Govir Premer Valobashar Golpo – গভীর প্রেমের ভালোবাসার গল্প

Bongconnection Original Published
7 Min Read

Govir Premer Valobashar Golpo – গভীর প্রেমের ভালোবাসার গল্প

 
Govir Premer Valobashar Golpo - গভীর প্রেমের ভালোবাসার গল্প
Loading...

Govir Premer Golpo

টিউশনিতে গিয়ে দেখলাম ছাত্রের মা-বাবা তুমুলঝগড়া। আমার কাছে ব্যাপারটা কেমন অস্বস্তিকর মনে হলো। 
তবুও ঝগড়ার মাঝে যেহেতু ঢুকেই পড়েছি বিষয়টা খতিয়ে না দেখলেই নয়৷
 এদিকে আমার ছাত্র খুব মনোযোগ দিয়ে বাবা-মায়ের ঝগড়ার মাঝে কথা গিলছেন। ফাঁকিবাজ ছেলেটার চেহারা দেখেই বুঝা যাচ্ছে, সে আজ পড়ার মোডে নেই৷ 
যাইহোক আমি নিচু গলায় আন্টিকে জিজ্ঞেস করলাম,  -কি হয়েছে আন্টি? কোনো সমস্যা? 
আন্টি কিছু বলার আগেই ছাত্রের বাবা বলে উঠলো,
-কি আবার হবে? তোমরা তো সবই বুঝো?বর্তমান যুগে কাউকে বিশ্বাস করাটা কত ভয়ানক ব্যাপার! আর সে বিশ্বাস যদি নিজের ঘরের বউ ভেঙে দেয়। তাহলে আর বেঁচে থাকার ইচ্ছেটাই মরে যায়।
আংকেলের কথাটা মাথার উপরে দিয়ে গেল। এই বয়সে আন্টি কি এমন করে বসলো?  যে তার বিশ্বাস ভেঙে গেছে? তাদের বড় ছেলে এবার অনার্স ৩য় বর্ষের ছাত্র।
যাইহোক,নিজের মনকে প্রশ্ন করলে উলটাপালটা উত্তর আসবে। তাই আংকেলকে আবার জিজ্ঞেস করলাম,  
-কি করেছে আন্টি?
ব্যস,এখন গড়গড় করে সব বলতে লাগলো আংকেল।
-দ্যাখো না মা! আমরা মধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষ৷ এতো ছলচাতুরী কি আমাদের মানায়? তুমি আমার ছেলেকে পড়ানো বাবদ কতো টাকা সম্মানী পাও?
-আমি তো ২০০০ টাকা। 
-দেখেছো?  আর তোমার আন্টি এতো মাস আমার থেকে তোমার কথা বলে ৩০০০ টাকা করে নিতো। শুধু তাই নয়।বড় ছেলের কলেজ, ভার্সিটি, হাত-খরচ সব কিছুতেই বাড়িয়ে বলে আমার কাছ থেকে নিয়েছে। ছোট ছেলের ভর্তি ফি যদি হয় ১ হাজার উনি নিয়েছে ৭ হাজার। 
বাড়িওয়ালার ভাড়া তো একই কিন্তু কারেন্ট বিলের  ক্ষেত্রেও সবসময় আমাকে বাড়িয়ে বলে। আশ্চর্য এগুলো কি? আমাকে এতো কেন মিথ্যে বলতে হবে তার? আমি কি খুব খারাপ স্বামী?  তাকে কি আমি না খাইয়ে রাখি? তবে কেন এতো মিথ্যার আশ্রয়? 
 এটা কি আমার বিশ্বাস ভাঙা নয়? কেন সব জায়গায় তার ১ টাকার ক্ষেত্রে ৭ টাকা বাড়িয়ে বলার অভ্যাস?  তার যদি টাকার এতোই প্রয়োজন।

Govir Valobashar Golpo

 আমার কাছে চাইতে পারতো। আমি তো দেখি না, তার কোনো কিছুর অভাব আছে? তাহলে কেন এই ছল আমার সাথে? 
কথাগুলো শুনে আমিও একটু অবাক হয়ে গেলাম। আংকেলের কথা তো সত্যিই।কিসের এতো অভাব আন্টির?  যার জন্য এতো মিথ্যে বলে টাকা বাড়িয়ে নিতে হয়?আংকেলের কষ্ট পাওয়াটা স্বাভাবিক।  
আরও অবাক হলাম৷ আন্টি কিছুতেই স্বীকার করছে না। আর সে সোজা বলে দিলো, আমার কাছে কোনো টাকা নেই। 
আমি উনাদের পারিবারিক ব্যাপার নিয়ে কোনো কথা বললাম না।
-হয়তো আপনাদের দুজনেরই কোথাও একটা ভুল হচ্ছে।ঠাণ্ডা মাথায় ব্যাপারটা সামলানোর কথা বলে চলে এলাম। 
পরদিন আবার পড়াতে গিয়ে দেখলাম পরিস্থিতি স্বাভাবিক।  তার মানে, এটা ভুল বুঝাবুঝি ছিল৷
 আমিও আগ বাড়িয়ে কখনও আন্টিকে এ ব্যাপারে কিছু জিজ্ঞেস করি নি। 
তবে মাস দুয়েক পর।ছাত্রের বাবা আমাকে বললো,
-নওমি,আমার ছেলেকে সামনে মাস থেকে আর পড়াতে এসো না।আসলে কি করবো বলো তো? হঠাৎ করে আমার চাকুরিটা চলে গেছে। নতুন চাকুরি খুঁজতেও তো মাস দুয়েক লেগে যাবে। তাই বলছি আমরা আবার, তোমাকেই ডাকবো পড়ানোর জন্য। এখন চলতে একটু সমস্যা হয়ে যাবে।
কথাটা শুনে আমার কাছে খুব খারাপই লাগলো। এদিকে সামনে আলভির বার্ষিক পরিক্ষা ঘনিয়ে এসেছে। ও তো এমনিতেই ফাঁকিবাজ। আর নিজে নিজে কিভাবে পরিক্ষা দিবে? 
ভাবতে ভাবতেই পাশেই রুম থেকে আন্টি এসে বললো,
-তুমি নওমিকে না করে দিচ্ছো কেন? জানোনা, আলভির পরিক্ষা ঘনিয়ে এসেছে? 
-হ্যাঁ তো কি করবো? এখন তো আমার চাকুরিটা নেই। 
-চাকুরি নেই তো কি হয়েছে?  আমি আছি না? ওর বেতন নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবে না। তোমার ৬ মাসও যদি চাকুরি না থাকে, আমি তোমার সংসার আর তোমার ছেলেদের ঠিক আগের মতো করেই চালাতে পারবো ইনশাআল্লাহ। 
আংকেল রীতিমতো অবাক হয়ে গেলো।
-মানে?  কিভাবে সম্ভব?  তোমার ইনকামের তো কোনো রাস্তা নেই। এতো টাকা কোথায় পাবে? 
-সেদিন তো ওর সামনে আমাকে কত কথা শুনালে।আমি বিশ্বাস ভেঙেছি। তোমার কাছে বাড়িয়ে বলে টাকা নেই৷ তখন আমি তোমার সাথে তর্ক করি নি। আজ বলছি কেন টাকা নেই জানো? বিপদের কোনো হাত পা নেই৷ হঠাৎ কোথায় কোন কাজে লেগে যায় বলা যায় না। 
আর তোমার কাছ থেকে কম নিলেও এই টাকাটা কি তুমি রাখতে পারতে বলো? পারতে না!আমি নেই বলে কি খরচ করে ফেলি?   না। ওই তো, সেদিন তোমার বড় ছেলে এসে বললো, ভার্সিটি থেকে পিকনিকে যাবো টাকা দাও৷ দিয়ে দিলাম। 
কই তখন তো তোমার কাছে আমি চাই নি? ছোট ছেলেটাকে নিয়ে যখন স্কুলে যাই। ছেলেটা বায়না ধরে মামুনী এটা কিনে দাও,ওটা কিনে দাও। কই কখনও তোমার কাছে আলাদা করে সেই টাকা নিয়েছি? টীচারের বেতন, বাড়িওয়ালার ভাড়া,বুয়ার বেতন, ময়লার বিল, ওয়াইফাই বিল থেকে শুরু করে সব কিছুর টাকা তুমি আমার হাতে ১৫ তারিখের পরে দাও। 
অথচ তুমি জানোই না, আমি এগুলো প্রতি মাসে ৩ তারিখের মধ্যে পরিশোধ করি। 
এতে করে পাওনাদারদের কাছে সম্মান বজায় থাকে। আর সেই সম্মান কি শুধু আমার?  শুধু আমার না তোমারও। কারণ তুমি আমার স্বামী।  তোমার কাছে আলাদা ভাবে যদি ১০০ টাকা চাই। তুমি কি দিবে আমাকে? কোনো কারণ ছাড়া ১০০ টাকা? দিবেনা।
কারণ, তার জন্য তোমার কাছে আমার ১০০ টা কৌফেয়ত দেওয়া লাগবে।আর তুমি আমাকে কি করে বলতে পারলে আমি বিশ্বাস ভেঙে ফেলছি? তোমার কাছে বাড়িয়ে বলি ঠিকই কিন্তু তা এ সংসারেই কাজে লাগাই। কেন বলতো? এ সংসারটা যে আমার।
 আমার সংসার বাঁচিয়ে রাখার দ্বায়িত্বও আমারই। 
আন্টির কথা শুনে আমারই গর্ব হচ্ছে। আংকেল তো রীতিমতো বাকরুদ্ধ অবস্থা। ঘরের লক্ষী বুঝি একেই বলে!  তার বড় একটি উদাহরণ তো এই পরিস্থিতি।কিন্তু,  কত সহজে একজন পুরুষ তাদের ভুল বুঝে ফেলে। 
আপনি ঘরের কর্তা ঠিক আছে। মাস শেষে কিছু টাকা বেহিসেবীভাবে ঘরের বউকে দিয়ে রাখুন। কখনও এর হিসেব চাইবেন না। দেখবেন কোনো এক বিপদের দিনে অবলম্বন হিসেবে আপনার বউ আপনার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। এতে করে বাইরে কারও কাছে আপনার ছোট হতে হবে না। 
খারাপ সময় আসাটা স্বাভাবিক।সবাই জীবনের কোনো না কোনো এক সময় আর্থিক সংকটে পড়ে। তবে, তা মোকাবেলায় সহধর্মিণীকে পাশে পাওয়াটা সত্যিই ভাগ্যের ব্যাপার।
,
,
( আপনার ভালোবাষার মানুষটিকে প্রচুর ভালোবাসুন )
Tags – Bangla Golpo, Bengali Story, Premer Golpo
Share This Article
Leave a comment

Adblock Detected!

Our website is made possible by displaying online advertisements to our visitors. Please consider supporting us by whitelisting our website.