আরব্য রজনীর গল্প – Arabya Rajani Golpo
কোন রকমে কেটে যেত তার দিন। তার নিয়ম ছিল- দিনে পাঁচবারের বেশি জাল ফেলত না।
একদিন, দুপুরবেলা সে গেছে জাল ফেলে মাছ ধরতে। প্রথমবার খুব ভারি কী যেন একটা
আটকে গেল জালে। জেলে ভাবল না-জানি কত বড় মাছ উঠেছে। কিন্তু জালটা তুলতেই জেলে
অবাক! বড়সড় একটা গাছের গুঁড়ি আটকে আছে জালে। দ্বিতীয়বার জাল ফেলল জেলেটা। এবারও
ভাগ্য খারাপ। এবার উঠেছে একটা মরা গাধা! মনটা খারাপ হয়ে গেল জেলের। তৃতীয়বার
উঠল একটা কাদাভর্তি মাটির কলস। এবার জেলের মনে হলো আল্লাহ বোধ হয় তাকে
স্ত্রী-পুত্রসহ না খাইয়ে মারতে চান। চতুর্থবার জালে উঠল কয়েকটা ভাঙা বাসন-কোসন।
মনের দুঃখে হতাশ হয়ে জেলে শেষবারের মতো জাল ফেলল।
এবার উঠল একটা বেশ বড় আকারের তামার কলস। তুলতে খুব কষ্ট হচ্ছিল জেলের। ভীষণ
ভারি তামার কলসটা! টেনেটুনে পাড়ে তুলল কোন রকমে। জেলে ভাবল মাছ না পেলেও এই কলস
বেচে কিছু টাকা পাওয়া যাবে। এমনকি সে রোজ যে পরিমাণ মাছ ধরে কলসটার দাম তারচেয়ে
বেশিও হতে পারে।
সহস্র এক আরব্য রজনী
মধ্যে একটা সিলমোহর। তাতে সুলেমান বাদশাহর নাম খোদাই করা। জেলে ভাবলো কলসের
ভেতর অনেক মোহর বা সোনাদানা থাকতে পারে। তাই অনেক কষ্টে খুলে ফেলল ঢাকনাটা।
ব্যস , সাথে ধোঁয়ার কুন্ডলী বের হয়ে এসে একটা বিশাল দৈত্যের আকার ধারন করল।
বিশাল পাহাড়ের মতো তার দেহ। মুখটা যেন পর্বতের গুহার মতো তার মুখ আর হাতগুলো যে
সাদা পাথরের মতো চকচক করছে। চোখ দুটো যে গোল আলুর মতো, রক্তে লাল টকটকে।
পা ভযে কাঁপতে লাগল। মনে হতে লাগল এই বুঝি প্রাণটা বেরিয়ে যাবে।
না। আল্লাহর দূত স্বয়ং সুলেমান। বাদশা সুলেমান দোহাই তোমার। আমাকে মেরে ফেলো
না। তুমি যা বলবে আমি তাই শুনব। যা করতে বলবে আমি তাই করব।
তুমি এমন কুঁকড়ে যাচ্ছ কেন। সুলেমান তো আঠারশ বছর আগেই দুনিয়া ছেড়ে বেহেস্তে
চলে গিয়েছে। তোমার এমন কি অপরাধ ছিল যে বাদশাহ সুলেমান তোমাকে এই কলসির মধ্যে
বন্দী করে রেখেছিল?’
সুলেমানের মৃত্যুর কথা শুনে দৈত্য হো হো করে হেসে বলল, আমি মুক্ত, আমি স্বাধীন,
আমাকে কেউ আর বন্দী করতে পারবে না।
করেছ। আমি এখন তোমাকে হত্যা করব।
শাস্তি দিতে চান। আমার জীবন নিতে চাও। আমি তো তোমার জীবন বাঁচিয়েছি। বন্দী দশা
থেকে মুক্তি দিয়েছি। তাহলে কেন তুমি আমার জীবন নিতে চাইছ?
ছিলাম। তাই বাদশা আমাকে বন্দী করেছিল। বন্দী করার পর আমাকে তিনি বললেন, আমি যদি
সারাজীবন তার গোলাম হয়ে থাকি তবে আমার সব অপরাধ মাফ করে দেবেন। কিন্তু আমি তা
স্বীকার করিনি। তাই তিনি আমাকে এই কলসির মধ্যে বন্ধ বন্দী করে সাগরের পানিতে
ফেলে দেন।
একশ বছরের মধ্যে কেউ আমাকে মুক্ত করে দিলে আমি তার জীবন সুখ স্বাচ্ছন্দে ভরিয়ে
দেব। কিন্তু ভাগ্য খারাপ। কারও দয়া হল না। একশ বছরের মধ্যে কেউ আমাকে মুক্ত করল
না। দ্বিতীয় বার শপথ নিলাম,আগামী একশ বছরের মধ্রে কেউ আমাকে মুক্ত করে দিলে,
আমি তাকে দুনিয়ার সমস্ত ধন সম্পদ দিয়ে তার ঘর ভরিয়ে দেব। কিন্তু এবারও আমার
ভাগ্য খারাপ। কেউ আমাকে মুক্ত করল না। এভাবে চারশ বছর পানির তলায় কষ্টে দিন
যাপন করতে লাগলাম।
আরব্য রজনীর গল্প পিডিএফ
চাইবে তাই পাবে। কিন্তু এবারও কেউ আমাকে মুক্ত করল না। এবার আর আমি শান্ত থাকতে
পারলাম না। রাগে দুঃখে শপথ নিলাম, এরপর যে আমাকে মুক্ত করবে আমি তাকে হত্যা
করব।
তাই আমাকে আমার প্রতিজ্ঞা রক্ষা করতেই হবে। তোমাকে সুযোগ দিচ্ছি, তুমি নিজেই
বেছে নাও, কিভাবে মরতে চাও।’
প্রাণভিক্ষা চাইতে লাগল। কিন্তু আফ্রিদি দৈত্য বারবার বলতে লাগল, ‘বলো,
তারাতারি বলো, কিভাবে তুমি মরতে চাও?’
আমি জীবনে এমন কোন পাপ করিনি যাতে আমার অপঘাতে মৃত্য হবে। নাই বা বললে তুমি
আমার অপরাধ। কিন্তু আমার একটা প্রশ্ন আছে। তার উত্তর জেনে শান্তিতে মরতে চাই।
খুলেছি। কিন্তু আমি কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছি না যে তোমার মত এত বড় পাহাড়
সমান শরীর এতটুকু কলসির মধ্যে কিভাবে ছিল! তুমি মিথ্যা কথা বলছ। তুমি কখনই এই
কলসির মধ্যে থাকতে পার না।’
মুহূর্তেই জেলের গলাটা টিপে ধরবে। কিন্তু দৈত্য তা না করে নিজেকে সামলে নিয়ে
বলল, ‘ঠিক আছে, তোমার যখন বিশ্বাস হচ্ছে না, তখন আমি এই কলসির মধ্যে আবার গিয়ে
দেখাচ্ছি কিভাবে ছিলাম।’
সুযোগ বুঝে বুড়ো জেলে কলসির মুখটা বন্ধ করে দিল।
লাগ–‘ হতচ্ছাড়া আফ্রিদি, তোকে আবার সাগরের পানিতে ডুবিয়ে দেব। তোকে যেন কেউ আর
পানি থেকে তুলতে না পারে সেজন্য আমি নিজে নদীর পাড় পাহারা দেব। আর চারদিকে ঢোল
পিটিয়ে সবাইকে তোর কথা জানিয়ে দেব, যাতে কেউ তোকে মুক্ত না করে!’
‘তোমারেোকন ক্ষতি করব না, দয়া করে আমাকে মুক্ত করে দাও। দারা দুনিয়ার হীরে জহরৎ
তোকে দেব, তবু আমাকে মুক্ত করে দাও’।
Tags –
Bangla Golpo, Arabya Rajani Golpo,
Bengali Story