Mojar Mojar Premer Golpo – লঙ্কাকান্ড – Bengali Funny Love Story
Mojar Mojar Premer Golpo
লঙ্কাকান্ড
মৌমিতা চক্রবর্তী
—- কই গো নতুন বৌমা, নিচে নেমে এসো, লাঞ্চ করে নাও।
লাজবন্তী সেলফোনের স্ক্রীনে দেখল দেড়টা বাজে। বাড়ির সকলের সাথে আলাপচরিতা আর একে তাকে ঢকঢক করে প্রণাম করতে গিয়ে বুঝতেই পারেনি এতখানি বেলা হয়ে গেছে। বিয়ের দু’টো মাস যেতেনা যেতে দুই বাড়ি মিলিয়ে প্রায় জনা দশেক বাড়িতে পাত পেরে খেয়েছে ওরা, এমনকি পেটের অসুখ সত্বেও। একেই বলে আতিথেয়তার জ্বালা। আজ ওরা এসেছে অনিকেতের মাসির বাড়ি। মানে লাজবন্তীর মাসিশাশুড়ি।
সদ্য বিবাহিত দম্পতি পাশাপাশি চেয়ারে খেতে বসেছে। লাজবন্তী দেখলো পাতে অনেক কিছুই পড়েছে….. লাল শাক, মোটা করে কাটা শাসালো আলুভাজা, এঁচোড়ের তরকারি, সবজি-কাজু দিয়ে ডাল, গলদা চিংড়ির তরকারি, কষা কষা করে মাংস… আরো অনেক কিছু। লাজবন্তী ভাবল মনে মনে গোদা বাংলায় ভাবতে তো ক্ষতি নেই, কিন্তু মুখে বলার সময় ওকে বেশ সতর্ক থাকতে হবে। আসলে অনিকেতের ফ্যামিলিটা হালফ্যাশন এর। ওদের সকালে উঠে নিত্যদিনের দাঁত মাজা থেকে রাতে ঘুমোতে যাওয়ায় কেমন একটা শৈল্পিক ব্যাপার আছে, যেমনটা বাংলা সিরিয়ালে হয়… অমনই মনে হয় এক্কেবারে প্রাণখোলা লাজবন্তীর। তাই খাবারের নামগুলোও সাজানো দামী আসবাবের মতই পোশাকী নামে ডাকতে হয়….. এই যেমন ফ্রেঞ্চফ্রাই, এঁচড়-কালিয়া, ভেজ ডাল, চিংড়ির মালাইকারী, মাটন কষা…….. ।
লাজবন্তী একগ্রাস মুখে তুলতেই দেখলো। পুরো পানসে। বড় বিপদে পড়লো। বাড়ি থেকে আজ পণ করে এসেছিল…. যাই হয়ে যাক এখানে অন্তত সে লঙ্কা চাইবে না। কিন্তু বিপদ এল দুই মুখ দিয়ে….. একে তো খিদেয় পেটে ছুঁচোরা কীর্তন, কাওয়ালি যে যা জানে সব জুড়েছে, অপরদিকে যদি নতুন বউ কিছু না খেয়ে উঠে যাই সেটাও তো বাজে দেখায়। এঁচড়টা মুখে দিতেই কাঁদো কাঁদো হয়ে গেল তার মুখ। নাহ, আর পারা যাচ্ছে না।
—- মনি মাসি, লঙ্কা দেবে গো!! আমি একটু ঝাল ছাড়া খেতে পারি না। সাহস করে বলে ফেলেই অনির দিকে তাকাল সে। দেখলো অনি যেমন মাথা নিচু করে দাঁতগুলো যত্নসহকারে মুখের ভেতর আড়াল করে অল্প করে চিবিয়ে খাচ্ছিলো, ঠিক তেমনভাবেই খেয়ে চলেছে। তার কথায় কোনও হেলদোল নেই, যেন শুনতেই পাইনি।
মণিমাসি ঝট করে একটা লঙ্কা এনে দিল কাঁচের প্লেটে সাজিয়ে। এতবড় প্লেটে একটা লঙ্কা দেখে লাজোর একটু হাসি পেল। যদিও খাওয়া শুরু একটা লঙ্কা দিয়ে হলেও শেষ করলো আরো দুটোয়। আর থাকতে না পেরে মনিমাসি বলেই ফেলল—– হ্যাঁ রে অনি, দিদি কী এখন তারকারীতে ঝাল দিচ্ছে নাকি বৌমার জন্য আলাদা করে লঙ্কার তরকারি বানাচ্ছে। বছর বাহান্নর মনিমাসি তার সাজানো দাঁতগুলো বের করে হো হো করে হেসে উঠলো, তার সাথে বাড়ির বাকি সদস্যরাও। পরক্ষণে অনিকেতকে বেশ গম্ভীর এবং অস্বস্তিতে দেখে পরিবেশ হালকা করতে বললেন…..আইম জাস্ট কিডিং লাজো….. ডোন্ট মাইন্ড বেটা।
লাজো কিছুই বলেনি, শুধু তার রসালো মুখখানা বৈশাখের রোদে শুকানো কাঁচা আমের মত হয়ে গেছিল।
Bengali Funny Love Story
বাড়ি ফিরে লাজবন্তী লক্ষ্য করলো অনি একটা কথাও তার সাথে বলছেনা। রাস্তায় চুপচাপ ছিল দেখে সে ভেবেছিল খেয়ে বোধহয় শরীরটা অস্বস্তি করছে। কিন্তু এখন বুঝলো পরিস্থিতি শক্ত। বরাবরের স্বভাব গম্ভীর অনির স্বল্পগল্প আর গুমোট ধরে থাকার পার্থক্যটা এই তিন বছর দু মাসে সে খুব বুঝে গেছে।
বাথরুম থেকে বেরিয়ে এসে তোয়ালেটা ডিভানে ছুড়ে দিয়ে অনিকেত বললো—- ওখানে কী লঙ্কা খেতেই হতো!! একটা দিন ঝাল না খেলে কী হতো শুনি, না হয় খালি পেটেই থাকতে একটা দিন, তবু তো সম্মানটুকু বাঁচতো। মা তো সবই মেনে নিয়েছে, তা বলে পুরো ফ্যামিলির কাছে ছোট হতে হবে নাকি!!
লাজো তো আকাশ থেকে পড়লো। এসব কী বলছে এই অচেনা মানুষটা। সে ফেল করে মুখ ডোবানো ছাত্রীর মত মাথা নিচু করেই দাঁড়িয়ে রইলো।
অনিকেত আবারও বলতে শুরু করলো—- তোমার আইডিয়া আছে ওরা কী কী বলছিল!! আমি স্পষ্ট শুনেছি মনি মাসিকে বলতে , দিদি যে কী ঘরের মেয়ে সংসারে নিয়ে এলো,ইসস এভাবে কোনো ভদ্র বাড়ির মেয়ে লঙ্কা খাই!! মিনিমাম ভদ্রতা বা লজ্জাটুকু নেই নতুন বৌ এর!!
—– তুমি জানো লাজো, লজ্জায় আমার মাথা হেঁট হয়ে গেছিল। আর সত্যি তো এমনভাবে তুমি লঙ্কা চেয়ে খাবে আমি স্বপ্নেও ভাবতে পারিনা। বাড়িতে কী লঙ্কা ছাড়া কিছুই খেতে পাওনি!! আসলে একেই বলে মানুষ করার দোষ, বুঝেছ…….টেবিলের ওপরে থাকা সিগারেটের প্যাকেটটা নিয়ে গটমট করে বারান্দার দিকে বেরিয়ে গেল অনিকেত।
লাজবন্তী পুরো চুপ, কাঠের পুতুলের মত। এ অনিকে তো সে চেনে না!! আচ্ছা, সামান্য লঙ্কা নিয়ে বড়বাড়ির মানুষেরা এত কেচ্ছা করে বুঝি!! দলা পাকানো অনুভবেরা ঠিকরে বেরতে চাইছে তার। রাতের বিছানা পেলো পাশাপাশি শোওয়া পরস্পরের অপরিচিত দুটো মানুষকে।
ঘুম খোয়ানো চোখের পাতায় আজ প্রচুর মসৃণ স্মৃতিরা ভিড় করছে লাজবন্তীর। আচ্ছা, পাশের এই অচেনা মানুষটা সত্যি কী অনি!! এই মানুষটাই কী আমার লঙ্কা খাওয়ার প্রেমে পড়েছিল!! …. সে তো প্রায় গত তিন বছর আগের ঘটনা,…… লাজবন্তী ঘটনা বলবে না অঘটন বলবে তা নিয়ে এই মূহুর্তে কিছুটা সংশয়ান্বিত হল। তখন লাজো ইউনিভার্সিটির ফাইনাল ইয়ার। সুতপা, ঐন্দ্রিলা আর মুনিয়ার সাথে ফুচকা খেতে গিয়েছিল। আই. টি. সেক্টরের সামনেই তেনুদার ঠেলাগাড়ির ফুচকা ওদের সপ্তাহে অন্তত পাঁচটা দিন লাগতই। এমনি এক টুপটাপ বৃষ্টির দিনে ওরা সকলে ফুচকা খাচ্ছে। দশ তলার আই. টি. সেক্টরে কর্মরত অনিকেত নিচে নেমেছিল সিগারেট কিনতে। সে দেখলো একটা গোলমুখো মিষ্টি মেয়ে কিভাবে চেয়ে চেয়ে ফুচকায় ঝাল খাচ্ছে। মুখভর্তি ফুচকার পাঁপড় নিয়ে খচমচ শব্দে দোকানিকে বলে যাচ্ছে……তেনুদা এত কিপটে কেন গো তুমি? আরো ঝাল দাওনা……। বাকি সাঙ্গপাঙ্গর তেমন কোনো প্রতিক্রিয়া নেই…. যেমন কোনো ঘটনার বারংবার পুনরাবৃত্তিতে থাকে না। অনিকেত লক্ষ্য করলো… সাধারণত পুরুষ মহিলা নির্বিশেষে এমন ম্যনারলেস মানুষ দেখলে তার খুব অস্বস্তি হয়, বিরক্তিতে খাবারে রুচি পর্যন্ত চলে যায়। কিন্তু এমন প্রথমবার হল মেয়েটির প্রগল্ভতা বিশেষ করে ঝাল খাওয়া দেখে তার ঠোঁটের কোণে হালকা হাসির রেখা ফুটছিল নিজের অজান্তেই।
মজার প্রেমের গল্প
পর পর বেশ কয়েক দিন এমন একপেশে ভালোলাগা থেকে সামনে গিয়ে একদিন অনিকেত বলেই ফেলেছিল —– এই যে লঙ্কাবতী, একটু এদিকে আসবে? সহজ সরল মেয়েটি ঠিক একইভাবে মুখে ফুচকা নিয়ে অতর্কিতে বলে ফেলেছিল—- আমার নাম তো লাজবন্তী……… । ব্যাস, কিছুদিনের মধ্যেই লাজবন্তী অনিকেতের ”লাজো” তে রূপান্তরিত হল আর এই রূপান্তরের পথটা কোনো বিশেষ ছিল না। আর পাঁচটা প্রেমের মতই সাবলীল তার ছন্দ। যদিওবা উভয়ের বিপরীতগামী চরিত্রই ছিল একে অপরের প্রতি আকর্ষণের মূল উপজীব্য। অসম্ভব রকম ঐকান্তিক স্বভাবের অনিকেতের বিশেষ পছন্দ ছিল ছটফটে, প্রাণবন্ত মেয়েটাকে। যে কোনো মানুষকে কেমন আপন করে নেয়, নিজের বাড়ির করে নেয়… সে যেই হোক, ফুচকাবালা থেকে এ.টি.এমের সিকিউরিটি পর্যন্ত। মানুষের সাথে দূরত্ব বজায়কারী অনিকেত দেখেছে মেয়েটা কেমন সহজ সরলভাবে মিলেমিশে যায় সকলের সাথে। ছোটবেলায় ড্রইং ক্লাসে অনিকেত যখন পেন্সিল ছেড়ে প্যাস্টেলে উঠলো, আউটলাইন কিছুতেই ছাড়তে পারছিল না, রঙগুলো কিছুতেই মিলেমিশে রামধনু হতো না। স্যারের কাছে কম বকা খাইনি এই বর্ডার ম্যানিয়ায়। সেই অভ্যেস আজও ছাড়তে পারেনা শত চেষ্টাতেও, বর্ডার পেরিয়ে মিশে যেতে পারেনা সকলের সাথে।
লাজবন্তীর লঙ্কা খাওয়া তাকে বিশেষ টেনেছিল। তার বাড়িতে কোনোদিনই রান্নায় লঙ্কা দেওয়া হয় না। তাই সে ভাবতেই পারে না মানুষ কিভাবে এমন ঝাল খেতে পারে….সে তাড়িয়ে তাড়িয়ে দেখত মেয়েটার লঙ্কা প্রেম।
অপরদিকে প্রান খোলা ছটফটে মেয়েটার অনিকেতের গাম্বীর্জ বেশ লাগতো, কেমন ম্যানলি ম্যানলি ভাবটা খুব টানতো ওকে। ওর চোখের হাসি ঠোঁট পর্যন্ত পৌঁছাতে বেশ সময় লাগতো। একদিন গঙ্গার ধার বরাবর হাঁটছিল দুজনে। লাজবন্তীর বুড়ো আঙুলটাকে খুব শক্ত করে ধরে রেখে অনিকেত বলেছিল আমায় বিয়ে করে আফসোস করবে না তো লাজো! এমন রূড মানুষকে সারাজীবন মেনে নেবে তো!! আর যদি তোমার উত্তর না হয়, জাস্ট আমি বাঁচবো না…. সেদিন অনিকে লাজোর একদম অন্য রকম লেগেছিল, খুব নরম লাগছিল গলার স্বরটা, মনে হয়েছিল এ মানুষটার সমস্ত অনুভুতি তার খুব চেনা। কপটতা সে দেখিয়ে বলেছিল—– মানতে পারি যদি আমার একটা শর্ত মেনে নাও।
অস্থির চাহনীতে অনিকেত জিজ্ঞাসা করলো—–বল শুনি।
—— যদি তুমি আমার লঙ্কা খাওয়াটা মেনে নাও তবে ভেবে দেখবো…..
হো হো করে নিছক বালক বালিকার মত হেসে উঠেছিল দুজনেই। তারপর!!…..তারপর সন্ধ্যের আলো আঁধারিকে সঙ্গত করে অনিকেত তার চওড়া বুকে শক্ত করে টেনে নিয়ে আশ্বাস দিয়েছিল— লাজো, তুমি জানবে এটাই তোমার একচ্ছত্র আধিপত্য। আর লাজবন্তী অমন দুর্দম বুকের ছত্রছায়ায় হারিয়ে ফেলেছিল নিজেকে। অনির দৃঢ় কন্ঠের তেজস্বীতায় মিশছিল সিগারেটের গন্ধ, এই তীব্র গন্ধে অনিকে আরো পুরুষালী লাগে তার। লাজবন্তী চোখ বুঁজে ফেলেছিল, টপটপ করে নোনা জল জমা অনিকেতের টিশার্টটা ঠোঁট দিয়ে সজোরে কামড়ে ধরে ছিল কতক্ষন কে জানে!! নদীর শীতল বাতাস এলোমেলো করছিল সব কষে রাখা হিসেব।
পাখির ডাকাডাকিতে লাজবন্তী টের পেল ভোর হয়ে গেছে। পাশে অনিকেত অচেতন হয়ে ঘুমচ্ছে…… পুরুষ মানুষের কী মন খারাপ হয়না!! নিজেকে প্রশ্ন করে পাশ ফিরলো লাজবন্তী। আজও সারাটা দিন কোনো কথা আদানপ্রদান হল না দুজনের। তার সাথে দেখা না করেই অনিকেত অফিস চলে গেছে। লাজবন্তীর বাবার কথা খুব মনে পরছে আজ। মাসকাবারী মুদিখানার লিস্টে মা লিখতে ভুলে গেলেও বাবা ঠিক মনে করে লঙ্কার আচার নিয়ে এসে বলত…মাম, দেখ তোর জন্য কী এনেছি!! বাবাকে হারিয়েছে সে.. তা প্রায় এই ফেব্রুয়ারিতে দুবছর হলো। সেদিনটা ওর খুব মনে আছে….বাবার শ্রাদ্ধ কাজের আগের দিন অনিকেত এসেছিল ওদের বাড়ি। লাজবন্তী খুব কাঁদছিল। অনিকেত সস্নেহে তার অসহায় জীবনের এলোমেলো হয়ে যাওয়া চুলগুলো গুছিয়ে দিয়ে মাথায় হাত রেখে বলেছিল —–কাঁদে না রে পাগলী…. এবার থেকে সব আব্দার তুই আমার কাছে করবি। লাজবন্তী ফুঁপিয়ে উঠে আঁকড়ে ধরেছিল তাকে। আসলে মানুষ বোধহয় বিশেষ নিবিড় সম্পর্কে শিশুকালের ঘ্রাণ ত্যাগ করতে পারেনা। তাই মায়ের মমত্ব আর বাবা নামক মহীরুহের ছায়া খোঁজে। লাজবন্তীও সেদিন এমন প্রত্যয়ী কাঁধে অসংশয়ে মাথা রেখে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছিল।
তিনটে দিন চলে গেছে ওরা কথা বলেনি। অফিসের কাজের জন্য অনিকেত বেশ ভোর ভোর উঠেছে আজ। দেখলো পাশে শোওয়া মেয়েটা ঘুমের ঘোরেই চমকে উঠছে বারবার আর আসফুটে যেন বাবা বাবা বলছে। অনিকেতের খুব রাগ হল নিজের ওপর। সত্যিই সে নৃশংস, অমানবিক… না হলে এই তুচ্ছ্ব কারণে মেয়েটাকে এমন কষ্ট দিতে পারতো!! কী যে মাঝে মাঝে হয় ওর। লঙ্কা খেলে যদি সোসাইটীতে সম্মান যায়, তা যাক……..। ভাবল একবার ডাকি নাকি …. না থাক। তার ফিনফিনে পাতলা হাত দুটোকে শক্ত করে চেপে ধরলো অনিকেত। হলুদ ফুলের মত গাল দুটোতে ভোরের নরম আলো পরছে জানলা গলে। অনিকেতের খুব ইচ্ছে হলো আদুরে গালদুটো বেশ করে টিপে দিতে। তারপর??……. সেই বর্ডার ম্যানিয়া……এগোতেই দিল না তাকে। ভাব গম্ভীর ভঙ্গীতে কপালে আলতো ঠোঁটে একটা স্নেহচুম্বন সেঁটে দিল শুধু।
মনমরা লাজবন্তী গত তিনদিনে নিজেকে কিছুটা শাসন করে তার খোলামেলা স্বভাবটাকে প্রয়োজনের তুলনায় ছোট কৌটোয় ঢুকিয়ে মুখ বন্ধ করেছে। এই কদিনে ভুল করে একবারের জন্যও লঙ্কা খেতে চাইনি। স্থির করে নিয়েছে ভদ্র বাড়ির মেয়ে হতে গেলে যা যা করার দরকার এ বাড়ির বউ হিসেবে তা করবে, আর যাই হোক পরের বাড়িতে বাবা মায়ের অমানুষ মেয়ে হয়ে থাকা যায় না। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে লাজবন্তী ভাবল… কেমন নিজের করে নিয়েছিল বাড়িটাকে, শাশুড়িমা কে… এবাড়ির অতি অভিজাত্যকে ভারী, স্থূল বেনারসী মনে হলেও কেমন আটপৌড়ে শাড়ির মত পেঁচিয়ে নিতে শুরু করেছিল। আজ সব কিছুই ক্লান্তিকর মনে হচ্ছে।
এমন সময় অনিকেত হন্তদন্ত হয়ে অফিস থেকে এসেই লাজবন্তীকে বললো—- বেড়তে হবে অ্যাজ সুন অ্যাজ পসিবল, চটপট যেন রেডি হয়ে নেওয়া হয়। হতচকিত লাজবন্তী ব্যাপারটা কিছুই আন্দাজ করতে না পেরে শুধু একখানা সালোয়ার কামিজ গায়ে চড়িয়ে নিল। ভাবল— এটিকেট না জানা মেয়েটাকে হয়তো মায়ের বাড়িই ফেলে আসবে….. । অনিকেত দেখলো প্রসাধনবিহীন লাজোর মুখখানা আজ আরো সারল্যে মাখা। সত্যি তো এই কপটতাহীনতার জন্যই তো মেয়েটা তার বুকের বাম দিকে থাকে!! নিজেকে আরেকবার দুষে লাজবন্তীকে নিয়ে বাইকে বসিয়ে বেরলো সে। লক্ষ্য করলো পিছনের সীটের মানুষটি সাবলীলতা খুইয়ে একরাশ আড়ষ্টতা নিয়ে বসে রয়েছে।
লাজবন্তী অবাক…. অনিকেত তেনুদার ফুচকার দোকানে বাইক থামিয়েছে। তেনুদাকে বললো—- একটা প্লেট বেশ কড়া ঝাল দিয়ে ফুচকা বানাও দেখি। আর লাজোর কানে ফিসফিসিয়ে বললো… আমার লঙ্কাবতী খাবে বলে কথা……… । অভিমানে তখনই দুচোখ ভাসাতে ইচ্ছে করছিল লাজোর। খুব কষ্টে সামলে ফুচকা মুখে দিতেই সেই লঙ্কাই শেষ রক্ষা করলো। অনিকেত লক্ষ্য করলো আজ প্রথমবারের জন্য ঝাল খেতে গিয়ে চোখ দিয়ে জল গড়াচ্ছে লাজবন্তীর।
অনেক সময়ই ছোট ছোট বিষয় মনে গভীর দাগ ফেলে। আসলে মানুষের অনুভূতির চালনটা বড়ই সূক্ষ তাই ক্ষুদ্র বস্তু বা বিষয়ও গলে যায় না। এমন রোগের ঔষধ শুধু কাছের মানুষদের আন্তরিকতা।
Tags – Bangla Golpo, Bengali Story, Choto Golpo