Bangla Love Stories – বাংলা লাভ স্টোরি – অন্য বসন্ত – Read
Online
Bangla Love Story
উর্মিলা, সঙ্গে থাকে একটা ছোট্টো ফুলের ঝুড়ি, রোজ সকালে ফুল তুলে বাড়ি ফিরে
স্নান সেরে পুজো করে তারপর রান্নাঘরে ঢোকে সে। এইরকমই চলে আসছে গত কুড়ি বছর
ধরে। একসময় ডাকসাইটে সুন্দরী কলেজের অনেক ছেলের চোখ ধাঁধিয়ে দেওয়া উর্মিলা
সরকার আজও অবিবাহিত, যদিও বয়সের সাথে রূপ বেড়েছে বই কমেনি, আজো সে ছিপছিপে
সুন্দরী, একমাথা কাঁচা পাকা চুলে একটা আলগা হাতখোপা, মুখে প্রসাধনীর লেশমাত্র
নেই, একটা রিমলেশ চশমা আর সর্বদা মুখে হাসি। সরকারদের বিশাল পৈতৃক বাড়িটা
একসময় মানুষের ভীরে জমজমাট ছিল, আজ যেন খাঁ খাঁ করে, বাড়িটা বুকে করে আগলে
রেখেছে উর্মিলা।
বেরোল উর্মিলা, সঙ্গে ফুলের ঝুড়ি। আজ আকাশ মেঘলা, যে কোনো সময় বৃষ্টি আসতে
পারে, তাই বাধ্য হয়েই ছাতা নিয়ে বেরোতে হল তাকে। পার্কে সবে এক পাক হেঁটেছে
এমন সময় নজর গেল দোলনচাঁপা ফুল গাছটার দিকে – বসন্তের এই সময়টা গাছটা ফুলে
ভরে ওঠে, কি সুন্দর দেখায় তখন, অথচ শীতের শুরুতেই পাতা ঝরে ন্যাড়া হয়ে
দাঁড়িয়ে থাকে গাছটা। নিচে পড়ে থাকা কয়েকটা ফুল তুলে নিয়ে আবার হাঁটা শুরু
করল সে। হঠাৎ চোখে পড়ল একজন মাঝবয়সী ভদ্রলোক রাস্তার একপাশে বসে রয়েছেন
অদ্ভুত ভাবে। উর্মিলা এগিয়ে গেল তাঁর দিকে, দেখল ভদ্রলোক মাথায় হাত দিয়ে বসে,
কি হয়েছে জিজ্ঞাসা করতে কোনো উত্তর পাওয়া গেলনা, আবার জিজ্ঞাসা করতে যাবে এমন
সময় নজর পড়ল ভদ্রলোকের পা থেকে রক্ত বেরোচ্ছে। উর্মিলা আবার জিজ্ঞাসা করায়
এতক্ষণে উত্তর মিলল। ভদ্রলোক বললেন, “একটু সাহায্য করবেন ম্যাডাম, হোঁচট খেয়ে
পড়ে গিয়েছি, অনেকক্ষণ চেষ্টা করেও উঠতে পারছিনা, একটু যদি হাতটা ধরেন বড়ো
উপকার হয়।” উর্মিলা হাতটা এগিয়ে দিতে ভদ্রলোক উঠে দাঁড়ালেন, কিন্তু হাঁটার
অবস্থায় তিনি নেই। “আপনার কিন্তু এক্ষুনি ফার্স্ট এডের দরকার। চলুন সামনেই
আমার বাড়ি, আর চিন্তা করবেন না আমার মেয়ে ডাক্তারি পড়ছে, ওই আপনার ফার্স্ট
এড দিয়ে দেবে।” ভদ্রলোক একটু কুণ্ঠিত হয়ে পড়লেন, বললেন, “আমি ঠিক আছি,
রিক্সা নিয়ে বাড়ি চলে যেতে পারব, শুধু শুধু আপনাকে বিব্রত করবনা।” “এতে
বিব্রত হবার কি আছে, আপনি চলুন, পার্কের উল্টোদিকের বাড়িটাই আমার।” উর্মিলা র
কথা আর না করা গেল না, বাধ্য হয়েই ভদ্রলোক রাজী হলেন।
Bangla Love Stories To Read
উর্মিলা র সঙ্গে অচেনা ভদ্রলোক কে দেখে। উর্মিলা ঘরে ঢুকেই “গুঞ্জা গুঞ্জা!
একবার নিচে আয় তো দরকার আছে” ডাকতে শুরু করল। ভদ্রলোক একটু অস্বস্তি বোধ
করছিলেন এভাবে অচেনা একজনের বাড়ি এসে, কিন্তু উর্মিলা ই ব্যাপারটা সহজ করে
দিল। বলে উঠল, “এ বাবা দেখেছেন, আপনার সাথে পরিচয়টাই তো সারা হয়নি। আমি
উর্মিলা সরকার, পেশায় একজন স্কুল শিক্ষিকা।” ভদ্রলোক বললেন, “আমি রজত ভৌমিক,
এই পাড়ায় নতুন এসেছি এই একমাস হল। আমি একটু আধটু লেখালিখি করি।” কথা আর
এগোলোনা গুঞ্জা র ডাকে, “মামনি কি হয়েছে? আমার আজ তাড়াতাড়ি ক্লাশ আছে আমি
বেড়িয়ে যাব।” হন্তদন্ত হয়ে নিচে নেমেই একটু থমকে গেল গুঞ্জা, উর্মিলা রজত কে
দেখিয়ে বলল, “গুঞ্জা ইনি আজ পার্কে পড়ে গিয়েছেন, তুই একটু দেখে ফার্স্ট এড
দিয়ে দে মা, ইনি বাড়ি চলে যাচ্ছিলেন আমিই ধরে এনেছি। গুঞ্জা লক্ষ্য করল একজন
মাঝবয়সী ভদ্রলোক, মাথায় কাঁচা পাকা চুল, ক্লিনসেভ করা, পরনে বেশ দামী
ট্রাকসুট, অত্যন্ত জড়সড় হয়ে সোফায় বসে রয়েছেন।
সাথে আর দেখা হয়নি উর্মিলার। তার দিন কাটছে একই ভাবে, গুঞ্জাও হস্টেলে ফিরে
গেছে- এতবড় সরকার বাড়িতে শুধু দুজন, উর্মিলা ও মালতীমাসী। আজ অনেকদিন পর
আলমারি গুছোতে গিয়ে নজর পড়ে পুরোনো অ্যালবাম টা, দেখতে বসে সে। কতো
পুরোনো স্মৃতি, ছোট্ট গুঞ্জাকে কোলে নিয়ে তার দিদি শর্মিলার ছবি, পাশে দাঁড়িয়ে
গুঞ্জার বাবা মোহিত – আজও এই ছবিটা দেখলে চোখের জল আটকাতে পারেনা সে। মনে পড়ে
যায় সেই অভিশপ্ত রাতটার কথা – একবছরের ছোট্ট গুঞ্জাকে তার কাছে রেখে তার
বিয়ের কেনাকাটা করতে বেড়িয়েছিল শর্মিলা, মোহিত ও উর্মিলার বাবা, একটা রোড
অ্যাক্সিডেন্ট কেড়ে নেয় তিনটে জীবন। তার জাঠতুতো দাদারা অনেক বার বলেছিল
গুঞ্জাকে মোহিতের বাড়িতে পাঠিয়ে দিতে, কিন্তু ছোট্ট এই দুধের শিশু টাকে কাছ
ছাড়া করতে পারেনি উর্মিলা ও তার মা। অবশ্য এই ঘটনার পরের বছরই উর্মিলার মাও
চলে যান, জাঠতুতো দাদারাও একে একে অন্য জায়গায় ফ্ল্যাট নিয়ে চলে যায়।
কিন্তু আজও বাড়ি আঁকড়ে পড়ে আছে উর্মিলা, গুঞ্জাকে মনের মতো করে মানুষ করেছে
সে, নিজের সমস্ত স্বাদ আল্হাদ বাক্স বন্দী করে রেখেছে সে। গুঞ্জাকে বড়ো করতে
গিয়ে একসময় নিজের কাছের মানুষ অনির্বাণ কেও ফিরিয়ে দিয়েছে সে। আজ জীবনের
মধ্যগগনে এসে সে ক্লান্ত, কোনোরকমে হাসি মুখে বয়ে নিয়ে চলেছে নিজের জীবন,
কিন্তু অন্তর থেকে সে ভীষণ একা।
অ্যালবামটা খাটে রেখে নেমে এল উর্মিলা, কিন্তু নেমে এসে যাকে দেখল, তাকে আশা
করেনি- দরজায় দাঁড়িয়ে রজত ভৌমিক। একগাল হেসে ভদ্রলোক বললেন, “আপনার ছাতাটা
ফেরত দিতে এলাম ম্যাডাম, রোজই ভাবি আসব, কিন্তু সময় করে উঠতে পারছিলাম না।এই
নিন আপনার ছাতা,” বলে ছাতাটা এগিয়ে দিলেন রজত। উর্মিলা একটু অপ্রস্তুত হয়ে
বললেন, “এ বাবা এই ছাতাটা দিতে আবার এলেন এতদূর, আমাকে তো মর্নিং ওয়াক করার
সময় ই দিয়ে দিতে পারতেন। আসুন ভিতরে এসে বসুন, এক কাপ চা না খাইয়ে
ছাড়ছিনা।” রজত ভিতরে এলেন। দুজনেই যেন একে ওপরের সঙ্গে কথা বলতে পেরে
অনেকদিনের জমানো কথার ডালি খুলে বসলেন। কথায় কথায় উর্মিলা জানতে পারল যে রজত
এ পাড়ায় ফ্ল্যাট কিনেছে, একাই থাকে সে। সে বিপত্নীক, একটাই ছেলে, সে বিদেশ
চলে গেছে চাকরি নিয়ে।এখন সদ্য অবসরপ্রাপ্ত রজত লেখালিখি নিয়েই ব্যস্ত থাকেন।
রজত ও জানতে পারেন উর্মিলার জীবনকাহিনী, এটাও জানতে পারেন যে এই বাড়িতে একাই
থাকেন উর্মিলা। গল্প করতে করতে কখন যে রাত হয়ে গেছে খেয়াল করেনি কেউ, তাই
সেদিন না খাইয়ে ছাড়ে না উর্মিলা। রজত চলে যাওয়ার পর উর্মিলা নিজের ঘরে চলে
আসেন, মনে মনে ভাবেন যে অনেকদিন পর কারুর সাথে গল্প করে বেশ ভালো কাটল
সন্ধ্যাটা। যথারীতি পরের দিন সকালে প্রাত ভ্রমণে বেরোয় উর্মিলা- আজ যেন একটু
অন্যমনস্ক সে, আজ পার্কে যেন কাউকে খুঁজছে তার চোখ, কিন্তু কোথাও তার দেখা নেই।
হঠাৎ একটা চেনা গলার স্বর শুনে পিছন ফিরে দেখে অদূরে একটা বেঞ্চে বসে রজত,
তাকেই হাতছানি দিয়ে ডাকছে, পায়ে পায়ে এগিয়ে যায় উর্মিলা।
উৎসাহ একে অপরের জন্য অপেক্ষা করে থাকে। বেশিরভাগ দিনেই আগে পৌঁছে যায়
উর্মিলা, অপেক্ষা করে রজতের জন্য তাদের প্রিয় দোলনচাঁপা গাছের তলার বেঞ্চটাতে।
কত কথাই হয় তাদের মধ্যে, দুজন একা মানুষ একে অপরের সান্নিধ্যে এসে একাকীত্ব
কাটিয়ে উঠেছেন।
রোমান্টিক লাভ স্টোরি গল্প
প্রাত ভ্রমণে বেড়িয়ে রজত কে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাল উর্মিলা। ছোটো বাচ্চা
ছেলের মতো খুশি হলেন রজত। আজ খুব যত্ন করে নিজে হাতে বিভিন্ন রকম রান্না করেছে
উর্মিলা, খুব উৎসাহ নিয়ে অপেক্ষা করে রয়েছে রজতের জন্য। আজ অনেকদিন পর হাল্কা
সাজগোজ করেছে উর্মিলা, পরণে একটা হাল্কা হলুদ ঢাকাই, গলায় আর কানে হাল্কা
ডোকরার গয়না, আলগা করে হাত খোপা বাঁধা, কপালে একটা ছোট্ট কালো টিপ- অপূর্ব
সুন্দর দেখাচ্ছে আজ তাকে। সন্ধ্যা হয় হয়, এমন সময় কলিং বেলের শব্দ, কিশোরীর
মতো অতি উৎসাহ নিয়ে নিচে নামে উর্মিলা, দরজা খুলেই দেখে একটা হলুদ গোলাপের
তোড়া নিয়ে দাঁড়িয়ে সদা হাস্যোজ্জল রজত। “ভিতরে আসুন”, বলে আহ্বান জানায়
উর্মিলা। রজত ভিতরে এসে ফুলের তোড়াটি উর্মিলার হাতে দিয়ে বলে, “আমরা কিন্তু
বন্ধু হলাম, আর আপনি আজ্ঞে নয়, এবারে সোজা তুমি। কি চলবে তো?” হেসে ফেলে
উর্মিলা। হঠাৎ খেয়াল করে রজত একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে তার দিকে। সদ্য যৌবনার মতো
লজ্জায় রাঙা হয়ে যায় উর্মিলা, রজত বলে, “আজ তোমার দিক থেকে চোখ ফেরানো
যাচ্ছে না উর্মিলা, মনে হচ্ছে যেন কোন শিল্পী তোমায় খুব যত্ন করে গড়ে
তুলেছেন।” লজ্জায় চোখ নামিয়ে নেয় উর্মিলা, মনে হয় আজ বহু বছর পরে কারুর
কাছে তার সৌন্দর্যের এমন বর্ণনা সে শুনল। কথা ঘুরিয়ে দিয়ে সে বলে, “তুমি বসো,
আমি তোমার জন্মদিনের কেকটা নিয়ে আসি।” রজত বলে ওঠে, “এমা তুমি কেক কাটাবে
জানলে কিছু লোককে নিমন্ত্রণ করতাম, এরম দুজনে মিলে কেক কেটে মজাই নেই,” বলে
অট্টহাসি করে ওঠে। উর্মিলাও হেসে উঠে যায় কেক আনতে। এমন সময় আবার দরজায় বেল,
এগিয়ে এসে দরজা খোলে মালতীমাসী, দেখে একগাল হাসি, “ও মা খুকুমনি, তুমি আজকে
আসবে বলনি তো?ও ছোটদিমনি, এই দেখো কে এসেছে?” রান্নাঘর থেকে হন্তদন্ত হয়ে
বেড়িয়ে আসে উর্মিলা, দেখে গুঞ্জা দাঁড়িয়ে। এগিয়ে এসে বলে, “কিরে গুঞ্জা আগে
বলিসনি কেন আজ আসবি?” “ভালো দিনেই এসেছ গুঞ্জা, যাক বাবা আমায় আর একা একা কেক
কাটতে হবেনা”, বলে ওঠে রজত। গুঞ্জা উর্মিলা কে দেখে একটু অবাক হয়, মামনি
কে সাজগোজ করতে কখনো দেখেনি সে, আর এই ভদ্রলোক ই বা কি করছে এই বাড়িতে। রজত কে
দেখে একটু বিরক্ত ই হয় সে। এগিয়ে গিয়ে দেখে টেবিলে একটা কেক রাখা, ওপরে লেখা
‘শুভ জন্মদিন’, ব্যাপারটা আঁচ করে সে, বলে, “মামনি আমি ঘরে যাচ্ছি, তোমরা
এঞ্জয় করো, আমার খুব মাথা ধরেছে। মালতীমাসী আমায় একটু কফি দিয়ে যেও তো আমার
ঘরে”, এই বলে আর কোনো কথা না বলে সিঁড়ি দিয়ে উঠে যায় গুঞ্জা। গুঞ্জার এই
ব্যবহারে বড়োই অপ্রস্তুতে পড়ে যায় উর্মিলা, বাইরের লোকের সামনে গুঞ্জা র এই
অদ্ভুত ব্যবহারে আহত হয় সে। রজত ব্যাপারটা বুঝতে পেরে উর্মিলা কে বলে,
“উর্মিলা গুঞ্জার হয়তো খারাপ লেগেছে আমায় দেখে, দেখো তোমার কাছে যতটা শুনেছি
তাতে এটুকু বুঝতে পেরেছি যে মেয়েটার সবটা ঘিরেই তার মামনি, তাই হয়তো হঠাৎ
আমায় দেখে ওর খারাপ লেগেছে। এসো কেকটা কেটে নি, তারপর ওকে ডেকে এনো, একসাথে
ডিনার করব”। ছলছলে চোখে তাকায় উর্মিলা, রজতের মনে হয় যেন সেই দৃষ্টি তে কতো
ব্যথা বেদনা, কতো প্রশ্ন লুকিয়ে আছে। খুব দায়সারাভাবে কেকটা কাটা হয়। রজতের
কথায় গুঞ্জা কে ডাকতে যায় উর্মিলা।
এগিয়ে গিয়ে মাথায় হাত দিতেই কেঁদে ওঠে গুঞ্জা, বলে, “মামনি ওই ভদ্রলোক কেন
এসেছেন এখানে, কেন ওনার জন্মদিন পালন করছ তুমি? কে হয় তোমার? বলোনা মামনি, কে
হয় ওই ভদ্রলোক তোমার?” উর্মিলা বলে, “কেউ না”। “আমার ভুল হয়ে গেছে সোনা, আমি
বুঝতে পারিনি তোর এতোটা খারাপ লাগবে। আসলে রজত ও ভীষণ একা, প্রায় কুড়ি বছর
আগে নিজের স্ত্রী কে হারিয়েছে আর ওনার একটাই ছেলে বিদেশে চাকরি করছে। তাই
ভাবলাম, একলা মানুষ, যদি ওনার জন্মদিন টায় একটু আনন্দ দেয়া যায়, তাই আমিই
নিমন্ত্রণ করে এনেছি। বুঝতে পারিনি তুই পছন্দ করবিনা।” ‘একা’ এই কথাটা শুনে চমক
ভাঙে গুঞ্জা র, সত্যিই তো এতদিন সে খেয়াল করেনি, এই ভদ্রলোকের মতো তার মামনিও
তো একলা। মামনির দিকে তাকিয়ে দেখে কি অপূর্ব দেখাচ্ছে তার মামনি কে আজ হাল্কা
প্রসাধনীর ছোঁয়ায় আরো যেন মায়াবী দেখাচ্ছে। উর্মিলা সজল চোখে তাকে বলে,
“গুঞ্জা আজ দিনের এই ঘটনা আর কখনো ঘটবে না, আমি লজ্জিত, যদি আমায় ক্ষমতা করতে
পারিস তাহলে একবার টি নিচে আসিস খাবার জন্য।
ভালোবাসার লাভ স্টোরি
কি যেন ভাবছে। উর্মিলার পায়ের শব্দে চমক ভাঙে তার। রজত ই বলতে শুরু করে,
“উর্মিলা আজকাল কার বাচ্চারা অনেক বেশি উদার মনোভাব পোষণ করে, দেখবে যে বিষয়ে
তুমি দুশ্চিন্তা করছ, খুব স্বাভাবিক ভাবেই ব্যাপার টা কাটিয়ে উঠবে গুঞ্জা।”
উর্মিলা কি বলবে বুঝতে পারেনা, তার মনে যে ঝড় চলছে, তার কথা কি করে বলবে
সে। একদিকে একাকীত্ব কাটিয়ে নতুন করে বাঁচার সূখ আর অন্যদিকে তার একমাত্র
বেঁচে থাকার সম্বল গুঞ্জা। গুঞ্জা কে বড় করতে গিয়ে কবে যে নিজের শখ আল্হাদ
স্বপ্ন সব বিসর্জন দিয়েছে নিজেই বুঝতে পারেনি। জানলা ধরে দাঁড়িয়ে থাকে সে চুপ
করে, আর চোখের জলে ভেসে যেতে থাকে তার বুক। অন্যদিকে গুঞ্জাও নিজের মনকে শান্ত
করে বোঝার চেষ্টা করে তার মামনি কে। সত্যিই তো জ্ঞান হবার পর থেকে আজ অবধি কখনো
দেখেনি সে মামনিকে একটুও সাজগোজ করতে, কোনোদিন দেখেনি নিজের জন্য একটা দামী
শাড়ি কিনতে। সবসময়ই শুধু তার ভাবতে দেখেছে। আর আজ সে কি করে মামনির সঙ্গে এমন
ব্যবহার করল। তার ই তো বোঝা উচিত ছিল মামনির একলা থাকার যন্ত্রণা। নিজের
ব্যবহারে নিজেই লজ্জিত সে। মুখ হাত ধুয়ে একটা কুর্তি পড়ে হাসি মুখে নিচে নেমে
গেল সে – গুঞ্জা ভেবে নিয়েছে তার করণীয়। গুঞ্জা নিচে নেমে দেখল পরিবেশ থমথমে,
জানলা ধরে দাঁড়িয়ে আছে তার মামনি, আর রজত ও মুখ চুন করে বসে আছেন। “মামনি তোমরা
কখন খাবে? আমার খিদে পেয়ে গেছে, কাকু আজকে তোমার জন্মদিনে এরম মনমরা হয়ে বসে
থাকলে হবে? উঠে এসো।” গুঞ্জা র এই উচ্ছাসে চমক ভাঙে উর্মিলার, এ কোন গুঞ্জা কে
সে দেখছে, একটু আগের গুঞ্জা র সাথে তো সে মেলাতেই পারছেনা। রজতের মুখেও
হাসি। কথা গান আড্ডায় জমে উঠল সেদিনের সন্ধ্যা।
কে দেখে বলে ওঠে, “মামনি তোমায় এত খুশি আমি কোনোদিন দেখিনি। আজ তোমায় অপূর্ব
দেখাচ্ছিল মামনি। কেন তুমি এমন করে সাজোনা? উর্মিলা বলতে শুরু করে, “জানিস
গুঞ্জা, তোর মা যেদিন তোকে আমার কোলে দিয়ে যায় তুই তখন একবছরের মেয়ে, সেইদিন
থেকে তুই আমার কাছে, একটা দিন ও আমার থেকে আলাদা করিনি তোকে, তুই এখনও আমার সেই
ছোট্ট সোনা, বুঝতেই পারিনি কবে বড় হয়ে গেছিস। আজ আমি খুব খুশি যে তোকে
সঠিকভাবে মানুষ করতে পেরেছি।” গুঞ্জা বলে, “মামনি আমি তখন অন্যায় করেছি ওই
রকমভাবে ওপরে চলে এসে, মেয়ে হয়ে মায়ের একাকীত্ব টা আমার বোঝা উচিত ছিল
মামনি। আমি চাই তুমি সবসময় ভালো থাকো, যদি রজত কাকু তোমায় ভালো রাখার ঠিকানা
হয়, তবে তাই হোক মামনি।” উর্মিলা একচোখ জল নিয়ে বলেন, “গুঞ্জা আমি আর রজত
শুধুমাত্র বন্ধু, বলতে পারিস দুটো একলা মানুষ দুজনের সঙ্গ উপভোগ করি, এর থেকে
বেশি কিছুই নয়। আর এই নিয়ে কোনো কথা নয়, এবার শুয়ে পড়।” সারারাত ঘুম এলোনা
উর্মিলা র, চোখ বুজলেই আজ সৌম্যকান্তি রজতের মুখটা ভেসে উঠছে, ভেসে উঠছে তার
একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকা। অন্যদিকে রজত ও আজ ঘুমোতে পারেনি, বারবার তার মনে পড়ে
যাচ্ছে স্নিগ্ধ হলুদ ঢাকাইতে উর্মিলা কে, ভেসে উঠছে তার দীঘল কালো চোখদুটি।
রোমানটিক Love Story
মনে আজ দৃঢ় সংকল্প নিয়ে বেড়িয়েছে যে রজত কে পরিস্কার বলবে তার বাড়িতে আর
না যেতে। গুঞ্জা র চোখে যে প্রশ্ন সে দেখেছে, কিছুতেই তাকে সত্যি হতে দেবেনা
সে। আবার রজত ও ঠিক করে রেখেছে আজ উর্মিলা কে তার মনের কথা জানাবে সে। দুই
পঞ্চাশোর্ধ্ব মানুষ নিজেদের জীবনের গোধুলী বেলায় এসে একে অপরের মুখোমুখি হবার
সংকল্প করে।
গিয়ে দেখে অপেক্ষা করছে রজত। পায়ে পায়ে এগিয়ে যায় উর্মিলা, পাশে গিয়ে বসে
রজতের।
বিপত্নীক, দীর্ঘ কুড়ি বছর আমি একা জীবনযাপন করছি। আমার ছেলে রিদ্ধি বিদেশ চলে
যাবার পর আমি একা আর আমার পৈতৃক বাড়িতে থাকতে পারিনি, তাই এই ফ্ল্যাট কিনে চলে
আসা। হঠাৎ একরাশ রঙীন প্রজাপতির মতো তুমি আমার জীবনে এসেছো, আমি চাই না কেউ
কোনো খারাপ ইঙ্গিত করে আমাদের সম্পর্কটাকে কলুষিত করুক। আমি সারাজীবন তোমার
বন্ধু হয়েই থাকতে চাই। আমি কোনো বন্ধনে বিশ্বাসী নই, আমাদের সম্পর্কটা হোক ফুল
আর সুগন্ধের মতো, একে অপরের পরিপূরক।” একমনে কথাগুলো শুনছিল উর্মিলা, বলল,
“আমাদের একাকীত্ব ই আমাদের এতোটা কাছে এনেছে। আমি কোনো সামাজিক বন্ধনে যেতে
চাইনা, তবে তোমার মতো এমন শুভাকাঙ্ক্ষী বন্ধুও হারাতে চাইনা, তাই তোমার কথাই
রইল। অনেক বছর পর প্রান খুলে কথা বলার একজন সঙ্গী আমি পেয়েছি, আমি তাকে হারাতে
চাইনা।” চোখ জলে ভরে উঠল উর্মিলা র, রজত উর্মিলা র হাতদুটো ধরে বলল, “ভালোবাসি
তোমায় উর্মিলা, আজ এই দোলনচাঁপা গাছ ই হয়ে থাক আমাদের সম্পর্কের সাক্ষী, চলো
না এই বুড়ো বয়সে নতুন করে ঘর না বাঁধতে পারি, নতুন করে প্রাণভরে বাঁচতে তো
পারব।” উর্মিলা লজ্জায় রাঙা হয়ে মাথা নামিয়ে নিয়ে বলে, “ভালোবাসি রজত, আজ
থেকে আমাদের নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন শুরু হোক, কথা দিলাম তোমায়।” দোলনচাঁপা
গাছটা আজ দুজন একাকী মানুষের প্রনয়ের সাক্ষী হয়ে রইল, অকাল বসন্তে ঝরে পড়ল
কিছু দোলনচাঁপা ফুল, অলিখিত বন্ধনে আবদ্ধ হল দুজন একলা মানুষ।।
Bangla Golpo,
Bengali Story,
Love Story