গোপন পরকীয়া
– শুভঙ্কর সাউ
ছেলেটার ফোনটা কুহেলি কেটে দিতেই অহন তাকে জিজ্ঞেস করলো-
-‘কার ফোন ছিলো এত রাতে?’
কুহেলি বলল-
-‘রং নাম্বার।’
অহন বলল-
-‘ফোনটা এবার রাখো না।আজ একটুক্ষন আদর করি এসো।’
কুহেলি ফোনটা সাইলেন্ট করে বালিশের পাশে রেখে দিলো।রাখার আগে ছেলেটাকে একটা
এস.এম.এস করে দিলো-
-‘আজ ফোনে কথা বলতে পারবোনা।একটু পরে হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ করছি।জেগে থেকো।’
ওদের ছোট্ট মেয়ে পরী ঠাম্মা দাদুর ঘরেই ঘুমিয়ে পড়েছিলো।দীর্ঘদিনের পর অহন
কুহেলীকে সম্পূর্ণ একা পেয়ে বুকের কাছে টেনে নিয়ে তাকে আদর করতে ইচ্ছে হলো।
কুহেলী সেইমুহুর্তে তাকে জিজ্ঞেস করলো-
-‘কবে আমার সোনার নেকলেশটা হবে শুনি?’
অহন বললো-
-‘ওসব কথা এখন বাদ দাও না।হবে যখন বলেছি, হবে।’
কুহেলী এবার অহনকে তার থেকে সরিয়ে দিয়ে বললো-
-‘তোমার কোনো কথা আমি বিশ্বাস করিনা,আগের বছর কাশ্মীর বেড়াতে যাবার কথা
বললুম,তুমি গেলেনা।’
অহনের মেজাজটা এবার সামান্য চটলো।একদিন কাছাকাছি এসেও যদি এই সব শুনতে হয়..।সে
বললো-
-‘তুমি জানো আমার কাশ্মীর বেড়াতে নিয়ে যাওয়ার মত এখনই অতটা সামর্থ্য নেই।যবে
হবে, নিশ্চই নিয়ে যাব।’
কুহেলি বললো-
-‘তোমাকে ভালোবেসে বিয়ে করাটা আমার সব থেকে বড় ভুল হয়েছে।জীবনটা আমার শেষ হয়ে
গেলো।কোনো একটা সাধ মিটলোনা।’
গৃহবধূর পরকীয়া গল্প
অহন বললো-
-‘দেখো,প্রেমের সময় থেকেই জানো আমি তেমন কিছু করিনা।তোমাকে সব সত্যিটাই বলে তবে
এগিয়েছিলাম।আর তাছাড়া আমিতো আমার সাধ্যের বাইরে গিয়ে তোমার চাহিদা আগে
মিটিয়েছি।’
কুহেলি আর কিচ্ছুটি বললোনা।বুঝলো যে কথা বাড়ালেই কথা বাড়বে।সে চুপ করে ঘুমানোর
ভান করে চোখ বুজিয়ে রাখলো।শুধু মনে মনে ভাবলো
নিজের আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে হলে,এ সংসার
ছেড়ে তাকে ওই ছেলেটার হাতটাই ধরতে হবে।
বছর ছয়েক বিবাহ হয়েছে ওদের দুজনের।ছয় বছরের পরেও কুহেলির রূপের বহ্নি এতটুকু
কমেনি।ভালোবেসে অহন তাকে বিবাহের সময় তার রূপের যেমন মাদকতা ছিলো,এক সন্তানের
মা হওয়ার পরে সেই মাদকতা যেন আগের চেয়েও বেড়েছে বই কমেনি এতটুকুন।কিন্তু,তাও
কুহেলির ওপর অহনের বড় বিশ্বাস ছিলো।সে ভাবতেও
পারেনি যে কুহেলি কেবলমাত্র তার ইচ্ছে পূরণের চাহিদায় তার সাথে প্রতারণা করতে
পারে।
অহনের দুচোখে ঘুম নামলে কুহেলি পাশ ফিরে শুয়ে সাবধানে ফোনের স্ক্রিনের
ব্রাইটনেশ কমিয়ে তখন হোয়াটসঅ্যাপটা অন করে ছেলেটাকে এস.এম.এস সেন্ড করলো।ছেলেটা
অপেক্ষাতেই ছিলো।মেসেজ পেতেই জিজ্ঞেস করলো-
-‘কী হলো?এত দেরী করলে যে?’
কুহেলি তখন কিছুক্ষনের আগের ঘটনার রেষ মন থেকে মুছে ফেলে লিখলো-
-‘ও যে জেগেছিলো।’
ছেলেটা লিখলো-
-‘তোমায় একবার খুব দেখতে ইচ্ছে করছে।ছবি পাঠাও না।’
কুহেলি তাকে নিজের কয়েকটা ছবি সেন্ড করলো।ছেলেটা তা দেখে তাকে মেসেজ দিলো-
-‘সত্যিই তুমি…।’
কুহেলি লিখলো-
-‘আমি.. কী..?’
ছেলেটা লিখলো-
-‘বলছি এবার কিছু একটা ডিশিসন নাও।আর কদিন আমায় অপেক্ষা করতে হবে?’
ছেলেটার এই কথাটায় কুহেলি সায় না দিয়ে থাকতে পারলো না।সেও পালিয়ে
যেতে চায় ছেলেটার সাথে। তাই কুহেলি লিখলো-
-‘তুমি ওদিকে সবকিছু ঠিকঠাক করে রাখো।আমি যত শিগ্রি পারি বাড়ি ছাড়বো।’
ছেলেটা লিখলো-
-‘তাহলে তার আগে একদিন দেখা করো।’
কুহেলি কিছুক্ষন চিন্তা করে লিখলো-
-‘মাঝে মধ্যেই বেরোনা হয়ে যাচ্ছে বাড়ি থেকে।এবার কিন্তু সন্দেহ করতে পারে।’
ছেলেটা লিখলো-
-‘একদিন।প্লিজ।’
কুহেলি লিখলো-
-‘আচ্ছা রুম বুক করে রাখো।আমি সোম বার দিন পরীর স্কুলে যাবার নাম করে বেরিয়ে
যাবো।তবে বিকেলের মধ্যে ছেড়ে দিতে হবে কিন্তু।’
ছেলেটা লিখলো-
-‘ওকে, ডান।’
সোমবার দিন কুহেলি ছেলেটার সঙ্গে দেখা করলো।শুধু দেখাই করলো না।তাদের মধ্যে
এমনকি ঘটলো শারীরিক দেওয়া নেওয়াও।কুহেলি ছেলেটাকে যে
নতুন ফোনের আবদার করেছিলো,সেটা ছেলেটা কুহেলির জন্য এনেছিলো।
পরকীয়া কাহিনী
কুহেলি আসলে,ছেলেটা রূপে গলেনি,সে দেখে ছিলো ছেলেটার ঐশ্বর্য।ইচ্ছে পূরণের জন্য
ছেলেটার কাছে সে সব কিছুটা পেয়ে যাবে,যা অহন তাকে আজীবন চেষ্টা করলে ও দিতে
পারবে না।তাই সেদিনই সে ছেলেটার সাথে সলা পরামর্শ সেরে নিলো কবে তারা
পাকাপাকিভাবে একে অপরের হতে চলেছে।
সেদিন কুহেলির বাড়ি ফিরতে দেরী হলে অহনের তার ওপর একটু সন্দেহ হয়ে
ছিলো।কিন্তু,প্রমান ছাড়া কাউকে সন্দেহ করা ঠিক না এটা ভেবে তাই সে মনে মনে
স্থির করলো আবার যদি সে এরকম সারা দিনের জন্য বাইরে বেরোয় তবে অহন তাকে নজরে
নজরে রাখবে।
দিন পনেরো সময় কেটে গেলো তবু অহন দেখলো কুহেলি আর কোথাও বাইরে যাচ্ছে না।সে
বুঝলো অযথাই সে কুহেলির ওপর সন্দেহ করেছে।অতএব আর নজরদারি না।কিন্তু,অহন কী আর
জানতো যে কুহেলি তার থেকে হাজার গুন বেশি বুদ্ধি ধরে।সে
ভেতরে ভেতরে বাড়ি ছাড়বার প্রস্তুতি নিচ্ছিলো সেটা কে আর জানতো!একদিন রাতে
কুহেলি অহনকে জানালো সে এক বেলার জন্য বাপের বাড়ি যেতে চায়।অহন আপত্তি
করলোনা।পরদিন অহন গাড়ি ভাড়া করে দিয়েছিলো। কুহেলি, এক বেলার জন্য যাবে বলে
পরীকে তার ঠাম্মার কাছে
রেখে গেলো।গাড়ি সোজা স্টেশনের উদ্দ্যেশ্যে রহনা দিলো।অহন বলেছিলো দিয়ে
আসবে।কিন্তু কুহেলি জানিয়েছিলো-
-‘তোমার অফিসের চাপ আছে বলছিলে কদিন।আমার একা যেতে অসুবিধে হবে না।এক ট্রেন
তো।’
সেদিন কুহেলি আর বাপের বাড়ির লাইনের ট্রেন না ধরে বেরিয়ে গেলো অন্য ট্রেন ধরে
অন্য আর এক গন্তব্যের উদ্দেশ্যে।
তখন বিকেল পাঁচটা হবে।অহনের ফোনে কুহেলির ফোনটা এলো-
-‘আমি আর তোমার কাছে ফিরবোনা।পরী কে তাই সাথে নিয়ে আসিনি।আমায় কখনো আর খোঁজার
চেষ্টা করোনা।’
ব্যাস।কথাগুলো বলা মাত্রই কুহেলি ফোনটা কেটে দিয়ে সুইচ অফ করে দিলো।
সেইটাই শেষ ফোন তার।সে তারপর আর কখনো তার স্বামী,তার একমাত্র মেয়েটার পর্যন্ত
খোঁজ করেনি।কেবল নিজের স্বপ্ন পূরণের জন্য ভুলে গিয়েছিলো এতদিনকার আপন সবাইকে।