প্রথম প্রেমের গল্প – Prothom Premer Golpo – Love Story
প্রথম প্রেমের গল্প
জয়ন্তের মোবাইল ফোনটা বেজে উঠল নচিকেতার গানে। কেন জানি না নচিকেতার এই গানটির
প্রতি একটা আলাদা ভালোবাসা আছে জয়ন্তর।ঘুম জড়ানো চোখে বিরক্ত হয়ে মোবাইলটা
ধরে জয়ন্ত। বিছানার পাশে জয়ন্তর স্ত্রী নন্দিতা শুয়ে ঘুমাচ্ছে নগ্ন
অবস্থায়। মুখে তৃপ্তির আভা ফুটে উঠেছে। কি সুন্দরী লাগছে আজ
নন্দিতাকে,নন্দিতার মুখের ওপর আসা চুলগুলো সরিয়ে দেয় জয়ন্ত। পাগলি বউ একটা!
কাল রাত সাড়ে চারটের সময় যখন জয়ন্ত আর নন্দিতা মিলনের পর ক্লান্ত,তখন পাগলিটা
বলে কিনা একটা গল্প বলো না। অনেক কষ্টে বুঝিয়ে সুজিয়ে ঘুম পাড়াতে হয়েছে
নন্দিতাকে।চাদরটা টেনে নন্দিতার নগ্ন শরীরটা ঢাকে জয়ন্ত আর মনে মনে হাসে।
পাগলিটা ওকে এত ভালোবাসে তা জানতেই এতদিন লেগে গেল ওর!
কলেজের প্রফেসর। ওর স্ত্রী নন্দিতা একটা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির এইচ.
আর।এরেন্জ ম্যারেজ, প্রায় তিন বছর হল বিয়ে হয়েছে। কিন্তু ওর আর ওর
স্ত্রীর সম্পর্কটা কেমন যেন বাধোবাধো। নন্দিতা কেমন যেন এড়িয়ে চলে জয়ন্তকে।
জয়ন্তর বন্ধুরাও বলেছে বউকে নিয়ে হানিমুনে ঘুরে আয়, জয়ন্তই রাজি হয়নি। একে
কলেজ থেকে ছুটি নিলে পরে হাজার ঝামেলা, এদিকে নন্দিতার চাকরির ক্ষতি হতে
পারে,তার ওপর দুজনের মধ্যে এখনো ভালোবাসাই হয়নি এতদিন, ছোঁয়া তো দুরের কথা।
ফুলসজ্জার রাতেই জয়ন্ত ওর বউ নন্দিতাকে বলেছিল “আমরা তখনই কাছাকাছি আসব, যখন
পরস্পরকে ভালোবাসবো। চিন্তা করো না, তার আগে তোমায় স্পর্শ করব না। ”
এতদিন। এদিকে জয়ন্তর বন্ধুবান্ধব, বাবা মা সবাই আশা করে আছে কবে সুখবর শোনাবে
জয়ন্ত। একদিন তো জয়ন্তের মা রমলাদেবী জয়ন্তের কাছে কেঁদে বললেন, “বাবু,
মরবার আগে কি নাতি নাতনীর মুখও দেখতে দিবি না! বউমার সমস্যা থাকলে বল,
আমরা আবার বিয়ে দিই তোর! ”
জীবনের প্রথম প্রেমের গল্প
কর! নন্দিতার যদি কোনো সমস্যা দেখা যায়, ওর চিকিৎসার দায়িত্ব আমার! নন্দিতা
আমার স্ত্রী, তাকে অগ্নি সাক্ষী করে বিয়ে করেছি আমি! তাকে মাঝ রাস্তায় এভাবে
একলা ফেলে পালাতে বলছ আমায় কাপুরুষের মত! নন্দিতার কোন দোষ নেই এতে, আমিই এই
সম্পর্ক গড়ার জন্য সময় নিচ্ছি শুধু। যদিও কোন সমস্যা দেখা যায় আমিই ওর
চিকিৎসা করাব, যদি তাতেও সন্তান না আসে দত্তক নেব! কিন্তু নন্দিতাকে ফেলে দিয়ে
কাউকে গ্রহণ করতে পারব না।”
চেয়েছিলাম তোর কাছে। আজ আমার গর্ব বোধ হচ্ছে এটা ভেবে যে আমি তোর বাবা!
আশির্বাদ করি তোরা সুখী হ।”
জয়ন্তের দিদি তিন্নি। তিন্নি এখন প্রেগন্যান্ট, ওর আমেরিকান ডাক্তার বর ওর
দেখাশোনা করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে।অখিলবাবু ও রমলাদেবী দুজনেই খুব খুশী।
বাড়িময় খুশীর আবহাওয়া। নির্দিষ্ট দিনে ফ্লাইট ধরে আমেরিকায় পাড়ি দিলেন
অখিলবাবু ও রমলাদেবী। বাড়িটা এখন ফাঁকা।তবুও জয়ন্তর কলেজ ও নন্দিতার অফিস
চলতেই থাকল। মাঝে মধ্যে টুকিটাকি কথা ছাড়া কিচ্ছু হয় না। এমন সময় দেশে কোরনা
দেখা দিল। কাতারে কাতারে লোক মরছে।নন্দিতা ও জয়ন্ত অখিলবাবু ও রমলাদেবীকে
বললেন এখন ক মাস না ফিরতে। নন্দিতার অফিস ও বন্ধ হয়ে গেল। জয়ন্তর কলেজ ও ছুটি
দিল ওকে।সরকার লকডাউন ঘোষণা করলেন। এখন ওদের হাতে অঢেল সময়। কাজ কর্ম ও বিশেষ
নেই। দুজনেই গৃহবন্দী। বেশ ভালো রাঁধে নন্দিতা। এতদিন নন্দিতাকে বিশেষ কিছুই
করতে হয় নি। রাধুঁনী ছিল, এছাড়া রমলাদেবী তদারকি করতেন। এখন রাধুঁনীও ছুটি
নিয়েছে।
আমার প্রথম প্রেমের গল্প
হাসাতেও পারে। নন্দিতা জয়ন্তকে বইমুখো গম্ভীর লোক ভেবেছিল। জয়ন্ত তার একদম
উল্টো। জয়ন্তের মত প্রাণ খোলা হাসি হাসতে নন্দিতা কাউকে দেখেনি। নন্দিতা সময়
কাটানোর জন্য যখন হারমোনিয়ামে গান গায়, জয়ন্ত ও গলা মেলায়। এত ভালো গলা
জয়ন্তর, নন্দিতা জানতোই না। ধীরে ধীরে দুজনেই দুজনের প্রেমে পড়ে যায়। কাল
রাতে ফ্রেস হয়ে ঘরে ঢুকে জয়ন্ত অবাক। এত সুন্দর করে ঘর সাজালো কে! গোটা ঘর
সুগন্ধি ক্যান্ডেলে আর ফুলে সাজানো।কাঁধে হাতের স্পর্শ পেতেই ঘুরতেই জয়ন্ত আরো
অবাক হয়ে গেল। নন্দিতা একটা লাল শাড়ি পরেছে,হাতে লাল কাঁচের চুড়ি,খোঁপায়
লাল গোলাপ, কপালে লাল টিপ।
ভালোবাসি জয়ন্ত। বল, তুমি কি আমায় ভালোবাসো? ” মিষ্টি হেসে নন্দিতা
বলে।
ইতিহাস।
সারপ্রাইজ!অবশেষে পিসি হলাম তাহলে! ”
সমাপ্ত