন বিকালে। 

সুন্দর প্রেমের গল্প

ক্লাসে যে শুধু অঙ্ক হত না সেটা বলাই বাহুল্য। অঙ্কের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলত
নানা বিষয়ে নানা আলোচনা। দেশ-বিদেশের নানা খবর, সিনেমা  সিরিয়াল ,ভুত পেট
দত্যি দানাব  কোন কিছুই বাদ যেত না সেই আলোচনায়। 
তবে এই নিয়ে রাজদীপ বা  পরিবারের অন্য কারোর কখনও কোন আপত্তি ছিল না।
তপুরও অঙ্কের প্রতি মনোযোগ দিনের দিন বেড়েই চলেছে।  তপুর এই পরিবর্তনে
বাড়ীর সবাই বেশ খুশী। 
তবে ছাত্রীকে অঙ্ক শেখাতে মাস্টার মশাইকে মাঝে মধ্যেই ঘুস দিতে হত। ঘুস ছিল
গল্পের বই। ভুতের গল্পের প্রতি তপুর ছিল দুর্নিবার আকর্ষণ। শতদলদের বাড়ীতে ছিল
এক বিরাট আলমারি ভর্তি নানা গল্পের বই। ফলে মাস্টার মশাইকে সেই আলমারি থেকে
বেছে বেছে ভুতের বই নিয়ে যেতে হত – ছাত্রীকে অঙ্কের প্রতি মনোযোগ ধরে রাখার
জন্য। বেশ চলছিল সময়টা। কিন্তু দেখতে দেখতে সময় চলে এলো শতদলদের রেজাল্ট
বেরনোর।


ওদের তিন জনের মধ্যে এক মাত্র শতদলই আই-আই-টি এন্ট্রান্স এ বসেছিল।পরীক্ষাও তার
খুব ভালো হয়েছিল। শতদলের আশা ছিল সে চান্স পাবে। 
কিন্তু সে ভেবে পাচ্ছিল না – যদি সে চান্স পায় তবে তাকে বাড়ী ছেড়ে চলে যেতে হবে
হস্টেলে। তখন  এই ক্লাসের কি হবে?
 উচ্চমাধ্যমিকের রেজাল্ট বেরলে কে কোথায় কি স্ট্রিমএ যাবে কেউ জানে না।
তখন হয়ত এই  তিনজনের নিয়মিত যোগাযোগটাই  বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। সবাই
নিজের নিজের ক্যারিয়ারে ব্যস্ত হয়ে যাবে। তখন শতদল আর তপুর এই বন্ধুত্ব কি আর
থাকবে ? শতদলের মনটা দুঃখে মুছরে উঠল। 
শতদল নিজেকে বার বার প্রশ্ন করতে থাকলো – তবে কি সে তপুকে ভালবেসে ফেলেছে? শতদল
জানে না এর উত্তর। কিন্তু এর পর দিন যখন সে পড়ানো শেষ করে ফিরে আসছিল – অন্য
দিনের মতো তপু সঙ্গে এসেছিল বাইরের গেট পর্যন্ত। সাইকেলে বসার আগে শতদল আর
নিজেকে নিয়ন্ত্রণ  করতে পারল না । বলে ফেলল মনের কথাটা – “তপু, তোকে আমি
খুব ভালোবেসে ফেলেছি রে। তুই কি আমাকে ভালবাসতে পারবি ?”
কিন্তু যে উত্তর দেবে সে তখন মুখ-চোখ লজ্জায় লাল করে পিছন ফিরে দৌড়ে ঢুকেগেছে
ঘরের মধ্যে। 
অগত্যা শতদলও বাড়ীর উদ্যেসে রওনা হল। 
আসলে অকাল পক্ব তপু ক্লাস নাইনে পড়লেও মনটা তার যথেষ্ট পরিণত।  তাই শতদলের
কথায় ঐ মুহূর্তে  উত্তর না দিয়ে সে পালিয়ে যাওয়াটাই শ্রেয় ভেবেছিল। সত্যিই
তো সময় আর তো পালিয়ে যাচ্ছে না – উপযুক্ত সময়ে উপযুক্ত উত্তর দিলেই হবে। 
কিন্তু বাড়ী ফিরে শতদল এক মুহূর্তও স্থির থাকতে পারছে না। সদ্য আঠেরোতে পা
দেওয়া শতদল মনে মনে এক পাপ বোধে ভুগছিল। তার মনে হাজারো প্রশ্নের ঝড় বয়ে
যাচ্ছিল। – ‘সে এটা কি উচিত করল? খুব বোকা বোকা কাজ হয়েগেছে। কিন্তু তপু কি
ভালো ভাবে নিলো? যদি সে বাড়ীতে বলে দেয় কি হবে? রাজদীপ কি ভাবে নেবে?’ 
ঠিক এমন সময় সোহম এসে হাজির। শতদলের হৃদপিণ্ড তখন লাফিয়ে লাফিয়ে দেহের বাইরে
বেরিয়ে আসতে ছাইছে। সে ভেবেই পাচ্ছে না সে ঠিক করেছে নাকি ভুল করেছে। তার
অস্থির অবুঝ মন ভেবে নিল ছোটবেলার বন্ধু সোহমই পারে তাকে এই জটিল পরিস্থির থেকে
বের করে আনতে। 
শিশুরা যেমন কোন অন্যয় করে অন্য শিশুর কাছে গোপন কথা না  ফাঁস কারার জন্য
ঠাকুর দেবতার দিব্বি দেওয়ায়। ঠিক তেমনই শতদল সোহমকে অনেক ঠাকুর দেবতার
দিব্বি-টিব্বি দেওয়ালো যাতে সে কাউকে কিছু না বলে। এমন কি রাজদীপকেও না। তারপর
তাকে সবিস্তারে  জানাল তার মনের যাবতীয় অনুভুতি। সেই সঙ্গে আজ সে কি করে
এসেছে সেটাও জানাল। 
সোহমও ঠাকুর দেবতার দিব্বি-টিব্বি উল্লেখ করে কথা দিল যে সেও কাউকেই 
জানাবে না। সে বিজ্ঞের মতো বলল ‘তপুকে ভালো করে বোঝাতে হবে। আমি ঠিক ফাঁকা পেয়ে
ওর সাথে কথা বলব। তুই এসব নিয়ে একদম  চিন্তা করিস না। রাজদীপ কিচ্ছু জানতে
পারবে না।’  
কিন্তু রাজদীপ জানতে পারল। পরের দিনই খুব সকালে রাজদীপ শতদলের বাড়ীতে চড়াও হল।
রাগে আগ্নিশর্মা হয়ে ওদের উঠানে দাঁড়িয়ে তীব্র চেঁচামেচি শুরু করল।
‘তুই কি ভেবেছিস – তুই পড়াশুনায় ভালো বলে কি মাথা কিনে নিয়েছিস। যা ইচ্ছা তাই
করবি। তোকে বিশ্বাস করে বোনটাকে পড়াতে দিলাম।আর তুই এমন বিশ্বাসঘাতকটা করলি।
তুই মীরজাফরের থেকে বড় বিশ্বাসঘাতক। তুই আমাদের বাড়ীতে কোন দিন ঢুকবি না। তোর
সাথে বন্ধুত্ব চিরজীবনের মতো শেষ।’ ইত্যাদি ইত্যাদি আরও অনেক কিছু। যা তার বলা
উচিত সেটাও বলল, উচিত নয় এমন কিছুও বলতে ছাড়লো না। 
শতদলের বাবা মাকেও দুকথা শোনাতে কসুর করে নি। ‘ছেলেকে শুধু ভালো পড়াশুনাই
শিখিয়েছেন। মানুষ করতে পারেন নি। ছেলেকে ভালো শিক্ষাদীক্ষা দিন। নয়ত ছেলে
পাবলিক প্যাঁদানি খেয়ে মরবে।’ 
শতদলের বাবা মা তাকে অনেক বার ঘরের মধ্যে আসার কথা বললেও, সে তো আসলই না। বরং
উঠানে দাঁড়িয়ে চেঁচামেচি করে এমন একটা পরিবেশ তৈরি করল  যা
পাড়া-প্রতিবেশীর কাছে মানসম্মান রাখা দায় হয়ে দাঁড়াল। 
শতদলের চোখ ফেটে জল আসছিল। লজ্জায় মা-বাবার দিকে তাকাতে পারছিল না। তবু 
রাজদীপকে হাত ধরে টেনে ঘরে ঢোকানোর চেষ্টা করতে গেল। কিন্তু রাজদীপ তার নাকে
এমন এক বিরাশি সিক্কার ঘুসি হাঁকাল যে তার নাক থেকে গলগল করে রক্ত বেরতে
লাগল। 
রক্ত দেখে শতদলের মা আর্তনাদ করে উঠল। রাজদীপও ভয় পেয়ে সেখান থেকে চম্পট
দিলো। 
পরের দিন সোহম সাইকেলে চাপিয়ে নিয়ে এলো এক বইয়ের স্তূপ। এই বইগুলো সে তপুকে
পড়তে দিয়েছিল। বইগুলো শক্ত করে দড়ী দিয়ে বেধে পাঠান হয়েছে। 
সোহম বলল ‘তোকে ওদের বাড়ীতে যেতে বারণ করেছে। ভাবিস না আমি কিছু বলেছি। তপুই
বলেছে। হয়তো ওর এই ব্যাপারটা পছন্দ হয়নি। এই দেখনা এ বইগুল ওই ফেরত দিয়ে
পাঠাল।’ 
শতদল আর কথা বাড়ায় নি। তীব্র ঘৃণায় সে সোহমের থেকে বইগুল নিয়ে আলমারির মাথায়
দড়াম করে রেখে দেয়। শতদলের রকম সকম দেখে সোহমও কথা না বাড়িয়ে চলে যায়। সেই শেষ
শতদলের সোহম আর রাজদীপের সঙ্গে বন্ধুত্ব। 

সেরা প্রেমের গল্প

এর তিন-চার দিন পরই উচ্চমাধ্যমিকের রেজাল্ট বের হয়। তারও ও সপ্তাহ খানেক পর
আই-আই-টির রেজাল্ট বের হয়। শতদলের র‍্যাঙ্ক ভালো হয়। সে মুম্বাই-আই-আই-টিতে
পড়তে চলে যায়। বি-টেকএর চার বছর দেখতে দেখতে শেষ হয়ে যায়। তারপর অন ক্যাম্পাসে
চাকরি। চাকরি সূত্রেই আমেরিকা যাওয়া। তাও হয়ে গেল তিন বছর। 
নিজের পড়ার ঘরে বসে সাত বছর পুরনো বিশ্রী স্মৃতি গুলো মনে পরছিল শতদলের। ঘরে
সেই আলমারির মাথাটায় চোখ  পড়তেই দেখল – সোহমের ফেরত আনা বইয়ের স্তূপ আজও
একই রকম ভাবে শক্ত দড়ী দিয়ে বাধা অবস্থায় আছে। এই সাত বছরে এই বইয়ের স্তূপে সে
বা তার বাবা-মা কেউই এক বারের জন্যও স্পর্শ করে নি।  এমনিতে এই সাত বছরের
বেশীর ভাগ সময় শতদলের এই পড়ার ঘর বন্ধ অবস্থাতেই ছিল। কিন্তু ঘর খোলা থাকলেও
কেউ স্পর্শ করত না বই গুলোকে। সাত বছর আগের সেই তীব্র অপমান যেন মিশে আছে ঐ বই
গুলোতে। প্রিয় বন্ধু রাজদীপের থেকে পাওয়া সেই অপমানের গ্লানি শতদল এবং তার
পরিবার এই সাত বছরে এক বারের জন্যও ভুলতে পারেনি।
কিন্তু  শতদল ভুলতে পারেনি তপুকেও এক মুহূর্তের জন্য। তার জীবনের প্রথম আর
শেষ  প্রেম।  হোক সে এক তরফা তবু সেটাই তার প্রথম প্রেম। দেখতে দেখতে
কিভাবে সাত সাতটা বছর কেটে গেছে – শতদলের বেশ অবাক লাগে। তবে ধীরে ধীরে
ক্যারিয়ারের সফলতা শতদলের মনের গ্লানিকে  যেন বেশ কিছুটা ফিকে করে দিয়েছে।
সে চেয়ে দেখল বইয়ের সেই স্তূপটার দিকে। এক পাহার ধুলো জমে আছে ওর উপর। সবচেয়ে
উপরের বইটা ‘শতাব্দীর সেরা ভুতের গল্প’। এটা তপুর সবচেয়ে প্রিয় ছিল। কতো বোকা
বোকা গল্প বইটার মধ্যে। কিন্তু ছোট বেলায় পড়তে বেশ লাগত। নিজের মনেই হেসে উঠল
শতদল। 
হঠাৎ করে আজ তারও ঐ বইটাই পড়তে খুব ইচ্ছা করছিল। তাই ধুলোর পাহার ঠেলে বইটা
নিয়ে বসল। কিন্তু বইটা খুলতেই বিস্ময়ের সীমা পরিসীমা রইল না। একটা চিঠি। তপুর
লেখা।
চিঠিতে লেখা ছিল –  ‘শতদলদা, আমার  খুব কষ্ট হচ্ছে- তুমি আর আমাদের
বাড়ীতে আসতে পারবে না বলে। আমি তোমাকে খুব খুব ভালোবাসি। কিন্তু তুমি সোহমদাকে
এসব বলতে গেলে কেন ? ও সব দাদাকে বলে দিয়েছে।   বাবা মা দাদা 
সবাই বলছে আমি যেন তোমার সাথে কখনো কথা না বলি। 
দাদা কাল তোমাদের বাড়ী গিয়ে যা করেছে আমি তা শুনেছি। আমার খুব কষ্ট হয়েছে।
কিন্তু এটা নিয়ে দয়াকরে আমার উপর রাগ কর না।
কাল সকালে আমি রতন স্যারের কাছে পড়তে যাব – তুমি কি পুরনো শিব মন্দির এর
পিছনের রাস্তাটায় একটু দাঁড়াবে ? অনেক কথা আছে তোমাকে বলার জন্য। প্লিস এসো
কিন্তু আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করবো।’
চিঠিটা পড়ে শতদল  হতবুদ্ধির মতো বসে রইল। বিনা কারণে এই সাতটা বছর বুকের
উপর একটা জগদ্দল পাথর নিয়ে ঘুড়ে বেরিয়েছে সে। বার বার নিজের মনে কষ্ট পেয়েছে এই
ভেবে তপু তাকে পছন্দ করতো না, তাও সে তাকে প্রেমের অফার দিয়ে একটা বিরাট পাপ
করেছে। 
এই বিশ্রী স্মৃতির পর থেকে এই সাত বছরে কোনো মেয়ের সাথে  বন্ধুত্বও করেনি
পাছে আবার  সে কোন ভুল ভেবে বসে। আজ তার প্রাণ খুলে হাসতে ইচ্ছা করছিল।
আফসোস হচ্ছিল এই চিঠির কথা যদি সে সেই সময় জানতো, তাহলে সেও পারত রাজদীপের নাক
ভাঙতে। তার এখন মনে হচ্ছে এখনই তপুর কাছে ছুটে যেতে। কিন্তু আবেগের বসে সে আর
ভুল করতে চায় না। তাই সে সরাসরি বাড়ী না গিয়ে রাজদীপকে দেখতে গেল হসপিটালে।

Bangla Premer Golpo

দেখা হল রাজদীপের সঙ্গে। হসপিটালের বেডে শুয়ে আছে  রাজদীপ। মাথায়
হাতে  পায়ে ব্যান্ডেজ বাঁধা। শতদলকে দেখে রাজদীপের মধ্যে একটা লজ্জা লজ্জা
ভাব প্রকাশ পাচ্ছিল। শতদলের চোখ এরালো না সেটা। শতদল মনে মনে একটু খুশি হল। সে
জানতো রাজদীপ কোন চাকরি পায়নি। অগত্যা বাবার বিজনেসেই ঢুকেছে। তাই রাজদীপের এই
লজ্জা পাওয়াটাকে শতদল বেস উপভোগ করল।
রাজদীপ বলল – তুই ও খবর পেয়েছিস ? কেমন আছিস? কবে এলি ?
–  কালই এসেছি। আমার খবর রাখিস দেখছি। ভালো। আমি ভালো আছি। কিন্তু তুই বল
এই অ্যাকসিডেন্টটা হল কিভাবে?
রাজদীপের চোখের কোন থেকে জল গড়িয়ে পরল ,বলল ‘এ আমার  পাপের ফল। এক সময় না
বুঝে দাদাগিরি ফলিয়েছিলাম না ? এগুলো সেই পাপেরই ফল। একদিন তোর নাক ভেঙ্গে
ছিলাম। আজ ভগবান আমাদের পুরো পরিবারটাকে ভেঙ্গে তছনছ করে দিয়েছে।’
শতদল রাজদীপকে বাধা দিয়ে বলল ‘কি সব আবোল তাবোল বলছিস।’
রাজদীপ বলল – হ্যাঁরে ঠিকই বলছি। তপু কেমন আছে জিজ্ঞাসা করবি না ?
শতদল লজ্জায় লাল হয়ে শুধু মুচকি হাসল।
রাজদীপ কান্না ভেজা গলায় বলল ‘তপু আর নেই রে।’
শতদল চরম বিস্ময় নিয়ে চেঁচিয়ে উঠল ‘নেই রে মানে?’
-‘তপু আজ দু মাস হল আমাদের ছেড়ে চলেগেছে।‘
শতদল নিজের কানকেই বিশ্বাস করতে পারছে না। বায়ুতে যেন হঠাৎ করে অক্সিজেনের অভাব
হয়ে গেছে। তার নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। গলা বুঝে আসছিল।বুকের মাঝখান থেকে
সুনামির মতো একটা কান্না ঠিকরে বেরিয়ে আসতে চাইছিল।
 নিজের কান্নাকে যতটা সম্ভব আটকে শতদল জিজ্ঞাসা করল – “কি করে হল এসব ?”
রাজদীপ জল ভরতি চোখ নিয়ে বলতে লাগল – ‘এক কোটিপতিদের ঘরে সম্বন্ধ  করে
বিয়ে দিয়েছিলাম আমরা। মাস দশেক আগে। ছেলেদের ভারতের বিভিন্ন জায়গায় হোটেল আর
গেস্ট হাউসের বিজনেস। বিরাট বিরাট  কোম্পানির গোটা বছরের বুকিং থাকে এই সব
হোটেল আর গেস্ট হাউসে। বিরাট  বড় বড় লোকের সাথে ওঠা বসা। কিন্তু ওদের এই
ডীল গুলো পেতে ওরা অনেক নুংরামোর আশ্রয় নিত। বাড়ীর বউ মেয়েদের ইউস করতো এই সব
পার্টিদের খুশী করার  জন্য। তুই তো জানিস আমার বোনটা যথেষ্ট সাদামাটা। ও
ওদের এই সব কুকীর্তি গুলোকে কখনই সাপোর্ট করত না। ওদের বিভিন্ন হাউস পার্টিতে
তপুকে খোলামেলা পোশাক পরতে বাধ্য করতো। ড্রীংক করতে বাধ্য করতো। বোন বহুবার
নিষেধ করেছে। কিন্তু লাভ হয় নি। উপরুন্তু ওর স্বামীর সঙ্গে অশান্তি হয়েছে।আমারা
কস্ট পাবো বলে ও প্রথম প্রথম আমাদের কিছু বলতই না। এরপর একদিন একটা চরমতম ঘটনা
ঘটল। একটা পার্টি চলতে চলতে  হঠাৎ করে  মদ্যপ অবস্থায়  ওদের এক
ক্লাইন্ট সবার সামনে  তপুকে  জড়িয়ে ধরে। তপু যত ছাড়ানোর চেষ্টা করে
সে তত জরিয়ে ধরে। ঐ পাটির মধ্যে এটা যেন একটা মজার ঘটনা ঘটছে চলেছে। পার্টির
সমস্ত অতিথিরা এমন কি ওর ভাসুর আর স্বামীও ওদের দেখে হাসতে শুরু করেছে। শেষে
তপু কোন রকমে ছাড়িয়ে লোকটার গলায় একটা চড় কসিয়ে দেয়। আর ও ওখান থেকে দৌড়ে 
ওর নিজের ঘরে ঢুকে যায়। ব্যাস এই নিয়ে ওর স্বামী, ওর সঙ্গে তুমুল ঝাগড়া শুরু
করে দেয়। এমন কি মারধরও করে। তপু নিরুপায় হয়ে আমাদের কাছে চলে আসে। আমরা সব
জানার পর ডিসিশন নি যে ডিভোর্স ফাইল করবো। কিন্তু কিছুদিন পর ওর স্বামী শ্বশুর
সব এসে হাতে পায়ে পরতে থাকে। বলে এ রকম ভুল আর হবে না। আমরা ভাবি শুধু শুধু
সংসারটা ভেঙ্গে কি হবে। আমারাও রাজি হই পুনরায় পাঠাতে। তপু কিন্তু রাজি ছিলনা
একটুও। বলতে গেলে আমরাই এক রকম জোর করে পাঠাই। ইস কি ভুল যে করে ছিলাম। এর ঠিক
দু সপ্তাহ পর  হঠাৎ একদিন সকালে ফোন আসে তপু নাকি মাঝ রাতে গলায় দড়ী দিয়ে
সুইসাইড করেছে। অথচ ওরা খবর দিচ্ছে সকালে। আমরা যখন পৌছালাম ততক্ষণে ওরা বডী
নিয়ে শ্মশানে। ব্যাপারটা আমাদের ভালো লাগল না। আমরা ওখান থেকে বেরিয়ে এসে ওদের
বিরুদ্ধে মার্ডারের এফ-আই-আর করি মালদা থানায়। সেই থেকে কেস চলছে। কিন্তু ওদের
অনেক পয়সা, অনেক উপর মহলের সাথে যোগাযোগ। প্রায়ই আমার কাছে, বাবর কাছে হুমকি
ফোন আসছে। জানে মেরে দেবে বলছে। এমন অবস্থায় ঠিকঠাক উকিলই পাচ্ছিলাম না।
কয়েক  জন উকিল আগাম টাকা নিয়েও পরে ফিরিয়ে দিয়েছে। শেষে পান্ডুয়ার কাছে
একজন উকিল পেলাম। সেদিন তার বাড়ী থেকে ফিরছিলাম। রাস্তায় কয়েক জন আমাদের পিছু
নিয়েছিল। দুর থেকে রিভালভার দেখাচ্ছিল। আমি বাইক  চালাছিলাম। বাবা পিছনে
ছিল। ঐ শয়তান গুলোকে দেখে তাড়াতাড়ি চালাতে গিয়েই টাল খেয়ে মারলাম এক গাছে
ধাক্কা। বাবার খুব একটা লাগেনি। তবে আমার মাথা ফেটে গেছে। হাতের আর  পায়ের
হাড়ও ভেঙ্গেছে। এবার বুঝলি কেন বললাম আমার পাপের ফল।‘

Bangla Premer Golpo Pdf Free Download

শতদলের চোখ জলে ভর্তি। গলা বুঝে এসেছে। কি বলবে বুঝতে পারছে না। তপুর এই
পরিণতির জন্য সেও কি দায়ী নয় ? সে যদি সত্যি ভালবাসত তবে কি তার উচিত ছিল না
এতগুলো বছরের মধ্যে অন্তত একবার ফিরে দেখা। তাহলে আর এটা কিসের ভালবাসা? যে
ভালবাসায় তার নিজের উপরেই কোন বিশ্বাস ছিল না। আর কিসের দাবিতেই বা সে এতো গুলো
বছর পর আজ এসেছিল? শুধুই কী একটা পুরানো চিঠি পেয়েছিল বলে?
এই বেদনাটা তার প্রাপ্য। নিজের ক্যারিয়ারকে এগিয়ে নিয়ে যেতে যেতে নিজের মনের
কাছেই কখন  পিছিয়ে গিয়েছে নিজের অজান্তে শতদল তা বুঝতে পারেনি। তার নিজের
ক্যারিয়ারের সফলতার অহংকার যেন এক মুহূর্তেই চুর্ন-বিচুর্ন হয়েগেল। 
 নিজে যতটা সম্ভব সংযত  করে সে বলল ‘’কাঁদিস না রাজদীপ। তোর এই
যুদ্ধে আমি তোর পাশে আছি সবসময়। আমার এক কলিগের বাবা কলকাতা হাইকোর্টের একজন
নাম করা ব্যারেসটার। আমি এখনি তার সাথে কথা বলব। আমি তোর কাছে প্রতিদিন আসব।তুই
ভাবিস্ না। ঐ শয়তানদের উপযুক্ত বাবস্থা না করে আমিও থামব না।‘
শতদল আর পারছিল না ওখানে থাকতে। তার খুব ইচ্ছা করছিল চেঁচিয়ে কাঁদতে।
হসপিটালের  কম্পাউন্ডের বাইরে এসে আর পারলো না নিজেকে সামলাতে – বাচ্চাদের
মতো আর্তনাদ করে হাউ হাউ করে কেঁদে ফেলল।
Also read,

Share This Article