Valentine’s Day Special Bengali Story – প্রেমের গল্প
(Valentine week special)
এক অন্য ডিভোর্স
– মানস দে
জাস্ট গেট আউট অফ হিয়ার। আই ক্যান্ট টলেরেট ইউ এনিমোর বলে দড়াম করে যুথী দরজা বন্ধ করে নিজের ঘরে ঢুকে যায়। দরজার বাইরে থেকে অনিন্দ্যও চেঁচিয়ে বলে – ইটস এনাফ নাও। এক সপ্তাহের মধ্যে বাড়ি খুঁজে ও চলে যাবে। ওদের বিয়ে প্রায় পাঁচ বছর হয়ে গেল অথচ কারো যেন কারো জন্যে কোন সময় নেই। প্রায় নিয়ম করে এখন ওদের মধ্যে ঝগড়া হয় কত ছোট খাটো বিষয় নিয়ে। বেশ কয়েকমাস হলো একই বাড়িতে থাকলেও ওরা আর রুম শেয়ার করে না। এমনি করে দাম্পত্য টেনে নিয়ে যাবার কোনো মানে নেই। ওরা বোধহয় কেউ কাউকে কোনোদিনই ভালোবেসে উঠতে পারেনি। আসলে ভালোবাসা জিনিসটা বড়ো অদ্ভুত। কারণের চেয়ে অকারণ, প্রয়োজনের চেয়ে অপ্রয়োজনটাই বেশি। কিন্তু ওদের সম্পর্কে কোনো কারণ-অকারণ, প্রয়োজন-অপ্রয়োজন কিছুই নেই। আর কিছুই নেই যখন স্বাধীনভাবে যে যার মতো থাকলেই পারে। এই সব ভাবতে ভাবতে রাত প্রায় তিনটে বেজে যায়। জল খেয়ে বাথরুম থেকে ফিরে আসার সময় যুথীর রুম থেকে একটা গোঙানির আওয়াজ পায় অনিন্দ্য। যাবে কি যাবে না ভাবতে ভাবতে ওর দরজায় নক করে ওকে দরজা খুলতে বলে। প্রথমে যুথী উত্তর দেয় না। অনিন্দ্যকে ক্রমাগত নক করতে দেখে ভেতর থেকে বলে যে — তোমার আমার জন্যে চিন্তা না করলেও চলবে। তুমি গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ো৷ অগত্যা নিজের রুমে ফিরে আসে অনিন্দ্য কিন্তু ঘুমোতে পারেনা। কিছুক্ষন পর বাথরুম থেকে যুথীর বমি করার আওয়াজ পায়। অনিন্দ্য ছুটে আসে, দেখে বমির সঙ্গে ছিটেফোঁটা রক্ত। অনিন্দ্য বেশ ঘাবড়ে যায় আর পরমুহূর্তেই এম্বুলেন্স ডেকে ইমার্জেন্সিতে নিয়ে যায়।
অনিন্দ্য বাইরে বসে থাকে। এই প্রথমবার তাকে যুথীর জন্যে উদ্বিগ্ন দেখায়। মাথার চুলে হাত চালাতে চালাতে ঘন ঘন ঘড়ি দেখতে থাকে ডাক্তার কখন আসবে। তাদের মধ্যে ঝগড়া অশান্তি অনেক হয় ঠিকই তবু যুথীর কিছু হয়ে যাক সে কখনোই চায়নি। হটাৎ করে কেন আজ এই সব কুচিন্তা মাথায় আসছে কে জানে। যাই হোক কিছু পরে ডাক্তার বেরিয়ে এসে বলে, আরো দু-তিন থাকতে হবে কিছু টেস্ট করতে হবে। কিছু একটা সন্দেহ করেছে ডাক্তার তবে এখনই কনফার্মড কিছু বলতে চাইছে না।
প্রেমের গল্প কাহিনী
দিনতিনেক বাদে রিপোর্ট আসে। রিপোর্ট দেখে মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে অনিন্দ্যের। হেপাটোসেলুলার কার্সিনোমা বা লিভার ক্যান্সার। যুথীর শরীরে যে এতো বড়ো একটা রোগ বাসা বেঁধেছে সে বুঝতেই পারেনি। রিপোর্ট দেখে যুথী কাল সারাদিন কেঁদেছে, কিছুই খায়নি। এই পরিস্থিতিতে ওকে ফেলে চলে যাবার কথা ভাবতেও পারেনা অনিন্দ্য। এতটা পাষণ্ড ও নয় কিন্তু যুথী কি ওকে মেনে নেবে? ও তো অনিন্দ্যকে বলে দিয়েছে যে আর এই সম্পর্কে ও ইন্টারেস্টেড নয়। অনেক রকম সাত-পাঁচ ভেবে অনিন্দ্য যুথীকে বলে যে সে ওর সঙ্গে আপাতত থাকতে চায়। যুথী প্রথমে বলে তার কোনো দরকার নেই। অনিন্দ্য যেন আলাদাই থাকে। জীবনের শেষ কটা দিন ও আর অনিন্দ্যকে জ্বালাতে চায় না। বলে চোখটা একবার মুছে নেয়। অনিন্দ্য বেশ বুঝতে পারে যুথী অভিমান থেকেই যেন কথাগুলো বলছে। অনিন্দ্য একটু যুথীর পাশে বসতে চায় আজ। ওর মনেই পড়ছে না শেষ কবে ওরা পাশাপাশি বসেছে। অনিন্দ্যর ইচ্ছে করছিলো নিজের বুকে যুথীর মাথাটা টেনে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে। কিন্তু বোধহয় সেই অধিকারটা এখন আর নেই। ওদের মধ্যে দুরত্বটা যেন আজ একটু বেশিই। অনেকক্ষন এমনিই পাশাপাশি বসেছিল ওরা। মাঝে মাঝে দু-একটা কথা ছাড়া আর কিছুই হচ্ছিল না। এমনি ভাবে কিছুক্ষণ বসে থাকার পর যুথী উঠতে যায় জল খাবার জন্যে। অনিন্দ্য তার দুকাঁধ ধরে বসিয়ে দিয়ে নিজে এক গেলাস জল নিয়ে আসে যুথীর জন্যে। যুথীকে রাতে ঘরের দরজা খোলা রেখে শুতে বলে অনিন্দ্য নিজের ঘরের দিকে চলে যায়।
ভালোবাসার গল্প
আজ বেশ সকাল সকালেই উঠেছে অনিন্দ্য। রাতে ভালো করে ঘুম হয়নি। কি সব উল্টোপাল্টা স্বপ্ন দেখেছে। অনেকদিন পর আজ চা আর টোস্ট বানায় দুজনের জন্যে। যুথীকে ব্রেকফাস্ট টেবিলে ডেকে অপেক্ষা করে। শেষ কবে একসঙ্গে ব্রেকফাস্ট করেছে মনে করতে পারে না অনিন্দ্য। যুথী এসে অনিন্দ্যকে জিগ্গ্যেস করে — এখনো তুমি অফিস বেরোয়নি? অনিন্দ্য বলে — আজঅফিস ছুটি নিয়েছি। এর পর আর বিশেষ কথা হয়নি ব্রেকফাস্ট টেবিলে দুজনের মধ্যে। যুথীও অফিসে মেডিকেল লিভের আবেদন করে।
সকল সাড়ে দশটা নাগাদ অনিন্দ্য যুথীর রুমে আসে। বলে রাজারহাটে এক নামকরা ওনকোলজিস্টএর এপয়েন্টমেন্ট নিয়েছে আগামী সোমবার। যুথিকে নিয়ে যাবে। যুথী একটু অবাক হয়। হটাৎ করে অনিন্দ্যর মধ্যে একটা চেঞ্জ দেখা দিচ্ছে। কিন্তু মুখের মধ্যে যথেষ্ট কাঠিন্য এনে বলে এপয়েন্টমেন্ট ক্যানসেল করে দিতে। “আমরা তো ডিসিশন নিয়েই নিয়েছি আলাদা থাকার। এসবের কোনো প্রয়োজন নেই এখন”। অনিন্দ্য এই বার যেন একটু জেদ করেই বলে যে —আমি এপয়েন্টমেন্ট ক্যানসেল করব না তোমাকে আমার সঙ্গে যেতেই হবে। যুথীর এই মুহূর্তে আর তর্ক বাড়াতে ইচ্ছে করে না। সে কথা না বাড়িয়ে নিজের রুমে ফিরে আসে।
অনিন্দ্য এর মধ্যে বেশ ঘনঘনই যুথীর রুমে আসে। কখনো জল বা কখনো ওষুধ এগিয়ে দেয়। যুথীরও এখন অতটা আর খারাপ লাগে না অনিন্দ্যকে। এখন বেশ খানিকটা গল্প ও হয় ওদের মধ্যে। এক সময় যুথীর হাতটা টেনে নিজের দুই হাতের মধ্যে নেয়। যুথীকে অভয় দেবার চেষ্টা করে, বলে — এই লড়াইয়ে আমি তোমার পাশে থাকতে চাই, যুথী। আমি তোমাকে ঠিক ভালো করে তুলব, শুধু তুমি আমার ওপর একটু ভরসা কর৷ যুথি নিজেকে ধরে রাখতে পারে না, গলাটা কেঁপে ওঠে। বলে এই রোগ থেকে কেউ কোনোদিন বেঁচে ফেরেনি, তাই আমিও কোনো আশা করি না এই জীবন নিয়ে। অনিন্দ্যর খুব ইচ্ছে করছিল, যুথীর মাথাটা নিজের বুকে জড়িয়ে ধরতে, কিন্তু পারেনা। এক ছাদের তলায় থাকলেও ওদের মধ্যে আজ একটা মস্ত দেওয়াল গড়ে উঠেছে। তাকে ভেঙে ফেলাই একটা মস্ত চ্যালেঞ্জ এখন।
যুথীরও যেন সেই আগের জেদ বা তেজটা নেই। বলতে হবে একপ্রকার অনিন্দ্যর জেদের কাছে আত্মসমর্পণ করেই ও সোমবার রাজারহাটে ডাক্তারের কাছে যায় অনিন্দ্যর সঙ্গে। ডাক্তারবাবু ওদের বলেন — সামনের লড়াই বেশ কঠিন, আপনাদের দুজনকেই এই লড়াইটা একসঙ্গে লড়তে হবে। যুথিকে বলেন মনের জোর যেন না হারায়। অ্যাডভান্স স্টেজ আর দেরি করা যাবে না। কেমো স্টার্ট হবে নেক্সট উইক থেকেই।
সারা রাস্তা একটা কথা বলেনি কেউ। বাইপাস দিয়ে গাড়িটা ছুটে চলে। অনিন্দ্য বেশ বুঝতে পারে যুথীর মনে এখন কি চলছে। আলতো করে ওর হাতে চাপ দেয়। যুথী হাত ছাড়িয়ে নেয় না, কিন্তু সেই একভাবে বাইরে তাকিয়ে থাকে।
তিনটে কেমো হয়ে গেছে। যুথীর মাথায় এখন কোনো চুল নেই আর। অনেক শীর্ণকায় এখন। চোখ ভেতরে ঢুকে গেছে, চোখের তলায় কালিও অনেক। কে বলবে এই যুথীই সেই যুথী। যার লালিত্য, ছন্দ, সৌন্দর্য্যে সে একদিন মন্ত্রমুগ্ধ হয়েছিল। সব কিছু ঝরে গিয়ে এই শরীর যেন এখন আগের যুথীর ছায়া মাত্র। বাইরের সব আবরণ আর আভরণ মুক্ত হয়ে তবুও অনেক পবিত্র, অনেক সুন্দর, অনেক স্বর্গীয়। আর সেই জন্যেই বোধহয় একজন নার্স বাড়িতে থাকলেও, সকালের আর রাতের ওষুধ অনিন্দ্য নিজে হাতে যুথিকে খাওয়ায়। ডায়েটেও এখন অনেক রেস্ট্রিকশন, তাই রাতের রান্নাটাও সে নিজের হাতেই করে। অফিসে থাকলেও বার বার নার্স কে ফোন করে যুথীর খোঁজ নেয়। যুথী যদি জেগে থেকে তাহলে ওর সঙ্গে কথাও বলে। যুথীও যেন এখন অনিন্দ্যকে খুব মিস করে। বিকেল থেকেই বার বার ঘড়ি দেখতে থাকে, কখন ও আসবে। যাকে এতদিন সহ্য করতে পারতো না, তার জন্যেই হটাৎ মন কেমন কেমন করে কেন? সেই শরীর খারাপের পর থেকেই ওরা দুজনে এক রুমেই থাকে। অফিস থেকে ফিরে, জামা-কাপড় চেঞ্জ করে যুথীর মাথার কাছে বসে ওর চুলে হাত না বুলিয়ে অন্য কিছু করে না অনিন্দ্য। রাতে ঘুমোতে যাবার আগে নিয়ম করে কপালে এক গভীর চুম্বন এঁকে দিতে ভুলে না। এই রকম অনুভূতি জীবনে তো আগে কখনো হয়নি। কলেজে পড়াকালীন দু-একজন মেয়ের ওপর যে ক্রাশ ছিল না তা নয়, কিন্তু এই ভালোবাসা নিখাদ, স্বর্গীয় যেখানে দুটো শরীরের বদলে দুটি আত্মা একসঙ্গে মিশে যায় । একেই বোধহয় বলে প্লেটোনিক লাভ।
যুথীও নিজে অনেক বদলে গেছে। কোথায় গেল সেই অহং বোধ, ঔদ্ধত্য – আসলে মানুষ যখন নির্মম সত্যিটা জানতে পারে তখনি বোধহয় সব মানবিক সত্ত্বাগুলো আরো বেশি করে ভেতর থেকে বেরিয়ে আসে। কথায় কথায় কত খুঁতই না ধরেছে অনিন্দ্যর। কই এখন ও তো ভুল করে কত কিছু, এই তো কাল ই ওকে সকালের ওষধুটা ভুল করে রাতে দিয়ে ফেলেছে। যুথী শুধু মুচকি হেসে বলেছে আর কত দিকে তুমি খেয়াল রাখবে। এতো কিছু তুমি করছো, এইটুকু ভুল হয়েছে তো কি হয়েছে? অনিন্দ্য আবার এই নিয়ে নিজের ওপরই খুব রেগে যায়। বললো এই সময় এমনি ভুল করা ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ। যুথী কেন তাকে বকেনি? ঘুরে অনিন্দ্যর ভুলের জন্যে, যুথিকেই আবার ওকে ঠান্ডা করতে হয়। অনিন্দ্য ভাবে যে সে ডিভোর্স চেয়েছিল, স্বাধীনভাবে বাঁচতে চেয়েছিলো। কিন্তু সেই স্বাধীন ভাবে বাঁচার মানেটা কি? সে এখন বাঁচতে চায় যুথীর জন্যে। আসলে জীবনে একটা উদ্দেশ্যই বোধহয় জীবনকে মান্যতা দেয়। স্বাধীন হয়েও উদ্দেশ্যহীন ভাবে জীবনে বেঁচে থাকার কোনো মানে নেই। আজ মর্মে মর্মে উপলব্ধি করে অনিন্দ্য সেই কথাটা। যুথীকে বাঁচিয়ে তুলতেই হবে তাকে, যে করে হোক।
ষষ্ঠ কেমো শেষ হবার পর ডাক্তার যুথীকে পরীক্ষা করে বলেন সেই ভাবে অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি। আর বড় জোর এক বছর। বাড়ি ফিরে অনিন্দ্যকে জড়িয়ে অনেক কেঁদেছিল যুথী। বলেছিল তুমি তো আমার থেকে মুক্তি চেয়েছিলে, আর কিছুদিন পরেই তুমি আমার থেকে মুক্তি পাবে। কোনো রকমে চোখের জল চেপে ওকে আস্বস্ত করার একটা বৃথা চেষ্টা করেছিল অনিন্দ্য। বলেছিলো সে মুক্তি পেতে চায় না আর। এই বন্ধনই ওর কাছে মুক্তি। যুথী যেন তাকে কোনোদিন ছেড়ে না যায়। ওর মধ্যেও একটা চাপা টেনশন কাজ করছিল। সে কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলো না যুথীকে ছেড়ে সে বাঁচবে। তারপর রাতজাগা, অফিসের চাপ – সব মিলিয়ে অনিন্দ্যর শরীরটাও ভেঙে পড়ছিল।
ওদের এনিভার্সারিতে যুথীকে একটা বার্বি ডল উপহার দেয় অনিন্দ্য। সেই প্রথমবার। সেটা পেয়ে যুথী এতটাই খুশি হয়েছিল যে যে কিছু বলতে পারেনি শুধু দু চোখ বেয়ে জলের ধারা বেয়ে গেছিলো। তারপর থেকে ওই বার্বিটা সবসময় নিজের কাছে রাখতো।
কিছুদিন পর অনিন্দ্যর জন্মদিন আসছে। কি-ই বা সে অনিন্দ্যকে দেবে। তাছাড়া এখন তো প্রায় শয্যাশায়ী ও। শেষের দিকে অনিন্দ্য ২ মাস ছুটি নিয়েছিল যুথীর কাছে থাকবে বলে। জন্মদিনে একটা হাতে লেখা কার্ড বানায় যুথী তাতে লেখা ছিল – আমার সমস্ত সত্ত্বায় আজ শুধু তুমি, বিদায় বেলায় নতুন করে নিজেকে আবিষ্কার করলাম। তুমি খুব ভালো থেকো। যুগে যুগে যেন তোমাকেই সাথী হিসাবে পাই। রাত বারোটা তো বেজে গেছে অনিন্দ্য এখনো ঘুমায়নি, কার্ডটা অনিন্দ্যকে দেয় যুথী। কার্ডটা হাতে নিয়ে নিস্পলক তাকিয়ে থাকে অনিন্দ্য। গভীরভাবে সে অনুভব করে আজ তারও সমস্ত কিছু জুড়ে রয়েছে যুথী আর যুথী, তাকে ছাড়া সে বাঁচবে কেমন করে? হটাৎ করে বুকের বামদিকে একটা ব্যথা অনুভব করে অনিন্দ্য, খানিকপর অসহ্য যন্ত্রনা।
হাসপাতালে নিয়ে যাবার আগেই সব শেষ। এরকম তো কথা ছিল না অনিন্দ্য? তার-ই তো আগে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তা না হয়ে হটাৎ করে কি সব হয়ে গেল। এইভাবে অনিন্দ্য ওকে ডিভোর্স দিয়ে চলে গেল? যুথী পরিষ্কার অনুভব করতে পারে যে আসন্ন বিচ্ছেদটা অনিন্দ্য কিছুতেই মেনে নিতে পারছিল না। প্রতিটা মুহূর্ত শুধু ও যুথীর কথা ভাবতো। তলায় তলায় সেই টেনশন থেকেই অনিন্দ্যর ম্যাসিভ কার্ডিয়াক এরেস্ট। অনিন্দ্য যেন নিজের জীবন দিয়ে যুথীকে এক লহমায় হারিয়ে দিয়ে চলে গেল। তবে জীবন নিয়ে আর কোনো দুঃখ নেই যুথীর। এই স্বর্গীয় ভালোবাসার পর জীবন থেকে আর কি বেশি আশা করতে পারে? মানুষ তো বাঁচে শুধু এই জন্যেই – শুধু একটু ভালোবাসার জন্যে। যা চেয়েছিল, পেয়েছে তার থেকে অনেকগুন। কথায় নাকি আছে জন্মদিন আর মৃত্যুদিন যাদের একদিনে তাদের নাকি আর পুনর্জন্ম হয়না। চোখ ঝাপসা হয়ে আসে যুথীর। বার্বিটাকে আঁকড়ে ধরে হাউ হাউ করে কাঁদতে থাকে। আর কয়েকটা দিন অপেক্ষা করতে পারলো না অনিন্দ্য? ২৭শে জুন, আর ঠিক ২২ দিন পর ওর ও জন্মদিন আসছে। ওই দিন যদি ও অনিন্দ্যর কাছে যেতে পারে তাহলে পরপারে তারা দুজনে চিরকাল পাশাপাশি থাকতে পারবে। হটাৎ করে ক্যালেন্ডারে দিকে চোখ যায় – ২৭শে জুনের পর ক্যালেন্ডারের আর কোনো তারিখ দেখতে পায় না যুথী।
Tags – Bangla Golpo, Premer Golpo, Bengali Story