Bhuter Golpo – ভূতের গল্প – Bhuter Golpo In Bengali
সত্যি ভুতের গল্প
আমার এক বান্ধবীর জীবনে ঘটা সত্যি একটি ঘটনা আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করব। এই
ঘটনার সত্যের কিংবা মিথ্যার দায় আমার নেই, এটি আমার নিজেরই একটি শোনা গল্প।
ছিলাম স্কুলের সহপাঠিনী,ও আমার খুনসুটির পাটনার বেশ মিষ্টি কিন্তু একটু ভীতু
গোছের মেয়ে ছিল ও। বিয়ের সম্বন্ধ দেখা হচ্ছিল ওর বেশ কিছু বছর ধরেই আর
উচ্চমাধ্যমিকের পরীক্ষার শেষে ওর বাড়ি থেকে সম্বন্ধ করে ওকে বিয়ে
দেওয়া হয়। পাত্র আমাদের হাওড়ার ডোমজুরের বাসিন্দা তবে কর্মসূত্রে রঞ্জিত
মানে আমার বান্ধবীর হাসব্যন্ড বাড়ি ভাড়া করে কসবা অঞ্চলে থাকত।আর সেই ভাড়া
বাড়িতেই নবদম্পতি নিজের বাসা বাঁধে নতুন করে।
বেশ সুখী সংসারী গিন্নীতে পরিনত হয়ে যায় আমাদের নবমিতা বছর দুয়েকের মধ্যে,
সঙ্গে পড়াশোনাও চালিয়ে যায় নিজের ঘর সামলানোর পাশাপাশি। কিন্তু ভাড়া
বাড়িতে থাকতে অনভ্যস্ত নবমিতা প্রায়ই রঞ্জিতকে চাপ দিতে থাকে নিজেদের ফ্ল্যাট
কেনার জন্য। রঞ্জিত ও বেশ বড় একটা মাল্টিন্যাশানাল কম্পানিতে কর্মরত ছিল, আর
বেশ কিছু ব্যাংক ব্যালেন্স জমিয়েও ছিল তার বছর পাঁচেক চাকরী করে।নবমিতার
শ্বশুরবাড়ি লোক জন ছিল ভীষণ ভালো তারও তাদের বউ মার কথায় সায় দিয়ে ওদের
দুজনের নামে একটা ফ্ল্যাট কিনতে বলে রঞ্জিতকে। কিন্তু যে ধরনের আধুনিক
ফ্ল্যাটের খোঁজ আমার বান্ধবীটি করছিল সত্যি বলতে কি সেটা বার বারই ওদের বাজেটের
বাইরে হয়ে যাচ্ছিল। শেষ পর্যন্ত নিউটাউন শিপের একটা পুরানো ফ্ল্যাটের সন্ধান
পায় ওরা, ফ্ল্যাটটা কিছুটা পুরানো এর আগে একটা পরিবার থাকতো সেখানে ভাড়া তবে
তারা ছেড়ে চলে যায়,আর ওনার ও বিক্রি করেতে চাইছিল আর সেই সুযোগে ওরা ওদের
বাজাটের মধ্যেই পেয়ে যায় ওদের স্বপ্নের নীড়।
হতে পারে একটু পুরানো ঘর কিন্তু সেটাই সুন্দর করে সাজিয়ে গুছিয়ে নতুন করে ঘর
বাঁধে ওরা। গৃহপ্রবেশে গিয়ে আমিও কবজি ডুবিয়ে খেয়ে আসি।
ভূতের গল্প বাংলায়
ঘটনার সূত্র পাত হয় ওর ৩য় বর্ষের পরীক্ষার শেষে।পরীক্ষার পর ও বাড়িতেই
সারাক্ষণ এক থাকত, মাত্র দুজনের সংসার তাই ওরা কোনো মেড রেখেছিল না। সত্যি বলতে
কি সারা দিন বাড়িতে এমন একা একা থাকতে থাকতে ও এমনিতেই একটু একাকীত্বে ভুগত,
রঞ্জিত বেরিয়ে যেতে অফিসের উদ্দেশ্য সেই সকাল ৮ টা আর বাড়ি ফিরতে ফিরতে রোজই
সন্ধ্যা ৭.৩০-৮.০০ বাজতোই, ঐ সোসাইটিতে এক একটা ফ্লোরে ৩টে করে ফ্ল্যাট ছিল,
তো ওর পাশের ফ্ল্যাটটি ছিল এক গুজরাটি পরিবারের,কিন্তু আমার বান্ধবীটি হিন্দিতে
কথা বলতে না পারার কারণে ওদের সঙ্গে আলাপ জমাতে ব্যর্থ হয় আর উল্টো দিকের
ফ্ল্যাটটাতে ৪টি অবিবাহিত চাকুরিজীবী ছোকড়াদের বাস ছিল আর বুঝতেই পারছেন তাদের
সঙ্গে গিয়ে আলাপ জমায়নি আমার বান্ধবী। সুতরাং সারাদিন রান্নাঘর,নানান
সাংসারিক কাজ, টেলিভিশন আর ফেসবুক,ইউটিউবে বিচরণ করেও একলা সময়টা তার আর কাটতো
না।
রবিবার। অদ্ভুত ভাবে ওর মনে হতে লাগে কেউ আছে ওর ঘরে যে প্রতিনিয়ত ওর উপর নজর
রেখেছে।
অদ্ভুত ভাবে ওর হাসব্যান্ড ঘরে ফেরার সঙ্গে সঙ্গে এমন গুমোট পরিবেশটা কেটে
যেত।
আর বলে না ভাষার দূরত্বও ঘুচে যায় সত্যি বন্ধুত্ব হলে, সেই ভাবেই ঐ গুজরাটি
পরিবারটির সঙ্গেও ও বন্ধুত্ব জমিয়ে নেয়, সেই একলা দুপুর গুলো ওকে আর একলা
কাটাতে হচ্ছিল না। সেই পরিবারটিও মাস কয়েক আগে এই ফ্ল্যাটটা কিনে এসে
ছিল।
গুজরাটি পরিবারটি বেড়াতে চলে গেল কিছু দিনের জন্য আর আমার বান্ধবীটির জীবনে
ফিরে এলো আবার একলা দুপুরের বিভীষিকা। কিন্তু এবার যা হতে শুরু করলো তা রক্ত
হিম করা।ও আমায় বলে এমনি তেও শীত কাল চলছিল তখন তাই ফ্ল্যাটের স্লাইডিং জানলা
ও বন্ধই রাখতো সব সময়, কিন্তু দুপুরবেলা আশ্চর্যজনক ভাবে সব জানলা খুলে যেত। ও
বন্ধ করার পরও একই ভাবে ওর অজান্তে খুলে যেত, ওর মনে আবার ভয় জমতে শুরু করে।
রঞ্জিতকে সবটা খুলে বুঝিয়ে বলতেও রঞ্জিত ওকে কথাতে হাসির দমকে অগ্রাহ্য করে
উড়িয়ে দেয়।
হেসে উঠল কিংবা ছোটো পায়ে ছোটা ছুটি করছে।কিংবা হঠাৎ এক শাড়ী পরিহিতা কেউ সরে
চলে গেল পাশ দিয়ে, কিন্তু দরজা জানলা সব বন্ধ, আর মুহূর্তের মধ্যে ওর ছাড়া
পুরো ফ্ল্যাটে আর কোনো মানুষের অস্তিত্ব নেই ও জানে, তবে কি হচ্ছে ওর সাথে এই
সব?? আস্তে আস্তে ও ভয়ে জর্জরিত হতে শুরু করে। আর রঞ্জিততে ফ্ল্যাট ছেড়ে দিতে
অনুরোধ করতে থাকে।
ভয়ংকর ঝগড়া অশান্তি শুরু হয় ওদের মধ্যে। কারণ খুব স্বাভাবিক ভাবেই রঞ্জিতের
কখন এমন কোনো কারণ চোখে পড়ে না ফ্ল্যাট ছেড়ে দেওয়ার জন্য।
ওর বাবার কাছে চলে যায়, কিন্তু রঞ্জিত ও জেদ ধরে বসে থাকে যে সে তার রক্ত জল
করে কেনা ফ্ল্যাট কিছুতেই ছেড়ে দেবে না অযৌক্তিক ভয়ের কারণে।এমন কি সে মানসিক
ব্যাধি গ্রস্তের আখ্যা দেয় আমার বান্ধবীটিকে।তো এমন অশান্তি, নবমিতার
গৃহত্যাগ, বাড়ির লোক জনের নানান কথায় নাজেহাল হয়ে পরে রঞ্জিত।অফিসের কাজেও
ঠিক করে মন বসাতে পারছিল না ও, সুতরাং দিন তিনেকের জন্য দরখাস্ত দেয় ছুটির
আবেদন জানিয়ে এবং তা গ্রহণ ও করে অফিস কতৃপক্ষ।
Bhuter Golpo In Bengali Font
ফ্ল্যাটে সময় কাটাবে আর নবমিতাকে ভুল প্রমাণ করবে আর দ্বিতীয়ত মনের উপরে যে
চাপটা পড়েছে সেই চাপ মুক্তিও হবে ওর। সেই মতো অনলাইনে খাবার অর্ডার দিয়ে
দুবেলা খেয়ে টিভি দেখে অনেকক্ষণ ঘুমিয়ে বেশ খানিকটা হালকা ফিল করলো
রঞ্জিত,সারা দিন কিংবা রাত্রি এমন কিছুই ঘটল না যাতে নবমিতার কথাকে বিশ্বাস
যোগ্য বলে মনে হয়। সুতরাং নিজের আত্মবিশ্বাস আরও কিছুটা দৃঢ় হলো ওর।
হঠাৎ বাসন পত্র পরে যাওয়ার শব্দ শুনে ও হন্ততন্ত ভাবে টিভির রিমোট টা সোফায়
ছুঁড়ে দিয়ে ছুটলো কিচেনে,গিয়ে দেখলো রান্না ঘরের সেলফে রাখা বাসন গুলো সব
মেঝেতে পরে রয়েছে,আর ও নিজে বন্ধ করে ছিল সেই ঘরের জানলাটা সেটা হাট করে খোলা।
তবে কি বেড়াল ঢুকে সব ফেললো? কিন্তু রাস্তার বেড়াল এতো উঁচুতে কখনই
উঠতে পারবে না, তবে দমকা হাওয়ায় পরেছে হয়ত।
শেষ, ও আর বেশী না ভেবে আবার তাড়াতাড়ি সোফায় এসে বসল। কিন্তু কিছুক্ষণ পরে ও
কেমন একটা অজানা অস্বস্তি অনুভব করতে লাগল, মানে প্রথমে বুঝে উঠতে পারলো না
কেনো এমন লাগছে ওর কিন্তু এই ভাবে আরও কিছুটা সময় পেরিয়ে যেতে ওর মনে হলো
হয়ত কেউ ওর দিকে তাকিয়ে আছে। আর পরক্ষণেই মাথা গরম হয়ে গেলো ওর। সব নবমিতার
জন্য সারাক্ষণ এই ধরনে কেউ নজর রাখার কথা বলে বলে মনের অবচেতনে নিশ্চই কোথায়
ভয় ঢুকিয়ে দিয়েছে ঐ মেয়ে আর তাই জন্যই এমন মনে হচ্ছে ওর ও একা
ফ্ল্যাটে।
রঞ্জিত টিভি বন্ধ করে।
চলছে, আশ্চর্য হয়ে গেলো ও,এ কিভাবে সম্ভব নিজের হাতে টিভি বন্ধ করেছে ও,
স্পষ্ট মনে আছে, আর তার থেকেও বড় কথা এই তো এতক্ষণ শুয়ে ছিল কই তখন তো কোনো
শব্দ ও শোনেনি, তবে এখন হঠাৎ টিভি আপনা আপনি অন হলো কি করে।
হিমস্রোত বয়ে গেলো, একি…..!!
ওকে… এই সব কি হচ্ছে ওর সাথে, এক মুহূর্তের জন্য বিমূঢ় হয়ে গেলো ও আর সঙ্গে
সঙ্গে শুনতে পেলো একটা বাচ্চার খিলখিলে হাসি ছুটোছুটির শব্দ আর সেই সঙ্গে
মিষ্টি মেয়েলি গলায় ধমকের সুর, অতঙ্কে ভয়ে দিশেহারা রঞ্জিতের কানে ঢুকলো না
কোনো কথা, ও গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে উঠল, যদিও জানে এই চিৎকার কারোর কানেই
ঢুকবে না, পাশের ফ্ল্যাটের বাসিন্দারা নেই, আর এই ফ্লোরের অপর প্রান্তের যে
ফ্ল্যাটটা আছে যেখানে কয়েকটা ছেলে থাকে তাদের পক্ষে শুনতে পাওয়া সে এক অসম্ভব
ব্যাপার।বার বার নবমিতার মুখটা ভেসে উঠতে লাগলো ওর চোখের সামনে।
Horror Bhuter Golpo
কি করবে ভেবে পাচ্ছে না ও সময় যেন থমকে গেছে…. কতক্ষণ এই ভাবে দরজার
সামনে মেঝেতে বসে আছে ও জানে না, হঠাৎ ফ্ল্যাটের কলিং বেলের শব্দ শুনতে পেলো ও,
মরিয়া হয়ে দরজা ধাক্কাতে লাগল রঞ্জিত, চিৎকার করে করে গলা ভেঙে গিয়ে আর কোনো
শব্দ বেরুচ্ছে না কন্ঠ থেকে। ঐ দিকে বেল বেজে বেজে এক সময় থেমে গেলো…বাঁচার
শেষ আশাটুকুও নিভে গেছে ওর ততক্ষণে, নিজের উপরে রাগ হতে লাগলো রঞ্জিতের আজই ও
এত বড় ভুলটা করলো??
ডাকতে পারতো, এই ভাবে বন্দী আর কয়েকটি ঘন্টা থাকলে ও দমবন্ধ হয়ে মরে যাবে
নিশ্চিত। হায় কেনো ও নবমিতাকে চলে যেতে দিল? কেনো একটি বার বিশ্বাস করলো না ষে
সত্যি বিভীষিকা বাস করে ওদের ফ্ল্যাটে।
ধীরে ডাকটা এগিয়ে আসছে ওরই বেডরুমের দিকে, রঞ্জিত জানে ওর বাঁচার দিন শেষ
বাইরের নারী কষ্ঠ এগিয়ে আসছে ওর দিকে হত্যার করার উদ্দেশ্য নিয়ে। নিশ্চল
পাথরের মতো হয়ে গেলো রঞ্জিত, কান্নাও শুকিয়ে গেছে। হঠাৎ দরজা খুলে
গেলো….
অচেনা নারী নয়, এ নারী তার বড্ড আপন, তার স্ত্রী নবমিতা এসে দাঁড়িয়েছে ওর
সামনে, বুকে বল পেয়ে যেনো আরও ভেঙে পড়লো রঞ্জিত, কোনো রকমে উঠে দাঁড়িয়ে
বুকে করে আগলে ধরলো নবমিতা কে, কান্নায় ভেঙে পড়লো নবমিতা ও রঞ্জিত উভয়েই।
আগের দিন রাত্রে খারাপ স্বপ্ন দেখে নবমিতা রঞ্জিতকে নিয়ে, তাই অভিমান, অপমান,
রাগ ক্ষোভ ভুলে আবার রঞ্জিতের কাছে ছুটে এসেছে ও।
ভয়ঙ্কর ভূতের গল্প
নিয়ে বেরিয়ে আসে ফ্ল্যাট ছেড়ে। ব্রোকারকে ডেকে পাঠায় রঞ্জিত, প্রথমে সে মুখ
খুলতে না চাইলেও ওর জেরায় আর পুলিশি ভয়ের দ্বারা শেষে কাবু করে রঞ্জিত আর
নবমিতা জানতে পারে,
ফ্ল্যাটের যিনি আসল মালিক ছিলেন তার আকস্মিক মৃত্যুতে তার স্ত্রী এতটাই ভেঙে
পড়ে যে, প্রথমে সে তার ৬বছরের মেয়েকে, খাবারের সঙ্গে ঘুমের ঔষধ মিশিয়ে হত্যা
করে আর শেষে নিজেও ঘুমের ঔষধ খেয়ে আত্মহত্যা করে। প্রায় ৩দিন পরে কোনো এক
আত্মীয় যখন খোঁজ নিতে আসে সেই মহিলার ও তার মেয়ে তখন তাদের মৃত দেহ উদ্ধার
হয়।
মধ্যেই ছেড়ে চলে যায় এই ফ্ল্যাট, তারপর আরও কয়েকটি বার চেষ্টা করা হয় ভাড়া
দেওয়ার কিন্তু প্রতিবারই এই একই ঘটনা, শেষে বিদেশে নতুন চাকরি নিয়ে স পরিবার
চলে যাওয়ার সময় ব্রোকারের দায়িত্বে দিয়ে যায় ফ্ল্যাটটা, সেই অনেক চেষ্টা
করে শেষে রঞ্জিত ও নবমিতাকে অনেক কম দামেই বিক্রি করে দেয় দায় মুক্ত হওয়ার
চেষ্টায়।
রঞ্জিতরা ফিরে যায় ওদের সেই পুরানো ভাড়া বাড়িতে, ভাগ্যক্রমে তখনও নতুন
ভাড়াটে এসে ছিল না। ব্রোকারের কাছ থেকে টাকা ফিরত নেওয়ার বহু চেষ্টার পরে
হাপের কিছুটা বেশী টাকা ফেরত পেয়েছে রঞ্জিত ১বছর ধরে চেষ্টা করে। বাকি টাকা
পাওয়ার আশা ক্ষীন। তবে নবমিতা আর রঞ্জিতের বিশ্বাসের ভীতটা আগের থেকে হয়েছে
অমেক মজবুত, আর ভালোবাসাতে ছিলই, আর কোনো দিন ফ্ল্যাট চাই ফ্ল্যাট চাই বলে
বায়না করবেনা ও সেটা প্রমিস করেছে রঞ্জিতের কাছে।।
Bhuter Golpo,
Bengali Horror Story,
Bangla Golpo